কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করা | লেবার ইন্ডাকশন (labor induction)

Spread the love

লেবার ইন্ডাকশন বা কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করা বলতে কি বোঝায়?

প্রত্যেকটি নারীই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে সেই চমৎকার মুহূর্তটির জন্য। ঠিক সেই মুহূর্ত যখন তার অনাগত সন্তান পৃথিবীর বুকে ভূমিষ্ঠ হবে। আর এই অপেক্ষারত প্রসবের জন্য নির্ধারিত একটা সময় দিয়ে দেন ডাক্তার।

তবে সেই সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও যদি প্রসব বেদনা শুরু না হয় তখন সেটা বেশ উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠে এবং ডাক্তার তখন ইন্ডাকশন  পদ্ধতি গ্রহণ করেন অর্থাৎ কৃত্রিম উপায়ে প্রসবের শুরু হওয়ার জন্য ওষুধ এবং কিছু পন্থা অবলম্বন করতে উপদেশ দেন।

বিজ্ঞাপণ

প্রসবের প্রক্রিয়া যদি কোন কারণে থেমে থাকে তাহলে সেই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করে এই প্রসব প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। ডিজিজ কন্ট্রোল সেন্টারের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাঁচ জনের এক জনের প্রসব এভাবে ইনডিউসিং লেবার পদ্ধতি অবলম্বন করে করানো হয়।

প্রসবকে কেন ত্বরান্বিত করতে হবে বা কৃত্রিম উপায়ে শুরু করতে হবে?

আপনার ডাক্তার আপনাকে কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করতে বলতে পারেন, কেননা কখনো স্বাভাবিক প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। নিম্ন বর্ণীত ক্ষেত্রে ডাক্তাররা সাধারণত ইনডিউসিং লেবার পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলে থাকেনঃ

  • আপনার প্রসবের নির্ধারিত সময় পার হওয়ার এক অথবা দুই সপ্তাহের মধ্যেও (পোস্ট টার্ম প্রেগন্যান্সি) যদি আপনার প্রসব শুরু না হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে আপনি যদি আরো অপেক্ষা করতে থাকেন তাহলে সেটা আপনার এবং আপনার শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, এমন অবস্থায় আপনার প্লাসেন্টার কার্যক্ষমতা কমে আসতে পারে যার ফলে গর্ভের শিশুকে আর পরিমাণ মত পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে নাও পারে। এর কারণে আপনার নবাগত সন্তানের অনেক ক্ষতি হতে পারে এমনকি এতে মৃত শিশু প্রসবেরও ঝুঁকি রয়েছে।
  • আপনার পানি ভেঙ্গেছে কিন্তু প্রসব প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। যখনই গর্ভের শিশুর চারপাশের আবরণটি খুলে যায় তখন অপেক্ষা করাটা আপনার এবং শিশুর ইনফেকশনের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এমতাবস্থায় নিজ থেকেই প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার অপেক্ষা করার এবং এই সময়ে ইনডিউসিং লেবার পদ্ধতি গ্রহণ করার ঝুঁকি এবং উপকারিতা উভয় সম্পর্কে ডাক্তার আপনাকে অবগত করবেন। এমতাবস্থায় আপনার শিশু যদি প্রিম্যাচউর হয় তাহলে ডাক্তার যথা সম্ভব কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিবেন।
  • পরীক্ষার মাধ্যমে যদি বুঝা যায় যে আপনার প্লাসেন্টা অর্থাৎ যে অংশের মাধ্যমে শিশুর শরীরে পুষ্টিকর উপাদান সরবরাহ হয় সেটা আর ঠিকমত কাজ করছেনা, আপনার এম্নিওটিক ফ্লুয়িড কমে গেছে অথবা আপনার শিশু যতটা নড়াচড়া করার কথা ছিল সেভাবে নড়াচড়া করছে না এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধিও আর হচ্ছে না।
  • আপনার প্রি ক্ল্যাম্পসিয়া নামক জটিল রোগ যদি হয়, এমতাবস্থায় আপনার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং গর্ভের শিশুর শরীরে ঠিকমত রক্ত প্রবাহ হয় না।
  • আপনার কোন বড় ধরনের রোগ হয়েছে, যেটা গর্ভের শিশুর নিরাপদ ও স্বাভাবিক জন্ম ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস, কিডনি সমস্যা অথবা কোলেস্টাসিস অফ প্রেগনেন্সি।
  • আপনি যদি ইতোপূর্বেও মৃত শিশু প্রসব করে থাকেন।

এছাড়া অন্যান্য আরো কারণেও আপনাকে ইচ্ছাকৃত লেবার ইন্ডাকশন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হতে পারে। যেমন আপনি যদি হাসপাতাল থেকে অনেক বেশি দূরে অবস্থান করেন অথবা আপনার হুট করেই যে কোন সময়ে প্রসব শুরু হয়ে যেতে পারে।

তবে এমতাবস্থায় ডাক্তার আপনার গর্ভের ৩৯ সপ্তাহ পার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন এবং এরপর ইনডিউসিং লেবারের জন্য পরামর্শ দিবেন।

ইনডিউসিং লেবার পদ্ধতিতে কি ধরনের পন্থা অবলম্বন করা হয়?

এটা আসলে অনেকটাই নির্ভর করে আপনার সার্ভিক্স( cervix) বা জরায়ু মুখ ঠিক কি অবস্থায় আছে তার উপর। আপনার সার্ভিক্স  যদি এখনো নরম,  পাতলা (efface)  ও প্রসারিত(dilate) না হয় তবে বুঝা যাবে সেটা এখনো পরিণত হয়নি। অর্থাৎ আপনি এখনো প্রসবের জন্য তৈরি নন।

এমতাবস্থায় কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করার পূর্বে ডাক্তার আপনার সার্ভিক্স  পরিপক্ব করে তুলতে ঔষধের সাহায্য নিতে পারেন। সাধারণত এটা আপনার প্রসবের সময়টাকে ছোট করে নিয়ে আসে এবং কখনো এটা খুব দ্রুতই আপনার প্রসবের সময়টাকে এগিয়ে নিয়ে আসে।

আপনার যদি প্রসব শুরু না হয় তাহলে ক্যানোলার মাধ্যমে অক্সিটসিন নামক ওষুধ প্রয়োগ করা হবে। এই ওষুধটি ( Pitocin ব্র্যান্ড নামেও এটাকে অনেকে চিনে থাকে) সেই হরমোনের সিনথেটিক ফর্ম, যেটা স্বাভাবিক প্রসবের সময় আপনার শরীরে প্রচুর পরিমাণে নির্গত হয়।

আপনার সার্ভিক্স কে পরিপক্ব  এবং প্রসব ত্বরান্বিত করার জন্য ডাক্তার নিম্নে বর্ণিত উপায়গুলো অবলম্বন করতে পারেনঃ

প্রোস্টাগ্লান্ডিন্স   ( prostaglandins) ব্যাবহার করতে পারেন। আপনার সার্ভিক্স  যদি এখনো পাতলা এবং পরিপক্ব না হয় থাকে তাহলে আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে এবং ওষুধ দেয়া শুরু হবে। আপনার যৌনাঙ্গ দিয়ে সিনথেটিক প্রোস্টাগ্লান্ডিন্স  সমৃদ্ধ ওষুধ দেয়া হতে পারে অথবা আপনাকে খেতে হতে পারে মাইসোপ্রস্টোল( misoprostol) ওষুধ।

প্রোস্টাগ্লান্ডিন্স  কিছুটা হরমোনের মত কাজ করে এবং আপনার সার্ভিক্স  পরিপক্ব হতে সাহায্য করে। এছাড়াও প্রোস্টাগ্লান্ডিন্স আপনার প্রসব প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে পারে যাতে করে আপনার অক্সিটোসিনের প্রয়োজন না হয়।

ফলি ক্যাথেটার অথবা সারভিক্যাল রিপেনিং বেলুন ব্যাবহার করতে পারেন। কোন ধরনের ওষুধ ব্যবহার না করে আপনার ডাক্তার হয়ত আপনার সার্ভিক্স এর মধ্যে একটি পাতলা টিউবের মাধ্যমে একটি বা দুটি বেলুন প্রবেশ করাবেন। যখন এই ক্ষুদ্র বেলুনটি পানি দ্বারা পরিপূর্ণ হয় তখন সার্ভিক্স  এর উপর চাপ পড়ার কারণে আপনার শরীর থেকেই প্রোস্টাগ্লান্ডিন্স   নির্গত হতে পারে।

যার ফলে আপনার সার্ভিক্স  নরম এবং পরিপক্ব হয়ে উঠবে। ( যখন সার্ভিক্স  প্রসারিত হতে থাকে তখন বেলুন পড়ে যায় এবং টিউব সরিয়ে ফেলা হয়)

আপনার সার্ভিক্স  যদি ইতোমধ্যেই কিছুটা প্রসারিত হয়ে থাকে এবং ইনডিউস লেবার গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন তাড়া না থাকে তাহলে ডাক্তার আপনার সার্ভিক্স  এর মধ্যে দিয়ে আঙুল ঢুকিয়ে আপনার জরায়ুর নিম্ন ভাগ থেকে এমনিওটিক স্যাক আলাদা করে দিবেন।

এতে করে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রোস্টাগ্লান্ডিন্স  নির্গত হবে ও আপনার সার্ভিক্স  আরো পরিপক্ক হয়ে আপনার প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেতে পারে।

সাধারণত এমনটা ডাক্তারের চেম্বারেই করা হয়ে থাকে এবং আপনাকে প্রসব শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। যেটা সাধারণত এর কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যায়। যদিও অস্বস্তিকর সময়টা খুবই ছোট তবুও অনেক মায়েরাই এই পদ্ধতিটাতে সামান্য ব্যথা পেয়ে থাকেন ও বেশ অস্বস্তি বোধ করেন।

আপনার সার্ভিক্স  যদি কয়েক সেন্টিমিটারের জন্য হলেও প্রসারিত হয়ে থাকে, তাহলে ডাক্তার সার্ভিক্স  এর মধ্যে দিয়ে ছোট হুকের মত একটি ছোট যন্ত্র ঢুকিয়ে এমনিওটিক স্যাক ভেঙ্গে দিবে। এই পদ্ধতিটি যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করার মতই আপনাকে একটু অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিতে পারে এছাড়া আর কিছুই নয়।

আপনার সার্ভিক্স  যদি একদমই পরিপক্ব ও প্রসবের জন্য প্রস্তুত থাকে তাহলে এভাবে এমনিওটিক স্যাক আবরণ ভেঙ্গে দিলেই প্রসব শুরু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। যদি এভাবেও প্রসব শুরু না হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তার আপনাকে অক্সিটসিন ওষুধ দিবেন।

অক্সিটোসিন (পিটোকিন) ব্যাবহার করবেন। আপনার ডাক্তার হয়ত আইভি (IV) পাম্প এর মাধ্যমে অক্সিটোসিন ব্যবহার করে প্রসব প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে সচেষ্ট হবেন। এই সময়ে আপনার প্রসব প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে ডাক্তার আপনাকে পরিমানমত ওষুধ (অক্সিটোসিন) দিবেন।

বিজ্ঞাপণ

কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করলে কি কোন ধরনের ঝুঁকি থাকে?

যদিও বেশীরভাগ সময়েই প্রসব ত্বরান্বিত করার পদ্ধতি গ্রহণ করা একদমই নিরাপদ একটা ব্যাপার, তবুও এর মধ্যে কিছু ঝুঁকি থেকেই যায়। তবে এই ঝুঁকি এবং তার মাত্রা সম্পূর্ণ নির্ভর করে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অবস্থা এবং কি পন্থা গ্রহণ করা হচ্ছে তার উপর।

অক্সিটোসিন, প্রোস্টাগ্লান্ডিন্স অথবা নিপল স্টিমুলেশন (পরবর্তীতে নিচে ব্যাখ্যা করা হবে এ সম্পর্কে) এর মাধ্যমেই সাধারণত যে কন্ট্রাকশন হয় তা খুব ঘন ঘন হতে পারে অথবা অস্বাভাবিক ভাবে দীর্ঘ সময় ধরে এবং তীব্র ভাবে হয়। এর কারণে আপনার শিশুর উপরেও চাপ পড়তে পারে।

খুব বিরল হলেও কখনো কখনো প্রোস্টাগ্লান্ডিন্স অথবা অক্সিটসিন এর জন্য প্লাসেন্টা জরায়ু থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে (প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন)  অথবা জরায়ু ছিঁড়ে ধরতে পারে। যদিও যে সব নারীদের ইতোপূর্বে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম হয়নি অথবা জরায়ুতে কোন অপারেশন হয়নি তাদের মধ্যে জরায়ু ছিঁড়ে যাওয়াটা খুবই বিরল ঘটনা।

মাইসোপ্রস্টল নামের যে প্রস্টাগ্লান্ডিন্স ব্যাবহার করা হয় তা ব্যাবহার করা হলে, যে নারীদের ইতোপূর্বে সিজার হয়েছে এবং এখন স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে আগ্রহী তারা জরায়ু ছিঁড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

এছাড়া কোন ধরণের আঘাতপ্রাপ্ত বা অপারেশন করা জরায়ুর ক্ষেত্রে এই ধরনের ওষুধ ব্যাবহার করার একদমই উচিৎ নয়। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে পূর্বে সিজার করা নারীরা যদি বর্তমানে স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে আগ্রহী হয় তাহলে অক্সিটসিনও ব্যবহার করা উচিৎ নয়।

প্রসবের সময় হওয়া সংকোচনের মাত্রা এবং সময়ের সাথে সাথে শিশুর হৃদকম্পন পরীক্ষা করার জন্য ইনডিউসিং লেবার পদ্ধতি গ্রহণের সময় ইলেক্ট্রনিক ফেটাল মনিটরের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হবে । এই পরীক্ষা করার সময়ে আপনাকে হয়ত একদম স্থির হয়ে শুয়ে অথবা বসে  থাকতে হতে পারে।

তবে এখনকার কোন হাসপাতাল টেলিমেট্রি পদ্ধতিতেও এটা পরীক্ষা করে থাকে, এই পরীক্ষার সময়ে আপনি হাঁটাহাঁটিও করতে পারবেন।

কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করার প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় ধরেও হতে পারে, বিশেষ করে যদি এই প্রক্রিয়া শুরু হয় আপনার সার্ভিক্স  পরিপক্ব করার মাধ্যমে। আর মনে রাখবেন এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া আপনার এবং আপনার সঙ্গীর উপর বিশেষ মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে (তবে অপরদিকে প্রসবের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করা নারীদের যখন নির্ধারিত সময় পার হয়ে যায় তখন হয়ত এর থেকেও বেশি মানসিক চাপে তারা ভুগেন)।

যদি ইচ্ছাকৃতভাবে করা ইন্ডাকশন কোন কারণে কাজ না করে তবে ডাক্তার হয়তো আপনাকে আরেকটু অপেক্ষা করতে বলতে পারেন, এটা দেখার জন্য যে প্রসব নিজ থেকেই শুরু হয় কি না। কিন্তু জরুরী কোন মেডিকেল কন্ডিশনের কারণে করা ইন্ডাকশন যদি কাজ না করে তাহলে হয়তো দ্রুত সিজার করা প্রয়োজন হতে পারে।

দীর্ঘ সময় প্রসবের জন্য অপেক্ষা করার পর অথবা ইনডিউসিং লেবর পদ্ধতি অনুসরণ করার পরেও যখন আপনি সিজার অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে একটু বেশি জটিলটা সৃষ্টি হতে পারে, যে জটিলটা আপনি যদি আগে থেকেই সিজারের জন্য প্রস্তুতি নিতেন  তাহলে হয়ত হত না।

মনে রাখবেন, আপনার ডাক্তার তখনই আপনাকে ইনডিউসিং লেবার পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলবেন যখন তিনি দেখবেন স্বাভাবিক পর্যায়ে প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করাটা আপনার এবং আপনার বাচ্চার জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে।

এমন কোন পরিস্থিতি আছে কি যখন কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করা উচিৎ নয়?

হ্যাঁ! সাধারণ এবং স্বাভাবিক পদ্ধতিতে প্রসব করতে গেলে যখনই আপনি শারীরিক জটিলতার ঝুঁকিতে থাকবেন তখন সেই সকল পরিস্থিতিতে কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করা একদমই উচিৎ নয়। নিম্ন বর্ণীত অবস্থাগুলোতে হয়ত আপনাকে সিজার অপারেশন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবেঃ

  • যদি পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে আপনার গর্ভের শিশু স্বাভাবিক প্রসবের ধকল সামাল দিতে পারবে না অথবা তাৎক্ষনিক ভাবে প্রসব করানো প্রয়োজন।
  • আপনার প্লাসেন্টা প্রিভিয়া নামক এমন একটি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, যখন আপনার প্লাসেন্টা জরায়ুর নিচের দিকে অস্বাভাবিক ভাবে অবস্থান করে, আপনার সার্ভিক্স এর কাছে অবস্থান করে অথবা সার্ভিক্স কে ঢেকে দেয়।
  • আপনার শিশুটি ব্রীচ অথবা ট্রান্সভার্স অবস্থায় আছে অর্থাৎ সাধানর প্রসবের সময় প্রথমে তার মাথা বের হবে না।
  • যদি এর আগে সিজারের সময় বা অন্য কোন অপারশেনের সময় আপনার জরায়ু লম্বালম্বি ভাবে কাটা হয়।
  • যদি গর্ভে যমজ সন্তান থাকে এবং প্রথম সন্তানটি ব্রীচ পজিশনের থাকে। যদি গর্ভে তিন বা তার অধিক সন্তান থাকে সেক্ষেত্রেও এ পদ্ধতি ব্যাবহার করা হয়না।
  • আপনার যদি এই মুহূর্তে জেনিটাল হারপেস ইনফেকশন থেকে থাকে।

স্বাভাবিক প্রসব হওয়ার জন্য এমন কোন উপায় আছে কি যেটা আপনি ঘরে বসেই অবলম্বন করতে পারেন?

না, এমন কোন ঘরোয়া পদ্ধতি নেই যেগুলোকে একই সাথে কার্যকর বা নিরাপদ বলা যায়। নিম্নে তেমনই কিছু উপায় সম্পর্কে বলা হল যেগুলো সম্পর্কে প্রায়শই শোনা যায়ঃ  

যৌন মিলনঃ বীর্যের মধ্যে প্রোস্টাগ্লান্ডিস থাকে এবং অর্গাজম হয়ত আপনার প্রসব জনিত সংকোচনকে ত্বরান্বিত করতে পারে। কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে যে এই সময়ে যৌন মিলন করলে আপনার হয়ত ইনডিউসিং লেবার পদ্ধতি গ্রহণ নাও করতে হতে পারে। তবে অন্যান্য গবেষণায় এসেছে যে, যৌন মিলন প্রসব জনিত সংকোচনের উপর কোন প্রকার প্রভাবই ফেলে না।

নিপল স্টিমুলেশনঃ নিপলের মাধ্যমে উত্তেজিত হলে শরীর থেকে অক্সিটসিন নিঃসৃত হয় এবং এটা প্রসব শুরু হওয়ার জন্য বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। এই প্রক্রিয়া বেশ সময় সাপেক্ষিক হলেও এর উপকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

আর যেহেতু এর মাধ্যমে জরায়ুর অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর ফলে আপনার শিশুর উপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের উপস্থিতিতে ছাড়া এই পদ্ধতি গ্রহণ করা তেমন একটা নিরাপদ নয়।

ক্যাস্টল অয়েলঃ ক্যাস্টর অয়েল একটি শক্তিশালী রোচক ঔষধ বা জোলাপ। যদিও আপনার পরিপাকতন্ত্রকে উত্তেজিত করার কারণেও প্রসব জনিত সংকোচন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তবে এই পদ্ধতি ইনডিউসিং লেবারের ক্ষেত্রে সাহায্য করে এমন কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। এছাড়া এর প্রভাব আপনাকে বেশ অস্বস্তির মধ্যে ফেলতে পারে, এমনকি এর কারণে আপনাকে ডায়রিয়া এবং পানি শুন্যতাও হতে পারে।

ভেষজ প্রতিকারঃ বেশ কিছু ধরনের ভেষজ রয়েছে যেগুলো প্রসবের সময়কে ত্বরান্বিত করতে পারে তবে সবগুলো যে নিরাপদ এবং কার্যকরী এই বিষয়ে তেমন কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

এরমধ্যে কিছু ভেষজ আছে যেটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা এগুলো আপনার জরায়ুকে উত্তেজিত করে তুলতে পারে। এছাড়া অন্যান্য আরো বেশ কিছু কারণে কোন কোন ভেষজ আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অনিরাপদ এবং বেশ খানিকটা বিপদ জনকও বটে।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts