১৯ তম সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের ভ্রূণের প্রয়োজনীয় সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠিত হয়ে যায়। এ সময় থেকে ভ্রূণটি আকারে বড় হতে থাকবে এবং বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর পরিপূর্ণ বিকাশ হতে থাকবে। এসময়ে এসে ভ্রূণের ছোট ছোট হাত-পাগুলো তার শরীরের অন্যান্য অংশের সমানুপাতিক হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থার ১৯ তম সপ্তাহকে প্রেগন্যান্সির দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের ষষ্ঠ সপ্তাহ হিসেবে ধরা হয়। এ সপ্তাহের অবস্থান গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে।
গর্ভধারণের ১৯ তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি
গর্ভাবস্থার ১৯ তম সপ্তাহে ভ্রূণটি প্রায় পুরোটা সময়ই ঘুমিয়ে কাটাবে। ঘুমের মধ্যেই তার বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হবে, আর তার পরিপক্ক হবার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তিও সঞ্চিত হতে থাকবে। এসময় ভ্রূণটি সারাদিনে প্রায় ১৮ ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকে এবং বাকি ৬ ঘণ্টা জেগে থাকে।
ভ্রূণের চামড়ার নিচে এ সময় সাধারণ ফ্যাটের সাথে সাথে ব্রাউন ফ্যাট বা ব্রাউন এডিপোস টিস্যু (Brown adipose tissue) জমা হতে থাকে। এই ব্রাউন ফ্যাটই মূলত জন্মের পর শিশুটিকে উষ্ণ রাখে। যখন আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকে তখন শরীরের এই ফ্যাট সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং তাপ উৎপন্ন করতে শুরু করে যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
এসময় থেকে বাকি গর্ভকালীন সময় জুড়ে ভ্রূণের শরীরে চর্বি জমা হতে থাকে, ফলশ্রুতিতে ভ্রূণের ওজন অপেক্ষাকৃত দ্রুত বাড়তে থাকে এবং তার শারীরিক বিভিন্ন অঙ্গগুলো পরিপূর্ণতা পেতে থাকে।
গর্ভের শিশুটির আকার ১৯ সপ্তাহে একটি ডালিমের সাথে তুলনা করা যায়। এসময় ভ্রূণের উচ্চতা থাকে প্রায় ৬.০২ ইঞ্চি বা ১৫.৩ সেমি এবং এর ওজন হয় আনুমানিক ৮.৪৭ আউন্স বা ২৪০ গ্রামের মত।
১৯ তম সপ্তাহের দিকে এসে ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। সেগুলো নিম্নরূপঃ
মস্তিষ্ক
এই সপ্তাহে ভ্রূণের মস্তিষ্কে ৫টি ইন্দ্রিয়ের রিসেপ্টর তৈরি হতে থাকে। এর ফলে ভ্রূণের স্বাদ গ্রহন, শুনতে পাওয়া, গন্ধ অনুভব করা, দৃষ্টি শক্তি ও স্পর্শের অনুভূতিগুলোর বিকাশ হতে শুরু করে। তাই এসময়ে ভ্রূণটি বিভিন্ন শব্দ শুনতে পায় এবং তার চোখ আলোর প্রতি আরও বেশি সংবেদনশীল থাকে।
চামড়ার উপর প্রতিরক্ষা আবরণ
১৯ তম সপ্তাহ থেকে শিশুটির ত্বকের চারপাশে ভারনিক্স ক্যাসিওসা (vernix caseosa) নামের এক ধরনের চর্বিযুক্ত আবরন তৈরি হবে। এই আবরণটি গর্ভের ভ্রূণের কোমল ত্বককে চারপাশের অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইড থেকে রক্ষা করে।
এই আবরণ না থাকলে ভ্রূণের ত্বকে ভাঁজ পড়ে যেত যেমনটা হয় যখন আমাদের হাত অনেকক্ষণ পানির সংস্পর্শে থাকে। এই আবরণটি পিচ্ছিল হওয়ার কারণে প্রসবের সময় ভ্রূণটি সহজে জন্মনালী দিয়ে নিচে নামতে পারে।
জন্মের সময় এই আবরণের বেশিরভাগই ঝরে যায়, তবে কিছু কিছু শিশুর জন্মের পরও এগুলো শরীরের ভাঁজে থাকতে পারে। এটি খুবই স্বাভাবিক। প্রি-ম্যাচিওর বাচ্চাদের শরীরে জন্মের সময় এটি বেশি দেখা যায়।
দাঁত
আশ্চর্যজনক হলেও এ সপ্তাহেই ভ্রূণের দুধ দাঁতের পেছনে তার স্থায়ী দাঁতের গঠনও শুরু হয়ে যায়। তবে তার জন্মের পর প্রায় ৬ মাস হওয়ার আগে সাধারণত কোন দাঁতই দেখা যাবেনা।
জননাঙ্গ
ভ্রূণটি মেয়ে হলে এসময়ের মধ্যে তার জরায়ু গঠিত হয়ে যায় এবং ডিম্বাশয়ে প্রায় ৬০ লক্ষ ডিম্বাণু জমা হয়ে যায়। শিশুটি ছেলে হলে তার যৌনাঙ্গ পুরোপুরি বিকশিত এবং তা আলট্রাসাউন্ডে দেখা যেতে পারে। তবে আলট্রাসাউন্ডে শিশুটির লিঙ্গ বোঝা যাবে কিনা তা নির্ভর করে আলট্রাসাউন্ড করার সময় ভ্রূণটির অবস্থানের উপর।
ফুসফুস
ভ্রূণের ফুসফুসে এ সপ্তাহ থেকে ব্রংকিওলের গঠন শুরু হতে পারে। ফুসফুসের প্রধান দুটি বায়ু প্রবাহী নালী ব্রংকাই থেকে যেসব শাখা প্রশাখা বিস্তৃত হয় সেগুলোকে ব্রংকিওল বলে।
এছাড়াও এ সপ্তাহ থেকে ভ্রূণের মাথায় চুল উঠতে শুরু করতে পারে।
১৯ তম সপ্তাহে মায়ের শারীরিক পরিবর্তন
দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে বেশিরভাগ মায়েরাই আগের চাইতে বেশি সতেজ অনুভব করেন। তবে যেহেতু এসময় শিশুর দ্রুত বৃদ্ধির জন্য মায়ের শরীর অতিরিক্ত কাজ করতে থাকে তাই কখনো কখনো ক্লান্ত লাগার অনুভূতি ফিরে আসতে পারে।
অনেক মায়েরাই পেটের আকার নিয়ে এসময় দুশ্চিন্তায় থাকেন।অনেকসময় আশপাশের লোকজনের কৌতূহল এবং পেট বেশি বড় না ছোট তা নিয়ে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য শুনে চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। মনে রাখবেন মায়ের পেটের আকার কেমন হবে তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন- হরমোন, গর্ভাবস্থার আগের ওজন, কততম গর্ভাবস্থা এবং মায়ের পেটের পেশীর ধরণ ইত্যাদি।
অনেক মায়ের পেটের আকার এ সপ্তাহ থেকে বাড়তে শুরু করতে পারে। আবার অনেকের এ সময়ে এসেও পেটের আকারে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন নাও আসতে পারে। দুটি ব্যাপারই খুবই স্বাভাবিক। প্রতিবার চেক-আপের সময় ডাক্তার আপনার পেটের আকার পরিমাপ করবেন। তাই এই বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকলে শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শই নেয়ার চেষ্টা করবেন।
গর্ভাবস্থার এ সময় যেসব উপসর্গ বেশি দেখা দিতে পারে তা হলো –
লেগ ক্র্যাম্প বা পায়ে খিল ধরা
লেগ ক্র্যাম্প সাধারণত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে শুরু হতে পারে। এবং সময় বাড়ার সাথে সাথে মায়ের পেটের আকার যত বৃদ্ধি পায়, এর তীব্রতা তত বাড়তে পারে। পায়ে খিল ধরা দিনের বেলা হতে পারে তবে সাধারণত রাতের দিকে বেশি হয়।
গর্ভাবস্থায় জরায়ুর আকার বাড়ার কারণে এবং শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারনে পায়ের রক্তনালীতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হয়ে যায় এবং পা থেকে হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচল স্বাভাবিকের চাইতে ধীরে হয়। এ কারনে পায়ে ক্র্যাম্প হতে পারে।
বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে বা পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে শরীরের শিরার উপর চাপ পরে যার ফলে ক্র্যাম্প হতে পারে। তাই বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে না থেকে কিছুক্ষন পর পর বসে পড়ুন। বসার সময় পা কিছুর উপর তুলে রাখতে পারেন বা পায়ের গোড়ালি ঘুরিয়ে নিয়ে কিছুক্ষন পায়ের ব্যায়াম করে নিতে পারেন।
রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন
রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন এক ধরনের তীব্র ব্যাথা যা সাধারনত অল্প সময়ের জন্য হয় এবং অনেকটা মাংশপেশীর খিঁচুনির মত মনে হতে পারে। এ ব্যাথা দুপাশেই হতে পারে তবে ডান পাশে বেশী হয় যা উরু পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
গর্ভবতী মায়েরা যখন হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন করেন তখন সাধারণত রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন অনুভূত হতে পারে, যেমন- বিছানা বা চেয়ার থেকে ওঠার সময়। কাশি দেয়ার সময় বা বিছানায় নড়াচড়া করার সময়।
এই ধরণের ব্যাথা সাধারণত তেমন কোন উদ্বেগের বিষয় নয়, তবে যদি এর সাথে জ্বর, কাঁপুনি বা রক্তপাতের মত উপসর্গ থাকে তবে অতিসত্বর ডাক্তারকে জানাতে হবে।
রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন শুরু হলে বসে পড়ুন এবং রিলাক্স করার চেষ্টা করুন। কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলেই এর থেকে স্বস্তি পাবেন। যদি বসে থাকা অবস্থায় ব্যাথা হয় তবে দাঁড়িয়ে পড়ুন বা হাঁটা চলা করুন। মোটকথা পজিশন পরিবর্তন করুন।
বিছানা থেকে বা বসা থেকে ওঠার সময় আস্তে আস্তে উঠুন। হঠাৎ নড়াচড়ার কারণে রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন বেশী হয়। তাই ধীরে নড়াচড়া করুন।হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় কোমর ও হাঁটু সামান্য বাঁকিয়ে নিন। এতে লিগামেন্টে চাপ কম পড়ে।
কোমর ব্যাথা
গর্ভধারণের শুরু থেকেই শরীরের কিছু হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এর মধ্যে প্রজেস্টেরন এবং রিলাক্সিন হরমোন সন্তান জন্মদানের প্রস্তুতি হিসেবে কোমরের বিভিন্ন জয়েন্ট এবং লিগামেন্টকে নরম এবং ঢিলা করে দেয়। এর ফলে মায়ের শরীর অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং জয়েন্টের ভার বহন ক্ষমতা কমে যায়। এর কারণে হাঁটার সময়, অনেকক্ষণ একটানা বসে থাকলে কিংবা হুট করে চেয়ার থেকে ওঠার সময় বা কোন কিছু তোলার সময় কোমর ব্যাথা অনুভূত হয়।
গর্ভবতী অবস্থায় মেরুদণ্ডের উপর বেশি চাপ পড়ে এবং শরীরকে অতিরিক্ত ওজন বহন করতে হয়। তাই, আপনি যখন বসে বসে কাজ করবেন, সোজা হয়ে বসে থাকার চেষ্টা করুন। এতে আপনার ভাল Posture বা ভঙ্গিমা বজায় থাকবে, যা আপনার ব্যথা উপশম করতে কাজে দেবে। ।
সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। গর্ভবতী মায়েরা সাধারণত ঝুঁকে থাকেন। এতে মেরুদণ্ডের উপর আরও চাপ পড়ে। যদিও সোজা হয়ে দাঁড়ানোটা এসময় একটু কঠিন হবে তারপরও চেষ্টা করুন যাতে দাঁড়ানোর সময় ঘাড় পেছনের দিকে থাকে। একটানা বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকার চেষ্টা করুন। দাঁড়িয়ে থাকতে হলে কিছুক্ষন পর পর বসে বিশ্রাম নিন।
কোষ্ঠকাঠিন্য
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রধান কারণ হলো প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। প্রোজেস্টেরন হরমোনের কারণে মায়েদের শরীরের পেশীগুলো শিথীল হয়ে পড়ে। আর পরিপাকতন্ত্রের পেশিগুলো শিথীল হয়ে পড়ার ফলে মায়েদের খাবার হজম ধীরে হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ মায়েদেরই আয়রন সাপ্লিমেন্ট নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এই সাপ্লিমেন্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যদি আয়রন সাপ্লিমেন্টে কোন সমস্যা হয় তবে ডাক্তারের সাথে কথা বলে ব্র্যান্ড পরিবর্তন করে নিতে পারেন।
আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে এ সময় প্রচুর পানি খাওয়া, সাথে নরম সবজি, ওটস, বিভিন্ন ফল ও ফলের শাঁস খাওয়া আপনার জন্য উপকারী হবে। এতে করে মূত্রনালির কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে তাও কমে যাবে।
এসব ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা আরও অনেক ধরণের উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। গর্ভকালীন সব ধরণের উপসর্গ নিয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।
গর্ভাবস্থার এ সপ্তাহে করনীয়
এই সময়ের মধ্যে মায়ের ওজন ওজন প্রায় ৮/১৪ পাউন্ড অর্থাৎ ৩ থেকে ৬ কেজির মত বেড়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় সুষম খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই, কি কি খাচ্ছেন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। বাচ্চার সঠিক বৃদ্ধি এবং প্রসবের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করার জন্য সুষম খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।
চিনি ও শর্করা জাতীয় খাবার কম খেয়ে ডাল, বাদাম, দুধ, ডিম , প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি ও পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। ঠিক মত পুষ্টিকর খাবার না খেলে ভ্রূণের বিকাশ ঠিকমতো না হওয়ার সম্ভবনা থাকে, আবার অন্যদিকে গর্ভাবস্থায় ওজন অতিরিক্ত বেড়ে মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে প্রিম্যাচিওর শিশু প্রসব কিংবা অন্যান্য প্রসবকালিন জটিলতা দেখা দেয়ার সম্ভবনা বাড়ে।
ডাক্তারদের মতে গর্ভধারণের আগে যদি মায়ের বিএমআই বা বডি ম্যাস ইনডেক্স স্বাভাবিক থাকে তবে এর পরবর্তীতে প্রতি সপ্তাহে ১ পাউন্ড করে ওজন বৃদ্ধি পেলে তা স্বাভাবিক। আবার, যদি গর্ভধারণের আগে বিএমআই কম বা বেশি থাকে অথবা যদি প্রথম ট্রাইমেস্টারে মায়ের ওজন খুব বেশি কমে যায় বা বেড়ে যায় তবে তার উপর নির্ভর করে মায়ের ওজন বাড়ানো বা কম বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হবে।
তবে মনে রাখবেন এই ১ পাউন্ড করে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার হিসেবটা একটি গড়পড়তা হিসেব। মায়ের ওজন যদি কোন সপ্তাহে আধ পাউন্ড বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তী সপ্তাহ দেড় পাউন্ড বাড়ে তবে সেটাও খুব স্বাভাবিক।
বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকলে ৩ বেলা ভরপেট খাবার পরিবর্তে কম কম করে বার বার খাবার খান।এভাবে স্বল্প বিরতি দিয়ে অল্প অল্প, খেলে খাবার সঠিক ভাবে হজম হয় এবং এই সমস্যা অনেকটা কম হয় ।পেট ফুলে থাকা,গ্যাসের সমস্যা কিংবা বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা সাধারণত হয়ে থাকে খাবার ভালোভাবে হজম না হওয়ার কারনে। এসময় ভাজা পোড়া, অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার এবং বাইরের কেনা খাবার এড়িয়ে চলুন।
গর্ভাবস্থার ১৫ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে মায়ের জরায়ু অনেক বড় হয়ে যায়। এর ফলে মা যদি চিৎ হয়ে শোয় তবে তা রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এভাবে শোয়ার ফলে জরায়ুর চাপে ইনফেরিয়র ভেনা কাভা (inferior vena cava) সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থার ১৬ সপ্তাহ পার হয়ে যাবার পর অনেকক্ষণ চিত হয়ে শুয়ে থাকলে মায়ের জ্ঞান হারানোর মতো অনুভূতি হতে পারে, কারণ গর্ভস্থ শিশুটির সকল চাপ তখন রক্তনালীগুলোর ওপর পড়ে।
গর্ভাবস্থায় পাশ ফিরে শোওয়া বিশেষ করে বাম পাশ ফিরে শোওয়াটা সবচাইতে নিরাপদ।বাম কাত হয়ে শোয়া গর্ভস্থ শিশুর জন্যও ভালো কারণ এতে করে পুষ্টি ও রক্ত প্লাসেন্টার মাধ্যমে সহজেই বাচ্চার কাছে পৌঁছাতে পারে।তবে, একটানা এক পাশে শোয়া কষ্টকর হয়ে পড়লে আপনি আপনার সুবিধামত পাশ পরিবর্তন করে শুতে পারেন।
এই সপ্তাহে গর্ভবতী মা’কে অ্যানোমালি স্ক্যান (Anomaly Scan) করার পরামর্শ দেয়া হতে পারে। অ্যানোমালি স্ক্যান করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় গর্ভাবস্থার ১৮ থেকে ২২ সপ্তাহ (পঞ্চম মাস)।
অ্যানোমালি স্ক্যানে মা বা গর্ভের ভ্রূণের কোন ক্ষতি হয়না, এটি সাধারণ আলট্রাসাউন্ডের একটি উন্নত সংস্করণ। তবে মায়ের কিছুটা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে কারণ গর্ভের শিশুকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য বেশ কিছুটা সময় নিয়ে মায়ের পেটে একটু চাপ দিয়ে স্ক্যান করা হয়।
মায়ের ব্লাডার ভর্তি থাকলে আলট্রাসাউন্ডে আরও ভালো বোঝা যায়। তাই স্ক্যান করতে যাওয়ার আগে এসব বিষয় মাথায় রাখবেন।
মূত্রত্যাগের সময় যদি জ্বালা-পোড়া করে তাহলে ডাক্তার দেখানো জরুরি। গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরই ইউরিনারি ইনফেকশন ( Urinary Infection) হয় এবং তার যথাযথ চিকিৎসা না হলে বৃক্কের (Kidney) ক্ষতি হতে পারে।
সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তীকালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত। নতুন মায়েরা অনেক কিছুই জানেন না এবং অনেক ব্যাপারে নার্ভাস থাকেন। হাজার হাজার উপদেশের ভিড়ে কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল সেটিও বুঝে উঠতে পারেন না। গর্ভকালীন সময়ে যুগোপযোগী বিভিন্ন লেখা পড়ে ও এক্সপার্টদের কাছ থেকে করণীয় কি ইত্যাদি নিজেকেই জেনে নিতে হবে। এবং সামনের কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
সবার জন্য শুভকামনা।
<<গর্ভাবস্থা সপ্তাহ ১৮
গর্ভাবস্থা সপ্তাহ ২০>>