শিশুর ভুল বা ব্যর্থতায় মা বাবার প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত

Spread the love

ভুল, ব্যর্থতা কিংবা দোষ!  এই তিনটি শব্দই আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে মিশে আছে। বিল গেটস এর মত একজন মানুষ বলেছেন, “সফলতার উদযাপন নয় বরং ভুল থেকে শিক্ষা নেয়াটাই বেশি জরুরী।” –কিন্তু এই ভুল যদি আপনার ছোট্ট শিশুটি করে থাকে? শিশুর সেই ভুল শুধরাতে গিয়ে বাবা মা হিসেবে আপনিও আবার ভুল করে ফেলছেন না তো?

শিশুর সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠার জন্য চমৎকার একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া বাবা-মা হিসেবে আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। আর তাই শিশুর ভুল, দোষ কিংবা ব্যর্থতায় শিশুর সাথে ঠিক কি ধরণের আচরণ করা উচিৎ এ নিয়ে প্রায়শই বাবা-মায়ের মধ্যে উৎকণ্ঠা ও ধৈর্যচ্যুতির দ্বৈরথ দেখা যায়। বাবা-মায়েদের এই উৎকণ্ঠার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই আজ আমরা জানব—শিশুর সাথে আমাদের কিরূপ আচরণ করা উচিৎ এবং আমাদের এই আচরণ শিশুর মনোজগতে ঠিক কি ধরণের প্রভাব বিস্তার করে!

বিজ্ঞাপণ

শিশুর ভুল বা ব্যর্থতায় মা বাবার প্রতিক্রিয়া তার উপর কি প্রভাব ফেলতে পারে

হ্যাঁ! আপনি হয়ত এটা আজকে বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে শিশুর কোন ভুল অথবা ব্যর্থতার কারণে আপনি শিশুর প্রতি আজ যে আচরণ করবেন তার উপরে আপনার সন্তানের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই নির্ভর করছে। আজকের ছোট্ট শিশুটি কতটা আত্মবিশ্বাসের সাথে বড় হবে অথবা বাকি জীবন নিজের ভুলগুলো কীভাবে শুধরে নিবে, সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে একমাত্র আপনার উপর।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় ঠিক এই বক্তব্যটিই পরিপূর্ণ ভাবে উঠে এসেছে। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়য়ের একজন গবেষক ডঃ হাইমোভিটজ এই সম্পর্কে বলেন- “শিশু যদি আত্মবিশ্বাসী হয়, তাহলেই সে ভবিষ্যতে অনেক ভালো কিছু করতে পারবে।” আর আপনার শিশু আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠছে কি না—সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে শিশুর সাথে আপনার আচার আচরণের উপর।  

এছাড়া আরেকটি বিষয় হল, আপনার সন্তান সবসময় আপনাকেই অনুকরণ করার চেষ্টা করে। আর তাই আজ আপনি যে আচরণ করছেন, শিশু সেটা শিখেই বড় হচ্ছে। আপনার মধ্যে যদি কোন বিরূপ আচরণ থাকে, তাহলে দেখবেন শিশুও অন্যদের প্রতি বিরূপ আচরণ করছে।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাটিতে দেখা গেছে, বাবা-মা সন্তানের পরীক্ষার ফলাফলের বিপরীতে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান, তা সন্তানের নিজের বুদ্ধিমত্তা বিচারের ব্যাপারে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

গবেষণার জন্য ৭৩ জোড়া অভিভাবক ও সন্তানকে ডাকা হয়েছিল। সন্তানদের সবাই ছিল ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, সন্তান পরীক্ষায় তুলনামূলক কম নাম্বার পেলে যে অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান, সন্তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যাদের মাথাব্যাথা শুরু হয়ে যায়; তাদের সন্তানরা নিজেদের বুদ্ধিমত্তা ও মেধার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।

তারা ভাবে, তাদের যথেষ্ট মেধা নেই, তারা অন্যদের মতো বুদ্ধিমান নয়। অভিভাবকদের এধরনের প্রতিক্রিয়ার কারণে বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারে সন্তানদের মনে ভ্রান্ত ধারণার জন্ম হয়। তারা ভাবে বুদ্ধিমত্তা, মেধা এগুলো ফিক্সড, অপরিবর্তনীয়। তারা মেধাবী নয়, তার মানে তারা আর কখনো মেধাবী হতে পারবে না। ভাল ফলাফল করতে পারবে না।

অন্যদিকে যে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও অহেতুক দুশ্চিন্তা না করে বরং সন্তানরা কী শিখছে সেদিকে মনোযোগ দিয়েছেন এবং সন্তানদেরকে বুঝিয়েছেন সামনে আরো ভাল করে বিষয়টা আয়ত্ব করলে তারা ভাল ফলাফল করতে পারবে, তাদের সন্তানরা অভিভাবকদের কাছ থেকে ইতিবাচক বার্তা পেয়েছে।

তারা বুঝতে পেরেছে মেধা, বুদ্ধিমত্তা অপরিবর্তনীয় নয়। ব্যর্থ হলেই কেউ মেধাহীন হয়ে যায় না। সামনে আরো ভাল করে পড়াশোনা করলে তারাও পরীক্ষায় চমৎকার ফলাফল করে দেখাতে পারবে।

শিশুর ভুল বা ব্যর্থতায় মা বাবার প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত?

শিশুদের ভুলের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় অভিভাবকদের অনেক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অভিভাবকরা যদি কোনো ভুল প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলেন তাহলে সেটা আগামী দিনে শিশুর ভুলের পরিমাণ না কমিয়ে উল্টো বাড়িয়ে দিতে পারে!

বোঝার চেষ্টা করুন ভুলটা কি ইচ্ছেকৃত নাকি নিছক দুর্ঘটনা?

শুরুতেই যেটা বিবেচনায় আনতে হবে তা হলো, শিশু যে ভুলটি করেছে তা কি ইচ্ছেকৃত নাকি নিছক দুর্ঘটনা? বাচ্চারা অনেক সময় দুষ্টুমির ছলেও ভুল করে বসে, এটাও মাথায় রাখতে হবে।

তবে ভুলটা যেমনই হোক না কেন প্রথমে শিশুকে ভুল স্বীকার করতে উৎসাহিত করতে হবে। ভুল করে সেটা অস্বীকার করা খুবই ক্ষতিকর একটি অভ্যাস। অভিভাবকের উচিত সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যাতে সে নিজের ভুল অভিভাবকের কাছে স্বীকার করতে পারে।

সন্তান ভুল স্বীকার করলে বাবা-মা কি এবার তাকে ইচ্ছেমতো লজ্জা দেবে? অপমান করবে? গালমন্দ করবে? একদম না। এসব করলে বরং হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তাহলে কী করা উচিত? প্রথমেই সন্তানকে নিজের ভুল স্বীকার করার জন্য ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। তাকে নিজের ভুলটা শুধরে নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা উচিত। অভিভাবকের এমন কোনো কথা বা আচরণ করা উচিত নয় যার ফলে শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

সন্তানের মন থেকে ভয় দূর করে দিন

হয়তো আপনার সন্তান ভাবছে, সে যদি কোনো ভুল করে বসে তাহলে হয়তো আপনি অনেক রাগ করবেন, কষ্ট পাবেন, হয়তো তাকে আর আগের মতো ভালবাসবেন না, আদর করবেন না। ফলে সে যদি কখনো ভুল করেও বসে, সে-ব্যাপারে আপনাকে জানাতে ভয় পাবে, ইতস্তত করবে।

সন্তান যদি অভিভাবকের কাছে মন খুলে নিজের ভুল নিয়ে কথা বলতে না পারে তাহলে অভিভাবকরা সন্তানের ভুলের ব্যাপারে অজ্ঞাত থাকেন। সন্তান তার চোখের আড়ালে কী করছে, সে-ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা থাকে না। ধারণা না থাকার ফলে অভিভাবকরা সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালনাও করতে পারেন না। তাই অভিভাবকদের প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো সন্তানের মন থেকে এধরনের ভয় দূর করা।

শিশুকে প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দিন যে আপনি তাকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। সন্তান যত বড় ভুলই করুক না কেন, আপনি তার পাশে আছেন; এই মর্মে তাকে আশ্বস্ত করুন। সন্তানের অনুভূতি, ভাবনা, ভুল; সবকিছু নিয়ে কথা বলার জন্য আপনি তার পাশে থাকবেন বলে কথা দিন। তাকে একাবোধ করতে দেবেন না। তাকে ভুল আড়াল করতে দেবেন না।

সন্তানের উপর আমাদের আস্থা রাখা অথবা অনাস্থা প্রকাশ করা তো আমরা প্রায়শই দেখে থাকি, তবে কখনো ভেবেছেন—ঠিক একই ভাবে সন্তানও আপনার উপর আস্থা রাখতে পারছে কি না? সন্তানের সেই আস্থার যায়গাটি অর্জন করে নিতে হবে আপনাকেই। সন্তান যেন কোন ভুল বা অন্যায় করে ফেললে, সেটার সমাধানের জন্য সবার আগে আপনার কাছেই আসে সেটা সুনিশ্চিত করতে পারবেন, শিশুর প্রতি সদাচরণ এবং বন্ধু সুলভ ব্যবহারের মাধ্যমে।

বিজ্ঞাপণ

শিশুর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন

ভুল করার পর বা কোনো কাজে ব্যর্থ হওয়ার পর আপনার সন্তান কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। সে কি ব্যর্থ হওয়ায় রেগে গিয়েছে? নাকি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছিল বলে আনন্দবোধ করছে?  যদি দেখেন যে আপনার শিশু নিজের উপর রেগে আছে, তাহলে তাকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করুন।

যদি ব্যর্থতার কারণে সে হতাশাবোধ করে, রেগে যায় তাহলে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। এই ব্যর্থতাকে পরবর্তীতে সফলতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করুন।

আপনার শিশু কি কোন অন্যায় করেছে? ঘরের কোন দামী বস্তু ভেঙ্গে ফেলেছে? এমতাবস্থায় শিশুর সাথে তাৎক্ষনিক ভাবে কখনো রাগারাগি করতে যাবে না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং পরবর্তীতে বুঝিয়ে বলুন, ভুল সম্পর্কে তাকে সচেতন করে তুলুন। আপনি যদি আজ শিশুকে তাৎক্ষনিক ভাবে বকাঝকা করেন অথবা সবার সামনে সেই ভুলের জন্য লজ্জা দেন তাহলে শিশুর মধ্যে অনেক হীনমন্যতা কাজ করবে।

  • শিশু একই ভুল বারবার করছে কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
  • কোন একটি ভুল অথবা অন্যায় যাতে করে শিশুর অভ্যাসে পরিণত না হয়ে উঠে সেদিকে ভালভাবে খেয়াল রাখুন।

তবে একটি বিষয় মনে রাখবেন আপনি যদি শিশুর সাথে প্রতিনিয়ত রাগারাগি করেন, তাহলে শিশু আপনাকে তার প্রতিপক্ষ ভেবে বরং আরো বেশি করে সেই অন্যায়টি করবে। এমতাবস্থায় শিশুর সাথে কথা বলুন, শিশুর বন্ধু হয়ে উঠুন। আপনি যদি শিশুর বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন, তাহলেই শিশুর কথাগুলোও আপনি বুঝতে পারবেন।

নিজের ভুলগুলো শিশুকে উদাহরণ স্বরূপ বলুন, যাতে করে শিশু সেখান থেকে শিখতে পারে। যেমন ধরুন শিশুর হাত থেকে খাবারের প্লেট পরে যদি ভেঙ্গে যায়, তাহলে শিশুকে বলুন যে আপনার হাত থেকেও এভাবে একবার খাবারের প্লেট পরে গিয়েছিল। আর এরপর থেকে আপনি খুব সতর্ক থেকেছেন, যাতে করে এই ভুল আবার না হয়। শিশু তখন হীনমন্যতায় ভুগবে না বরং বুঝতে সে পারবে ভুল আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। যে কেউ যে কোন সময়ই ভুল করে ফেলতে পারে।

ভবিষ্যতের দিকে মনোযোগ দিন

ভুল বা ব্যর্থতা নিয়ে কথা না বলে বরং পরেরবার কীভাবে আরো ভালভাবে কাজটি করা যাবে, সেদিকে মনোযোগ দিন। আপনার সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন, কাজ করতে গেলে যদি ভুল হয় তাহলে সেটা খারাপ কিছু নয়। সবাই ভুল করে। ভুলগুলো বরং সামনে নিখুঁতভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।

ফলাফলের চেয়ে কাজের ধারার দিকে জোর দিন

ধরা যাক, কোনো কাজ করতে গিয়ে আপনার সন্তান সবকিছু গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছে। তখন তাকে ভুলের জন্য লজ্জা না দিয়ে বা গালমন্দ না করে বরং তাকে বলুন কাজটির কোনো কোন অংশ বেশ মজার ছিল।

তার কাছে জানতে চান, কোন অংশটি তার কাছে ভাল লাগেনি। সন্তানের সাথে খোলামনে আলাপ করুন, ভবিষ্যতে কাজটি আরো ভালভাবে করার জন্য সে কী ভাবছে বা পরিকল্পনা করছে। সর্বোপরি, কাজে সফল হওয়ার চেয়ে কাজটি করতে গিয়ে প্রাপ্ত শিক্ষা ও আনন্দের দিকে সন্তানের মনোযোগ আকর্ষণ করুন।

শিশুকে সমাবেদনা জানাবেন না

সন্তানকে আশ্বস্ত করতে গিয়ে, সাপোর্ট করতে গিয়ে করুণা বা সমাবেদনা দেখিয়ে ফেলছেন কিনা, সেদিকে লক্ষ্য রাখা খুবই জরুরি।

আপনি যখন সন্তানকে সমবেদনা দেখিয়ে বলেন, “থাক, সমস্যা নেই তুমি পারবে না। রেখে দাও।” তখন সন্তান নিজেকে অযোগ্য ভাবার সুযোগ পায়। সমাবেদনা না জানিয়ে বরং কোথায় ভুল হয়েছে সেটা নিয়ে আলোচনা করুন এবং সমাধানের পথ খুঁজে নিন।

শিশুর সাথে মজার কিছু করুন

সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ও মানসিক ক্লান্তি দূর করতে সে যা পছন্দ করে, সেটা করতে পারেন। একটু হালকা মেজাজে কিছু সময় কাটালে পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে সুবিধে হয়। তাই সন্তানের সাথে মজা করে কিছু সময় কাটানো উচিত।

শিশুর ভুল শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না

আগ বাড়িয়ে সন্তানের ভুলটা ঠিক করা উচিত না। অভিভাবকরা প্রায়ই এই ভুলটা করে থাকেন। সন্তানের ভুলটা নিজ হাতে সংশোধন না করে বরং তাদের সঠিক রাস্তাটা বাতলে দিন। যেন সে নিজেই ভুলটা সংশোধন করে নিতে পারে। এটা তাকে ভবিষ্যতে ভুল করা থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করবে। সে ভুল না করে বরং প্রথমেই সঠিক কাজটা করার চেষ্টা করবে।

শিশুকে কি তাহলে বকা দেয়া যাবে না?

বিজ্ঞাপণ

ব্যাপারটি তা নয় বরং সেই বকাটি যেন অনেক বেশি রুঢ় না হয়ে যায় সেদিকেই কেবল একটু লক্ষ্য রাখতে হবে। বুঝতেই পারছেন, এখানে আদতে ‘লঘু পাপে গুরু দণ্ড’ যেন না হয় সেদিকটাই বিবেচনায় রাখতে বলা হচ্ছে। আপনার সন্তান যদি কিছুটা বড় হয় তাহলে তো তাকে বকা দেয়া যেতেই পারে। তবে এক্ষেত্রে অনেক উচ্চস্বরে বকা না দিয়ে বরং সন্তানকে ঠাণ্ডা মাথায় এবং চেহারার মধ্যে প্রচণ্ড রাগ প্রকাশ না করে বকা দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।  

শিশুকে হতাশ করবেন না

  • তুমি একটা বোকা, গাধা!
  • তুমি সবসময় এমন কর!  
  • তোমাকে আমি আর কখনই কিছু বলব না, যা খুশি কর!

এই ধরণের কথাগুলো অথবা আরো রুঢ় কোন কথা শিশুকে কখনই বলবেন না, কেননা এই ধরণের শব্দ শিশুকে হীনমন্যতায় ভোগাতে পারে এবং আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে বাঁধা দেয়। মনে রাখবেন, শিশুর আজকের এই আচরণটা সাময়িক, একটু বুঝালেই শিশু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু শিশুর মধ্যে একবার যদি এই কথাগুলোর ছাপ পড়ে যায় তাহলে সেটা শিশুকে সারাজীবন তাড়া করে বেড়াতে পারে। শিশু নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারে।

এছাড়াও বাসায় কখনো কেউ বেড়াতে আসলে, শিশুকে তাদের সামনে অপমান করবেন না। হয়ত আপনার সন্তান পরীক্ষায় খারাপ করেছে, অথবা কোন একটি অন্যায় করেছে। সবার সামনে সেগুলো পুনরায় তুলে এনে সন্তানকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবেন না। এগুলো শিশুর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে—আর দীর্ঘ সময় ধরে এই পুঞ্জভিত ক্ষোভ সন্তানের মনোজগতের উপর দীর্ঘস্থায়ী বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

শেষকথা

সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। তাদের ভুলত্রুটি নিয়ে খোঁচা দেওয়া, অপমান করা, হেয় করা একদম অনুচিত। আবার সন্তান কোনো কাজে ভুল করছে দেখে নিজেই সেটা শুধরে দেওয়াও ঠিক নয়। বরং সন্তানকে সঠিক রাস্তা দেখিয়ে, তাকেই তার ভুল সংশোধন করতে দেওয়া উচিত। এতে সে যেমন নিজের ভুলটা বুঝতে পারবে, ঠিক তেমনি ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবে।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment