প্রসব পরবর্তী গর্ভনিরোধ বা জন্মবিরতিকরন

Spread the love

বাচ্চা জন্মের পর আপনার বাচ্চা কে বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থাতেই বা আপনার মাসিক আবার ফিরে আসার আগেই আপনি আবার গর্ভবতী হয়ে পরতে পারেন। তাই দ্রুত বাচ্চা নিতে না চাইলে সহবাসের সময় অবশ্যই জন্ম নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

আপনি হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার আগে আপনার ডাক্তার আপনাকে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দিবেন। আবার আপনি যখন ৬ সপ্তাহ পর চেক আপ এ যাবেন তখনও এই সম্পর্কে ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত আলাপ করে নিবেন।

বিজ্ঞাপণ

আপনি কার্যকর গর্ভনিরোধ ব্যবহার করে একটি অপরিকল্পিত গর্ভধারণ রোধ করতে পারেন। গর্ভনিরোধের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। গর্ভনিরোধের কিছু পদ্ধতি আছে যা সন্তান হওয়ার পর ব্যবহার করা যায়। আপনার জন্য কোন পদ্ধতিটি উপযুক্ত তা  সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়, এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে:

  • প্রতিটি পদ্ধতি কি
  • কিভাবে এটি কাজ করে
  • এটি অপরিকল্পিত গর্ভধারণ প্রতিরোধে কিভাবে নির্ভরযোগ্য
  • আপনি কখন এটির ব্যবহার শুরু করতে পারেন
  • সুবিধা এবং অসুবিধা
  • বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর (ব্রেষ্টফিডিং) সময়কালে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে কিনা?

ব্রেষ্টফিডিং করানোর সময়কালীন যে গর্ভনিরোধ পদ্ধতি ব্যাবহার করা যেতে পারে  

ব্রেষ্টফিডিং গর্ভনিরোধের একটি পদ্ধতি হতে পারে। আপনি যদি গর্ভনিরোধের জন্য ব্রেষ্টফিডিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনার ডাক্তার বা নার্সের সাথে কথা বলুন। ব্রেষ্টফিডিং গর্ভনিরোধ প্রতিরোধে ৯৮% কার্যকরী, কিন্তু শুধুমাত্র যদি:

  • আপনার সন্তান জন্মানোর পর থেকে আপনার কোন মাসিক না হয়
  • আপনার শিশুর বয়স ছয় মাসের কম থাকে
  • আপনি শুধুমাত্র ব্রেষ্টফিডিং করাচ্ছেন। এর মানে হলো আপনার শিশু অন্য কোন খাদ্য বা পানীয় খাচ্ছে না।

আপনি যদি গর্ভবতী হতে না চান, আপনাকে অন্য পদ্ধতির গর্ভনিরোধ ব্যবহার করতে হবে যখন:

  • আপনার মাসিক ফিরে আসে
  • আপনি আপনার শিশুকে অন্য খাদ্য বা পানীয় দিতে শুরু করেন।

ব্রেষ্টফিডিং করানো কালীন নিম্নোক্ত পদ্ধতিসমূহ নিরাপদে ব্যবহার করা যেতে পারে:

গর্ভনিরোধ স্থাপন /প্রবেশ করানো

আপনার শিশু জন্ম নেয়ার সাথে সাথে গর্ভনিরোধ প্রবেশ করানো যেতে পারে। গর্ভধারণ প্রতিরোধে গর্ভনিরোধ স্থাপন ৯৯.৯% এর অধিক কার্যকরী। Contraceptive implant- হচ্ছে একটি ছোট flexible plastic tube,৪০mm এর মতো লম্বা হয় যা আপনার বাহুর উপরের দিকে চামড়ার নিচে লাগিয়ে দেয়া হয়। এতে progesterone hormone থাকে।

এটি ৩ বছর পর্যন্ত কার্যকর এবং বাচ্চা জন্মের ২১ দিন পর থেকেই এটি লাগিয়ে দেয়া যেতে পারে।তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আগেও দেয়া যেতে পারে।যদি ২১ দিনের পর ইমপ্ল্যান্ট লাগানো হয় তাহলে পরবর্তী সাত দিন কনডম ব্যবহার করতে হবে। এটি আপনার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোন রকম বাধা সৃষ্টি করবেনা।

Intra uterine যন্ত্রসমূহ

IUCD(Intra uterine copper device)- একটি T shaped copper device যেটি আপনার জরায়ুতে লাগিয়ে দেয়া হয়। এটি বাচ্চা জন্মের ৪ সপ্তাহ পর থেকেই লাগানো সম্ভব। এটি তাৎক্ষনিকভাবে কার্যকর এবং বাচ্চা জন্মের পরকালিন চেক আপ এই আপনি এটি লাগিয়ে নিতে পারবেন। এটি আপনার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোন রকম বাধা সৃষ্টি করবেনা।

এগুলো দ্রুত কাজ শুরু করে এবং গর্ভপ্রতিরোধে ৯৯.২ থেকে ৯৯.৮% ভাগ কার্যকরী। আপনার যদি সমস্যা হয় অথবা আপনি যদি আরেকটি সন্তান  নিতে চান তাহলে সাধারণত উভয় পদ্ধতিই ডাক্তার দ্বারা সহজেই সরানো যায়।

গর্ভনিরোধক ইনজেকশন

গর্ভনিরোধক ইনজেকশন শিশু জন্ম নেয়ার পর অবিলম্বে শুরু করা যেতে পারে। শুধুমাত্র খুবই অল্প পরিমান ব্রেষ্টফিডিং করানোর সময় আপনার শিশুর কাছে যায় এবং আপনার দুধ উৎপাদনে এর কোন প্রভাব পরে না। গর্ভধারণ প্রতিরোধে গর্ভনিরোধক ইনজেকশন ৯৪% থেকে ৯৯.৮% এর মধ্যে কার্যকরী।

ছোট বড়ি বা মিনিপিল

শুধুমাত্র প্রজেস্টোরেন দিয়ে যে জন্মবিরতিকরন খাবার বড়ি বা পিল তৈরি হয় তাই মিনিপিল । আপনার সন্তান হবার পর পরই ছোট বড়ি শুরু করা যেতে পারে। গর্ভধারণ প্রতিরোধে ছোট বড়ি ৯১% থেকে ৯৯.৭% এর মধ্যে কার্যকরী।

ব্রেস্ট ফিডিং এর সময় Combined Oral Contraceptive Pill (COCP) গ্রহণ না করে Progesterone Only Pill (POP) গ্রহণ করার পরামর্শ  দেয়া হয়। এই পিল বুকের দুধ কমিয়ে দেয়না।

এই পিল বাচ্চা জন্মের ২১ দিন পর থেকে খাওয়া শুরু করতে হবে। এই পিল প্রতিদিন একই সময় খেতে হবে। যদি ২১ দিনের পর পিল খাওয়া শুরু করেন তাহলে প্রথম দুই দিন আপনি সম্পূর্ণ ভাবে নিরাপদ থাকবেন না এবং তখন প্রথম দুই দিন আপনাকে কনডম ব্যবহার করতে হবে।

এই পিল বাচ্চার কোন ক্ষতি করেনা। তবুও অনেক মহিলারাই বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় পিল ছারা অন্যন্য গর্ভনিরোধ ব্যবস্থা ব্যবহার করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

কনডম

সন্তান প্রসবের পর আপনি আবার যৌনসঙ্গম শুরু করার সাথে সাথে ছেলে বা মেয়েদের কনডম ব্যবহার শুরু করতে পারেন। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং যৌন সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ  করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল কনডম ব্যবহার করা। এটি ল্যাটেক্স রাবার অথবা প্লাস্টিক ( পলিইউরিন) দিয়ে তৈরি জন্মনিয়ন্ত্রক।এটি সহবাসের সময় শুধু পরিধান করলেই হয়।

এর তেমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও নেই।  বাচ্চা জন্মের পর কনডম ব্যবহার করাটা সবচাইতে সহজ গর্ভনিরোধ ব্যবস্থা। যদি আপনার মনে হয় যে আপনার বা আপনার সঙ্গীর কোন যৌন বাহিত রোগ থেকে থাকতে পারে তাহলে এই সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করবেন। এটি গর্ভধারণ প্রতিরোধে ৭৯% থেকে ৮২% ভাগ কার্যকরী।

বিজ্ঞাপণ

মধ্যচ্ছদা (ডায়াফ্রাম)

আপনার শিশু জন্ম নেয়ার ছয় সপ্তাহ পরে মধ্যচ্ছদা বা ক্যাপ পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি যদি আগে ক্যাপ ব্যবহার করে থাকেন, এখন হয়তো সেই সাইজ ঠিক হবেনা। তাই আপনার ডাক্তার এর সাথে চেক আপ এর সময় নতুন ক্যাপ লাগাতে হতে পারে। এটি গর্ভধারণ প্রতিরোধে ৮৮% থেকে ৯৬% এর মধ্যে কার্যকরী।

প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনা

আপনার মাসিক চলাকালীন শারীরিক যে পরিবর্তনগুলো হয় সেগুলোকে ব্যাবহার করে প্রাকৃতিকভাবে পরিবার পরিকল্পনার ব্যাবস্থা নেয়ে যেতে পারে। গর্ভবতী হওয়ার সুযোগ কমাতে, আপনাকে জানতে হবে কখন যৌনসঙ্গম এড়াতে হবে।

এটি ৯৯% কার্যকর হতে পারে, কিন্তু কমে গিয়ে ৭৬% পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে এবং তা নির্ভর করে আপনি এটাকে কিভাবে ব্যবহার করছেন এবং কোন পদ্ধতি পছন্দ করছেন।

একজন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞ একই সময়ে একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে বলতে পারেন। ব্রেষ্টফিডিং করানোর সময় প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনার ব্যবহার কঠিন হতে পারে।

নির্বীজিতকরণ

নির্বীজিতকরণ হলো গর্ভনিরোধকরণের একটি স্থায়ী অস্ত্রোপচার পদ্ধতি যা গর্ভধারণ প্রতিরোধে ৯৯% এর অধিক কার্যকরী। মহিলারা একটি Tubal বন্ধ্যাকরণ অথবা Tubal অবরোধ পদ্ধতি পছন্দ করতে পারেন। পুরুষরা Vasectomy করতে পারেন।

আপনার সন্তান হওয়ার অন্ততপক্ষে তিন মাস পর  এ  পদ্ধতি করলে সবচেয়ে ভাল হয়।যাহোক, এটি প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে আপনি আরেকটু সময় অপেক্ষা করুন।ছোট শিশুর দেখাশুনা করতে চাপ সহ্য করতে হতে পারে এবং এতে করে একটি স্থায়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এই সময়টি সর্বোত্তম নাও হতে পারে।

জরুরী গর্ভনিরোধ

আপনি যদি অরক্ষিত যৌনসঙ্গম করে থাকেন এবং গর্ভবতী হতে না চান সেক্ষেত্রে আপনার জরুরী গর্ভনিরোধ ব্যবহার করা উচিত। ব্রেষ্টফিডিং করানো কালীন জরুরী গর্ভনিরোধ ব্যবহার করা নিরাপদ ,খুবই অল্প পরিমাণ আপনার বুকের দুধে প্রবেশ করে।

অরক্ষিত যৌনসঙ্গম করার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার জরুরী গর্ভনিরোধ ব্যবহার করা উচিত এবং অবশ্যই ১২০ ঘন্টার মধ্যে (পাঁচ দিনের মধ্যে)। জরুরী গর্ভনিরোধ গর্ভধারণ প্রতিরোধে ৮৫% পর্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। আপনি কত তাড়াতাড়ি গর্ভনিরোধ ব্যবস্থা নেন, তার উপর এর কার্যকারীতা নির্ভর করে।

ব্রেষ্টফিডিং-এর শুরুর দিকে যে উপায়গুলোর পরামর্শ দেয়া হয় না

আপনার শিশুর বয়স ছয় মাস না হওয়া পর্যন্ত নিম্নলিখিত গর্ভনিরোধ পদ্ধতি সমূহের পরামর্শ দেয়া হয় না। এই পদ্ধতিতে এস্ট্রোজেন (হরমোন) থাকে। আপনার শিশু যদি অন্ততপক্ষে ছয় সপ্তাহ বয়সী হয় এবং বাড়তি খাবার খাওয়ানো শুরু করেন তাহলে এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করার জন্য বিবেচনা করতে পারেন।

একত্রিতত বড়ি বা মিশ্র খাবার বড়ি

আপনি যদি বাচ্চা কে বুকের দুধ না খাওয়ান তাহলে আপনি বাচ্চা জন্মের ২১ দিন পর থেকে COCP(combined oral contraceptive pill) খাওয়া শুরু করে দিতে পারেন।

তবে আপনি যদি ২১ দিনের পর খাওয়া শুরু করেন তাহলে প্রথম সাত দিন আপনি সম্পূর্ণ ভাবে নিরাপদ থাকবেন না এবং তখন প্রথম সাত দিন আপনাকে কনডম ব্যবহার করতে হবে। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে এই পিল ব্যবহার করবেন না কেনন এই পিল বুকের দুধ কমিয়ে দেয়।

যোনি রিং

এটি এমনই একটি গর্ভ নিরোধক ব্যবস্থা যেটি গর্ভ নিরোধে সাধারণ পিলের মতই ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কন্ট্রাসেপটিভ রিং বা গর্ভনিরোধক এই রিংটি যোনিতে এক ধরনের প্লাস্টিকের প্রাচীর তৈরি করে যা গর্ভাশয়ে শুক্রাণু প্রবেশে বাঁধা প্রদান করে থাকে। নোভা রিংয়ের মত দেখতে এই রিংটি মাসে একটি করে ব্যবহার করতে হয়।

হালকা চেপে ধরে হাত দিয়েই যোনিতে প্রবেশ করানো যায় এই রিংটি। পিরিয়ডের আগে পর্যন্ত ২১ দিন পর্যন্ত এই গর্ভনিরোধক রিংটি ব্যবহার করা যায়। প্রতি মাসে এই রিংটি ব্যবহারের ফলে যোনি থেকে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টিন নামক হরমোন সঠিক পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে থাকে।

পিরিয়ডের আগে এই রিংটি যোনি থেকে বের করে ফেলতে হয় এবং পিরিয়ড পরবর্তী সময়ে নতুন আরেকটি রিং ব্যবহার করতে হয়। এই পদ্ধতিও বুকের দুধ কমিয়ে দিতে পারে।

আপনি ব্রেষ্টফিডিং না করালে আপনার জন্য বিকল্প উপায়সমূহ

আপনি যদি ব্রেষ্টফিডিং না করান, তাহলে আপনি যে কোন ধরনের গর্ভনিরোধ পছন্দ করতে পারেন। আপনার শিশু জন্মের তিন থেকে ছয় সপ্তাহ পর আপনি বড়ি বা যোনি রিং শুরু করতে পারেন।

গর্ভনিরোধক ইনজেকশন আপনার শিশু জন্মানোর পর সরাসরি শুরু করতে পারেন। অন্যান্য সব পদ্ধতির জন্য ব্রেষ্টফিডিং এবং ব্রেষ্টফিডিং ব্যতীত মহিলাদের জন্য শুরুর সময় একই। এরপরও গর্ভনিরোধ সম্পর্কে আপনার ডাক্তার বা নার্সের সাথে কথা বলা উচিত।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment