২৮ সপ্তাহের গর্ভাবস্থা | ভ্রূণের বৃদ্ধি, মায়ের শরীর এবং কিছু টিপস

Spread the love

গর্ভাবস্থার ২৮ তম সপ্তাহকে তৃতীয় ট্রাইমেস্টারের শুরু হিসেবে ধরা হয়। তবে ট্রাইমেস্টারের হিসেব বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্নভাবে করে থাকে।আন্তর্জাতিকভাবে সর্বাধিক ব্যবহৃত হিসেবে আমরা আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিসিয়ান্স এন্ড গায়নোকোলজিস্টের হিসেব অনুযায়ী সপ্তাহ অনুযায়ী সম্পুর্ন গর্ভাবস্থার সময়কাল  আলোচনা করার চেষ্টা করছি।

২৮ তম সপ্তাহের পর থেকে বলা যায়,  প্রতিটি সপ্তাহ অতিক্রম করার সাথে ভ্রূণের গর্ভের বাইরে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতার ঝুঁকিও কমতে থাকে। ২৮ তম সপ্তাহে যদি কোন শিশু জন্ম নেয় তবে পরিপূর্ণ মেডিকেল সাপোর্ট পেলে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় ৯৪ ভাগ।

বিজ্ঞাপণ
২৮ সপ্তাহের গর্ভাবস্থা

২৮ তম সপ্তাহের অবস্থান গর্ভাবস্থার সপ্তম মাসে।

গর্ভধারণের ২৮ তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি  

গর্ভাবস্থার ২৮ তম সপ্তাহে এসে অনেক ভ্রূণ জরায়ুতে প্রসবের জন্য আদর্শ অবস্থানে চলে আসতে শুরু করে। অর্থাৎ তার মাথা নীচের দিকে হয়ে যায়। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য আদর্শ অবস্থানকে ‘সেফালিক প্রেসেন্টেশান’ বলা হয়। বেশিরভাগ ভ্রূণই ৩২ থেকে ৩৬ সপ্তাহের মধ্যে এই অবস্থানে চলে আসে। তবে অনেকের আরেকটু বেশি সময় লাগতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রসবের ঠিক আগ মুহূর্তেও ভ্রূণের অবস্থান পরিবর্তিত হয়ে প্রসবের আদর্শ অবস্থানে চলে আসতে দেখা গেছে।

এ সময় ভ্রূণ বিভিন্ন ধরেনর মুখভঙ্গি করতে থাকে এবং অনেক সময় আল্ট্রাসাউন্ডে তাকে জিহ্বা বের করতে দেখা যায়। যদিও এর কারণ নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি, তবে ধারণা করা হয় অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইডের স্বাদ গ্রহণ করার জন্যই ভ্রূণ এমনটা করে থাকে।

এসময় ভ্রূণটি মায়ের রক্ত থেকে অ্যান্টিবডি গ্রহণ করতে শুরু করে যা তার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে থাকে। মায়ের শরীর থেকে পাওয়া এই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মের পর বেশ কয়েক মাস শিশুকে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখে।

ভ্রূণের আকার ২৮ তম সপ্তাহে একটি বড় সাইজের পেঁপের সাথে তুলনা করা যায়। এসময় ভ্রূণের উচ্চতা থাকে প্রায় ১৪.৮০ ইঞ্চি বা ৩৭.৬ সেমি এবং এর ওজন হয় আনুমানিক ২.২২ পাউন্ড  বা ১০০৫ গ্রামের মত।

২৮ তম সপ্তাহের দিকে এসে ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। সেগুলো নিম্নরূপঃ

চোখ

ভ্রূণটি এখন তার চোখের পাতা খোলা-বন্ধ করতে পারে। চোখের পাতা খোলা বন্ধ করার প্রক্রিয়াটি চোখের মনিকে আদ্র রাখে এবং  বাইরের পৃথিবীতে আসার পর তার চোখকে বিভিন্ন বস্তুকণা থেকে সুরক্ষিত রাখে।

গর্ভাবস্থার ১৪ সপ্তাহ থেকেই ভ্রূণ তার চোখ নাড়তে শুরু করে। এ সময়ে এসে তার চোখের নড়াচড়া আরও বেড়ে যায় যা তার ঘুমের মধ্যে র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (RMI) এবং মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে।

এখন থেকে তার আইরিসে (Iris, চোখের মনির চারপাশের গোলাকার রঙ্গিন অংশ) পিগমেন্ট জমা হওয়ার কারণে তা রং ধারণ করতে শুরু করবে। এই পিগমেন্টেশন প্রক্রিয়া শিশুর জন্মের পরও চলতে থাকে এবং তার চোখের স্থায়ী রং কেমন হবে তা নির্ধারিত হতে হতে জন্মের পর প্রায় ৯ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

মস্তিষ্ক

গর্ভাবস্থার তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ খুব দ্রুত হতে থাকে। এই ট্রাইমেস্টারে ভ্রূণের মস্তিষ্কের ওজন প্রায় তিন গুন বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কে বিলিয়ন বিলিয়ন নতুন স্নায়ু কোষ যুক্ত হতে থাকে, টিস্যুর গঠন চলতে থাকে এবং এতে অনেক নতুন নতুন খাঁজ তৈরি হয়ে তা পরিপূর্ণ মস্তিষ্কের আকার ধারণ করতে থাকে।

স্নায়ুতন্ত্র

ভ্রূণের স্নায়ুগুলোর উপর মায়েলিন (Myelin) নামক একধরনের আবরণ গঠিত হতে থাকে। এই প্রক্রিয়াকে মায়েলিনেশন (Myelination)  বলা হয়। এটি স্নায়ু কোষগুলোকে রক্ষা করার সাথে সাথে স্নায়ু কোষগুলোর মধ্যে যোগাযোগকে আরও ত্বরান্বিত করে। ফলে শরীরের বাকি অংশ থেকে মস্তিষ্কে এবং মস্তিষ্ক থেকে শরীরের বাকি অংশে সিগন্যাল পরিবহনও জোরালো হতে থাকে। এই প্রক্রিয়াটি ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মায়েলিনেশন শিশুর জন্মের পরও প্রায় এক বছর ধরে চলতে থাকে। 

হৃদপিণ্ড

গর্ভাবস্থার ৫-৬ সপ্তাহের দিকে ভ্রূণের হৃদস্পন্দন থাকে মিনিটে ১১০ বারের মত। ৯-১০ সপ্তাহের দিকে তা বেড়ে হয়ে যায় মিনিটে ১৭০ বারের কাছাকাছি। এই সময়ে এসে হৃদস্পন্দন আবার কমে আসে এবং তা থাকতে পারে মিনিটে ১৪০ বারের মত যা জন্মের সময় আরও কমে ১৩০ এর কাছাকাছি থাকে।

ভ্রূণের এই দ্রুত হৃদস্পন্দনের কারণ হলো- তার হৃদপিণ্ড খুব ছোট হওয়ার কারণে পুরো শরীরে রক্তপরিবহন করতে তাকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এছাড়াও এই দ্রুত হৃদস্পন্দন গর্ভে এবং জন্মের পর তার শরীর উষ্ণ রাখতেও সাহায্য করে।

২৮ তম সপ্তাহে মায়ের শারীরিক পরিবর্তন

এসময় থেকে ডাক্তাররা ভ্রূণের বৃদ্ধি ঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য মায়ের পেটের আকার পরিমাপ করে থাকেন। এর জন্য মায়ের পিউবিক বোন থেকে জরায়ুর উপরের অংশ পর্যন্ত উচ্চতা পরিমাপ করা হয়। একে ফান্ডাল হাইট (Fundal Height) বলা হয়।  স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় এসময় মায়ের ফান্ডাল হাইট হতে পারে ২৬-৩০ সে.মি.

গর্ভাবস্থার এই পর্যায়ে এসে মায়ের ওজন প্রায় ১৫ – ২০ পাউন্ড বেড়ে যেতে পারে। ডাক্তারদের মতে গর্ভধারণের আগে যদি মায়ের বিএমআই বা বডি ম্যাস ইনডেক্স  স্বাভাবিক থাকে তবে এসময় প্রতি সপ্তাহে ১ পাউন্ড করে ওজন বৃদ্ধি পেলে তা স্বাভাবিক।

তবে মনে রাখবেন এই ১ পাউন্ড করে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার হিসেবটি একটি গড়পড়তা হিসেব। মায়ের ওজন যদি কোন সপ্তাহে আধ পাউন্ড বৃদ্ধি পায় কিংবা পরবর্তী সপ্তাহে  দেড় পাউন্ড বাড়ে তবে সেটাও খুব স্বাভাবিক।

গর্ভাবস্থার এ সময় যেসব উপসর্গ বেশি দেখা দিতে পারে তা হলো-

সায়াটিকা (Sciatic nerve pain)

গর্ভাবস্থায় কোমরে ব্যাথা হওয়ার একটি কারণ হতে পারে সায়াটিক নার্ভের উপর অতিরিক্ত চাপ। গর্ভাবস্থায় বড় হয়ে যাওয়া জরায়ুর চাপ যখন শরীরের দুটি সায়াটিক নার্ভের উপর পড়ে তখন কোমরে, নিতম্বে বা উরুতে ব্যাথা হতে পারে। এ ধরনের ব্যাথাকে বলে সায়াটিকা ।এ ধরনের ব্যাথা সাধারণত কোমর বা কোমরের উপরে পিঠের মাঝ বরাবর হয়।

বিজ্ঞাপণ

এ ব্যাথা কখনো কখনো পায়ের দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। আবার বেশ কিছু কারণে এ ব্যাথা বেড়ে যেতে পারে, যেমন- একটানা অনেকক্ষন বসে থাকলে, দাঁড়িয়ে থাকলে বা ভারী কিছু তুললে বা বহন করলে। সাধারণত রাতের দিকে এ ধরনের ব্যাথা বেশী অনুভুত হয়।

গর্ভাবস্থায় সায়াটিকার ব্যাথা হওয়া স্বাভাবিক। তারপরও এ ধরনের ব্যাথা হলে ডাক্তারকে জানানো উচিত কারণ তা মারাত্মক কোন কিছুর লক্ষনও হতে পারে।

ব্যাক পেইন

গর্ভাবস্থায় অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যার মত ব্যাক পেইনের কারণ হিসেবেও হরমোনকে দায়ী করা যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের নিঃসরণের কারণে সন্তান জন্মদানের প্রস্তুতি হিসেবে পেলভিক এরিয়ার লিগামেন্টগুলো নরম হয়ে যায় এবং জয়েন্টগুলো শিথিল হয়ে যায়। এর ফলে মায়ের শরীর অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং হাঁটার সময়, অনেকক্ষণ বসে থাকলে কিংবা চেয়ার থেকে ওঠার সময়, বা কোন কিছু তোলার সময় ব্যাথা অনুভূত হয়।

গর্ভাবস্থায় জরায়ুর আকার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে মায়ের শরীরের ভর-কেন্দ্রও পরিবর্তিত হয় এবং পেটের পেশীগুলো সম্প্রসারিত ও দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে মায়ের Posture আক্রান্ত হয় এবং পিঠের উপর অতিরিক্ত চাপ পরে।

আপনি যখন বসে বসে কাজ করবেন, সোজা হয়ে বসে থাকার চেষ্টা করুন। এতে আপনার ভাল Posture বা ভঙ্গিমা বজায় থাকবে, যা আপনার  ব্যথা উপশম করতে কাজে দেবে। ।

সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। গর্ভবতী মায়েরা সাধারণত ঝুঁকে থাকেন। এতে মেরুদণ্ডের উপর আরও চাপ পড়ে। যদিও  সোজা হয়ে দাঁড়ানোটা এসময় একটু কঠিন হবে তারপরও চেষ্টা করুন যাতে দাঁড়ানোর সময় ঘাড় পেছনের দিকে থাকে। একটানা বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকার চেষ্টা করুন। দাঁড়িয়ে থাকতে হলে কিছুক্ষন পর পর বসে বিশ্রাম নিন।

ঘন ঘন প্রস্রাব

এসময় মায়ের বর্ধিত জরায়ু সরাসরি ব্লাডারের উপরে চাপ প্রয়োগ করে যাতে মায়ের ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পেতে পারে। এটি গর্ভাবস্থার একটি স্বাভাবিক উপসর্গ।

ঘন ঘন প্রস্রাব হয় বলে পানি কম পান করা উচিত নয়। বরং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ইউরিন টেস্ট করিয়ে নিতে হবে কোনো ইনফেকশন আছে কিনা কিংবা ডায়াবেটিস আছে কি না তা দেখে নেওয়ার জন্য। থাকলে সে মোতাবেক চিকিৎসা  নিতে হবে। যদি ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসার ফলে রাতে ঘুমের সমস্যা হয় তবে দিনের বেলা ঘন ঘন পর্যাপ্ত পানি পানি করে সন্ধ্যার পর থেকে পানি পান কমিয়ে দিন।

ব্লাডারের উপর জরায়ুর চাপের কারণে অনেক সময় মায়ের ইউরিন লিক করতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে এই লিক করা তরল প্রস্রাব নাকি অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইড। যদি নির্গত তরল পাতলা ও গন্ধহীন হয় তবে অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইড হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পানি ভাঙ্গা বা অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইড নির্গত হচ্ছে মনে হলে কিংবা যদি অনবরত ফোঁটা ফোঁটা তরল নির্গত হতে দেখা যায়  অথবা একসাথে অনেকটুকু তরল বেরিয়ে আসছে বলে মনে হয়,  সেক্ষেত্রে সিম্পটম জানিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

স্ট্রেচ মার্কস

গর্ভাবস্থার সাধারনত ৬ থেকে ৭ মাসের দিকে স্ট্রেচ মার্কস দেখা দেয় তবে অনেকের ক্ষেত্রে আরও আগেও দেখা দিতে পারে। প্রথম দিকে স্ট্রেচ মার্কস বা চামড়ার উপর দেখা দেয়া ফাটা দাগগুলো হালকা গোলাপি বর্ণের থাকে এবং এতে চুলকানি থাকতে পারে। ধীরে ধীরে দাগগুলোর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বাড়তে থাকে এবং এগুলো লাল বা বেগুনী রঙ ধারণ করতে পারে। প্রসবের পর এগুলো ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে যায় এবং ধুসর রং ধারণ করতে পারে।

বেশীরভাগ মায়েদের পেটে স্ট্রেচ মার্কস হলেও ব্রেস্ট, উরু, কোমর এবং নিতম্বে হওয়াটাও স্বাভাবিক। সাধারণত শরীরের চর্বিযুক্ত স্থানে স্ট্রেচ মার্কস বেশি দেখা যায়।

স্ট্রেচ মার্কস প্রতিরোধের তেমন কোন উপায় নেই। কোন ক্রীম বা লোশনের মাধ্যমে এর প্রতিরোধ করা যায় এমন কোন নিশ্চিত প্রমান পাওয়া যায়নি। তাই কোন ক্রীম বা লোশন কোম্পানি যদি এমন দাবী করে যে তাদের পণ্য ব্যাবহারে আপনার ফাটা দাগ পুরোপুরি মিলিয়ে যাবে তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল। তবে ত্বকের যত্ন নিতে, বিশেষ করে হাইড্রেটেড রাখতে এবং গর্ভাবস্থায় দেখা দেয়া চুলকানির উপশম করতে ক্ষতিকর ক্যামিকেল মুক্ত ভালো লোশন বা খাঁটি তেল ব্যাবহার করতে পারেন।

এসব ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা আরও অনেক ধরণের উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। গর্ভকালীন সব ধরণের উপসর্গ নিয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।

গর্ভধারণের এ সপ্তাহে করনীয়

এসময় থেকে গর্ভের শিশুর নড়াচড়া খেয়াল করাটা জরুরী। প্রতিদিন কিছু সময় আলাদা রাখুন বাচ্চার নড়াচড়া বোঝার জন্য। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ ২৮ সপ্তাহ থেকে বাচ্চার মুভমেন্ট গুনতে বা কিক কাউন্ট করতে বলে থাকেন।

কিক কাউন্টের জন্য সাধারণত দুটি পদ্ধতি বেশ প্রচলিত-

প্রথম পদ্ধতিতে পাশ ফিরে শুয়ে ভ্রূণের প্রত্যেকটি নড়াচড়া গুনতে বলা হয়। এভাবে দুঘণ্টার মধ্যে অন্তত দশবার বাচ্চার নড়াচড়া টের পেলে একে স্বাভাবিক ধরা হয়। যদি ২ ঘণ্টার আগেই ১০ বার  মুভমেন্ট বুঝতে পারেন তবে আর গোনার প্রয়োজন নেই।

দ্বিতীয় পদ্ধতিতে পাশ ফিরে শুয়ে ১ ঘণ্টা সময়ে ভ্রূণ কতবার নড়ছে তা গুনতে বলা হয়। এভাবে প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনবার গুনতে হবে। প্রতিবার ভ্রূনের নড়াচড়া আগেরবারের সমান বা বেশি হলে সেটাকে স্বাভাবিক ধরা হয়।  

কোন পদ্ধতি আপনি অনুসরণ করবেন তা ডাক্তারের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে নিন। কিক কাউন্টের সময় নিরবিলি ও আরামদায়ক জায়গা বেছে নিন। প্রতিদিন একই সময়ে কিক কাউন্টের চেষ্টা করুন। ভ্রূণ সাধারণত মায়ের খাওয়া দাওয়ার পর বেশি নড়াচড়া করে। তাই খাওয়ার পরের সময়ে নড়াচড়া গোনার চেষ্টা করুন।

তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে আয়রনের চাহিদা সবচাইতে বেশি থাকে। Institute Of Medicine (IOM) এর মতে, গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। এই সময় যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন গ্রহণ করা না যায় তাহলে এনেমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে

রক্ত স্ল্পতা প্রতিরোধ করার জন্য গর্ভবতী মাকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে৷ গরু কিংবা খাসির কলিজা, দেশি বাচ্চা মুরগি, ডিম, মাছ, কলা, বিট, ডালিম, কচু, কচুশাক, পালং শাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে৷

সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তীকালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত। নতুন মায়েরা অনেক কিছুই জানেন না এবং অনেক ব্যাপারে নার্ভাস থাকেন। হাজার হাজার উপদেশের ভিড়ে কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল সেটিও বুঝে উঠতে পারেন না। গর্ভকালীন সময়ে যুগোপযোগী বিভিন্ন লেখা পড়ে ও এক্সপার্টদের কাছ থেকে করণীয় কি ইত্যাদি নিজেকেই জেনে নিতে হবে। এবং সামনের কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। 

সবার জন্য শুভকামনা।

<<গর্ভাবস্থা- সপ্তাহ ২৭
গর্ভাবস্থা- সপ্তাহ ২৯>> 


Spread the love

Related posts

Leave a Comment