Retinopathy of prematurity (ROP) । প্রিম্যাচিওর শিশুদের অন্ধত্ব এর জন্য দায়ী ঘাতক ব্যাধি

Spread the love

লিখেছেন ঃ Tamanna Jenifer

আমার ছোট ছেলেটা সময়ের অনেক আগেই হয়েছে..যেখানে তার গর্ভে থাকার কথা ছিল ৪০ সপ্তাহ সেখানে সে গর্ভে ছিল মাত্র ৩১ সপ্তাহ ৪ দিন…যখন একটা শিশু সময়ের আগে জন্মায় তখন তখন তার সব অঙ্গ সঠিক ভাবে ম্যাচিয়ুর হয় না।এ রকমই একটা অঙ্গ হলো চোখ যা কিনা পরিপূর্ন ভাবে তৈরী হতে সময় লাগে প্রায় ৩৬ সপ্তাহ।

বিজ্ঞাপণ

তাহীম জন্মাবার পরই ওকে NICU তে থাকতে হয়েছে ১৩ দিন। এরপর যখন ওকে ছারলো আমরা তো ভীষন খুশিতে ওকে বাড়ি নিয়ে আসলাম।দিনে দিনে ওর আরো উন্নতি হচ্ছিল,চুষে খাওয়া শিখে ফেলল, ওজন বাড়ছিল,শব্দ হলে এদিক ওদিক তাকাতো, হাসি কান্না মিলিয়ে একদম একটা সুস্থ বাচ্চা, আমরা কোনভাবেই বুঝিনি ওর মায়াভরা আদুরে চোখদুটো আক্রান্ত হয়েছে ROP তে,যার জন্য ধীরে ধীরে ওর চোখের আলো নিভে যাচ্ছে।

NICU থেকে ছারার সময় ডিসচার্জ পেপারে লেখা ছিল যেন এক মাস পর যেন ROP (retinopathy of prematurity) টেস্টটা করাই। তারা কোন জোর দিয়ে বলেনি যে একমাসের মধ্যেই করাতে হবে আর আমরাও গুরুত্ব দেইনি ভাবছি সবই তো ঠিক আছে। এ রোগটা এমনই, এ রোগের কোন লক্ষন নাই। ভয়াবহ এই রোগটা সাইলেন্ট কিলার এর মতো চোখের দৃস্টি কেরে নেয়। তবে আশার কথা হলো এই রোগটা থেকে বাঁচতে পারি খুব সহযেই। শুধু দরকার হলো সচেতনতা।

বিজ্ঞাপণ

যাই হোক, তাহীমের ৩৯ দিন বয়সে আমরা টেষ্টটা করাতে রংপুর যাই আর জানতে পারলাম আমার সোনাবাচ্চাটা এই রোগের zone 2 stage 2 তে রয়েছে যা কিনা এখনো চিকিৎসার পর্যায়ে রয়েছে। আমরা এমনিতেই ৯ দিন দেরী করে ফেলেছি তাই ওখানকার ডাঃ আমাকে বললেন যেন এক মুহূর্ত দেরী না করে ঢাকায় রওনা দেই…আমি একটুও কাঁদিনি,,খুব শান্তভাবে ডাঃ এর কাছ থেকে বিস্তারিত জেনেছি আর ওই রাতেই ঢাকায় ফিরেছি। দ্রুত ওর চিকিৎসা শুরু করা হলো। আল্লাহর অশেষ রহমতে ওর চোখ দুটো ভালোর পথে।

এখন প্রশ্ন হলো কাদের হয় ROP?

৩৬ সপ্তাহের আগে জন্মানো এবং/অথবা ২ কেজি এর কম ওজনের বাচ্চারা এই রোগের ঝুকিতে থাকে। যেসব বাচ্চারা জন্মের পর তাদের high flow oxigen লাগে তারাও এর ঝুকিতে থাকে। তাই ৩৬ সপ্তাহের আগে জন্মানো কম ওজনের শিশুদের অবশ্যই একজন রেটিনা স্পেশালিস্ট এর কাছে নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যেই ROP পরীক্ষা করাতে হবে। আর ২৮ সপ্তাহের আগে জন্মানো বাচ্চাদের ২০ দিনের মধ্যে ROP পরীক্ষা করাতে হবে।

সময় মতো ধরা পরলে এই রোগের যথেস্ট ভালো চিকাৎসা বাংলাদেশে আছে তাই শুধু দরকার সচেতনতা। দরকার গাইনী ও শিশু ডাঃ দের আর একটু সহায়তা। আমি যেমন জানতাম না অনেক মা ই ব্যাপারটা জানেনা। সময় পেরিয়ে গেলে আফসোস ছারা আর কিচ্ছু করার থাকে না। অথচ সঠিক সময়ে ধরা পরলে বাঁচতে পারে একটি শিশুর দৃস্টি।  শুকরিয়া মহান আল্লাহর কাছে। ভালোবাসা তাদের জন্য যারা এই বিপদের সময় আমার পাশে ছায়ার মতো ছিলে,আছো। সকলের কাছে আমার ছোট্ট তাহীমের জন্য দোয়া চাচ্ছি। প্লীজ আপনাদের দোয়ায় আমাদের রাখবেন।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment