শিশুর কান্নার ৭ টি কারণ এবং কিভাবে তাদের শান্ত করবেন

Spread the love

আমরা জানি শিশুরা স্বভাবতই মাতৃনির্ভরশীল হয়। মায়ের কোল শিশুদের কাছে এক পরম সুখের স্থান। একজন মাই ভালো জানেন কখন তার বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে, কখন তাকে গোসল করাতে হবে এমন কি তার কোন ধরণের অসুবিধা হচ্ছে কি না। শিশু কান্না করলে মা খুব সহজেই বুঝে যায় যে বাচ্চার হয়ত খাবারের প্রয়োজন, অথবা তার কোন অসুবিধা হচ্ছে।

অনেক সময় নবজাতক কান্না করলেও ঠিক কি কারণে কান্না করছে তা বোঝা কঠিন হয়ে যায়। তবে বাচ্চার বয়স বাড়ার সাথে সে নানা ধরণের আচরণের মাধ্যমে তার অসুবিধা গুলোর প্রকাশ করা শিখে যায়। যেমন- চোখের ইশারাতে, হাত পা ছড়ানোর মাধ্যমে, হাসির মাধ্যমে।

বিজ্ঞাপণ

তাই এই আর্টিকেলে বাচ্চা কান্না করতে পারে এমন ৭ টি কারণ উল্লেখ করে কিভাবে আপনি তাকে শান্ত রাখতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা করবো।

বাচ্চা ক্ষুধার্ত হলে

বাচ্চারা কান্না করার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ‘ক্ষুধা লাগা’, বিশেষ করে নবজাতকের ক্ষেত্রে। বাচ্চার বয়স যত কম থাকে তার কান্নার কারণ “ক্ষুধা” হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশী থাকে।

শিশুদের পাকস্থলী অনেক ছোট হয়। যার কারণে অল্প খাবারেই তাঁদের পেট ভরে যায় ও তা খুব জলদিই পরিপাক হয়ে যায়। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আবার ক্ষুধার্ত হয়ে যাওয়ায় বাচ্চা  কান্না করতে থাকে।

আপনার বাচ্চা যদি এখনো বুকের দুধ খায় তাহলে তাকে ঘন ঘন দুধ দিতে হবে। প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর সময় বাচ্চার পেট ভরে গেলে বাচ্চা নিজের থেকেই স্তন থেকে মুখ সরিয়ে নিবে এবং তাকে শান্ত ও সন্তুষ্ট দেখাবে।

আবার আপনার বাচ্চাকে যদি ফর্মুলা দেওয়া হয় তাহলে সে হয়তো শেষবার খাওয়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে আবার খেতে চাইবেনা। তবে সব বাচ্চার ক্ষেত্রে খাওয়ার সময়সীমা একই নাও হতে পারে। অনেক সময় বাচ্চা একবারে যথেষ্ট পরিমাণে খেতে চায়না, সেক্ষেত্রে তাকে অল্প অল্প করে ঘন ঘন খাওয়াতে হবে।

মনে রাখতে হবে ক্ষুধার কারণে বাচ্চার কান্না শুরু হলে তা হয়তো দুধ দেয়ার সাথে সাথে থেমে যাবেনা। এজন্য ধৈর্য ধরুন এবং সে যদি খেতে চায় তাকে খেতে দিন। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া হলে একসময় সে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।

পেটে ব্যাথা করলে বা কলিক থাকলে

বাচ্চার অন্য কোন শারীরিক সমস্যা না থাকার পড়েও খুব বেশি কান্না করলে বুঝে নিতে পারেন বাচ্চা কলিক। এমন হলে বাচ্চাকে খুব অসন্তুষ্ট লাগে এবং তাকে শান্ত করার সব চেষ্টা বৃথা যায়। ব্যাথার কারণে সে অনেক সময় হাত পা ছুড়তে থাকে, পিঠ ধনুকাকৃতি করে বাঁকিয়ে ফেলে, এমন কি তাকে কোলে নিয়েও শান্ত করা যায়না।

এই ধরণের ব্যাথার সঠিক কারণ বের করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। এটা অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রেই এতোটা বেশী হয় যে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এ সব তার স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠারই একটা ধাপ।

আবার অনেক অভিজ্ঞরাই মনে করেন এটা পাকস্থলীর কোন সমস্যা হতে পারে। যেমন- বাচ্চার অ্যালার্জি বা বুকের দুধের বা ফর্মুলার কোন উপাদান তার সহ্য না হওয়া ইত্যাদি। আবার কোস্টকাঠিন্য,  গ্যাস বা রিফ্লাক্সের কারনেও এমনটা হতে পারে বলে অনেকে অভিমত দেন।

যদি দেখেন যে বাচ্চা অতি মাত্রায় কান্না করছে সেক্ষেত্রে নিকটবর্তী কোন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে যাতে করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে বাচ্চার অন্য কোন সমস্যা হচ্ছেনা।

বাচ্চা যে কারনেই কান্না করুক না কেন, তার ঘন ঘন কান্না করাটা বাবা-মায়ের জন্য এক ধরণের মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। তাই আপনারও যথেষ্ট ধৈর্যশীলতা ও শক্ত মনোবল থাকতে হবে, যেন আপনি এইরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে বাচ্চাকে শান্ত করতে পারেন।

মনে রাখবেন বাচ্চার এই অবস্থা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। কলিক সাধারণত বাচ্চার দুমাস বয়সে সবচাইতে বেশী থাকে এবং ৩ থেকে ৪ মাস বয়স থেকে কমতে থাকে।

বাচ্চা সান্নিধ্য চাইলে

বাচ্চারা কোলে থাকতে ভালবাসে। কোলের উষ্ণতা তাদের আরামদায়ক অনুভতি জাগায়। সুতরাং, বাচ্চাকে একা রেখে কোন কাজ করার সময় কান্না করলে বুঝতে হবে হয়তো সে আপনার আলিঙ্গন পেতে চায়। বাচ্চাকে কোলে করে আস্তে আস্তে দুলিয়ে গান শুনানোটা তার কান্না থামাতে দারুন ভাবে কাজ করে।

আপনি চাইলে বাচ্চাকে বেবিওয়্যারিং (Babywearing) বা স্লিং এর সাহায্যে কোলে বেধে তাকে সাথে নিয়ে যেকোনো কাজ করতে পারেন। সে আপনার হার্টবিট, আপনার গায়ের গন্ধ এবং আপনার উষ্ণতা পছন্দ করে। 

বাচ্চার ক্লান্ত অনুভূত হলে ও তার চোখে ঘুম আসলে

বাচ্চা খুব বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়লে তার ঘুমাতে সমস্যা হয়। বাচ্চার বয়স যত কম থাকে ততই তার ঘুমের লক্ষণ বোঝাটা কষ্টকর। তাই তার ঘুমের লক্ষণ বুঝে উঠতে আপনার কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে।

যেকোনো ছোটখাটো বিষয়ে বিরক্ত হওয়া বা কেঁদে ওঠা, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, চুপচাপ এবং স্থির হয়ে যাওয়া, এগুলো সবই তার ঘুম পাওয়ার কিছু লক্ষণ।

অনেক সময় বাচ্চাকে দেখতে আসা মানুষের ভির ও অধিক গল্প গুজবের কারণে বাচ্চার ঘুমের চরম ভাবে ব্যাঘাত ঘটে। তাছাড়া তাকে অতিরিক্ত দোলালে এবং বড় করে গান করলেও তার ঘুমে সমস্যা হতে পারে। তাই বাচ্চাকে খাওয়ানোর পর এবং ঘুম পাড়ানোর আগে তার ঘর যেন শান্ত ও নিরিবিলি থাকে সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

[ আরও পড়ুনঃ শিশুর ঘুম ]

অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা লাগার কারণে

বাচ্চার শরীর অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা হয়ে আছে কিনা তা তার পেটে বা গলার পেছনে স্পর্শ করে আপনি বুঝতে পারবেন। কখনো পা অথবা হাত দেখে আন্দাজ করা যাবেনা, কেননা বাচ্চার হাত ও পা স্বভাবতই একটু বেশি ঠাণ্ডা থাকে।

বাচ্চার ঘরের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হল ১৬ ডিগ্রি সে থেকে ২০ ডিগ্রি সে। আপনি চাইলে একটা থার্মোমিটার এর সাহায্যেও তার রুমের তাপমাত্রা নজরে রাখতে পারেন।

ঘুমানোর সময় বাচ্চার শরীরে খুব বেশি কাপড় পরানো যাবেনা, এতে করে শরীর অতি মাত্রায় গরম হয়ে বাচ্চার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সাধারনত প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বাচ্চাদের এক পরত কাপড় বেশী পড়ানো উচিত।

বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর বিছানায় কটন কাপড়ের বেডশিট ও সেলুলার কম্বল ব্যাবহার করা উচিত। বাচ্চার পেট যদি বেশী গরম মনে হয় তাহলে উপড়ের কম্বল সরিয়ে নিতে হবে। আবার যদি দেখেন যে বাচ্চার ঠাণ্ডা লাগছে তাহলে আরেক পরত কাপড় বা কম্বল দিতে হবে। বাচ্চার ঘুমানোর জন্য স্লিপিং ব্যাগ ব্যাবহার করার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে তা যেন ঐ ঋতুর সাথে যায় এবং বাচ্চার শরীরের সঠিক মাপের যেন হয়।

ন্যাপি বা ডায়াপার ভেজা থাকলে

শরীরের কাপড় ভেজা বা স্যাত স্যাতে থাকলে কার ভালো লাগে? ঠিক তেমনই ন্যাপি ভেজা থাকলে তা বাচ্চার জন্য বিরক্তকর একটা অবস্থা হয়ে দাড়ায়। তাই বেবির ন্যাপি ভিজে গেছে কিনা তা মাঝে মাঝে খেয়াল করতে হবে। বাচ্চা ন্যাপি ভেজা থাকার কারণে কান্না করলে তা পরিবর্তন করে দিতে হবে।

অনেক বাচ্চাই ভেজা ন্যাপি পাল্টানোর সময় ঠাণ্ডা অনুভূতির কারণে বিরক্তবোধ করতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি করে তার ন্যাপি পরিবর্তন করে দিতে হবে। অথবা তাকে কোন একটা খেলনা দিয়ে (যার দিকে সে তাকিয়ে থাকবে) অথবা গান শুনিয়ে শান্ত করে ন্যাপি পাল্টে দিতে হবে।

বাচ্চা অসুস্থ হলে

বাচ্চার শরীর ভালো না থাকলে বাচ্চা আপনার অপরিচিত ভঙ্গিতে কান্না করবে। যেমন- ক্ষণে ক্ষণে আকস্মিক কেঁদে উঠা, এক নাগাড় কাঁদতে থাকা ও তীক্ষ্ণ স্বরে কাঁদতে থাকা। আবার অনেক বাচ্চাই আছে যারা স্বভাবতই এভাবে কাঁদে কিন্তু অসুস্ত হলে হঠাৎ শান্ত হয়ে বা নিরব হয়ে থাকতে দেখা যায়। বাচ্চার শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা পরীক্ষা করে আপনি প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারবেন যে তার জ্বর হয়েছে কি না।

বিজ্ঞাপণ

নতুন দাঁত গজানোর সময় বাচ্চা খুব অস্বস্তিবোধ করে। অনেক সময় দাঁত গজানোর ১ সপ্তাহ আগেই বাচ্চা অস্থির হয়ে পড়ে। ফলে বাচ্চা মাঝে মাঝে অস্বাভাবিকভাবে কান্না করতে থাকে। এক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই। নতুন দাঁত গজালে বাচ্চা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

একজন মা ই তার বাচ্চাকে সবথেকে ভালো বুঝতে পারেন। সুতরাং বাচ্চার কান্না আপনার কাছে অস্বাভাবিক মনে হলে নিকটস্ত ডাক্তার, গাইনি ডাক্তার অথবা কোন শিশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

যদি দেখেন  বাচ্চা অনবরত কান্না করছে এবং বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা যদি ৩৮ ডিগ্রি সেঃ বা তার বেশি (বাচ্চার বয়স ৩ মাসের কম হলে) অথবা ৩৯ ডিগ্রি সেঃ বা তার বেশি (বাচ্চার বয়স ৩-৬ মাসের মধ্যে হলে) হয় এবং তার সাথে যদি বমি, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

এসব কিছুর পড়েও বাচ্চাকে শান্ত করা না গেলে কি করবেন?

যেহেতু আস্তে আস্তে আপনি বাচ্চার সব কিছু বুঝতে শিখে যাবেন তাই আপনি বুঝতে পারবেন কোন পদ্ধতিতে তাকে সহজে শান্ত করা যাবে। তারপরেও নিচে কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল যা এই ধরণের বাচ্চার ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে।

বাচ্চাকে একটানা কোন শব্দ শোনান

গর্ভে থাকাকালীন সময় থেকেই মায়ের হৃদস্পন্দনের সাথে বাচ্চার একটা ভালোলাগা মিশে থাকে। তাই বাচ্চারা মায়ের কোলে থেকে মায়ের হৃদস্পন্দনের আওয়াজ শুনতে ভালোবাসে।

বাইরের অন্যান্য শব্দও বাচ্চা মায়ের পেটে থাকা অবস্থা থেকে শুনে শুনে অভ্যস্ত। যদিও মায়ের পেটে শব্দগুলো অনেকটা ভারী শোনাবে। তাই ভ্যাকিউম ক্লিনার, ওয়াশিং মেশিন বা হেয়ার ড্রাইয়ার একটানা ও একঘেয়ে শব্দে সে শান্ত হয়ে যেতে পারে। 

বাচ্চাকে দোল খাওয়ানোর মাধ্যমে

বাচ্চারা আস্তে আস্তে দোল খেতে পছন্দ করে। যদি দেখেন বাচ্চা খুব কান্না করছে এমন কি কোনভাবেই তার কান্না থামানো যাচ্ছেনা, তাহলে আপনি তাকে দোলনায় করে দুলিয়ে খুব সহজেই শান্ত করতে পারেন। এছাড়াও যেমন-

  • বেবিকে কোলে নিয়ে হাঁটার সময় আস্তে আস্তে দোলাতে পারেন।
  • রকিং চেয়ারে বসে দোলাতে পারেন।
  • বাচ্চাদের দোলনায় দোলাতে পারেন।

একটা বিষয় এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বাচ্চা যখন কান্না করতে থাকে অনেকে তখন তাকে অনেক জোরে জোরে দোলাতে থাকেন বা উচ্চস্বরে গান গাইতে থাকেন। এটা মাঝে মাঝে কাজ করলেও কখনো কখনো এতে বাচ্চা আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

হালকা ম্যাসেজ করুন

মায়ের হাতের ছোঁওয়া সবসময় বাচ্চার ভালবাসার অনুভুতি জাগায়। আপনি বাচ্চার পেট ও পিঠে ফ্রেগ্রেন্স ফ্রি ম্যাসেজ অয়েল অথবা ক্রিম ব্যাবহার করে হালকা করে মালিশ করার মাধ্যমে বাচ্চাকে আরাম দিতে পারেন। পেটে মালিশ করা বাচ্চার হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

এভাবে নিয়মিত মালিস করার মাধ্যমে তা বাচ্চার কান্না করা ও অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে। বাচ্চার শরীরে মালিস করার উপযুক্ত সময় হল যখন সে শান্ত ও স্থির অবস্থায় থাকে। মালিশ করার সময় যদি বাচ্চা কান্না করে তাহলে বুঝতে হবে তার যথেষ্ট হয়ে গেছে। তখন তাকে মালিস করা বন্ধ করে বুকে জড়িয়ে নিতে হবে।

ভিন্ন পদ্ধতিতে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন

কিছু বাচ্চা আছে যারা খাওয়ানোর সময় বা খাওয়ানোর পর পরেই কান্না করা শুরু করে। আপনার বাচ্চা যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তাকে বিভিন্ন কায়দায় দুধ খাইয়ে শান্ত রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বাচ্চাকে দুধ দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।

যদি বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় পেটে গ্যাস হয় সেক্ষেত্রে তাকে সোজা করে বা আপ-রাইট পজিশনে খাওয়াতে হবে। খাওয়ানো হয়ে গেলে বাচ্চাকে কাঁধের উপর রেখে তার পিঠে হালকা ম্যাসেজ করে ঢেঁকুর তোলার চেষ্টা করতে হবে। অনেক সময় বাচ্চাকে খাওয়ানোর পর পরেই আবার কান্না শুরু করতে পারে। এমনটা হলে বুঝতে হবে তার যথেষ্ট খাওয়া হয়নি এবং তাকে আবার খাওয়াতে হবে।

বাচ্চাকে এমন কিছু দিন যা সে মুখে নিয়ে চুষতে পারে

কিছু কিছু বাচ্চা চুষতে খুব পছন্দ করে। যদি বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তবে আপনি চাইলে বাচ্চার মুখে স্তন দিয়ে রাখতে পারেন যেন সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অথবা আপনার পরিষ্কার আঙ্গুল বা চূষনি ও ব্যাবহার করতে পারেন যদি তাতে সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

বাচ্চাকে হালকা গরম পানিতে গোসল করানো

বাচ্চারা হালকা গরম পানিতে গোসল করতে খুব পছন্দ করে। গরম পানিতে গোসল করানোটা তাঁদের শান্ত রাখতে সাহায্য করে। তবে গরম পানিতে গোসল করানোর আগে অবশ্যই পানির তাপমাত্রা চেক করে নিতে হবে। পানির তাপমাত্রা কখনই ৩৮ ডিগ্রি সেঃ এর উপরে হওয়া যাবেনা। যদি থার্মোমিটার না থাকে সেক্ষেত্রে আপনার কুনুই ডুবিয়ে দিয়ে বাচ্চার জন্য পানির সহনীয় তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নিতে পারেন।

মনে রাখতে হবে, অনেক বাচ্চাই গোসল করার সময় কান্না করতে পারে। আপনার বাচ্চাও যদি এমন করে তাহলে বুঝতে হবে সে পানিতে থাকতে পছন্দ করেনা। সেক্ষেত্রে তাকে ঐ অবস্থায় গোসল না করানোটাই উত্তম।

উপরোক্ত কোন কিছুতেই কাজ না হলে কি করবেন?

দেখুন, বাচ্চারা স্বভাবত কান্না করবেই। বাচ্চাকে সহজে শান্ত করতে না পারলে এটা নিয়ে নিজেকে দোষারোপের কোন কারণ নেই।

বাচ্চারা স্বভাবতই জন্মের প্রথম সপ্তাহগুলোতে অনেক কান্না করে তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাঁদের কান্না করার প্রবণতা ধিরে ধিরে চলে যায়। তারপরেও বাচ্চা দীর্ঘসময় ধরে কান্না করলে এমন কি তাকে শান্ত রাখার সব ধরণের চেষ্টাই বিফলে গেলে তা বাবা মায়ের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়ায়।

তাই কখনো ভাববেননা যে আপনার কারনেই বাচ্চা কান্না করছে, বরং এই ব্যাপারটা কে সাধারণভাবে নিয়ে বাচ্চার কোন কিছু প্রয়োজন কিনা বা তার কোন সমস্যা আছে কি না সেটা বুঝার চেষ্টা করুন এবং নিজের শরীরের যত্ন নিন।

বাচ্চার সব প্রয়োজন মেটানোর পর আপনার নিজের যত্ন নেয়ার পালা-

  • আপনার সহনশীলতা অতিক্রম করেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে বাচ্চাকে তার খাটে রেখে কয়েক মিনিটের জন্য তাকে কাঁদতে দিন । এই সময়ের মধ্যে আপনি চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষনের জন্য কোথাও বসে, যেখানে বাচ্চার কান্নার শব্দও পৌঁছাবেনা কিছুটা রিলাক্স করুন ও নিজেকে শান্ত রাখুন।
  • সব ধরণের চেষ্টা করার পড়েও বাচ্চাকে থামানো না গেলে আপনার কাছের কোন বন্ধু অথবা পরিবারের অন্য কারো সাহায্য নিন। বাচ্চাকে তাদের কাছে দিয়ে এই সময়ে মধ্যে আপনি কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে নিতে পারেন।
  • আশে পাশের লোকাল সাপোর্ট গ্রুপ অথবা মা ও শিশু দের কোন সামাজিক গ্রুপ আছে কি না খোঁজ নিন। এই সব গ্রুপে অনেক বাবা মা ই থাকেন যারা এইরকম পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন এবং জানেন যে কিভাবে এর সমাধান করতে হয়। আপনি চাইলে তাঁদের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন পরামর্শ নিতে পারেন।
  • অবস্থার অবনতি হওয়ার আগেই আপনার স্বাস্থ্য পরিদর্শক অথবা কোন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সমস্যা সমাধানে কি করা যেতে পারে তার দিক নির্দেশনা গ্রহণ করুন।

শুরুতেই বলেছিলাম, বাচ্চার কান্না করাটা স্বাভাবিক একটা বিষয়। এটা স্থায়ি কোন সমস্যা নয় এমন কি এটা তাঁদের বড় হওয়ার একটা ধাপ হিসেবেও ধরে নিতে পারেন। শিশুরা তাদের চাহিদাগুলো প্রকাশ করে কান্না করার মাধ্যমে। তবে বড় হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ভাবে তারা তাদের চাহিদা গুলো প্রকাশ করা শিখে যায়, তখন এক সময় এ ধরণের কান্না অনেকটুকু কমে যায়।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment