স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার স্থায়িত্ব এবং গর্ভের শিশুর উপর এর প্রভাব কেমন?

Spread the love

গর্ভের মোট সময় কাল বা গর্ভাবস্থার স্থায়িত্ব ধরা হয় সাধারণত ৪০ সপ্তাহ বা ২৮০ দিন বা ঌ মাস ৭ দিন৷ শেষ মাসিকের প্রথম দিনটিকে গর্ভধারনের প্রথম দিন ধরে এর পরবর্তী ৪০ সপ্তাহকে গর্ভধারণের সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে৷

তবে কিছু কিছু গর্ভাবস্থা এর চাইতে বিলম্বিত হতে পারে। প্রায় প্রতি ৫ জন শিশুর মধ্যে এক জন ৪১ সপ্তাহ অথবা এর বেশি সময় ধরে গর্ভে থাকে।ধারণা করা হয়, ৫% থেকে ১০% নারীদের গর্ভকাল ৪২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হতে পারে।

বিজ্ঞাপণ
স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার স্থায়িত্ব

গর্ভাবস্থার স্থায়িত্ব কম বেশি হয় কেন?

ডাক্তার হয়তো আপনাকে ডেলিভারির তারিখ বলে দিয়েছেন, কিন্তু মনে রাখবেন, কেবল শতকরা ৪% শিশুর ক্ষেত্রে পূর্বে নির্দিষ্ট করে দেওয়া তারিখে নরমাল ডেলিভারি হয়।

বেশিরভাগ শিশুর ক্ষেত্রেই ৩৭ সপ্তাহ থেকে ৪১ সপ্তাহের মধ্যে, বিশেষত, ডিউ ডেইটের এক সপ্তাহ আগে বা পরে নরমাল ডেলিভারি হয়। মায়ের গর্ভে যমজ শিশু কিংবা এর বেশি হলে, সেক্ষেত্রে প্রায় সব সময়ই শিশুরা ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্মগ্রহণ করে অর্থাৎ প্রিম্যাচিওর হয়।

শেষ কবে পিরিয়ড হয়েছে সেটার উপর নির্ভর না করে, ডেটিং স্ক্যানের মাধ্যমে প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ নির্ণয় করলে তা অপেক্ষাকৃত বেশি নির্ভুল হয়। কারণ, পিরিয়ড চক্রের মধ্যে ডিম্বস্ফুটনের দিন একেক নারীর একেক রকম হতে পারে।

মূলত মাসিক চক্রের ব্যাপ্তির উপর নির্ভর করেই এটা হয়ে থাকে। কিন্তু ডেটিং স্ক্যানে ভ্রুণের আকার দেখে একদম সঠিক সপ্তাহ এবং সর্বোচ্চ নির্ভুল তারিখ দেওয়া হয়।

[ আরও পড়ুনঃ আলট্রাসাউন্ড রিপোর্ট এবং মাসিকের ভিত্তিতে (LMP) নির্ণয় করা গর্ভের শিশুর বয়স এবং ডিউ ডেটের মধ্যে পার্থক্য হয় কেন? ]

শিশু যখন গর্ভে আসে, ইমপ্ল্যান্টেশনে কত সময় লাগছে সেটার উপরও গর্ভাবস্থা বিলম্বিত হবে নাকি কম সময়ের হবে সেটা নির্ভর করে। নিষিক্ত ডিম্বাণু যদি সময় নিয়ে ইমপ্ল্যান্ট হয়, তাহলে গর্ভাবস্থাও বেশী সময় ধরে হয়ে থাকে।

ইমপ্ল্যান্টেশনের বিভিন্ন ধাপ। ছবিসূত্রঃ invitra.com

সাধারণত, যেসব মায়েরা আগে সন্তান জন্ম দিয়েছেন- তাদের গর্ভাবস্থা তূলনামূলকভাবে কিছুটা কম প্রলম্বিত হয়। প্রথম মা হতে যাচ্ছেন, এমন নারীদের ক্ষেত্রে বিলম্বিত গর্ভাবস্থা হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

আবার অনেক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে খর্বকায় নারীদের তুলনায় লম্বা নারীদের গর্ভকালীন সময় দীর্ঘ হয়। এশিয়া, আফ্রিকা অঞ্চলের নারীদের তুলনায় ইউরোপীয় অঞ্চলের নারীদের গর্ভকালীন সময় বেশী সময় ধরে হয়।

মনে রাখবেন পূর্বে নির্ধারিত করে দেওয়া সময়ের এক সপ্তাহ পরেও যদি নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ দেখা না দেয়, তাহলেও চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। প্রসবের তারিখ পেরিয়ে গেলে কি করবেন তা জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।

গর্ভাবস্থার কত সপ্তাহ চলছে, সেটা জানা কেন জরুরি?

আপনার গর্ভাবস্থার সঠিক বয়স ( gestational age) জানা ডাক্তারের জন্যে খুবই দরকারি। কারণ গর্ভাবস্থার সময় বাড়ার সাথে সাথে মায়ের ভেতরে থাকা ভ্রূণের দ্রুত বৃদ্ধি হতে থাকে।

গর্ভাবস্থার সময়ের উপর ভিত্তি করে গর্ভকালীন সময়ে মায়ের এবং শিশুর সঠিক অবস্থা জানতে বিভিন্ন প্রকার টেস্ট ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে হৃদস্পন্দন ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, ফুসুফুস ঠিকভাবে বেড়ে উঠেছে কিনা সেটা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়, কারণ শিশুর ডেলিভারির সময় এই ইস্যুটি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

গর্ভাবস্থার কোন সপ্তাহে কি ঘটে বা ঘটতে পারে তা ডাক্তার সুনিশ্চিতভাবে জানেন, আর তাই কোন মায়ের ভ্রূণের সঠিক বয়স জানলে তিনি লক্ষণ দেখেই বলে দিতে পারেন সময় অনুযায়ী মা এবং শিশুর সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা।

বিজ্ঞাপণ

প্রসব শুরু হওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আমাদের আর্টিকেল থেকে জেনে নিন।

গর্ভাবস্থার স্থায়িত্ব শিশুর উপর কেমন প্রভাব ফেলে?

ডেলিভারি কত সপ্তাহে হয়েছে তার উপরই নির্ভর করে শিশু স্বাভাবিক সময় হয়েছে নাকি প্রিম্যাচিওর অথবা প্রলংড হয়েছে।

গর্ভাবস্থা যদি ৩৭ সপ্তাহের কম হয়, সেক্ষেত্রে সে শিশুকে প্রি-টার্ম বা প্রিম্যাচুর শিশু বলা হয়। আবার যদি শিশুর জন্ম হতে হতে ৪২ সপ্তাহ পেরিয়ে যায়, তাকে প্রোলোংড বা দীর্ঘায়িত বলা হয়।

উভয় ক্ষেত্রেই আশংকা এবং বিপদের ঝুঁকি রয়েছে তাই এসব ক্ষেত্রে মা শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়।

প্রিম্যাচিওর বার্থ

৩৭ সপ্তাহের আগেই যদি ডাক্তার বাচ্চা জন্ম নেয়ার লক্ষণ দেখেন , তাহলে তিনি যথাসম্ভব চেষ্টা করেন যাতে তখনই ডেলিভারি না করা যায়। তিনি মা-কে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন।

কিন্তু যদি কোন ধরণের বিপদের আশংকা থাকে তবে সাধারণত দ্রুত ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর এই জন্যেই এমন মুহুর্তে যাতে বিচলিত না হতে হয়, তাই আগে থেকেই ডেলিভারির বিষয়ে ডাক্তারের কাছ থেকে ডেলিভারির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জেনে নিন। এক্ষেত্রে আপনার গাইনীর সাথে সাথে একজন শিশু বিশেষজ্ঞেরও উপস্থিত থাকাটা জরুরী।

প্রিম্যাচিওর শিশুকে প্রথম কয়েকদিন বেশ নিবিড়ভাবে পরিচর্যায় রাখতে হয়। তাই শিশুর জন্মের প্রথম কয়েকদিন তাকে হাসপাতালেই থাকতে হতে পারে।

প্রলংড বা দীর্ঘায়ীত জন্ম  

স্বাভাবিক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি ডেলিভারির কোন লক্ষণ দেখা না যায়, সেটা নিশ্চিতভাবেই চিন্তার বিষয়। এমতাবস্থায় ডাক্তার হয়তো মায়ের ও শিশুর অবস্থা বুঝে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে যে, শিশু পেটে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু সময় বেশি থাকলে ক্ষতি কি।

এক্ষেত্রে জেনে রাখুন – মায়ের গর্ভে শিশুকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান, তন্ত্র সংক্রান্ত সহযোগিতাসহ শিশুকে ধরে রাখার কাজ করে প্লাসেন্টা (Placenta)। কিন্তু এই প্লাসেন্টা কেবল ৪০-৪২ সপ্তাহ পর্যন্তই কাজ করে। ৪০-৪২ সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার সময় যখন চলে যায়, তখন প্লাসেন্টা ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে এবং এই কাজগুলো করা বন্ধ করে দিতে থাকে।

শিশুকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান, তন্ত্র সংক্রান্ত সহযোগিতাসহ শিশুকে ধরে রাখার কাজ করে প্লাসেন্টা । ছবি সূত্রঃ discovermagazine

প্লাসেন্টা যদি কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তাহলে শিশুর শ্বাসযন্ত্রজনিত কিংবা অপুষ্টিজনিত কোন সমস্যার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আর তাই গর্ভাবস্থার ৪১ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে ডাক্তার আর দেরি না করে ডেলিভারি করিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন।

প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ এবং গর্ভাবস্থার সপ্তাহ বা মাস কিভাবে হিসাব করবেন তা জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment