গর্ভাবস্থায় পেলভিক গার্ডল পেইন (Pelvic Girdle Pain)

Spread the love

আমাদের শরীরের মধ্যভাগে কয়েকটি হাঁড়ের সমন্বয়ে তৈরি বেসিন আকৃতির যে অংশটি শরীরের উপরিভাগ ও নিম্নভাগকে যুক্ত করে তাকে পেলভিস বলে। পেলভিস যেসব হাঁড় এবং জয়েন্টের সমন্বয়ে তৈরি সেগুলোকে একত্রে পেলভিক গার্ডল বলে। পেলভিসে তিনটি প্রধান জয়েন্ট থাকে। একটি থাকে সামনের দিকে যাকে পিউবিক সিম্ফিসিস (pubic symphysis) বলা হয় এবং দুটি থাকে পেছনের দিকে যাদেরকে স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্ট (sacroiliac joints) বলা হয়। এই দুটি জয়েন্টদের মাধ্যমে পেলভিস মেরুদণ্ডের একেবারে নীচে অবস্থিত স্যাকরামের (sacrum) এর সাথে যুক্ত থাকে।

পেলভিক গার্ডল
পেলভিক গার্ডল

পেলভিসের এক বা তার অধিক জয়েন্টে ব্যথাকেই পেলভিক গার্ডল পেইন (Pelvic girdle pain) বলা হয়। আগে এই ধরণের ব্যথাকে এর অবস্থান অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত কর হোতো, যেমন সামনের জয়েন্টে ব্যাথাকে বলা হোতো – সিম্ফিসিস পিউবিস ডিস্ফাঙ্কশন বা Symphysis Pubis Dysfunction (SPD) এবং পেছনের জয়েন্টগুলোর ব্যাথাকে বলা হোতো স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্ট পেইন বা Sacroiliac joint pain। তবে এখন সমষ্টিগতভাবে পেলিভক গার্ডলের সব ব্যাথাকেই পেলভিক গার্ডল পেইন বলা হয়।

বিজ্ঞাপণ

পেলভিসের দুটো হাঁড় আমাদের শরীরের সামনের দিকে যে জয়েন্টের মাধ্যমে যুক্ত থাকে তাকে Pubis Symphysis বলে। যখন এই জয়েন্টে লিগামেন্টগুলো শিথিল হয়ে যায় তখন পিউবিকের হাঁড়গুলো সহজে নড়াচড়া করতে থাকে যাতে মৃদু বা তীব্র ব্যথা অনভুত হতে পারে। এই ব্যথাকে বলা হয় Symphysis Pubis Dysfunction (SPD)। যখন Pubis Symphysis এর মধ্যবর্তী গ্যাপ বেশি হয়ে যায় তখন একে Diastasis Symphysis Pubis (DSP) বলে। প্রথমটির ক্ষেত্রে হাঁড়ের জয়েন্ট সাধারণত ২-৩ মিলিমিটার চওড়া হয় তবে DSP এর ক্ষেত্রে তা ১০ মিলিমিটারের বেশি হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যথা বেশি তীব্র হয়।

Diastasis Symphysis Pubis (DSP)

Sacroiliac joint pain এর ক্ষেত্রে পেলভিসের একপাশে অন্যপাশের চাইতে ব্যথা বেশি অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা পা পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে, লো ব্যাক পেইন হতে পারে বা উরুর সামনের দিকে ব্যাথা অনুভত হতে পারে। আপনার মনে হতে পারে পেলভিসের হাঁড়গুলো নড়বড়ে হয়ে আছে।

গর্ভাবস্থায় পেলভিক গার্ডল পেইন কেন হয়

বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরে স্বাভাবিক যেসব পরিবর্তন আসে তার প্রভাবে পেলভিক গার্ডল পেইন হয়।

গর্ভাবস্থার ১০ সপ্তাহ নাগাদ মায়ের প্লাসেন্টা অতিরিক্ত পরিমাণে রিলাক্সিন হরমোন তৈরি করতে থাকে, এর হরমোনের প্রভাবে মায়ের শরীরের অন্যান্য লিগামেন্টের সাথে সাথে পেলভিসের হাঁড় গুলোকে যুক্ত করে রাখা লিগামেন্টগুলোও শিথিল হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত অ্যাস্ট্রজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের নিঃসরণও লিগামেন্টের এই শিথিল হওয়াকে প্রভাবিত করে। এতে প্রসবের সময় মায়ের পেলভিস সহজে প্রসারিত হতে পারে এবং গর্ভের শিশুর জন্মনালী দিয়ে বেরিয়ে আসা সহজ হয়।

শিথিল হয়ে যাওয়া লিগামেন্টগুলো যখন প্রয়োজনের বেশি প্রসারিত হয় বা এগুলোর মাধ্যমে যুক্ত থাকা হাঁড়গুলো যখন সহজে নড়াচড়া করতে পারে তখন ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই হাঁড়গুলো তাদের অবস্থান থেকে সরে গেলে তা আসে পাশে থাকা মাংসপেশী এবং নার্ভের উপর চাপ ফেলে বলেই ব্যথা হয়।

গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন বৃদ্ধি এবং শরীরের ভর কেন্দ্রের পরিবর্তনের কারণেও পেলভিক গার্ডল পেইন হতে পারে। মায়ের এবং গর্ভের শিশুর ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে পেলভিসের উপর এবং এর জয়েন্টগুলোতে চাপ বাড়তে থাকে। এছাড়াও গর্ভাবস্থার শেষের দিকে যখন গর্ভের শিশু যখন নীচের দিকে নেমে আসে তখনও এসব জায়গায় চাপ বৃদ্ধি পায় যাতে পেলভিক গার্ডল পেইন হতে পারে।  

তবে গর্ভাবস্থায় শরীরের এসব স্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণেই যে শুধু পেলভিক গার্ডল পেইন হবে তা নয়। কারণ আমাদের শরীরের পেশী এবং নার্ভগুলো এমনভাবে তৈরি যাতে সেগুলো গর্ভাবস্থার এসব পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। পেলভিক গার্ডল পেইন তাই তখনি হতে পারে যখন মায়েদের শরীর এসব পরিবর্তনের সাথে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারেনা।

পেলভিক গার্ডল পেইনের ক্ষেত্রে পেলভিসের জয়েন্টগুলোর নড়াচড়া অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে যার কারণে পেলভিক গ্রিডেলের একটি বা একাধিক জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। অথবা শরীরের পেশীগুলো পেলভিসকে ভালোভাবে সাপোর্ট দিতে না পারলেও এমন ব্যথা হতে পারে।

এসব কারণে পেলভিক গার্ডল পেইন গর্ভাবস্থায় অনেকের হলেও একে স্বাভাবিক ধরে নেয়া উচিত নয়। এই ধরণের ব্যথা হলে শুরুতেই ডাক্তারের সাহায্য নিতে হবে কারণ তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। প্রতি ১২ জন গর্ভবতীর মধ্যে ১ জনের পেলভিক গার্ডল পেইন হতে পারে এবং তার মধ্যে প্রতি ২০ জনে ১ জনের ব্যথা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে যাতে তার চলাফেরায় সমস্যা হতে পারে।

কাদের ঝুঁকি বেশি থাকে

পেলভিক পেইন কাদের হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যায়না তবে কিছু কিছু মায়েদের পেলভিক গার্ডল পেইনের ঝুঁকি বেশি থাকে, যেমন-

  • যাদের আগে থেকেই কোমরে বা লো-ব্যাক পেইন আছে।
  • যদি অতীতে পেলভিস আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে।
  • আগের প্রেগন্যান্সিতে যদি পেলভিক গার্ডল পেইন হয়ে থাকে।
  • যারা অতিরিক্ত ভারী কাজ করেন।
  • গর্ভে যদি যমজ শিশু থাকে।
  • মায়ের ওজন বেশি হলে।

পেলভিক গার্ডল পেইনের লক্ষণ

পেলভিক গার্ডল পেইন কি পরিমাণ এবং ঠিক কোথায় হবে তা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। এই ব্যথা পেলভিসের এক পাশে বা উভয় পাশে হতে পারে। কখনো কখনো এই ব্যথা পশ্চাৎদেশের ঠিক মাঝামাঝি বা উরুর পাশে হতে পারে।

পেলভিক গার্ডল পেইনকে অনেকে সায়াটিকার ব্যথার সাথে ভুল করতে পারেন কারণ সায়াটিকার ক্ষেত্রেও ব্যথা পশ্চাতদেশ থেকে উরু এবং পা পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়।

পেলভিক গার্ডল পেইনের ক্ষেত্রে যেসব জায়গায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে –

  • লোয়ার ব্যাক বা পিঠের নীচের দিকে
  • পেলভিসের সামনের দিকে (symphysis pubis joint).
  • পেলভিসের পেছনের দিকে (sacroiliac joints).
  • গ্রোইন বা কুঁচকিতে।
  • উরুর সামনের এবং পেছনের দিকে।
  • পায়ের পেছনের দিকে।
  • কোমরের চারপাশে।
  • পেলভিক ফ্লোরে এবং পেরিনিয়ামে (ভ্যাজাইনা এবং মলদ্বারের মধ্যবর্তী অংশ)।

এছাড়াও নড়াচড়া করার সময় পেলভিক এরিয়াতে “খট খট” শব্দ হতে পারে বা “খট খট” করছে বলে মনে হতে পারে। পেলভিক গার্ডল পেইন প্রথম ট্রাইমস্টার থেকেই শুরু হতে পরে তবে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে বেশি দেখা যায়।

কিছু কিছু মায়েরা বলেন রাতে ব্যথা বেড়ে যায় বিশেষ করে যেদিন একটু পরিশ্রম বেশি হয়।

এর কারণে কি গর্ভাবস্থায় কোন জটিলতা দেখা দিতে পারে

পেলভিক গার্ডল পেইনের কারণে গর্ভের শিশুর কোন ক্ষতি হয়না এবং বেশির ভাগ মায়েরাই এই কন্ডিশন নিয়ে স্বাভাবিক প্রসব করতে পারেন। তবে এই দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণে মায়ের উদ্বেগ এমনকি বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে যা গর্ভের শিশুর উপর পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

পেলভিক গার্ডল পেইন হালকা অস্বস্তি থেকে শুরু করে তীব্র হতে পারে, যা আপনার জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। দৈনন্দিন কাজকর্ম, যেমন কাপড় পরা, হাঁটা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা, বেশিক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা, বিছানা থেকে ওঠা, এমনকি বিছানায় এপাশ ওপাশ ফিরতেও সমস্যা হতে পারে।

পেলভিক গার্ডল পেইন নির্ণয়

প্রথমেই ডাক্তার আপনার পেলভিস পরীক্ষা করে দেখবেন এবং কখন ও কোথায় ব্যথা হয় সে সম্পর্কে জানতে চাইবেন। তাই কোন কোন মুভমেন্টে আপনার ব্যথা হয় সেটা খেয়াল করার চেষ্টা করবেন যাতে ডাক্তারকে সঠিক তথ্য দিতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় যেহেতু এক্সরে নিরাপদ নয় তাই ডাক্তার আপনাকে আলট্রাসাউন্ড করার পরামর্শ দিতে পারেন। আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে পেলভিসের হাঁড়গুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব কেমন তা দেখা হয়।

কখনো কখনো ডাক্তাররাও এই ব্যথাকে সায়াটিকার ব্যথা বলে ভুল করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার যদি কোন সন্দেহ থাকে আপনি একজন ফিজিওথেরাপিস্টের সাথে কথা বলতে পারেন। তবে তিনি যেন গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসায় অভিজ্ঞ হন সে বিষয়টি গুরুত্ব দিবেন।

পেলভিক গার্ডল পেইনের চিকিৎসা

পেলভিক গার্ডল পেইনের প্রথম চিকিৎসা হলো ফিজিওথেরাপি। ফিজিওথেরাপির লক্ষ্য হলো-

  • ব্যথা কমানো
  • পেশীর কার্যক্ষমতার উন্নয়ন
  • পেলভিক জয়েন্টের ভারসাম্য ও অবস্থান ঠিক রাখা।

ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পেলভিসের জয়েন্ট, মেরুদণ্ড এবং কোমরের মুভমেন্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়। এছাড়াও এমন কিছু ব্যায়াম দেয়া হয় যাতে পেলভিক ফ্লোর, পিঠ, পাকস্থলী এবং কোমরের পেশীগুলোর শক্তি বৃদ্ধি পায়।

আপনাকে হাইড্রোথেরাপির পরামর্শ দেয়া হতে পারে। এই পদ্ধতিতে পানির মধ্যে ব্যায়াম করতে বলা হয়। পানিতে ব্যায়াম করলে জয়েন্টে চাপ অনেক কম পড়ে এবং নড়াচড়া অনেক সহজ হয়। এসব ছাড়াও ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে শোওয়া, বসা এবং শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরামদায়ক অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দেবেন।

বিজ্ঞাপণ

ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে পেলভিক সাপোর্ট বেল্ট এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রাচ ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারেন। ব্যথা খুব বেশি তীব্র হলে ব্যথার ওষুধ দেয়া হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে TENS Therapy দেয়া হয়। তবে সবখানে এই থেরাপি সহজলভ্য নয়।

তবে মনে রাখবেন যে কোন ওষুধ বা হারবাল চিকিৎসা নেয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। কারণ গর্ভাবস্থায় সব ওষুধ নিরাপদ নয়।

পেলভিক গার্ডল পেইন থেকে কীভাবে স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে

পেলভিক গার্ডল পেইন পুরোপুরি দূর করার কোন উপায় নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাবধান থেকে এর থেকে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে-

১। অ্যাক্টিভ থাকার চেষ্টা করুন। কিন্তু এমন অতিরিক্ত কিছু করবেন না যাতে ব্যথা অনুভূত হয়। যদি কিছু করতে গিয়ে ব্যথা হয় তবে সাথে সাথে তা বন্ধ করুন। ব্যথা নিয়ে কাজ করলে সেটা ঠিক হতে অনেক সময় লেগে যায়।

২। আপনার ফিজিওথেরাপিস্ট যে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ এবং পেটের ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়েছেন সেগুলো করার চেষ্টা করুন। নতুন কিছু করার চেষ্টা করবেন না। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে এ ধরনের ব্যায়াম করার সময় তা দ্রুত করা না হয় বা স্ট্রেচিং বেশী করা না হয়। এর ফলে হিতে বিপরিত হতে পারে। ব্যায়ামের সময় সব সময় নিজের শরীরের কথা শোনার চেষ্টা করুন। যখনি মনে হবে অসুবিধা হচ্ছে বা ব্যাথা হচ্ছে তখন ব্যায়াম বন্ধ করুন।

৩। ঘরের কাজকর্মে অন্যদের সাহায্য নিন। ভারী কিছু বহন করবেন না। এতে ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে। যদি কিছু বহন করতে হয় তবে ব্যাকপ্যাক ব্যবহার করুন এবং তা দুকাঁধে ঝুলিয়ে নিন। এতে শরীরের কোন একপাশে অতিরিক্ত চাপ পরবেনা। এছাড়াও এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকুন যেগুলোতে কোমর বা মেরুদণ্ড বেশী বাঁকাতে হয়।

৪। গর্ভাবস্থায় বাম পাশ ফিরে শোওয়ার চেষ্টা করুন।এছাড়াও ঘুমানোর সময় দুপায়ের মাঝখানে বালিশ ব্যাবহার করতে পারেন যাতে উপরের পায়ের ভর বালিশের উপর পড়ে। পেটের নীচে বালিশ ব্যাবহার করতে পারেন বা পিঠের দিকে বালিশ দিয়ে সাপোর্ট দিতে পারেন।

৫। বিছানা থেকে বা বসা থেকে ওঠার সময় আস্তে আস্তে উঠুন। হঠাৎ নড়াচড়ার কারণে পেইন বেশী হয়। তাই ধীরে নড়াচড়া করুন।হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় কোমর ও হাঁটু সামান্য বাঁকিয়ে নিন। এতে লিগামেন্টে চাপ কম পড়ে। বিছানায় পাশ ফেরার সময় দুহাঁটু এক করে ধীরে ধীরে পাশ ফিরুন।

৬। নিয়মিত বিশ্রাম নিন। আগে যেসব কাজ দাঁড়িয়ে করতেন তা বসে করার চেষ্টা করুন। যখনই সম্ভব হবে হাত এবং হাঁটুর উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে থাকুন। এতে পেলভিসের উপর থেকে চাপ কমে।

৭। খুব বেশি সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করবেন না। যদি সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই হয় তবে ধীরে ধীরে এক ধাপ একধাপ করে উঠুন। যে পায়ে ব্যথা কম সে পা আগে দিয়ে একধাপ উঠুন তারপর অপর পা সে ধাপে তুলুন। এভাবে এক ধাপ করে করে উপড়ে উঠুন।

৮। একপায়ের উপর দাঁড়াবেন না। অনেকসময় প্যান্ট পরার জন্য এক পায়ের উপর ভর দিতে হয় যাতে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। প্যান্ট পরার সময় বসে পরুন।

৯। যদি চাকুরীজীবী হন তবে অফিসে কথা বলে রাখুন যাতে সমস্যা হয় এমন কাজ এড়িয়ে চলা যায়।

১০। হালকা গরম সেঁক দেয়া যেতে পারে বা হালকা গরম পানিতে গোসল করে নিতে পারেন। এতে ব্যাথা নিরাময় হয়। তবে মনে রাখতে হবে বেশী গরম লাগানো চলবেনা কারণ এতে গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি হয়।

১১। প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে মাসাজ করাতে পারেন। মাসাজের ফলে কিছুটা আরামাবোধ করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে মাসাজ আলতোভাবে করা হয় এবং বেশী চাপ প্রয়োগ করা না হয়।

পেলভিক গার্ডল পেইনের কারণে কি স্বাভাবিক প্রসবে কোন সমস্যা হতে পারে?

বিজ্ঞাপণ

সঠিক পরামর্শ এবং সময়মত চিকিৎসা নিলে পেলভিক গার্ডল পেইনের কারণে সাধারণত স্বাভাবিক প্রসবে কোন সমস্যা হয়না। তবে এর কারণে প্রসবের সময় বিছানায় চিৎ হয়ে শুতে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আরামদায়ক অবস্থানের বিষয়ে ডাক্তার আপনাকে আগে থেকেই জানাবেন।

পেলভিক গার্ডল পেইনের কারণে প্রসবের সময় দুই পা মেলে ধরাটা কষ্টকর হতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণত পা কতটুকু মেললে আপনার ব্যথা সহনীয় পর্যায়ে থাকে তা আগে থেকে মেপে নেয়া হয়। এটাকে আপনার পেইন ফ্রি রেঞ্জ হিসেবে ধরা হয়।

এটি জরুরী বিশেষ করে যদি প্রসবের সময় এপিডিউরাল দেয়া হয়। কারণ এপিডিউরাল দেয়ার কারণে আপনি হয়তো প্রসবের সময় গার্ডল পেইন অনুভব করতে পারবেন না কিন্তু এপিডিউরালের প্রভাব কেটে যাওয়ার পর তা আপনার কষ্টের কারণ হতে পারে। তাই আগে থেকে পেইন ফ্রি রেঞ্জ জানা থাকলে ডাক্তাররা সেদিকে নজর রাখেন।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যাসিস্টেড ডেলিভারির করানোর প্রয়োজন হতে পারে। তাই আপনার এই ব্যথার বিষয়ে আগে থেকেই ডাক্তারকে জানিয়ে রাখুন। যদি ব্যথা অসহনীয় পর্যায়ে থাকে এবং আপনার কোন ধরণের নড়াচড়া করতেই সমস্যা হয় তবে সিজারিয়ান করতে হতে পারে। তবে এটাকে একেবারে শেষ অপশন হিসেবে রাখা হয়  কারণ সিজারিয়ান করা হলে প্রসবের পরও পেলভিক গার্ডল পেইন সেরে উঠতে সময় বেশি লাগতে পারে।

প্রসবের পর কি পেলভিক গার্ডল পেইন ঠিক হয়ে যায়?

প্রসবের পর সাধারণত কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে এর প্রকোপ কমে আসে। তবে ১০ জনের মধ্যে ১ জন মায়ের এর চাইতে বেশি সময় লাগতে পারে। যদি গর্ভকালীন সময় এর মাত্রা বেশি থাকে তবে প্রসবের পর সেরে উঠতেও সময় বেশি লাগতে পারে।

প্রসবের পর ঘন ঘন এই ব্যথা না হলেও পিরিয়ডের সময় কখনো কখনো তা অনুভূত হতে পারে। কারণ পিরিয়ডের সময় যেসব হরমোন নিঃসৃত হয় তা অনেকটা প্রেগন্যান্সি হরমোনের মতই।

যদি প্রসবের পরও এই ব্যাথা থাকে তবে ফিজিওথেরাপিস্টের দেখিয়ে দেয়া ব্যায়াম গুলো করতে পারেন। পরবর্তী গর্ভধারণের মাঝে কিছু সময় গ্যাপ নিলে আপনার জন্য উপকারী হবে। পরবর্তী গর্ভধারণের আগে ওজন কমিয়ে, শরীর ফিট করে এবং বাচ্চা হাঁটতে শেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে এই ব্যথা হয়তো গর্ভকালীন সময় আপনার তেমন একটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবেনা।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment