গর্ভধারণের দশম সপ্তাহ : ভ্রূণের বৃদ্ধি, মায়ের শরীর এবং কিছু টিপস

Spread the love

পূর্ববর্তী সপ্তাহগুলোর মতই, গর্ভাবস্থার দশম সপ্তাহেও শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ খুব দ্রুতই হতে থাকে। গর্ভাবস্থার প্রথম ট্রাইমেস্টার  ১৩ সপ্তাহ পর্যন্ত, এবং এই সময়ে ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশের ধরণ খুবই জটিল থাকে।

দশম সপ্তাহে ভ্রূণের আকার হবে একটা খেজুরের সমান। উপর থেকে নিম্নভাগ পর্যন্ত (crown to the rump) এর দৈর্ঘ্য থাকে ১.২২ ইঞ্চি বা ৩.১ সেমি এবং এর ওজন থাকে প্রায় .১৪ আউন্স বা ৪ গ্রামের মত।

বিজ্ঞাপণ

দশম সপ্তাহের অবস্থান গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাসে বা নির্দিষ্ট করে বললে দুইমাস এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত হয়েছে।

তবে মনে রাখবেন, ডাক্তাররা সবসময় গর্ভধারণের যাবতীয় হিসেব সপ্তাহ অনুসারে করে থাকেন, মাস অনুসারে নয়। কেননা, গর্ভধারণের সময়টা প্রায় চল্লিশ সপ্তাহের মত হয়ে থাকে এবং যেহেতু গর্ভধারণের পর প্রতিনিয়ত চেকআপ করতে হয় এবং দ্রুত অবস্থার পরিবর্তন হয়ে থাকে তাই ডাক্তাররা সপ্তাহ অনুসারেই সবকিছুর রেকর্ড রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

গর্ভাবস্থার দশম সপ্তাহ | সপ্তাহ অনুযায়ী গর্ভাবস্থা | সপ্তাহ ১০

গর্ভধারণের দশম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি

গর্ভাবস্থার অষ্টম সপ্তাহ নাগাদ তার মস্তিষ্ক, যকৃত, কিডনি এবং অন্ত্রের গঠন শুরু হয়েছিল। নবম সপ্তাহ থেকে ভ্রূণটির বিভিন্ন অঙ্গ নিজেদের কাজ শুরু দেয় এবং পাশাপাশি এসব অঙ্গের আরও বিকাশ হতে থাকে।

দশম সপ্তাহের দিকে এসে গর্ভের ভ্রূণের স্বাভাবিক বিকাশের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। সেগুলো নিম্নরূপঃ

মাথা এবং ঘাড়

দশম সপ্তাহের দিকে ভ্রূণের মাথার আকার তার পুরো শরীরের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে থাকে এবং কপালের অংশের দিকেও বেশ খানিকটা স্ফীত ও ফুলে থাকে। তবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এই স্ফীত অংশটুকু শিশুর মস্তিষ্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

এই সময়ে ভ্রূণের মাথার দুপাশে তার কানের গঠন হতে থাকে এবং ভেতরে কানের নালীগুলো ধীরে ধীরে সুগঠিত হয়ে বিস্তৃত হতে থাকে।

চোখ

এই সময় ভ্রূণের চোখের পাতা প্রায় গঠিত হয় এবং চোখগুলো ঢেকে রাখে। গর্ভাবস্থার প্রায় ২৭ সপ্তাহ পর্যন্ত ভ্রূণের চোখের পাতা বন্ধ থাকে।

মুখ

শিশুর চোয়ালের হাঁড়  এই সময়ে গঠিত হতে থাকে এবং তার সব দুধ দাঁতই এসময় গঠিত হয়ে যায়। দাঁতগুলো এ সপ্তাহে আরও শক্ত হতে থাকে এবং চোয়ালের হাড়ের সাথে যুক্ত হতে থাকে। 

দেহের অন্যান্য অঙ্গ

বাহুগুলো শিশুর কনুইয়ের কাছে বাঁকানো এবং বেশ নমনীয় অবস্থাতে থাকে এবং এ সময় বাহুগুলো ভাঁজ করা সম্ভব। হাঁটু এবং পায়ের গোড়ালি গঠিত হওয়া শুরু করে এবং এর পাশাপাশি আঙুলে নখও গজাতে শুরু করে।

পেট এবং শরীরের নিম্নাংশ

ভ্রূণের পরিপাকতন্ত্র এসময় কর্মক্ষম থাকে। ভ্রূণের পাকস্থলী থেকে এ সময় হজমে সহায়তাকারী রস উৎপন্ন হয়। এছাড়াও ভ্রূণের লিভার থেকে পিত্ত এবং অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিনও তৈরি হতে শুরু করে। এছাড়া কিডনিও আগের তুলনায় বেশি মূত্র তৈরি করে থাকে। পুরুষ ভ্রূণে টেস্টোস্টেরন উৎপাদিত হওয়া শুরু করে এবং ভ্রূণের জননেন্দ্রিয়ে পুরুষ এবং নারী বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যেতে শুরু করে।

এছাড়াও এই সময়ে শিশুর হাত ও পায়ের আঙুলগুলো আলাদা হওয়া শুরু করে। ১০ম সপ্তাহ পার হওয়ার পর কোন জন্মগত ক্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে, যার ফলে এই সময় পর্যন্ত যদি সবকিছু স্বাভাবিক থাকে তাহলে বাবা মায়েরা বেশ খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন।

এই সময়ে শিশুর হৃদপিণ্ড পুরোপুরি গঠিত হয়ে যায় এবং বেশ স্বাভাবিক ভাবেই তার কার্যক্রম শুরু করে। প্রতি মিনিটে এই সময়ে শিশুর হৃদপিণ্ড ১৮০ বারের মত স্পন্দিত হয়, যা একটি পূর্ণ বয়স্ক মানুষের চাইতে ২-৩ গুন বেশি। গর্ভের ভ্রূণটি এ সময় হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে নড়ে উঠতে পারে এবং মায়ের সেভাবে অনুভূত না হলেও আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় এই নড়াচড়া দেখা যেতে পারে।

দশম সপ্তাহে মায়ের শারীরিক পরিবর্তন

মায়ের জরায়ুটি এ সপ্তাহে কমলালেবুর মতো বড় হয়ে যেতে পারে যা শ্রোণিচক্রের (pelvis) ভিতরের প্রায় সবটুকু জায়গা দখল করে নেবে। এসময় হাত দিয়ে শ্রোণিচক্রের উপরে, মাঝামাঝিতে জরায়ুটাকে অনুভব করা যেতে পারে।

দশম সপ্তাহে মায়ের তলপেটে হালকা গোলাকার ভাব দেখা দিতে পারে। তবে এসময়ও যদি পেট কিছুই বোঝা না যায় তবে ঘাবড়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই। প্রত্যেকটি মা ই আলাদা। অনেক মায়েদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারেও পেট তেমন একটা বাড়ে না আবার কারো কারো প্রথম ট্রাইমেস্টারেই পেটের আকারে পরিবর্তন আসে শুরু হতে পারে।

প্রথমবার মা হতে যাওয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত ১২-১৬ সপ্তাহের মাঝে পেটের আকার বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এক বা একাধিকবার মা হবার অভিজ্ঞতা থাকলে পরবর্তী গর্ভধারণে অপেক্ষাকৃত আগেই পেটের আকার বাড়া শুরু হতে পারে। কারণ তাদের জরায়ু এবং পেটের পেশী আগের গর্ভধারণের কারণে প্রসারিত থাকে।

এ সপ্তাহে মায়ের শরীরের শিরা গুলা অপেক্ষাকৃত বেশী দৃশ্যমান হতে পারে বিশেষ করে স্তন এর আশেপাশে এবং পায়ে।গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায় বলে মায়ের শিরাগুলো প্রসারিত হয় যাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং ভ্রূণে পুষ্টির সরবারাহ ঠিক থাকে। মা যদি শীর্ণকায় হন এবং গায়ের রং যদি ফর্সা থাকে তবে এই শিরাগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি দৃশ্যমান হয়।

দশম সপ্তাহে মায়েরা গর্ভধারণের যেসব উপসর্গের মুখোমুখি হতে পারে তা হল- 

ক্লান্ত লাগা – মায়েদের এসময় খুব ক্লান্ত এবং দুর্বল লাগতে পারে। গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি সময়ে এই উপসর্গ একটু কমে আসলেও আবার শেষের দিকে অবসাদ ও ক্লান্তি ফিরে আসতে পারে। হরমোনের পরিবর্তন,  বিশেষ করে প্রজেস্টরন বৃদ্ধি পাওয়া এর অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

খাবারে অনীহা (Food Aversion) – কিছু কিছু খাবারের প্রতি মায়েদের অনীহা বোধ করা কিংবা রুচি কমে যাওয়া স্বাভাবিক। যদিও এর কারণ নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি, এটা হয়ত মায়ের দেহে দ্রুত এস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধির একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এছাড়াও এমন হতে পারে যে কিছু বিশেষ খাদ্য যা আপনি মজা করে খেতেন তা হঠাৎ করে আপনার কাছে একেবারেই অসহ্য লাগছে।

হঠাৎ কিছু খাওয়ার ঝোঁক ওঠা – (Food Cravings) – খাবারে অনীহার সাথে সাথে কখনো কখনো কোনও কিছু খাওয়ার তীব্র ইচ্ছে হতে পারে গর্ভবতী মহিলাদের। সে হতে পারে মিষ্টি কিছু বা নোনতা বা ঝালঝাল কোনও পদ বা বিশেষ কোনও খাবার। এটাকে ফুড ক্রেভিংস বলে।গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন, ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের অতিসক্রিয়তাকে এর জন্য দায়ী করা যায়।কারো কারো মতে শরীরের ভিটামিন বা মিনারেলের ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার প্রাকৃতিক কারণ হিসেবেও এমনটা হতে পারে।

বুক জ্বালাপোড়া – গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ মায়ের বুক জ্বালাপোড়া করে। এটা খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় ঘটনা।গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম সন্তান জন্মের সময় এ সমস্যা বেশি হয়। অনেকেই গর্ভাবস্থায় প্রথমবারের মত এ সমস্যা অনুভব করে থাকেন।

গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালাপোড়া এবং এর সাথে সম্পর্কিত গ্যাসের সমস্যা সাধারণত দ্বিতীয় বা তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে শুরু হয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে তা আরও আগে শুরু হতে পারে। এ সমস্যা বাচ্চা জন্মদান পর্যন্ত আসা যাওয়া করতে পারে।

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ – গর্ভধারণের পূর্ব থেকে শুরু করে ডেলিভারি পর্যন্ত এই পুরো সময়েই ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হওয়া খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়৷ এই সময়ের বেশিরভাগ ডিসচার্জ খুব সম্ভবত  লিউকোরিয়া। লিউকোরিয়া হলো দুধের মতো সাদা গন্ধহীন কিংবা অল্প গন্ধযুক্ত এক ধরণের স্রাব।

বিজ্ঞাপণ

এই ধরণের স্রাব হয়তো গর্ভধারণের আগেও অনেকের হয়ে থাকতে পারে কিন্তু এই সময়ে এসে এই স্রাবের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এর কারণ হলো গর্ভাবস্থায় শরীর অনেক বেশি এস্ট্রোজেন উৎপাদন করে এবং যোনির আশেপাশের অংশে রক্ত চলাচল অনেক বেড়ে যায়।

তবে দুর্গন্ধযুক্ত, হলুদাভ, বাদামী কিংবা লাল স্রাব দেখা দিলে দ্রুত আপনার গাইনীকে জানান।

মাথা ঘোরা বা জ্ঞান হারানোর অনুভূতি – গর্ভবতী অনেক নারী মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারানোর মতো অনুভব করেন। গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনের পরিবর্তনের কারণেই এমন বোধ হয়।

যদি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আপনার জ্ঞান হারানোর মতো ভাব হয় তাহলে তাড়াতাড়ি কোথাও বসে পড়ুন,  যদি সম্ভব হয় দুই হাটুর মাঝখানে মাথা দিয়ে বসার চেষ্টা করুন (গর্ভাবস্থার শেষ দিকে যদিও এভাবে বসাটা সম্ভব নাও হতে পারে)। কিছুক্ষণের মধ্যে জ্ঞান হারানোর ভাব কেটে যাবে।

যদি তা না হয় তাহলে একপাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়ুন। এতে শরীরে এবং মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে এবং অচেতন অনুভূতি আস্তে আস্তে কেটে যাবে।

রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন – রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন এক ধরনের তীব্র ব্যাথা যা সাধারনত অল্প সময়ের জন্য হয় এবং অনেকটা মাংশপেশীর খিঁচুনির মত মনে হতে পারে। এ ব্যাথা দুপাশেই হতে পারে তবে ডান পাশে বেশী হয় যা উরু পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

গর্ভবতী মায়েরা যখন হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন করেন তখন সাধারণত  রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন অনুভূত হতে পারে, যেমন- বিছানা বা চেয়ার থেকে ওঠার সময়। কাশি দেয়ার সময় বা বিছানায় নড়াচড়া করার সময়ও এ ব্যাথা হতে পারে।

মুখে অতিরিক্ত লালা – গর্ভকালীন সময়ে মুখে অতিরিক্ত লালা তৈরি হওয়াটা বেশ স্বাভাবিক একটা বিষয়। হরমোনের পরিবর্তন, বমি বমি ভাব ইত্যাদি কারণে এসময় অতিরিক্ত লালা তৈরি হতে পারে।

গর্ভকালীন হরমোন আরো অনেক ভাবেই আপনাকে সমস্যায় ফেলতে পারে। অনেক মহিলাই কষ্টকর মাথাব্যথা এবং পিঠের সমস্যায় ভোগেন ।

সকালবেলা বা রাতে বমি ভাব ও মাথাব্যথার প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে।এই সময় মুড সুইং খুবই সাধারন ঘটনা।অল্প কিছুতেই উদ্বিগ্ন বা রেগে যেতে পারেন অথবা বিষন্নতায় ভুগতে পারেন।

  • নোটঃ যদি আপনি দুঃখিত বা নিরাশ বোধ করেন বা আপনার দৈনিক দায়িত্ব সমূহ যথাযথ ভাবে পালন করতে না পারেন, বা আপনি নিজেকে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলতে পারেন বলে মনে করেন, তবে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে অথবা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে অনতিবিলম্বে যোগাযোগ করুন।

এসব ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা আরও অনেক ধরণের উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। গর্ভকালীন সব ধরণের উপসর্গ নিয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।

এ সপ্তাহে করনীয়

গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভর করে মায়ের ওপর৷ অর্থাত্‌ সুস্থ মা মানেই সুস্থ শিশু৷ শিশুর পরিপূর্ণ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার খাদ্যের যোগান দিতে হয় মাকে৷ মা যে খাবার খাবেন শিশুও সেই খাবার থেকেই পুষ্টি লাভ করে৷

এ কারণে স্বাভাবিক মহিলাদের তুলনায় একজন গর্ভবতী মায়ের সুষম খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি৷ সঠিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ না করলে সন্তান ঠিকমত বৃদ্ধি পাবে না৷ ফলে সন্তান অপুষ্টি নিয়ে জণ্মাবে৷ গর্ভবতী অবস্থায় কী খাবেন এবং কোন খাবার গর্ভের সন্তান এবং মায়ের জন্য প্রয়োজন তা জেনে নিন।

দিনে আপনাকে অন্তত ৮ গ্লাস পানি বা পানীয় খেতেই হবে ( চা, কফি, কোলা এসব বাদে) । তবে, রাতের দিকে পানির পরিমান কম রেখে দিনে বেশি পানি খান।  কারণ রাতে বেশি পানি খেয়ে শুতে গেলে বার বার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন পরতে পারে।

ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ ছাড়া অন্য কোনো কারণে যদি আপনার ঘুম না হয়, তাহলে আপনি হয়তো ভাববেন যে ওষুধ খেয়ে সেটা ঠিক করে নেবেন। কিন্তু, গর্ভাবস্থায় প্রথমেই ওষুধ খাওয়ার চিন্তা মাথায় না আনাই ভালো। যে কোন ওষুধের বিষয়ে ডাক্তারকে অবহিত করুন এবং সেটা গর্ভাবস্থায় নিরাপদ কিনা তা জেনে নিন।

গর্ভাবস্থায় অনেক নারীই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেন, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার জন্য সেটাও একটা কারণ হতে পারে।

রিলাক্সেশনের টেকনিকগুলো, যেমন- যোগব্যায়াম, স্ট্রেচিং, মাসাজ, গভীর ভাবে শ্বাস নেয়া এসব কিছুই রাতে ঘুমাতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।

কফি ক্লান্তি দূর করার জন্য কার্যকর হলেও গর্ভাবস্থায় এর পরিমাণ কম করতে হবে। চা, কফি ইত্যাদিতে ক্যাফেইন থাকে। দৈনিক ২০০ গ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা ঠিক নয়।

এছারাও ক্যাফেইনে এমন কোন পুষ্টিকর উপাদান থাকেনা যা গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় বরং তা শরীরকে আয়রন শোষণ করতে বাঁধা দেয় যা গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীররে এমনিতেই কম থাকে। এছারাও অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহনের ফলে ঘুমের সমস্যাও হতে পারে।

নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করুন।যেমন- অ্যালকোহল, ক্যাফেইন পান, তামাক কিংবা ধূমপান। অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে এসব অভ্যাসের ফলে গর্ভপাত, বিকলাঙ্গ শিশু, সময়ের আগেই প্রসব, বাচ্চার ওজন কম থাকা ইত্যাদির সম্ভাবনা থাকে। এসব অভ্যাস ত্যাগ করা খুব একটা সহজ নয়। তাই এ ব্যাপারে একজন পুষ্টিবিদ বা বিশেষজ্ঞের গাইডলাইন অনুসরণ করতে পারেন।

প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস দুরের জার্নি করা উচিৎ না।বিশেষ করে যদি রাস্তা ভালো না হয় বা ঝাঁকুনি লাগার ব্যাপার থাকে তবে সেটা মায়ের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

হালকা ব্যায়াম করতে হবে কিন্তু শরীরের ক্ষমতার তুলনায় ভারি কাজ করা যাবেনা। ঝুকে বা নুয়ে কাজ না করাই উচিত । হাঁটা চলায় সাবধান হতে হবে । এগুলো আমরা সবাই জানি কিন্তু ঠিক মত পালন করিনা। কিন্তু সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সচেতন থাকতে হবে ।

গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস, শিশুর বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময় তার মস্তিষ্ক এবং অন্ত্র তৈরি হতে থাকে, জরায়ুর গায়ে প্লাসেন্টা লাগতে থাকে এবং এর বৃদ্ধি ঘটে থাকে যা বাচ্চার প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এই সময়ে ছোট্ট একটা ভুল বড় সমস্যার রুপ নিতে পারে।

সুস্থ পরিবেশই শুধু একটা সুস্থ বাচ্চার জন্ম দিতে পারে । এটা বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ভাবেও প্রমানিত যে মায়ের সাথে সন্তানের আত্তিক সম্পর্ক থাকে । কাজেই গর্ভবতী মাকে সর্বদা হাসিখুশি ও চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। সেই সাথে পরিবারের অন্যান্য সদ্যসদ্যেরও মাকে যথাযথ মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে।

সবার জন্য শুভকামনা।

<<গর্ভাবস্থা সপ্তাহ ৯
গর্ভাবস্থা সপ্তাহ ১১>>


Spread the love

Related posts

Leave a Comment