শিশুরা কেন মিথ্যা বলে এবং এ ব্যাপারে বাবা-মায়ের করণীয় কি

Spread the love

সন্তান প্রতিপালন সবসময়ের জন্যই কঠিন এক দায়িত্ব। বাচ্চা মানুষ করতে নানা ধরনের খারাপ-ভাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এমনই একটি সমস্যা হচ্ছে শিশুর মিথ্যা বলা। প্রায় সব বাচ্চাই কমবেশি মিথ্যা বলে এবং বাবা-মা এটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।

শিশুর মিথ্যা বলার সাথে যেসব বিষয় জড়িত তা নিয়েই আজকের লেখাটি সাজানো হয়েছে। আশাকরি এই লেখাটি আপনাদের প্যারেন্টিং এ কিছু উপকারী দিক সংযুক্ত করতে সহায়ক হবে।

বিজ্ঞাপণ

শিশুরা কেন মিথ্যা বলে?

শিশুর মিথ্যা বলার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। বয়স-ভেদে সেই কারণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। সাধারণত শিশুরা নিম্নোক্ত কারণে মিথ্যা বলে থাকে:

শাস্তির ভয়

বেশিরভাগ শিশুই বাবা-মার শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেতে মিথ্যা বলে। যেসকল ক্ষেত্রে সত্য বললে শাস্তি পেতে হতে পারে সেসব বিষয়ে শিশু মিথ্যাকে নিজের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

যেসব পরিবারে শিশুর কাছ থেকে অতিরিক্ত প্রত্যাশা করা হয় সেসব শিশুকে মাঝে মাঝেই মিথ্যার দ্বারস্থ হতে দেখা যায়। শিশু হয়ত ভুল করে কোন কিছু ভেঙ্গে ফেলল, এখন যদি তার বাবা-মা খুব কড়া হয় তাহলে দেখা যাবে যে নিজেকে বাঁচাতে শিশুটি বলবে যে সে কাজটি করেনি।

কল্পনাপ্রসূত কাহিনী

অনেক বাচ্চারা wishful imaginative play বা কল্পনা থেকেও বানিয়ে বানিয়ে অনেক কিছু বলে ফেলে। প্রায় সব বাচ্চাই কোন না কোন সময় মনগড়া গল্প বলে। তারা বুঝতেও পারেনা যে তারা মিথ্যা বলছে। তাদের কল্পনার জগতে যা ঘটে তাই তারা সত্য মনে করে বলে, যা আসলে সত্য নয়।

বন্ধু-মহলে বিশেষ মর্যাদা বা মনোযোগ লাভের আশায়

একটু বড় হলে বিশেষ করে স্কুলে যখন যাওয়া শুরু হয় তখন অনেক শিশুই মিথ্যা বলা শুরু করে। নিজকে অন্যদের চেয়ে আলাদা প্রমাণ করতেই তারা একাজটি করে থাকে।

নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা বা সুবিধাপ্রাপ্ত প্রমাণ করতে সে মিথ্যা বলতে পারে। তার হয়ত কোন বারবি ডলের সেট নেই কিন্তু তবুও সে বন্ধুদের বলে যে তার বারবি ডল আছে। এই কাজ সে করে অন্যদের চোখে সেরা হওয়ার বাসনা থেকে।

অনেক সময় সবার মনোযোগ আকর্ষণের জন্যও শিশুরা মিথ্যা বলে। বিশেষত অবহেলিত শিশুদের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যায়।

অনিশ্চয়তা আর আত্ম-মর্যাদার অভাব থেকে অনেক সময় শিশুদের মধ্যে বাড়িয়ে বলার অভ্যাস দেখা যায়। এটাও এক ধরনের মিথ্যা কথা বলা। খেলার সাথিদের সঙ্গে পাল্লা দিতে, সবাইকে নিজের বাহাদুরি দেখাতে শিশুরা এমন মিথ্যা বলতে পারে।

স্কুলের নতুন পরিবেশে অনেক নতুন মুখের সঙ্গে পরিচিতি শিশুদের মধ্যে অনেক সময় ভীতি তৈরি করতে পারে। ওরা হয়তো নিজেদের ভুল-ত্রুটি আড়াল করতে মিথ্যা বলতে পারে। নিজের ভুলটুকু অন্যের চোখে পড়লে বাকিদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত হয়েও তারা এধরনের কাজ করতে পারে।

যে কাজ করতে অনিচ্ছুক তা এড়িয়ে যেতে

অনেক শিশুই তার উপর অর্পিত দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে মিথ্যা বলে থাকে। হয়ত রাতে ব্রাশ করতে তার ভাল লাগেনা কিন্তু ব্রাশ না করলে মা বকা দিবে। এরকম ক্ষেত্রে সে এমন কিছু বলতে পারে যাতে করে তাকে কাজটি না করতে হয় অথবা দাঁত ব্রাশ না করেও সে বলতে পারে যে সে ব্রাশ করেছে।

বাবা-মার মনে কষ্ট না দিতে

অনেকসময় আমরা আমাদের সন্তানদের নিকট অনেক-বেশি প্রত্যাশা করে ফেলি। এরকম ক্ষেত্রে বাবা-মা যেন মনে কষ্ট না পায় এটা ভেবে অনেক বাচ্চা মিথ্যা বলাকে যথার্থ মনে করে।

পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে মা কষ্ট পায় এটা বুঝতে পেরে অনেক শিশুই তাদের প্রকৃত ফলাফল তাদের বাসায় গোপন করে। তারা যে মিথ্যা বলে অন্যায় করছে এই বোধ অনেকের মধ্যই জাগ্রত হয় না।

কখন থেকে শুরু হয় মিথ্যা বলা?

সেরকম  কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই তবে সাধারণত তিন বছরের পর থেকে শিশুর মিথ্যা বলার বিষয়টি প্রকাশ পায়। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ৪২ মাসের শিশুও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে আবার অনেক শিশুরা তিন বছর হওয়ার আগেও মিথ্যা বলা শুরু করতে পারে।

১৮৭৭ সালে চার্লস ডারউইন বলেন ৩০ মাস বয়সী শিশুরাও মিথ্যা বলার ক্ষমতা রাখে কারণ তিনি তার নিজের সন্তানের মধ্যে সেই প্রবণতা লক্ষ্য করেছিলেন।ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক জরীপে ফলাফল পান যে ২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৬৫ ভাগ এবং ৪ বছর বয়সীদের শতকরা ৯৪ জন অন্তত একবারের জন্য হলেও মিথ্যা বলেছে।

শিশু যখন বুঝতে পারে যে আপনি তার মনের গোপন বিষয়টি সবসময় নাও জানতে পারেন তখন তার জন্য মিথ্যা বলা একটি অপশন হয়ে দাড়ায়। সে নিজের দোষ আড়াল করতে সত্য লুকানোর পন্থাকে নিজের জন্য ভাল মনে করতে পারে। 

একটি গবেষণা মতে ২-৩ বছরের শিশুরা মিথ্যা বলা শুরু করে তাদের অন্যায় লুকাতে। এসময় তারা যার সাথে মিথ্যা বলা হচ্ছে তার কথা মাথায় রাখেনা বা সেটা বোঝার ক্ষমতাও তাদের থাকেনা।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশুর মিথ্যা বলার হারও বাড়তে থাকে। ৪-৬  থেকে বছরের শিশুদের বলা মিথ্যা আগের চাইতে অনেকটা বিশ্বাসযোগ্য হয় এবং যাকে মিথ্যা বলা হচ্ছে তার কথা মাথায় রেখেই তারা মিথ্যা সাজাতে চেষ্টা করে। এমনকি এ সময় তারা তাদের মুখভঙ্গি এবং কণ্ঠস্বরও তার মিথ্যা বলার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রাখতে সক্ষম থাকে।

আস্তে আস্তে তারা বড় হতে থাকে এবং সত্য আড়াল করে মিথ্যার আশ্রয় নিতে নানা কৌশল রপ্ত করে। যেহেতু তারা অপরের মনোভাব বুঝতে অনেকটাই সক্ষম থাকে তাই তাদের মিথ্যা সহজে ধরা পড়েনা এবং এর পেছনে অনেক যুক্তিও তারা তৈরি করে ফেলে।

শিশুর মিথ্যা বলা নিয়ে বাবা মায়ের করণীয় কি

সন্তানের জন্য সবচেয়ে অনুকরণীয় রোল মডেল কিন্তু বাবা-মা। প্রায় সব শিশুই তার বাবা-মার আচার-আচরণ কে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করে থাকে। আপনি যদি চান আপনার সন্তান সবসময় সত্য বলুক তাহলে আপনাকে মিথ্যা পরিহার করতে হবে।

বাচ্চা যদি বুঝতে পারে যে তার বাবা-মা মিথ্যা বলে তাহলে সে মিথ্যা বলাকে খুব স্বাভাবিকভাবেই নিবে। সততা ও সত্যবাদিতার শিক্ষা অবশ্যই পরিবার থেকে আসতে হবে। শিশুর ভুল বয়স বলে কোন রেস্টুরেন্ট বা পার্কে বিশেষ সুবিধা নেয়াটা ঠিক নয়। বিশেষ করে শিশুর সামনে এমনটা করা একেবারেই উচিত নয়। এ কাজটা আমরা প্রায় সময় করি যখন বিমানের টিকেট কাটি।এতে ওরা ভাবতে পারে প্রয়োজনে মিথ্যা বলাই যায়।

ছোট বাচ্চারা নানা কারণেই মিথ্যা বা মনগড়া কথা বলতে পারে। এই ব্যাপারে উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতন হওয়া শ্রেয়। বাচ্চা কেন মিথ্যা বলে, কি পরিস্থিতিতে বলে এগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তার মিথ্যা বলার বিষয়ে সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব।

সন্তানকে মিথ্যা বলা পরিহার করাতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। যেমন-

সততার শিক্ষা দেয়া

সন্তানকে সততার সংজ্ঞা শিখাতে হবে। আমদের জীবনে সততা কতোটা জরুরি তা বুঝাতে পারলে শিশুকে সত্য বলানো অনেকটাই সহজ হবে। গল্পের ছলে বাচ্চাকে বুঝাতে পারেন যে সততা কি এবং সৎ হওয়া কেন প্রয়োজন।

রূপকথা, উপকথার এমন গল্পগুলো শিশুদের শোনান যেখান থেকে ওরা ভালো কিছু শিখতে পারে, যাতে ভালো কাজ আর মন্দ কাজ সম্পর্কে ওরা বুঝতে পারে। শিশুদের সততা শেখাতে এসব রূপকথার গল্পের বেশ ভালো প্রভাব আছে। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, গবেষণায় দেখা গেছে মিথ্যা বলার কারণে শাস্তি পাওয়ার গল্পের চাইতে সৎকাজের পুরষ্কার পাওয়ার গল্প শিশুকে সততা শেখাতে অনেক বেশি কার্যকরী।

বিজ্ঞাপণ

কেন মিথ্যা বলেছে তা জানতে হবে

মিথ্যা বললে তৎক্ষণাৎ রেগে গিয়ে শিশুকে শাস্তি দেয়াটা আসলে কার্যকর পদক্ষেপ নয়। সন্তান কেন এবং কি কারণে মিথ্যা বলেছে তা জানাটা প্রয়োজন। বয়স-ভেদে মিথ্যা বলার কারণ ও মিথ্যা বলার ধরন ভিন্ন হয়। ৫ বচর বয়সী বাচ্চা আর ১২ বচর বয়সী বাচ্চা সাধারণত একই কারণে মিথ্যা বলে না। এই কারণটা অনুসন্ধান করাটা বাবা-মার জন্য জরুরি।

যদি শিশু কল্পনা প্রসূত গল্প বলে এবং গল্পে যদি কারো সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু না থাকে তবে সেটাকে মিথ্যা বলে ধরার প্রয়োজন নেই। বরং তাকে উৎসাহ দিন, তার কাছে সেই গল্প এবং গল্পের চরিত্র গুলো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চান। এসব তার চিন্তাশক্তির বিকাশে সাহায্য করে।

সে যদি কোন অন্যায় ঢাকার জন্য বানিয়ে গল্প বলে তবে প্রথমেই তাকে অভয় দিন যে সত্য বলার জন্য সে কোন শাস্তি পাবেনা। সে সত্যটা স্বীকার করলে তার প্রশংসা করুন এবং তাকে বুঝিয়ে বলুন দোষ ঢাকতে মিথ্যা বলাটা সহজ মনে হলেও সত্য স্বীকার করে নেয়াটাই সবচাইতে ভালো।

সন্তানের মন থেকে ভয় দূর করে দিন

হয়তো আপনার সন্তান ভাবছে, সত্যটা জানলে আপনি অনেক রাগ করবেন, কষ্ট পাবেন, হয়তো তাকে আর আগের মতো ভালবাসবেন না, আদর করবেন না। ফলে সে যেকোনো মূল্যে সত্যটা গোপন করার চেষ্টা করবে,  আপনাকে জানাতে ভয় পাবে, ইতস্তত করবে।

তাই অভিভাবকদের প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো সন্তানের মন থেকে এধরনের ভয় দূর করা।শিশুকে প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দিন যে আপনি তাকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। সন্তান যত বড় ভুলই করুক না কেন, আপনি তার পাশে আছেন; এই মর্মে তাকে আশ্বস্ত করুন। সন্তানের অনুভূতি, ভাবনা, ভুল; সবকিছু নিয়ে কথা বলার জন্য আপনি তার পাশে থাকবেন বলে কথা দিন।

প্রকৃতপক্ষে গবেষণায় দেখা গেছে মিথ্যা বলার কারণে যদি বকাঝকা করা হয় বা শাস্তি দেয়া হয় তাতে মিথ্যা বলার পরিমাণ আরও বাড়ে। তাই শিশুকে আশ্বস্ত করুন যে সত্য বলার জন্য আপনি রাগ করবেন না এবং সত্যটাই আপনার কাছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ।

সন্তানকে শাস্তি নয় বরং পরিণতি ভোগ করতে দিন

শাস্তি এবং পরিণতি এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য হলে শাস্তি দেয়া আসে মনের রাগ থেকে আর পরিণতি ভোগ করতে দেয়ার উদ্দেশ্য হলো কোন অন্যায় আচরণ শুধরে দেয়া। যেমন শিশু যদি মেঝেতে পানি ফেলে বলে যে সে ফেলেনি তবে সে কেন মিথ্যে বলছে তা নিয়ে না ভেবে তাকে বলুন মেঝে তাকেই পরিষ্কার করতে হবে।

এতে ভবিষ্যতে সে মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে বরং তার ভুল কিভাবে শুধরে নিতে হবে সেদিকে মনযোগী হবে।

সন্তানকে কখনো মিথ্যুক বা মিথ্যাবাদী বলবেন না

যদি শিশুকে বার বার এসব শব্দ বলা হয় তবে তা তার উপর বেশ দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। এতে তার নিজের প্রতি ধারণা পাল্টে যেতে পারে। যদি তাকে নিয়মিত মিথ্যাবাদী বলা হয় তবে সে নিজেকেই সেটা ভাবতে শুরু করতে পারে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে পারে।

মিথ্যার কারণ ব্যখ্যা করা

আপনি যদি একান্ত প্রয়োজনে কখনো বাচ্চার সামনে মিথ্যা বলে থাকেন তাহলে সেটার কারণ ব্যাখ্যা করবেন। বাচ্চা যেন বুঝতে পারে যে মিথ্যা আসলে কোন স্বাভাবিক পছন্দনীয় বিষয় নয়।

যেমন ধরুন কেউ আপনার জন্য কিছু একটা রান্না করলো কিন্তু তা অতিশয় বিস্বাদ হওয়াতে আপনি তা খেলেন না। কিন্তু সে ব্যাক্তিকে আপনি বললেন খাবার খুব মজা হয়েছে। এই যে মিথ্যা আপনি বললেন সেটাও আপনার বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলাটা জরুরী। তাকে বলুন যে সবার সাথে সদয় আচরণ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর মিথ্যা বলা কি চিন্তার বিষয়?

শিশু মিথ্যা বললে শুরুতেই এত ঘাবড়াবার কিছু নেই। প্রাকৃতিকভাবেই শিশুরা মিথ্যা বলা শুরু করে। তাদের কল্পনাশক্তির ও বহিঃপ্রকাশ ঘটে সত্যর বাইরে কিছু বলার মাধ্যমে।

তবে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশুর মিথ্যা বলার কারণ অনুসন্ধান করাটা জরুরি। যদি সে ক্রমাগত মিথ্যা বলতেই থাকে তাহলে এটা অবশ্যই ভাবনার বিষয়। শিশুদের কারণে-অকারণে মিথ্যা বলার প্রবণতা কিন্তু বড় কোনো আচরণগত বা মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

মিথ্যার কুফল বোঝানোর পরেও যদি বাচ্চার মধ্যে অহরহ মিথ্যা বলার প্রবণতা থাকে, যদি মিথ্যা বলার কারণে শিশুর স্কুলে বা বিভিন্ন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ করতে হবে।

শিশুকে সত্য বলতে উৎসাহিত করা

বাচ্চা যখন কিছুটা বড় হবে এবং ভাল খারাপ বিচার করার সক্ষমতা অর্জন করতে শুরু করবে তখন তাকে বোঝানো শুরু করতে হবে।

কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা, কেন মিথ্যা বলা উচিত নয় এই বিষয়গুলো তার সাথে আলোচনা করা যায়। তাকে সততার গুরুত্ব শেখানোর চেষ্টা করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।

বাচ্চাকে এভাবে বলা যায় “ তোমার কি ভাল লাগত যদি তোমার মা তোমার সাথে মিথ্যা বলত?”

মিথ্যা বলতে হয় এরকম পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। হয়ত আপনার শখের গ্লাসটি আপনার ছেলে ভেঙ্গে ফেলেছে। আপনি রাগ করবেন এটা ভেবে সে হয়ত তার দোষ স্বীকার করতে ভয় পেয়ে মিথ্যা বলবে। আপনি যদি আগেই তাকে বলেন যে এটা একটা দুর্ঘটনা, এরকম হতেই পারে, তাহলে সে ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতিতে সত্য বলার সাহস পাবে।

শিশুকে মাঝে মাঝে পুরস্কার বা প্রশংসা করেও উৎসাহ দেয়া যেতে পারে। সে যদি কোন ভুল করে সেটা স্বীকার করে এবং আপনি যদি তার সততার জন্য তাকে বাহবা দেন তাহলে সে সততার চর্চা অব্যাহত রাখতে আগ্রহ পাবে।

শিশুর মনগড়া কাহিনিঃ কিভাবে সামলাবেন

ছোট বাচ্চারা অনেকসময় অনেক মনগড়া গল্প বলে থাকে। তাদের কল্পনাশক্তির ই বহিঃপ্রকাশ এই গল্প বানানো। আপনার বাচ্চা যদি এরকম কাল্পনিক গল্প বলা শুরু করে তাহলে উদ্বিগ্ন হবেন না। তার স্বাভাবিক বেড়ে উঠারই লক্ষণ প্রকাশ পায় এরকম কল্পকাহিনীর মাধ্যমে।

বাচ্চা যখন এরকম গল্প বলা শুরু করবে তাকে এটা নিয়ে বকাঝকা না করে তার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। মনে করুন সে বানিয়ে বানিয়ে একটা রাক্ষসের গল্প বলল, এক্ষেত্রে আপনি তাকে বলতে পারেন

“খুব সুন্দর হয়েছে তোমার গল্পটি, আমরা এটা নিয়ে একটা ছবি আঁকতে পারি “ ।

এভাবে সে তার কল্পনাশক্তির প্রয়োগ করতে পারবে আবার সেইসাথে সে এটাও বুঝবে যে এটা আসলে বাস্তবতা নয় এটা নিছক গল্প।

সব শিশুই কম বেশি মিথ্যা বলে। সব মিথ্যা নিয়ে হয়তো চিন্তার কিছু নেই তবে যেটা জরুরী সেটা হলো অসৎ আচরণ সম্পর্কে শুরু থেকেই সাবধান থাকতে হবে যাতে তা অভ্যাসে পরিণত না হয়।

সবার জন্য শুভকামনা।  


Spread the love

Related posts

Leave a Comment