নবজাতক এবং পিঠাপিঠি ভাই বা বোনকে একসাথে সামলানোর কিছু টিপস

Spread the love

পরিবারে ছোট্ট একটা শিশুর আগমন শিশুটির মা-বাবা, ভাইবোন ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন, সবার জন্যই অনেক আনন্দের। কিন্তু মা-বাবা হিসেবে আপনার যদি অন্তত দুটো বাচ্চার যত্নআত্তি করতে হয় তাহলে ব্যাপারটা কিন্তু আসলেই কষ্টসাধ্য এবং ক্লান্তিকর। আর মায়েদের জন্যতো এটা আরও কঠিন।

তাই বাড়ির নবজাতক শিশুটির যত্নআত্তি ও একই সাথে বড় শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার সুবিধার্থে আপনার জন্য রয়েছে ৭-টি টিপস। টিপস গুলো আপনাকে শিশুর সঠিক যত্ন ও বেড়েওঠা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

বিজ্ঞাপণ

১। আপনার বড় শিশুটিকে প্রি-স্কুলে ভর্তি করে দিন

বাড়ির আশেপাশে কোন মানসম্মত প্রি-স্কুলে বড় শিশুটিকে ভর্তি করলে আপনি এক সাথে দুটো সুবিধা পাচ্ছেন। প্রথমত, নবজাত শিশুটিকে যথেষ্ট সময় দিতে পারবেন এবং ঐ সময় আপনার বড় শিশুটি নিজেকে একটু হলেও অবহেলিত মনে করবে না। অন্যদিকে, প্রি-স্কুলে সে নিজেকে অন্যভাবে আবিস্কার করবে। বুঝতে পারবে সে এখন বড় হয়ে গেছে এবং তার আছে একটি নতুন জগত।

আপনার বড় শিশুটিকে উৎসাহিত করতে তার স্কুলের হোমওয়ার্ক, ছবি আঁকা এসব কিছুতে মতামত দিতে ভুলবেন না। জিজ্ঞেস করতে ভুলবেন না ওর বন্ধু, শিক্ষক, আর স্কুল সম্বন্ধে। এতে সে বুঝতে পারবে তার স্কুলে যাওয়া একটা বিশেষ কিছু।

২। বাড়িতে শিশুর জন্য আলাদা একটু জায়গা রাখুন

আপনার বড় শিশুটি যেহেতু নিজে নিজেই খেলতে পারে সেহেতু ওর জন্য বাড়িতে একটা নির্দিষ্ট জায়গা করে দিন। ওখানে ওর প্রিয় সব বই আর খেলনা গুলো রাখুন।

সম্ভব হলে একটা ছোট শেল্ফে ওর বই আর খেলনা গুলো এমন ভাবে সাজিয়ে দিন যাতে ও ওর পছন্দমতো বেছে নিতে পারে। এটা ওর মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও স্বনির্ভরতা বাড়াবে।

চেষ্টা করুণ ওর উপযোগী খেলনা যেমন রঙিন ব্লক, প্লে-ডও, আঁকার সরঞ্জাম ইত্যাদি রাখতে। আর যদি ওখানে ওর উপযোগী ছোট টেবিল-চেয়ার রাখতে পারেন তাহলে তো আরও ভাল।

৩। শিশুদের একই সময় ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন

শুনতে মোটামুটি অসম্ভব মনে হলেও, ব্যাপারটা কিন্তু আসলে সম্ভব। শুধুমাত্র আপনাকে একটু কৌশলী হতে হবে। যেহেতু আপনার বড় শিশুটির ঘুমের সময় ও দৈর্ঘ্য দুটোই এখন নিয়মিত তাই চেষ্টাটা হবে মূলত নবজাত শিশুটিকে ঘুম পাড়ানোর।

নিসন্দেহে ব্যাপারটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু একবার যদি ওদের ঘুমানোর সময়টা একসাথে করতে পারেন তাহলে আপনি নিজের জন্য, পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য সময় বের করতে পারবেন। আর এই সুযোগে নিয়ে নিতে পারবেন একটি পাওয়ার ন্যাপ।

৪। আপনার শিশুকে গল্প শোনান

এই একটা ব্যাপার যুগ যুগ ধরেই মায়েদের অন্যতম সহায়। যে কোন বয়সের মানুষই কিন্তু গল্প শুনতে পছন্দ করে। আর শিশুদের নিয়ে সুবিধা হচ্ছে ওদের গল্পছলে যাই বলবেন ওরা তাতেই খুশি। নবজাত শিশুটিকে কোলে নিয়ে আপনার বড় শিশুটিকে বই পড়ে শোনানটা সম্ভব নয়। তখন এই গল্প বলাই ভরসা।

বিজ্ঞাপণ

ওকে ওর পছন্দের যে কোন বিষয়ে গল্প শোনান। হতে পারে ওর প্রিয় কার্টুন চরিত্র, কোন সুপার হিরো, প্রিয় বাহন, প্রিয় মানুষ। শুনে অবাক হবেন ওরা নিজেদের ছোটবেলার গল্প সবচেয়ে বেশি শুনতে পছন্দ করে।

গল্পছলে ওকে শোনাতে পারেন ওর ছোটবেলা। এবং সাথে সাথে ওর ছোট ভাই বা বোনটির যত্নের জন্য আপনি কি কি করেন এবং তার জন্য কি কি করেছেন সেগুলোর তুলনা করতেও ভুলবেন না।

৫। ব্যাস্ত রাখুন “ব্যাস্ত ব্যাগ” (Busy Bag) দিয়ে

ব্যাস্ত ব্যাগ কথাটা শুনে ব্যাতিব্যাস্ত হবার কিছু নেই। বিষয়টা খুবই সিম্পল। যে কোন ধরনের আকর্ষণীয় কিন্তু নিরাপদ ব্যাগে বিভিন্ন আকারের কিছু রঙিন কাগজ, লেগো ব্লক, রঙিন শোলা ভরে রাখুন। আপনার শিশুর কাছে ব্যাপারটা হবে একদমি নতুন আর আকর্ষণীয়।

ব্যাগের রং বা ভেতরের খেলনাগুলোর আকর্ষণে ও এটা নিয়ে দেখবেন অনেকটা সময় ব্যাস্ত থাকবে। এর অন্য একটা সুবিধা হচ্ছে আপনি চাইলেই শিশুকে নিয়ে বেরোবার সময় ব্যাগগুলো সাথে নিতে পারেন। এতে করে আপনার এর আপনার শিশু দুজনের জন্যই ভ্রমণটা হবে অনেক আরামের।

Busy Bag 

৬। নবজাত শিশুটিকে বহন করুন “বেবি ব্যাগ”-এ

যে কোন বেবিস্টোরে গেলেই পেয়ে যাবেন “বেবি ব্যাগ”। দেখতে ব্যাগ এর মতো কিন্তু এর ভেতরে আপনার ছোট্ট শিশুটি থাকে অনেক আরামে আর নিরাপদে। বাগগুলো একটা নির্দিষ্ট ওজন পর্যন্ত শিশুদের বহন করতে পারে। তাই কেনার সময় ব্যাগ আর ওজন ক্ষমতা দেখে কিনবেন।

এই ব্যাগ ব্যাবহারে সুবিধা হচ্ছে বেড়াতে বা বাজার-সদাই করার সময় একজনকে কোলে আর একজনকে হাতে ধরে খুব সহজেই হাটতে পারবেন। আর তখন দেখবেন দুজনই কত খুশি এতে।কখনো কখনো বড় বাচ্চাকে সামলানোর জন্য হাত খালি থাকার প্রয়োজন হয়। নবজাতক শিশুকে কোলে নিয়ে সেটা অনেকটা দুরহ ব্যাপার। এই সময়গুলোতে এই ব্যাগ বা স্লীং অনেক কাজে দেয়।

৭। সাহায্য চাইতে ও নিতে সঙ্কোচ করবেন না

দ্বিতীয় বা তৃতীয়-বার মা-বাবা হওয়াটা মোটেও সহজ কাজ নয়। কখনো কখনো ঘরের ও বাইরের কাজ সেরে শিশুদের দেখাশোনা করাটা মারাত্মক চাপের একটা ব্যাপার হয়ে যায়। এসময় একটু সাহায্য জীবনকে অনেক সহজ করতে পারে। “সাহায্য দরকার” কথাটা মেনে নিতে সঙ্কোচ করবেন না। এতে লজ্জার কিছু নেই।

আমাদের সবারই সাহায্য প্রয়োজন। এসময় বন্ধু বা পরিবারের কেউ সাহায্য করতে চাইলে তাকে হ্যাঁ বলুন। ধন্যবাদ দিন। কারণ এতে আপনি কিছু বারতি সময় পাবেন এবং আলাদা ভাবে আপনার সব শিশুদেরকেই সময় দিতে পারবেন। শিশুদের সঠিকভাবে বেড়েও ঠায় এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মা-বাবা হিসেবে আপনারা এমনিতেই অনেক কঠিন একটা কাজ অত্যন্ত যত্নে করছেন। আর আশার কথা এটাই যে শিশুদের বেড়ে ওঠার এই সময়টা খুব একটা লম্বা নয়। ওরা বড় হয়ে গেলে এই সময় গুলো আপনাদের সবার জন্য আনন্দের স্মৃতি হয়ে থাকবে। এই টিপস গুলো আপনাদের ঐ স্মৃতিগুলোকে আরও একটু সুন্দর করার চেষ্টা মাত্র।  

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment