গর্ভাবস্থার ২০ তম সপ্তাহে আপনি গর্ভধারণের প্রায় অর্ধেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। এই সময়টা মায়েদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে কারণ যারা ইতিমধ্যেই ভ্রূণের নড়াচড়া বুঝতে পারেননি তারা হয়তো এই সপ্তাহে সে কাঙ্ক্ষিত নড়াচড়া অনুভব করতে পারবেন। তবে ভ্রূণের নড়াচড়া যদি এ সপ্তাহে বুঝতে না পারেন ঘাবড়ে যাবেন না। বেশিরভাগ মায়েরা ১৮-২৪ সপ্তাহের মধ্যে যে কোন সময় শিশুর নড়াচড়া অনুভব করতে শুরু করতে পারেন।
গর্ভাবস্থার ২০ তম সপ্তাহকে প্রেগন্যান্সির দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের সপ্তম সপ্তাহ হিসেবে ধরা হয়। এ সপ্তাহের অবস্থান গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে।
গর্ভধারণের ২০ তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি
গর্ভাবস্থার ২০ তম সপ্তাহে গর্ভের ভ্রূণটি আরও বেশি অ্যাক্টিভ হয়ে ওঠে। আপনি বুঝতে না পারলেও সে এখন জরায়ুর অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইডে ভেসে ক্রমাগত নড়াচড়া করছে। এসময় ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ খুব দ্রুত হতে থাকবে।
গর্ভের শিশুটির আকার ২০ তম সপ্তাহে একটি কলার সাথে তুলনা করা যায়। এসময় ভ্রূণের উচ্চতা থাকে প্রায় ১০.০৮ ইঞ্চি বা ২৫.৬ সেমি এবং এর ওজন হয় আনুমানিক ১০.৫৮ আউন্স বা ৩০০ গ্রামের মত।
গর্ভের শিশুর উচ্চতার হঠাৎ এই বৃদ্ধির কারণ হলো, এতদিন ভ্রূণটির শরীর গুটিয়ে থাকার কারণে তার মাথা থেকে শরীরের নিম্নভাগ অর্থাৎ পশ্চাৎদেশ পর্যন্ত উচ্চতা পরিমাপ করা হতো। কিন্তু এ সপ্তাহ থেকে ভ্রূণটির উচ্চতা পরিমাপের জন্য তার মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হবে।
২০ তম সপ্তাহের দিকে এসে ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। সেগুলো নিম্নরূপঃ
স্বাদগ্রন্থি
ভ্রূণের মুখের স্বাদগ্রন্থিগুলো (Taste bud) এখন অনেকটাই বিকশিত। এমনকি বেশ কিছু স্বাদগ্রন্থি এখন থেকেই বিভিন্ন ধরণের স্বাদের সিগন্যাল তার মস্তিষ্কে প্রেরণ করতে শুরু করতে পারে। এ সময়ে ভ্রূণটি মায়ের খাওয়া বিভিন্ন খাবারের কণা যা রক্তের মাধ্যমে অ্যাম্নিওটিক ফ্লুয়িডে জমা হয়, সেগুলো গ্রহন করতে শুরু করতে পারে।
গবেষকরা যদিও নিশ্চিত নন যে গর্ভের ভ্রূণ এসব খাবারের স্বাদ বুঝতে পারে কিনা তবে, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যাভ্যাস পরবর্তীতে শিশুর খাদ্যাভ্যাসেও বেশ প্রভাব ফেলে।
পরিপাকতন্ত্র
গর্ভাবস্থার ১৩ তম সপ্তাহ থেকেই ভ্রূণটি মিকোনিয়াম তৈরি করতে শুরু করে। এ সপ্তাহে এসে তা আরও বাড়তে থাকবে এবং ভ্রূণটির পরিপাকতন্ত্রে জমা হতে থাকবে। মিকোনিয়াম হল ঘন, আঠালো এবং গাঁড় সবুজবর্ণের একধরনের পদার্থ যা জন্মের প্রথম কিছুদিন শিশু মল হিসেবে ত্যাগ করে।
গর্ভে ভ্রূণটির গ্রহন করা অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইড, তার পরিপাকতন্ত্রের তরল, চামড়ার কোষ এবং লানুগোর সমন্বয়ে এই মিকোনিয়াম তৈরি হয়। কিছু কিছু নবজাতক প্রসবের সময় বা জন্মগ্রহণের মুহূর্তে এই মিকোনিয়াম মল হিসেবে ত্যাগ করতে পারে। তবে বেশিরভাগ শিশু জন্মের প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রথম মলত্যাগ করে।
জননাঙ্গ
ভ্রূণের জননাঙ্গের বাহ্যিক অংশ এখনো পুরোপুরি বিকশিত না হলেও এসময়ে করা আলট্রাসাউন্ডে তার লিঙ্গ বা জেন্ডার বোঝা যেতে পারে। ভ্রূণটি মেয়ে হলে তার জরায়ুর গঠন এখন পরিপূর্ণ এবং তার যৌনাঙ্গের নালীর (Vaginal Canal) গঠন এ সপ্তাহে শুরু হতে পারে। তার ডিম্বাশয়ে এ সপ্তাহে প্রায় ৭০ লক্ষ ডিম্বাণু জমা হয়ে যায়।
ভ্রূণটি ছেলে হলে তার অণ্ডকোষের থলিটির গঠন এসপ্তাহে চলমান থাকবে। এই থলির গঠন শেষ হলে তার পেটের ভেতরে থাকা অণ্ডকোষগুলো নিচে নেমে আসবে।
হাঁড়
এ সপ্তাহে ভ্রূণের নরম তরুণাস্থিগুলো আরও শক্ত হয়ে হাঁড়ে পরিণত হতে থাকবে, তার কঙ্কাল আরও দৃঢ় হয়ে উঠবে এবং তার বোন ম্যারো রক্ত কণিকা উৎপন্ন করতে শুরু করবে।
হৃদপিণ্ড
ভ্রূণের মস্তিষ্ক এখন তার হৃদপিণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে যার ফলে তার হৃদপিণ্ড একটি নির্দিষ্ট ধারায় স্পন্দিত হতে থাকে। এ সপ্তাহে ভ্রূণের হৃদস্পন্দন হতে পারে প্রতি মিনিটে ১২০ থেকে ১৬০ বার যা মায়ের হৃদস্পন্দনের প্রায় দ্বিগুণ।
২০ তম সপ্তাহে মায়ের শারীরিক পরিবর্তন
গর্ভাবস্থার ২০ তম সপ্তাহ নাগাদ মায়ের ক্রমবর্ধমান জরায়ুটি পেলভিস অতিক্রম করে নাভির কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে। এসময় তাই জরায়ুর চাপে অনেক মায়ের নাভি বাইরের দিকে বেরিয়ে আসতে পারে। এটি কোন ক্ষতির কারণ নয় এবং স্থায়ীও নয়। তাই চিন্তিত হবেন না।
বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জরায়ুকে জায়াগা করে দিতে মায়ের শরীরের অন্ত্রগুলো পেটের উপরের দিকে এবং পাশের দিকে সরে যায়। অন্ত্রগুলোর এই স্থান পরিবর্তনের কারণে মায়ের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন – বুক জ্বালা করা, বদহজম ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থার আগের ওজনের উপর নির্ভর করে এসময় মায়ের ওজন প্রায় ৮-১৪ পাউন্ড বেড়ে যেতে পারে। ডাক্তারদের মতে গর্ভধারণের আগে যদি মায়ের বিএমআই বা বডি ম্যাস ইনডেক্স স্বাভাবিক থাকে তবে এর পরবর্তীতে প্রতি সপ্তাহে ১ পাউন্ড করে ওজন বৃদ্ধি পেলে তা স্বাভাবিক। আবার, যদি গর্ভধারণের আগে বিএমআই কম বা বেশি থাকে অথবা যদি প্রথম ট্রাইমেস্টারে মায়ের ওজন খুব বেশি কমে যায় বা বেড়ে যায় তবে তার উপর নির্ভর করে মায়ের ওজন বাড়ানো বা কম বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হবে।
তবে মনে রাখবেন এই ১ পাউন্ড করে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার হিসেবটি একটি গড়পড়তা হিসেব। মায়ের ওজন যদি কোন সপ্তাহে আধ পাউন্ড বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তী সপ্তাহে দেড় পাউন্ড বাড়ে তবে সেটাও খুব স্বাভাবিক।
গর্ভাবস্থার এ সময় যেসব উপসর্গ বেশি দেখা দিতে পারে তা হল –
মাথা ব্যাথা
কিছু কিছু মায়েদের মাথা ব্যাথা এসময় বেড়ে যেতে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের কারণেই এমনটা হয়। এছাড়াও ক্লান্তি, ক্ষুধা, পানিশূন্যতা, স্ট্রেস লেভেল, সতেজ বাতাসের অভাব কিংবা ব্যায়াম ইত্যাদি মাথা ব্যাথা হওয়া ও তার তীব্রতাকে প্রভাবিত করে।
তবে এসব ক্ষেত্রে হুটহাট ওষুধ না খেয়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া উচিত। প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়া, গরম পানিতে গোসল বা মাথা ম্যাসাজ এ ক্ষেত্রে উপকারি। এ ব্যাপারে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিন।
যদি খুব বেশি ব্যাথা করে বা মাথা ব্যাথার ধরন আপনার অপরিচিত মনে হয় অথবা যদি এর সাথে অন্য আর কোন লক্ষণ থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তারকে জানাতে হবে।
চুলকানি
গর্ভাবস্থায় হালকা চুলকানি হওয়া নিয়ে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই চিন্তার কিছু নেই। এটা খুব স্বাভাবিক। প্রায় ২০ ভাগ গর্ভবতী মহিলার চুলকানির সমস্যা থাকে। এ সময় মায়েদের পেট এবং ব্রেস্টের আশেপাশে চুলকানি বেশী হতে পারে, কারণ দুটো স্থানের চামড়াই এ সময় প্রসারিত হয়। শুষ্ক ত্বক ও হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও এ সময় চুলকানি দেখা দিতে পারে।
চুলকানি হলে যথাসম্ভব কম চুলকানোর চেষ্টা করুন। এতে ত্বক আরও ফেটে যেতে পারে এবং ত্বকের ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। ত্বক আদ্র রাখতে ময়শ্চারাইজার ব্যাবহার করতে পারেন। এগুলো সুগন্ধিযুক্ত না হলেই ভালো। একজিমা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শকৃত ক্রীম বা লোশন ব্যাবহার করতে হবে।
সাধারণত হালকা চুলকানি সম্পর্কে চিন্তা করার কিছুই নেই, কিন্তু যদি চুলকানি তীব্র হয়ে উঠে, তবে এটি অবস্টেট্রিক কোলেস্টাসিস (ওসি)নামক একটি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, যা দ্বারা লিভারের একটি অবস্থাকে বোঝানো হয়। এই রোগ ১০০ জনের মধ্যে ১ জন গর্ভবতী মহিলাদের হতে পারে এবং এসব ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
ইডেমা বা শরীরে পানি আসা
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় মায়ের শরীরে প্রায় ৫০ ভাগ বেশী রক্ত ও তরল উৎপন্ন হয়। এই অতিরিক্ত রক্ত এবং তরলের কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যায়।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থায় শরীর ফুলে যাওয়া বা ইডেমা খুব স্বাভাবিক। এতে ভয়ের কোন কারণ নেই । বেশীর ভাগ মায়েরাই কম বেশী এ সমস্যায় ভোগেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইডেমা ভয়ের কারণ হতে পারে। যদি শরীর ফুলে যাওয়ার সাথে সাথে মাথা ব্যাথা থাকে এবং দৃষ্টি ঝাপসা মনে হয় তবে তা প্রি-এক্লাম্পশিয়ার লক্ষণ হতে পারে।
আরেকটি ভয়ের কারণ হলো যদি শুধুমাত্র এক পা ফুলে যায়। যদি শুধু এক পা ফুলে যায় এবং পায়ের কাফ ও উরুতে ব্যাথা অনুভূত হয় তবে তা রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষন হতে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে গর্ভাবস্থায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে বিশেষ করে প্রথম ট্রাইমেস্টারে। তাই যখনই মনে হবে আপনার এক পা অন্য পায়ের চাইতে বেশী ফুলে আছে অতিসত্বর আপনার ডাক্তারকে জানান।
পেট শক্ত হয়ে যাওয়া বা টান টান অনুভূতি
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিনমাসের মধ্যে, জরায়ুর আকার বাড়ার সাথে সাথে তা পেটের দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে , মায়ের পেট শক্ত হয়ে যাওয়া বা টান টান হয়ে যাওয়া অনুভূতি হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে এই অনুভূতি বেশ স্বাভাবিক হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয়ে যাওয়া, মায়ের দেহের ধরনের উপরও অনেকটা নির্ভর করে। গর্ভাবস্থায় রোগা এবং স্থূল মহিলাদের পেট শক্ত হয়ে যাওয়া অনুভূতি বিভিন্ন হতে পারে। প্রধানত, রোগা মহিলারা গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এটি অনুভব করেন এবং স্থূল মহিলারা তৃতীয় তিনমাসের মধ্যে তা অনুভব করে থাকেন।
শারীরিক মিলনের ইচ্ছা
এ সপ্তাহ থেকে শারীরিক মিলনের ইচ্ছা তীব্রতর হতে পারে। অনেক নারীর কাছেই শোনা গেছে যে এ সময় সঙ্গীর সাথে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়। এস্ট্রোজেন (Estrogen) হরমোনের নিঃসরণ এবং মায়ের প্রজননতন্ত্রে অতিরিক্ত রক্ত সঞ্চালনের কারণে এমনটা হয়।
গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক শিশুর কোন ক্ষতি করে না।ডাক্তার যদি কোনো কারণে নিষেধ করে না থাকেন তাহলে এ সময় সহবাসে কোনো সমস্যা নেই।
চুল ও নখের বৃদ্ধি
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে শরীরে সার্কুলেশন বেড়ে যায় যাতে মায়ের চুল ও নখের কোষগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের চাইতে বেশি পুষ্টি পৌঁছায়। এর প্রভাবে এসময় মায়ের নখগুলো শক্ত এবং চুল আগের চাইতে ঘন ও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে। তবে নখগুলো লম্বা হওয়ার সাথে সাথে শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে উঠতে পারে।
বাচ্চার জন্মের পর যখন হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে তখন থেকে এগুলো আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে।
এসব ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা আরও অনেক ধরণের উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। গর্ভকালীন সব ধরণের উপসর্গ নিয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।
গর্ভধারণের এ সপ্তাহে করনীয়
আমাদের দেশের বেশির ভাগ গর্ভবতী মহিলাই আয়রনের অভাব বা রক্তশূন্যতায় ভুগে থাকেন৷ আয়রন শরীরে হিমোগ্লোবিন ও এনার্জি তৈরিতে সাহায্য করে, গর্ভস্থ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্নায়ুতন্ত্র বিকাশ করে।
Institute Of Medicine (IOM) এর মতে, গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। এই সময় যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন গ্রহণ করা না যায় তাহলে এনেমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে৷
রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধ করার জন্য গর্ভবতী মাকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে৷ গরু কিংবা খাসির কলিজা, দেশি বাচ্চা মুরগি, ডিম, মাছ, কলা, বিট, ডালিম, কচু, কচুশাক, পালং শাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে৷
এই সপ্তাহে গর্ভবতী মা’কে অ্যানোমালি স্ক্যান (Anomaly Scan) করার পরামর্শ দেয়া হতে পারে। অ্যানোমালি স্ক্যান করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় গর্ভাবস্থার ১৮ থেকে ২২ সপ্তাহ (পঞ্চম মাস)।
অ্যানোমালি স্ক্যানে মা বা গর্ভের ভ্রূণের কোন ক্ষতি হয়না, এটি সাধারণ আলট্রাসাউন্ডের একটি উন্নত সংস্করণ। তবে মায়ের কিছুটা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে কারণ গর্ভের শিশুকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য বেশ কিছুটা সময় নিয়ে মায়ের পেটে একটু চাপ দিয়ে স্ক্যান করা হয়।
মায়ের ব্লাডার ভর্তি থাকলে আলট্রাসাউন্ডে আরও ভালো বোঝা যায়। তাই স্ক্যান করতে যাওয়ার আগে এসব বিষয় মাথায় রাখবেন। ডাক্তারের কাছে যাবার সময় শিশুর বাবাকেও সম্ভব হলে সঙ্গে নিয়ে যান। তাহলে গর্ভাবস্থার বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে দু’জনে একসাথেই জানতে পারবেন।
গর্ভাবস্থার এই সময় থেকেই কেগেল এক্সসারসাইজ শুরু করার ভালো সময়। এই ব্যায়ামের ফলে ভ্যাজাইনার পেশীগুলো শক্তিশালী হয় যা সন্তান প্রসবের সময় এবং এর পর দ্রুত সেরে উঠতে বেশ কাজ দেয়। কেগেল ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং এটি আপনার জন্য নিরাপদ কিনা তা জানতে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ের নিরাপদ ব্যায়ামগুলোও করা উচিৎ। এতে গর্ভকালীন সময়ের অতিরিক্ত ওজন বহন করার শক্তি পাওয়া যায় এবং গর্ভকালীন বিভিন্ন ব্যাথা উপশমেও তা খুব কার্যকর।
আপনার যদি আরও সন্তান থেকে থাকে, তাহলে নতুন অতিথির জন্য তাকে এখন থেকেই মানসিকভাবে তৈরি করতে শুরু করুন। অনেক বাচ্চাই সহজে তাদের নতুন ভাই/বোনের সাথে তাদের ঘর, খেলনা, কাপড়চোপড়, সর্বোপরি মা-বাবাকেও শেয়ার করতে চায় না। কীভাবে প্রথম সন্তানকে নতুন শিশুটির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করবেন সে ব্যাপারে আরো জানুন।
সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তীকালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত। নতুন মায়েরা অনেক কিছুই জানেন না এবং অনেক ব্যাপারে নার্ভাস থাকেন। হাজার হাজার উপদেশের ভিড়ে কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল সেটিও বুঝে উঠতে পারেন না। গর্ভকালীন সময়ে যুগোপযোগী বিভিন্ন লেখা পড়ে ও এক্সপার্টদের কাছ থেকে করণীয় কি ইত্যাদি নিজেকেই জেনে নিতে হবে। এবং সামনের কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
সবার জন্য শুভকামনা।
<<গর্ভাবস্থা সপ্তাহ ১৯
গর্ভাবস্থা সপ্তাহ ২১>>