গর্ভের শিশুর হার্ট রেট দেখে কি সন্তান ছেলে না মেয়ে তা বোঝা যায়

Spread the love

একটি বেশ প্রচলিত ধারণা আছে, ভ্রূণের হৃদস্পন্দন যদি 140 BPM এর বেশি অথবা সমান হয়, তাহলে ভ্রূণটি একটি মেয়ে শিশুর। আর যদি হার্টবিট রেইট 140 BPM এর কম হয়, তাহলে গর্ভস্থ শিশুটি ছেলে হবে। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় গর্ভের ভ্রূণের হার্টরেট দেখে অনাগত সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে তা সত্যিই বোঝা যায় কিনা।

গর্ভাবস্থার পঞ্চম সপ্তাহেই ভ্রূণের হৃদপিণ্ডের গঠন শুরু হয়ে যায়।কনসিভ করার  সাধারণত ২২-২৪ দিনের মধ্যেই অর্থাৎ গর্ভাবস্থার ষষ্ঠ সপ্তাহ নাগাদ বাচ্চার হার্টবিটও শুরু হয়। তবে এ সময় ভ্রূণের  হৃদপিণ্ড এতটাই ছোট থাকে যে তা সাধারণ আল্ট্রাসাউন্ড বা ডপলার মেশিনে ধরা পড়ার মত শব্দ  উৎপন্ন করতে পারেনা।

বিজ্ঞাপণ

আলট্রাসাউন্ড রিপোর্টে হার্টরেট বোঝাতে HR (Heart Rate) বা FHR (Fetal Heart Rate) উল্লেখ করা থাকতে পারে৷ হার্টরেট উল্লেখ করতে সাধারণত BPM বা Beat per minute দেয়া থাকে। অর্থাৎ প্রতি ১ মিনিটে কতবার হৃদস্পন্দন হচ্ছে সেটি  উল্লেখ করা থাকে।

প্রথম ট্রামেস্টারে শিশুর জেন্ডার হার্ট রেটের উপর কোন প্রভাব ফেলেনা। গর্ভাবস্থার পঞ্চম সপ্তাহ পর্যন্ত ভ্রূণের হার্ট রেইট থাকে অনেকটা মায়ের কাছাকাছি ৮০-৮৫ BPM। নবম সপ্তাহ পর্যন্ত তা বাড়তে থাকে এবং ১৭০-২০০ BPM পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে। এরপর তা কমে প্রেগ্নেন্সীর  মাঝামাঝি সময়ে ১২০-১৬০ BPM এ থাকে। সাধারনত শিশুর হার্ট রেইট ১০০-১৬০ এর মধ্যে থাকলে তাকে নরমাল ধরা হয়। এই পরিমাপগুলো ছেলে শিশু এবং মেয়ে শিশু উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর শিশুর হার্ট বিট নির্ভর করে তা হলো ভ্রূণের নড়াচড়া। ইউটেরাসে ভ্রূণ যত অ্যাকটিভ থাকবে তার হার্ট বিট-ও তত বেশী হবে। তবে প্রেগনেন্সীর একেবারে শেষের দিকে  অর্থাৎ ডেলিভারী ডেইটের কিছুদিন আগে গর্ভের শিশুর জেন্ডারের উপর নির্ভর করে হার্ট বিট বেশী বা কম থাকতে পারে। ১৯৯৯ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে ঠিক প্রসবের আগে মেয়ে শিশুদের  হার্ট বিট ছেলে শিশুর চাইতে একটু বেশী থাকে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে এর বিপরীতটিও ঘটতে পারে।

তাই বলা যায়, গর্ভস্থ ভ্রূণের হার্টরেইট দেখে গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে তা নিশ্চিত করে বলার কোন উপায় এখনো পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানে আবিষ্কৃত হয়নি ।

বিজ্ঞাপণ

এই বিষয়ের উপর করা গবেষণা কি বলছে?

Fetal Diagnosis and Therapy এর পক্ষ থেকে ৯৬৬ জন গর্ভবতী মায়ের উপর একটি গবেষণা করা হয়েছিল এই বিষয়টি নিয়ে জানতে। প্রথম ট্রাইমেস্টারে অর্থাৎ ১৪ সপ্তাহের আগে এদের প্রত্যেকের আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে গর্ভস্থ ভ্রূণের হার্টরেইট নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে ১৮-২৪ সপ্তাহের মধ্যে আবার ভ্রূণগুলোর হার্টরেইট পরিমাপ করা হয়। এই সময় আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ৯৬৬ জনের মধ্যে ৪৭৭ জন মায়ের গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ বা জেন্ডার নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছিল।

সে গবেষণায় দেখা গিয়েছিল প্রথম ট্রাইমেস্টারে ছেলে শিশুদের হার্টরেইট ছিল গড়ে ১৫৪.৯ বিপিএম এবং মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে তা ছিল গড়ে ১৫১.৭ বিপিএম। গবেষণায় এটাই প্রমানিত হয়েছিল গর্ভাবস্থার বেশিরভাগ সময় জুড়েই ছেলে এবং মেয়ে শিশুর হার্টরেটে খুব একটা পার্থক্য থাকেনা।

অনেকেই হয়তো আপনাকে বলবেন যে তাদের প্রেগ্নেন্সীর সময় হার্টরেট দেখেই তারা কি শিশু হবে তা বুঝতে পেরেছেন এবং তাদের অনুমান সঠিক হয়েছিল। সেক্ষেত্রে জেনে রাখুন আপনার গর্ভস্থ সন্তান হয় ছেলে হবে না হয় মেয়ে। অর্থাৎ আপনি যেটাই ভবিষৎবাণী করুন না কেন তা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ ভাগ। আর কারোটা মিলে গেলেই সেটা প্রচারও হয় বেশি এবং এভাবেই এসব ভ্রান্ত ধারণা মানুষের মনে পাকাপোক্ত জায়গা তৈরি করে নেয়।

পরিশেষে বলবো প্রেগন্যান্সিতে আলট্রাসাউন্ড করুন মা এবং গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য, অনাগত সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে সেটা জানার জন্য নয়। অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ না মেনে প্রেগন্যান্সির প্রথম দিকে আলট্রাসাউন্ড না করে শেষদিকে করান শুধুমাত্র শিশুর জেন্ডার জানার আশায়। এই মনোভাব পাল্টাতে হবে। প্রেগন্যান্সিতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অন্তত তিনবার আলট্রাসাউন্ড করার চেষ্টা করুন। এতে মা ও শিশুর সুস্থ থাকা আরেকটু সুনিশ্চিত হয়।

সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে, একটি সুস্থ সন্তান আমাদের সবার কাম্য হওয়া উচিত এবং সে সন্তানকে একজন ভালো মানুষ করে গড়ে তোলাই যেন আমাদের লক্ষ্য হয়।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment