শিশুরা মূলত খেলার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন বিষয় শিখে থাকে। খেলতে খেলতে তারা নিজেদেরকে আবিষ্কার করে, অন্য মানুষদের ব্যাপারে ভাবতে শেখে এবং নিজেদের আশেপাশের দুনিয়া সম্পর্কে জানতে শুরু করে। শুধু তা-ই নয়, খেলাধূলা শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে, বিভিন্ন মানুষের সাথে তাদের সম্পর্ক গড়তে এবং মৌলিক দক্ষতা অর্জন করতে সহায়তা করে।
একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার কাছে বিষয়টা স্রেফ “খেলা” বলে মনে হলেও আপনার শিশুর কাছে তা “আসল কাজ”। শিশু প্রতিবার যখন কিছু ছোঁয়, অনুভব করে, স্বাদ নেয়, শোনে কিংবা নতুন কিছু দেখে; সেই ঘটনা তার মস্তিষ্কে একধরনের বার্তা প্রেরণ করে। সেই বার্তার কারণে মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষের মাঝে সংযোগ স্থাপিত হয়। প্রতীকি অর্থে বলা যায়, এই সংযোগের ফলে শিশুর মাথার ভেতরে থাকা ছোট ছোট বাল্ব সমূহ জ্বলে ওঠে!
এভাবে খেলতে খেলতে, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে করতে শিশু তার মস্তিষ্কে থাকা কোষগুলোর মাঝে যত বেশি সংযোগ স্থাপন করতে পারে, তার মস্তিষ্ক তত ভাল কাজ করতে শুরু করে।
এক্ষেত্রে বাবা মায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। বাবা মায়ের উচিত বাচ্চার সাথে খেলা করা এবং বাচ্চার আগ্রহকে উসকে দেওয়া। খেলা শিশুর মস্তিষ্ককে তার অনাগত ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
বাচ্চারা খেলার মাধ্যমে কীভাবে শেখে
মা-ছেলের কার্যকলাপের মাধ্যমে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক :
মাহী তার চার মাস বয়সী ছেলের জাহিদের সাথে খেলছে। জাহিদের একটা ঝুনঝুনি আছে, খেলনা হিসেবে এটা তার সবচেয়ে পছন্দের। মাহী তার ছেলেকে বললেন, “বাবু, ঝুনঝুনিটাকে উড়িয়ে দিই? দেখো, এটা কীভাবে ওড়ে!” এই কথা বলে মাহী সেই ঝুনঝুনিটাকে হাতে নিয়ে জাহিদের সামনে দিয়ে ওড়ানোর ভঙ্গি করলেন। নিজের পছন্দের ঝুনঝুনিটাকে ওভাবে উড়তে দেখে ছোট্ট জাহিদ উত্তেজনায় হাত-পা ছুঁড়তে শুরু করে! মাহী এবার খেলনাটা জাহিদের হাতে দিলে সে সেটাকে মুখে নিয়ে চিবানোর চেষ্টা করে। একটু পর সুবিধা করতে না পারে ঝুনঝুনিটাকে হাতে নিয়ে ঝাঁকাতে শুরু করে জাহিদ। ঝুনঝুনির মিষ্টি আওয়াজ শুনে সে আনন্দিত হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। এবার মাহী ঝুনঝুনিটা তুলে নিয়ে জাহিদের মুখের সামনে নাড়াতে থাকেন। কিন্তু জাহিদ খুশি হওয়ার বদলে উল্টো চোখ বুজে কাঁদতে শুরু করে। তখন মাহী বলেন, “আচ্ছা! আচ্ছা! বুঝতে পেরেছি। এখন তুমি বিশ্রাম নেবে, তোমার ঘুম পেয়েছে!” জাহিদকে কোলে তুলে নিয়ে মাহী তাকে আদর করে দেন।
এই ঘটনা থেকে শিশুটি বেশ কয়েকটা জিনিস শিখতে পারে :
- মাহী জাহিদের সাথে যে সুরে বা ছন্দে বা ভাষায় কথা বলেন, জাহিদ সেটা লক্ষ্য করতে পারে। এতে তার ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
- দু’জনের মাঝে খেলার মাধ্যমে একধরনের তথ্য আদান-প্রদান বা কমিউনিকেশন ঘটেছে, যার মাধ্যমে সে ভাব আদান প্রদান করতে শেখে।
- মাকে নিজের সাথে খেলতে দেখে জাহিদের খুশি হওয়া এবং নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবতে পারা।
- সে যখন ঝুনঝুনি নাড়ায় তখন তা থেকে শব্দ হয়। এতে সে কোন কিছুর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বুঝতে পারে।
- হাত বাড়িয়ে ঝুনঝুনি ধরার মাধ্যমে তার হাত এবং চোখের যথাযথ সমন্বয় সাধন হওয়া।
- ঝুনঝুনির আওয়াজ শোনা, রং দেখা, গঠন অনুভব করা, ঘ্রাণ নেওয়া এবং সেটার স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে সে বস্তু সম্পর্কে ধারণা পায়।
এভাবেই যে কোন ছোট ছোট খেলার মাধ্যমে বাচ্চারা একেবারে শুরু থেকেই তার চারপাশের সবকিছু সম্পর্কে শিখতে শুরু করে এবং তার পরবর্তী জীবনের শিক্ষার ভিত্তি স্থাপিত হয়।
শিশুর বিকাশে খেলার উপকারিতা ( ০-১২ মাস)
প্রাথমিক ভাষাগত দক্ষতা
এই বয়সী শিশুরা কথা বলার কৌশল পুরোপুরি আয়ত্ব করতে না পারলেও খেলার সময় তারা আপনার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে। আপনি তাদের সাথে যত বিষয় ভিত্তিক আলাপ করবেন তারা তত সেই বিষয়ক শব্দ শিখবে এবং কথা বলা রপ্ত করবে। ধরুন আপনি বললেন, “দেখো তোমার বড় ভাই ফুটবলে লাথি দিচ্ছে।” বারবার এধরনের কথা বলার ফলে আপনার শিশু সন্তান তার বড় ভাই, ফুটবল, খেলা এবং লাথি; এই বিষয়গুলোর সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করতে পারবে এবং সামনে এই শব্দগুলো নিজেও ব্যবহার করার চেষ্টা করবে।
এই বয়সী শিশুদের মগজ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা হয়তো কথা বলতে পারে না কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাদের ভাষাগত দক্ষতা সমৃদ্ধি হওয়ার ব্যাপারটা ঠিকই চালু থাকে।
যোগাযোগ দক্ষতা
বাচ্চা আপনার সাথে খেলতে খেলতে নিজের যোগাযোগ দক্ষতা সমৃদ্ধ করবে। আপনার সন্তান হয়তো এখনো কথা বলা শেখেনি কিন্তু সে ঠিকই তার মুখের এক্সপ্রেশন, অভিব্যক্তি এবং বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে শিখবে।
অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব শিশুর কাছে এধরনের এক্সপ্রেশনগুলোকে “আনন্দিত”, “দুঃখিত”, “উত্তেজিত” ইত্যাদি নামে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। এভাবে আপনার সন্তান নিজের আবেগ সমূহকে এইসব শব্দের সাথে সমন্বয় করে নিতে পারবে।
সামাজিক দক্ষতা
শিশু আপনার সাথে খেলতে এত পছন্দ করে কারণ সে আপনার সাথে সময় কাটাতে চায়। এভাবে খেলার ছলে সময় কাটাতে কাটাতে তারা বন্ধন গড়ে তুলতে শেখে এবং সামাজিক দক্ষতা সম্পর্কে জানতে শুরু করে। তারা মৌখিক এবং আচারণগত স্বভাবের ব্যাপারে শিখতে শুরু করে। তারা সীমা পরীক্ষা করতে শুরু করে। তারা দেখতে চায় কী করার অনুমতি আছে এবং কী করার অনুমতি নেই। তারা কাজ এবং কর্মফলের ব্যাপারে জানতে শুরু করে। বাচ্চা বড় হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সে তার এই সামাজিক দক্ষতাগুলো ব্যবহার করবে।
পেশী সঞ্চালন দক্ষতা (Gross Motor Skill)
শিশুদের নড়াচড়া খেয়াল করলে দেখা যায় মাঝেমধ্যে তাদের হাত-পায়ের মাঝে যথেষ্ট সমন্বয় থাকে না, একটু খাপছাড়া ভাব দেখা যায়। কোনো কারণ ছাড়াই তারা পড়ে যায়। আপনি যখন শিশুর সাথে খেলাধূলা করেন, হামাগুড়ি দিয়ে তার পেছনে তাড়া করেন কিংবা সে আপনাকে তাড়া করে, তখন তার শরীরে পেশী সঞ্চালন দক্ষতা বিকশিত হতে থাকে। সে নিজের শরীরের পাশাপাশি হাত এবং পায়ের মাঝে সমন্বয় সাধন করতে শেখে। ফলে সার্বিকভাবে সেগুলোর স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। বাচ্চা হামাগুড়ি দিয়ে শুধু তার আশেপাশের পরিবেশই দেখে না, সেই সাথে অন্যান্য মানুষের সাথেও সংযোগ স্থাপন করার সুযোগ পায়।
শিশুর সাথে খেলাধূলা করলে সে শারীরিক কর্মকাণ্ডের সাথে সংযুক্ত হতে পারে, যা অন্য কোনোভাবে সম্ভব নয়। খেলার সময় তারা যেভাবে নড়াচড়া করে, হামাগুড়ি দেয়, দৌড়াদৌড়ি করে; এসবই তাকে শারীরিকভাবে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তোলে এবং তাদের পেশী সঞ্চালন দক্ষতা বাড়াতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আঁকড়ে ধরার দক্ষতা (Fine motor skill)
এভাবে নিজের শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে শেখার পাশাপাশি শিশুরা হাত ও আঙ্গুলের সাহায্যে বিভিন্ন বস্তু আঁকড়ে ধরতে শেখে। তার এই শেখাকে ত্বরান্বিত করতে শিশুর হাতে বিভিন্ন জিনিস দেওয়া উচিত, যেগুলোকে মুঠো শক্ত করে ধরতে হয়।
শিশুর এই দক্ষতা বাড়ানো সবচেয়ে সহজ উপায় হলো- খেলা। বিভিন্ন ধরনের খেলা রয়েছে যেগুলো খেলতে হলে খেলনাকে হাত দিয়ে ধরতে হয় এবং ক্রম অনুযায়ী সাজাতে হয়। এই খেলাগুলো তার ফাইন মটর স্কীল বিকাশে সাহায্য করে।
জ্ঞানভিত্তিক দক্ষতা
খেলা করলে শিশুর মস্তিষ্কে থাকা স্নায়ুকোষগুলো সচল হয়ে ওঠে এবং মস্তিষ্কের যে অংশ জ্ঞান, চেতনা ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে তা সক্রিয় হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে এটা শিশুর মস্তিষ্কে তার জন্মের আগেই সংগঠিত হয়ে যেতে পারে।
শিশু যতবার কোনো কাজ করে, খেলায় অংশ নেয়; তার মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলো তত শক্তিশালী হতে থাকে। হয়তো সেজন্যই বাচ্চারা একই রকম খেলা খেলতে বা কর্মকান্ড পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পছন্দ করে! স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ ধরে রাখার মতো গুণ সমূহ জ্ঞানভিত্তিক দক্ষতার অন্তর্ভূক্ত। খেলাধূলায় সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশুর মাঝে এই দক্ষতা গড়ে ওঠে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বাচ্চারা একেবারে ছোট বয়স থেকে বিভিন্ন খেলনার মাধ্যমে খেলেছে তাদের বয়স ৩ বছর হওয়ার পর তাদের আইকিউ (IQ / বুদ্ধ্যঙ্ক) তুলনামূলক বেশি থাকে। শুধু তাই নয়, তাদের বয়স ৪-৫ বছর হওয়ার পর পুনরায় পরীক্ষা করেও একই ফলাফল পাওয়া গেছে। তাই শিশুর হাতে খেলনা তুলে দেওয়া, তাকে খেলনা নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ করে দেওয়া মানে তার মস্তিষ্কের শক্তিকে বিকশিত করার পথ করে দেওয়া।
দৃষ্টিশক্তির বিকাশ
ছোট শিশুরা এখনো তাদের আশেপাশের দুনিয়া সম্পর্কে নিত্য নতুন বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করে যাচ্ছে। খেলাধূলা করলে তাদের দৃষ্টিলব্ধ জ্ঞান সমৃদ্ধ হয় এবং তারা চোখে দেখে অনেক কিছু চিনতে পারে এবং কোনো জিনিস দেখে সেটাকে অনুসরণ করার দক্ষতা অর্জন করতে পারে। সবমিলিয়ে বলা যায়, খেলার মাধ্যমে শিশুরা তাদের দুটো চোখকে সর্বোচ্চ স্তরে সক্রিয় করার সুযোগ পায়।
খেলাধূলা আবেগীয় নিরাপত্তার জন্ম দেয়
অভিভাবক হিসেবে আপনি যখন কোনো গল্প পড়ে শোনান, ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে শোনান বা হাস্যকর মুখভঙ্গি করেন বা তার সাথে কোনো খেলনা দিয়ে খেলেন; তখন শিশুর মনে একধরনের নিরাপত্তাবোধের জন্ম দেয়। এধরনের কর্মকাণ্ড থেকে শিশু বুঝতে পারে বাবা মায়ের কাছে তার মূল্য রয়েছে, বাবা মা তার প্রতি যত্নশীল এবং সে বাবা মায়ের কাছে আদরের।
খেলাধূলা আত্মবিশ্বাস গড়ে দেয়
শিশুরা খেলার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস অর্জন করে থাকে। হয়তো সে আপনার দিকে একটা বল গড়িয়ে দিতে সক্ষম হলো বা খেলার ছলে হামাগুড়ি দিয়ে দ্রুত তার ঝুনঝুনিটা নিজের হাতে তুলে নিলো; এধরনের সক্রিয় কর্মকাণ্ড শিশুর ভেতরে আত্মবিশ্বাস গড়ে দেয়। বাবা মা যদি তাকে এধরনের প্রতিটি সাফল্যের সাথে সাথে প্রশংসা করে তাহলে শিশু আরো সক্রিয় হতে উৎসাহ লাভ করে।
০ থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুদের সাথে খেলার কিছু টিপস
বয়স ০ থেকে ১ মাস
মাইলস্টোন
- শিশু এসময় একহাত দূরত্বের বেশি ভালোভাবে দেখতে পায়না। সে রং দেখতে পারে তবে হাই কন্ট্রাস্ট রং তার পছন্দ।
- এই বয়সী বাচ্চাদের হাতে কিছু দিলেই তারা সেটা আঁকড়ে ধরতে চায়। একে পালমার গ্রাসপ রিফ্লেক্স বলে।
- শ্রবণ শক্তির উন্নতি ঘটতে থাকে এবং পরিচিত কণ্ঠ বুঝতে পারে।
খেলার ধরণ
এই বয়সী শিশু তার বাবা মায়ের চেহারা নিয়ে বেশি আগ্রহী থাকে। পাশাপাশি অন্য কারো মুখমন্ডলের সাদাকালো ড্রয়িং, সাদাকালো জ্যামিতিক ছবি (কন্ট্রাস্ট বা রঙের পার্থক্য বোঝানোর জন্য), সহজে ধরা যায় এমন খেলনা (ওজনে পাতলা এবং গড়ন মসৃণ) ইত্যাদিও শিশুদের বিকাশের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই বয়সে শিশুর জন্য সবচাইতে ভালো খেলা হলেন আপনি। তার মুখের খুব কাছাকাছি থেকে তার সাথে কথা বলুন যাতে সে আপনাকে দেখতে পায়। তাকে গান শোনাতে হবে, তার সাথে কথা বলতে হবে। আপনি সরাসরি তার সাথে না খেললেও, আশেপাশে থেকে আপনার কণ্ঠ শিশুকে শোনাতে পারেন; এটাও শিশুকে আপনার কণ্ঠের সাথে পরিচিত হতে সাহায্য করবে। কান এবং চোখের সমন্বয়ে শিশু আপনাকে অনুসরণ করতে শিখবে।
বয়স ২ থেকে ৩ মাস
মাইলস্টোন
- এই বয়সে শিশু নিজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওপর নিয়ন্ত্রণ বুঝে নিতে শুরু করে এবং কোনোভাবে হাত, পা নেড়ে মজা পেয়ে গেলে সে বারবার তা পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করে।
- তৃতীয় মাসের শেষের দিকে শিশু তার চোখের সাথে হাতের সমন্বয় করতে শেখে।
- এই বয়সী শিশুর হাতে ঝুনঝুনি ধরিয়ে দিলে সে সেটাকে ধরতে পারে এবং সেটা নিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে কিছুক্ষণ খেলে। সাধারণত ঝুনঝুনির দিকে তাকিয়ে থেকে এবং সেটাকে মুখ দিয়ে কামড়ে ধরে শিশু খেলা শুরু করে।
খেলার ধরণ
নড়াচড়া করে এমন জিনিস নিয়ে খেললে শিশু ওপরে উল্লেখিত তিনটি পয়েন্টে থাকা বিষয়গুলো অর্জন করার পথে এগিয়ে যায়। তাই সে যখন চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে সে সময় তার মাথার উপর ঝুলন্ত যেসব খেলনা পাওয়া যায় সেসব রাখতে পারেন। এসব খেলনা যখন সে হাত পা ছুঁড়ে নড়াচড়া করে তখন তার শারীরিক দক্ষতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
সে যখন উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে তখন তার দৃষ্টিসীমা থেকে একটু দূরে সামনে নড়াচড়া করতে পারা, মুখওয়ালা সাদা-কালো পুতুল কিংবা তুলতুলে কোনো রঙিন খেলনা রাখতে পারেন। আস্তে আওয়াজ তৈরি করে শিশুর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন যেন সে মাথা উঁচু করে সামনে রাখা খেলনাটা দেখার উৎসাহ পায়। এভাবে খেলার চর্চা করলে আপনার শিশুর ঘাড়ের পেশীগুলো শক্তিশালী হবে, তার বুক এবং পাজরের হাঁড় মজবুত হবে। ফলে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের প্যাটার্নে পরিবর্তন আসবে এবং তা বিকশিত হবে। শিশুদের কথা বলার ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের এই বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই বয়সী শিশুর জন্য যেসব খেলনা উপযোগী
- কাপড় কিংবা পাতলা স্কার্ফ; যা দিয়ে শিশুর সাথে লুকোচুরি খেলা যেতে পারে।
- মজবুত, সহজে ভেঙ্গে যায়না এমন আয়না; যেটাতে শিশু তার নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পারবে।
- ঝুনঝুনি যুক্ত কাপড়ের তৈরি নরম বালা বা ব্রেসলেট; আপনার শিশুর হাতের কব্জিতে কিংবা পায়ের গোড়ালিতে বেঁধে দিতে পারেন।
- প্লাস্টিকের তৈরি চামচের সেট।
- উজ্জ্বল রঙের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কাপড়।
- কাঠ কিংবা প্লাস্টিকের তৈরি ব্রেসলেট; যার কোনো আলগা অংশ বা খুলে যাওয়ার মতো অংশ নেই।
- মুখমণ্ডল যুক্ত যেকোনো খেলনা। যেমন : পুতুল, ছবি, কাপড় বা তুলো দিয়ে তৈরি প্রাণীর পুতুল ইত্যাদি।
বয়স ৪ থেকে ৬ মাস
মাইলস্টোন
- নতুন কিছু হাতে পেয়ে সেটা নিয়ে গবেষণা করার ক্ষেত্রে শিশু মূলত তার নিজের মুখ ব্যবহার করে।
- মুখ দেওয়ার পাশাপাশি শিশু এই বয়সে হাতে থাকা জিনিস ঝাঁকায়, বাড়ি দেয়, দোলায়; এভাবে সে খেলা করে। শিশু ধীরে ধীরে নিজের পছন্দ ঠিক করে নেয়। নিজের কোন খেলনা দিয়ে সে কীভাবে খেলবে তা নিজেই ঠিক করে নিতে শুরু করে। যেমন : ঝুনঝুনি হাতে নিয়ে সে নিজেই ঝাঁকাতে শুরু করে, যেন ঝুনঝুনি থেকে নিজের পছন্দের আওয়াজটা শুনতে পায়।
- এই বয়সী শিশু শারীরিকভাবে আরো সক্রিয় হতে শুরু করে এবং সামাজিক আচরণ করতে শুরু করে।
- এই বয়সে শিশুর আঙ্গুলের (ফাইন মটর স্কিল) এবং নিজের হাত পায়ের (গ্রস মটর স্কিল) ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়তে থাকে। নিজের হাতের ক্ষমতা দেখে সে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যায়, হাত দিয়ে নিজের পছন্দ মতো কর্মকাণ্ড করতে শুরু করে।
খেলার ধরণ
শিশু নিজের মুখকে ব্যবহার করে বিভিন্ন জিনিস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। এতে দোষের কিছু নেই (তবে অভিভাবকদেরকে সাবধান থাকতে হবে যেন শিশু ক্ষতিকর কিছু মুখে না নিতে পারে)। শিশুকে তার মতো করে সময় কাটাতে দেওয়া উচিত। তবে সে যে জিনিসগুলো নাড়াচাড়া করছে সেগুলো যেন পরিষ্কার হয় এবং সেগুলো যেন তার গলায় আটকে না যায় বা তার দম বন্ধ না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই বয়সে শিশুর দাঁত না উঠলেও তাকে বিভিন্ন নিরাপদ টিদিং টয় দেয়া যেতে পারে। সে মুখে নিয়ে সেগুলোর আকার বোঝার চেষ্টা করে, এমনকি সেগুলোর স্বাদও নেয়; এসব স্বাভাবিক।
তার সাথে ছোট বল দিয়ে খেলা যেতে পারে। আপনি তার দিকে বল গড়িয়ে দিন। সে এখনো সঠিক ভাবে আপনাকে বল ফেরত পাঠাতে না পারলেও এতে তার শারীরিক বিকাশ হতে থাকবে। এসবের পাশাপাশি ৫ মাস বয়সী শিশুকে সামাজিক করার জন্য লুকোচুরির মতো খেলার সাথে পরিচিত করানো প্রয়োজন।
এই বয়সী শিশুর জন্য যেসব খেলনা উপযোগী
- মজবুত ঝুনঝুনি।
- লুকোচুরি খেলার জন্য স্কার্ফ।
- শিশুর হাতে ধরার মতো গোলাকার খেলনা; যা প্লাস্টিক কিংবা কাপড় দিয়ে বানানো।
- উজ্জ্বল রং এর কাপড়ের টুকরো।
- শিশুর খেলার জন্য বিশেষভাবে তৈরি বিছানা, যেখানে সে শুয়ে থাকা অবস্থায় তার ওপরে ঝুলতে থাকা খেলনাগুলোতে হাত পা চালাতে পারবে।
- যেসব খেলনা মৃদু এবং আকর্ষণীয় শব্দ করে সেগুলো বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক শব্দ করা খেলনার চাইতে অনেক ভালো। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সেগুলো যেন খুব বেশি আওয়াজ না করে। নইলে শিশুর স্পর্শকাতর কানের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
বয়স ৭ থেকে ৯ মাস
মাইলস্টোন
- শিশু এই বয়সে হামাগুড়ি দিতে পারে।
- শিশুর আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সে এখন ছোট ছোট জিনিস হাতে তুলে নিতে পারে।
- শিশু এই বয়সে শব্দ বুঝতে শুরু করে এবং নিজের দুই হাত একত্রিত করতে সক্ষম হয়।
- শিশু যখন তার পছন্দের কোনো খেলনার দেখা পায়, সে সেই খেলনাটি নিয়ে টানা ২ থেকে ৩ মিনিট খেলা করে। এই খেলার একটা বিশেষত্ব আছে। সে সেরকমভাবেই খেলে যেভাবে খেললে সে ওই খেলনাটি দিয়ে সবচেয়ে বেশি আনন্দ লাভ করতে পারে।
খেলার ধরণ
এই বয়সী শিশুদের সামলাতে বাবা মাকে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। কারণ এই বয়সী শিশুরা ঘরের সবকিছুকে নিজের সম্ভাব্য খেলনা হিসেবে দেখতে শুরু করে! শুধু তা-ই নয়, সে চাইলে সেগুলোর কাছে নিজেই পৌঁছে যেতে পারে, নিজেই সেগুলোর নাগাল পেতে পারে!
আঁকড়ে ধরার দক্ষতা বেড়ে যাওয়ায় সে ছোট জিনিসগুলোয় মুঠোয় নিয়ে নিতে পারে। শিশু জানতে চায় জিনিসটা কেমন, কীভাবে কাজ করে, জিনিসটাকে মেঝেতে আছাড় দিলে কী ঘটে, সেটাকে গড়িয়ে দিলে কেমন হয়, ঝাঁকি দিলে কী হয়, ছুঁড়ে মারলে কী ঘটে ইত্যাদি!
আপনার শিশু এই বয়সে আপনার বলা পরিচিত শব্দগুলোকে চিহ্নিত করতে শুরু করে। আপনি চাইলে তার সাথে এমন ধরনের খেলা খেলতে পারেন যাতে একই শব্দ বারবার উচ্চারণ করার প্রয়োজন পড়ে। সহজবোধ্য কোন খেলা কিংবা বোর্ড, ফোম বা কাপড়ের বইও এসময় বাচ্চাদের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে। বাচ্চার চারপাশে বিভিন্ন ধরনের খেলনা ছড়িয়ে দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, “বাবু, বলো তো ব্রাশটা কোথায়?” বা “বাবু বলো তো চামচটা কোথায়?” এভাবে সে অনেক জিনিসের ভীড়ে নির্দিষ্ট কিছু খুঁজে বের করতে শিখবে।
নন-ব্রেকএবল আয়নার দিকে শিশুর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, আয়নাটি যেন শিশুর উচ্চতার সাথে মানানসই হয়। যদি আপনার সন্তানটি স্রেফ হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করে অভ্যস্ত হয়, তাহলে আয়নাটি এমনভাবে স্থাপন করবেন যেন সে হামাগুড়ি দেওয়া অবস্থায় নিজের প্রতিবিম্ব আয়নায় দেখতে পায়। এরপর খেয়াল করে দেখবেন, সে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের সাথেই বেশি সময় কাটাচ্ছে, তার সাথে কথা বলছে।
এই বয়সী শিশুদের কাছে কোনো কিছু ছুঁড়ে ফেলা, আছাড় দেওয়া ইত্যাদি খুব মজার একটা খেলা। তারা এসব করে তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দ লাভ করে থাকে। অভিভাবক হিসেবে আপনি বাচ্চার এই দিকটা মাথায় রেখে সেই ধরনের খেলনা কিনে দিতে পারেন।
খেলনা হাড়ি, পাতিল, চামচ, পাত্র ইত্যাদি বাচ্চার হাতে তুলে দিন (খেয়াল রাখবেন, সেগুলো যেন ভঙ্গুর না হয়)। সহজাতভাবেই সে মাঝেমাঝে সেগুলো ছুঁড়ে মারবে বা আছাড় দেবে, সেখান থেকে শব্দ সৃষ্টি হবে! এভাবে তাকে তার মতো করে নিরাপদে আনন্দ করার সুযোগ করে দিন। তবে হ্যাঁ, শিশুকে বারবার একই ধরনের খেলনা কিনে না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খেলনা দিন। এতে তার মস্তিষ্কের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।
বয়স ১০ থেকে ১২ মাস
মাইলস্টোন
- এই বয়সে শিশু নিজের ভারসাম্য রাখার দক্ষতা অর্জন করতে শুরু করে। সেই সাথে সে টুকটাক হাঁটাহাটিও করতে পারে।
- তার বোঝার ক্ষমতা, ভাষা দক্ষতা এবং হাত পা নাড়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- হাত ও আঙ্গুলের ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে এসময় সে কাগজ ভাঁজ করা, ছিঁড়ে ফেলা, টান দেয়া ইত্যাদি শুরু করে।
- এই বয়সী শিশু খেলনা গাড়ি বা বলকে নিজের মতো করে মেঝেতে বা অন্য কোনো পৃষ্ঠে ঠেলা মেরে চালাতে পারে বা গড়িয়ে দিতে পারে।
- শিশু এই বয়সে বিভিন্ন জিনিসের (চামচ, বাটি ইত্যাদি) জোড়া বা সেট মেলাতে শেখে।
- শিশু অনুকরণ করার খেলা খেলতে শুরু করে।
খেলার ধরণ
এই বয়সী শিশু খেলার ছলে কোনো পাত্রে কোনো জিনিস ভরতে এবং সেটা খালি করতে পছন্দ করে। তাই তার কাছে এমন কিছু দিন যা দিয়ে সে ওরকম ডাম্প অ্যান্ড ফিল গেম খেললে আপনার কোনো সমস্যা হবে না।
চাইলে আপনি শিশুর এই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে তাকে পরিষ্কার পরিচ্ছনতার ব্যাপারটা শিখিয়ে দিতে পারেন। তাকে একটা কন্টেইনার দিন এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন খেলনা সেই কন্টেইনারে তুলে রাখতে শেখান। পুরো বিষয়টা তার কাছে একটা খেলা হিসেবে উপস্থাপন করুন।
তাকে খেলনা কাপ সাজিয়ে রাখা শেখাতে পারেন, এক জিনিসের ওপর কীভাবে আরেকটা জিনিস সাজাতে হয় তা শেখাতে পারেন। কীভাবে সবার নিচে সবচেয়ে চওড়া জিনিসটা রাখতে হয় তারপর ধীরে ধীরে ওপরে চিকন, হালকা জিনিস রাখতে তা শিখিয়ে দিতে পারেন। তবে এই ব্যাপারটা একটু জটিল হওয়ায় এটা পুরোপুরি আয়ত্বে নিতে শিশুর আরো ৬ মাস সময় প্রয়োজন হবে।
শিশুর সামনে বিভিন্ন ছড়া বা গান গাইতে পারেন। আপনার সন্তান গান গাইতে না পারলে সে আপনার কণ্ঠ শুনবে এবং শেখার চেষ্টা করবে। বিভিন্ন শব্দ, ছন্দ, সুর ইত্যাদির সাথে পরিচিত হবে। এভাবে শুনতে শুনতে একপর্যায়ে সেগুলো আর তার কাছে আর নতুন বলে মনে হবে না। তখন সে নিজেই আস্তে আস্তে সেগুলো বলার চেষ্টা করবে।
এক বছর বয়সের কাছাকাছি সময় শিশু অনুকরণ করার খেলা খেলতে শুরু করে। খেলনা ফোন, পুতুল, প্রাণী ইত্যাদিকে সে নিজের খেলার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করবে। শুধু খেলনাই নয় সে আপনাকেও তার খেলায় অংশগ্রহণ করতে বলবে।
এই বয়সী শিশুর জন্য যেসব খেলনা উপযোগী
- ক্রমানুসারে সাজাতে হয় এমন সব খেলনা (স্ট্যাকিং টয়)
- সহজে ভাঙ্গবে না এমন ছোট ছোট খেলনা।
- ব্লক গেম খেলার জন্য বড় বড় ব্লক।
- বোর্ড বুক।
- নরম বল। বলের আকৃতিটা এমন হতে হবে যেন সেটা শিশু তার মুখের ভেতরে পুরোপুরি ঢোকাতে না পারে। বলে যাতে খোলা যায় এমন কোন অংশ না থাকে।
- আকৃতি সংক্রান্ত পাজল গেম।
- খেলনা ট্রাক, গাড়ি, যেগুলো সে ঠেলে নিতে পারবে।
- শিশুর চড়তে পারার উপযোগী বড় খেলনা।
- এমন খেলনা যা শিশুর দৃষ্টি শক্তির ক্ষীপ্রতা বৃদ্ধি করবে। দ্রুত ছুটতে পারা খেলনা, বল গড়িয়ে দেওয়ার জন্য র্যাম্প ইত্যাদি।
- গোসলের সময় ব্যবহার করতে পারে এমন খেলনা। যেমন : প্লাস্টিকের হাঁস, নৌকা ইত্যাদি। শিশু এগুলোকে বড় গামলা বা বালতির পানিতে নামিয়ে খেলা করবে। তবে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে, খেলনাগুলো যেন নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় এবং শুকিয়ে নেওয়া হয়।
কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি
১. শিশুর খেলনার পেছনে অনেক বেশি অর্থ খরচ করার প্রয়োজন নেই। গৃহস্থালির টুকিটাকি জিনিস দিয়ে খেলতে শিশুরা বেশি পছন্দ করে। এমনকি গবেষণা বলছে ঘরের এসব জিনিসপত্র দোকান থেকে কিনে আনা খেলনার চাইতে ভালো কারণ এসব জিনিস দিয়ে শিশু তার নিজের মত করে খেলে, সে নিজেই ঠিক করে কোন জিনিসটা সে কীভাবে ব্যবহার করবে। অন্যদিকে দোকান থেকে কিনে আনা খেলনার ক্ষেত্রে সেটা যে উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছে সেভাবেই খেলতে হয়।
২. শিশু টিভি দেখে তেমন ভাল কিছু শিখতে পারে না। টিভি স্ক্রিনে কোনো কাজ দেখে সেখান থেকে শেখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এমনকি টিভি অনুষ্ঠানটি যদি শিশুদেরকে উদ্দেশ্য করে নির্মিত হয়ে থাকে তারপরেও তা সম্ভব হয় না। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে শিশুরা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে থাকে। শুধু তা-ই নয়, অনেক গবেষণায় দেখা গেছে- টিভি শিশুর ভাষাগত বিকাশ ঘটাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে থাকে।
৩. ছোট শিশুর হাতে বয়সে বড়দের খেলনা তুলে দিলেই তার মানসিক বিকাশের গতি বেড়ে যাবে না। কারণ বেশিরভাগ খেলনা সে হয়তো ঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পেরে রেগে যাবে বা সে খেলনা সে পুরোপুরি ইগনোর করবে। তাই শিশুর বয়স অনুযায়ী তার জন্য উপযুক্ত খেলনা সরবরাহ করতে হবে।
৪. সত্যি বলতে, শিশুর জন্য সবচেয়ে সেরা খেলনা হলো তার বাবা, মা। বাবা মায়ের কাছ থেকেই সে অধিকাংশ বিষয় শিখে থাকে। তবে তাই বলে বাবা মা যদি সবসময় শিশুর সামনে নিজে খেলনা নিয়ে বসে থাকে তাহলে চলবে না। বাবা মা অবশ্যই শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দেবে। পাশাপাশি শিশুকে তার নিজের মতো করে একা একা খেলার সুযোগটাও করে দিতে হবে।
শেষ কথা
বাচ্চার হাত থেকে কিছু পড়ে গেলে বা আপনার হাত থেকে কিছু পড়ে গেলে আপনার ছোট্ট সন্তান যদি খিলখিল করে হেসে ওঠে তাহলে আশা করি আর অবাক হবে না। আপনি এখন জানেন, সে কেন হাসছে। সে তার আশেপাশের দুনিয়া, পরিবেশ সম্পর্কে ধীরে ধীরে বোঝার চেষ্টা করছে। আর সেই কাজে তার একমাত্র বিশ্বস্ত সঙ্গী হলো- বাবা, মা। বাবা, মা তাদের শিশু সন্তানের সাথে যত খেলাধূলা করবে, শিশুর শারীরিক দক্ষতা তত বাড়বে, পাশাপাশি তার জ্ঞানভিত্তিক দক্ষতাও সমৃদ্ধ হবে। এভাবে শিশুর মানসিক এবং শারীরিক বিকাশ সংগঠিত হবে এবং সে একটি চমৎকার শৈশবের অভিজ্ঞতা নিয়ে বেড়ে উঠবে।
সবার জন্য শুভকামনা।