জন্মের সময় শিশুটি দেখতে কেমন হবে, গর্ভাবস্থার ২২ তম সপ্তাহে তা প্রায় স্পষ্ট হয়ে যায়। পার্থক্য শুধু সে আকারে এখন অনেক ছোট আর তার চামড়ায় এখন অনেক ভাঁজ থাকবে। তবে ধীরে ধীরে সময়ের সাথে এই ভাঁজগুলো মিলিয়ে যাবে।
গর্ভাবস্থার ২২ তম সপ্তাহকে প্রেগন্যান্সির দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের নবম সপ্তাহ হিসেবে ধরা হয়। এ সপ্তাহের অবস্থান গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে।
গর্ভধারণের ২২ তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি
গর্ভাবস্থার ২২ তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুটির পেশীর বিকাশ খুব দ্রুত হতে থাকে যার কারণে তার নড়াচড়া বেড়ে যায় এবং অনেকটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এসময় ভ্রূণের হৃৎপিণ্ড বেশ কর্মক্ষম হয়ে ওঠে । তাই, এখন ডাক্তার স্টেথেস্কোপের সাহায্যেই ভ্রূণের হৃদস্পন্দন শুনতে পারবেন।
ভ্রূণটি তার শরীরের অতিরিক্ত তরল বের করে দেয়ার জন্য মূত্রত্যাগ করতে থাকে। ভ্রূণের শরীর থেকে যে বর্জ্য পদার্থ অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইডে জমা হয় তা প্লাসেন্টার মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়ে মায়ের রক্তপ্রবাহে মেশে। তাই এ সময় মায়ের শরীর নিজস্ব বর্জ্যের সাথে সাথে ভ্রূণের বর্জ্য নিষ্কাসনের জন্য কাজ করতে থাকে। গর্ভাবস্থায় মায়ের কিডনির অতিরিক্ত কাজ করার এটি একটি অন্যতম কারণ।
গর্ভের শিশুটির আকার ২২ তম সপ্তাহে একটি পেঁপের সাথে তুলনা করা যায়। এসময় ভ্রূণের উচ্চতা থাকে প্রায় ১০.৯৪ ইঞ্চি বা ২৭.৮ সেমি এবং এর ওজন হয় আনুমানিক ১৫.১৭ আউন্স বা ৪৩০ গ্রামের মত।
২২ তম সপ্তাহের দিকে এসে ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। সেগুলো নিম্নরূপঃ
চোখ
ভ্রূণের চোখের গঠন এ সপ্তাহ নাগাদ প্রায় শেষের দিকে। যদিও তার আইরিসে (Iris, চোখের মনির চারপাশের গোলাকার রঙ্গিন অংশ) এখনো পিগমেন্ট জমা না হওয়ার কারণে চোখের রং নির্ধারিত হয়নি। এই পিগমেন্টেশন প্রক্রিয়া শিশুর জন্মের পরও চলতে থাকে এবং তার চোখের স্থায়ী রং কেমন হবে তা নির্ধারিত হতে হতে জন্মের পর প্রায় ৯ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
২২ তম সপ্তাহে তার চোখের অশ্রু নালীর গঠন শুরু হতে পারে। তার চোখের পাতা ও ভ্রুয়ের গঠন এখন সম্পূর্ণ। ভ্রূণের চোখ বন্ধ থাকলেও তার চোখের মনিগুলো ক্রমাগত নড়তে থাকবে। আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে সে প্রথমবারের মত চোখ মেলতে শুরু করবে।
স্নায়ু
ভ্রূণের মস্তিষ্ক ও স্নায়ু এ সপ্তাহের দিকে এসে যথেষ্ট বিকশিত হয়ে যায় এবং এখন থেকেই ভ্রূণটি স্পর্শের অনুভূতি পেতে শুরু করতে পারে। এই নতুন অনুভূতি পেতে সে মাঝে মাঝে তার মুখে ও শরীরে হাত বুলাতে শুরু করবে।
তার দৃষ্টিশক্তিও এখন আগের চাইতে আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠবে। এ সময় যদি ভ্রূণের মুখমণ্ডলের অবস্থান বরাবর মায়ের পেটে উজ্জ্বল আলো ফেলা হয় তবে সে হয়তো নড়ে উঠতে পারে।
হাত
ভ্রূণের পেশী ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের সাথে সাথে সে হাতের আঙ্গুলগুলো আরও ভালোভাবে মুষ্টিবদ্ধ করতে পারবে। সে হয়তো কখনো কখনো তার নাক, কান এবং আম্বিলিকাল কর্ড মুঠো করে ধরবে।
ত্বক
২২ সপ্তাহের শেষ নাগাদ ভ্রূণের সম্পূর্ণ দেহ লানুগো (Lanugo) নামক হালকা নরম লোমের স্তরে আচ্ছাদিত হয়ে যাওয়ার কথা। তবে, জন্মের ঠিক আগে আগে এই লোমশ আবরণ বেশিরভাগটাই মিলিয়ে যায়। জন্মের পরও সামান্য কিছু অংশে এই আবরণ থাকতে পারে, তবে ক’দিনের মধ্যে সেটাও ঝরে যাবে।
ভ্রূণের ত্বকে এসময় অনেক ভাঁজ থাকবে। পরবর্তীতে, ত্বকের নিচে ধীরে ধীরে চর্বির আবরণ জমে এই ভাঁজগুলো মিলিয়ে যাবে।
বুক
এসময় গর্ভের ভ্রূণের স্তনবৃন্ত গঠিত থাকে। তবে, গর্ভের ভ্রূণটি মেয়ে হলে তার বুকের মামারি গ্লান্ডের (Mammary Gland) গঠন এ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে যেতে পারে। এই গ্ল্যান্ডটি মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের সন্তান জন্মদানের পর ব্রেস্টমিল্ক তৈরিতে কাজ করে।
প্রজনন তন্ত্র
মেয়ে ভ্রূণ হলে তার জরায়ুর গঠন এখন পরিপূর্ণ এবং তার যৌনাঙ্গের নালীর (Vaginal Canal) গঠন শুরু হয়ে গেছে। আর ভ্রূণটি যদি ছেলে হয় তবে এতদিন তার পেটের ভেতর থাকা অণ্ডকোষ পরিণত হয়ে নীচের দিকে তাদের নির্ধারিত স্থানে আসার কাজটি চলমান থাকবে।
এছাড়াও এসময় ভ্রূণের ঠোঁটের গঠন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং তার অগ্নাশয় (Pancreas) পরিপক্ব হতে থাকে।
২২ তম সপ্তাহে মায়ের শারীরিক পরিবর্তন
গর্ভাবস্থার এসময় মায়ের জরায়ুর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটতে থাকে এবং তা মায়ের নাভীর প্রায় এক ইঞ্চি উপরে চলে আসে। এই সপ্তাহে মায়ের পেট দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে। তবে, কতখানি দৃশ্যমান হবে সেটি কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করতে পারে, অর্থাৎ পেটের বৃদ্ধির পরিমাণ একেক মায়ের এক এক রকম হয়। সুতরাং, অন্য গর্ভবতী মায়েদের চাইতে আপনার পেটের আকার বড় বা ছোট কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
এসময় কারো কারো পায়ের আকারও বড় হয়ে যেতে পারে। পায়ে পানি আসা ছাড়াও এই সমস্যার অন্য আরেকটি কারণ থাকতে পারে। সেটি হলো, গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে যে রিলাক্সিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটে তা মায়ের পায়ের লিগামেন্টগুলোকে শিথিল করে দিতে পারে। এতে মায়ের পায়ের হাঁড় সামান্য প্রসারিত হয়ে যেতে পারে যার কারণে পায়ের পাতা চওড়া হয়ে যায়। পায়ের আকারের এই পরিবর্তন বেশিরভাগ সময় স্থায়ী ভাবে রয়ে যায়।
গর্ভাবস্থার এ সময় যেসব উপসর্গ বেশি দেখা দিতে পারে তা হল –
বুক জ্বালাপোড়া
গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ মায়ের বুক জ্বালাপোড়া করে। এটা খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় ঘটনা। এই বুকজ্বালা কখনও শুধু বুকে আবার কখনও শুধু গলায় বা উভয় স্থানে হতে পারে।গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম সন্তান জন্মের সময় এ সমস্যা বেশি হয়।
অনেকেই আছেন যারা জীবনে প্রথমবারের মত এ সমস্যা অনুভব করে থাকেন গর্ভধারনকালে। যদিও বুক জ্বালাপোড়া করা গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক উপসর্গগুলোর মধ্যে একটি এবং এর তেমন ক্ষতিকর প্রভাব নেই, তারপরও এ সমস্যা অনেক অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
যে ভালভটি (valve) আমাদের পাকস্থলী থেকে খাদ্যনালীকে আলাদা করে রাখে, সেটি গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রভাবে বেশ কিছুটা নমনীয় হয়ে যায়, ফলে গ্যাস্ট্রিক এসিড উপর দিকে এসে খাদ্যনালিতে প্রবেশ করে বুক জ্বালা শুরু হওয়ার কারণ হতে পারে। এছাড়াও গর্ভাবস্থার শেষ দিকে বড় হয়ে যাওয়া জরায়ু পাকস্থলীকে উপরের দিকে কিছুটা চাপ দেয়ার ফলে, পাকস্থলীর এসিড অনেকসময় উপরের খাদ্যনালীতে উঠে আসে।
ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন
ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন হলো জরায়ুর অনিয়মিত সংকোচন যা গর্ভাবস্থার মধ্যবর্তী সময়ে (দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার) দেখা দিতে পারে। এই সংকোচনকে ফলস লেবার পেইনও বলে।
তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, প্রেগন্যান্ট মায়েরা তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে অথবা গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এটি অনুভব করেন। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এই কন্ট্রাকশান নাও হতে পারে।
ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশনকে ‘প্র্যাকটিস কন্ট্রাকশনও’ বলা হয় কারন এ ধরনের কন্ট্রাকশন আসল প্রসবের লক্ষণ না হলেও মায়ের শরীরকে আসল প্রসবের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে।
ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন গর্ভাবস্থার ১৬ সপ্তাহের মধ্যে শুরু হতে পারে। তবে শুরুর দিকে এটি এতই মৃদু থাকে যে অনেক মা তা অনুভব করতে পারেনা। জরায়ুর আকার যত বৃদ্ধি পেতে থাকে ততই এ কন্ট্রাকশন বেশী অনুভূত হয়।
ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশনের সময় জরায়ু, তলপেট বা ভ্যাজাইনার আশেপাশের অংশে সংকোচন অনুভূত হয়। ব্যাপারটি অনেকটা ওই স্থানের মাংসপেশি একবার শক্ত হয়ে যাওয়া আবার ছেড়ে দেয়ার মত অনুভূতি মনে হয়। প্রসবের সময়ও এ ধরনের অনুভূতিই হয়। তবে ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন এবং আসল প্রসব যন্ত্রণার মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে।
যেমন, ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন সাধারণত অনিয়মিত এবং ব্যাথাহীন হয়। তবে তা মাঝে মাঝে তীব্র, ব্যাথাযুক্ত এবং অস্বস্তিকর হতে পারে। প্রসব বেদনার মত এ ধরনের কন্ট্রাকশন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকেনা বা তীব্রতর হয়না এবং কন্ট্রাকশনের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যাবধান কমতে থাকেনা।
ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন সাধারণত ৩০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ধরে হতে পারে তবে ঘণ্টায় একবার বা দুবারের বেশী হয়না। বেশীরভাগ সময়ই শরীরের অবস্থান পরিবর্তন করলে বা বিশ্রাম নিলে এটি চলে যায়।
নাভী বাইরের দিকে বেরিয়ে আসা
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের শেষের দিকে এসে বেশিরভাগ মায়ের নাভী বাইরের দিকে বেরিয়ে আসতে পারে। ক্রমবর্ধমান জরায়ু মায়ের পেটে চাপ দেয়ার কারণে পেটের চামড়া টানটান হয়ে এমনটি হয়। মনে রাখবেন গর্ভকালীন অন্য সব স্বাভাবিক উপসর্গের মতই এটি কোনো ক্ষতির কারণ নয় এবং সন্তান জন্মদানের কয়েক মাসের মধ্যে তা আবার স্বস্থানে ফিরে যায়। তবে হ্যাঁ, সন্তান জন্মের পর মায়ের নাভী স্থায়ীভাবে কিছুটা প্রশস্ত হয়ে যেতে পারে।
ব্রণ
গর্ভবতী নারীদের ত্বকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ব্রণের অবস্থার অবনতি হওয়া। এসময় অনেকের মুখে, বুকে বা পিঠে ব্রণের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। হরমোনের পরিবর্তন ব্রণের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় এন্ড্রোজেনের হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা তৈলগ্রন্থির (oil gland) উপর প্রভাব ফেলে। ফলে এই গ্ল্যান্ডগুলো প্রচুর তেল (সিবাম) উৎপন্ন করে। একারণেও গর্ভাবস্থায় ব্রণ বেড়ে যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ব্রণ সমস্যায় আতংকিত হবেন না, কারণ প্রসবের পরে এদের বেশীরভাগই চলে যায়। যে সব মায়েরা আগে এই ব্রণের সমস্যায় ভুগেছেন গর্ভাবস্থায় তাদের ওপরই ব্রণের আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
দিনে বেশ কয়েকবার পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। তবে, ক্যামিক্যাল সমৃদ্ধ কস্মেটিকস ব্যাবহার না করাই শ্রেয়। সবচেয়ে ভালো হয় শসা, অ্যালভ্যারা কিংবা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে মুখ পরিষ্কার রাখলে। কখনওই ব্রণ খুঁটবেন না বা তার ওপর ঘষাঘষি করবেন না। এতে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে ও ব্রণ বেড়ে যায়। এতে মুখে স্থায়ী দাগ হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। মুখ মোছার সময়, মুখ না ঘষে নরম পরিষ্কার আলাদা একটি কাপড় দিয়ে হালকা চেপে পানি শুষে নিন।
ত্বক বিশেষজ্ঞের ( Dermatologist) পরামর্শ ছাড়া ত্বকের সমস্যায় কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেন না, কারণ কোনো কোনো ওষুধ গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। প্রয়োজনে যদি কোনো প্রেসক্রিপশন নিতেই হয়, তাহলে ত্বক বিশেষজ্ঞকে শুরুতেই জানিয়ে রাখুন যে আপনি গর্ভবতী।
এসব ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা আরও অনেক ধরণের উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। গর্ভকালীন সব ধরণের উপসর্গ নিয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।
গর্ভধারণের এ সপ্তাহে করনীয়
গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভাবস্থায় যেসব মায়েরা ব্যায়াম করেছেন তাদের সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশ অন্যদের তুলনায় ভালো হয়। তাই গর্ভাবস্থায় হালকা এবং নিরাপদ শরীরচর্চা করুন। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাও বেশ উপকারী।
এই সময় থেকে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ শুরু করতে পারেন। এসব ব্যায়ামগুলো প্রসবের সময় বেশ সাহায্য করে। সেই সাথে প্রসবের পর দ্রুত সেরে উঠতে এবং প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার মত সমস্যা রোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে ।
আগে টিটি টিকা দেয়া আছে কিনা তার উপর ভিত্তি করে গর্ভাবস্থায় ২ বা ৩ ডোজ টিকা দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। গর্ভাবস্থায় টিটি টিকা কখন ও কতবার দিতে হবে তা বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তাই এ বিষয়ে অন্য কারো কাছ থেকে পরামর্শ না নিয়ে সরাসরি আপনার ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞাসা করুন।
গর্ভাবস্থার এসময়ে বাচ্চার স্বাদগ্রন্থির প্রায় অনেকটাই বিকাশ হয়ে যায়। কিছু গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসময় মায়ের খাদ্যাভ্যাস পরবর্তীতে শিশুর খাদ্যাভ্যাসে বেশ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নিজে সুস্থ থাকতে, এবং জন্মের পর শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠনে এখন থেকেই মাকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি রাখুন। নিকোটিন ক্যাফেইন, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড, ক্যান বা প্যাকেটজাত জূস ইত্যাদি পরিহার করুন।
গর্ভবতী মা চাকরিজীবী হলে, কী ধরনের কাজ করেন এবং গর্ভাবস্থার কতদিন পর্যন্ত আপনি কাজ করতে পারবেন তা নিয়ে আপনার চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করুন৷ মা ও ভ্রূণের স্বাস্থ্যের অবস্থা সাপেক্ষে বিষয়টি একেকজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে।
প্রেস্ক্রিপশান এবং টেস্ট রিপোর্টগুলো যত্ন করে ফাইল করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন । হাসপাতালে ভর্তির সময় কিংবা পরবর্তীতে এগুলোর দরকার হবে। প্রথম চেকআপ থেকে যেসব মেডিকেল টেস্ট করিয়েছেন এবং যেসব টিকা নিয়েছেন, তার প্রতিটি রিপোর্ট তারিখ অনুযায়ী ফাইলে গুছিয়ে রাখুন। ডাক্তারের নাম, ঠিকানা, যাবতীয় ফোন নম্বর ইত্যাদির পরিষ্কার করে লিখে ফাইলের শুরুতে যুক্ত করে রাখুন।
প্রসব সম্পর্কে এবং সন্তান লালন পালন নিয়ে এখন থেকেই কিছু কিছু পড়াশোনা শুরু করুন। এসব বিষয়ে না জানার কারণে অনেক সময় বাবা মায়ের মনে অস্থিরতা কাজ করতে পারে যাতে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ইত্যাদি বেড়ে যায়। এই বিষয়গুলো নিয়ে জানা থাকলে আত্মবিশ্বাস অনেকটুকু বেড়ে যাবে যা স্ট্রেস কমানোর পাশাপাশি আপনাকে চিন্তামুক্ত রাখবে। আজকাল ইন্টারনেটের বদৌলতে ঘরে বসেই অনেক বিষয়ে জানা যায়।
সবার জন্য শুভকামনা।