৩৬ সপ্তাহের গর্ভাবস্থা | ভ্রূণের বৃদ্ধি, মায়ের শরীর এবং কিছু টিপস

Spread the love

গর্ভাবস্থার ৩৬ সপ্তাহে এসে আপনার মনে হতে পারে গর্ভে আর কোনো খালি জায়গা নেই। কিন্তু সত্যিটা হলো ভ্রূণের এখনো বড় হওয়া বাকি আছে। যখনই মনে হবে আর পারছেন না, তখনই নিজেকে মনে করিয়ে দিন- নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভ্রূণ গর্ভে যতদিন থাকবে ততই তার জন্য মঙ্গল। গর্ভে থেকে সে নিজেকে বাইরের পৃথিবীর জন্য প্রস্তুত করে নিচ্ছে।

গর্ভাবস্থার ৩৬ তম সপ্তাহকে প্রেগন্যান্সির তৃতীয় ট্রাইমেস্টারের নবম সপ্তাহ হিসেবে ধরা হয়। এ সপ্তাহের অবস্থান গর্ভাবস্থার নবম মাসে।

বিজ্ঞাপণ
৩৬ সপ্তাহের গর্ভাবস্থা

গর্ভধারণের ৩৬ তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি

৩৬ তম সপ্তাহে ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বেশ পরিপক্ব হয়ে ওঠে এবং সে বাইরের দুনিয়ায় বেঁচে থাকার জন্য প্রায় প্রস্তুত হয়ে যায়। এসময় ভ্রূণের দেহের রক্ত পরিবহন অনেকটাই নিখুঁত হয়ে উঠছে। সেই সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেমও বেশ শক্তিশালী হতে থাকে যা তাকে গর্ভের বাইরের বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণ ও ইনফেকশন থেকে রক্ষা করতে পারবে।

নাদুস-নুদুস হাত, পা এবং কোমল ত্বকের সমন্বয়ে ভ্রূণটিকে এখন একটি পরিণত নবজাতকের মতই দেখায়। এসময় ভ্রূণের ত্বকে হালকা গোলাপি আভা দেখা যায়। ভ্রূণের চামড়ার ঠিক নিচেই রক্ত পরিবহণকারী রক্তনালীগুলোতে রক্ত চলাচল করার কারণেই এসময় ত্বককে হালকা গোলাপি মনে হয়।

থার্ড ট্রাইমেস্টারের শেষ কয়েক সপ্তাহে ভ্রূণের শ্রবণশক্তি অনেকটাই সজাগ হয়ে ওঠে। গবেষণা থেকে জানা গেছে, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশু হয়তো আপনার কণ্ঠ চিনতে পারে এবং আপনার পছন্দের গানও চিহ্নিত করতে পারে।

এটি যদি আপনার প্রথম সন্তান হয় তবে এইসময়ে সে হয়তো পেটের নীচের দিকে পেলভিসে চলে এসেছে। ভ্রূণের এই নীচে নেমে যাওয়াকে “লাইটেনিং” বা “ড্রপিং” বলা হয়।

৩৬ সপ্তাহে ভ্রূণটিকে “লেইট প্রি-টার্ম” বা “নিয়ার টার্ম” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সপ্তাহে শিশুটি ভুমিষ্ট হলে তার কিছুটা নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এই সময় জন্ম নেয়া শিশুর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৯৯ ভাগেরও বেশি।

ভ্রূণের আকার ৩৬ তম সপ্তাহে একটি বড় সাইজের মিষ্টিকুমড়ার সাথে তুলনা করা যায়। এসময় ভ্রূণের উচ্চতা থাকে প্রায় ১৮.৬৬ ইঞ্চি বা ৪৭.৪ সেমি এবং এর ওজন হয় আনুমানিক ৫.৭৮ পাউন্ড  বা ২৬২২ গ্রামের মত।

৩৬ তম সপ্তাহের দিকে এসে ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। সেগুলো নিম্নরূপঃ

ভ্রুণের খুলি এবং হাঁড়

আপনার গর্ভে থাকা ভ্রূণের খুলির হাঁড়গুলো এখনো শক্ত এবং পরস্পরের সাথে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত হয়ে ওঠেনি। শুধু বাচ্চার খুলিই নয়, তার পুরো শরীরের অধিংকাশ হাঁড় এবং তরুণাস্থিগুলো (cartilage) বেশ নরম অবস্থায় থাকে, ফলে ডেলিভারির সময় জন্মনালী দিয়ে বেরিয়ে আসা অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রথম কয়েক বছরের মধ্যে তার হাঁড়গুলো যথেষ্ট শক্ত হয়ে উঠবে।

ভ্রূণের অবস্থান

প্রায় ৯৩% ভ্রূণের ক্ষেত্রে ৩৬ সপ্তাহে ভ্রূণের মাথা মায়ের পেটের নিচের দিকে থাকে। ৩৭ তম সপ্তাহে এই পারসেন্টেইজ এসে দাঁড়ায় ৯৭- এ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টি ভ্রূণের মধ্যে প্রায় ৯৭ টি ভ্রূণের মাথা নীচের দিকে থাকে। যদি আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানে এমনটা না দেখেন তবে এখনি ঘাবড়ে যাওয়ার সময় আসেনি। গবেষণায় দেখা গেছে কিছু বাচ্চা প্রসবের ঠিক আগ মুহূর্তে অবস্থান পরিবর্তন করে প্রসবের জন্য উপযোগী অবস্থানে চলে আসতে পারে। তবে প্রসব সংক্রান্ত যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসকের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিতে হবে।

ঘুমের রুটিন

এই সপ্তাহে ভ্রূণের ঘুমের রুটিন আরো সুশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। ভ্রূণটি এখন ঘুমের ভেতরে নড়াচড়া (সক্রিয় ঘুম) করার পাশাপাশি বেশ কিছু সময় নিরবে, চুপচাপ ঘুমোবে।

চোখের পাতা

৩৬ তম সপ্তাহে এসে ভ্রূণের চোখের পাতা অনেকটা মসৃণ হয়ে যায় এবং সেগুলোর গঠন  প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে।

হজম প্রক্রিয়া

এই পর্যায়ে বাচ্চার দেহ থেকে প্রথম দিকে গজানো লোম/চুল এবং ত্বকের ওপরে থাকা ভার্নিক্স নামক সাদা রঙের ক্রিম জাতীয় আবরণ ঝরে পড়তে শুরু করে। মজার ব্যাপার হলো, ভ্রূণ এগুলো অ্যাম্নিওটিক ফ্লুয়িডের সাথে গিলে ফেলে। এগুলো হজম হওয়ার পর ভ্রূণের অন্ত্রে/পেটে মেকোনিয়াম হিসেবে রয়ে যায়। মেকোনিয়া দেখতে কালো কিংবা গাঢ় সবুজ রঙের হয় এবং চটচটে, আঠালো হয়ে থাকে। নবজাতক প্রথমবার মল হিসেবে এই মেকোনিয়ামই ত্যাগ করে।

৩৬ তম সপ্তাহে এসে শিশুর পরিপাকতন্ত্র কাজ করতে শুরু করলেও এর বিকাশ আরো কিছুটা বাকি রয়েছে। তবে সেগুলো শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই পরিপক্ব হয়ে উঠবে, মায়ের গর্ভে নয়। কারণ গর্ভে থাকা অবস্থায় ভ্রূণ যাবতীয় পুষ্টির জন্য আম্বিলিকাল কর্ড বা নাভিরজ্জুর ওপর নির্ভরশীল। ফলে ভ্রূণের পরিপাকতন্ত্র প্রস্তুত হওয়া সত্ত্বেও কখনো কাজ করার মতো সুযোগ পায়না। তাই শিশুর পরিপাকতন্ত্র পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হয়ে উঠতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ১ কিংবা ২ বছর সময় লেগে যায়।

৩৬ তম সপ্তাহে মায়ের শারীরিক পরিবর্তন

গর্ভাবস্থার এই সময়ে এসে মায়ের পেটের আকারে পরিবর্তন আসতে পারে। ভ্রূণ  যখন নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে এবং পেটের নিচের দিকে চলে আসে তখন এরকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তলপেট ভ্রূণ স্থির হওয়ার পর আপনি তুলনামূলক কিছুটা স্বস্তি বোধ করবেন এবং আপনার দমবন্ধ অনুভূতি আগের চাইতে কমে আসবে। তবে ভ্রূণ নীচের দিকে নেমে আসায় আপনি এখন তলপেটে বাড়তি চাপ অনুভব করবেন।

ভ্রূণটি পেলভিসে নেমে আসা মানে সে পৃথিবীতে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই বলে এখনই আপনার প্রসব বেদনা শুরু হবে; এমনটা নয়। যারা প্রথমবার মা হন, তাদের ক্ষেত্রে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রায় ২ থেকে ৪ সপ্তাহ আগেই ভ্রূণ নীচের দিকে চলে আসে। অন্যদিকে যারা দ্বিতীয় বারের মতো মা হচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে শিশুটি আরো দেরিতে নীচে নামে এবং সেটা ঘটে সাধারণত প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার পর।

ভ্রূণ নীচের দিকে চলে আসায় হয়তো আপনার হাঁটার ধরনেও কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। আপনি হয়তো অনেকটা পেঙ্গুইনের মতো হাঁটতে পারেন কারণ আপনার হিপ (পশ্চাৎদেশ) একটু চওড়া হয়ে গর্ভের শিশুটিকে জায়গা করে দিয়েছে। তলপেটে বাড়তি চাপ অনুভব করার কারণে এসময় হাঁটতে বেশ অস্বস্তি হতে পারে। এই বাড়তি চাপের কারণে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আসা এবং ভ্যাজাইনাল এরিয়াতে অস্বস্তি বেড়ে যেতে পারে।

গর্ভধারণের আগে যাদের বিএমআই স্বাভাবিক থাকে তাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধির সীমা ২৫ থেকে ৩৫ পাউন্ড। তবে এই ওজন বৃদ্ধি সবার ক্ষেত্রে একই হবেনা। নিজের ওজন সংক্রান্ত জিজ্ঞাসার জন্য ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার ওজন যথাযথভাবে বাড়ছে কিনা এ-ব্যাপারে ডাক্তার আপনাকে নিশ্চিত করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবেন।      

বিজ্ঞাপণ

গর্ভাবস্থার এ সময় যেসব উপসর্গ বেশি দেখা দিতে পারে তা হলো-

পেলভিক প্রেশার বা তলপেটে চাপ

গর্ভাবস্থার এই সময় এসে জরায়ু এবং ভ্রূণের ওজন অনেকটুকু বেড়ে যাওয়ার কারণে মায়েরা তলপেটে এবং ভ্যাজাইনাল এরিয়ায় চাপ অনুভব করতে পারেন। সেই সাথে ভ্রূণ যদি নীচের দিকে নেমে আসে তবে পেলিভক এরিয়াতে চাপ আরো  বেড়ে গিয়ে শরীরের নিম্নাংশ খুব ভারী অনুভূত হতে পারে। অনেক মায়েরা এই অনুভূতিকে তুলনা করেন এভাবে যে তিনি যেন দু পায়ের মাঝে ভারী বল নিয়ে হাঁটছেন।

তবে প্রেশার বা চাপ অনুভূত হওয়া আর ব্যথা এক জিনিস নয়। যখন এসব জায়গায় ব্যাথা অনুভূত হয় যাতে হাঁটতে, এমনকি কথা বলতে আপনার কষ্ট হয় তখন অবশ্যই ডাক্তারকে জানাতে হবে। সেই সাথে মাথা ব্যাথা, জ্বর, কাঁপুনি এবং রক্তক্ষরণের মত কোন লক্ষণ দেখলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন

ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন হলো জরায়ুর অনিয়মিত সংকোচন যা গর্ভাবস্থার মধ্যবর্তী সময়ে (দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার) দেখা দিতে পারে। এই সংকোচনকে ফলস লেবার পেইনও বলে।

তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে,  প্রেগন্যান্ট মায়েরা তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে অথবা গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এটি অনুভব করেন। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এই কন্ট্রাকশান নাও হতে পারে।   

ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশনকে ‘প্র্যাকটিস কন্ট্রাকশনও’ বলা হয় কারন এ ধরনের কন্ট্রাকশন আসল প্রসবের লক্ষণ না হলেও মায়ের শরীরকে আসল প্রসবের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে।

ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন গর্ভাবস্থার ১৬ সপ্তাহের মধ্যে শুরু হতে পারে। তবে শুরুর দিকে এটি এতই মৃদু থাকে যে অনেক মা তা অনুভব করতে পারেনা। জরায়ুর আকার যত বৃদ্ধি পেতে থাকে ততই এ কন্ট্রাকশন বেশী অনুভূত হয়।

ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশনের সময় জরায়ু, তলপেট বা ভ্যাজাইনার আশেপাশের অংশে সংকোচন অনুভূত হয়। ব্যাপারটি অনেকটা ওই স্থানের মাংসপেশি একবার শক্ত হয়ে যাওয়া আবার ছেড়ে দেয়ার মত অনুভূতি মনে হয়। প্রসবের সময়ও এ ধরনের অনুভূতিই হয়। তবে ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন এবং আসল প্রসব যন্ত্রণার মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে।

যেমন, ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন সাধারণত অনিয়মিত এবং ব্যাথাহীন হয়। তবে তা মাঝে মাঝে তীব্র, ব্যাথাযুক্ত এবং অস্বস্তিকর হতে পারে। প্রসব বেদনার মত এ ধরনের কন্ট্রাকশন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকেনা বা তীব্রতর হয়না এবং কন্ট্রাকশনের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যাবধান কমতে থাকেনা।

ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন সাধারণত ৩০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ধরে হতে পারে তবে ঘণ্টায় একবার বা দুবারের বেশী হয়না। বেশীরভাগ সময়ই শরীরের অবস্থান পরিবর্তন করলে বা বিশ্রাম নিলে এটি চলে যায়।

এসব ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা আরও অনেক ধরণের উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। গর্ভকালীন সব ধরণের উপসর্গ নিয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।

এ সপ্তাহে করনীয়

গর্ভধারণের এই পর্যায়ে বাচ্চার মস্তিষ্ক খুব দ্রুত বিকশিত এবং সমৃদ্ধ হতে থাকে। তাই এখন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের  দিকে নজর রাখা জরুরি। যে সব খাদ্য উৎস থেকে প্রোটিনের সাথে সাথে উচ্চ পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যেমন ALA এবং DHA পাওয়া যাওয়া যায়, সেগুলো আপনার শিশুর মস্তিষ্ক বিকশিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া এগুলো বাচ্চা জন্মদানের পর মায়েদের ডিপ্রেশনে (postpartum depression) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে অন্তত ৮৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করার চেষ্টা করবেন। এতে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, হাঁড় এবং মাংসপেশী শক্তিশালী হবে। লেবু জাতীয় ফল, স্ট্রবেরি, ব্রকোলি, টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। অথবা ডাক্তারের পরামর্শে প্রি-ন্যাটাল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।

আগে করে না থাকলে এ-সপ্তাহে আপনাকে গ্রুপ বি স্ট্রেপ টেস্ট করতে বলা হতে পারে। গড়ে প্রতি ২০ জন নারীর মাঝে ১ জনের গ্রুপ বি স্ট্রেপ নামের ব্যাক্টেরিয়া থাকে। তবে কোনো দৃশ্যমান সিম্পটম (লক্ষণ) দেখা যায় না।

বিজ্ঞাপণ

এই ব্যাক্টেরিয়া বেশ সাধারণ গোছের। এটা গর্ভবতীর কোনো ক্ষতি করতে পারে না কিন্তু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শিশু যদি এই ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে আসে তাহলে তার ক্ষতি হতে পারে। তাই সন্তানসম্ভবা মায়ের এই ব্যাক্টেরিয়া আছে কিনা তার পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। যদি থাকে সেক্ষেত্রে মাকে ডেলিভারির সময় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে যেন সেই ব্যাক্টেরিয়া নবজাতকের সংস্পর্শে না আসতে পারে।

গর্ভবতী মা চাকরিজীবী হলে, কী ধরনের কাজ করেন এবং গর্ভাবস্থার কতদিন পর্যন্ত  আপনি কাজ করতে পারবেন তা নিয়ে আপনার চিকিত্‌সকের সঙ্গে পরামর্শ করুন৷ মা ও ভ্রূণের স্বাস্থ্যের অবস্থা  সাপেক্ষে বিষয়টি একেকজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে।

প্রেস্ক্রিপশান এবং টেস্ট রিপোর্টগুলো যত্ন করে ফাইল করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন । হাসপাতালে ভর্তির সময় কিংবা পরবর্তীতে এগুলোর দরকার হবে। প্রথম চেকআপ থেকে যেসব মেডিকেল টেস্ট করিয়েছেন এবং যেসব টিকা নিয়েছেন, তার প্রতিটি রিপোর্ট তারিখ অনুযায়ী ফাইলে গুছিয়ে রাখুন। ডাক্তারের নাম, ঠিকানা, যাবতীয় ফোন নম্বর ইত্যাদি পরিষ্কার করে লিখে ফাইলের শুরুতে যুক্ত করে রাখুন।

গর্ভাবস্থার এই সময় কেগেল এক্সসারসাইজ করতে পারেন। এই ব্যায়ামের ফলে ভ্যাজাইনার পেশীগুলো শক্তিশালী হয় যা সন্তান প্রসবের সময় এবং এর পর দ্রুত সেরে উঠতে বেশ কাজ দেয়। কেগেল ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং এটি আপনার জন্য নিরাপদ কিনা তা জানতে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

কখন ডাক্তারকে জানাতে হবে

যদি আপনি কন্ট্রাকশন্স (মাংসপেশীর যন্ত্রণাদায়ক সংকোচন এবং প্রসারণ; এটা গর্ভবতীর পেটে কিংবা পিঠে হতে পারে) অনুভব করেন কিংবা কন্ট্রাকশন্স হওয়ার আশংকা করেন তাহলে ডাক্তার ডাকুন কিংবা হাসপাতালে চলে যান।

এছাড়া যদি রক্তপাত ঘটে, তরল কিছুর নির্গমন হয় কিংবা পেটে খুব যন্ত্রণা অনুভূত হয় সেক্ষেত্রেও ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

আপনার গর্ভের শিশু যত বড় হবে, পেটের ফাঁকা স্থান তত কমতে থাকবে এবং বাচ্চার নড়াচড়ার জায়গা কমে আসবে। এমতাবস্থায় আপনার বাচ্চার নড়াচড়া ধীরে হচ্ছে বলে মনে হতে পারে। তবে আপনার কাছে যদি বাচ্চার  নড়াচড়া করাকে অস্বাভাবিক বলে মনে হয় তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। হয়তো নড়াচড়া কমে যাওয়ার পেছনে কোনো বিশেষ কারণ নেই, আবার এটাও হতে পারে বাচ্চা কোনো যন্ত্রণা অনুভব করছে কিংবা কষ্ট পাচ্ছে, তাই সে কম নড়াচড়া করছে। সেজন্য সতর্ক থাকা জরুরি, কোনো ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। সমস্যা দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

<<গর্ভাবস্থা সপ্তাহ- ৩৫
গর্ভাবস্থা সপ্তাহ- ৩৭>>


Spread the love

Related posts

Leave a Comment