নবজাতক মেয়ে শিশুর ভ্যাজাইনাল ব্লীডিং বা ছদ্ম মাসিক | Pseudo menstruation

Spread the love

একদম নতুন বাবা-মা’রা তাদের প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। ব্যাপারটা কিছুটা এমন যে, এর আগে আপনি হয়ত কখনই কোন বাচ্চার ডায়পার চেঞ্জ করেন নি, কিন্তু আপনি যখন এক নবজাতক শিশুর মা অথবা বাবা হয়ে যান তখন এটা আপনার জন্য খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার  হয়ে দাঁড়ায়।

সবকিছুই যেখানে একদম নতুন এবং প্রথমবারের মত করতে হচ্ছে, সেখানে বাবা মা যদি তাদের নবজাতক মেয়ে শিশুর ডায়পারে রক্ত দেখতে পান তাহলে এটা অবশ্যই তাদের জন্য খুবই উদ্বেগের ও ভয়ের একটা ব্যাপার হয়ে উঠে।   

বিজ্ঞাপণ

তবে নবজাতক মেয়ে শিশুর রক্তস্রাব অর্থাৎ যৌনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ আপনি যতটা ভয়ংকর ভাবছেন, ব্যাপারটা আসলে ততটা ভয়ংকর নয় বরং এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। মাসিকের মতই এটা সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক এবং স্বাভাবিক। অনেক নবজাতক মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যায় আবার কারো ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। তবে সে যাই হোক, এটা কোন বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় নয়।

এই কথাটা প্রচলিত যে মেয়েদের প্রথম মাসিক জন্মের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে থাকে। এটা আসলেই সত্যি যে অনেক নবজাতক মেয়ে শিশুর যৌনাঙ্গ দিয়ে মাসিকের মত রক্ত বের হয়, তবে সেটা একদম প্রথম দুই একদিনের মধ্যেই কিন্তু এটাকে তার প্রথম মাসিক বলা যায় না।

অনেক নবজাতক মেয়ে শিশুর জন্মের পরেই তাদের যৌনাঙ্গ দিয়ে সাদা-হলদে স্রাব বের হয় এমনকি রক্তও বের হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিক ভাষায় এটাকে ‘pseudo-menstruation’ বা ‘ছদ্ম মাসিক’ বলা হয়ে থাকে। নবজাতক মেয়ে শিশুর জরায়ু দিয়ে এই রক্ত বের হওয়াটা কিছুটা মাসিকের মত মনে হলেও এটা আসলে মাসিক-সংক্রান্ত নয়। 

‘Pseudo-menstruation’ বা ‘ছদ্ম মাসিক’ এর কারণ

যদিও এই ছদ্ম মাসিক একদমই স্বাভাবিক একটা ঘটনা তবে এটা সাধারণত জন্মের পর থেকে প্রথম এক মাসের মধ্যেই হয়ে থাকে। এই ধরনের ছদ্ম মাসিক হওয়ার কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেন, যেহেতু গর্ভকালীন সময়ে শিশু তাদের মায়ের হরমোনের সাথে সংস্পর্শে চলে আসে তাই এমনটা হয়ে থাকে।

যখন মেয়ে শিশুটি তার মায়ের গর্ভে থাকে তখন মায়ের শরীর থেকে জন্মদান বিষয়ক বেশ কিছু হরমোনের সংস্পর্শে আসে। এই হরমোনগুলো মেয়ে শিশুটির ছোট্ট শরীরে প্রবেশ করে এবং তার সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য এই হরমোনগুলো খুবই প্রয়োজনীয়।  

জন্মের পরপরই নবজাতকের শরীর থেকে এই ধরনের হরমোনগুলো বের হয়ে যায়। আর এই বের হওয়ার মাধ্যম হল নবজাতক মেয়ে শিশুর যৌনাঙ্গ দিয়ে এই রক্তস্রাব বের হওয়া। এই স্রাব গাড় এবং কিছুটা হলদে সাদা, সাদা অথবা কিছুটা লাল বর্ণেরও হয়ে থাকে।

এই হরমোনের কারণে শুধু যে এই রক্তস্রাব হয় তা নয়, এর জন্য শিশুর যৌনাঙ্গ ফুলে থাকতে পারে এবং বুকের কাছেও কিছুটা ফুলে থাকতে পারে। তবে এই ছদ্ম মাসিক ছাড়াও নিম্নে বর্ণিত আরো কিছু কারণে আপনি নবজাতক শিশুর ডায়পারের মধ্যে রক্ত দেখে থাকতে পারেনঃ

  • পরিষ্কার করার সময় শিশুর যৌনাঙ্গ যদি আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাহলেও রক্ত বের হতে পারে।
  • মলমূত্র ত্যাগের জন্য ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়ে যে প্রদাহ হয় (ডায়াপার র‍্যাশ) তার কারণে শিশুর ত্বক ছিঁড়ে গেলে অথবা ফেটে গেলে এমন রক্ত বের হতে পারে। 
  • যৌনাঙ্গ যদি নিয়মিত পরিষ্কার না রাখা যায় তাহলে কখনো ইনফেকশন হয়ে যায়, আর তা থেকেও শিশুর যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত বের হতে পারে। 
  • শিশু যদি শক্ত মলত্যাগ করে বা কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাহলে তার মলদ্বারের কিছু অংশ হালকা ফেটে যেতে পারে আর তার কারণে ডায়পারের মধ্যে রক্ত দেখতে পারেন।
  • ইনফেকশনের লক্ষণ হিসেবেও অনেক সময় প্রস্রাব দিয়ে রক্ত বের হতে পারে। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে দেরি না করে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। 

কখন নবজাতক শিশুর যৌনাঙ্গ নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেন?

মেয়ে শিশুর যৌনাঙ্গ দিয়ে কিছু রক্ত বের হওয়াটা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নয়, যদিও সব শিশুর ক্ষেত্রে এমনটা নাও হতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে কোন অপরিচিত অথবা অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি না তা বোঝার জন্য শিশুর যৌনাঙ্গ খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।

বিজ্ঞাপণ

এই রক্তক্ষরণ শুধুমাত্র তিন থেক চার দিন পর্যন্ত হওয়া স্বাভাবিক আর তাই যদি এই সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও রক্তক্ষরণ বন্ধ না হয় তাহলে আপনি উদ্বিগ্ন হতে পারেন। এছাড়া আপনি যদি দেখেন যে রক্তের রং একদম গাঢ় লাল বর্ণ ধারণ করেছে তাহলে অতি দ্রুত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন।

আপনি আরেকটু লক্ষ্য রাখবেন যে যৌনাঙ্গ থেকে কোন প্রকার বাজে দুর্গন্ধ আসছে কিনা অথবা রক্তক্ষরণ কি মাত্রাতিরিক্ত হচ্ছে কি না। এছাড়াও নিম্ন বর্ণিত আরো কিছু লক্ষণ বা অবস্থায় আপনার নবজাতক শিশুর যৌনাঙ্গ নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেনঃ

  • কখনো দেখা যায় যে নবজাতক মেয়ে শিশুর যৌনাঙ্গের উভয় পাশের পাপড়ি একে অপরের সাথে একটি পাতলা আবরণের দ্বারা লেগে আছে। জন্মের সময় এমনটা সাধারণত হয়না, এই ধরনের ঘটনা ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায় আর তাই এই ধরনের কিছু দেখলে সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
  • জন্মের পর নবজাতক শিশুর যৌনাঙ্গ ফুলে থাকা একটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে এটা যদি জন্মের পরবর্তী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে না চলে যায় তাহলে এটা উদ্বিগ্ন হওয়ার মত ব্যাপার। আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এর জন্য ওষুধ দিয়ে দিবে তবে মনে রাখবেন যে কোন অবস্থাতেই এটা কখনই উপেক্ষা করার মত কোন ঘটনা না।
  • যে সব বাচ্চারা ডায়াপার পরিধান করে তাদের জন্য প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়াটা খুবই সাধারণ একটা ঘটনা। মলত্যাগ থেকে ব্যাকটেরিয়া তার প্রস্রাবের রাস্তায় চলে আসায় এই ইনফেকশন হতে পারে। এই ধরনের ইনফেকশন হলে, নবজাতক শিশুর প্রস্রাব করতে বেশ খানিকটা কষ্ট হয় এবং কখনো দেখা যায় যে তাদের সামান্য জ্বর চলে এসেছে। এমন লক্ষণ শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দুশ্চিন্তার বিষয় আর তাই অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। 

তবে সকল অবস্থাতেই নবজাতক শিশুর যৌনাঙ্গ পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এটা আপনার নবজাতক শিশুর সু-স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকাটা নিশ্চিত করে।

[ আরও পড়ুনঃ নবজাতক শিশুর যৌনাঙ্গের ৯টি সাধারণ সমস্যা ]

নবজাতক শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আপনার করনীয় কাজ

নবজাতক মেয়ে শিশুর যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্তক্ষরণের জন্য আলাদা কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। আপনি শুধুমাত্র সেই জায়গাটা ওয়েট টিস্যু দিয়ে মুছে দিবেন। তবে লক্ষ্য রাখবেন যে, ওয়েট টিস্যু দিয়ে যৌনাঙ্গ থেকে শুরু করে এরপর মলদ্বারের দিকে মুছা হচ্ছে। আর জায়গাটা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করার জন্য হয়ত আপনাকে বেশ কয়েকবার এভাবে মুছতে হতে পারে।

পাপড়ির ভিতরের অংশের দিকেও আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে, কেননা পাপড়ির ভাঁজের মধ্যে কখনো রক্ত জমে থাকতে পারে। এভাবে ভেতরে পরিষ্কার করার ব্যাপারে চিন্তার কিছু নেই বরং সঠিকভাবে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার না করা হলে এর উভয় চামড়া একে অপরের সাথে লেগে যেতে পারে।      

আপনাকে আরো একটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, যৌনাঙ্গ কখনই কুসুম গরম পানি ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে পরিষ্কার করবেন না। যে কোন ধরনের সাবান সেই অংশে অসামঞ্জস্যতা তৈরি করতে পারে অথবা যে কোন ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।

[ আরও পড়ুনঃ কিভাবে নবজাতক শিশুর যৌনাঙ্গের সঠিক যত্ন নেবেন ]

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment