নরমাল ডেলিভারি সম্পর্কে বিস্তারিত

Spread the love

মানুষ সৃষ্টির একেবারে আদিম সময় থেকে এই বিজ্ঞানের যুগেও কিছু বিষয় একদমই পাল্টায়নি। এরকমই একটি প্রক্রিয়া হল নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিক প্রসব (Normal Vaginal Delivery)৷ 

শিশু জন্মানোর এই আদিম প্রক্রিয়া এখনো সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর,  সুন্দর ও স্বাভাবিক হিসেবে স্বীকৃত।  এর কোন বিকল্প এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে আবিষ্কারের স্বাভাবিক পথ ধরে নরমাল ডেলিভারির বিস্তারিত সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এসেছে অসংখ্যা আর্টিকেল,  গবেষণা পত্র,বই পুস্তক। সেখান থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হল আজকের আর্টিকেলে।    

বিজ্ঞাপণ

নরমাল ডেলিভারি  বা স্বাভাবিক প্রসব কি?

নরমাল ডেলিভারি বা ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি হলো সন্তান প্রসবের সবচেয়ে সহজ এবং প্রাকৃতিক উপায়৷ এটি কোন ধরণের উপকরণ ব্যাবহার বা চিকিৎসকের সরাসরি সাহায্যের প্রয়োজন ছাড়াই প্রসব হওয়াকে বোঝায়।   

নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে স্বাভাবিক প্রসববেদনা শুরু হওয়ার পর গর্ভের পর্দা সরে গিয়ে পানি ভাংগতে শুরু করে। ক্রমাগত শক্তিশালী সংকোচন ফিটাসকে ঠেলে দেয় বার্থ ক্যানেলের মধ্য দিয়ে।  এই প্রক্রিয়ায় প্রায় আট থেকে তের ঘন্টা সময় লাগতে পারে।

স্বাভাবিক প্রসবের অন্যান্য প্রক্রিয়াগুলো হলো অ্যাসিস্টেড ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি (Assisted Vaginal Delivery) এবং ইনডিউসড ডেলিভারি (Induced Delivery)।

[ আরও পড়ুনঃ স্বাভাবিক প্রসবের লক্ষণসমূহ]

নরমাল ডেলিভারি কেন উপকারী

১. শিশুদেহে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার প্রবেশ

আমাদের শরীরে ব্যাক্টেরিয়া বিভিন্ন ধরণের রোগের সৃষ্টি করে।  কিন্তু কিছু উপকারী ব্যাক্টেরিয়া রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিজাতীয় দ্রব্যাদি সৃষ্টি এবং অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়ার বংশবিস্তারে বাধা প্রদান করে।  এইসব অণুজীবের উপস্থিতি আমাদের শরীরের জন্য খুব জরুরী।

কিন্তু এই ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতির সাথে ভ্যাজাইনাল বার্থের সম্পর্ক কি?  অবশ্যই সম্পর্ক আছে। স্বাভাবিক প্রসবের সময়  বাচ্চা যখন বার্থ ক্যানেল দিয়ে অতিক্রম করে তখন  এই উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলো মায়ের দেহ থেকে শিশুর দেহে প্রবেশ করে। এইসব ব্যাক্টেরিয়া পরবর্তীতে আন্ত্রিক সুরক্ষা দেয় শিশুকে। সেইসাথে তার দৈহিক প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থাকে শক্তিশালী করে। 

কিন্তু সিজারিয়ান বেবিদের ক্ষেত্রে এসব ব্যাক্টেরিয়া দেহে প্রবেশের সুযোগ পায়না । এই কারণে সিজারিয়ান ডেলিভারিতে জন্মানো শিশুদের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে অ্যাজমা,  স্থূলতা, ফুড অ্যালার্জী সহ নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।  

২. বাচ্চার ফুসফুসে জমে থাকা তরল অপসারণ 

বাচ্চা গর্ভে থাকাকালীন সময়ে তার ফুসফুস তরলে পরিপূর্ণ থাকে। প্রসবকালীন সময়ে যে হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে তাতে ফুসফুসে জমে থাকা তরলগুলো সরে যেতে আরম্ভ করে। বেশিরভাগ তরল বার্থ ক্যানেল অতিক্রম করার সময়েই অপসারিত হয়। বাকিটুকু কাশির সাথে বেরিয়ে আসে বা শিশুর দেহে শোষিত হয়ে যায়।

কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে ফুসফুসে জমে থাকা পানি দ্রুত বা সঠিকভাবে  অপসারিত হয় না,  তাদের ক্ষেত্রে ট্রানজিয়েন্ট  টেকিপনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ধরণের সমস্যায় নবজাতকের অক্সিজেনের প্রয়োজন দেখা দেয়।  যেসব শিশুরা সিজারে জন্ম নেয় তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের ঝুকি বেশি।

৩. কম সময়ে  হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ এবং দ্রুত সেরে ওঠা 

নরমাল ডেলিভারির পর  ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার  মধ্যেই আপনি হাসপাতাল থেকে ছাড় পেয়ে যাবেন যেখানে সিজারের ক্ষেত্রে দুই থেকে চারদিন লাগতে পারে।  শুধু তাই নয়, আপনার শরীরের সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে মাত্র ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত শ্রমসাধ্য কাজ থেকে দূরে থাকলেই চলে। 

কিন্তু সিজারিয়ান ডেলিভারীর ক্ষেত্রে যেহেতু সার্জারির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তাই শরীরের সুস্থ স্বাভাবিক হতে সময় বেশি লাগে। সেলাইয়ের স্থান পুরোপুরি শুকাতে ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। 

৪. বড় ধরণের সার্জারীর ঝুকি এড়ানো সম্ভব

যেকোন সার্জারীর ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু ঝুকি থাকে।  সার্জারীতে ব্যাবহৃত চেতনানাশক (এনেস্থেশিয়ার ঝুকি),  রক্তপাতের ঝুকি, সংক্রমনের সম্ভাবনাও রয়েছে। জরায়ুতে প্রদাহ, অন্ত্র বা মূত্রথলিতে ক্ষত তৈরীর সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। সিজারিয়ান ডেলিভারির বদলে নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে এসব ঝুকি সহজেই এড়ানো যায়।

৫. নবজাতককে দ্রুত শালদুধ পান করানোর সুবিধা 

শিশুকে জন্মানোর পরপরই শালদুধ পান করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শালদুধ যে পুষ্টিগুণ বহন করে তার কোন বিকল্প নেই।  কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে,  সিজারিয়ান ডেলিভারির ক্ষেত্রে বাচ্চাকে দ্রুত শালদুধ দেয়ার হার কম। এক্ষেত্রে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে জন্মানো শিশুরা দ্রুত শালদুধ পেয়ে যায়৷   অর্থাৎ বাচ্চার প্রাথমিক পুষ্টিগ্রহণে নরমাল ডেলিভারি অধিকতর উপযোগী।

৬. পরবর্তী গর্ভধারণের ক্ষেত্রে ঝুকি ও বিপদের আশংকা কম থাকে 

সিজারিয়ান ডেলিভারির ক্ষেত্রে ঝুকি বা ঝামেলা এড়ানো গেলেও পরবর্তী গর্ভধারণে অনেকেই বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় পড়েন। গর্ভপাতমৃতসন্তান প্রসবপ্লাসেন্টা প্রিভিয়া,  জরায়ু  ছিড়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটে। ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে এসব সমস্যা হওয়ার আশংকা খুবই কম।

৭. বাচ্চার অ্যাজমা ও স্থূলতা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি 

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যেসব মায়ের সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়, তাদের বাচ্চার শৈশবকালীন অ্যাজমা ও স্থূলতার হার বেশি। ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে জন্মানো বাচ্চারা তুলনামূলকভাবে শ্বসনতন্ত্রের রোগের  ঝুকিমুক্ত থাকে৷ 

৮. বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি

সিজারিয়ান ডেলিভারি ভবিষ্যত বন্ধ্যাত্ব বা গর্ভধারণে ব্যার্থতার হার বাড়িয়ে দেয়।  PLOS medicine এর সূত্র অনুযায়ী ৪৩% ঘটনায় সিজারিয়ান ডেলিভারিতে জন্ম নেয়া বাচ্চাদের মায়েরা পরবর্তী গর্ভধারণে বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যায় পড়েছেন।

৯. অর্থসাশ্রয়ী প্রক্রিয়া ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি 

বাংলাদেশে সিজারিয়ান ডেলিভারিতে গড়ে খরচ হয় বিশ হাজার টাকা।  যেখানে নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি মাত্র ৫ হাজারেই সম্ভব। আর্থিক দিক থেকে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি বাংলাদেশের মত নিম্ম মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে খুবই উপযোগী।

নরমাল ডেলিভারিতে কতক্ষণ সময় লাগতে পারে

নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে ঠিক কতক্ষণ সময় লাগে এই প্রশ্নের সঠিক জবাব নির্ভর করে প্রসূতির অবস্থার উপর৷  তিনি যদি প্রথমবারের মত গর্ভধারণ করে থাকেন, তাহলে প্রায় ১২-২৪ ঘন্টার মত সময় লাগতে পারে। যদি প্রসূতি আগেও সন্তান প্রসব করে থাকেন সেক্ষেত্রে পরবর্তী ডেলিভারিগুলো ৮-১০ ঘন্টার মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যায়।

প্রসবের সময় কতটা দীর্ঘ হবে তা নির্ভর করে লেবারের স্টেজের সময় হ্রাসবৃদ্ধির উপর৷  প্রসব বা লেবারকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। 

প্রথম পর্যায়: লেবারের শুরু থেকে সারভিক্সের পরিপূর্ণভাবে প্রসারিত হওয়া পর্যন্ত সময়টুকু হল প্রথম পর্যায়।  প্রথমবারের মত গর্ভধারিণীর ক্ষেত্রে এই স্টেজে সময় লাগে প্রায় ১২-১৯ ঘন্টা।  আর তিনি যদি পূর্বে বাচ্চা প্রসব করে থাকেন,  সেক্ষেত্রে সময় লাগে ১৪ ঘন্টার মত। 

দ্বিতীয় পর্যায়:  সারভিক্সের প্রসারণ থেকে ফিটাসের বেরিয়ে আসা পর্যন্ত সময়টি হল দ্বিতীয় পর্যায়।  এক্ষেত্রে নতুন গর্ভধারিণীর সময় ২ ঘন্টা এবং আগে সন্তান প্রসব করেছেন এমন প্রসূতি মায়ের প্রায় ৩০ মিনিটের মত সময় লাগে কিন্তু এপিডুরাল এই পর্যায়কে দীর্ঘ করতে পারে।

তৃতীয় পর্যায়: ফিটাসের বেরিয়ে আসার সময় থেকে শুরু করে প্লাসেন্টা (গর্ভফুল) বেরিয়ে আসা পর্যন্ত সময়টুকু তৃতীয় পর্যায়। এই স্টেজে সময় লাগে ১৫ মিনিট। 

এই সময়ের বেশি হলে তাকে prolonged লেবার বলা হয়। এক্ষেত্রে ১ম ও ২য় পর্যায়ের সম্মিলিত সময় ১৮ ঘন্টার চাইতেও বেশি হতে পারে।  সময় অতিরিক্ত প্রয়োজন হলে সেখানে মায়ের ও ফিটাসের কিছু জটিলতা তৈরী হতে পারে। যেমন : 

  • হাইপোক্সিয়া: বাচ্চার হাইপোক্সিয়া হলে  অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। 
  • জরায়ুতে সংক্রমন
  • নবজাতকের নিউমোনিয়া 
  • ফিটাসের মস্তিষ্কে রক্তপাত ঘটতে পারে
  • মায়ের ক্ষেত্রে প্রসব পরবর্তী রক্তপাত হতে পারে
  • যৌনাংগে আঘাত বা ক্ষত তৈরী 

স্বাভাবিক প্রসবের পর্যায়সমূহ

প্রসবের প্রথম পর্যায় 

সারভিক্স প্রসারিত হওয়ার সময় থেকেই প্রসবের প্রথম পর্যায় গণনা করা হয়। প্রসূতি যদি হাসপাতালে থাকেন এই পর্যায়ে, তখন তার অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়৷  শরীরের গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন,  পালস, রক্তচাপ, শ্বাসপ্রশ্বাস এবং তাপমাত্রা নজরদারীতে রাখা হয়। 

যদি এই পর্যায়ে প্রসূতি টয়লেট বা প্রস্রাবের যাবতীয় প্রয়োজন সেরে নেন তাহলে খুবই ভাল৷ চিকিৎসকরা এই স্টেজে খাওয়া বা পান করা এবং হাল্কা পায়চারী করার উপদেশ দেন৷ নড়াচড়ার ফলে ডেলিভারির সময়টা আরো দ্রুত এগিয়ে আসে।  

প্রথম পর্যায় যখন অগ্রসর হতে থাকে তখন আপনার জরায়ু, জরায়ুমুখ খোলার জন্য সংকোচন করতে থাকে। এই সংকোচনগুলো বাড়তে থাকে যতক্ষণ না জরায়ুমুখ ১০ সে.মি. পর্যন্ত খোলে, যা বাচ্চা বের হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

প্রসবের প্রথম পর্যায়
প্রসবের প্রথম পর্যায়

সংকোচন

মহিলারা বিভিন্নভাবে সংকোচনকে অনুভব এবং বর্ণনা করে থাকেন। এগুলো অনুভূত হতে পারে:

  • তলপেটে খিঁচুনী যা মাসিকের সময়ের মত
  • নিম্ন পৃষ্ঠদেশে সারাক্ষণ ব্যাথা
  • উরুর ভেতরের দিকে ব্যাথা যা পায়ের দিকে নামতে পারে।

শুরুর দিকে এই সংকোচনগুলো সংক্ষিপ্ত এবং অনেক পর পর হয় – কখনো কখনো তা ৩০ মিনিট অন্তর হতে পারে। কিন্তু তা ক্রমশই জোরালো, দীর্ঘ এবং কাছাকাছি সময়ে হতে থাকে।

ধীরে ধীরে সংকোচনগুলো পরস্পর কাছাকাছি হবে, আরো বেশী বেদনাদায়ক এবং দীর্ঘ সময় জুড়ে হবে, যতক্ষণ না এগুলো প্রায় এক মিনিট জুড়ে হবে এবং দ্রুত হবে – প্রতি দুই অথবা তিন মিনিট অন্তর অন্তর হবে।

[আরও পড়ুনঃ ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন বা ফলস লেবার পেইন]

যখন সংকোচনগুলো শক্তিশালী এবং কাছাকাছি সময়ে হতে থাকবে, আপনি উদ্বিগ্ন, এমনকি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যেতে পারেন। এই ক্ষেত্রে সংকোচনের শুরুতে গভীর শ্বাস নেয়া, তারপর ছন্দের সাথে শ্বাস নেয়া এবং শ্বাস ত্যাগের দিকে মনোযোগ দেয়াটা সাহায্য করে।

দীর্ঘশ্বাস বা গোঙ্গানী বা ছন্দের সাথে শব্দ করাও সাহায্য করতে পারে। প্রতিটি সংকোচনের উপর মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করুন। যখন সংকোচনটি শেষ হবে তখন গভীর শ্বাস টানুন এবং জোরে বের করে দিন। এটি দুই সংকোচনের মাঝখানে আপনাকে শান্ত হতে সাহায্য করে।

অনেক মহিলা বলেন যে, হাঁটাহাঁটি করা বা কোন সুবিধাজনক অবস্থান বেছে নেয়া সংকোচনের সময় সাহায্য করে থাকে –যেটা হতে পারে কোন কিছুতে হেলান দেয়া বা কোমর দোলানো অথবা চার হাত-পায়ে ভর দিয়ে উবু হয়ে দোলানো।

একটু সময় নিয়ে গোসল করা প্রসববেদনা কমাতে এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আসলেই সাহায্য করতে পারে। আপনি যতোই প্রসবের দিকে অগ্রসর হতে থাকবেন আপনার ধাত্রী আপনাকে সাহায্য করার জন্য অনেক উপায় বলবেন কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে, কিভাবে নড়াচড়া করবেন এবং শ্বাস নিবেন তা আপনার শরীরই বলে দিবে।

[আরও পড়ুনঃ প্রসব বেদনা সহনীয় করার কিছু প্রস্তুতি।]

রক্ত মিশ্রিত বা গোলাপী রঙ্গের শ্লেষ্মা বা “শো”

প্রসবের এ পর্যায়ে রক্ত মিশ্রিত বা গোলাপী রঙ্গের শ্লেষ্মাও নির্গত হতে পারে। এটি হচ্ছে একটি ছিপি বা পর্দা যা আপনার জরায়ু মুখকে বন্ধ রেখেছিল। এর মানে আপনার জরায়ু মুখের প্রসারণ শুরু হয়েছে। সংকোচনের কয়েক ঘন্টা বা এমনকি কয়েকদিন পূর্বে এটি দেখা যেতে পারে।

বিজ্ঞাপণ

পানি ভাঙ্গা

পানি ভাঙ্গা’ মানে হচ্ছে, যে ব্যাগ বা গর্ভথলিতে আপনার শিশু থাকে তা ফেটে যাওয়া এবং গর্ভথলির পানি বের হয়ে আসা। যে তরলটি বের হয়ে আসে তা শিশুকে গর্ভে বেড়ে উঠার সময় ঘিরে রাখে এবং সুরক্ষা প্রদান করে। তরলটি সাধারণত স্বচ্ছ হয়, কিন্তু তা হলুদ বা খড়ের মত রঙ হতে পারে।

এটি যদি সবুজ বা লাল রংয়ের হয় তাহলে কোন জটিলতা থাকতে পারে। রং যাই হোক না কেন আপনি আপনার ধাত্রী বা মাতৃত্ব ইউনিট বা ডাক্তারকে ফোন করুন, কারণ সম্ভবত আপনাকে জন্মদান কেন্দ্র বা হাসপাতালে যেতে হতে পারে যেখানে তারা আপনাকে, আপনার বাচ্চা এবং আপনার বাচ্চার অবস্থানের পরীক্ষা করতে পারে।

যদি পানি ভেঙ্গে যায় এবং ২৪ ঘন্টা পরও আপনার সংকোচনগুলো নিয়মিত না হয় তাহলে আপনার প্রসব আবেশন (প্রসব ব্যাথা উঠানো বা ইন্ডাকশন) করার প্রয়োজন হতে পারে, কারণ তখন সংক্রমনের ঝুঁকি থাকে। আপনার ধাত্রী বা ডাক্তার এই ব্যাপারে আপনার সাথে আলাপ করবেন।

প্রসব আবেশন বা ইনডাকশন কি?

প্রাকৃতিকভাবে প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার অপেক্ষায় না থেকে কৃত্রিমভাবে শুরু করার প্রক্রিয়াকে ইনডাকশন বলা হয় । ইনডাকশন করার কারণগুলো হলো বহুগর্ভ বা গর্ভে যমজ বাচ্চা, বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস, কিডনী সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ বা যখন গর্ভাবস্থা ৪১ সপ্তাহ অতিক্রম করে

যদি প্রসব ইনডাকশন করার প্রয়োজন হয় তবে ডাক্তার বা ধাত্রীর সাথে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। ইনডাকশন করার সুবিধা অবশ্যই ঝুঁকির চেয়ে বেশী হতে হবে। প্রসব ইনডাকশনের কিছু ঝুঁকি থাকে, উদাহরণস্বরূপ – ফোরসেপ বা ভ্যাকুয়াম প্রসবের এবং সিজারিয়ান অপারেশনের উচ্চ ঝুঁকি থাকতে পারে।

[ আরও পড়ুনঃ কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করা বা ইনডিউসিং লেবার (Inducing labor)]

ট্রাঞ্জিশন পিরিয়ড বা পরিবর্তন প্রাপ্তির সময়  

এটা প্রসবের প্রথম ধাপের শেষের দিকে পরিবর্তনের সময়। আপনার জরায়ুর মুখ এখন সম্পূর্ণ খোলা, শীঘ্রই বাচ্চা যোনীপথের দিকে নামতে শুরু করবে। কিছু মহিলা বলে যে এটি প্রসবের কঠিনতম অংশ। এসময় শক্তিশালী সংকোচন ৬০-৯০ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং ১-২ মিনিট পর পর আসে। এসময় আপনার যেসব অনুভূতি হতে পারে-

  • নড়বড়ে লাগা
  • গরম এবং ঠান্ডা লাগা
  • বমি বমি ভাব (আপনি বমি করতেও পারেন)
  • অস্বস্তিকর বা উদ্বিগ্ন
  • মনে হবে যে আপনি মানিয়ে নিতে পারছেন না
  • নিয়ন্ত্রণের বাইরে মনে হতে পারে।

এগুলো সব স্বাভাবিক অনুভূতি, কিন্তু আপনার এসব উপসর্গের কোনটিরই অভিজ্ঞতা নাও হতে পারে। ট্রাঞ্জিশন বা পরিবর্তন ৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার উপর সময় নেয়।

প্রসবের দ্বিতীয় পর্যায়

সারভিক্স ১০ সে.মি. পর্যন্ত প্রসারিত হলেই তাকে দ্বিতীয় পর্যায়ের শুরু বলা যায়। এই পর্যায়ে প্রসূতিকে বলা হয়  বাচ্চাকে পুশ করতে। লিথটমি পজিশনে (lithotomy position) থেকে  ক্রমাগত পুশ করার ফলে বাচ্চা বার্থ ক্যানেল অতিক্রম করতে থাকে। এই সময়ে প্রসূতি নিতম্ব ও পিছনের দিকে চাপ অনুভব করেন।

শুরুতে বাচ্চার মাথা ডেলিভারির সময়ে ডাক্তার বা ধাত্রীর সাহায্য দরকার হতে পারে। এ অবস্থায় সাহায্যকারী বাচ্চার মাথাটিকে এমনভাবে রাখেন যাতে চিবুক থাকে বুকের দিকে৷ মাথা ডেলিভারির সময়ে প্রসূতির জ্বলুনি হতে পারে৷ কখনো কখনো এইক্ষেত্রে ফোরসেপ বা ভ্যাকুয়াম সাকশানের সাহায্য ডেলিভারির প্রয়োজন হতে পারে। অনেকসময় যোনীর মুখ প্রশস্ত করার জন্য episiotomy নামক অস্ত্রপচার করা হয়৷ 

প্রসবের দ্বিতীয় পর্যায়
প্রসবের দ্বিতীয় পর্যায়

যেসব ক্ষেত্রে এই অস্ত্রপচারের দরকার পড়ে : 

  • যদি পেরিনিয়াম ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় 
  • যদি বাচ্চার ডেলিভারি আটকে যায় সফট টিস্যুর কারণে 
  •  দ্রুত ডেলিভারি সম্পন্ন করার প্রয়োজন হলে, যেখানে বাচ্চার ডিস্ট্রেস দেখা দেয়। 

মাথা বেরিয়ে আসার পর বাচ্চার ঘাড় গলা স্পর্শ করে দেখা হয় যে সেখানে আম্বিলিকাল কর্ড রয়েছে কিনা। যদি আম্বিলিকাল কর্ডের উপস্থিতি তবে তা সরিয়ে দেয়া হয় বা ক্ল্যাম্প করে রাখা হয়৷  এরপর হাল্কা সংকোচনেই দেহের বাকি অংশটুকুও বেরিয়ে আসে। 

ডেলিভারির পর দ্রুত কর্ড ক্ল্যাম্প করাটা গুরুত্বপূর্ণ৷  নয়তো অধিক পরিমাণ রক্ত প্লাসেন্টা দিয়ে বাচ্চার দেহে প্রবেশ করে।  

ফোরসেপ ডেলিভারি বা ভ্যাকুয়াম নিষ্কাশনের মাধ্যমে প্রসব (যন্ত্রের মাধ্যমে প্রসব)

মাঝে মাঝে ফোরসেপ অথবা ভ্যাকুয়াম নিষ্কাশনের মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারি করার প্রয়োজন পরে। এর কারণ:

  • মায়ের যদি প্রসবের জন্য চাপ দিতে কষ্ট হয়
  • বাচ্চা যদি অসুবিধাজনক অবস্থানে থাকে
  • যদি বাচ্চা পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পায় এবং দ্রুত প্রসব করানোর প্রয়োজন হয়।

যন্ত্রের সাহায্যে প্রসবের দুইটি পদ্ধতি আছে:

ফোরসেপ (Forcep delivery) হলো চিমটা বা আংটার মতো একটি যন্ত্র যা বাচ্চার মাথার চারপাশে আটকে থাকে। এটা যোনীপথ থেকে বাচ্চাকে বের করতে সাহায্য করে। যদি আপনার চিমটার সাহায্যে প্রসব করানোর প্রয়োজন হয়, তবে সাধারণত এপিসিওটমি প্রয়োজন হবে। এপিসিওটমি হচ্ছে মহিলাদের নিম্নাঙ্গ (যোনীপথও মলদ্বারের মধ্যবর্তী জায়গা) অস্ত্রোপচারের দ্বারা কাঁটা।

ফোরসেপ ডেলিভারি
ফোরসেপ

চোষণ/ভ্যাকুয়ামযন্ত্রের মাধ্যমে প্রসব (ভেন্টোজ) পাম্পের সাথে যুক্ত কাপের মতো একটি যন্ত্র। কাপটি যোনীপথে বাচ্চার মাথায় স্থাপন করা হয়। পাম্প শূণ্যস্থান তৈরী করে। এটি বাচ্চার মাথাকে কাপে ধরে রাখে যা ডাক্তারকে বাচ্চা আলতোভাবে বের করতে সাহায্য করে,সাধারণত যখন আপনার সংকোচন হয় এবং আপনি পুশ করতে থাকেন।

ভ্যাকুয়াম

প্রসবের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে আপনার ডাক্তার পদ্ধতি নির্ণয় করবেন – মাঝে মাঝে চিমটা ভালো এবং অন্য সময় ভ্যাকুয়াম নিষ্কাশন পদ্ধতি ভালো। এই ক্ষেত্রে কোন কিছু পরিকল্পনা করে করার চেয়ে সময়ানুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এসকল পদ্ধতি ব্যবহারের পূর্বে কি হবে এবং এর কোন সম্ভাব্য পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আপনার ডাক্তার বা ধাত্রী আপনাকে ব্যাখ্যা করবেন।

প্রসবের তৃতীয় পর্যায় 

প্রসবের তৃতীয় পর্যায়ে প্লাসেন্টা ডেলিভারি করা হয়।  বাচ্চা ডেলিভারিতে যে পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করা দরকার এখানে ততটুকু দরকার হয়না।  খুবই সহজ প্রক্রিয়া হলেও ডাক্তার/ ধাত্রীর নিশ্চিত হওয়া উচিত যে ভিতরে প্লাসেন্টার কোন অংশ থেকে যায়নি। এই পর্যায়ে প্লাসেন্টা ডেলিভারিতে আধঘন্টার মত সময় লাগতে পারে। 

প্রসবের তৃতীয় পর্যায়
প্রসবের তৃতীয় পর্যায়

দুইভাবে প্লাসেন্টা ডেলিভারি হতে পারে : 

  1. প্লাসেন্টা স্বাভাবিকভাবেই কোন ওষুধ প্রয়োগ ছাড়াই অপসারিত হয়ে যায়৷  জরায়ু সংকোচনের জন্য কোন ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। এই পদ্ধতিতে সময় একটু বেশি লাগতে পারে।
  2. এই ক্ষেত্রে জরায়ু সংকোচনে ওষুধ ব্যাবহার করা হয়৷  অক্সিটসিন প্রয়োগ করা হয় পেশীতে। দ্রুত কর্ড ক্ল্যাম্প করার পর কর্ডে হাল্কা টান এবং জরায়ু সংকোচনকারী ঔষধের সহায়তায় প্লাসেন্টা ডেলিভারি হয়৷  ইনজেকশান দেয়ার পর এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৫-১০ মিনিট সময় লাগে।

তৃতীয় পর্যায়ের সঠিক ম্যানেজমেন্ট খুবই জরুরী৷  অন্যথায় পোস্টপার্টাম রক্তপাতের মত ঘটনা ঘটতে পারে। 

প্লাসেন্টা ডেলিভারির মাধ্যমে পুরো ডেলিভারি সম্পূর্ণ হয়ে যায়৷ এক্ষেত্রে ডাক্তার/ধাত্রী পেট পরীক্ষা করে দেখেন জরায়ু সংকুচিত আছে কিনা৷  প্লাসেন্টা ছিড়ে রক্তপাত হওয়ার মত ঘটনা প্রতিরোধে এই সংকোচন জরুরী। 

সর্বশেষ ভ্যাজাইনা বা সারভিক্স  ছিড়ে গেছে কিনা পরীক্ষা করা হয়৷ যদি এরকম ক্ষত থাকে তা সেলাই করে দেয়া হয়৷  ডেলিভারিতে episiotomy করা হলে তাও সেলাই করে একটি পূর্ণাংগ ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি সুসম্পন্ন করা হয়।

[ আরও পড়ুনঃ প্রসবের পর শারিরীক কি কি পরিবর্তন আসতে পারে ? ]

নরমাল ডেলিভারির ঝুঁকিসমূহ

গর্ভাবস্থা ও প্রসবের ক্ষেত্রে বহুবিধ জটিলতা দেখা দিতে পারে৷ এরকম অনেক ধরণের জটিলতায় ভ্যাজাইনাল ডেলিভারির অবকাশ থাকেনা।  নিরুপায় হয়ে চিকিৎসকেরা সিজারিয়ান ডেলিভারির সাহায্য নেন।

১। বাচ্চা যদি ব্রীচ প্রেজেন্টেশনে থাকে তাহলে দ্রুত ডেলিভারি করাটা জরুরী হয়ে পড়ে।  এক্ষেত্রে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি বিপদজনক। কারণ ব্রিচ প্রেজেন্টেশনে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি বাচ্চার আম্বিলিকাল কর্ড স্থানচ্যুত করে অক্সিজেনহীনতা ঘটায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সবসময় সিজারিয়ান ডেলিভারী করে থাকেন। অন্যথায় বাচ্চা বা মা উভয়ের জীবনই বিপন্ন হওয়ার আশংকা থাকে।

২। ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে পেরিনিয়াম ছিড়ে গেলে সেক্ষেত্রে পেলভিক ফ্লোরে ক্ষত তৈরী হয়। তাৎক্ষনিক ক্ষত নিরাময় করা না গেলে তা ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরণের জটিলতা তৈরি করে৷ অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাবের সমস্যা,  বেদনাদায়ক শারীরিক মিলনসহ নানা ধরণের জটিলতায় পড়ার হার একেবারেই কম নয়। 

৩। ভ্যাজাইনাল ডেলিভারীর সেকেন্ড স্টেজ স্বাভাবিক সময়ের চাইতে দীর্ঘ হতে পারে৷  সেক্ষেত্রে পেলভিক ফ্লোরের পেশীসমূহের উদ্দীপনা সরবরাহকারী স্নায়ুগুলোতে রক্ত সরবরাহ কমে যায়।  ফলে স্নায়ুগুলোর কার্যকারীতা হারিয়ে যায় দীর্ঘ সময়ের জন্য৷  যদিও এই ধরণের জটিলতা খুবই দুর্লভ,  তবুও এটি ভ্যাজাইনাল ডেলিভারির অসুবিধা সমূহের মধ্যে একটি। এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব হিসেবে পেলভিক ফ্লোরে নিয়নন্ত্রণহীনতা দেখা দেয়৷ 

৪। হৃদরোগে আক্রান্ত মায়েদের ক্ষেত্রে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি বিপদজনক হতে পারে। 

৫। প্লাসেন্টা প্রিভিয়ায় ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি ঝুঁকিপূর্ণ।  

৬। হার্পিস ভাইরাসে আক্রান্ত মায়েদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সিজারিয়ান ডেলভারীকে প্রাধান্য দেন। 

৭। এইডস আক্রান্ত মায়েদের ক্ষেত্রে সিজারিয়ান ডেলিভারী বেছে নেয়া হয় বাচ্চার বিপদ এড়াতে। 

ব্যাথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি কি সম্ভব? 

প্রসবকালীন সময়ে একজন মা একইসংগে অনেক ধরণের অনূভুতি টের পান । তবে সবচেয়ে বেশি থাকে ব্যাথা ও চাপের অনুভূতি। 

চিকিৎসাবিজ্ঞান এই ব্যাথাটুকুও বশে আনার উপায় বের করে ফেলেছে। বর্তমানে এপিডুরাল এনেস্থেশিয়ার মাধ্যমে এই কাজটা একদমই সহজ । এপিডুরাল সরাসরি মেরুদন্ডে প্রয়োগ করা হয়। একবার এপিডুরাল দেয়া হলে ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত ব্যাথার অনুভূতি টের পাওয়া যায় না। তবে কম মাত্রায় দেয়া হলে  খানিকটা অনুভূতি টের পেতে পারেন প্রসূতি৷ 

এক্ষেত্রে মেরুদন্ডের এপিডুরাল দেয়ার সময়ে খানিকটা ব্যাথা এবং লেবারের সময়ে জরায়ু সংকোচনের অনূভুতি টের পাওয়া ব্যাতিত আর  কোন অনুভূতি থাকেনা।  প্রসববেদনার তুলনায় এই ব্যাথা এতই কম যে এর আলোচনা  এড়িয়ে  গেলেও চলে। 

এপিডুরাল এনেস্থশিয়ার অপকারিতা: 

  •  মায়ের রক্তচাপ কমে যাওয়া 
  • লেবারের সময় বৃদ্ধি(prolonged labour)
  • মাথাব্যথা 

[ আরও পড়ুনঃ প্রসবের সময় এপিডিউরাল পদ্ধতিতে ব্যথা নিয়ন্ত্রণ বা ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব ]

চিকিৎসাবিজ্ঞানে যথেষ্ট উন্নতির কারণে অনেক মায়েরা ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিকে পুরনো পদ্ধতি হিসেবে অবহেলা করেন। তবে এই সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলে যে কেউই এই পদ্ধতিকেই অগ্রাধিকার দেবেন। তাই প্রত্যেক মায়েরই উচিত এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখা। 

নরমাল ডেলিভারি পরবর্তী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে আমাদের প্রসব পরবর্তী বিভাগটি ভিজিট করুন।

সবার জন্য শুভকামনা

যে প্রশ্নগুলো নিয়মিত করা হয়ে থাকে

প্রসবের ব্যাথা না হলে কি করনীয়

প্রসবের বা ডিউ ডেইটের জন্য নির্ধারিত তারিখের দুই সপ্তাহ পরও যদি প্রসব ব্যথা বা প্রসব না হয় তবে তাকে পোস্ট টার্ম প্রেগন্যান্সি  বলা হয়। ৫-১০ ভাগ গর্ভাবস্থা এমন বিলম্বিত হতে পারে।ডিউ ডেইট বা নির্ধারিত তারিখের কয়েকদিন দেরী হলে সাধারণত তেমন কোন সমস্যা হয়না। বেশীর ভাগ ডাক্তারই এসময় ইন্ডাকশন বা কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করার পরামর্শ দেবেন না। তবে যদি নির্ধারিত তারিখের ২ সপ্তাহ অতিক্রম করে যায় তবে তা গর্ভের শিশু এবং মায়ের জন্য ঝুঁকি পূর্ণ হতে পারে। কারণ ৪২ সপ্তাহের পরে কিছু কিছু বাচ্চা মায়ের গর্ভেই বা জন্মানোর অল্প সময়ের মধ্যেই মারা যায়, যদিও এমনটা খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়।

প্রসবের নির্ধারিত তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার পরও প্রসব শুরু না হলে ডাক্তার গর্ভের বাচ্চার আকার, হৃদস্পন্দন, অবস্থান পরীক্ষা করে দেখবেন এবং আপনার কাছে বাচ্চার নড়াচড়া সম্পর্কে জানতে চাইবেন।
যদি একসপ্তাহ বেশী দেরী হয় তবে অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের পরিমান দেখা হবে এবং আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে বাচ্চার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এসময় কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করার পরামর্শ দেয়া হতে পারে।

নরমাল ডেলিভারির খরচ কেমন হতে পারে?

নরমাল ডেলিভারির খরচ হাসপাতাল ভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে সর্বনিম্ন নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি মাত্র ৫ হাজারেই সম্ভব।

নরমাল ডেলিভারিতে সাইড কাটা বলতে কি বোঝায়?

অনেক সময় প্রসব চলাকালীন সময়ে ডাক্তার মায়ের যৌনাঙ্গের কিছু জায়গা (পেরিনিয়ামের বা যোনির শুরু থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত টিস্যু)  কেটে দিতে পারেন যেন যোনিপথ বড় হয়ে আসে। এতে বাচ্চা সহজেই বেরিয়ে আসতে পারে। একেই সাইড কাটা বা এপিসিওটমি (Episiotomy) বলে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment