চাইল্ড শেইমিং এর ক্ষতিকর দিক এবং কিভাবে তা এড়িয়ে চলবেন

Spread the love

‘আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে’–সেই বিখ্যাত গানের মত করে শিশুর জন্য সাজানো বাগান উপহার দিতে আমরা কেই বা না চাই? শিশুর সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যে চমৎকার পরিবেশটির প্রয়োজন সেটা আমরা কয়জনই বা নিশ্চিত করতে পারছি?

শিশুর আচরণ ঠিক করতে আমরা অনেকেই অনেক পন্থা অবলম্বন করি, যেমন- বকাবকি, মার দেয়া, ভয় দেখানো, লজ্জা দেয়া ইত্যাদি। আমাদের করা এমনই কিছু আচরণকে প্যারন্টিং এর ভাষায় অভিহিত করা হয়েছে “চাইল্ড শেইমিং” নামে। এই শেইমিং এর খুঁটিনাটি নিয়েই আজকের আর্টিকেল।

বিজ্ঞাপণ

চাইল্ড শেইমিং বিষয়টা আসলে কি

শেইমিং শব্দটাকে লজ্জা দেয়া, অপমান করা, কটূক্তি করা, মনে আঘাত দেয়া ইত্যাদি অনেকভাবেই বাংলা করা যায়। অনেকভাবেই আমরা কখনো নিজের অজান্তে আবার কখনো ইচ্ছেকৃত্ভাবেই শিশুকে শেইমিং করে থাকি। যেমনঃ 

  • শিশুর অতীতে ঘটে যাওয়া বিব্রতকর কোন ঘটনা বার বার তুলে এনে।
  • শিশুর সামনেই তার দোষ ক্রুটি নিয়ে কোন বন্ধু বা আত্মীয়ের সাথে আলাপ আলোচনা করে
  • আবার ধরুন শিশু হয়ত কোন ভুল করে বসল, আর আপনি “তুমি একটি খারাপ কাজ করেছ” না বলে বরং শিশুকে বকা দিচ্ছেন “তুমি একটা খারাপ ছেলে, তুমি একটা বাজে ছেলে” বলে।

এসবের উদ্দেশ্য হয়তো থাকে শিশুর মধ্যে অপরাধবোধ জাগ্রত করে তার আচরণ শুধরে দেয়া এবং শুরুতে এই পদ্ধতি হয়তোবা কিছুটা কাজও করে। কিন্তু খুব দ্রুতই এর নেতিবাচক দিকগুলো বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

অপরাধ বোধ এবং শেইমিং এর মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়

আপনি হয়ত ইতোমধ্যেই অনলাইনে অনেক ভিডিও দেখেছেন যে জনসম্মুখে শিশুকে বাবা মা কীভাবে শাসন করছেন। হ্যাঁ! আপনি হয়ত এত বাড়াবাড়ি করেন না ঠিকই, তবে বাসায় মেহমান আসলে শিশুর ভুলগুলোকে মেহমানের সামনে তুলে ধরে শিশুকে লজ্জা হয়ত অনেকেই দিয়ে থাকেন।

আমরা কখনই বলব না যে আপনার উদ্দেশ্য খারাপ—আপনি হয়তো চাইছিলেন শিশু কিছুটা লজ্জিত হোক এবং বিষয়টি মনে রাখুক। যাতে করে সে ভবিষ্যতে এই অপরাধ বোধ থেকে আর কখনো এই ধরণের ভুল না করে! কিন্তু আমরা ভুলেই যাই যে শিশুটি অনেক ছোট হলেও, তার আত্মসম্মান বোধ রয়েছে। শিশুর মধ্যে অপরাধ বোধ জাগাতে গিয়ে আমরা হয়ত তাকে কোন অপমানজনক পরিস্থিতিতে অথবা লজ্জার মধ্যেই ফেলে দিচ্ছি।

ইউনিভার্সিটি অফ হাস্টনের একজন গবেষক ও প্রফেসর ব্রেন ব্রাউন, অপরাধবোধ ও শেইমিং এর মধ্যে পার্থক্যটি খুব ছোট্ট ও সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেনঃ

  • “আমি একটি খারাপ কাজ করেছি” অপরাধ বোধের কারণে এমন একটি ভাবনা শিশুর মধ্যে আসতে পারে।
  • আবার শেইমিং এর কারনে অপরাধ বোধ না এসে বরং “আমি নিজেই অনেক খারাপ” এমন একটি ধারণা শিশুর মধ্যে চলে আসতে পারে।

শিশুকে লজ্জা দেয়া বা শেইমিং করার ফলে সে তার আচরণ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। কিন্তু তা সে তার মন থেকে করেনা বরং বাবা মায়ের আদর থেকে যাতে বঞ্চিত না হয় সে ভয় থেকে করে।

অন্যদিকে অপরাধবোধ হল নিজের করা কোন কাজের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। অপরাধবোধ শিশুকে অনুপ্রাণিত করে এবং নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে সাহায্য করে।

অপরাধবোধ আমাদের চেতনার অনুভূতি জাগায় কিন্তু শেইমিং হৃদয়ে আঘাত করে। অপরাধবোধ শিশুকে আরও ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায় আর শেইমিং এর কারণে সে নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং সব কাজের জন্যই নিজেকে অযোগ্য ভাবতে শুরু করে।

শিশু কি এভাবে আদৌ কিছু শিখছে?

ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়, ঠিক তেমনই শিশুকে এভাবে লজ্জা দেয়ার কারণে হয়ত তাৎক্ষনিক ফলাফল আপনি পেতে পারেন। শিশু কিছুটা লজ্জা অথবা অপমানের কারণে হয়ত কিছুদিন সেই অন্যায় বা ভুল করার সময় একটু সতর্ক থাকল। কিন্তু এসব থেকে শিশু কিন্তু আসলে কিছু শিখতে পারে না। কেননা-

১। মন থেকে নয় বরং কোন একটি ভয় থেকে শিশু এই ভুল বা অন্যায় করা থেকে বিরত থাকছে। শিশুর মানসিক বিকাশে এই ভয় বা জড়তা পরবর্তীতে অনেক বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

২। এই পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠা শিশুরা সাধারণত নিজেদের ভুল ত্রুটি নিয়ে চিন্তিত থাকে। তাদের চারপাশের মানুষ সম্পর্কে তার উদাসীন থাকে। অন্যদের কিছুতেই তাদের কিছু যায় আসেনা। অন্যদের প্রতি তাদের কোন সহানুভূতিও তেমন একটা থাকেনা।

৩। এমন আচরণের কারণে শিশুর মধ্যে হতাশা বা ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে। শিশু নিজেকে অসহায় মনে করতে পারে—এবং তার মধ্যে এই মনোভাব সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে যে ‘দুর্বলের প্রতি এভাবে রুঢ় হওয়াটাই স্বাভাবিক’।

৪। যেহেতু সত্য প্রকাশ পাওয়ার কারণে শিশুকে এমন একটি অপমানজনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হল, তাই সত্য গোপন করার ব্যাপারে বা মিথ্যা বলার ব্যাপারে শিশু উৎসাহী হয়ে উঠতে পারে।

৫। এই ধরণের আচরণের ফলে সম্পর্কের উপর চাপ তৈরি হতে পারে। শিশু নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করে বাবা-মা যেমন চায় তেমন ভাবেই। কিন্তু এটি আত্ম-বিধ্বংসী একটি প্রক্রিয়া। এতে সে আপনার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পরতে পারে, তার সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। কখনো কখনো বাবা মায়ের উপর ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হতে থাকে যা বড় বয়সে গিয়ে প্রকাশ পায়।

৬। এতে শিশু বাড়তি চাপ অনুভব করে এবং মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস কমে যেতে থাকে। শিশু নিজেই মনে করতে থাকে বাবা মা যেহেতু বলছে অতএব আমি কোন কিছুর জন্য ভালো না। শিশুরা এমনকি নেশা বা নানা অপরাধে জড়িয়ে পরে

৭। আপনার উচ্চারিত শব্দগুলো তাকে শুধরে না দিয়ে আরও একগুঁয়ে করে দিতে পারে, আপনার সাথে সন্তানের মানসিক দূরত্ব তৈরি করতে পারে, তার ভেতর পরামর্শ না নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করে দিতে পারে। গবেষণায়ও এমন ব্যাপারগুলো বারবার উঠে এসেছে।

তাহলে শিশুর প্রতি কি ধরণের আচরণ করা উচিৎ?

শিশুর মত সরল বা শিশুর মত কোমল, এই কথাগুলো আমরা প্রায়ই বলে থাকি। একটি শিশু কিন্তু আসলেও অনেক সরল ও কোমল মনের অধিকারী হয়ে থাকে। তার চাওয়া পাওয়ার গণ্ডিটাও অনেক ছোট এবং সেটা তার কাছের অল্প কয়েকজনকে ঘিরেই।

প্রিয় মানুষদেরকে সবসময় শিশু তার আশেপাশে হাসিখুশি দেখতে চায়। আপনারও উচিৎ শিশুর কোমল মনের উপর যাতে কোন বিরূপ প্রভাব না পরে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। আর ভুল, দোষ কিংবা অন্যায় এগুলো প্রত্যেকটি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, হোক সেটা ছোট কিংবা বড়। তবে ছোট মানুষের ভুল বা অন্যায়ের পরিধিও অনেক ছোট থাকে, আর তাই লঘু পাপে শিশুর যাতে গুরু দণ্ড না পেয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

  • শিশুর প্রতি আচরণের দিকে মনোযোগ দিন

শিশুর প্রতি রুঢ় আচরণ করা ছাড়াই কীভাবে শিশুর আচরণ ঠিক করা যায় সেদিকে মনোনিবেশ করুন। শান্ত হয়ে বসে শিশুর সাথে কথা বলুন। শিশুকে বুঝার চেষ্টা করুন এবং  শিশুকেও তার অন্যায়ের কথা বুঝিয়ে বলুন।

  • বোঝার চেষ্টা করুন তার করা অন্যায়টা ইচ্ছেকৃত নাকি নিছক দুর্ঘটনা

শুরুতেই যেটা বিবেচনায় আনতে হবে তা হলো, শিশু যে ভুলটি করেছে তা কি ইচ্ছেকৃত নাকি নিছক দুর্ঘটনা? বাচ্চারা অনেক সময় দুষ্টুমির ছলেও ভুল করে বসে, এটাও মাথায় রাখতে হবে।

বিজ্ঞাপণ

তবে ভুলটা যেমনই হোক না কেন প্রথমে শিশুকে ভুল স্বীকার করতে উৎসাহিত করতে হবে।

সন্তান ভুল স্বীকার করলে বাবা-মা কি এবার তাকে ইচ্ছেমতো লজ্জা দেবে? অপমান করবে? গালমন্দ করবে? একদম না। এসব করলে বরং হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তাহলে কী করা উচিত? প্রথমেই সন্তানকে নিজের ভুল স্বীকার করার জন্য ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। তাকে নিজের ভুলটা শুধরে নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা উচিত। অভিভাবকের এমন কোনো কথা বা আচরণ করা উচিত নয় যার ফলে শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

  • আপনি শিশুকে কি বলছেন আর কীভাবে বলছেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

‘আমি তোমার উপর খুব রেগে আছি’ অথবা ‘তুমি খুব দুষ্ট হয়ে গেছ’ এগুলো না বলে বরং শিশুকে বলুন ‘তোমার এই অন্যায়ের কারণে আমি রেগে আছি’ অথবা ‘তুমি ইদানীং খুব দুষ্টুমি করছ’।

আপনি হয়ত ভাবতে পারেন দুই ধরণের কথার মধ্যে পার্থক্য কি? পার্থক্যটা  বিশাল! প্রথম বাক্যটি নির্দেশ করে আপনি শিশুকে অপছন্দ করছেন আর দ্বিতীয় বাক্যটি বোঝায় আপনি কাজটিকে অপছন্দ করছেন। এই ধরণের কথা শিশুর উপর মনস্তাত্ত্বিক বেশ প্রভাব ফেলে।

  • নিজেই একজন সহানুভূতিশীল মানুষ হয়ে উঠুন

আপনি শিশুকে একজন ভালো এবং সহানুভূতিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাচ্ছেন” আর এটা কেই বা না চায়! তবে শিশুকে এভাবে গড়ে তুলতে হলে তার আগে আপনার নিজেকেই একজন সহানুভূতিশীল মানুষ হয়ে উঠতে হবে। কেননা শিশুর জীবনের প্রথম এবং সবচাইতে আপন মানুষ আপনিই—আর আপনাকেই শিশু সবসময় অনুকরণ করার চেষ্টা করবে।

  • শিশুকে ভিন্নভাবে বুঝানোর চেষ্টা করুন

ধরুন শিশু একটি অন্যায় করেছে, এখন শিশুকে প্রথমেই বলুন যে, ‘তুমি তো আসলে অনেক ভালো! হয়ত ভুল করে এই কাজটি করে ফেলেছ’ অর্থাৎ আপনি যে শিশুকে খুব ভালো এবং ভদ্র হিসেবে জানেন এটা শিশুকে বুঝতে দিন।

শিশু যদি এটা বুঝে উঠতে পারে, তাহলে দেখবেন শিশু আরো অনেক ভালো হয়ে উঠার চেষ্টা করবে। আর ছোটবেলায় একটু দুষ্টুমি কিংবা অন্যায় অনেক শিশুই করে থাকে, আর এটা খুবই স্বাভাবিক। এমতাবস্থায় সেটা শিশুকে বুঝালেই হয়! এটা অনেক বড় কিছু নয়।

  • সন্তানকে কোন উপাধি বা বিশেষণে ভূষিত করা থেকে বিরত থাকুন

যদি শিশুকে বার বার কোন অবমাননাকর কথা বলা হয় তবে তা তার উপর বেশ দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। এতে তার নিজের প্রতি ধারণা পাল্টে যেতে পারে।যেমন-  যদি তাকে নিয়মিত মিথ্যাবাদী বলা হয় তবে সে নিজেকেই সেটা ভাবতে শুরু করতে পারে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে পারে।

  • তুলনা করা থেকে বিরত থাকুন

শিশুকে কখনো অন্য শিশু বা অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করবেন না। প্রতিটি শিশুই কিন্তু তার মতো করে বিশেষ। তাকে অন্য কারো মতো হতে বলবেন না। সে তার মতো হবে, এটাই শেখান। তুলনা করলে শিশুর আত্মবিশ্বাস কমে যায়।

নিজের অজান্তেই যেভাবে আমরা শিশুদের শেইমিং করছি

নিজের অজান্তেই অনেক সময় বাবা মায়ের শিশুকে শেইমিং করে ফেলে। আপনি হয়ত বুঝতেই পারছেন না, কিন্তু এদিকে আপনার শিশু নিজের উপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে! আসুন তাহলে এই ধরণের কিছু কাজ সম্পর্কে একটু ধারণা নিয়ে নেইঃ

শিশুর প্রত্যেকটি কাজ আপনি নিজে করে দেয়াঃ ধরুন বাইরে কোথাও ঘুরতে বের হবেন, সবাইকে দ্রুত তৈরি হয়ে নিতে বলছেন। কিন্তু দেখলেন আপনার শিশু নিজেই জামা পড়তে চাইছে কিন্তু সে বেশ হিমশিম খাচ্ছে। আপনি অধৈর্য হয়ে তার কাছ থেকে জামা নিয়ে পরিয়ে দিলেন। এটাও কিন্তু এক প্রকার শেইমিং।  

আপনি যদি শিশুকে কাজ করতে না দিয়ে নিজেই সব করে দেন, আর তাকে বলেন যে সে করতে পারবে না, তাহলে শিশুও মনে করতে থাকবে যে সে কিছু করতে পারবে না।

শিশুকে নিজের কাজ নিজেকেই করার উৎসাহ দিন। তবে হ্যাঁ! অবশ্যই শিশুর সেই কাজটি করার মত বয়স হতে হবে অবশ্যই। এই ধরণের ছোট ছোট কাজগুলো শিশু যখন আপনার কোন সাহায্য ছাড়াই করতে পারবে তখন তার নিজের উপর আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে।

শিশুর পছন্দ নিয়ে তিরস্কার করাঃ  ধরুন আপনার শিশু এমন এক রঙের জামা পছন্দ করেছে, যে রঙটি আপনার মোটেও পছন্দ হয়নি। তখন শিশুকে সেই পছন্দের জন্য যদি আপনি তাকে লজ্জা দেয়া শুরু করেন আর সবার সামনে বলতে থাকেন, “এটা কি ধরণের বাজে রঙ পছন্দ করলে তুমি” তাহলে শিশু প্রচণ্ড মনকষ্টে ভুগবে। এভাবে না বলে যদি আপনি মনে করে থাকেন যে এটা শিশুর জন্য ভালো হবে না, তাহলে সেটা শিশুকে একান্তে বুঝিয়ে বলুন। 

বিজ্ঞাপণ

শিশু কাঁদলে তাকে লজ্জা দেয়াঃ শিশু যখন কান্না করবে তখন তাদেরকে সাহস দিন। এমন কিছু বলবেন না যাতে কান্না করার জন্য শিশু নিজে নিজে লজ্জা পায়। আমরা অনেকেই বলে থাকি, “আরে তুমি মেয়েদের মত কাঁদছ কেন?” অথবা “তুমি এমন সব কথায় কান্না কর কেন?”। এই ধরণের কথা না বলে বরং শিশুর কান্নার উৎস খুঁজে বের করুন এবং সেই বিষয়ে শিশুকে সাহস দিন এবং সমাধানের চেষ্টা করুন।

শিশুকে নিয়ে তার সামনেই হতাশা প্রদর্শন করাঃ  নতুন যে কোন কিছু শিশুকে শেখানো শুরু করাটা বাবা মায়ের জন্য বেশ উচ্ছ্বাসের একটি বিষয়। তবে সেই নতুন জিনিসটি শিখে নিতে শিশুর যদি কিছুটা দেরিও হয়, তবু শিশুর সামনে আপনি কখনই হতাশা প্রকাশ করবেন না। বরং শিশুকে পুনরায় চেষ্টা করার জন্য উৎসাহ প্রদান করুন এবং আরেকবার ভেবে দেখুন আপনি তার কাছ থেকে যা প্রত্যাশা করছেন তা তার বয়সের তুলনায় বেশি হয়ে যাচ্ছে কিনা।

সবার সামনে বকাঝকা করাঃ  ধরুন আপনার সন্তান খেলার মাঠে অথবা অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলার সময় কোন একটি অন্যায় করে ফেলল, তখন সবার সামনে শিশুকে বকাঝকা করা থেকে বিরত থাকুন। আপনি বরং শিশুকে খেলার স্থান থেকে বাসায় নিয়ে চলে আসুন এবং একান্তে শিশুকে বুঝিয়ে বলুন যে সে কি অন্যায় করেছে।

যদি ইতিমধ্যেই সন্তানের সাথে এমন আচরণ করে থাকেন

আমরা মানুষ, আর মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। বাচ্চাদের কাছে ভুল স্বীকার করার এবং ক্ষমা চাওয়ার সৎসাহস থাকা জরুরী। এতে তারা বুঝতে পারবে যে আমরা তাদের সম্মান করি ও গুরুত্ব দেই। এতে বাচ্চারা শেখে, কেউ ভুল করলে তার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ, এবং একই ভুল বার বার করা উচিৎ নয়।

সন্তানের কাছে ক্ষমা চাইতে পারলে তা আপনাদের সম্পর্ককে আরও অনেক বেশি মজবুত করবে। এই সম্পর্ককেই আপনি শিশুর আচরণ শোধরানোর সবচাইতে বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন, শেইমিং এর কোন প্রয়োজনই পরবেনা।

শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য আদর ও যত্নের সাথে লালন পালন করা খুবই জরুরী। মনে রাখবেন আজ যদি আপনি শিশুর সাথে রুঢ় আচরণ করেন তাহলে শিশুও কাল আরেকজনের সাথে রুঢ় আচরণ করবে। যে কোন সমস্যায় শিশু যেন আপনাকে ভয় না পেয়ে বরং আপনার কাছেই আসে সমাধানের আশায়। শিশুর সেই আস্থার যায়গাটি হয়ে উঠুন—পরিশেষে শিশুকে ভালবাসুন।

সবার জন্য শুভকামনা


Spread the love

Related posts

Leave a Comment