গর্ভের বাচ্চার বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য আপনার শরীরের সকল পরিবর্তন কিছু অস্বস্তি তৈরী করতে পারে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের কিছু সাধারণ উপসর্গ ও উদ্বেগ নিয়ে এই অংশে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি আপনার অনুভূতি নিয়ে কোন সময় চিন্তিত হোন, তাহলে আপনার ধাত্রী বা ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
পেট ব্যাথা
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে পেট ব্যাথা হওয়া স্বাভাবিক। এটাকে রাউন্ড লিগামেন্ট ব্যাথা বলা হয়। জরায়ুর প্রতি পাশের অবলম্বন হলো রাউন্ড লিগামেন্ট। বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জরায়ু লিগামেন্টে টান দেয়ার কারণেই ব্যাথা অনুভূত হয়।
এটি ক্ষতিকারক নয়, কিন্তু আঘাত করতে পারে। অবস্থানের পরিবর্তন লিগামেন্টের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। যদি ব্যাথা খুব বেশী বা অনবরত হয় তাহলে ধাত্রী বা ডাক্তারকে বলুন।
- রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন।
- গর্ভকালীন পেট ব্যাথা কখন স্বাভাবিক আর কখন নয় তা বিস্তারিত জানুন।
পিঠের ব্যাথা
গর্ভাবস্থার শেষ দিকে পিঠের ব্যাথা হওয়া স্বাভাবিক। আপনার পিঠের নীচ ও কোমরের লিগামেন্টগুলো নরম হবার সাথে সাথে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জরায়ুর বাড়তি ওজনের জন্য এটি হয়। কর্মস্থল ও ঘুমসহ দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত করার জন্য এই ব্যাথা যথেষ্ট হতে পারে।
কিছু বিষয় যেগুলো সাহায্য করতে পারে তা হল:
অ্যাকুয়ারোবিকস্ (পানিতে হাল্কা ব্যায়াম)
- গরম প্যাক
- হাঁটাসহ নিয়মিত ব্যায়াম
- প্রত্যেক দিন বিশ্রাম নিন
- উঁচু হিলের পরিবর্তে ফ্ল্যাট জুতা পরুন
- পিঠের উপরের ব্যাথা নিরাময়ের জন্য আপনার কনুই ঘোরাবেন। কাঁধের উপর আপনার আঙ্গুল রাখুন এবং আপনার কনুইসহ পিছনের দিকে ঘোরান
- আকুপাংচার।
যদি পিঠের ব্যাথা বেশী বা অনবরত হয় তাহলে আপনার ধাত্রী বা ডাক্তারকে বলুন।
গর্ভাবস্থায় ব্যাক পেইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
মাড়ি থেকে রক্ত পড়া ও দাঁতের সমস্যা
গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন আপনার মাড়িতে সহজেই জ্বালাতন এবং প্রদাহ করে। যদি আপনার মাড়ি লাল, স্ফীত বা নরম হয় যাতে করে দাঁত মাজার সময় রক্ত পরে, তাহলে আপনি দাঁতে স্তর পরার কারণে বাড়তি প্রতিক্রিয়া অনুভব করছেন। যত্নশীল ও হাল্কা করে দাঁতমাজা ও ফ্লস এটি প্রতিহত করবে।
আপনার দাঁত ও মাড়ি ভালো গঠনে আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে গর্ভাবস্থায় অথবা গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে দাঁত পরীক্ষা করান। যদি মাড়ি থেকে রক্ত পড়া ক্রমাগত হতে থাকে তাহলে দন্ত চিকিৎসককে দেখান। গর্ভকালীন দাঁতের চিকিৎসা করা নিরাপদ।
মাড়ির রোগের চিকিৎসা না হলে, আপনার নিজের ও বাচ্চা উভয়ের সমস্যা করতে পারে। প্রসবের পর মায়ের মুখের অবস্থা অস্বাস্থ্যকর হলে তা নবজাতকের বাড়ন্ত দাঁতের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়, কারণ মা থেকে শিশুতে সরাসরি ব্যাকটেরিয়া জীবাণু সংক্রমণ হয়। এমনকি গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানের সময় এই অবস্থা আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ কঠিন করে তুলবে।
গর্ভকালীন সময়ে যদি মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আসক্ত থাকেন, অথবা মর্নিং সিকনেস্ (সকাল বেলা বমি বমি ভাব)-এর জন্য অল্প করে ঘনঘন খাবার খান, তাহলে দাঁতের ভালো যত্ন নেয়া আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় দাঁতের যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন।
শ্বাসকষ্ট
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক ও শেষ পর্যায়ে অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলা শ্বাসকষ্ট অনুভব করে। এটি সাধারণত ক্ষতিকারক নয় এবং বাচ্চাকে প্রভাবিত করে না।
যদি শ্বাসকষ্ট বেশী বা হঠাৎ করে শুরু হয় বা শুয়ে থাকলে ঘটে থাকে তাহলে আপনার ধাত্রী বা ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।যদি আপনার বাজে কাশি বা ঠান্ডা সর্দির সাথে হঠাৎ শ্বাসকষ্টের আক্রমন হয় বা শ্বাসজনিত সমস্যা থাকে তাহলে আপনার ধাত্রী বা ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট । কারণ ও প্রতিকার
প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা যন্ত্রণা করা
প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা যন্ত্রণা করা মূত্রনালীর সংক্রমণের (মূত্রাশয় প্রদাহ) একটি লক্ষণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় এই সংক্রমণ খুবই স্বাভাবিক। যদি আপনার এই সব উপসর্গ থাকে আপনার ধাত্রী বা ডাক্তারকে বলুন: শুরুতেই চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।
কোষ্ঠকাঠিন্য
হরমোনের পরিবর্তন আপনার হজম প্রক্রিয়াকে ধীরগতির করে দেয়। হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন, প্রচুর তরল পান করুন এবং আঁশ জাতীয় খাবার খান (যেমন, হোলগ্রেইন পাউরুটি ও সিরিয়াল, অপ্রক্রিয়াজাত ভুসি, শাকসব্জি, তাজা ও শুকনো ফল, বাদাম, শুকনো মটরশুটি ও শুকনো ডাল)।
ভোজনপ্রণালী ও ব্যায়ামের প্রভাব না পরা পর্যন্ত হালকা মাত্রার হজমকারক ঔষধ বা আঁশ (ফাইবার) সম্পূরক ব্যবহার করা নিরাপদ, কিন্তু উচ্চ মাত্রার হজমকারক ঔষধ পরিহার করুন। আয়রণ ট্যাবলেট কখনো কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরী করে – যদি আপনি এগুলো খান, তাহলে আপনার ধাত্রী বা ডাক্তারকে এই ঔষধগুলো পরিবর্তন করতে বলুন।
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন।
পেশীর খিঁচুনী
পায়ের পাতা, পা অথবা উরুর মাংসপেশীতে পেশীর খিঁচুনী হওয়া স্বাভাবিক, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষ দিকে এবং রাতের বেলায়।এক্ষেত্রে কিছু টিপস্:
- মাংসপেশীকে দৃঢ়ভাবে মালিশ করার চেষ্টা করুন বা অল্পক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে এটিকে প্রসারিত করুন
- আপনার পা উপরের দিকে হাতের মাধ্যমে বাঁকা করে পায়ের খিঁচুনী নিরাময় করুন
- আপনার পায়ের আঙ্গুল সোজা রেখে প্রসারিত করার চেষ্টা করবেন না।
ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট সাহায্য করতে পারে – আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। প্রায়ই ক্যালসিয়াম প্রতিকারক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়, কিন্তু এটি যে আসলেই কাজ করে তার কোন প্রমাণ নাই।
পায়ে খিল ধরা বা লেগ ক্র্যাম্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
অচেতনতা অনুভব হওয়া
গর্ভাবস্থা রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে বিশেষ করে গরমে, আপনি যদি শোয়া থেকে তাড়াতাড়ি উঠেন তাহলে আপনার অচেতনতা বোধ হতে পারে অথবা আপনার মাথা ঝিমঝিম বোধ হতে পারেন।
যদি অচেতন হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে শুয়ে পড়–ন বা বসে পড়–ন এবং দুই পায়ের মাঝে মাথা রাখুন যতক্ষণ না আপনি ভালো অনুভব করেন।
এসময় প্রচুর তরল পান করলে উপকার পাওয়া যায়।গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে উঠানামা করে এবং রক্তে কম শর্করা আপনাকে অচেতন করতে পারে, তাই রক্তে শর্করার পরিমাণ সঠিক রাখতে নিয়মিত খাবার খান।
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ঘনঘন মাথা ঝিমঝিম করা বা অচেতন হওয়া (বিশেষ করে যদি যোনীর রক্তপাত বা পেট ব্যাথা থাকে) মানে জরায়ুর বাইরে গর্ভাবস্থা (একটোপিক গর্ভাবস্থা)। এসব উপসর্গ দেখা দিলে সরাসরি আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় মাথা ঘোরা বা জ্ঞান হারানো অনুভূতি হওয়া
খাবারের প্রতি আসক্তি
মিষ্টি জাতীয় খাবার, ফল বা সিরিয়ালের জন্য হঠাৎ তাড়না এবং অস্বাভাবিক খাবার বা যে ধরনের খাবার আপনি সাধারণত খান না সেগুলোর প্রতি আসক্ত সম্ভবত হরমোনের পরিবর্তনের জন্য হয়। কদাচিৎ এধরনের আসক্ত পূরণ করা যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার ভোজনপ্রণালী স্বাস্থ্যসম্মত ও সুষম হয়।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় পাইকা (Pica) বা অখাদ্য খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা
ঘনঘন প্রস্রাব করা
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ঘনঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজনীয়তা সম্ভবত: হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয়। অপরদিকে, গর্ভাবস্থার শেষ দিকে এটি হয় কারন জরায়ুর ভার মূত্রথলির উপর চাপ প্রয়োগ করে।
যদি আপনি যমজ বাচ্চা ধারণ করে থাকেন তাহলে এটি আরো বেশী সমস্যা করতে পারে। গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে আপনার মূত্রথলি খালি করাকে কঠিন মনে হতে পারে এবং হাঁচি, কাশি বা কিছু তোলার সময় সামান্য প্রস্রাব নিঃসরণ’ হতে পারে।
শ্রোণীতল (পেলভিক ফ্লোর) ব্যায়াম করে এটাকে প্রতিরোধ করতে পারেন। যদি প্রস্রাব করার সময় যন্ত্রণা বা জ্বালাপোড়া হয়, তাহলে আপনার ধাত্রী বা ডাক্তারকে জানান কারণ এটি একটি সংক্রমণের ইঙ্গিত বহন করে।
গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
মাথাব্যাথা
সম্ভবত: প্রথম মাসগুলোতে মাথাব্যাথা হয়ে থাকে। বিশ্রাম ও উদ্বেগমুক্ত থাকা হলো শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা। যেহেতু পানি শূণ্যতার কারণে মাথাব্যাথা হতে পারে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান নিশ্চিত করুন, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায়।
মাথাব্যাথা চোখে চাপ পড়ার লক্ষণ হতে পারে যা চোখের মাংসপেশী শিথিলকরণের জন্য ঘটতে পারে (মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় সকল লিগামেন্ট ও মাংসপেশীতে পরিবর্তন ঘটে থাকে),সুতরাং আপনার জন্য ভালো হবে যদি আপনি চোখের পরীক্ষা করান।
যদি মাথাব্যাথা ঘনঘন এবং তীব্র হয়, তাহলে আপনার ধাত্রী বা ডাক্তারকে বলুন। গর্ভাবস্থার শেষ দিকে, মাথাব্যাথা উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যাথা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
অম্বল/বুকজ্বালা
অম্বল আপনার বুকে জ্বালাপোড়া অনুভূতি তৈরী করে, এর সাথে কখনো কখনো মুখে তিতা স্বাদও থাকে। এটি সম্ভবত: হরমোনের পরিবর্তন এবং পাকস্থলীর উপর বাড়ন্ত জরায়ুর চাপ প্রয়োগের কারণে হয়।
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় অর্ধাংশে এটি হওয়া স্বাভাবিক এবং কিছুক্ষণ বসে থাকা ও সামান্য দুধ পান করা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ নিরাময় – যা পাকস্থলীর অম্লকে নিষ্ক্রিয় করে। অম্ল উপচিয়ে খাদ্যনালীতে (ওসোফেগাস) পরে এবং বুকজ্বালা সৃষ্টি করে।
গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালাপোড়া সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন।
চুলকানি
বাচ্চা বড় হবার সাথে সাথে আপনার পেটের চামড়া আঁটসাট হয় এবং আপনি চুলকানি অনুভব করতে পারেন। আদ্রতাকারী বা ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম সাহায্য করতে পারে।
এই চুলকানি কোলেস্টাসিস নামক বিরল অবস্থার লক্ষণও হতে পারে, যা একটি যকৃতের ব্যাধি। কোলেস্টাসিস জটিলতা তৈরী করতে পারে এবং এটি অকাল জন্মের সাথে যুক্ত, তাই আপনার ধাত্রী বা ডাক্তারকে চুলকানি সম্পর্কে অবহিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় চুলকানি সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন।
প্রাথমিক গর্ভকালীন সকালে অসুস্থতা (মর্নিং সিকনেস)
গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব বা বমি হওয়াকে মর্নিং সিকনেস বলা হয়ে থাকে। একে ভুল নামকরণ বলা যেতে পারে কারণ বমিবমি ভাব শুধু সকালবেলাতে নয় সারাদিনই থাকতে পারে।
কিছু সংখ্যক গর্ভবতী মহিলারা সকাল বেলায় খুব খারাপ অবস্থায় থাকেন এবং দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা কমে আসে। কিন্তু বমি বমি ভাব যে কোন সময় ফিরে আসতে পারে। আর অধিকাংশমহিলাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা দিনভর চলতেই থাকে।
লক্ষণগুলোর তীব্রতা একজন মহিলা থেকে অন্যজনের ভিন্ন হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের চার ভাগের তিন ভাগই তাদের গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব সমস্যায় ভোগেন। যদি আপনার সকালের অসুস্থতা বিশেষ গুরুতর হয়, তাহলে আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে।
মর্নিং সিকনেস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
নাক দিকে রক্ত পড়া
গর্ভাবস্থায় আপনার নাকের ভিতরের চামড়ায় অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহের কারণে নাক দিয়ে রক্ত পরতে পারে। মৃদুভাবে নাক ঝারা এটি নিবারণ করতে সাহায্য করে। যদি আপনার নাক দিয়ে রক্ত পরে তাহলে নাকের হাড়ের উপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করুন। যদি এতে রক্তপড়া বন্ধ না হয়, যতো শীঘ্র সম্ভব ডাক্তারকে দেখান।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় নাক দিয়ে রক্ত পড়া। কারণ ও প্রতিকার
অর্শ্ব (হিমোরয়েডস্)
অর্শ্ব হলো মলদ্বারে স্থায়ীভাবে স্ফীত শিরা (রক্তনালী) যা ব্যাথা, চুলকানি ও অল্প রক্তপাত ঘটায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং/বা বাচ্চার মাথার চাপ প্রয়োগের কারণে হতে পারে। শ্রেষ্ঠ প্রতিকার হলো চাপ দেওয়া পরিহার করা (পায়খানায় বসার সময় উবু হওয়া সাহায্য করতে পারে)।
লালা
আপনি অতিরিক্ত লালা উৎপাদন করতে পারেন (এমনকি ঘুমের সময় মুখ দিয়ে লালা ঝরতে পারে!)।এটি গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক।
চামড়া
গর্ভাবস্থায় কিছু মহিলার প্রথমবারের মত ব্রণ হতে পারে। অথবা, যদি আপনার ইতিমধ্যে ব্রণ থাকে তাহলে এটা স্বাভাবিকের চেয়ে আরো খারাপ হতে পারে। আপনার মুখের চামড়ায় গাঢ় দাগ হতে পারে। এগুলোকে ক্লোয়াসমা বলে এবং বাচ্চার জন্মের পরই এটি মুছে যায়।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও তার প্রতিকার
ঘুমের সমস্যা
গর্ভাবস্থার শেষ দিকে অনিদ্রা একটি সমস্যা হতে পারে। বার বার প্রস্রাব, অম্বল, অথবা আরাম পেতে অসুবিধা আপনার ঘুমকে সহজেই বাধাগ্রস্ত করতে পারে। হয়তো আপনি জন্মদান বা মাতৃত্ব নিয়ে চিন্তিত -যেটাও স্বাভাবিক। কিছু কিছু মহিলা এই সময়ে প্রগাঢ় বিরক্তিকর স্বপ্ন দেখেন – যা সম্ভবত: দুশ্চিন্তার ফলে হয়।
যে বিষয়গুলো সাহায্য করতে পারে:
- ক্যাফেইন পরিহার করা (বিশেষ করে দিনের শেষ ভাগে)
- বিছানায় যাওয়ার আগে উষ্ণ গোসল বা গোসল করা
- বিনোদন সঙ্গীত বা চিত্তবিনোদন কৌশল ঘুমাতে সাহায্য করে
- আপনার পেটের নীচে একটি ও পায়ের নীচে আরেকটি বালিশ রেখে ঘুমানো
- উষ্ণদুধ পান করার সাথে কিছুক্ষণ বই পড়া।
যদি কোন কিছু কাজ না করে এবং আপনি ক্লান্ত বোধ করেন তাহলে ডাক্তার বা ধাত্রীর সাথে দেখা করুন।
গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
প্রসবকালীন তলপেটের সাদা দাগ
প্রত্যেকের এই ধরনের দাগ হয় না – সরু, লাল দাগ যেগুলো সাধারণত পেট, স্তন ও উরুতে দেখা যায় – কিন্তু এগুলো খুব সম্ভবত: আপনার দ্রুত ওজন বৃদ্ধির ফলে হয়। এটি গর্ভাবস্থার পর সম্পূর্ণরূপে চলে যায় না, কিন্তু ক্ষীণ রূপালী-সাদায় বিলীন হয়।
যদিও গবেষণায় দেখা যায় তেল বা মলম দিয়ে মালিশ করে প্রসারণ দাগ প্রতিরোধ করে না, তবে এগুলো আপনার চামড়াকে মসৃণ করতে সাহায্য করে।
স্ট্রেচ মার্কস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
ফোলা গোড়ালি
গর্ভাবস্থায় আপনার গোড়ালি এবং পায়ের পাতা ফোলা স্বাভাবিক হতে পারে। আপনার শরীরের অতিরিক্ত পানির কারণে এটি হয়, যার কিছু অংশ পায়ে জমা হয়।
যদি আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় তাহলে এই পানি আপনার গোড়ালি ও পায়ের পাতাকে ফোলাতে পারে। দিনের শেষ দিকে এই ফোলা খারাপ হতে থাকে এবং রাতে ঘুমানোর সময় সাধারণত কমে যায়। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এটি আরো স্বাভাবিক ব্যাপার।
যদি দিনে শুরুর দিকে ফোলা থাকে এবং রাতে কমে না যায় অথবা শরীরে অন্য অংশে (যেমন হাত, আঙ্গুল এবং মুখ) ফোলা দেখেন তাহলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার ধাত্রী বা ডাক্তারের সাথেও কথা বলা উচিত।
গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা বা ইডেমা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
যোনী স্রাব
গর্ভাবস্থায় সাধারণত স্বাভাবিক সাদা যোনী স্রাব বৃদ্ধি পায়। যদি কোন স্রাবের গন্ধ অপ্রীতিকর, ব্যাথার কারণ হয়, চুলকানি বা জ্বালাতন করে অথবা সবুজাভ বা বাদামী রংয়ের হয় তাহলে আপনার ধাত্রী বা ডাক্তারকে বলুন।
গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন।
স্ফীত শিরা (রক্তের নালী)
যখন গর্ভাবস্থায় জরায়ু বৃদ্ধি পায় এটি কোমরের (পেলভিস) শিরার নালীর উপর চাপ প্রয়োগ করে। এটি পা থেকে শরীরের উপরাংশে রক্তের ফিরে আসাকে বিলম্ব করে। হরমোনের পরিবর্তন শিরার নালীর কপাটিকাকে প্রভাবিত করে, যা পা থেকে রক্তের প্রবাহকে সাহায্য করে এবং সেটি স্ফীত শিরা তৈরীতেও অবদান রাখে।
স্ফীত শিরার পারিবারিক ইতিহাস থাকলে, গর্ভাবস্থায় আপনার এটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যা এগুলো প্রতিরোধে সাহায্য করে তা হল:
- আঁটসাঁট অন্তর্বাস অথবা কোন কিছু যা পায়ের উপরাংশে আঁটসাঁটভাবে লেগে থাকে তা পরিহার করা- এগুলো রক্ত সঞ্চালনে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে
- যখন দীর্ঘক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন এক পা থেকে অন্য পায়ে ঘন ঘন ভর পরিবর্তন করা
- অন্য পায়ের সাহায্য নিয়ে যখন পারেন পায়ের পাতা উপরের দিকে রাখুন
- পায়ের পাতার ব্যায়ামের দ্বারা রক্ত সঞ্চালন ত্বরান্বিত করুন – কিছুক্ষণ পায়ের পাতা গোড়ালির উপর ও নীচে এবং চারদিকে নাড়ান
- সকালে উঠার আগে প্যান্টিহোস ব্যবহার করুন এবং সারাদিন এগুলো পরে থাকুন
- বেদনাদায়ক ফোলা শিরার জন্য বরফ বা ঠান্ডা প্যাক নিরাময় প্রদান করতে পারে।
স্ফীত শিরা যোনীমুখেও হতে পারে (বহি:ভাগের যৌনাঙ্গ), এটিকে বেদনাদায়ক ও ফুলিয়ে তোলে। আপনার ডাক্তার বা ধাত্রীকে বলুন – তারা আপনাকে ফোলা অংশের অবলম্বন হিসাবে স্যানিটারী প্যাড দৃঢ়ভাবে পরার সুপারিশ করতে পারেন। আপনি নিরাময় পাওয়ার জন্য উপরোল্লিখিত সুপারিশ সমূহ চেষ্টা করতে পারেন।
সবার জন্য শুভকামনা।