বেবি ব্লুজ (Baby Blues) কি এবং কেন হয় ?

Spread the love

বেবি ব্লুজ কি?

সন্তান জন্ম গ্রহণ করার কয়েকদিনের মধ্যে আপনার কিছুটা মনমরা ও খিটখিটে অনুভব হতে পারে। এমনকি খুব সাধারণ কারণে আপনার কান্নাও চলে আসতে পারে। এই ধরনের লক্ষণকে সাধারণত বেবি ব্লুজ (Baby Blues) বলা হয়ে থাকে। নবজাতক ফুটফুটে সন্তান কোলে নেয়ার পর কয়েক দিনের মধ্যেই এই ধরনের অনুভূতির কারণে আপনার নিজের কাছেই অনেক খারাপ লাগতে পারে।

তবে জেনে রাখুন, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেননা এই ধরনের অনুভূতি সবার মধ্যে এতটাই দেখা যায় যে এটাকে এখন খুব স্বাভাবিক হিসেবেই ধরে নেয়া হয়। সন্তান জন্ম দেয়ার কয়েকদিনের মধ্যে প্রতি দশ জন মায়েদের আট জনের মধ্যেই এই ধরনের মানসিক পরিবর্তন আসে।

বিজ্ঞাপণ

মনমরা এবং খারাপ লাগা ছাড়াও আপনার মধ্যে আরো যে কয় ধরনের অনুভূতি আসতে পারে সেগুলো নিম্নে বর্ণীত হলঃ

  • শিশু একদম সুস্থ স্বাভাবিক থাকার পরেও তার স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘিরে ধরে পারে।
  • সবকিছু নিয়েই আপনার মধ্যে উদ্বেগ কাজ করতে পারে।
  • যে কোন বিষয়ে মনোযোগ দিতে নাও পারতে পারেন।
  • খুবই ক্লান্ত থাকার পরেও ঠিকমত ঘুম না হওয়া।
  • কোন কারণ ছাড়াই শুধুশুধু কান্না চলে আসা।

বেবি ব্লুজের কারণ কি?

সন্তান জন্ম গ্রহণ করার পর প্রতিটা মায়ের মধ্যেই বেশ কিছু পরিবর্তন আসে, তারমধ্যে হরমোন জনিত পরিবর্তনটাই সবচাইতে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। আর বেবি ব্লুজ নামক এই ধরনের মানসিক পরিবর্তনগুলো আপনার হরমোন জনিত পরিবর্তনের কারণেই মূলত আপনার মধ্যে দেখা যায়।

এই সময়ে অনেক ধরনের পরিবর্তন আপনার শরীরের মধ্যে দেখা যায়। তারমধ্যে এড্রিনাল নামক গ্রন্থি থেকে গর্ভকালীন অবস্থায় যে পরিমাণ হরমোন নিঃসৃত হোতো তা হুট করেই কমে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে এটাই মূলত বেবি ব্লুজ এর প্রাথমিক কারণ।

আপনার বুকের দুধ উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে গর্ভকালীন অবস্থায় যে পরিমাণ হরমোন আপনার শরীরের মধ্যে ছিল সেগুলো ধীরে ধীরে বের হতে যেতে থাকে। আপনার খাদ্যাভ্যাসের মধ্যেও আসতে পারে ব্যাপক পরিবর্তন।

যদিও শুধুমাত্র শারীরিক পরিবর্তন হয় আপনার মধ্যে বিষয়টি এমন নয়। এই সময়ে আপনার মধ্যে মানসিক পরিবর্তনও হয়। এছাড়া নবজাতক শিশুর কারণে আপনার মধ্যে যে দায়িত্ববোধ জন্ম নেয় সেটাও অনেক সময় আপনার উপর মানসিক ভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

একজন মা হওয়ার সাথে সাথে আদতে যে আপনার মধ্যে কতটা দায়িত্ব চলে আসতে পারে, সেটা হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে এসে কিছুদিন শিশুর সাথে সময় অতিবাহিত না করার আগে কখনই বুঝা যায় না।

যাই হোক, মা হওয়াটা আপনার জন্য যদিও অনেক আনন্দের অনুভূতি তবুও নতুন এই দায়িত্বগুলোর কারণে আপনার মধ্যে অনেক মানসিক চাপ চলে আসতে পারে এবং আপনি হয়ে উঠতে পারেন খিটখিটে মেজাজের।

নবজাতক শিশুর কীভাবে সঠিক যত্ন নিতে হয় এই ব্যাপারেও আপনি অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারেন। এছাড়া সন্তান জন্ম গ্রহণের পর যে উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা আপনার মধ্যে ছিল সেগুলোও ধীরে ধীরে কমতে পারে।

এই সময়ে নিজেকে অনেক ক্লান্ত ও অবসন্ন লাগার পরেও হয়তো আপনি ভালোভাবে রাতে বা দিনে ঘুমাতে পারবেন না এমনকি যখন বাচ্চা ঘুমিয়ে থাকে তখনও।

এতো সব কিছুই এ সময় বেবি ব্লুজের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বেবি ব্লুজ কতদিন পর্যন্ত থাকে?

আপনার মনে হতে পারে মা হওয়াটা আসলেই অনেক কষ্টকর এবং ক্লান্তিকর একটা বিষয়। তবু অতটা চিন্তিত হবেন না, কেননা কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন সবকিছুর সাথে আপনি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন এবং নবজাতক শিশুর সঠিক যত্নের ক্ষেত্রেও আপনার মধ্যে অতটা উদ্বেগ কাজ করবে না।

বিজ্ঞাপণ

আরেকটা ব্যাপার মনে রাখবেন, বেবি ব্লুজ আদতে কোন ধরনের রোগ নয় এবং এই ধরনের অনুভূতি কয়েকদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। সাধারণত, সন্তান জন্ম গ্রহণ করার তৃতীয় থেকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত আপনার মধ্যে এই ধরনের অনুভূতিগুলো তীব্র হয়ে উঠবে। 

কোন ধরনের ডাক্তারের পরামর্শ করা ছাড়াই বেবি ব্লুজ কয়েকদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। পরিমিত বিশ্রাম এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতার মাধ্যমে, কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

তবে যদি প্রায় মাস খানেক পার হয়ে যাওয়ার পরেও আপনার মধ্য এই ধরনের অনুভূতিগুলো চলে না যায়, তাহলে বুঝতে হবে আপনি postnatal depression (PND) অর্থাৎ প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা ভুগছেন।

আপনার যদি মনে হয় এই ধরনের সমস্যায় আপনি ভুগছেন তাহলে অতি সত্বর ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন এবং তদনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

বেবি ব্লুজ নাকি প্রসব পরবর্তী বিষণ্নতা?

এই দুটি জিনিসকে এক মনে হতে পারে কারণ এদের লক্ষণগুলি একই। পার্থক্যটা হচ্ছে দুটির স্থায়িত্বে আর গভীরতায়। বেবি ব্লুজ হালকা ও ক্ষণস্থায়ী, এর জন্যে কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই কারন এটি সময়ের সাথে নিজে থেকেই চলে যায়। কিন্তু Postpartum Depression বা প্রসব পরবর্তী বিষণ্নতা বেশ তীব্র এবং স্থায়ী। যত দ্রুত সম্ভব এই বিষণ্ণতার চিকিৎসা নেয়া উচিৎ।

কিভাবে বুঝবেন যে আপনি প্রসব পরবর্তী বিষণ্নতায় ভুগছেন?

সন্তান জন্মদানজনিত শারিরিক ধকল, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব এবং হরমনের বিভিন্ন জানা-অজানা প্রভাবের কারণে মায়েরা একটু খিটখিটে আচরন করতে পারে, তুচ্ছ কারণে অভিমান বা কান্নাকাটি হতে পারে- এগুলোকে সাধারণত বেবি ব্লুজ (Baby Blues)- বলা হয় যা সাধারণত শিশুর জন্মের এক-দেড় মাসের মধ্যে কেটে যায়।

তবে বিষয়টি আর ‘Baby blues’- র পর্যায়ে থাকে না যখন এসব সমস্যা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায় যেমনঃ মা-কে ভয়াবহ আত্মগ্লানি এবং বিষণ্ণতা গ্রাস করে এবং বিষয়গুলো দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকে কিংবা সময়ের সাথে বাড়তে থাকে।

প্রসবের পর প্রথম দুই সপ্তাহ বিষণ্নতা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি এই বিষণ্নতা দুই সপ্তাহ পরও রয়ে যায় তাহলে অবহেলা না করে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। তা না হলে এই বিষণ্ণতা মানসিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে ফলে মা ও শিশু দুজনেরই ক্ষতি হতে পারে।

বেবি ব্লুজ থেকে বের হয়ে আসতে কীভাবে সাহায্য করা যাবে?

আপনি যদি নবজাতক সন্তানের মায়ের সঙ্গী, আত্মীয় অথবা বন্ধু হয়ে থাকেন, তাহলে এই ধরনের অনুভূতি যে আদতে স্বাভাবিক এ ব্যাপারে সান্ত্বনা প্রদান করুন। কেননা নতুন মা হয়ত অনেক অবসন্ন থাকতে পারে এবং চারপাশে কি হচ্ছে সব নিয়ে অনিশ্চিত থাকতে পারেন। এ সমস্ত ক্ষেত্রে নিচের নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করতে পারেনঃ

  • নতুন মায়ের যাবতীয় কাজের জন্য সময়ের একটা রুটিন তৈরি করতে তাকে সাহায্য করতে পারেন এবং কোন কাজটা এখন করা প্রয়োজন ও কোন কাজটা পরে করলেও চলবে এইসব সিদ্ধান্ত নিতে তাকে সাহায্য করুন।
  • নতুন মায়ের উপর থেকে চাপ কমানোর জন্য আপনি রান্না করে দিতে পারেন।
  • যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেয়ার জন্য তাকে উৎসাহ দিন।
  • তাকে বলুন যে, সে আসলে খুবই ভালো একজন মা হয়ে উঠছে।
  • বাসায় যতটা সম্ভব কম অতিথি নিয়ে আসুন।
  • নতুন মা যদি হুট করেই কাঁদতে থাকে, তাহলে তাকে কাঁদতে দিন।
  • নতুন মা এর কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

সবকিছু ছাপিয়ে একটা বিষয়ে তাকে জানিয়ে দিন, সবকিছুর মধ্যে সে একদম একা নয় বরং যে কোন পরিস্থিতিতে আপনি তার পাশে থাকবেন। এছাড়া নতুন মা যেন কিছুটা সময় হলেও একান্তই নিজের যত্ন নিতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

সবার জন্য শুভকামনা।

বেবি সেন্টার থেকে অনূদিত।


Spread the love

Related posts