গর্ভাবস্থার ৩৪ তম সপ্তাহে গর্ভের ভ্রূণের শরীরের আকার আস্তে আস্তে পরিপূর্ণতা লাভ করতে থাকে। এসময় তার শরীরে বিশেষ একধরনের চর্বি জমা হতে থাকে যাকে ব্রাউন ফ্যাট বলে। এই ফ্যাট জন্মের পরও শিশুকে উষ্ণ রাখতে সহায়তা করে কারণ সে সময় শিশু তার শরীরের তাপমাত্রা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। শিশুর জন্মের পর এই ব্রাউন ফ্যাট উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তাই সে সময়টাতে তার যেন খুব বেশি গরম বা ঠাণ্ডা না লাগে সেদিকে আপনারই খেয়াল রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থার ৩৪ তম সপ্তাহকে প্রেগন্যান্সির তৃতীয় ট্রাইমেস্টারের সপ্তম সপ্তাহ হিসেবে ধরা হয়। এ সপ্তাহের অবস্থান গর্ভাবস্থার অষ্টম মাসে।
গর্ভধারণের ৩৪ তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি
গর্ভাবস্থার ৩৪ তম সপ্তাহে ভ্রূণটি বেড়ে ওঠার কারণে মায়ের জরায়ুতে জায়গা আগে চেয়েও কমে আসে। এসময় তার পা দুটো ভাঁজ হয়ে বুকের কাছাকাছি থাকতে পারে। এধরনের ভঙ্গিকে ক্লাসিক ফেটাল পজিশন (Classic Fetal Position) বলা হয়।
মায়ের জরায়ুতে জায়গা কমে যাওয়ায় ভ্রূণের নড়াচড়া একটু কম বেশী মনে হতে পারে তবে সাধারনত ভ্রূণের নড়াচড়ার প্যাটার্নে কোন পরিবর্তন হয় না । উদাহরণস্বরূপ, ভ্রূণটি যদি সন্ধ্যায় খুব বেশি অ্যাক্টিভ থাকে তবে সে সময়টাতে নিয়মিত তার নড়াচড়া টের পাবেন। এক্ষেত্রে যদি কোন অস্বাভাবিকতা খেয়াল করেন তবে অবশ্যই ডাক্তারকে জানাতে হবে।
মজার ব্যাপার হলো, এসময় গর্ভের শিশুটির নড়াচড়ার সময় তার শরীরের কিছু কিছু অঙ্গ মায়ের পেটের উপরিভাগে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে, যেমন তার ছোট ছোট হাত অথবা পা।
৩৪ সপ্তাহে গর্ভের শিশুকে লেইট প্রি-টার্ম (Late preterm) ক্যাটাগরি বিবেচনা করা হয়। এই সপ্তাহে ভ্রূণটি ফুল টার্ম বাচ্চার মত দেখতে হলেও তার শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পুরোপুরি বিকশিত থাকেনা।
৩৪ সপ্তাহে জন্ম নিলে বাচ্চার কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন- জন্ডিস, ঠিক ভাবে খেতে না পারা, শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা ইত্যাদি। তবে পরিপূর্ণ পরিচর্যা পেলে তারা এসব সমস্যা সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারে। এ সপ্তাহে জন্ম নিলে শিশুটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি এবং প্রি ম্যাচিওরিটি সংক্রান্ত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ৫ ভাগের মত।
ভ্রূণের আকার ৩৪ তম সপ্তাহে একটি বড় সাইজের আনারসের সাথে তুলনা করা যায়। এসময় ভ্রূণের উচ্চতা থাকে প্রায় ১৭.৭২ ইঞ্চি বা ৪৫ সেমি এবং এর ওজন হয় আনুমানিক ৪.৭৩ পাউন্ড বা ২১৪৬ গ্রামের মত।
৩৪ তম সপ্তাহের দিকে এসে ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। সেগুলো নিম্নরূপঃ
মস্তিষ্ক
ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ এসময় খুব দ্রুতগতিতে হতে থাকে এবং লক্ষ লক্ষ জটিল সব সংযোগ তৈরি হতে থাকে যা জন্মের পর তাকে তার চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে এবং শিখতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের এই বিকাশ চলাকালীন সময় সে বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে থাকে এমনকি এসময় সে স্বপ্ন দেখতেও শুরু করে।
মজার বিষয় হলো, শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সবচাইতে বেশি হয় তার জন্মের পর। জন্মের প্রথম বছরে তার মস্তিষ্কের আকার প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি পায়। ১ বছর বয়সে তার মস্তিষ্কের আকার থাকে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের চার ভাগের তিন ভাগ।
ফুসফুস
ভ্রূণটির শ্বাসতন্ত্রের বিকাশ এখনো চলমান। তার ফুসফুস প্রায় সুগঠিত এবং পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সে নিশ্বাসের সাথে গর্ভের অ্যাম্নিওটিক ফ্লুয়িড গ্রহণের মাধ্যমে শ্বাস প্রশ্বাসের অনুশীলন করতে থাকে।
চোখ
জরায়ুর দেয়াল ভেদ করে যে আলো আসে তাতে সে প্রতিক্রিয়া দেখায়। তার চোখের তারা (pupil) স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আলোর তীব্রতার প্রতি প্রতিক্রিয়া করবে। যেমন, জরায়ুর দেয়াল ভেদ করে আসা আলোর তীব্রতা যদি বেশি থাকে তাহলে আপনা থেকেই তার চোখ ছোটো হয়ে যায়।
কান
৩৪ তম সপ্তাহে ভ্রূণের শ্রবণশক্তি বেশ অনেকটাই বিকশিত হয়ে যায়। তার কানের যে অংশটি মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায় তা এখন বেশ পরিপক্ব। এর মানে হলো সে এখন গলার স্বরের পার্থক্য বোঝার সাথে সাথে বিভিন্ন সুর বা টোনের তারতম্য বুঝতে শুরু করে।
গবেষণায় দেখা গেছে মা যদি গর্ভাবস্থায় কোন গান বা সুর নিয়মিত শোনেন তবে জন্মের পর শিশুটি সে গান বা সুরে প্রতিক্রিয়া দেখায়। তাই তার সাথে নিয়মিত কথা বলুন বা তাকে গান গেয়ে শোনান। এতে অনাগত সন্তানের সাথে আপনাদের বন্ধন দৃঢ় হয়ে উঠবে।
ত্বকের প্রতিরক্ষা আবরণ
ভ্রূণের ত্বকের উপরে থাকা ধূসর চুলের স্তর যাকে লানুগো বলে তা এসময় প্রায় মিলিয়ে যায়। তবে কিছু কিছু নবজাতকের জন্মের পরও লানুগো থাকতে পারে। ভ্রূণের ত্বকের উপর যে তৈলাক্ত স্তর বা ভারনিক্স ক্যাসিওসা থাকে তা এসময় বেশ পুরু হয়ে ওঠে।
এই ভারনিক্সের আবরণ অ্যাম্নিওটিক ফ্লুয়িডে ক্রমাগত অবস্থানের ফলে নবজাতকের কোমল ত্বককে চুপসে যাওয়া থেকে থেকে রক্ষা করা এবং তার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে। সেই সাথে, এটি ভ্রূণের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং কিছু রোগ প্রতিরোধেও কাজ করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন অ্যাম্নিওটিক ফ্লুয়িডে থাকা ভারনিক্স গ্রহণ করার ফলে গর্ভের ভ্রূণের পাকস্থলী এবং অন্ত্রের বিকাশও ত্বরান্বিত হয়।
চুল
ভ্রূণের মাথায় এ সময় আরো বেশি চুল গজাতে শুরু করে। অনেক নবজাতক মাথা ভর্তি চুল নিয়ে জন্মগ্রহণ করে আবার অনেকের চুল কম থাকে। বাচ্চা জন্মের সময় যে চুল নিয়ে জন্মায় তা সাধারণত শিশুর চার মাসের দিকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ঝরে যায়। এরপর শিশুর যে চুল গজায় তা জন্মের সময়কার চুল থেকে পুরোপুরি ভিন্ন হতে পারে।
৩৪ তম সপ্তাহে মায়ের শারীরিক পরিবর্তন
এসময়টাতে প্রতি সপ্তাহে আধ পাউন্ড ওজন বৃদ্ধি পাওয়াটাকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়। যদি কাজকর্ম কমিয়ে দেন তবে ওজন বৃদ্ধি আরেকটু বেশি হতে পারে। এতে খুব ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ নেই। তবে এটাও ঠিক, মাত্রাতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এসময় বিভিন্ন ধরণের জটিলতা তৈরী করতে পারে, যেমন- ব্যাক পেইন, কোমর ব্যথা, রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন, ভেরিকোস ভেইনের সমস্যা ইত্যাদি। যদি ওজন হঠাৎ করে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় তবে তা অবশ্যই ডাক্তারকে জানাতে হবে কারণ এটি প্রি-একলাম্পশিয়ার লক্ষণ হতে পারে।
এসময় গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি এবং অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইডের পরিমাণ বোঝার জন্য ডাক্তার মায়ের পেটের আকার পরিমাপ করে থাকেন। এর জন্য মায়ের পিউবিক বোন থেকে জরায়ুর উপরের অংশ পর্যন্ত উচ্চতা পরিমাপ করা হয়। একে ফান্ডাল হাইট (Fundal Height) বলা হয়। স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় এসময় মায়ের ফান্ডাল হাইট হতে পারে ৩২-৩৬ সে.মি.
এটি যদি আপনার প্রথম সন্তান হয়, তাহলে ডেলিভারির কয়েক সপ্তাহ আগে হয়তো আপনি ‘লাইটেনিং’ বা পেটের উপরিভাগে হালকা লাগার ব্যাপারটা অনুভব করতে পারবেন। লাইটেনিং অর্থ আপনার শিশু এখন পেটের নিম্নভাগে অর্থাৎ পেলভিক অঞ্চলে চলে এসেছে।তবে এটি যদি আপনার প্রথম সন্তান না হয়, তাহলে প্রসব শুরু হওয়ার ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত ‘লাইটেনিং’ অনুভূত নাও হতে পারে।
ভ্রূণ জরায়ুর নীচের দিকে নেমে যাওয়ার কারণে মায়ের ফুসফুস ও পাকস্থলীর উপর চাপ কমে আসে। ফলে এসময় দমবন্ধ অনুভূতি এবং বুক জ্বালা পোড়ার সমস্যা কিছুটা কমে আসে। তবে ব্লাডারের উপর চাপ বাড়তে থাকার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসার সমস্যা আবার শুরু হতে পারে।
গর্ভাবস্থার এ সময় নতুন যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে তা হল –
পাইলস বা অর্শরোগ
বিভিন্ন কারণে গর্ভাবস্থায় হেমরয়েডস বা পাইলস হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। ক্রমবর্ধমান জরায়ু, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং প্রোজেস্টেরণ হরমোনের আকস্মিক বৃদ্ধির ফলে গর্ভবতী মায়েদের পাইলস বা অর্শ হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে ভেরিকোস ভেইনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলেও গর্ভাবস্থায় হেমরয়েডস বা অর্শ হয়ে থাকে। এই উপসর্গ খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও এতে অনেক ব্যথা থাকতে পারে এবং রক্তক্ষরণেরও সম্ভাবনা থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এ সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান এবং আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। পেলভিক এক্সারসাইজগুলো এক্ষেত্রে ভালো কাজ দিতে পারে। এছাড়া মলত্যাগের চাপ আসলে কখনো আটকে রাখার চেষ্টা করবেন না।
ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য আক্রান্ত স্থানে আইস ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। তবে ব্যাথা যদি খুব বেশি হয় এবং রক্তপাত হয় তবে দ্রুত ডাক্তারকে জানানো জরুরী।
সায়াটিকা (Sciatic nerve pain)
গর্ভাবস্থায় কোমরে ব্যাথা হওয়ার একটি কারণ হতে পারে সায়াটিক নার্ভের উপর অতিরিক্ত চাপ। গর্ভাবস্থায় ক্রবর্ধমান জরায়ুর চাপ যখন শরীরের দুটি সায়াটিক নার্ভের উপর পড়ে তখন কোমরে, নিতম্বে বা উরুতে ব্যাথা হতে পারে। এ ধরনের ব্যাথাকে বলে সায়াটিকা ।এ ধরনের ব্যাথা সাধারণত কোমর বা কোমরের উপরে পিঠের মাঝ বরাবর হয়।
এ ব্যাথা কখনো কখনো পায়ের দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। আবার বেশ কিছু কারণে এ ব্যাথা বেড়ে যেতে পারে, যেমন- একটানা অনেকক্ষন বসে থাকলে, দাঁড়িয়ে থাকলে বা ভারী কিছু তুললে বা বহন করলে। সাধারণত রাতের দিকে এ ধরনের ব্যাথা বেশী অনুভুত হতে দেখা যায়।
গর্ভাবস্থায় সায়াটিকার ব্যাথা হওয়া স্বাভাবিক। তারপরও এ ধরনের ব্যাথা হলে ডাক্তারকে জানানো উচিত কারণ তা মারাত্মক কোন কিছুর লক্ষনও হতে পারে।
স্তনের নিঃসরণ
একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভকালীন সময়ে স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হতে পারে। পুরু, চটচটে এবং কিছুটা হলদেটে রঙের যে তরল বেরিয়ে আসে তা আসলে দুধ নয়, সেটি প্রকৃতপক্ষে কোলোস্ট্রাম যাকে আমরা শালদুধ বলি ।
গর্ভবতী অবস্থায় কোলোস্ট্রাম চুঁইয়ে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে আপনার বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়। এটি গর্ভাবস্থার অতি সাধারণ একটি উপসর্গ। আবার কারো যদি প্রসবের আগে কোলোস্ট্রাম উৎপন্ন না হয়, তাতেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এর সাথে প্রসব পরবর্তী দুধ উৎপন্ন হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ, এই তরল যদি আপনার কাছে পুঁজের মতন মনে হয় অথবা ব্যাথা অনুভব হয়, নিজের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয় তবে দ্রুত আপনার চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাত করবেন।
ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ
এই সময়ে সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া নির্গত হওয়ার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় এস্ট্রজেন হরমোনের পরিমান বেড়ে যায় এবং ভ্যাজাইনার আশপাশে এসময় রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় বলেই এমনটা হয়। এই বিষয়টি অস্বস্তিকর হলেও এর বিশেষ উপকারী দিক আছে। এই ডিসচার্জ জরায়ুমুখ এবং জন্মনালীকে বিভিন্ন ধরণের ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে এবং যৌনাঙ্গের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে।
তবে দুর্গন্ধযুক্ত, হলুদাভ, বাদামী কিংবা লাল স্রাব দেখা দিলে দ্রুত আপনার গাইনীকে জানান।
এসব ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা আরও অনেক ধরণের উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। গর্ভকালীন সব ধরণের উপসর্গ নিয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।
গর্ভধারণের এ সপ্তাহে করনীয়
এ সময় সাধারণত বেশিরভাগ মায়ের খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা কম থাকে। তাই এখন থেকেই বিভিন্ন রকম পুষ্টিকর খাবার খেতে শুরু করুন। এই বিষয়টি মাকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি পরবর্তীতে বাচ্চার সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গঠনেও ভালো প্রভাব ফেলবে। সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থাতেই শিশু মায়ের গ্রহন করা বিভিন্ন খাবারের স্বাদ পেতে শুরু করে।
গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের নিরাপত্তার জন্য স্বাভাবিকভাবেই মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু কমে যায়। তাই এই সময় বিভিন্ন জীবাণু সংক্রমণ এড়াতে একটু সাবধানতা প্রয়োজন। ঘন ঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন, বাইরে গেলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাথে রাখুন। খাবার, পানীয়, টুথব্রাশ কারো সাথে শেয়ার করবেন না এবং অসুস্থ মানুষজনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
গর্ভাবস্থার এই সময়টাতে হাঁচি, কাশি দেয়ার সময় বা জোরে হাসার সময় ইউরিন লিক করতে পারে। এর কারণ মূলত পেলভিক ফ্লোর পেশী শিথিল হয়ে আসা। পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ এ সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়মিত গর্ভকালীন অন্যান্য ব্যয়াম করতে থাকুন। তবে ব্যয়াম করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন।
এসময় পাশ ফিরে শোওয়া বিশেষ করে বাম পাশ ফিরে শোওয়াটা সবচাইতে নিরাপদ।বাম কাত হয়ে শোয়াটা আপনার বাচ্চার জন্যও ভালো কারণ এতে করে পুষ্টি ও রক্ত প্ল্যাসেন্টা দিয়ে সহজেই বাচ্চার কাছে পৌঁছাতে পারে।
পায়ের নিচে, পিঠে বালিশ আপনার গর্ভকালীন ব্যথা থেকে দিতে পারে কিছুটা স্বস্তি ও আরামের ঘুম। বালিশের অবস্থান এমনভাবে রাখতে হবে যেন তা শুধু মাথা নয়, মায়ের পেট ও পা-কেও সমানভাবে আরাম দিতে পারে। এ সময়ের জন্য উপযুক্ত বালিশ (pregnancy pillow) কিনতে পাওয়া যায় বা বানিয়ে নিতে পারেন।
মনের যত্নে প্রথমেই আপনার শরীরের স্বাভাবিক এবং সাধারণ প্রয়োজনগুলো পরিপূর্ণ করুন যেমন পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, নিকোটিন, চিনিযুক্ত খাবার কিংবা জাঙ্কফুড এড়িয়ে যাওয়া, হালকা ব্যায়াম ও হাঁটাচলা করা এবং যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেয়া। এগুলো আপনার দুশ্চিন্তাগুলোকে মানিয়ে চলার ব্যাপারে অনেক সাহায্য করবে।
সেইসাথে গর্ভাবস্থা ও সন্তান লালন পালনের বিভিন্ন দিক ও মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একটু পড়াশোনা করে নিন। এতে আপনার আত্ববিশ্বাস বাড়বে এবং কিছু সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারবেন। বিভিন্ন কাজে প্রায়োরিটি ঠিক করতে শেখা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কাজ কিংবা কথা যেগুলো আপনার মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়, তা সাময়িক ভাবে এড়িয়ে চলুন।
<<গর্ভাবস্থা সপ্তাহ- ৩৩
গর্ভাবস্থা সপ্তাহ- ৩৫>>