গর্ভাবস্থায় ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও তার প্রতিকার

Spread the love

প্রথমেই বলা প্রয়োজন গর্ভাবস্থা কিন্তু কোনো রোগ নয়। এটি একটি বিশেষ সময়ের শারীরিক অবস্থা। গর্ভাবস্থায় শরীরের স্বাভাবিক সব প্রক্রিয়ার একটি বিরাট পরিবর্তন ঘটে। যার প্রভাবে ত্বকেও অনেক ধরনের পরিবর্তন এবং নানা ধরনের চর্মরোগ সৃষ্টি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় খাবারের চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি থাকে, তাই সেই অনুপাতে খাওয়া-দাওয়া না করলে মায়ের ত্বকে হতে পারে বিশেষ কোনো খাদ্য উপাদানের ঘাটতিজনিত রোগ অর্থাৎ অপুষ্টিজনিত কারণেও এ সময় বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।

বিজ্ঞাপণ

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায়ও এ সময় পরিবর্তন হয়। ফলে বিভিন্ন জীবাণু (যেমন-ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ইত্যাদি) সংক্রমণের দ্বারাও ত্বকে অনেক চর্মরোগ হতে পারে। এছাড়া বেশকিছু চর্মরোগ এ সময় হয়ে থাকে, যার প্রকৃত কারণ এখনো অজানা। আর এ ধরনের কিছু নির্দিষ্ট চর্মরোগ রয়েছে, যা কেবল গর্ভাবস্থায়ই হয় এবং সরাসরি গর্ভাবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট।

উল্লেখ্য যে, গর্ভাবস্থার আগে থেকেই যদি কারো কোনো চর্মরোগ থেকে থাকে, গর্ভাবস্থায় তার অবস্থা বিভিন্নজনের বেলায় বিভিন্ন রকম হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে কোনো কোনো চর্মরোগ গর্ভাবস্থায় আরো বেড়ে যায়, আবার কারো বেলায় উল্টো, অর্থাৎ কমে যায়। হরমোনসহ শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উপাদানের তারতম্যের কারণেও অনেক উপসর্গ এ সময় দেখা দিতে পারে

আজকের আর্টিকেল সাজানো হয়েছে গর্ভবতী ও প্রসূতি মা’দের সাধারন ত্বকের সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে।

ত্বকের ফাটা দাগ বা স্ট্রেচ মার্ক

৯০ শতাংশ মহিলার দেখা যায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত ফাটা দাগ, যেহেতু বাড়তি ওজনের বিষয়টি আছে, মা ও সন্তানের ওজন বৃদ্ধির সাথে ত্বক টান টান হতে থাকে আর ড্যামেজ হয় কোলাজেন, ইলাস্টিন। তাই গর্ভকালীন সময়ের শেষের দিকে অথবা সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর স্ট্রেচমার্ক গুলো সৌন্দর্যহানীকর হয়।

গর্ভাবস্থায় পেটের চামড়ায়, উরুর উপরের অংশে এবং স্তনে এক ধরনের ফাটা ফাটা দাগ দেখা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলা হয় স্ট্রায়া (striae)। এই অগভীর দাগ গুলো দেখতে গোলাপী বা রক্তবর্ণের। ঐ সমস্থ স্থানের চামড়া অতিরিক্ত টান টান হয়ে পড়ার কারণে এমনটা তৈরি হয়। ফাটা দাগ দেখা দেয়ার আগে প্রাথমিক লক্ষণ হিসাবে ঐ স্থানগুলোতে চুলকানী দেখা দেয়।

শতকরা ৮০ ভাগ গর্ভবতী মেয়েদের মধ্যে এই ধরনের ফাটা দাগ দেখা যায়। আপনার ত্বকের ধরনের উপর নির্ভর করছে, আপনার শরীরে এই ধরনের ফাটা দাগ হবে কি হবে না। যাদের ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা (elasticity) বেশি তাদের এই ধরনের দাগ হওয়ার সম্ভবনা কম। আপনার শিশুর জন্মের পর এই দাগ গুলো ধীরে ধীরে কমে যাবে, তবে একেবারে মিলিয়ে যাবে না, কিছু চিহ্ন থেকে যাবে।

ত্বকের এই ফাটা দাগ শরীরের জন্য ক্ষতিকর না। শুধুমাত্র দেখতে খারাপ লাগা ছাড়া আর কোন সমস্যা নাই। সুতরাং এই নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারন নাই। শিশুর জন্মের পর এগুলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়, কিছুটা সাদা দাগ থেকে যায়। কিছু কিছু ক্রীম দাবী করে, দাগ দেখা যাওয়ার পর এই ক্রীম লাগালে সেটা মিলিয়ে যায় বা কমে যায়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এর কোন প্রমান পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় স্ট্রেচ মার্কস বা ফাটা দাগ । কারণ ও প্রতিকার

ত্বকের পিগমেন্টেশন

এ সময় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে মেলানিন প্রোডাকশন বেড়ে যায়। ত্বকে সৃষ্টি হয় নানা ধরনের পিগমেন্টরি ডিজঅর্ডার। হঠাৎ করে মুখে, গলায় কালো বা বাদামী যে ছোপ দেখা দেয় এর একটি নাম আছে “মাস্ক অফ প্রেগন্যান্সি”।মাস্ক অফ প্রেগনেন্সিকে ক্লোয়েজমা বা মেলাজমা ও বলে যা গর্ভাবস্থায় হতে দেখা যায়।

ওরাল কন্ট্রাসেপ্টিভ গ্রহণ করেন যারা তাদের ক্ষেত্রে এটি হতে দেখা যায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের জন্মের ২/৩ মাসের মধ্যে এ দাগ গুলো চলে যায়। কিছু ক্ষেত্রে এটি থেকে যেতে পারে। তখন ব্লিচিং ক্রিম বা কেমিক্যাল পিল গ্রহণের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।

ক্লোয়েজমা প্রতিরোধের জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন বা রোদে বের হলে ত্বককে রোদ থেকে রক্ষা করতে ক্যাপ জাতীয় কিছু ব্যাবহার করতে পারেন।

ত্বকের ব্রন বা র‍্যাশ

গর্ভবতী নারীদের ত্বকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ব্রণের অবস্থা খারাপ হওয়া। মুখে, বুকে বা পিঠে ব্রণ এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। হরমোনের ওঠানামার কারণেই ব্রণের উপর প্রভাব পরে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় পুরুষ সেক্স হরমোন এন্ড্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা তৈল গ্রন্থির উপর প্রভাব ফেলে। ফলে তৈল গ্রন্থি প্রচুর তেল (সিবাম) উৎপন্ন করে। তৈল গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে ব্ল্যাক হেডস হয়। আতংকিত হবেন না কারণ প্রসবের পরে এদের বেশীরভাগই চলে যায়।

ক্লিঞ্জার দিয়ে প্রতিদিন ত্বক পরিষ্কার করলে এর প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনা যায়।

গর্ভাবস্থায় প্রুরিটিক আরটিকেরিয়াল প্যাপুলি এন্ড প্লাক্স অফ প্রেগনেন্সি(PUPPP) এর সমস্যাটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। PUPPP সমস্যাটির ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীর উদরে ছোট ছোট লাল ফোলা দেখা যায়। এই র‍্যাশগুলো আস্তে আস্তে উরু, নিতম্ব, বুক এবং বাহুতে ছড়িয়ে পরে। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে চুলকানি বৃদ্ধি পায়। চুলকানি রোধী ঔষধ, অ্যান্টিহিস্টামিন, টপিকেল স্টেরয়েড ব্যবহার করে চুলকানি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

চুল

অনেক ক্ষেত্রেই গর্ভবতীর মুখে সামান্য পরিমাণ বা তার চেয়ে কিছু বেশি পরিমাণে অবাঞ্ছিত লোম গজাতে দেখা যায়, যা সাধারণত প্রসবের পর কমে যায়। তবে জটিল গর্ভাবস্থার সৃষ্টি হলে কিংবা অপারেশনের মাধ্যমে প্রসব করিয়ে থাকলে যদি অস্বাভাবিক রকমের শারীরিক বা মানসিক চাপ হতে দেখা যায় তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রসবের ১ থেকে ৫ মাসের মধ্যে বেশি চুল পড়ে গেলেও প্রায় সব ক্ষেত্রেই পুনরায় তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুল পড়া এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন প্রেগন্যান্ট এবং ল্যাকটেটিং মা’রা। খাদ্যে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলের ঘাটতি, নিজের প্রতি উদাসীনতা এ সব কিছু চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ভেরিকোস ভেইন

ভেরিকোস ভেইন হোল অস্বাভাবিকভাবে স্ফীত হয়ে যাওয়া শিরা যা চামড়ার উপর দিয়ে দেখা যায়। নীল বা বেগুনি রঙের আঁকাবাঁকা শিরাগুল সাধারণত পায়ে দেখা যায়। তবে গর্ভাবস্থায়  ভেরিকোস ভেইন নিতম্বে বা ভ্যাজিনাল এরিয়াতেও দেখা যেতে পারে। অর্শরোগ বা Hemorrhoids একধরনের ভেরিকোস ভেইন যা গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে হয়ে থাকে।

অনেকেরই গর্ভাবস্থায় প্রথমবারের মত ভেরিকোস ভেইন দেখা দিতে পারে। ভেরিকোস ভেইনের ফলে কোন ব্যাথা অনুভূত নাও হতে পারে আবার হাল্কা বা বেশী ব্যথাও হতে পারে আবার পা ভারী লাগতে পারে। ভেরিকোস ভেইনের আশেপাশে চুলকানি বা জ্বলুনি হতে পারে বা স্পন্দিত হতে পারে। এসব সমস্যা রাতের দিকে বেড়ে যেতে পারে বিশেষ করে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলে।

যদি পরিবারের অন্য কারও ভেরিকোস ভেইন এর ইতিহাস থাকে তাহলে এর ঝুঁকি বেশী থাকে। ভেরিকোস ভেইন একবার হলে তা পরের বারের গর্ভধারণে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে। ওজন বেশী হলে, গর্ভে যমজ সন্তান থাকলে বা অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলেও এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।সুসংবাদ হোল ভেরিকোস ভেইন বাচ্চা জন্মের পর ভালো হয়ে যায় যদি গর্ভধারণের আগে থেকেই তা থেকে না থাকে।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- গর্ভাবস্থায় ভেরিকোস ভেইন বা স্ফীত শিরা

বিজ্ঞাপণ

স্পাইডার ভেইন

মাঝে মাঝে চামড়াতে বিশেষ করে পায়ের গোড়ালি, পায়ে বা মুখে হালকা ফোলা শিরা দেখা যায়। এগুলোকে স্পাইডার ভেইন বলে কারণ সেগুলো দেখতে অনেকটা মাকড়শার মত থাকে। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছুই উৎপন্ন এবং উচ্চমাত্রায় রক্ত প্রবাহিত হয়। ত্বকের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহিত হওয়ার কারণেই তখন তার মধ্যে গোলাপি আভা দেখা যায়, কিন্তু এই অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহের কারণে রক্তনালীতে ভাঙ্গন দেখা যায় যাকে স্পাইডার ভেইন বলে।

কিছু গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে মুখ, বুক, হাত বা পেটেও দেখা যায় স্পাইডার ভেইন। স্পাইডার ভেইনের কারণে কোন ব্যাথা হয়না এবং এগুলো সাধারণত ডেলিভারির পর ঠিক হয়ে যায়, যদি না হয় তাহলে লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে কার্যকরীভাবে দূর করা যায়।

গর্ভাবস্থায় চুলকানি

গর্ভাবস্থায় হালকা চুলকানি হওয়া নিয়ে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই চিন্তার কিছু নেই। এটা খুবই স্বাভাবিক। প্রায় ২০ ভাগ গর্ভবতী মহিলার চুলকানির সমস্যা থাকে। এ সময় মায়েদের পেট এবং স্তনের আশেপাশে চুলকানি বেশী হতে পারে, কারণ দুটো স্থানের চামড়াই এ সময় প্রসারিত হয়। শুষ্ক ত্বক ও হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও এ সময় চুলকানি দেখা দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় চুলকানির কারন এখন পর্যন্ত কেউ তেমনভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। তবে ধারনা করা হয় যে এটির কারণ হতে পারে ত্বকে  রক্ত সরবরাহের বৃদ্ধি এবং গর্ভকালীন কিছু হরমোন। এই হরমোন শরীরে কিছু রক্তে, স্নায়ুতে ও চামড়ার নিচে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যার ফলে চুলকানির সৃষ্টি হয়। মায়ের শরীরে তখন অস্বস্তির সৃষ্টি হয়।

ত্বকের কিছু সাধারন সমস্যা, যেমন – একজিমার কারণেও চুলকানি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় প্রথমবারের মত মায়ের ত্বকে একজিমা দেখা দিতে পারে বা অনেক আগের একজিমার সমস্যা আবার ফিরে আসতে পারে। যদি মায়ের একজিমা থাকে তবে গর্ভাবস্থায় এর অবনতি হতে পারে। একজিমার কারণে সাধারনত মুখ, গলা ও বুকের ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছারাও ত্বকের ভাজে, যেমন হাঁটু ও কনুইয়ের ভাজেও একজিমা হতে পারে। তবে কিছু কিছু মায়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় গর্ভাবস্থায় একজিমার উপসর্গ ভালো হয়ে যায়।

তবে মনে রাখতে হবে, যদি চুলকানির সাথে সাতে র‍্যাশ দেখা যায়, হাতের ও পায়ের তালুতে অনেক বেশী চুলকানি হয় তবে দ্রুত তা ডাক্তারকে জানাতে হবে কারণ এগুলো মারাত্মক কোন সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানুন- গর্ভাবস্থায় চুলকানি । কারণ ও প্রতিকার

লিনিয়া নিগ্রা

নাভি থেকে তলপেটের নীচ পর্যন্ত লিনিয়া নিগ্রা (Linea Nigra) নামক হাল্কা একটা রেখা দেখা দিবে। প্রতি ৪ জন গর্ভবতী মায়ের মধ্যে ৩ জনে এ দাগ দেখা যায়। এই দাগটি সবারই থাকে তবে গর্ভাবস্থায় এটি গাড় হয়ে যায় বলে বেশী বোঝা যায়। গর্ভাবস্থার ৪ বা ৫ মাসের দিকে এই দাগ দেখা যায়। এটি প্রতিরোধের কোন উপায় নেই। তবে প্রসবের পর এটি মিলিয়ে যায়।

নখ

গর্ভাবস্থায় নখের পরিবর্তন হতে পারে। নখ ভেঙ্গে যাওয়া বা রুক্ষ হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু কেন এমন হয় তা জানা যায়নি।

গর্ভাবস্থায় ত্বকের যত্ন

মা হওয়া যতটা আনন্দের ততোটাই আশঙ্কার। এই অবস্থায় অনেকেই অনাগত সন্তানের প্রতি এতটাই দুর্বল থাকেন যে, নিজের শরীরের যত্ন নিতেই ভুলে যান। কিন্তু এই সময় থাকতে হবে সদা প্রফুল্ল। তাই রুপচর্চার বিকল্প নেই। বিশেষ করে যারা চাকরি করেন বা বিশেষ কোন পেশার সাথে যুক্ত আছেন তাদের এই সময় রূপচর্চাকে মোটেও হেলাফেলা করা যাবে না।

যেভাবে ত্বকের যত্ন নেবেন

গর্ভাবস্থায় রিলাক্স করার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সময় বের করে নিন। এতে আপনার রূপ ও লাবণ্য দুটোই বাড়বে।

নাক দিয়ে খুব গভীরভাবে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং মনে মনে চার পর্যন্ত গুণুন। এটা ১০ মিনিট করুন। আপনার মর্নিং সিকনেস কাটিয়ে উঠতেও এটি সাহায্য করবে।

চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে সোজা হয়ে বসুন। কোন কথা বা কোন স্মৃতি যদি অবচেতন মনে আপনাকে প্রশান্তি দেয় তবে সেটি ভাবুন। এবার আস্তে আস্তে পা থেকে শুরু করে পেট, পিঠ, ঘাড়, গলা ও মুখের মাসলগুলো শিথিল করে ছেড়ে দিন। শুধু নাক দিয়ে নিশ্বাস নিন আর ছাড়ুন। এভাবে প্রতিদিন ৫-৭ মিনিট করুন।

বিজ্ঞাপণ

গর্ভাবস্থায় মায়েদের পেটে চামড়ায় টান পড়ার ফলে দাগ বা স্ট্রেচ মার্কের সৃষ্টি হয়। এই দাগ সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়না, তবে সন্তান জন্মের পর আস্তে আস্তে দাগগুলো ফেড হয়ে যায়। তবে ২০ সপ্তাহের পর থেকে গোসলের আগে ও রাতে শুতে যাবার সময় ভিটামিন ই যুক্ত যে কোন ক্রিম হালকা করে তলপেটে ম্যাসাজ করুন। এতে জায়গাগুলোতে চুলকাবে না।

গর্ভবস্থায় আরেকটি সমস্যা হল পিগমেন্টেশন। যার ফলে গালে আর কপালে এক ধরনের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। এই দাগ শিশু জন্মের পরেই চলে যায়। তবে এ জন্য কোন ব্লিচ ব্যবহার না করাই ভালো।

এ সময় চড়া মেকাপ এড়িয়ে চলাই ভালো। এছাড়া উঁচু হিল একেবারে এড়িয়ে চলুন। দিনের বেলায় বের হওয়ার সময় হালকা কমপ্যাক্ট বা ফেস পাউডার বুলিয়ে নিন। কন্সিলার দিয়ে দাগ ছোপ ঢেকে নিন। অবশ্যই সান প্রোটেক্ট সানস্ক্রিম লাগিয়ে বের হবেন। অনুষ্ঠানে গেলে হালকা মেকাপ করুন। লাল, কমলা, মেরুন এর বদলে গোলাপি শেডের লিপস্টিক ব্যবহার করুন। এই সময় স্বাভাবিক সৌন্দর্যটাই ফুটে উঠতে দিন।

গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রভাবে চুলের বৃদ্ধি অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি হয়। তাই ২ মাস অন্তর চুলে ট্রিম করিয়ে নিন। একদিন পর পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন ও সপ্তাহে অন্তত ১দিন কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। গোসলের পর বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কারলার, রোলার, আয়রন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

এই সময় শরীর ও ত্বকের ময়েশ্চার এর ঘাটতি হয়। প্রতিদিন গোসলের পর ও রাতে ঘুমাতে যাবার আগে অবশ্রই মুখে, হাতে, পায়ে ও পেটে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে তারপর ঘুমাবেন। শুরু থেকেই এটি করলে ত্বকের কালচে ভাব অনেকটাই কমে যাবে।

ফ্রুট ফেসিয়ালের জন্য মাসে অন্তত একবার পার্লারে যেতে পারেন। তবে সেখানে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ফেসিয়াল করার সময় ঝুকে কখনও স্টিম নেবেন না। হট টাওয়েল দিয়ে স্টিম নেবেন। ক্লান্তি দূর করার জন্য হাত-পা মাসাজ করাতে পারেন।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment