প্যারালাল প্যারেন্টিং | হাই-কনফ্লিক্ট ডিভোর্সের পর সন্তান লালন পালন

Spread the love

ডিভোর্স কিংবা সেপারেশনের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিদ্যমান তিক্ত সম্পর্কের ইতি টানা গেলেও তাদের সন্তানের জন্য সেটা গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকাটা খুবই জরুরি। কিন্তু বাবা-মায়ের মাঝে বিচ্ছেদ হয়ে গেলে সন্তান হয়তো তখন ভিন্ন ভিন্ন দুই বা ততোধিক বাসায় আসা-যাওয়ার ভেতরে থাকতে বাধ্য হয়। সন্তান হয়তো কখনো বাবার সাথে আবার কখনো মায়ের সাথে গিয়ে থাকে, বাবা-মায়ের সাথে আলাদা আলাদাভাবে তারা সময় কাটায় কিন্তু সন্তানকে নিয়ে চলার পথে বাবা মা তথা সাবেক স্বামী-স্ত্রী যখন একে অন্যের মুখোমুখি হয় বা তাদের সাক্ষাৎ হয়, তখন অনাকাঙ্খিতভাবে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা বলাই বাহুল্য।

যদি তাদের মাঝে অনেক বেশি তিক্ততা, ক্ষোভ, বিদ্বেষ থাকে তাহলে বারবার দেখা হওয়ার ফলে পুরোনো ক্ষত জেগে উঠতে পারে এবং পরিস্থিতির অবনতিও ঘটতে পারে। তাই এধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে একটি বিশেষ ধরনের প্যারেন্টিং কৌশল অবলম্বন করতে হয়, যার নাম- প্যারালাল প্যারেন্টিং। এই পদ্ধতিতে বাবা-মা একে অন্যকে সহ্য করার মতো পরিবেশ বজায় রাখেন।

বিজ্ঞাপণ

প্যারালাল প্যারেন্টিং কী?

প্যারালাল প্যারেন্টিং এমন একধরনের পদ্ধতি যেখানে ডিভোর্সি বাবা-মা একে অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও যৌথভাবে সন্তানের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করেন। তারা একে অন্যের সাথে সরাসরি দেখা-সাক্ষাৎ বা যোগাযোগ করেন ঠিকই তবে সেটা খুবই সীমিত পরিসরে। বিশেষ করে, তারা যদি একে অন্যের প্রতি সম্মান রেখে নিজেদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন সেক্ষেত্রে সরাসরি যোগাযোগটা আরো কম হওয়া বাঞ্ছনীয়।

মূলত সন্তান এধরনের প্যারেন্টিং এর সুফল ভোগ করে থাকে। বাবা-মা একের অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও তারা সন্তানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। সন্তানের দায়-দায়িত্ব সমূহ বাবা-মা নিজেদের মাঝে ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। ধরা যাক, মা সন্তানের যাবতীয় চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং দায়িত্ব নিলেন অন্যদিকে পড়াশোনা বা শিক্ষার দায়-দায়িত্ব নিলেন বাবা।

তবে এধরনের প্যারেন্টিং এ বাবা-মাকে বড় বড় ব্যাপারে একই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়। অবশ্য সন্তানের প্রাত্যহিক রুটিন, দৈনন্দিন দেখভালের বিষয়গুলো নিয়ে তারা আলাদা ভাবে যে যার মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সফলতার সাথে প্যারালাল প্যারেন্টিং চর্চা করলে আলাদা হওয়া বাবা-মায়ের মাঝে বিরাজমান তিক্ততার মাত্রা ধীরে ধীরে, সময় গড়ানোর সাথে সাথে কমতে থাকে। একটা পর্যায়ে তারা প্যারালাল প্যারেন্টিং থেকে কো-প্যারেন্টিং বা যৌথ প্যারেন্টিঙের দিকে এগোতে পারেন।

প্যারালাল প্যারেন্টিঙের চেয়ে যৌথ প্যারেন্টিং পদ্ধতি তুলনামূলক বেশি বন্ধুসুলভ এবং সন্তানের জন্য বেশি উপকার বয়ে আনে। অন্যদিকে প্যারালাল প্যারেন্টিং হলো যৌথ প্যারেন্টিঙের প্রথম স্তর, যার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে যৌথ প্যারেন্টিং গড়ে উঠতে পারে।

প্যারালাল প্যারেন্টিং এবং যৌথ প্যারেন্টিং এর মধ্যে পার্থক্য

এই দুই ধরনের প্যারেন্টিঙেই বিচ্ছেদের পর বাবা-মাকে তাদের সন্তানের দায়িত্ব পালন করতে হয়। তবে পার্থক্যটা থাকে যোগাযোগের মাত্রায়।

কো-প্যারেন্টিং বা যৌথ প্যারেন্টিঙের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের পরেও বাবা-মা তুলনামূলক কাছাকাছি থাকেন, সন্তানের মঙ্গলের স্বার্থে। সন্তানের জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাপারে তারা আলোচনা করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। নিয়মিত তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে সন্তানের ব্যাপারে পরিকল্পনা সাজান।

অন্যদিকে প্যারালাল প্যারেন্টিঙে বাবা-মা নিজেদের মাঝে দূরত্ব বজায় রাখেন। তাদের মাঝে খুব কমই যোগাযোগ হয়। সন্তানের ব্যাপারে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত তারা একে অন্যের কাছ থেকে দূরে থেকেই নিয়ে থাকেন।

এখানে বলে রাখা ভাল, এই দুইধরনের প্যারেন্টিঙের কোনোটাই “ভাল” কিংবা “খারাপ” নয়। একটা আরেকটার চেয়ে উন্নত নয়। বাবা-মায়ের মাঝে বিচ্ছেদ হওয়ার পর সন্তান লালন-পালন করার ব্যাপারে এই দুই ধরনের প্যারেন্টিং কৌশল রয়েছে। যার (বা যাদের) যে প্যারেন্টিং স্টাইল কাজে দেবে, তারা সেই প্যারেন্টিং স্টাইল অনুসরণ করবেন।

প্যারালাল প্যারেন্টিঙের সুবিধা

প্যারালাল প্যারেন্টিং দীর্ঘমেয়াদী কোনো ব্যবস্থা না হলেও বাবা-মায়ের মাঝে চরম দ্বন্দ্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে, সেখানে এই কৌশল বেশ ভালভাবেই কাজ করে। বিচ্ছেদ হওয়া বাবা-মায়ের মাঝে কো-প্যারেন্টিং করার মতো পরিস্থিতি না তৈরি হওয়া পর্যন্ত এই প্যারালাল প্যারেন্টিং দিয়ে কাজ চালানো যায়।

১. সন্তান ও বাবা-মায়ের মধ্যকার সম্পর্ক সংরক্ষণ করে

প্যারালাল প্যারেন্টিং বাবা-মাকে তাদের দাম্পত্য সম্পর্ককে পেছনে ফেলে সন্তানের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে দিতে সাহায্য করে। বাবা-মা দু’জনেরই উচিত সন্তানের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা। সন্তানের ওপর বাবা বা মা কারোই একক নিয়ন্ত্রণ থাকে না তাই দু’জনেই যাবতীয় দায়-দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।

২. বিরোধ থেকে শিশুকে রক্ষা করা

প্যারালাল প্যারেন্টিঙে শিশু বাবা-মায়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে দূরে থাকার সুযোগ পায়। চোখের সামনে বাবা-মাকে তুমুল ঝগড়া করতে দেখলে শিশুর মানসিক ক্ষতি হতো, সে হয়তো বাবা-মায়ের ঝগড়ার জন্য মনে মনে নিজেকেই দায়ী ভাবতো কিংবা খুব ভয় পেয়ে ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে যেত। কিন্তু প্যারালাল প্যারেন্টিঙের মাধ্যমে শিশুকে ওসব থেকে রক্ষা করা যায়।

৩. চাপ কমায়

চোখের সামনে সাবেক স্বামী বা স্ত্রীকে দেখলে রাগ, ক্ষোভ সহ নানা ধরনের আবেগ গ্রাস করতে পারে। সেখান থেকে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। প্যারালাল প্যারেন্টিং বাবা-মাকে এই চাপ থেকে বাঁচায়। কারণ এধরনের প্যারেন্টিং সিস্টেমে বাবা-মায়ের সামনাসামনি খুব কম দেখা হয়। ফলে তাদের অতীতের দাম্পত্য কলহের ফলে সৃষ্টি মানসিক চাপটা কমে যায়। পাশাপাশি বাবা-মাকে ডিভোর্সের কারণে সৃষ্ট মানসিক জখম কাটিয়ে সুস্থ্য হয়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়।

৪. অফিসিয়াল যোগাযোগ

প্যারালাল প্যারেন্টিঙের ক্ষেত্রে বাবা-মাকে সামনাসামনি কিংবা মোবাইলে যোগাযোগ করার ব্যাপারে অনুৎসাহিত করা হয়। এক্ষেত্রে বরং ই-মেইল চালাচালি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে সেখানে আবেগের বহিঃপ্রকাশ করার সুযোগ তুলনামূলক কম থাকে। তাছাড়া ই-মেইলে যোগাযোগ করলে যোগাযোগটাও সীমিত পরিসরে থাকে। মূলত সন্তানের শরীর-স্বাস্থ্য ও পড়াশোনা সংক্রান্ত আলাপের মাঝেই সেটা সীমাবদ্ধ থাকে।

৫. পুরনো ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে

প্যারালাল প্যারেন্টিঙের ক্ষেত্রে বাবা মায়ের মধ্যে যোগাযোগ খুব কম থাকে বা যোগাযোগ করতে হলেও সেটা প্রফেশনালি করা হয়। সেখানে আবেগের বহিঃপ্রকাশ করার সুযোগ তুলনামূলক কম থাকে। সফলতার সাথে প্যারালাল প্যারেন্টিঙের চর্চা করলে আলাদা হওয়া বাবা-মায়ের মাঝে বিরাজমান তিক্ততার মাত্রা ধীরে ধীরে, সময় গড়ানোর সাথে সাথে কমতে থাকে।

প্যারালাল প্যারেন্টিঙের ব্যাপারে কিছু পরামর্শ

কো-প্যারেন্টিং বা যৌথ প্যারেন্টিঙে কিছু নমনীয়তা থাকলেও প্যারালাল প্যারেন্টিং একটি অকপট ধাঁচের কৌশল, যেখানে বাবা-মায়ের মাঝে যোগাযোগের পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়।

ঝামেলা এড়াতে চাইলে পারিবারিক আদালতে গিয়ে যাবতীয় পরিকল্পনা সমূহকে অফিসিয়াল রূপ দেওয়া যেতে পারে।

বিজ্ঞাপণ

পদক্ষেপ ১ : ঠিক করুন আপনারা কীভাবে সন্তানের সাথে সময় ভাগ করে নেবেন

সপ্তাহের কোন দিন আপনি সন্তানের সাথে সময় কাটাবেন আর কোন দিন আপনার সাবেক সঙ্গী সন্তানের সাথে সময় কাটাবে সেটা দুজনে আলোচনা করে ঠিক করে নিন। কোথায় ছুটির দিন কাটাবেন, কোথায় ঘুরতে যাবেন, জন্মদিন কীভাবে বা কোথায় উদযাপন করবেন; এসব বিষয়ও আলোচনাও অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন।

পদক্ষেপ ২ : সময়ের ব্যাপারটা স্পষ্ট করে জেনে নিন বা জানিয়ে দিন

প্যারালাল প্যারেন্টিঙে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা কনফিউশনের স্থান নেই। বাবা-মা দুজনে আলোচনা করে ঠিক করে নিন সন্তানকে কে কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত নিজের কাছে রাখবেন, সপ্তাহের কোন বার থেকে কোন বার পর্যন্ত নিজের কাছে রাখবেন।

পদক্ষেপ ৩ : সন্তানকে তুলে নেওয়া বা নামিয়ে দেওয়ার স্থানটি নির্বাচন করুন

প্যারালাল প্যারেন্টিঙের উদ্দেশ্য হলো বাবা-মায়ের মাঝে যেন দেখা-সাক্ষাৎ কম হয় সেটা নিশ্চিত করা। তাই সন্তানকে নিজের কাছে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ স্থান নির্বাচন করুন। যেখানে আপনি সন্তানকে নামিয়ে দিয়ে দেবেন এবং সেখান থেকে আপনার সাবেক দাম্পত্য সঙ্গী সন্তানকে নিজের গাড়িতে তুলে নেবেন।

অবশ্য তিক্ততার পরিমাণ বেশি হলে বা কোনো সমস্যা থাকলে সন্তানকে বাসায় আনা-নেওয়ার কাজটি কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা আত্মীয়কে দিয়েও করানো যেতে পারে।

পদক্ষেপ ৪ : আলোচনা করে নিন কোনো পরিকল্পনা বাতিল হলে বা ভেস্তে গেলে তখন বিষয়টা আপনারা দুজন কীভাবে সামলে নেবেন

যতই প্ল্যান, পরিকল্পনা করা হোক না কেন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে অনেক সময় পরিকল্পনা বাতিল করে দিতে হয়। তাই সেই অনাকাঙ্খিত ব্যাপারটাকে কীভাবে সামাল দেওয়া হবে তা আগেভাগে আলোচনা করে রাখা ভাল।

ধরা যাক, সন্তানের জন্মদিনে আপনার সাবেক স্বামীর আসার কথা ছিল কিন্তু কোনো কারণে তিনি আসতে পারেননি। সেক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে তাকে অন্য কোনোদিন তার সন্তানের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেওয়া।

পদক্ষেপ ৫ : বিরোধ সামলে নেওয়ার পরিকল্পনা করুন

প্যারালাল প্যারেন্টিং যখন কাজ করে তখন সাধারণত বাবা-মায়ের মধ্যকার বিরোধ খুব কমই সামনে আসে। কিন্তু কোনো কিছুই নিখুঁত নয়। বাবা বা মায়ের মাঝে কোনো একজন যদি নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ খুইয়ে বসেন তাহলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়।

সমস্যা দেখা দিলে আদালতে মধ্যস্থতাকারী চেয়ে আবেদন করা যেতে পারে। কখনো কখনো অবশ্য এই মধ্যস্থতাকারীকে প্যারেন্টিং সমন্বয়কারীও বলা হয়ে থাকে। সাবেক দাম্পত্য সঙ্গীর সাথে বাক-বিতণ্ডায় না জড়িয়ে বরং প্যারেন্টিং সমন্বয়কারীর সাথে মিটিং করা মঙ্গল।

প্যারালাল প্যারেন্টিঙের অসুবিধা

প্যারালাল প্যারেন্টিঙের সবচেয়ে বড় অসুবিধা : বাবা-মায়ের পরস্পর বিরোধী প্যারেন্টিং স্টাইল।

প্যারালাল প্যারেন্টিং সংক্রান্ত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এধরনের প্যারেন্টিঙ অনেক সময় বাবা-মাকে পরস্পরের সাথে জোরপূবর্ক যোগাযোগ করাতে চায়। যা থেকে হয়তো তাদের সন্তান খুব বেশি উপকৃত হয় না। অন্যদিকে বাবা এবং মা যেহেতু সন্তানের ব্যাপারে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সেক্ষেত্রে সন্তান একই ব্যাপারে বাবা-মায়ের ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত দেখে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যেতে পারে।

[ আরও পড়ুনঃ বাবা মায়ের প্যারেন্টিং এর ধরণ ভিন্ন হলে কি করবেন ]

অনেক অভিভাবক ভাবেন, সন্তানের সাথে বেশি বেশি সময় কাটালেই বুঝি সেরা প্যারেন্টিং করা হলো। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত, সেই সময়টা মানসম্মত হতে হবে, কোয়ালিটি সম্পন্ন হতে হবে। সন্তানের সাথে কতটা মানসম্মত সময় কাটানো হয়েছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কত বেশি সময় কাটানো হয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ব নয়।

প্যারালাল প্যারেন্টিং থেকে যৌথ প্যারেন্টিং

বিজ্ঞাপণ

বাবা-মায়ের দাম্পত্য জীবনে অনেক বেশি সংঘর্ষ থাকলে ডিভোর্স হওয়ার পরেও তাদের মাঝে অলিখিত তিক্ততা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই তিক্ততার ছোবল থেকে সন্তানকে রক্ষা করতে হলে বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে, আর সেই কৌশলই হলো প্যারালাল প্যারেন্টিং।

অবশ্য তাই বলে যৌথ প্যারেন্টিং বা কো-প্যারেন্টিংকে ছোট করে দেখা হচ্ছে না। এধরনের প্যারেন্টিঙের গুরুত্ব অনেক। তবে যৌথ প্যারেন্টিং করতে হলে বাবা-মায়ের মানসিক পরিপক্বতা খুবই জরুরি। ডিভোর্স হওয়ার পরেও অতীতের দাম্পত্য ক্ষোভ, ঘৃণা, রাগ ইত্যাদি হালকা হতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। তারপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দেখা যায়, অতীতের সব তিক্ততাকে পেছনে ফেলে বাবা নিজের মতো করে জীবন সাজিয়ে নেন, অন্যদিকে মা নিজের মতো করে নতুন জীবন শুরু করেন।

প্যারালাল প্যারেন্টিং বাবা মায়ের এই কঠিন সময়ে সন্তানদের বিভিন্ন নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে দুরে রাখতে সাহায্য করে। সময়ের সাথে বাবা মায়ের মধ্যকার তিক্ততা কমে এলে ধীরে ধীরে কো-প্যারেন্টিং শুরু করা যায়।

তবে সবকিছুর ওপরে বাবা-মায়ের উচিত তাদের সন্তানের মঙ্গলের ব্যাপারটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা। সন্তানের স্বার্থে অতীতের দাম্পত্য কলহকে মাটি চাপা দিয়ে মানসিক পরিক্বতার পরিচয় দেওয়া উচিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সন্তান যদি স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বা খেলাধূলায় অংশ নেয়, তাহলে বাবা-মায়ের উচিত কোনো প্রকার বিব্রতকর পরিস্থিতির অবতারণা না করে সুন্দরভাবে দর্শক সারিতে বসে সন্তানের পারফরম্যান্স দেখা, তাকে উৎসাহিত করা।

শুধু সন্তানের ছোটবেলাতেই নয়। তার গ্রাজুয়েশন পার্টিতে কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানেও বাবা-মায়ের অংশগ্রহণ করা উচিত। তাদেরকে মনে রাখতে হবে ডিভোর্স বা বিচ্ছেদ হয়েছে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে, বাবা-মায়ের মাঝে; সন্তানের সাথে কারো সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment