শিশুর মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কেন জরুরী | ইমোশনাল সেইফটি

Spread the love

মানুষ হিসেবে আমরা সবাই কম-বেশি আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের ফিজিক্যাল সেইফটি বা শারীরিক সুরক্ষার ব্যাপারে জানি। কিন্তু ইমোশনাল সেইফটির (Emotional Safety) ব্যাপারে আমাদের কতটুকু ধারণা আছে? আমরা কি আদৌ বিষয়টা সম্পর্কে জানি বা বুঝি?

চমৎকার সম্পর্কের জন্য ইমোশনাল সেইফটি বা মানসিক নিরাপত্তা থাকা খুবই জরুরি। শুধু সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, সুস্বাস্থ্যের জন্য ইমোশনাল সেইফটি থাকা প্রয়োজন। নিশ্চিন্তে নিজের দুর্বলতা, ভাবনা, অনুভূতি, কষ্ট, ভয়, রাগ ইত্যাদি প্রকাশ করার জন্য মা, বাবা, স্ত্রী, স্বামী, সিবিলিং ইত্যাদি সম্পর্কের মানুষদের সহযোগিতা খুবই জরুরি।

বিজ্ঞাপণ

ইমোশনাল সেইফটি বা সাইকোলজিক্যাল সেইফটি (Psychological safety) কি

অনেক সময় আমাদের মাথায় এমন কিছু চিন্তা বা আইডিয়া আসে যেটা আমাদের নিজের কাছেই অদ্ভুত মনে হয়। যেহেতু সেই চিন্তা বা আইডিয়া নিয়ে আমরা অস্বস্তিতে থাকি তাই আমরা তা অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে পারিনা। আমাদের মনে হয় অন্যরা বুঝি হাসাহাসি করবে বা নেগেটিভ কিছু বলবে। এই যে অন্যদের সামনে আমাদের মনের ভাব প্রকাশে যে অস্বস্তি, দ্বিধা বা লজ্জা, এর কারণ হচ্ছে আমরা সে মানুষদের কাছে সাইকোলজিক্যালি বা ইমোশনালি নিরাপদ বোধ করছিনা।

প্যারেন্টিং এর ভাষায় বলতে গেলে ইমোশনাল সেইফটি হল এমন একটি পরিবেশ যেখানে শিশুরা তাদের মনের রাগ, দুঃখ, ক্ষোভ, অভিমান, তাদের মনের কল্পনা ইত্যাদি সবকিছু খুলে বলতে পারে।

বাচ্চারা যখন তাদের মনের কথা বাবা, মাকে জানায় তখন তারা মূলত তাদের ভেতরের জগতটাকে অভিভাবকদের সামনে মেলে ধরে। তারা তাদের মনের গহীনে থাকা কথা শোনার সুযোগ করে দেয়। তাদেরকে বুঝে সাহায্য করার সুযোগ করে দেয়।

কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাবা, মা তাদের প্রতি এমন আচরণ করেন যেন তাদের আবেগ, অনুভূতির কোনো মূল্যই নেই। বাবা, মা যেন শুনেও শুনছেন না, বাচ্চাদের আবেগ, অনুভূতিকে যেন কোনো গুরুত্বই দিচ্ছেন না। উল্টো বাচ্চাদের আবেগের কথাগুলোকে স্রেফ হাত নেড়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন কিংবা কঠিন কথা শুনিয়ে দিচ্ছেন।

এভাবেই বাচ্চারা তাদের বাবা, মায়ের প্রতি বিশ্বাস হারাতে থাকে। বাবা, মাকে আর নিজের আপন কেউ ভাবতে পারে না। মনের অজান্তেই তারা ধীরে ধীরে বাবা, মায়ের সাথে নিজেদের দূরত্ব তৈরি করে নেয়। এই দূরত্ব থেকে জন্ম নেয় হাজারো নতুন সমস্যা।

ইমোশনাল সেইফটি না থাকলে কী সমস্যা?

কয়েক বছর আগেও বাবা, মায়েরা মনে করতেন সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে, শৃঙ্খলা শেখাতে হলে চিৎকার করা এবং গায়ে হাত তোলার কোনো বিকল্প নেই। বেতের বাড়ি না পড়লে সন্তান মানুষ হয় না। তবে এখন সেই ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। এখন সন্তানকে শারীরিকভাবে আঘাত করার চর্চা অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু সন্তানের মানসিক দিকটা আগের মতই আড়ালেই রয়ে গেছে।

অধিকাংশ বাবা, মা এখনো অনুধাবন করতে পারছেন না সন্তানকে শুধু শারীরিকভাবে নিরাপদ বোধ করানোই যথেষ্ট নয়, তাকে ইমোশনালিও নিরাপদ বোধ করানো জরুরি।

সন্তানের মানসিক উন্নয়নের জন্য এটা নিশ্চিত করা জরুরি যে, সে যেন তার বাসায় একদম নিরাপদ বোধ করে। বাবা, মাকে দেখে যেন আতংক বোধ না করে। সন্তানের কাছে তার বাবা, মা হলো একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু সেই বাবা, মা যখন সন্তানের আতংকের কারণ হয়ে যায়, তখন সে মানসিকভাবে অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়ে।

মানসিকভাবে নিরাপদ বোধ না করলে শিশুদের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে তা হলো-

  • বাচ্চারা নিজেদের ভাবনা চিন্তা প্রকাশ করবে না। কারণ তারা ভয় পাবে এই ভেবে যে, নিজের মনের কথা প্রকাশ করলে বাবা-মা হয়তো রেগে আগুন হয়ে যাবে! কিংবা বাচ্চারা আতংকিত বা লজ্জা বোধ করবে এই ভেবে যে, তাদের কথা শুনলে হয়তো বাবা-মা কষ্ট পাবেন, ইত্যাদি।
  • বাচ্চারা হয়তো ভাববে, মনের কথা প্রকাশ করার জন্য বাবা-মায়ের যেকোনো একজন বা দুজনই তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করবে কিংবা লজ্জা দেবে।
  • বাচ্চারা বিশ্বাস করতে শুরু করে বাবা/মায়ের কড়াকড়ি আচরণের জন্য আসলে সে নিজেই দায়ী। বাচ্চারা ভাবতে থাকে, তাদের জন্যই বাড়িতে এত অশান্তি হচ্ছে।
  • বাচ্চারা অনেক সময় নিজের ছোটভাই/বোনকে বাবা-মায়ের বকুনির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের কথা, চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ না করে দমিয়ে রাখে।
  • কড়া বাবা/মাকে শান্ত রাখার জন্য বাচ্চারা নিজেদের মত প্রকাশ নাও করতে পারে।

ইমোশনাল সেইফটির গুরুত্ব

সবাইকে বুঝতে হবে প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের ভাবনা, চিন্তা, অনুভূতি প্রকাশ করার অধিকার আছে। ব্যক্তি বলতে শুধু বড়দের কথা বলা হচ্ছে না, বাচ্চাদের কথাও বলা হচ্ছে। বাচ্চাদেরও নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করার অধিকার আছে। আর এই অধিকারবোধের ব্যাপারটি বোঝার মধ্যে দিয়েই মূলত ইমোশনাল সেইফটির মূল ভিত্তি স্থাপিত হয়।

সন্তানকে ইমোশনালি সেইফ পরিবেশের ব্যবস্থা করে দেওয়া বাবা-মায়ের দায়িত্ব। মানসিক নিরাপত্তা সন্তানকে ভবিষ্যতে সফল হতে যেমন সহায়তা করে তেমনি তাকে অন্যান্য ব্যক্তিদের সাথে স্থিতিশীল, নিরাপদ সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে সাহায্য করে। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, আত্মমূল্যায়ন করতে শেখায়, মানসিক একং শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

সম্পর্কটা হোক প্রাপ্তবয়স্কের সাথে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কিংবা শিশুর সাথে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের, ইমোশনাল সেইফটি থাকা খুবই জরুরি। এটি একটি সুন্দর সম্পর্কের ভিত্তি-প্রস্তর হিসেবে কাজ করে থাকে। একটা জিনিস মনে রাখা প্রয়োজন- সব ইমোশন, আবেগ গ্রহণযোগ্য হলেও সব আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।

সন্তান সবসময় চায় বাবা, মা যেন তার ব্যাপারে ইতিবাচক ভাবনা পোষণ করে। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে, ভুল-ত্রুটিতে বাবা, মা যেন তার ওপর বিশ্বাস রাখে, ভরসা করে। সন্তান তার বাবা, মায়ের ভালবাসা, স্বীকৃতি এবং অনুমতির ওপর প্রচণ্ডভাবে নির্ভরশীল।

যখন কোনো সন্তান তার বাবা, মায়ের অনুমতি হারায় তখন সে একটি সঠিক কাজ করার অনুপ্রেরণাও হারিয়ে ফেলে। বাবা, মায়ের আদর, ভালবাসা পাওয়ার জন্য সন্তান আপ্রাণ চেষ্টা করবে। কিন্তু তাদের বাবা, মায়ের ভালবাসাটা যদি নিঃশর্ত না হয় তাহলে তারা অনুপ্রেরণা পাবে না। একটা কথা আমাদের সবার মাথায় রাখা উচিত- শর্ত সাপেক্ষ ভালবাসা মনে শান্তির চেয়ে বেশি জখম দিয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপণ

যখন কোনো শিশু তার বাবা, মাকে বিশ্বাস করে, তারা ভাবে তাদের বাবা, মা তাদের ওপর কোনো জুলুম করবেন না। বাবা, মা বাচ্চাদের প্রতি সদয় এবং সৎ থাকলে বাচ্চারাও সেখান থেকে সততা ও দয়ালু হওয়ার শিক্ষা পায়।

বাচ্চারা কখনো মিথ্যে বলতে চায় না। তারা মূলত নিরাপদ বোধ করতে চায়। এই নিরাপদ বোধ করতে গিয়ে সে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। কিন্তু তাকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে কে বা কারা বাধ্য করল?

বাবা, মা যদি সন্তানকে ইমোশনালি সেইফ অনুভব করাতে পারতেন তাহলে হয়তো সন্তানকে মিথ্যা কথা বলার প্রয়োজনই পড়তো না। এজন্য বাবা, মায়ের উচিত সন্তানের সাথে যেকোনো বিষয়ে কথা বলার মতো পরিবেশ বা সম্পর্ক বজায় রাখা।

ইমোশনাল সেইফটি সন্তানকে সৎ রাখে, তাকে সত্য কথা বলার সুযোগ দেয়, নিজের ভুলের দায়িত্ব নিতে শেখায়। বাবা, মায়ের উচিত সন্তানের বিশ্বাস অর্জন করা যেন সন্তান নিশ্চিন্তে তাদের যেকোনো ভুল, ত্রুটির কথা বাবা, মাকে জানাতে পারে এবং বাবা, মা তাদেরকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারেন।

বাচ্চারা বরাবরই সমালোচনা এবং প্রত্যাখ্যান ভয় পায়। তাই এই দুটো থেকে বাঁচার জন্য তারা প্রচুর বুদ্ধি ও শক্তি খরচ করে মিথ্যে কথা বলে, সত্য গোপন করে। তাই বাবা, মায়ের উচিত সন্তানকে সমালোচনা ও প্রত্যাখানের ভয় থেকে দুরে রাখা।

বাচ্চাদেরকে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করতে থাকলে তারা ধীরে ধীরে নিজের স্বাভাবিক আবেগ, অনুভূতি প্রকাশও করতে পারে না। তারা নিজেকে অসহায় ভাবে, তারা মনে করে তাদের পাশে কেউ নেই।

নিজের মত প্রকাশ করতে না পেরে বাচ্চারা ফ্রাস্ট্রেশনে ভোগে এবং সেই ফ্রাস্ট্রেশন বা অবসাদ থেকে তারা অন্যান্য ছোটখাটো জিনিস নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে শুরু করে। তখন বাবা, মা ভাবে “আমরা বাচ্চাদের যা যা দরকার (শারীরিক বা বাহ্যিক প্রয়োজন) সবই মেটানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু তারপরেও বাচ্চারা কেন এত বিরক্তি প্রকাশ করে। তারা এত অকৃতজ্ঞ কেন?”

বাচ্চাদেরকে স্বাভাবিকভাবে আবেগ প্রকাশ করতে অনুৎসাহিত করলে তারা ধীরে ধীরে উগ্র পন্থা অবলম্বন করতে শুরু করবে। আগ্রাসী আচরণ করবে, সার্কাস্টিক টোনে কথা বলবে বা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করবে, পরোক্ষভাবে বিরক্ত প্রকাশ করবে।

এভাবে সন্তান এবং বাবা, মায়ের মাঝে একধরনের বিব্রতকর এবং বিভ্রান্তিকর সম্পর্কের জন্ম দেয়। যা সন্তানের সাথে বাবা, মায়ের সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। এবং এক পর্যায়ে সন্তানরা আগ্রসী মনোভাবের হয়ে ওঠে, তারা মুখ গোমড়া করে থাকে, তারা কারো কথা শুনতে চায় না।

বাচ্চাদেরকে কীভাবে ইমোশনালি সেইফ অনুভব করানো যেতে পারে?

  1. বাচ্চাদেরকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে এবং কোনো বিষয়ে তাদেরকে নিশ্চিন্তে ভিন্ন মত প্রকাশ করার সুযোগ দিতে হবে। ভিন্ন মত প্রকাশ করার জন্য তাদেরকে কোনো লজ্জা দেওয়া বা জাজ করা যাবে না।
  2. বাচ্চাদেরকে তাদের আবেগ প্রকাশ করার সুযোগ দিতে হবে। এমনকি সেটা যদি অস্বস্তিকর আবেগ (রাগ, দুঃখ, ক্ষোভ) হয়, তারপরেও তাদেরকে বাধা দেওয়া যাবে না।
  3. বাচ্চাদেরকে তাদের মতো করে জীবন উপভোগ করতে দিতে হবে। তাদের ওর অভিভাবকদের স্বপ্ন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
  4. সবসময় বাচ্চাদের সাথে “শিক্ষক” সুলভ আচরণ করা যাবে না। চুপচাপ বাচ্চাদের কথাও শুনতে হবে।
  5. অভিভাবকদের বিশ্বাস করতে হবে তাদের সন্তান সহজাতভাবে “ভাল” মনের অধিকারী।
  6. বাচ্চাদের ওপর বিশ্বাস রাখুন। তাদেরকে শেখাতে যাবেন না কার মতো হতে হবে। তাদের নিজের মতো করে চলার সুযোগ দিন।
  7. বাচ্চাদেরকে ভয়ে নয় বরং ভালবাসায় বিশ্বাস করতে শেখান।
  8. প্রয়োজনে বাচ্চাদেরকে কিছু ক্ষেত্রে “ব্যর্থ” হতে দিন যেন তারা সেখান থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
  9. বাচ্চাদের সফলতায় মন খুলে উচ্ছাস প্রকাশ করুন, তাদের সমর্থক হয়ে উঠুন, তাদেরকে সাপোর্ট করুন।
  10. মনে রাখবেন বাচ্চাকে বড় করা মানে তাকে শেখানো, তাকে বোঝা, সম্মান করা, তার সাথে যোগাযোগ রাখা, তার কথা শোনা। বাচ্চাকে লালন-পালন করা মানে তার মনে ভয় পয়দা করা নয়।
  11. আপনার হাতে থাকা ফোনটি বা কম্পিউটারটি বন্ধ করুন। যেন আপনি বাচ্চাদের প্রতি পরিপূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন।
  12. বাচ্চাদের দিকে তাকান। তাদের চোখে চোখ রাখুন, হাসুন, হাতের সাথে হাত মিলিয়ে হাই ফাইভ দিন। মূল কথা বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। খেয়াল রাখুন, বাচ্চারা যেন আপনাকে দেখে আতংকিত না হয়।
  13. বাসার একটা স্থানকে এমনভাবে সাজান যেন জায়গাটা বেশ শান্ত, শিষ্ট, চুপচাপ থাকে। প্রয়োজন পড়লে যেন সেখানে গিয়ে চুপচাপ দুদণ্ড বসে থাকা যায়।
  14. বাচ্চাদেরকে বাচ্চা থাকতে দিন, ছেলেমানুষি করতে দিন। তাদের ওপর অহেতুক ম্যাচিউরিটির ভার তুলে দেবেন না, প্রাপ্তবয়স্কদের ভার তুলে দেবেন না।
  15. বিভিন্ন কাজে বাচ্চাদেরকে ব্যস্ত রাখার জন্য তাদের নাভিশ্বাস তুলে দেবেন না। তাদেরকে মুক্ত বাতাস নেওয়ার সুযোগ দিন, খেলাধূলা করার সুযোগ দিন।
  16. বাচ্চাদেরকে ভালবাসার ক্ষেত্রে কখনো শর্ত জুড়ে দেবেন না। তাদেরকে নিঃশর্তভাবে ভালবাসুন।
  17. অতীত নিয়ে পড়ে থাকবেন না। ভবিষ্যৎ নিয়ে আকাশ-কুসুম কল্পনায় ডুবে যাবেন না। বর্তমানের দিকে মনোযোগ দিন।
  18. নিজেকে ভালবাসুন, নিজের যত্ন নিন, নিজের সমস্যাগুলোর সমাধান করে ফেলুন। বিভিন্ন সমস্যা জর্জরিত হয়ে শহীদ হয়ে যাবেন না বা সারাদিন শোক করে কাটাবেন না। মনে রাখবেন, আপনিই আপনাদের বাচ্চাদের কাছে ইমোশনাল সেইফটির ব্যাপারে একজন রোল মডেল। আপনাকে দেখেই বাচ্চারা শিখছে।

ধরা যাক, আপনার সন্তান স্কুল থেকে ফিরে বাসায় ঢুকেই কাঁধ থেকে ব্যাগটা কোনোমতে ছুঁড়ে মেরে নিজের রুমে চলে গেল। ব্যাপারটা দেখে বাবা কিংবা মা হিসেবে হয়তো আপনি প্রচণ্ড বিরক্ত হবেন? আপনার খুব রাগ হবে? এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সন্তানকে ইমোশনালি সেইফ অনুভব করাতে আপনাকে নিজের রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। নিজের অনুভূতির লাগাম টেনে সন্তানের ইমোশনাল সেইফটি নিশ্চিত করতে হবে।

তবে তার মানে এই নয় যে, আপনি আপনার সন্তানকে শুধরে দেবেন না বা কিছু বলবেন না। অবশ্যই বলবেন! তবে সেখানে বাড়াবাড়ি রকমের কোনো আবেগের প্রদর্শন থাকবে না। আপনি আপনার সন্তানকে সাধারণভাবে বলতে পারেন, “ব্যাগটা জায়গামতো নিয়ে রেখে দাও। ওখানে ওভাবে ফেলে রেখো না। ব্যাগটা ময়লা হয়ে যাবে।”

বিজ্ঞাপণ

সন্তানকে বকা, ঝকা না করে, উঁচু গলায় হুমকি, ধমকি না দিয়ে সন্তানদের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলাটা সবদিক থেকে উত্তম। এতে একদিকে যেমন সন্তানের ইমোশনাল সেইফটি ঠিক থাকে অন্যদিকে অভিভাবক হিসেবে বাবা, মা তাদের নিজেদের দায়িত্বটাও পালন করতে পারেন। সন্তানকে সুন্দর করে দিক নির্দেশনা দেওয়ার মাধ্যমে পারিবারিক মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা ইত্যাদি বজায় থাকে। অথচ ইমোশনাল ম্যানেজমেন্ট বিহীন বকা, ঝকা, চিৎকার, চেঁচামেচি শুধু ঘরের পরিবেশই নষ্ট করে না, সেই সাথে ঘরে অনাকাঙ্খিত আচরণের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়।

শেষকথা

সন্তানকে ইমোশনালি সেইফ অনুভব করানো সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে হলে আগে সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। খবরে, পত্রিকায়, প্রবন্ধে, আর্টিকেলে সব জায়গায় সন্তানকে শারীরিকভাবে রক্ষা করার কথা বলা হয়। কীভাবে সন্তানকে আঘাত পাওয়ার হাত থেকে বাঁচানো যাবে সে-ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ এবং টিপস দেওয়া হয়। কিন্তু ইমোশনাল সেইফটির ব্যাপারে সেরকম কোনো আলোচনাই দেখা যায় না।

বাচ্চাদেরকে বড় করার ব্যাপারে আমাদেরকে আরো সতর্ক হতে হবে। শারীরিক দিকটার পাশাপাশি বাচ্চাদের ইমোশনাল দিকটায় ফোকাস করা জরুরি। বাচ্চাদের মনের ভেতরে কী চলছে সেটা জানার জন্য এবং বোঝার জন্য বাবা, মাকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে, আরো বেশি সময় দিতে হবে। সেই সাথে বাবা, মাকে এটাও মাথায় রাখতে হবে, বাচ্চার সাথে কাটানো প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত যেন বাচ্চার মানসপটে পজেটিভ বা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কোনোভাবেই যেন নেগেটিভ প্রভাব না ফেলে। 

পৃথিবীর সকল সন্তান তাদের বাবা, মা, অভিভাবকদের কাছে ইমোশনালি সেইফ অনুভব করুক, এটাই প্রত্যাশা।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment