২১ তম সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের ভ্রূণের প্রয়োজনীয় সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রায় গঠিত হয়ে যায়। ধীরে ধীরে ভ্রূণটি আকারে বড় হতে থাকে এবং বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর পরিপূর্ণ বিকাশ হতে থাকে। গর্ভাবস্থার এ পর্যায়ে এসে, ভ্রূণের ছোট ছোট হাত-পাগুলো তার শরীরের অন্যান্য অংশের সমানুপাতিক হয়ে যায় এবং তার চেহারাও অনেকটাই পরিপূর্ন মানব শিশুর আকার নিতে থাকে ।
গর্ভাবস্থার ২১ তম সপ্তাহকে প্রেগন্যান্সির দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের অষ্টম সপ্তাহ হিসেবে ধরা হয়। এ সপ্তাহের অবস্থান গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে।
গর্ভধারণের ২১ তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি
গর্ভের ভ্রুনটি তার বেশিরভাগ পুষ্টি প্লাসেন্টার মাধ্যমে পেয়ে থাকে। ২১ সপ্তাহ নাগাদ ভ্রূণের অন্ত্র অনেকটাই বিকশিত হয়ে যায় এবং অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইড থেকেও স্বল্প পরিমাণে পুষ্টি শোষণ করা শুরু করে। তবে, পুষ্টির চাইতেও শোষিত অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইড মূলত ভ্রূণের খাদ্যগ্রহণ ও পরিপাকতন্ত্রের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।
অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইডের স্বাদ মায়ের গ্রহণ করার খাবারের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। আবার এ সময়ে ভ্রূণের স্বাদগ্রন্থি যথেষ্ট বিকশিত হয়ে যায় বলে সে এসব স্বাদ অনুভব করতে শুরু করতে পারে। গবেষকরা যদিও নিশ্চিত নন যে গর্ভের ভ্রূণ এসব খাবারের স্বাদ বুঝতে পারে কিনা তবে, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যাভ্যাস পরবর্তীতে শিশুর খাদ্যাভ্যাসেও বেশ প্রভাব ফেলে।
গর্ভের শিশুটির আকার ২১ তম সপ্তাহে একটি গাজরের সাথে তুলনা করা যায়। এসময় ভ্রূণের উচ্চতা থাকে প্রায় ১০.৫১ ইঞ্চি বা ২৬.৭ সেমি এবং এর ওজন হয় আনুমানিক ১২.৭ আউন্স বা ৩৬০ গ্রামের মত।
পূর্ববর্তী সপ্তাহগুলো তুলনায় গর্ভের শিশুর উচ্চতার হঠাৎ এই বৃদ্ধির কারণ হলো, এতদিন ভ্রূণটির শরীর গুটিয়ে থাকার কারণে তার মাথা থেকে শরীরের নিম্নভাগ অর্থাৎ পশ্চাৎদেশ পর্যন্ত উচ্চতা পরিমাপ করা হতো। কিন্তু এ সপ্তাহ থেকে ভ্রূণটির উচ্চতা পরিমাপের জন্য তার মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হবে।
২১ তম সপ্তাহের দিকে এসে ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। সেগুলো নিম্নরূপঃ
ত্বক
এসময় থেকে ভ্রূণের পাতলা চামড়ার নিচে ক্যাপিলারিস (Capillaries) নামক খুব ছোট ছোট রক্তবাহী নালী তৈরি হতে থাকে। ক্যাপিলারিস হলো মানুষের শরীরের সবচাইতে ক্ষুদ্র রক্তবাহী নালী যা ধমনী ও শিরার মাঝে সংযোগ স্থাপন করে। এই রক্তবাহী নালীগুলোর কারণে এসময় থেকে ভ্রূণের চামড়া গোলাপি থেকে লাল বর্ণ ধারণ করতে থাকে।
চুল
এ সময় ভ্রূণের মাথার চুল, ভ্রু ও চোখের পাতার লোমগুলো আরও ঘন ও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
জননাঙ্গ
ভ্রূণের জননাঙ্গের বাহ্যিক অংশ এখনো পুরোপুরি বিকশিত না হলেও এসময়ে করা আলট্রাসাউন্ডে তার লিঙ্গ বা জেন্ডার বোঝা যেতে পারে। ভ্রূণটি মেয়ে হলে তার জরায়ুর গঠন এখন পরিপূর্ণ এবং তার যৌনাঙ্গের নালীর (Vaginal Canal) গঠন এ সপ্তাহে শুরু হতে পারে।
ভ্রূণটি ছেলে হলে তার অণ্ডকোষের থলিটির গঠন এসপ্তাহে চলমান থাকবে। এই থলির গঠন শেষ হবার পরই তার পেটের ভেতরে থাকা অণ্ডকোষগুলো নিচের দিকে নেমে যাবে ।
প্লাসেন্টা
পুরো গর্ভাবস্থা জুড়েই গর্ভের ভ্রূণের পুষ্টি সরবরাহের জন্য প্লাসেন্টার বৃদ্ধি অব্যহত থাকে। এসময় পর্যন্ত প্লাসেন্টার ওজন গর্ভের ভ্রূণের ওজনের চাইতে বেশি ছিল। তবে এর পর থেকে থেকে ভ্রূণের ওজনের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটতে থাকবে যা একসময় প্লাসেন্টার ওজনের চাইতে বেশি হয়ে যাবে।
বোন ম্যারো
এসময় পর্যন্ত ভ্রূণের লিভার ও স্প্লীন থেকে সকল রক্তকণিকা তৈরি হত। এ সপ্তাহ নাগাদ ভ্রূণের বোন ম্যারো রক্তকণিকা উৎপন্ন করতে শুরু করবে এবং তৃতীয় ট্রাইমেস্টার থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বোন ম্যারোই তার শরীরের বেশিরভাগ রক্ত কণিকা তৈরির কাজ করবে। ৩০ সপ্তাহ নাগাদ স্প্লীন থেকে রক্ত কণিকা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং শিশুর জন্মের কয়েক সপ্তাহ আগে লিভারও এ কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
হাত ও পা
২১ তম সপ্তাহের মধ্যে ভ্রূণের হাত ও পাগুলো তার শরীরের সমানুপাতিক হয়ে যায়। তার শরীরের পেশীগুলো মস্তিষ্কের সাথে নিউরনের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে এবং তার শরীরের তরুণাস্থিগুলো শক্ত হয়ে হাঁড়ে পরিণত হতে থাকে। এসব বিকাশের ফলে ভ্রূণের হাত পায়ের উপর তার এসময় বেশ নিয়ন্ত্রণ থাকে যার ফলে তার নড়াচড়া, হাত পা ছোঁড়া ইত্যাদি এখন থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
এতদিন ভ্রূণের যে নড়াচড়া আপনার কাছে সুড়সুড়ির মতো মনে হয়েছে সেটাই হয়তো মাঝে মাঝে তার ক্যারাটে সেশন মনে হতে পারে। তার নড়াচড়ার একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নও এখন তৈরি হয়ে যাবে। আপনি নিজেই বুঝতে পরবেন কখন সে জাগ্রত আর কখন সে বিশ্রাম নিচ্ছে।
এই সময়ের মধ্যেই শিশুর ঘুমানো এবং জেগে ওঠার একটি রুটিন তৈরী হয়ে যায় । শিশুর এই জেগে ওঠা বা ঘুমানো ঠিক মায়ের জেগে থাকা বা ঘুমানোর সাথে সম্পৃক্ত নয় । এমন হতে পারে, মা যখন রাতে ঘুমাচ্ছে তখন শিশু জেগে আছে এবং নড়াচড়া করছে ।
২১ তম সপ্তাহে মায়ের শারীরিক পরিবর্তন
গর্ভধারণের ২১ তম সপ্তাহে মায়ের পেটের আকার দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে। এমনকি নাভির আধ ইঞ্চি উপরে হাতের আঙ্গুল দিয়ে হালকা চাপ দিলে মায়ের জরায়ু অনুভব করা যেতে পারে।
তবে মনে রাখতে হবে অনেকের এ সময়ে এসেও পেটের আকারে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন নাও আসতে পারে। এটি খুবই স্বাভাবিক, বিশেষ করে প্রথমবারের প্রেগ্নেন্সীতে। এতে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। মায়ের পেটের আকার কেমন হবে তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন- হরমোন, গর্ভাবস্থার আগের ওজন, কততম গর্ভাবস্থা এবং মায়ের পেটের পেশীর ধরণ ইত্যাদি।
মায়ের পেটের আকার ও ওজন বাড়ার কারণে এসময় মায়ের ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন হয়। এতে মায়ের শরীরের ব্যাল্যান্স রাখা একটু কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। এছাড়াও মায়ের শরীরের জয়েন্টগুলোও এসময় একটু ঢিলা হয়ে যায়। তাই চলাফেরায় একটু সাবধান হতে হবে।
কখনো যদি হোঁচট খান বা একটু পিছলে যান তবে খুব বেশি আতঙ্কিত হবেন না। গর্ভের শিশু জরায়ুর ভেতর অ্যাম্নিওটিক স্যাকে সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে। তারপরও ছোট খাটো কোন দুর্ঘটনায়ও, নিশ্চিন্ত হবার আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে চেকআপ করিয়ে নিতে পারেন।
গর্ভাবস্থার এ সময় যেসব উপসর্গ বেশি দেখা দিতে পারে তা হল –
স্ট্রেচ মার্কস
গর্ভাবস্থার সাধারনত ৬ থেকে ৭ মাসের দিকে স্ট্রেচ মার্কস দেখা দেয় তবে অনেকের ক্ষেত্রে আরও আগেও দেখা দিতে পারে। প্রথম দিকে স্ট্রেচ মার্কস বা চামড়ার উপর দেখা দেয়া ফাটা দাগগুলো হালকা গোলাপি বর্ণের থাকে এবং এতে চুলকানি থাকতে পারে। ধীরে ধীরে দাগগুলোর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বাড়তে থাকে এবং এগুলো লাল বা বেগুনী রঙ ধারন করতে পারে। প্রসবের পর এগুলো ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে যায় এবং ধুসর রং ধারণ করতে পারে।
বেশীরভাগ মহিলাদের সাধারণত পেটে ফাটা দাগ হলেও ব্রেস্ট, উরু, কোমর এবং নিতম্বে দেখা যাওয়াটাও স্বাভাবিক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীরের চর্বিযুক্ত স্থানে স্ট্রেচ মার্কস বেশি দেখা যায়।
স্ট্রেচ মার্কস প্রতিরোধের তেমন কোন উপায় নেই। কোন ক্রীম বা লোশনের মাধ্যমে এর প্রতিরোধ করা যায় এমন কোন নিশ্চিত প্রমান পাওয়া যায়নি। তাই কোন ক্রীম বা লোশন কোম্পানি যদি এমন দাবী করে যে তাদের পণ্য ব্যাবহারে আপনার ফাটা দাগ পুরোপুরি মিলিয়ে যাবে তবে তা ভুল। তাই এসবের পেছনে অযথা টাকা অপচয় করবেন না।
তবে ত্বক সুন্দর এবং মসৃণ দেখাতে, হাইড্রেটেড রাখতে এবং গর্ভাবস্থায় দেখা দেয়া চুলকানির উপশম করতে ক্ষতিকর ক্যামিকেল মুক্ত ভালো লোশন বা খাঁটি তেল ব্যাবহার করতে পারেন।
দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ
গর্ভাবস্থায় সামান্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াটা একদমই স্বাভাবিক একটা বিষয়। এটা আপনার প্রথম সন্তান হোক কিংবা হয়তো আপনি আগেও মা হয়েছেন, তবু আপনার জীবনটা এখন কিছুটা হলেও পাল্টে যার উপর আপনার সবসময় নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরে হরমোনের যে পরিবর্তন হয় তার কারণে মানসিক অবস্থা অনেকটাই প্রভাবিত হয়।
তাই অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই সময়ে আপনার মধ্যে যদি উদ্বেগ একটু বেশিই দেখা যায় তাহলে মনে রাখবেন এটা অবাক হওয়ার মত কিছু নয়। কিন্তু এই দুশ্চিন্তা এবং ভয় যদি আপনার স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে এই বিষয়ে প্রথমত আপনার কাছের মানুষদের এবং হয়ত প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্যের প্রয়োজন আছে।
স্তনের নিঃসরণ
একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভকালীন সময়ে স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হতে পারে। পুরু, চটচটে এবং কিছুটা হলদেটে রঙের যে তরল বেরিয়ে আসে তা আসলে দুধ নয়, সেটি প্রকৃতপক্ষে কোলোস্ট্রাম যাকে আমরা শালদুধ বলি ।
গর্ভবতী অবস্থায় কোলোস্ট্রাম চুঁইয়ে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে আপনার বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়। এটি গর্ভাবস্থার অতি সাধারণ একটি উপসর্গ। আবার কারো যদি প্রসবের আগে কোলোস্ট্রাম উৎপন্ন না হয়, তাতেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এর সাথে প্রসব পরবর্তী দুধ উৎপন্ন হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি গর্ভাবস্থার যেকোনো পর্যায়েই ঘটতে পারে। কখনও কখনও মায়ের একটি স্তন থেকে নিঃসরণ হতে পারে আবার কখনও উভয় স্তন থেকে। আবার কিছু নারীর বেশী পরিমাণে নিঃসরণ হতে পারে এবং কারো খুব কম হতে পারে।
তবে হ্যাঁ, এই তরল যদি আপনার কাছে পুঁজের মতন মনে হয় অথবা ব্যাথা অনুভব হয়, নিজের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয় তবে দ্রুত আপনার চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাত করবেন।
ভেরিকোস ভেইন
ভেরিকোস ভেইন হল অস্বাভাবিকভাবে স্ফীত হয়ে যাওয়া শিরা যা চামড়ার উপর দিয়ে দেখা যায়। নীল বা বেগুনি রঙের আঁকাবাঁকা শিরাগুলো সাধারণত পায়ে দেখা যায়। তবে গর্ভাবস্থায় ভেরিকোস ভেইন নিতম্বে বা ভ্যাজাইনাল এরিয়াতেও দেখা যেতে পারে।
ভেরিকোস ভেইনের কারণে চুলকানি বা ব্যাথা হতে পারে কিন্তু এগুলো সাধারণত তেমন ঝুঁকির কারণ নয়। এর যদি কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তবে তার জন্য সন্তান জন্মদান পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায়।
তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে ভেরিকোস ভেইনের কারণে শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে (superficial venous thrombosis)। এমনটা হলে শিরা শক্ত হয়ে যায় এবং দড়ির মত দেখায় এবং এর আশপাশের জায়গা লাল ও গরম হয়ে যায় এবং ব্যাথা অনুভূত হয়।যদি এধরনের লক্ষন দেখা দেয় তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য যতটুকু সম্ভব পা উঁচিয়ে বসুন এবং যথাসম্ভব পা- কে বিশ্রাম দিন।
স্পাইডার ভেইন
স্পাইডার ভেইন ত্বকের ওপর দেখতে বেশ প্রকট লাগে, তবে সাধারণত এতে কোনো ব্যথা থাকে না। গোড়ালি, পা, এমনকি মুখের ত্বকের একদম নিচের শিরাগুলো এমনভাবে পেঁচিয়ে যায় যে দেখতে একটা মাকড়সার মতো মনে হয়। এটি গর্ভাবস্থার একটি অস্থায়ী উপসর্গ এবং সন্তান প্রসবের পর পর তা মিলিয়ে যায়।
এসব ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা আরও অনেক ধরণের উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। গর্ভকালীন সব ধরণের উপসর্গ নিয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।
গর্ভধারণের এ সপ্তাহে করনীয়
গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায় কারণ বর্ধিত জরায়ু ব্লাডারের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে যার ফলে মূত্রত্যাগের সময় মায়েদের ব্লাডার পুরোপুরি খালি হয়না। এতে ব্যাকটেরিয়া বংশবিস্তার করার অনেক সময় পায়। এর ঝুঁকি কমাতে নিয়মিতভাবে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। দিনে অন্তত ১০ গ্লাস পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন যাতে প্রস্রাব পরিষ্কার বা হালকা হলুদ বর্ণের থাকে। এটি শরীর হাড্রেটেড থাকার লক্ষণ।
প্রস্রাব আটকে রাখবেন না। এতে ইনফেকশনের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় কারণ প্রস্রাবের সাথে আমাদের শরীরের ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে যায়। প্রস্রাব করার সময় ব্লাডার পুরোপুরি খালি করে ফেলার চেষ্টা করুন।
এ সময় মুখে তৈলাক্ততা বেড়ে যেতে পারে এবং ব্রণ হতে পারে। ভালো সাবান বা ফেস ওয়াশ দিয়ে অবশ্যই প্রতিদিন অন্তত দুইবার মুখ ধোয়ার চেষ্টা করুন। তাছাড়াও, এমন মেক-আপ বা ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা ঠিক হবে না যার কারণে আপনার মুখে ব্রণ উঠতে পারে। অয়েল ফ্রি এবং সুগন্ধি মুক্ত পণ্য ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
ত্বক বিশেষজ্ঞের ( Dermatologist) পরামর্শ ছাড়া ব্রণের জন্য কোনো ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ কোনো কোনো ওষুধ গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ব্রণের জন্য যদি কোনো প্রেসক্রিপশন নিতেই হয়, তাহলে ত্বক বিশেষজ্ঞকে আগেই জানিয়ে রাখুন যে আপনি গর্ভবতী।
বর্তমানে অনেক মহিলাই কর্মজীবী৷ এই সময়ে এসে অফিসে আপনার প্রেগন্যান্সির বিষয়ে জানিয়ে রাখতে পারেন। এতে কোন কারণে আপনার ছুটির প্রয়োজন হলে বা আপনার মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা করে রাখতে অফিসের সুবিধা হবে।
হাতে যদি আঙটি পড়ার অভ্যাস থাকে তবে এখন থেকে তা খুলে রাখার চেষ্টা করুন। কারণ এসময় মায়ের শরীরে পানি আসার কারণে আঙ্গুল ফুলে যেতে পারে।
গর্ভাবস্থার ১৫ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে মায়ের জরায়ু কিছুটা বড় হয়ে যায়। এর ফলে মা যদি চিৎ হয়ে শোয় তবে তা রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এভাবে শোয়ার ফলে জরায়ুর চাপে ইনফেরিয়র ভেনা কাভা (inferior vena cava) সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থার ১৬ সপ্তাহ পার হয়ে যাবার পর অনেকক্ষণ চিত হয়ে শুয়ে থাকলে মায়ের জ্ঞান হারানোর মতো অনুভূতি হতে পারে, কারণ গর্ভস্থ শিশুটির সকল চাপ তখন রক্তনালীগুলোর ওপর পড়ে।
গর্ভাবস্থায় পাশ ফিরে শোওয়া বিশেষ করে বাম পাশ ফিরে শোওয়াটা সবচাইতে নিরাপদ।বাম কাত হয়ে শোয়া গর্ভস্থ শিশুর জন্যও ভালো কারণ এতে করে পুষ্টি ও রক্ত প্লাসেন্টার মাধ্যমে সহজেই বাচ্চার কাছে পৌঁছাতে পারে।তবে, একটানা এক পাশে শোয়া কষ্টকর হয়ে পড়লে আপনি আপনার সুবিধামত পাশ পরিবর্তন করে শুতে পারেন।
মনের যত্নে প্রথমেই আপনার শরীরের স্বাভাবিক এবং সাধারণ প্রয়োজনগুলো পরিপূর্ণ করুন যেমন পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, নিকোটিন, চিনিযুক্ত খাবার কিংবা জাঙ্কফুড এড়িয়ে যাওয়া, হালকা ব্যায়াম ও হাঁটাচলা করা এবং যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেয়া। এগুলো আপনার দুশ্চিন্তাগুলোকে মানিয়ে চলার ব্যাপারে অনেক সাহায্য করবে।
সেইসাথে গর্ভাবস্থা ও সন্তান লালন পালনের বিভিন্ন দিক ও মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একটু পড়াশোনা করে নিন। এতে আপনার আত্ববিশ্বাস বাড়বে এবং কিছু সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারবেন। বিভিন্ন কাজে প্রায়োরিটি ঠিক করতে শেখা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কাজ কিংবা কথা যেগুলো আপনার মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়, তা সাময়িক ভাবে এড়িয়ে চলুন।
সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তীকালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত। নতুন মায়েরা অনেক কিছুই জানেন না এবং অনেক ব্যাপারে নার্ভাস থাকেন। হাজার হাজার উপদেশের ভিড়ে কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল সেটিও বুঝে উঠতে পারেন না। গর্ভকালীন সময়ে যুগোপযোগী বিভিন্ন লেখা পড়ে ও এক্সপার্টদের কাছ থেকে করণীয় কি ইত্যাদি জেনে নিতে হবে। এবং সামনের কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে ।