গর্ভধারণের পঞ্চম সপ্তাহ : ভ্রূণের বৃদ্ধি, মায়ের শরীর এবং কিছু টিপস

Spread the love

গর্ভাবস্থার পঞ্চম সপ্তাহে ভ্রূণ খুব দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। আপেল বীচির আকৃতির গর্ভস্থ শিশুটিকে এখন অনেকটা ব্যাঙ্গাচির মতো মনে হয়।

পঞ্চম সপ্তাহের অবস্থান গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় মাসে বা নির্দিষ্ট করে বললে ১ মাস শেষ হয়েছে।

বিজ্ঞাপণ
গর্ভাবস্থার পঞ্চম সপ্তাহ | Audio Article

গর্ভাবস্থার পঞ্চম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি

এই পর্যায়ে ভ্রূণটির তিনটি স্তর থাকে – এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম এবং এন্ডোডার্ম।

বাইরের স্তরটিকে বলা হয় এক্টোডার্ম। এটি ভাঁজ হয়ে একটি ফাঁপা টিউবের মত গঠন করে যাকে নিউরাল টিউব বলে। এই নিউরাল টিউব থেকে বাচ্চার মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড এবং স্নায়ু গঠিত হয়। এই স্তর থেকেই বাচ্চার ত্বক, চুল, নখ, দাঁতের এনামেল, স্তন এবং ঘামের গ্রন্থির সৃষ্টি হয়।

মধ্যবর্তী স্তরটি হল মেসোডার্ম যা থেকে বাচ্চার হৃদপিণ্ড এবং পরিবহনতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। মেসোডার্ম থেকে বাচ্চার পেশী, হাড়, তরুণাস্থি এবং ত্বকের নীচের টিস্যু ও তৈরি হয়।

একেবারে ভেতরের স্তর বা এন্ডোডার্ম থেকে বাচ্চার শ্বাসতন্ত্র এবং পরিপাকতন্ত্রের গঠন হবে, যেমন- ফুসফুস, পাকস্থলী, ব্লাডার, যকৃত, প্যাঙ্ক্রিয়াস ইত্যাদি।

একটি টিউবের আকৃতিতে বাচ্চার হৃদপিণ্ডের গঠন শুরু হয়।এসময় ভ্রূণের মধ্যভাগে একটা স্ফীত অংশ দেখা যায়, যেটা হচ্ছে হৃদপিণ্ড। এখনো হৃদপিণ্ডের আলাদা প্রকোষ্ঠ তৈরি হয়নি কিন্তু তার মধ্যে স্পন্দন তৈরি হয়েছে এবং সে শরীরের অন্যান্য অংশে রক্তসঞ্চালন চালিয়ে যাচ্ছে।

শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের গঠন এসময় শুরু হয়ে যায় এবং তার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো গঠিত হওয়ার ভিত্তিপ্রস্তর নিজ নিজ স্থানে স্থাপিত হয়ে যায়। এ সপ্তাহে ভ্রুন ২ মিলিমিটার বা .০৭ ইঞ্চি লম্বা হয়।

ইতিমধ্যেই বাচ্চার নিজস্ব কিছু রক্তনালীর গঠন হয়েছে যার মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। কিছু রক্তনালী মিলে একটি দড়ির (Strings) মত তৈরি করে যা কিছু দিনের মধ্যে নাভিকান্ডে বা আম্বিলিকাল কর্ডে পরিণত হয়ে শিশুটিকে তার মায়ের দেহের সাথে সংযুক্ত করবে। প্লাসেন্টার গঠনও এসময় চলতে থাকে যা ১২ সপ্তাহ নাগাদ পুরোপুরি কাজ শুরু করবে।

এই সময়ই ভ্রূণের বাইরের স্তরটি থেকে নিউরাল টিউবের গঠন হয় যা পরবর্তীতে বাচ্চার মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডে পরিণত হবে।

গর্ভবতী হওয়ার পঞ্চম সপ্তাহের লক্ষণ

গর্ভাবস্থার লক্ষণ এই সপ্তাহে শুরু হতে পারে। এসময় সাধারনতঃ বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, বুকের অস্বস্তি প্রকাশ পাবে, এবং প্রায়ই প্রস্রাব করার প্রয়োজন হবে। এগুলো স্বাভাবিক এবং মোটামুটি সবারই হয়ে থাকে। যদিও এ উপসর্গগুলো বিরক্তিকর কিন্তু খুশীর কথা হচ্ছে যে এগুলো পুরো গর্ভকালীন সময়জুড়ে হয়তো থাকবেনা।

কিছু মায়েদের গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাসের মধ্যে মাথাব্যাথা হতে পারে। যদি আপনি তাদের মধ্যে একজন হন তবে আমাদের টিপস অনুসরন করতে পারেন

যাইহোক, কিছু গর্ভাবস্থার লক্ষণ আপনার কখনোই  উপেক্ষা করা উচিত হবে না। আপনি যদি গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে কোন বিপদের লক্ষণঅনুভব করেন, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।

গর্ভাবস্থার এসময়কার কিছু সাধারণ লক্ষণগুলো হল-

বমি বমি ভাব বা মর্নিং সিকনেস – গর্ভধারণের ৬ সপ্তাহ সময় থেকে সাধারণত মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব দেখা দেয়। কিন্তু এটা কখনো কখানো ৪ সপ্তাহ থেকেও শুরু হতে দেখা যায়। পরবর্তী এক মাস ধরে সমস্যাটা আরো বেশী খারাপের দিকে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপণ

স্তনে নরম ভাব এবং সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে – গর্ভাবস্থায় প্রাকৃতিক কারনেই মায়ের স্তনের আকৃতিগত পরিবর্তন দেখা দেয়। এটিই প্রকৃতির নিয়ম। ৬-৮ সপ্তাহের দিকে স্তন এর আকার বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হতে পারে যা পুরো গর্ভকালীন সময় ধরে চলে।

ক্লান্তিবোধ হওয়া – গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে অবসাদ বা ক্লান্তি গর্ভবতীকে আংশিক বা পুরোপুরি ঘিরে ধরতে পারে। গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি সময়ে এই উপসর্গ একটু কমে আসলেও আবার শেষের দিকে এই অবসাদ ও ক্লান্তি ফিরে আসতে পারে। হরমোনের পরিবর্তন বিশেষ করে প্রজেস্টরন বৃদ্ধি পাওয়া এর অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

ঘন ঘন পস্রাবের বেগ পাওয়া – গর্ভাবস্থার একটা স্বাভাবিক ঘটনা হচ্ছে বার বার টয়লেটে যাওয়া। প্রথম ও শেষ তিন মাসে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা খুব সাধারণ ঘটনা। সত্যি কথা বলতে, এটি গর্ভাবস্থার প্রথমদিকের লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এই সময়ে শরীরে হরমোনের যাবতীয় পরিবর্তনের একটি অংশ।

তবে মনে রাখা দরকার এ সময় মা যদি তার মধ্যে কোন পরিবর্তন লক্ষণ না করে তাহলে খুব ঘাবড়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই। বেশিরভাগ মায়েরাই গর্ভধারণের ষষ্ঠ সপ্তাহের আগে গর্ভধারণের তেমন কোন উপসর্গ অনুভব করেন না।

এ সপ্তাহে করনীয়

গর্ভবতী হবার পর আপনি প্রথম যখন টের পাবেন আপনার মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে, ততদিনে আপনার গর্ভাবস্থার ৫ সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। এই পর্যায়ে আপনি প্রথম সন্দেহ করতে শুরু করবেন আপনি গর্ভবতী কি না।

যদি এখনো আপনি নিশ্চিত না হয়ে থাকেন, তাহলে এই সপ্তাহেই আপনি ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করান। বাসায় পরীক্ষা করার জন্যও বিভিন্ন প্রেগন্যান্সি কিট পাওয়া যায়।

কিছু বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে যেমন-

গর্ভাবস্থার এমন কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো অবহেলা করা ঠিক নয়। যদি সেসব বিপদজনক লক্ষণের কোনোটা আপনার মধ্যে টের পান, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। গর্ভাবস্থার প্রতিটা পর্যায়েই আপনাকে ভালোভাবে খাওয়াদাওয়া করতে হবে, যাতে আপনার গর্ভস্থ শিশুটি তার প্রয়োজনীয় পুষ্টিটুকু পায়।

অল্প অল্প করে হলেও নিয়মমতো খাওয়া দাওয়া করুন ও পানি পান করুন। এতে করে আপনার হজম প্রক্রিয়া ঠিকমতো কাজ করবে এবং বমি বমি ভাব ও ক্লান্তি বোধও দূর হবে। বিভিন্ন ধরণের খাবার খান, বিশেষ করে আপনি যদি নিরামিষাশী হন।

এসময় প্রচুর ভিটামিন সি খান কারন ভিটামিন সি ভ্রূণ এর কোষের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভাল উৎস হলো কমলালেবু, লাল ক্যাপসিকাম, ব্লাককারেন্ট, টমেটো এবং কিউই ফল। যদি মনে করেন খাদ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি পাচ্ছেন না তবে ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেতে পারেন তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।

যদি আপনি চাকরিজীবী হন, তাহলে মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যাপারে ভাবতে শুরু করুন এবং জেনে নিন আপনি কতদিনের ছুটি পাবেন। আপনার বয়স যদি ৩৫ এর বেশি হয়ে থাকে, কিংবা আপনি যদি জেনেটিক সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে আপনি এ সংক্রান্ত পরীক্ষার ব্যাপারে ভাবতে পারেন।

Nuchal Fold Test কিংবা CVS Test এ রকম দুটো টেস্ট যার মাধ্যমে বাচ্চার কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা যায় এবং সেটা যত আগে করানো যায় ততই ভালো। যদি আপনার এর আগে গর্ভপাত হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো এবারের গর্ভাবস্থা আপনার জন্য নির্মল আনন্দের হবে না। সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন।

সবার জন্য শুভকামনা।

<<গর্ভাবস্থা সপ্তাহ ৪
গর্ভাবস্থা সপ্তাহ ৬>>


Spread the love

Related posts

Leave a Comment