আলট্রাসাউন্ড রিপোর্টে “lie” শব্দটি দিয়ে গর্ভের ভ্রূণের স্পাইনাল কলাম বা মেরুদণ্ড মায়ের স্পাইনাল কলামের সাথে কোন অবস্থানে আছে তা বোঝানো হয়। মায়ের গর্ভে শিশু যখন নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করে তখন একে Unstable lie বলে।
গর্ভাবস্থার ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত Unstable lie থাকা খুবই স্বাভাবিক, কারণ এই সময় ভ্রুনের আকারের তুলনায় মায়ের জরায়ু অনেক বড় থাকে। ফলে ভ্রূণটি নিয়মিত এবং খুব সহজেই অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে।
তবে ৩৭ সপ্তাহের পরে করা আলট্রাসাউন্ডে Unstable lie পাওয়া গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। সাধারণত প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার কারণে Unstable lie হতে পারে কারণ এই কন্ডিশনে ভ্রূণ প্রসবের জন্য উপযোগী অবস্থানে আসতে পারেনা।এছাড়াও ফাইব্রয়েড বা জরায়ুর টিউমারের কারণেও এমনটা হতে পারে। তাই এসব বিষয় পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিৎ।
যদি প্লাসেন্টা এবং জরায়ুর কন্ডিশন স্বাভাবিক থাকে তবে ECV (External Cephalic Version) করার পরামর্শ দেয়া হবে। যদি ECV সফল হয় তবে খুব বেশি দেরী না করে labor induction এর মাধ্যমে প্রসব ত্বরান্বিত করার পরামর্শ দেয়া হবে যাতে ভ্রূণটি আবার অবস্থান পরিবর্তন না করতে পারে।
এক্সটারনাল সেফালিক ভার্শন (ECV) এর মাধ্যমে মায়ের পেটে চাপ প্রয়োগ করে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়। এটি একটি নিরাপদ প্রক্রিয়া (কিছু কিছু ক্ষেত্রে জটিলতার সম্ভাবনা থাকে) তবে অবশ্যই তা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কারো মাদ্ধমে করাতে হবে।মনে রাখতে হবে এ প্রক্রিয়াটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যদি গর্ভে যমজ সন্তান থাকে, এমনিওটিক ফ্লুইড কম থাকে, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকে এবং পূর্বে সি-সেকশন করা থাকে তবে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়না।
যদি ECV সফল না হয় তবে সি-সেকশনের পরামর্শ দেয়া হবে।
যদি ৩৯ সপ্তাহের পরেও Unstable lie পাওয়া যায় তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেয়া হতে পারে, কারণ এমন কন্ডিশনে পানি ভেঙ্গে গেলে কর্ড প্রোলাপ্স হতে পারে। এই সময় হাসপাতালে থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।
কর্ড প্রোলাপ্স খুবই মারাত্মক হতে পারে কারণ এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চার শরীর আম্বিলিকাল কর্ডে চাপ প্রয়োগ করে যার ফলে কর্ডের মাধ্যমে বাচ্চার শরীরে রক্ত এবং অক্সিজেন প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়। যদি এমন হয় তবে যত দ্রুত সম্ভব ডেলিভারি করতে হবে।
যদি আপনার মনে হয় যে আপনার প্রোলাপ্স হয়েছে তবে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। যদি কোন কারণে যেতে দেরী হয় তবে এমন পজিশনে থাকার চেষ্টা করুন যাতে বাচ্চার শরীরের ওজন তার আম্বিলিকাল কর্ডের উপর না পড়ে।এর জন্য সবচাইতে ভালো উপায় হলো কনুই ও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে এমন ভাবে বসে পরা যাতে হাত ও মাথা মাটিতে থাকবে এবং নিতম্ব উপরের দিকে থাকবে।
গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের অবস্থান খুব ঘন ঘন পরিবর্তন হয়।তবে সাধারণত ৩৬ সপ্তাহ নাগাদ ভ্রুন ডেলিভারির জন্য আদর্শ অবস্থানে চলে আসে।এই সময়ের আগে গর্ভস্থ শিশুর অবস্থান নিয়ে তেমন একটা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।
সবার জন্য শুভকামনা।