মায়েদের সবচাইতে কমন প্রশ্ন হচ্ছে স্বাভাবিক প্রসব বা নরমাল ডেলিভারি কত সপ্তাহে হয় ? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, সাধারণত ৩৭ সপ্তাহ থেকে ৪২ সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ শিশুর নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিক প্রসব হয়। এই ৫ সপ্তাহের যেকোন সময়ে শিশু জন্ম নিলে তাকে স্বাভাবিক বলা যাবে।
সাধারণত শিশু যদি ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্মগ্রহন করে, তাহলে সে শিশুকে প্রিম্যাচিওর শিশু বলা হয় যার নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন পড়তে পারে। কিন্তু গর্ভাবস্থা যদি ৪২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, সেক্ষেত্রে তাকে দীর্ঘায়িত গর্ভাবস্থা বলা হয়।
দীর্ঘায়িত গর্ভাবস্থা হলে বিভিন্ন প্রকার জটিলতার আশংকা বেড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোন তারিখ নেই–
গর্ভের মোট সময় কাল ধরা হয় সাধারণত ৪০ সপ্তাহ বা ২৮০ দিন বা ঌ মাস ৭ দিন৷
শেষ মাসিকের প্রথম দিনটিকে গর্ভধারনের প্রথম দিন ধরে প্রসবের তারিখ নির্ধারন করা হয়ে থাকে৷ যেমন – গর্ভধারণের পূর্বে শেষ মাসিকের প্রথম দিন যদি ২০ ডিসেম্বর হয় তবে প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ হবে ২৭ সেপ্টেম্বর ।
এক্ষেত্রে প্রতি মাসকে ৩০ দিন হিসেবে ধরা হয়৷ এই তারিখের ২ সপ্তাহ আগে বা পরে যে কোনও তারিখে সাধারণত নরমাল ডেলিভারি হয়ে থাকে৷
কেউ কেউ গর্ভাবস্থা হিসেব করে নয় মাস আবার কেউ ১০ মাস। এটা নির্ভর করে আপনি কিভাবে হিসাব করছেন। বেশীর ভাগ মানুষ হিসাব করে মাসিক চক্রের প্রথম দিন থেকে ৪০ সপ্তাহ।
৪০ সপ্তাহ মানে-
- নয় মাস (প্রতি মাস ৩০ বা ৩১ দিন হিসাব করে)
- ১০ মাস (চন্দ্র মাসের হিসেবে প্রতি মাস ২৮ দিন হিসাব করে)
ডাক্তার হয়তো আপনাকে ডেলিভারির তারিখ বলে দিয়েছেন, কিন্তু মনে রাখবেন, কেবল শতকরা ৪% শিশুর ক্ষেত্রে পূর্বে নির্দিষ্ট করে দেওয়া তারিখে নরমাল ডেলিভারি হয়। ডাক্তারের ঠিক করে দেয়া প্রসবের তারিখ পেরিয়ে গেলে কি হতে পারে তা জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।
বিভিন্ন কারণে এই ডিউ ডেইটও ভুল হতে পারে। অনেক নারীদের মাসিক নিয়মিত হয়না, তাদের ওভুলেশন কোন সময় হয় তা নির্ণয় করা যায় না। তাই এসব নারীরা গাইনিদের ঠিক তথ্য দিতে পারেন না ফলে গাইনি দ্বারা দেয়া ডিউ ডেট ও সঠিক হয়না।
এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় আপনার প্রথম আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান আপনাকে অনেকটা সঠিক তারিখ দিতে পারে। যিনি আলট্রাসাউন্ড করে থাকেন (সনোগ্রাফার), তিনি শিশুর মাথা থেকে পা পর্যন্ত পরিমাপ করেণ। এটাকে ক্রাউন রাম্ফ লেন্থ বলে।
এটা অনেকটা আসল তারিখ বলতে সক্ষম যে আপনি কবে গর্ভধারন করেছেন। সাধারণত গর্ভাবস্থার ১১ থেকে ১৩ সপ্তাহ ৬ দিনের ভেতর আলট্রাসাউন্ড টেস্ট করার পরামর্শ দেয়া হয়।
গর্ভাবস্থার শুরু দিকে করা আল্ট্রাসাউন্ডের ফলাফল সাধারণত মোটামুটি সঠিক হয় কারণ এ সময়টাতে গর্ভের ভ্রূণ সবার ক্ষেত্রে একই হারে বারে। সময় বাড়ার সাথে সাথে এই বৃদ্ধির হার একেকজনের ক্ষেত্রে একেকধরনের হয়। এই কারণে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে করা আলত্রাসাউন্ডে সঠিক ডিউ ডেট পাওয়া যায়না এবং তা প্রথম আলত্রাসাউন্ড থেকে ভিন্ন হয়।
সবশেষে তাই বলা যায় নরমাল ডেলিভারি কত সপ্তাহে হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। প্রতিটি গর্ভস্থ শিশুর আগমনও পৃথিবীতে হুবহু একই সময় হয়না।
ডাক্তারদের দেয়া ডিউ ডেটে বাচ্চা না হলে বর্তমানে গর্ভবতী নারীরা ভয় পেয়ে যান। শুধু গর্ভবতী নারি-ই নয় তার নিকট জনেরাও ভীত-শঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু প্রতিটা মানুষ যেমন একজন অন্যজন হতে পৃথক তেমনি প্রতিটা গর্ভবতী নারীর প্রসবকালীন সময়সীমা, প্রসবের ব্যথার সময়ের পরিধি বা সময়ের ব্যাপ্তিও পৃথক।
এই সময়টাতে উচিৎ শান্ত থাকা এবং ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ সপ্তাহ খানেক আগে থেকে এমনকি মাসখানেক আগে থেকেও দেখা যেতে পারে। প্রসবের এসব লক্ষণগুলো ভালোভাবে জেনে নিন যাতে অন্তত ধারণা করতে পারেন পরবর্তীতে কি হতে যাচ্ছে এবং কখন চিকিৎসকের পরামর্শও নেয়া উচিৎ।
সবার জন্য শুভকামনা।