৬ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুর সেক্স এডুকেশন কেমন হওয়া উচিত

Spread the love

স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর বাচ্চারা ধীরে ধীরে নিজেদের শরীরের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তখন তারা সামাজিকতার দিকে জোর দিতে শুরু করে। নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করে, তাদের সাথে খেলাধূলা এবং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক দক্ষতা অর্জন করায় নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখে।

এই সময় সেক্স বা যৌনতা সম্পর্কে একেক বাচ্চার একেক ধরনের আগ্রহ থাকে। কেউ কেউ হয়তো হঠাৎ হঠাৎ প্রশ্ন করে সাধারণ অন্যসব বিষয়ের মত আবার কোনো কোনো বাচ্চা লাগাতার সেক্স নিয়ে কৌতুহলী হয়ে থাকে এবং তারা প্রতিনিয়ত বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য মুখিয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপণ

এই বয়সী বাচ্চাদের সামনে নানা ধরনের বক্তব্য, আইডিয়া এবং ভ্রান্ত ধারণার ডালি সাজানো থাকে। স্কুলে, বন্ধুদের কাছ থেকে শোনা বিভিন্ন কথাকে সে ফ্যাক্টস বা নিরেট তথ্য হিসেবে বিবেচনা করে বসতে পারে। সেই কথাগুলো যতই অবাস্তবিক বা হাস্যকর হোক না কেন ভুল ধরিয়ে না দিলে বাচ্চারা বন্ধুর কাছ থেকে শোনা সেই কথাগুলোকেই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে শুরু করে।

যদি আপনার ৮ বছর বয়সী সন্তানের ১০ বছর বয়সী বন্ধু থাকে তাহলে আপনারা সন্তান হয়তো আপনাকে এমন এমন প্রশ্ন করে বসবে, যা হয়তো আপনি তার কাছ থেকে এখন শোনার আশাই করেননি! যদি আপনি তার সেইসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেন, দেখা যাবে আপনার সন্তান বলে উঠছে, “কী জঘন্য ব্যাপার!” সন্তানের এধরনের প্রতিক্রিয়া ভাল লক্ষণ। এর মানে হলো সে এখনো এধরনের তথ্য হজম করার মতো পরিপক্বতা অর্জন করেনি, তার উপযুক্ত বয়স হয়নি।

৮ বছর বয়সী অধিকাংশ বাচ্চারা সেক্স সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে পারে না বা তাদের বোঝার কথাও নয়। ইরেকশন, পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব, প্রসব বেদনা এবং অন্যান্য সেক্সুয়াল বিষয় নিয়ে জানতে পারলে এই বয়সী বাচ্চারা বরং ভয় পেতে পারে।

এই বয়সী বাচ্চাদের অন্যতম ভরসা স্থান হচ্ছে বাবা, মা। তারা বাবা, মায়ের কথা বিশ্বাস করে। তাই বাবা, মায়ের ‍উচিত তাকে সবসময় সঠিক তথ্য দিয়ে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। বাবা, মা যদি এই সুযোগটা কাজে না লাগায় তাহলে বাচ্চারা মিডিয়া বা বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নিজেরা অন্য কিছু কল্পনা করে নেবে এবং সেখান থেকে ভ্রান্ত ধারণা জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

৫ বছর বয়সী সন্তান এবং ৮ বছর বয়সী সন্তানের জানার কৌতুহলের মাঝে বিস্তর ফারাক আছে। তাদের বয়স যত বাড়বে তাদেরকে তত বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে এবং একই তথ্য বারবার জানাতে হবে যেন তারা সেটাকে ভালভাবে বুঝে নিতে পারে এবং আত্মস্থ করতে পারে।

তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় বাবা, মায়ের সৎ থাকা উচিত। সন্তান প্রশ্ন করলে বাবা, মায়ের উচিত তাকে পাল্টা প্রশ্ন করা, “তুমি এ-ব্যাপারে কী ভাবো?” বা “তোমার কী মনে হয়?” এই প্রশ্ন করলে জানা যাবে সন্তান আসলে কতটুকু জানে, কী জানে এবং তাকে কতটুকু তথ্য দিতে হবে।

বাবা, মাকে খেয়াল রাখতে হবে, সন্তান যেন পর্যাপ্ত তথ্য পায়। অপ্রত্যুল তথ্যের কারণে তারা যেন কোনো ভুল উপসংহারে না পৌঁছায়। ধরুন, আপনার সন্তান প্রশ্ন করলো- “কীভাবে বাচ্চা তৈরি হয়?” আপনি জবাব দিলেন, “যখন নারী এবং পুরুষ একসাথে শোয় তখন বাচ্চা তৈরি হয়।” আপনার জবাব শুনে সন্তান ভেবে নিতে পারে নারী, পুরুষ পাশাপাশি শুলেই বুঝি বাচ্চা হয়! তাই আপনি সন্তানকে কতটুকু তথ্য দিচ্ছেন এবং সেই তথ্য জানার পর সে কী ভাবছে সে দিকে নজর রাখা জরুরি। সন্তানের যদি আরো প্রশ্ন থাকে সেগুলোরও যথাযথ জবাব দেওয়া আপনার দায়িত্ব।

[ আরও পড়ুনশিশুদের জন্য সেক্স এডুকেশন কেন জরুরি? কখন এবং কীভাবে তা শুরু করবেন? ]

৬ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুদেরকে যেসব বিষয় শেখানো প্রয়োজন

সীমা নির্ধারণ  

এই বয়সী বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে “না” বলতে শেখা এবং কোনো ব্যাপারে অস্বস্তিবোধ করলে সে-ব্যাপারে মন খুলে কথা বলতে পারা জরুরি। বাবা, মায়ের সাথে সন্তানের এধরনের আলাপের চর্চা থাকলে ভবিষ্যৎ জীবনে যখন সন্তানেরা যৌনতা সংক্রান্ত বিষয়ের সামনে পড়বে, তখন তারা সেটার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবে।

এই বয়সী বাচ্চাদের সাথে যৌন নির্যাতনের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরির জন্য বাবা বা মা হিসেবে আপনি তুলনামূলক বিস্তারিত আলাপ করতে পারবেন। আপনার বাচ্চা যদি দুর্ভাগ্যবশতঃ এধরনের পরিস্থিতিতে পড়ে বা তার কোনো বন্ধু যদি এধরনের পরিস্থিতির শিকার হয় তখন যেন সে নিজেকে বা তার সেই বন্ধুকে সাহায্য করতে পারে সেজন্য বাচ্চাকে এ-ব্যাপারে বিস্তারিত জ্ঞান দেওয়া প্রয়োজন।

কতটা বিস্তারিত আলাপ করা সম্ভব তা নির্ভর করছে আপনার সন্তানের ওপর। প্রথমে একদম সাধারণ বেসিক জিনিস নিয়ে শুরু করতে পারেন। যেমন : তাকে বলুন তার অনুমতি ছাড়া কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।

কয়েক দিন পর পর সন্তানের সাথে একই আলাপ আবার করতে হবে। বোঝার চেষ্টা করতে হবে বিষয়টা সে আত্মস্থ করতে পেরেছে কিনা, পুরোপুরি বুঝে নিতে পেরেছে কিনা। যদি এসব নিয়ে কথা বললে আপনার সন্তান আপসেট হয়ে পড়ে, তার মন খারাপ হয়ে যায় তাহলে আপাতত আলাপটা বন্ধ রাখতে হবে। তার বয়স আরেকটু বাড়লে তখন পুনরায় আলোচনা করার চেষ্টা করা যেতে পারে।

জেন্ডার/লিঙ্গ  

৫ থেকে ১০ বছর বয়সে বাচ্চারা তাদের লিঙ্গ ভিত্তিক পরিচয়ের ব্যাপারে সচেতন হতে শুরু করে। এই বয়সী বাচ্চারা দুনিয়ার বিভিন্ন নিয়ম-কানুন শেখার মাঝে থাকে। তবে এক্ষেত্রে তাদের মাঝে ভুল ধ্যান ধারণার জন্ম হতে পারে। সেই ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করে সে ভুল নিয়মকে সঠিক হিসেবে বিবেচনা করে বসতে পারে। তাই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। যেমন : তারা মিডিয়া এবং আশেপাশের পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ভাবতে পারে- গোলাপি রং মানেই মেয়েদের রং। তারা ভাবতে পারে এটাই বুঝি নিয়ম! কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তাই এখানে বাবা, মায়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের মনে জন্মানো এধরনের ভুল ধারণাকে ভেঙ্গে দেওয়া তাদের দায়িত্ব।

এই বয়সী বাচ্চারা বিভেদ করা, ক্যাটাগরিতে ভাগ করা ইত্যাদি বিষয়ে খুবই স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। তাই তাদের সাথে লিঙ্গ ভিত্তিক বিভেদ সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা খুবই জরুরি। “সবাই সমান” এধরনের ভাসমান বক্তব্য থেকে আসলে বাচ্চারা সেভাবে কিছু শিখতে পারে না। তারচেয়ে বরং বলতে হবে, “আগে কিছু কাজে বা চাকরিতে মেয়েদেরকে সুযোগ দেওয়া হতো না কিন্তু এখন মেয়েরা যেকোনো চাকরি বা কাজ করতে পারে। এটা উন্নতির লক্ষণ।” কিংবা এটা বলা যেতে পারে, “অনেকে বলে ছেলেদের কাঁদতে নেই। কিন্তু আমাদের পরিবারে আমরা সেধরনের কোনো নিয়ম রাখিনি। এখানে সবাই নিজেদের আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে। চাইলে কাঁদতেও পারবে। কোনো বাধা, নিষেধ নেই।” এভাবে কথার মাধ্যমে বাচ্চার কাছে পারিবারিক মূল্যবোধকে তুলে ধরতে হবে এবং তাদের কাছে পজেটিভ বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।

ছেলে, মেয়েদের সম্বোধন করার ক্ষেত্রে ভাষা ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন : “ওয়েলকাম বয়েজ অ্যান্ড গার্লস” না বলে বলতে হবে “ওয়েলকাম, কিডস!” বা “ওয়েলকাম ফ্রেন্ডস!” অর্থাৎ ছেলে, মেয়েকে আলাদাভাবে সম্বোধন না করে সবাইকে সামগ্রিকভাবে সম্বোধন করতে হবে। এভাবে সন্তানকে বোঝাতে হবে লিঙ্গ ভিত্তিক পরিচয়টা মূখ্য নয়।

সাইবার নিরাপত্তা

এই বয়সী বাচ্চাদের সাথে সাইবার সেফটি বা ইন্টারনেট সংক্রান্ত নিরাপত্তা নিয়ে আলোচান করা জরুরি। বাচ্চাদেরকে বোঝাতে হবে কীভাবে নিরাপদে ডিজিটাল জগতে বিচরণ করতে হয় যদিও আগামী কয়েক বছর আপনার সন্তান আপনার সরাসরি তত্ত্বাবধান ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে না।

অপরিচিত কারো সাথে অনলাইনে চ্যাটিং করা বা নিজের ছবি অনলাইনে শেয়ার করার ব্যাপারে আপনি সন্তানকে সরাসরি পরামর্শ প্রদান করবেন এবং নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দেবেন। এছাড়াও অনলাইনে এরকম অনেক কিছু আছে যা দেখে আমার সন্তান অস্বস্তিবোধ করতে পারে, সন্তানকে সেসবের ব্যাপারে সতর্ক করা এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কৌশল শিখিয়ে দেওয়া বাবা, মায়ের দায়িত্ব।

আপনাকে আগবাড়িয়ে সন্তানের কাছে পর্নোগ্রাফির ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। তবে সন্তান নিজের অজান্তে পর্নোগ্রাফির সামনে পড়ে যেতে পারে, এই ব্যাপারে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। এই বিষয়ে আপনার ধর্মীয় বা পারিবারিক মূল্যবোধ সম্পর্কে তাকে বুঝিয়ে বলুন। কখনোই এই বিষয়ে রাগ দেখাবেন না। এতে এসব বিষয়ে শিশুর উৎসাহ আরও বাড়বে এবং আপনার কাছ থেকে এসব বিষয় এড়িয়ে যাবে।

সেক্স

“সেক্স কী?” ৬ থেকে ৮ বছর বয়সী বাচ্চারা যেসব প্রশ্ন বেশি করে থাকে এই প্রশ্নটা তাদের মাঝে অন্যতম। টেলিভিশন বা তুলনামূলক বয়সে বড় কোনো বাচ্চার কাছ থেকে কিছু শুনেই মূলত তারা এধরনের প্রশ্ন করে থাকে।

প্রশ্নটা শুনে লজ্জা পেয়ে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে এই বয়সী বাচ্চা সেক্স বা যৌন-সঙ্গমের বিস্তারিত কার্যপদ্ধতি জানার জন্য উপযুক্ত নয়। তবে ৬ বছরের বাচ্চাকে এতটুকু বোঝানো যেতে পারে যে, সেক্স একধরনের ইমোশনাল বা আবেগীয় ব্যাপার।

বাচ্চাকে এভাবে বোঝানো যেতে পারে, “কখনো কখনো কেউ ছেলে না মেয়ে সেটা স্পষ্ট করতে ‘সেক্স’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়। যেমন : বিভিন্ন কাগজপত্রে, ফরমে লেখা থাকে- সেক্স বা লিঙ্গ : নারী / পুরুষ। তখন ফরমটি যে পূরণ করছে সে যদি নারী হয় তাহলে নারী শব্দটির ওপর টিক চিহ্ন দেয় আর যদি পুরুষ হয় তাহলে পুরুষ শব্দটির ওপর টিক চিহ্ন দেয়। আবার বড়রা নিজেদের মাঝে ভালবাসা প্রকাশ করার জন্য গোপনে একান্তভাবে একে অন্যকে ঘনিষ্ঠভাবে স্পর্শ করে থাকে; তখন সেটাকেও সেক্স বলা হয়।”

যদি আপনার সন্তান আরো বিস্তারিত জানতে চায় তাহলে তার বয়স উপযোগী করে সেক্স বিষয়ে ধারণা দিতে পারেন।

অনেক বাবা, মা বাচ্চাদের সামনে বিব্রতকর পরিস্থিতি পড়ার আশংকায় থাকেন। সেক্ষেত্রে প্রথম সমাধান : দরজা আটকে নিন। তবে কোনো কারণে যদি তা সম্ভব না হয় এবং আপনার ৬ থেকে ৮ বছর বয়সী সন্তান যদি অন্তরঙ্গ মুহূর্তে আপনাদের দেখে ফেলে সেক্ষেত্রে বিব্রত না হওয়াটা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার।  তারপরেও আপনাকে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। শান্তভাবে সন্তানকে বলুন, “বাবু, আমরা এখন ব্যক্তিগত সময় পার করছি। তুমি তোমার রুমে গিয়ে খেলা করো। আমি একটু পরেই আসছি তোমার কাছে।”

পরবর্তীতে পোশাক করে, নিজেকে পুরোপুরি সামলে নিয়ে আপনার উচিত সন্তানের কাছে যাওয়া এবং তার সাথে আলাপ করা। তাকে জিজ্ঞেস করুন, “তুমি কি মন খারাপ করেছো? তোমার কি কিছু দরকার? আমাকে বলতে পারো।” আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে, আপনার সন্তান যেন ভয় না পায় বা আপনাদেরকে ওই অবস্থায় দেখার জন্য সে যেন দুশ্চিন্তায় না ভোগে।

তার সাথে এমনভাবে কথা বলুন, তাকে এমনভাবে আশ্বস্ত করুন যেন সে বুঝতে পারে সে আপনাদেরকে ওই অবস্থায় দেখে কোনো অন্যায় করেনি। ভুলেও তাকে ধমকাতে যাবেন না। আপনার সন্তান ইতোমধ্যে বুঝতে পেরেছে তার ওভাবে রুমে ঢোকা উচিত হয়নি। তাই তাকে আর গালমন্দ করার কোনো মানে হয় না।  

বয়ঃসন্ধি

সন্তানের সাথে সেক্স সংক্রান্ত আলাপটা সহজে শুরু করার উপযুক্ত একটা টপিক হলো- বয়ঃসন্ধিকাল। সন্তানের বয়স যখন ৬ বছরের আশেপাশে তখন তার সাথে সহজেই শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। আপনি চাইলে সন্তানের বাচ্চাকালের ছবি নিয়ে তাকে দেখাতে পারেন। ছবি দেখিয়ে তাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন তখনকার সময়ে তার শরীর কেমন ছিল আর বর্তমানে তার শরীরে কী কী পরিবর্তন এসেছে।

বয়ঃসন্ধিকাল সংক্রান্ত বিস্তারিত আলাপ পরবর্তী সময়ের জন্য তুলে রাখুন। যখন আপনার সন্তান তার বন্ধুদের সাথে এই বিষয় নিয়ে আলাপ করার মতো বয়সে পৌঁছাবে বা তার বন্ধুদেরও বয়ঃসন্ধিকালের অভিজ্ঞতা নেওয়ার বয়স হবে তখন তার সাথে বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে আলাপ করবেন।

আপাতত সন্তানের সাথে এভাবে আলাপ করতে পারেন, “বয়ঃসন্ধিকাল হলো এমন একটা সময় যখন তোমার শরীর একজন বাচ্চার শরীর থেকে বড়দের শরীরে পরিবর্তিত হতে শুরু করে। বিভিন্ন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন বয়সে বয়ঃসন্ধিকালে পা রাখে। কারো ৮ বছর বয়সে বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয়, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ১৪, ১৫ বছর লেগে যায়। তবে অধিকাংশ মানুষ সাধারণত ১০-১৩ বছর বয়সে বয়ঃসন্ধিকালের জগতে যাত্রা শুরু করে। আমরা আগেভাগে বলতে পারি না ঠিক কোন বয়সে তোমার বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হবে তবে এতটুকু বলতে পারি- যখন তোমার শরীর উপযুক্ত সময়ে পৌঁছাবে তখনই তোমার বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হবে।”

এইটুকু উত্তর ৬ থেকে ৮ বছর বয়সী বাচ্চার জন্য যথেষ্ট হওয়ার কথা। এই বয়সী বাচ্চাদেরকে যদি পিউবিক হেয়ার বা পিরিয়ড সম্পর্কে জানানো হয় তারা ভড়কে যেতে পারে।

তবে ৮ বছর বয়সী বাচ্চার যদি বড় ভাই বা বোন থাকে তাহলে সে হয়তো ইতোমধ্যে এরচেয়ে বেশি তথ্য জেনে ফেলেছে।

 “বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের বুক বড় হতে শুরু করে এবং তাদের পিরিয়ড শুরু হয়। পিরিয়ড শুরু হলে বোঝা যায় মেয়েটি এখন থেকে গর্ভে সন্তান ধারণ করার জন্য শারীরিকভাবে উপযুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের কাঁধ চওড়া হতে থাকে, পেশী পুষ্ট হয়, চুল-দাড়ি বাড়ে, কণ্ঠস্বর গাঢ় হয় এবং তাদের শুক্রাশয় তথা টেস্টিস-এ শুক্রাণু বা স্পার্ম উৎপন্ন হতে শুরু করে; এভাবে ছেলেরাও বাচ্চার বাবা হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে। ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের শরীরে বেশি চুল গজাতে শুরু করে এবং তাদের গোপনাঙ্গেও চুলের আধিক্য দেখা দেয়।”

বিজ্ঞাপণ

এই কথাগুলো ছেলে, মেয়ে সবাইকে শোনান। ছেলেদেরকে একরম শেখাবেন আর মেয়েদেরকে অন্যভাবে শেখাবেন; তা হবে না। বাচ্চাদের শুধু নিজেদের শরীরের ব্যাপারে জানলেই চলবে না, অন্যের শরীর সম্পর্কেও জানতে হবে। এই বয়সী বাচ্চাদের সাথে বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে এরচেয়ে বেশি বিস্তারিত আলাপ করা না গেলেও ক্ষতি নেই। তবে এটি একটি চলমান বিষয় এবং বাচ্চার বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই বিষয়ক আরও বিস্তারিত জ্ঞান দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

মাস্টারবেশন

এই বয়সের বাচ্চারা সাধারণত মাস্টারবেশন করে না। তবে তারা হয়তো ইতোমধ্যে শব্দটা স্কুলে বা কোনো বন্ধুর কাছ থেকে কয়েকবার শুনেছে এবং এ-ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী। এদিকে মাস্টারবেশন এমন একটা বিষয় যা নিয়ে প্রাপ্তবয়স্করাও নিজেদের মাঝে কথা বলতে গলদঘর্ম হয়ে ওঠেন! সেখানে বাচ্চার সাথে মাস্টারবেশন নিয়ে কথা বলা রীতিমতো স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার মতো কঠিন একটা কাজ। মাস্টারবেশন নিয়ে এত লুকোচুরি, রাখ-ঢাক দেখে বাচ্চাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- মাস্টারবেশন কি লজ্জাজনক কোনো বিষয় কিংবা অস্বাভাবিক কোনো কাজ?

এই বিষয়টি নিয়ে বাচ্চার বয়স ১০ বছরের কাছাকাছি হলে বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে। তবে এসময় সে জানতে আগ্রহী হলে অল্প কথায় তাকে বুঝিয়ে দিন। মাস্টারবেশনের বিষয়ে আপনার ধর্মীয় এবং সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে এখন থেকেই তাকে ধারণা দিয়ে রাখুন।

প্রাইভেসি

এই বয়সে সন্তানের “ব্যক্তিগত সময়” সময় ব্যাপারটা বোঝা উচিত। হয়তো সে জানে মাঝে মাঝে সবারই “একান্ত ব্যক্তিগত” কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। তাই তাকে এটাও শেখানো দরকার যে দরজা ভেজানো থাকলে বা চাপানো থাকলে নক্ করে অনুমতি নিয়ে তারপর রুমে ঢুকতে হয়।

শুধু তাকে শেখালেই চলবে না, বাবা, মাকেও এই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। সন্তান যখন তার রুমে একই অবস্থায় থাকবে তখন বাবা, মায়েরও উচিত দরজায় টোকা দিয়ে তারপর সন্তানের রুমে প্রবেশ করা।

প্রাইভেসির ব্যাপারে সন্তানকে এটাও শেখানো উচিত তাদের শরীরের প্রাইভেট অংশ বা গোপনাঙ্গ শুধুমাত্র তার জন্য। সেটা গোপনীয়, সেখানে তার অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ হাত দিতে বা স্পর্শ করতে পারবে না। ক্ষেত্র বিশেষে শুধুমাত্র বাবা, মা এবং ডাক্তার স্পর্শ করতে পারবে।

এই বয়সী সন্তান খেলার ছলে নিজেই ডাক্তার সেজে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরীক্ষা করতে পারে, নিজের গোপনাঙ্গকে নেড়ে-চেড়ে দেখতে পারে। এতে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই বা সন্তানকে বকা, ঝকা করার কোনো দরকার নেই। নিজের শরীর নিয়ে বাচ্চার স্বাভাবিক কৌতূহল থাকবেই। এজন্যই তাকে গালমন্দ করা বা লজ্জা দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই।

কীভাবে কথা বলবেন

উত্তেজিত না হয়ে শান্তভাবে কথা বলুন

আপনাকে শান্ত থাকতে হবে। কোনোপ্রকার উত্তেজনা না দেখিয়ে সন্তানের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আপনি যদি এধরনের প্রশ্ন করার জন্য সন্তানকে বকা দেন বা ধমক দিয়ে বসেন তাহলে পরবর্তী সে আর আপনার কাছে এ-সংক্রান্ত প্রশ্ন নিয়ে আসবে না। তবে নিজের কৌতূহল মেটানোর জন্য অন্য কারো কাছে ঠিকই প্রশ্ন করবে, হয়তো সেখান থেকে ভুল তথ্য পাবে। যা কখনোই কাম্য নয়।

ধীরে ধীরে আপনি সন্তানের এধরনের প্রশ্নের ধাক্কা চমৎকারভাবে সামলে নিয়ে যতবার জবাব দেন, ততবার আপনার জড়তা কমতে থাকে, আপনার সন্তানের মাঝে প্রশ্ন করা সংক্রান্ত জড়তা বা ভয় থাকলে প্রতিবার উত্তর পাওয়ার মাধ্যমে সেই জড়তাও কমে আসে।

অভ্যাস না থাকায় অনেক বাবা, মা বাচ্চার সাথে এসব নিয়ে কথা বলতে খুবই বিব্রতবোধ করে থাকেন। আপনার কথা বলতে খুব বেশি অসুবিধা থাকলে দাম্পত্য সঙ্গীর সাথে কিংবা নিজে একা একা এসব নিয়ে কথা বলে রিহার্সেল বা চর্চা করে নিতে পারেন। তাহলে সন্তানের সাথে কথা বলতে সুবিধা হবে, জড়তা কম অনুভব করবেন।

আপনি এবং আপনার সন্তান যখন তুলনামূলক আয়েশী সময় কাটাচ্ছেন তখন আলাপ জমাতে পারেন। যেমন : বিছানা গোছাতে গোছাতে বা ধীরে ধীরে হাঁটার সময় কিংবা রুমে বসে অলস সময় কাটানোর মুহূর্তে। ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে সেখানে বসেও আলাপ করতে পারেন। আপনাদের চোখ থাকবে রাস্তার দিকে। চোখে চোখ না পড়ায় আপনারা কেউই অত বিব্রতবোধ করবেন না, কথা বলতে সুবিধা হবে।

হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের প্রফেসর জেরোম কেগান বলেন, “উদ্বিগ্ন বা আতঙ্কিত না হয়ে সন্তানের কাছে জটিল সব বিষয় ব্যাখ্যা করাটা বাবা, মায়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বাচ্চারা বাবা, মায়ের কথার ধরন কিংবা সুর থেকে বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করে, শব্দের দিকে তাদের নজর থাকে না।”

ভাল করে শুনুন  

সন্তানের প্রশ্নটা শোনামাত্রই উত্তর দিতে ঝাঁপিয়ে পড়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। সন্তানকে আরেকটি প্রশ্ন করে তার প্রশ্নটি স্পষ্টভাবে জেনে নিন। হয়তো আপনি যা ভাবছেন, আপনার সন্তান প্রশ্নটি সেই অর্থে করেইনি।

ধরুন, সে প্রশ্ন করলো, “আচ্ছা, আম্মু আমি কোত্থেকে এসেছি?” আপনি এই প্রশ্ন শুনেই তাকে গর্ভধারণ এবং বাচ্চা জন্মদান করার ব্যাপারে দীর্ঘ একটা ব্যাখ্যা দিতে শুরু করলেন। কিন্তু পরে আপনার সন্তান বলল, “না, না! আমার বন্ধু বললো সে নাকি রংপুর থেকে এসেছে, ওর বাড়ি রংপুর। তাই আমি জানতে চাইলাম- আমি কোত্থেকে এসেছি?”

অতএব, সন্তানের প্রশ্নটা আগে ভালভাবে বুঝে নিন তারপর জবাব দেওয়ার চেষ্টা করুন। ধরা যাক, আপনার সন্তান প্রশ্ন করলো, “বাচ্চা কীভাবে বড় হয়?” এবার আপনি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন, “বাচ্চার কোন বড় হওয়ার বিষয়টা জানতে চাচ্ছো? বাবা, মা কীভাবে তাকে বড় করে সেটা? নাকি বাচ্চা যখন তার মায়ের পেটে থাকে তখন সেভাবে কীভাবে ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে সেটা?” এভাবে প্রশ্ন করে সন্তানের প্রশ্নটা ভাল করে বুঝে তারপর উত্তর দিলে একদিকে যেমন বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানো যাবে, অন্যদিকে সময়ের অপচয় রোধ করা যাবে।

জটিলতা এড়িয়ে চলুন  

গর্ভধারণ এবং বাচ্চা জন্মাদান সংক্রান্ত প্রশ্ন করলে এই বয়সী সন্তানকে তুলনামূলক বিস্তারিত তথ্য সমৃদ্ধ উত্তর দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এখনো তাকে যৌন-সম্পর্ক কিংবা সেক্স বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য জানানোর সময় হয়নি।

তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, যৌন সংক্রান্ত আলোচনায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, প্রত্যঙ্গের নাম সঠিকভাবে বলতে হবে। কোনো সাংকেতিক বা বানানো নাম ব্যবহার করা যাবে না। এভাবে সঠিক শব্দ ব্যবহার করার ফলে সন্তান একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাবে, সেটা হলো- এসব জিনিস নিয়ে নিশ্চিন্তে কথা বলা যায়, এগুলো স্বাভাবিক বিষয়। এতে বিব্রত হওয়ার কিছু নেই।

উদাহরণ হিসেবে মনে করা যাক, সন্তান প্রশ্ন করলো, “বাচ্চা কীভাবে তৈরি হয়? কীভাবে মায়ের গর্ভে আসে?” সহজ উত্তর : “বাবার কাছে বীজ আছে। সেই বীজের নাম স্পার্ম। সেই বীজগুলো পেনিসের পেছনে থাকা শুক্রাশয় কিংবা শুক্রথলি নামের একটা চামড়ার থলিতে সংরক্ষণ করা থাকে এবং সেই থলিতে লাখ লাখ বীজ বা স্পার্ম উৎপন্ন হতে থাকে। সিমেন বা বীর্য নামের সাদা রঙের তরল পদার্থের সাথে সেই বীজগুলো মিশে যায়। 

অন্যদিকে মায়ের শরীরের ভেতরে থাকা ওভারি বা ডিম্বাশয়ে ডিম থাকে। প্রতি মাসে মায়ের ওভারিতে একটা ডিম তৈরি হয়। বাবা, মা বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করলে বাবার কাছ থেকে সিমেনের মাধ্যমে অসংখ্য স্পার্ম মায়ের ওভারিতে পৌঁছানো হয়। সেখান থেকে মাত্র একটা স্পার্ম মায়ের ওভারিতে থাকা ডিমে ঢুকতে পারে। তারপর সেখানে ধীরে ধীরে বাচ্চা তৈরি হতে শুরু করে।”

আপনার সন্তান হয়তো এই জবাব শুনে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নাও হতে পারে। তাতে কোনো সমস্যা নেই। আপনাকে এভাবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া চালিয়ে যেতে হবে। যতক্ষণ তার আগ্রহ থাকবে আপনি তার প্রশ্নের জবাব দেবেন। তবে তাকে মাত্রাতিরিক্ত তথ্য দিয়ে ফেলছেন কিনা খেয়াল রাখবেন।  

শিশুর আগ্রহকে দমিয়ে দেবেন না

বাচ্চার প্রশ্নটা যেমনই হোক না কেন, কখনো সেই প্রশ্নটাকে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না বা তাকে উল্টো প্রশ্ন করে বসবেন না, “এই ধারণা তুমি কোত্থেকে পেলে?” বা “এটা তোমার মাথায় এলো কীভাবে?”। আলাপটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। যদি করেন তাহলে শিশু বুঝে নেবে এসব নিয়ে আপনার সাথে কথা বলা যাবে না, এসব নিয়ে কথা বলা নিষেধ। নিজের মাথায় এসব চিন্তা আসার জন্য সে নিজেকে “খারাপ” ভাবতে শুরু করবে।

বাচ্চার কাছে নিজেকে পজেটিভ হিসেবে উপস্থাপন করুন। তাকে বোঝান, আপনাকে সে চাইলে যেকোনো ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারে। আপনি তার সাথে এসব নিয়ে কথা বলতে মোটেও বিরক্তবোধ করেন না।

শিশু কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তাকে প্রশ্ন করার জন্য প্রথমে বাহবা দিন। তাকে বলুন, “দারুণ একটা প্রশ্ন করেছো! সামনে আরো প্রশ্ন কোরো কিন্তু। আমি তোমাকে জবাব দেব।” যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা না থাকে তাহলে মনগড়া জবাব দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। বাচ্চার কাছে সৎ থাকুন। তাকে বলুন, “আমি আসলে এটার উত্তর জানি না। চলো আমরা দুজন মিলে উত্তরটা জানার চেষ্টা করি।”

বাচ্চারা কোথায় কখন কোন প্রশ্ন করে বসে তার কোনো ঠিক নেই। হয়তো রাস্তায় বা বাসে থাকা অবস্থায় সে সেক্স সম্পর্কিত কোনো বিব্রতকর প্রশ্ন করে বসলো! তখনও আপনার বিরক্ত হওয়া চলবে না বা তার প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়া চলবে না। বরং শান্তভাবে তাকে প্রশ্নের উত্তর দিন। আশেপাশে থাকা লোকজন শুনলে শুনুক। তাদের চেয়ে আপনার সন্তান নিশ্চয়ই আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? তাই সন্তানের দিকে মনোযোগ দিন। কে কী বলল বা ভাবল তাতে কিছু যায় আসে না।

এভাবে আপনি সন্তানের পাশে থাকলে ধীরে ধীরে আপনি তার খুবই বিশ্বস্ত একজন বন্ধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবেন। এই বিশ্বাসের জোরে সে আপনাকে তার ভবিষ্যৎ জীবনের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানাবে, আপনার কাছে সমাধান খুঁজতে আসবে, পরামর্শ চাইতে আসবে। এভাবে আপনি আপনার সন্তানের শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত এবং তার পরের জীবনেও একজন বিশ্বস্ত পরামর্শক হিসেবে জায়গা করে নিতে পারবেন।

প্রতিদিনের সুযোগকে কাজে লাগান

বাচ্চা প্রশ্ন করবে তারপর আপনি তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান দেবেন, যদি প্রশ্ন না করে তাহলে দেবেন না; তা তো হতে পারে না। প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনাকে সহজ ভাষায় বিশ্লেষণ করে আপনি তাকে বিভিন্ন তথ্য দিতে পারেন।

বাচ্চাদের জন্য লেখা বই বা তাদের জন্য নির্মিত সিনেমা দেখতে দেখতেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। বাচ্চাদের অনেক বইতে গল্পের ছলে কীভাবে বাচ্চা হয়, কীভাবে বাচ্চা মায়ের পেটে আসে, কীভাবে তারা ভূমিষ্ঠ হয় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকে। আপনি চাইলে বইয়ের সাহায্য নিয়ে নিজের বাচ্চাকে বিষয়গুলো সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিতে পারেন।

[ আরও পড়ুনঃ ২ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর সেক্স এডুকেশন কেমন হওয়া উচিত ]

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment