বাচ্চাকে লেখা শেখানো | কিছু টিপস

Spread the love

খুব ছোট থেকে বাচ্চাদের সাথে রিডিং টাইমটা বেশ প্রয়োজন। বাচ্চার সাথে সুন্দর সময় কাটে বাবা মায়ের, সেই সাথে নানা জিনিসের আকার, রঙ ইত্যাদী সম্পর্কে ধারণা জন্মাতে থাকে আস্তে আস্তে সাথে ভোক্যাব্যুলারী ডেভেলপ করতে থাকে। আর বিভিন্ন ওয়ার্ড আর এল্ফাবেটগুলো উচ্চারন/ধ্বনি (phonics) দিয়ে শুরু হয় পড়ালেখার প্রথম ধাপ ‘রীডিং’। 

আর বর্ণ বা লেটার এবং নাম্বার লেখার প্র‍্যাকটিস শুরু হয় পরবর্তীতে, সাধারনত ৩ বছর এর আগে না। ২ থেকে চার বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের স্বাধীনভাবে আকিবুকি বা স্ক্রিবলিং করতে উৎসাহ দেয়া উচিত। তার জন্য উপকরন হিসেবে মোটা ক্রেয়ন, চক, ওয়াশ্যাবল মার্কার, ফিংগার পেইন্ট এগুলো দিয়ে আকতে দেয়া উচিত। মূলত এটিই লেখা শেখানোর প্রথম ধাপ। পরবর্তীতে এক এক করে ধাপে ধাপে বাচ্চার আগ্রহ এবং ক্যাপাসিটি অনুযায়ী আগাতে হয়। এ বিষয়ে নিচের পয়েন্টগুলো হয়তো হেল্পফুল হবে।

বিজ্ঞাপণ

১.   ক্রেয়ন,  চক,  এগুলো দিয়ে আকিবুকি করবে, ইচ্ছেমতো, এতে ক্রিয়েটিভিটি আর হাতের আংগুলের ফাইন মোটর স্কিল বাড়বে, ভবিষ্যতে পেন্সিল ধরতে পারদর্শি হবে। ৩ থেকে ৪ বছরে আমরা অনেকেই পেন্সিল দিয়ে লেখা শেখানোর জন্য অস্থির হয়ে যাই, কিন্তু তাদের হাতের গ্রিপ পেন্সিল ঠিকভাবে ধরার আর সেটা দিয়ে লেটারগুলো লেখার মতো থাকে না। ওদের অনেক স্ট্রেস হয়, আর পড়াশোনার প্রতি ভীতিটা ওই বয়স থেকেই জন্মে যায়।

শিশুকে ক্রেয়ন,  চক,  এগুলো দিয়ে আকিবুকি করতে দিন।

২. একটা ট্রে তে শুকনো বালি বা শুকনো লবণ নিয়ে আংগুল দিয়ে বালিতে দাগ কেটে কেটে লেটারগুলো লেখা সেন্সরী মটর স্কিলের জন্য প্রয়োজনীয় একটি এক্টিভিটি। বিভিন্ন জিনিসের ছোয়া, টেক্সচার ফীল করা এগুলো সেন্সরী ডেভেলপমেন্ট এর জন্য সহায়ক৷ বালির পরিবর্তে লবন বা চাল, ডাল এগুলোও ব্যাবহার করতে পারেন।

স্যান্ড রাইটিং ট্রে

৩. শুন্যে লেখা, মানে বাতাসে হাত চালিয়ে লেখার ভংগী করবেন, বাচ্চাও আপনাকে ফলো করে সেই অদৃশ্য লেখা লিখবে। এটা একটা মজার কাজ, বাচ্চারা এঞ্জয় করে। কাজটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনি পিছু ফিরে করতে পারেন, কারন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে করলে আপনার আকা লেটারটি সে উলটোভাবে দেখবে।

৪.  শিশুর হাতের আংগুলে পানি বা  ওয়াশ্যাবল রঙ (ফিংগার পেইন্ট ও হতে পারে) লাগিয়ে কাগজ, বোর্ড বা যেকনো সারফেইসের  উপর লিখতে দিতে পারেন।

ফিংগার পেইন্টিং

৫.  শুরুর দিকে ডট, স্ট্রেইট লাইন এগুলো শেখান। দুটো ডট দিয়ে একটা ডট থেকে আরেকটা ডটে কানেক্ট করা এগুলো বেশ কয়েক সপ্তাহ প্র‍‍্যাক্টিস করান।  ভারটিকাল লাইনগুলোকে স্ট্যান্ডিং লাইন, আর হরাইযন্টাল লাইগুলোকে স্লীপিং লাইন, হেলানো লাইন গুলোকে স্ল্যান্টিং লাইন বলতে পারেন বাচ্চার মনে রাখার সুবিধার জন্য।

৬. নানা রকম সহজ শেইপগুলো আস্তে আস্তে আকতে বলুন ক্রেয়ন দিয়ে অথবা উপরে দেয়া যেকোনো তরিকায়।

৭.   একটা বর্ণ /লেটার টানা কয়েকদিন প্র‍‍্যাকটিস করাতে হবে। একই দিনে দুটো বা  নানারকম লেটার লেখানো যাবে না।

৮. বাংলা বর্ণমালার ক্ষেত্রে প্রথমেই স্বরে অ দিয়ে শুরু করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সে যেহেতু লাইন টানা আগে শিখবে, তাই ‘ব’ বর্ণটি দিয়ে শুরু করতে পারেন। ব তে মাত্রা (সমান্তরাল/ স্লীপিং লাইন),  তারপর ৩ টি লাইনের একটা ত্রিভুজ হয়। স্বরে-অবর্ণটি একটু জটিল সে তুলনায়।

আর ব দিয়ে শুরু করলে  ব এর পরের বর্ণগুলো হতে পারে ‘র’,  ‘ধ’, ‘ঝ’, ‘ঋ’ – এগুলো সব লিখতেই শুরুতে ‘ব’ লেখা দরকার হয়৷ শুরুতে সহজবর্ণগুলো বাছাই করবেন। সে আস্তে আস্তে লেখায় পারদর্শী হতে থাকলে অন্যবর্ণগুলোয় যাবেন।

বিজ্ঞাপণ

দিনে একটাবর্ণ আর একটা নাম্বারের বেশী কোনোভাবেই প্র‍‍্যাক্টিস করাবেন না। এবং টানা ৪ থেকে ৫ দিন একইবর্ণ প্র‍‍্যাক্টিস করানোর পর পরবর্তী বর্ণে যাবেন শুরুর দিকে। সিরিয়ালিবর্ণমালা লেখা শেখাবোর কোনো প্রায়োগিক দিক নেই। তাই সিকোয়েন্স মেইন্টেইন করার কোনো প্রয়োজন নেই। বর্ণমালার সিকোয়েন্স  মৌখিকভাবে শেখাবেন যেন নামগুলো মনে থাকে।

একইভাবে, ইংরেজি এল্ফাবেটের মধ্যে ‘L’,  ‘E’ ‘F’,  ‘H’ – এ ধরনের স্ট্রেইট লাইন ওয়ালা লেটারগুলো বাছাই করবেন।

৯. শুরুর দিকে বেশিক্ষন প্রাক্টিস করাবেন না, জাস্ট কয়েকবার -যতক্ষন সে এঞ্জয় করে। প্রথমে বাতাসে লিখবে, তারপর আংগুল দিয়ে কোনো একটা সেন্সরী টুল ব্যাবহার করে লিখবে, ফাইনালী কাগজে বা স্লেটে লিখব। আজকাল নানা রকম স্লেট,  ওয়াইপ ক্লিন লেখার বই এগুলো পাওয়া যায়৷

১০.  লেখা শেখানোর সময় প্লে-ডো দিয়ে অথবা ব্লক দিয়ে বর্ণগুলো বানাতে দিন, এতেবর্ণটির শেইপ তার মাথায় গেথে যাবে। কিছু এল্ফাবেট ব্লক অথবা হাত দিয়ে অনুভব করা যায় এমন কিছু আল্ফাবেট শেইপ তাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করে লেটারটির আকার সম্পর্কে ধারনা নিতে দিন। শিরিশ কাগজ বা নানা টেক্সচারের কাগজ শেইপ করে কেটে এই কাজটি করা যায়।

এই কাজগুলো ক্রিয়েটিভিটি আর ফাইন মোটর স্কিল বাড়ানোর মাধ্যমে ব্রেইন ডেভেলপমেন্টেও ভুমিকা রাখবে।

প্লে-ডো দিয়ে অথবা ব্লক দিয়ে বর্ণগুলো বানাতে দিন

১১. লেখা শেখানোর সাথে প্রতিদিন কিছুটা রিডিং টাইম রাখতে হবে,বর্ণটির উচ্চারন এবং সেই উচ্চারন দিয়ে কিছু শব্দ শেখানো ভালো।

১২. বাচ্চার জন্য কিছু ওয়ার্কশিট রেডি করে ফেলতে পারেন, যেখানে সে রেগুলার প্র‍‍্যাকটিস করবে। ওয়ার্কশীটগুলো একঘেয়ে যেন না হয়, খেয়াল রাখবেন,বর্ণ লেখার জন্য লাইন টানা থাকবে, সেই লাইনের উপর সে হাত ঘোরাবে (Tracing) এবং নিজেও লেখার চেষ্টা করবে। আর তার পাশে কোনো পাযল বা ম্যাচিং এমন কোনো মজার এক্টিভিটি থাকবে ওই লেটারটির সংগে সম্পৃক্ত। সাথে।ছবি থাকলে বেস্ট কারন ছবি সহজেই বাচ্চাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করে।

১৩. আজকাল নানা রকমের মজার মজার এক্টিভিটি ইন্টারনেটেই পাবেন। আর বাচ্চার সাথে সেগুলো করে শেখানোর পাশাপাশি সুন্দর একটি সময় কাটান।

১৪. বাচ্চা কোনো কারনে লিখতে না চাইলে জোর করবেন না। লেখা শেখানোর পরও,  এবং অনেক সময় নিয়ে চেষ্টা করার পরও যদি বাচ্চা (৪ বছর+) লেখা শিখতে পারছে না বলে মনে হয়, বেশিরভাগ সময় উল্টো শব্দ লিখছে, কিছু ধরতে সমস্যা হচ্ছে, এবং একই সাথে লেখার প্রতি মারাত্তক অনীহা দেখাচ্ছে বলে মনে হয়, তবে, তাকে বোঝার চেষ্টা করুন, ঠিক কি সমস্যা হচ্ছে যার কারণে সে লিখতে পারছে না বা লিখতে চাইছে না।

চোখে সমস্যা হতে পারে। ADHD বা ডিসলেক্সিয়ার মতো সমস্যাগুলোও এই বয়সের আগে বোঝা মুশকিল। তাই বকাঝকা করা, বা অলস মনে করার আগে খেয়াল করুন বাচ্চার কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা। প্রয়োজনে এক্সপার্টের সাহায্য নিন।

সবার জন্য শুভ কামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment