জন্মের পর থেকে নবজাতকের প্রথম কয়েক মাস সময়টি বাবা মায়েদের জন্য একটু কঠিন। তবে যেহেতু এক মাস অতিক্রম হয়েছে, আপনি অনেকটাই নবজাতকের দেখাশোনায় একটু একটু করে পারদর্শী হয়ে উঠছেন। রাত জাগা আর গর্ভকালীন শারিরিক ধকলের কারণে আপনার শরীর ও মন কিছুটা বিক্ষিপ্ত থাকলেও , এই সময়ের সবচেয়ে আনন্দময় যে ব্যাপারটি হয়ে থাকে, তা হলো আপনার সদ্য এক মাস পেরুনো ছানাটি হাসতে শেখা শুরু করতে পারে।
দ্বিতীয় মাসে শিশুর খাওয়া
সাধারণত ব্রেস্টফীড করা ১ মাস বয়সী শিশুরা প্রতি ২-৩ ঘণ্টা অন্তর খেতে চাইবে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এই গ্যাপটি আরেকটু বেশি হতে পারে বিশেষ করে যদি শিশুটির লম্বা সময় ধরে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে। অনেক শিশু একটানা ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত ব্রেস্টফীড করতে পারে। আবার কেউ কেউ অল্প সময় ধরে কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর খেতে চাইতে পারে। এটিকে ক্লাস্টার ফীডিং বলে
শিশুর ক্ষুধার লক্ষণগুলোর দিকে খেয়াল রাখুন এবং যখনই সে খেতে চাইবে তাকে খেতে দিন। এসময় প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৮-১২ বার খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়তে পারে।
যেসব শিশুরা ফর্মুলা খায় তারা প্রতি ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অন্তর ৪ থেকে ৫ আউন্স (অর্থাৎ ১২০ থেকে ১৫০ মিলি ) ফর্মুলা খেতে পারে। যদি শিশুটি মিক্সড ফেড হয় অর্থাৎ বুকের দুধ ও ফর্মুলা দুটোই খায় সেক্ষেত্রে বুকের দুধের পাশাপাশি যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু ফর্মুলা দিলেই চলবে।তবে উভয়ক্ষেত্রেই প্রতিবার খাওয়ানোর পর সোজা করে ধরে, পিঠে হাল্কা চাপড় দিয়ে শিশুকে ঢেঁকুর তুলতে সাহায্য করুন।
আপনার মনে যদি প্রশ্ন আসে যে বাচ্চাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে খাওয়াতে হবে কিনা তবে এই বিষয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেয়াই ভালো। কারণ এই বিষয়টি শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং আরো কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করতে পারে। শিশুর বৃদ্ধি যদি কম থাকে বা কোনো মেডিকেল কন্ডিশনের কারণে যদি অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন পরে তবে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে খাওয়ানো গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিক শিশুদের ক্ষেত্রে ঘুম থেকে না জাগালেও সমস্যার কিছু নেই।
অনেক শিশুর ষষ্ঠ সপ্তাহের দিকে গ্রোথ স্পার্ট হতে পারে। গ্রোথ স্পার্ট বা দ্রুতবর্ধন হচ্ছে এমন একটি সময়কাল, যখন শিশুর বিকাশ অন্য যেকোনো স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি হয়। গ্রোথ স্পার্টের সময় শিশুর ওজন কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। খানিকটা লম্বাও হতে পারে, এমনকি মাথার পরিধিও কিছুটা বাড়তে পারে।
গ্রোথ স্পার্ট বা দ্রুতবর্ধনের অন্যতম লক্ষণ হলো এই সময় শিশু অনেক বেশি ক্ষুধার্ত থাকে। অন্য সময় তারা প্রতি তিন-চার ঘন্টা পরপর খেলেও এসময় তারা প্রতি দেড়-দুই ঘন্টা অন্তর ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে।তাছাড়া এই সময় তারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিক্ষণ ধরে ব্রেস্টফীড করে থাকে।
আবার তার স্বাভাবিক ঘুমের রুটিনের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তন হতে পারে। এসময় শিশু অন্য সময়ের তুলনায় বেশি খিটখিটে আচরণ বা অস্থিরতা প্রদর্শন করতে পারে।
দ্বিতীয় মাসে শিশুর ঘুম
জন্মের পর থেকে শুরু করে এক মাস অতিক্রম হবার পর, বাচ্চার ঘুমের তেমন কোন বড় পরিবর্তন আসে না। বেশ কয়েক ঘন্টা একটানা ঘুমানো এই বয়সী শিশুর কাছ থেকে আশা না করাই ভালো। এরা অল্প সময় ঘুমাবে, এবং ঘন ঘন খাবে, আবার ঘুমিয়ে পড়বে। এই বয়সে শিশুর দৈনিক ১৪-১৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
রাতে কোনো কোনো শিশু অনেকটুকু সময় ঘুমিয়েও কাটাতে পারে, সেক্ষেত্রে, আপনি হবেন গুটি-কয়েক সৌভাগ্যবান বাবা-মায়ের মধ্যে একজন। শিশুকে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো , কোলে নেয়া না নেয়া, কিংবা নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ানো ইত্যাদি অভ্যাস করানোর জন্য আরো বেশ কয়েকটি মাস অপেক্ষা করুন, এই বয়সে বাচ্চাকে তার নিজস্ব চাহিদামত ঘুম, খাওয়ানো এবং মায়ের সান্নিধ্যে রাখুন।
দিনের বেলায় যখন সে সজাগ ও সতেজ থাকে, তখন তার সাথে যত বেশি সম্ভব গল্প ও খেলাধুলা করুন। শিশুর রুম আলোকিত ও উজ্জ্বল রাখুন, দিনেরবেলায় গৃহস্থালির টুকিটাকি শব্দ যেমন ফোনের শব্দ, গান কিংবা থালা বাসন পরিস্কারের শব্দের ব্যপারে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আর রাতের বেলা যখন সে জেগে যায় তখন তার সাথে খেলাধুলা করবেন না, ঘরের আলো ও শব্দ কমিয়ে রাখুন এবং তার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিন। এটি শিশুকে দিন আর রাতের মাঝে পার্থক্য করতে সাহায্য করবে এবং সে বুঝতে শুরু করবে রাত হলো ঘুমানোর সময়।
শিশুকে নিজ থেকে ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগ দিন। তার মধ্যে যখন ঘুমিয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখবেন তখন তাকে তার বিছানায় রেখে দিন যাতে করে সে নিজ থেকেই ঘুমিয়ে যায়। এই ধরনের কাজের মুল উদ্দেশ্য হলো শিশু যাতে করে নিজে থেকেই ঘুমানো শিখে যায়, এতে করে পরবর্তীতে তাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য দীর্ঘ প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে না।
ঘুমানোর আগে কিছু কাজের রুটিন তৈরি করুন। এটা হতে পারে আপনার শিশুর কাপড় বদলানো, ঘুমপাড়ানি গান করা এবং রাতের বেলায় তাকে আদর করা ইত্যাদি। এবং এই রুটিনে ধারাবাহিক থাকার চেষ্টা করুন।
দ্বিতীয় মাসে শিশুর ওজন ও উচ্চতা
জন্মের পর থেকে দ্বিতীয় মাসের মধ্যে শিশুর ওজন সাধারণত গড়ে ২ পাউন্ড বা ১ কেজির মত বৃদ্ধি পায়। এই সময় একটি ছেলে শিশুর গড় ওজন হয় ৯.৯ পাউন্ড বা ৪.৫ কেজি এবং গড় উচ্চতা হয় ২১.৫ ইঞ্চির মত। মেয়ে শিশুর গড় ওজন থাকতে পারে ৯.০৪ পাউন্ড বা ৪.১ কেজি এবং গড় উচ্চতা থাকে ২২.৫ ইঞ্চি।
তবে মনে রাখবেন প্রতিটি শিশুর শারীরিক গঠন ভিন্ন। জন্মের সময় ৫ পাউন্ড ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুর বৃদ্ধি ১০ পাউন্ড ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুর মত হবেনা। যেটা সবচাইতে জরুরী তা হলো শিশুর বৃদ্ধির দিকে নজর রাখা এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে থাকা।
দ্বিতীয় মাসে শিশুর মলমূত্র ত্যাগ
শিশু বুকের দুধ খাক বা ফর্মুলা, জন্মের প্রথম ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত দিনে ২-৫ বার বা প্রতিবার খাওয়ার পর মলত্যাগ করতে পারে। তবে সে বুকের দুধ খাচ্ছে নাকি ফর্মুলা, তার উপর নির্ভর করে মলের ধরন ভিন্ন হতে পারে।
ছয় সপ্তাহ পর যখন শিশুর পরিপাকতন্ত্র সুগঠিত হয়ে ওঠে তখন তার মল-ত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে যায়।
বুকের দুধ খাওয়ানো শিশু ৭ দিন পর্যন্তও মলত্যাগ না করে থাকতে পারে। এমন হলে তার হাবভাবের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি তাকে সন্তুষ্ট মনে হয় এবং তার পেট নরম থাকে তাহলে তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি তার পেট শক্ত মনে হয় এবং তাকে অসন্তুষ্ট মনে হয় তবে ধরে নেয়া যায় সে কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেয়া উচিৎ।
ফর্মুলা খাওয়ানো শিশুদের দিনে অন্তত একবার মলত্যাগ করা স্বাভাবিক। এসব শিশু যদি ২ বা তার বেশীদিন মলত্যাগ না করে তবে ধরে নেয়া যায় সে কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত।
এক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ করতে হবে কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য অ্যালার্জির কারনে হতে পারে আবার হয়তোবা শিশুকে যে ফর্মুলা খাওয়ানো হচ্ছে তা তাকে সুট করছেনা বলেও হতে পারে।
এ বয়সী শিশুদের দৈনিক ছয় থেকে আট বার মূত্রত্যাগ করাকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়।
শিশুর কান্না
এসময় কোনো কোনো শিশু তুলনামুলকভাবে একটু বেশী কান্না করতে পারে।চেক-আপ করিয়ে যদি সব ঠিকঠাক পাওয়া যায়, তাহলে , আপনাকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। হয়তো আপনার শিশু ‘কলিক’ (কলিক নিয়ে বিস্তারিত জানতে কমেন্ট বক্সে দেয়া আমাদের ভিডিওটি দেখুন) । ২০ থেকে ৩০ ভাগ শিশুর জন্মের পর থেকে প্রথম কয়েক মাস এই ‘কলিক’ সময়টি যেতে পারে, এসময় বাবা-মায়ের বেশ কষ্ট হলেও, পরবর্তিতে শিশুর ওপর এর কোন প্রভাব থাকে না । কলিকের সময়টি অনেক বাচ্চার প্রথম তিন মাস, কিংবা কারো কারো ক্ষেত্রে আরেকটু প্রলম্বিত যেমন ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্তও থাকতে পারে।
যেহেতু কলিক কোন রোগ না এবং নির্দিষ্ট একটি সময় পর এই সমস্যা কেটে যায় তাই- এই বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নিলে কিছুটা রিলাক্সড থেকে শিশুকে শান্ত হতে সাহায্য করতে পারবেন। সদ্য পৃথিবীতে আসা প্রাণটির এখন নিরাপত্তা ও মমতার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। বিষয়টি একটু কঠিন হলেও মা, বাবা ও পরিবারের সদস্যরা একে অন্যকে সহযোগীতা করলে এই চ্যালঞ্জের সময়টি পার করে যেতে পারবেন। তাই বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা ভাগ করে বাচ্চার যত্নের কাজটি পালন করুন। মা ও বাবা দুজনে একসাথে ক্লান্ত হয়ে পরবেন না। সময় ভাগ করে একজন একজন করে বিশ্রাম নিন।
শিশুর টীকা
শিশুর বয়স ৪২ দিন বা ছয় সপ্তাহ হলেই তাকে ২য় ডোজ টিকা দেয়ার জন্য টিকা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। এসময় শিশুকে ২ ফোঁটা পোলিও টিকা বা ওপিভি মুখে খাওয়ানো হয়। এর সাথে সাথে ডান পায়ে নিউমোনিয়ার টিকা পিসিভি দেয়া হয়। আর বাম পায়ে দেয়া হয় আরেকটি টিকা যা পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন নামে পরিচিত। সেই সাথে পোলিও টিকার আরেকটি ডোজ ডান হাতের উপরের অংশে দেয়া হয়। এই টিকাটির নাম আইপিভি। পেন্টাভ্যালেন্ট টিকাটি একটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেয়া হলেও এটি পাঁচটি রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।এগুলো হলো – ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি এবং হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা- বি।
কিছু টিকা দেবার পর শিশুর জ্বর আসতে পারে। এটি স্বাভাবিক। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ ও পরিমাপমতো বাচ্চাদের প্যারাসিটামল খাওয়াতে পারেন। কারো কারো ডায়রিয়াও হতে পারে। আবার কিছু কিছু বাচ্চার এই উপসর্গগুলো টিকা দেবার পর পর না হয়ে কয়েকদিন পরও হতে পারে।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোন ধরণের ওষুধ খাওয়াবেন না। এসময় মায়ের দুধ ছাড়া আর কিছুরই প্রয়োজন হয় না, ক্ষেত্রবিশেষে মায়ের দুধ না পেলে, কিংবা অন্য কোন ইমারজেন্সিতে বয়স অনুযায়ী ভালো ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দিতে পারেন।
মাইলস্টোন – দ্বিতীয় মাস
দ্বিতীয় মাসে শিশু তার চোখ দুটো আরো বেশি ফোকাস করতে পারে এবং চোখ দিয়ে কোনো চলমান বস্তুকে অনুসরণ করতে পারে। এসময় শিশুর সামনে কোনো খেলনা বা রঙিন কিছু নাড়ালে সে কিছুক্ষণের জন্য স্থম্ভিত হয়ে যেতে পারে। এসময় শিশুর খুব কাছাকাছি গিয়ে যদি নিজের মুখ খুব ধীরে ধীরে এক পাশ থেকে অন্য পাশে নাড়াতে থাকেন, তাহলে দেখবেন সে হয়তো চোখ নাড়িয়ে আপনার মুভমেন্ট অনুসরণ করছে।
জন্মের পর শিশুর যে রিফ্লেক্সগুলো ছিলো তা এখনো তার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে। যেমন আপনি যখন আঙ্গুল দিয়ে তার গাল স্পর্শ করবেন তখন সে সেদিকে মুখ ঘুরিয়ে আঙ্গুলের কাছে মুখ নিতে চাইবে। একে রুটিং রিফ্লেক্স (Rooting reflex) বলে। বেশিরভাগ রিফ্লেক্স তিন মাস বয়স পর্যন্ত থাকতে পারে।
এসময় সাধারনত শিশুরা হাতের মুঠো বেশ জোরালোভাবে বন্ধ করতে পারে এবং হাতের কাছে কিছু পেলে সজোরে চেপে ধরে। সেটি হতে পারে আপনার চুলের গোছাও ।একে গ্রাস্পিং রিফ্লেক্স(Grasping reflex) বলে। তবে মুঠো কিভাবে ছাড়তে হয় তা শিখতে তার আরো বেশ কিছুদিন সময় লাগবে, সেই পর্যন্ত নিজের চুল সামলে রাখুন।শিশুর হাত ও পায়ের নড়াচড়া আগের চাইতে আরো পরিণত হতে থাকবে।
শিশুর জন্মের পর দেখা যায় সে সবসময় তার পা দুটো নিজের দিকে একটু বাঁকা করে রাখতে চায়। গর্ভকালীন সময়ে জরায়ুতে এই অবস্থাতে ছিলো বলেই হয়তো সে এমনভাবে পা বাঁকিয়ে রাখে। এমনকি তার হাতও পুরোপুরি প্রসারিত থাকেনা। এক মাস অতিক্রম করার পর থেকে শিশু তার হাত পা ধীরে ধীরে মেলতে শুরু করবে।
শিশুকে পেটের উপর ভর দিয়ে শোয়ানো হলে সে কিছু সময়ের জন্য মাথা তুলতে এবং ডানে বামে ঘোরাতে পারে। যখন তাকে আপনার কাঁধের উপর রাখবেন তখন সে মাঝে মাঝে মাথা পুরোপুরি তুলে ফেলতে চেষ্টা করবে, যদিও সেটি বেশীক্ষণের জন্যে নয়। মনে রাখবেন, বাচ্চার ঘাড়ের পেশী এখনো পুরোপুরি শক্ত হয়ে ওঠেনি , তাই সাবধানে কোলে নিন এবং শিশুর ঘাড় ও মাথার পেছনে আলতোভাবে হাতের সাপোর্ট রাখুন।
দুই মাস বয়সের দিকে শিশুরা পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনলে সাধারণত শান্ত হয়ে যায় এবং “ওহ”, “উহ” এই ধরনের শব্দ করে। এই সময় শিশুর শ্রবণশক্তি পুরোপুরি বিকশিত থাকে। সে বাবা মায়ের গলার স্বর চিনতে পারে এমনকি আপনাদের গলার স্বর শুনে সে কান্না থামিয়ে দিতে পারে এবং শব্দের উৎসের দিকে ঘাড় ঘোরানোর চেষ্টাও করতে পারে।
জন্মের পর থেকে নবজাতক মাঝে মাঝেই একটু হেসে ওঠে , কিংবা ঘুমের মধ্যেও হাসে। কিন্তু জন্মের দ্বিতীয় মাস থেকে সে তার প্রথম সামাজিকতার হাসিটি দেয়া শুরু করে অর্থাৎ সে কোনো ব্যাপারে খুশি হওয়ার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে হাসি দিতে শেখে। আর সোনামণির দেয়া এই হাসিটি হবে বাবা মাকে দেয়া তার সবচাইতে সেরা উপহার। এই হাসির কাছেই আস্তে আস্তে পরবর্তী মাসগুলোতে ম্লান হতে থাকবে আপনার রাত জাগার সমস্ত কষ্ট।
অনেক শিশুই এসময় হাত তার মুখের কাছে আনা শিখে যায়। অনেকে এ সময় বুড়ো আঙ্গুল চুষতেও শুরু করতে পারে। এটিই তার নিজেকে নিজে শান্ত করার প্রথম ধাপ।
এ সময় কি কি মাইলস্টোন আপনার শিশু অর্জন করতে যাচ্ছে তা জানার সাথে সাথে ভুলে যাবেন না যে এটি শুধু মাত্র একটি গাইডলাইন। প্রতিটি শিশুই স্বকীয় এবং তার বেড়ে ওঠার গতিও ভিন্ন।
কোনো শিশু ‘প্রিম্যাচিওর’ হয়ে জন্মালে তার ডেভেলপমেন্ট জন্মতারিখ থেকে শুরু না করে, তার যেসময় জন্মানোর কথা ছিল সেই সময় থেকে হিসাব করা বাঞ্ছনীয় ।
এই টাইমলাইন সিরিজ যেন আপনার কোনো রকম দুঃশ্চিন্তার কারন না হয় খেয়াল রাখবেন। প্রতিটি টাইমলাইনকে একটি গাইড হিসেবে ধরে নিতে হবে ।নবজাতকের বৃদ্ধির বিষয়ে কোন আশঙ্কা বা জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
দ্বিতীয় মাসে কীভাবে শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন
শিশু জন্মের পর থেকেই সব ধরনের রঙ দেখতে পায় তবে তখন বিভিন্ন ধরনের রঙের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য করতে পারেনা। যেমন, দুমাস বয়সী শিশু লাল এবং কমলা রঙ আলাদা করতে পারেনা। কেননা দুটো রঙই প্রায় কাছাকাছি। ঠিক এই কারণেই ২ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর কাছে গাঢ় সাদাকালো রঙের প্যাটার্ন অনেক পছন্দ।
এই সময়ে শিশুর দৃষ্টিশক্তি এবং রঙের পার্থক্য শেখানোর জন্য তাকে রঙিন ও এ বয়সের জন্য নিরাপদ খেলনা দিন। যেমন কাপড়ের বই কিংবা নরম বল।
শিশু যখন কেঁদে ওঠে তাকে কোলে তুলে নিন ও সান্ত্বনা দিন। বিজ্ঞানীদের মতে শিশুর কান্নাকে অবহেলা করা মোটেও উচিত নয়। কেননা, এমন অবহেলা শিশুবিকাশে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
একজন মা কিংবা বাবা হিসাবে আপনিই হলেন বাচ্চার সবচেয়ে ভালো খেলার সাথী, সুতরাং তার সঙ্গে খেলা করার জন্য প্রতিদিনই একটু সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন।
প্রথম দিন থেকেই আপনার শিশুর সাথে কথা বলা শিশুর ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট এবং বন্ডিংয়ে সাহায্য করবে। সুতরাং তার সাথে কথা বলে যান।তার মুখের শব্দগুলি নকল করে তার সঙ্গে কথা বলুন। একে অন্যের সাথে কথা বলার চমৎকার একটি উপায় এক সাথে খেলা করা। কোন খেলনার দরকার নেই, কেবল আপনারা দুজনই যথেষ্ট। বাচ্চার হাতপায়ের আঙ্গুলগুলি গুনে বা তাকে হালকা সুড়সুড়ি দিয়ে খেলুন। শিশুর পাশে বসে বা শুয়ে কোনো মজার গল্প পড়তে পারেন।
যখন জেগে থাকবেন তখন শিশুকে আপনার পেটের উপর বা বুকের উপর রেখে আপনি বিছানায় বা সোফায় শুয়ে তাকে টামি টাইম দিতে পারেন। এসময় তার সাথে কথা বলুন এবং আই কন্টাক্ট করুন। বাড়ন্ত শিশুর জন্য টামি টাইমের উপকারিতা অপরিসীম। এভাবে পেটের উপর ভর দিয়ে থাকলে শিশুর মেরুদণ্ড, ঘাড় এবং কাঁধ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। শিশু যখন বড় হতে থাকবে তখন সে এই ভঙ্গি থেকে উপরের দিকে উঠার জন্য হাত দিয়ে নিচের দিকে ধাক্কা দেবে এবং হাত সোজা করার চেষ্টা করবে। এভাবেই পরবর্তীতে শিশু গড়ানো শিখে যায় এবং ধীরে ধীরে হামাগুড়ি দেয়া শেখে।
বিপদ চিহ্ন
সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখতে পেলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে সেগুলো হোলো-
- চলন্ত কিছুর দিকে দৃষ্টি না দেয়া।
- তীব্র আলো বা শব্দে প্রতিক্রিয়া না দেখানো।
- হাত মুখের কাছ অব্দি আনতে না পারা।
- ভালোভাবে চুষতে না পারা এবং খেতে অনেক সময় লাগা।
- পেটের উপর শুয়ে থাকা অবস্থায় মাথা উপরে তুলে ধরতে না পারা।
- শিশুর নিস্তেজ হয়ে থাকা।
সব শিশু একেকজন আলাদা ব্যক্তি, একেক শিশুর জিনেটিক গঠন একেক রকম, সুতরাং শিশুর ডেভেলপমেন্টের কোন বিষয় সাধারন মাইলস্টোনের সাথে না মিললে শুরুতেই দুশ্চিন্তা করবেন না। ভালো করে শিশুর অ্যাক্টিভিটি, নড়াচড়া , কান্নার কারণ, ঘুম ও খাদ্যাভ্যাস লক্ষ্য করুন। কোনো বিষয়ে সমস্যা আছে মনে হলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।
কোন অসুস্থতা ছাড়াও বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন, হাইট ঠিক আছে কিনা এবং সেইসাথে বাচ্চার দৃষ্টি , হার্টবিট, যৌনাঙ্গ ইত্যাদি পরিক্ষা করানোর জন্য মাঝে মাঝে বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারেন। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় সবসময় জন্মের সময় থেকে শিশুর যেসব হেলথ-রিপোর্ট আছে সব ফাইলিং করবেন এবং ডাক্তারকে দেখাবেন। সেই সাথে শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে আপনার মনে যা প্রশ্ন আসে তার সবই ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতে কখনোই অস্বস্তিবোধ করবেন না।
পরিশিষ্ট
আপনি যদি নতুন মা হয়ে থাকেন তাহলে লক্ষ্য করুন সম্প্রতি আপনার সাথে কিছু ব্যাপার ঘটছে কিনা। যেমন- নিজেকে সামলাতে পারছেন না, অকারনেই রাগ হচ্ছে, নিজেকে বঞ্চিত মনে হচ্ছে, কোনো সময় শুধুই কান্না পাচ্ছে কিন্তু কান্নার কারণ আপনার অজানা, কিংবা খুব অল্পেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন – আপনি যদি এরকম কোন সমস্যার মধ্য দিয়ে যান, নিজেকে দোষারোপ করবেন না। বেশীরভাগ নতুন মায়ের এটি হয়ে থাকে। একে ‘বেবি ব্লুজ’ বলা হয়।
এ সমস্যা সাধারণত শিশুর জন্মের এক-দুই মাসের মধ্যে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায় । তবে , যদি ঠিক না হয় , আপনার এই সমস্যা তারপরও চলতে থাকে, এবং আপনি মনে করতে থাকেন, আপনার কাছে সমস্যা উত্তরনের কোন পথ নেই, তবে আপনি ‘পোস্ট-প্যরটাম ডিপ্রেশান’ এ ভুগছেন। এটি শারিরিক সমস্যার মতোই একটি মানসিক সমস্যা, যেটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য । তাই দ্রুত বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
একটু পর পর খাওয়ানো আর ন্যাপি পরিষ্কার করা, আদর করা, দোলা দিয়ে ঘুম পাড়ানো, মাসাজ করে দেয়া, গোসল করানো আর নবজাতকের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানই এখন বাবা-মায়ের প্রধান কাজ। বিষয়টি মায়েদের জন্য একটু ক্লান্তিকর হয়ে যায় অনেক সময়, তাই যথাসম্ভব পরিবারের অন্যদের সাহায্য নিতে কেউ কার্পণ্য করবেন না। এসময় মায়ের নিজের শারীরিক এবং মানসিকভাবে উজ্জিবিত এবং সুস্থ থাকার চেষ্টা করা প্রয়োজন।
আমার বাচ্চার জন্মানোর কথা ছিলো২৮ ডিসেম্বর ওর জন্ম হইছে২৯ নভেম্বর। ও এতোদিন তেমন কান্না করেনি।কিন্তু ১ সপ্তাহ ধরে বিকেলে প্রচুর কান্না ক। প্রতিদিন একই সময়ে। আবার ৭ টার পরে থেমে ও যায়। ঘুমায়।এটা কি সম??
এই বিষয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন- https://myfairylandbd.com/%e0%a6%95%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%ac%e0%a6%bf/