মা হওয়ার গল্প | ফাহমিদা আশরাফ তানি

Spread the love

আমার মেয়ের জন্মের তিনদিন পর তাকে কাছে পেয়েছিলাম, সেটাও কয়েক মিনিটের জন্য। জন্মের পর  শুধু মেয়ের মুখটা দেখার জন্য এনআইসিইউতে দেখতে যেতাম বারবার।সাড়ে সাত মাসে পানি ভেঙ্গে যাবার কারণে প্রিম্যাচিউর মেয়ে আমার ১কেজি ৮০০গ্রাম ওজন নিয়ে দুনিয়াতে আসে। আমার মেয়ের এখন বয়স ৫মাস ১৫ দিন।আলহামদুলিল্লাহ !

কিন্তু আমার মেয়ের এই হাসি ভরা মুখটা দেখতে আমার অনেক কঠিন পরিস্থিতি দেখতে হয়েছে। মেয়েটাকে যে ঠিকভাবে দুনিয়াতে আনতে পারবো সেটা নিয়েও অনেক খানি চিন্তায় ছিলাম। অপারেশান থিয়েটারে যাওয়ার আগ মুহুর্তে আমার হাসিমুখ মা, বর কে দেখিয়ে গিয়েছিলাম ঠিক ই কিন্তু আমার কলিজার ভিতর কি হচ্ছিলো কেউ জানতো না।

বিজ্ঞাপণ

অ্যাজমা ছিলো বলে কি জানি একটা ইনজেকশন দেয় যার জন্য অনেক খারাপ লাগছিলো। অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার পর আয়তুল কুরসি পরতেও জিহ্বা জড়িয়ে যাচ্ছিলো। অনেক ঘুম আসছিলো কিন্তু ঘুমাচ্ছিলাম না। একটাই কারণ আমার মেয়ের কান্না আমি নিজে শুনবো।

ঠিক যেই সময়টাতে মেয়ের কান্না শুনলাম, বিশ্বাস করুন, আগের রাতে একটা বিরাট বিপদের মধ্য যে ছিলাম সেটা মনেই ছিলো না। মেয়েটাকে শুধু প্রসবের পর একবার দেখছিলাম। তারপর সবসময় এনআইসিইউতে গিয়ে দেখে আসতে হতো।

এতটুকু বাচ্চা আমার,বলা যায় পাখির বাচ্চা! তার মধ্য বি এম এর ফ্লো নাই। এত হতাশা কাজ করতো।এফ এম নিয়ে এত নেগেটিভ কথা বার্তা শুনতাম। বাচ্চা বমি করলেও মনে হতো আমার দোষ।

বিজ্ঞাপণ

বাসায় নিয়ে আসার পর কিছুদিন ভালো ভাবে গেলেও মেইন চ্যালেন্জে পরলাম যখন একদিন হুট করে দেখি মেয়ে ঘুমের মধ্য নাকে মুখে বমি করে ফেলছে। বাচ্চার নিঃশ্বাস পুরো বন্ধ হয়ে যাবার মত অবস্থা। ডাক্তার বললো Gerd বলে ব্যাপারটাকে। সাবধানতা ছাড়া কোন উপায় নাই।

তারপর সারারাত দিন জেগে থাকতাম। অনেক দোষারোপ করতাম নিজেকে। এক সময় মনে হলো নিজের সমস্যা নিজেকেই সলভ করতে হবে। শুরু করলাম পড়াশোনা। প্রি-ম্যাচিওর বাচ্চাদের জন্য যত দেশী বিদেশী আর্টিকেল আছে,ভিডিও আছে সব দেখা শুরু করলাম। নিজের ভিতরে অনেক খানি সাহস চলে আসলো। হতাশাগুলোকে কাটিয়ে উঠলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমার মেয়ের জন্য এখন আমি নিজেই সবথেকে ভালোটা সবার আগে বুঝতে পারি।

বিজ্ঞাপণ

আমার ম্যাটিরনিটি লিভ প্রায় শেষের পথে। কলেজ এ জয়েন করার সময় চলে আসছে। কিন্তু আমি জানি আমি যে অবস্থাতেই থাকি না কেন আলহামদুলিল্লাহ আমি সামলাতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

মা হিসেবে আমার সবথেকে বড় অর্জন কিসে জানেন? আমার মেয়ে কে শুধু আমি বেড়ে উঠতে দেখছি না,আমি তার শরীরের প্রতিটি অংশ বাড়তে দেখছি। আমার মেয়ের জন্য অনেক দোয়া করবেন। সকল সন্তানদের জন্য অগাধ ভালবাসা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment