মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কর্মক্ষেত্রে ফেরা সহজ করবে যে কাজগুলো

Spread the love

সন্তানকে রেখে কর্মক্ষেত্রে যেতে মায়েদের মাঝে অনেক রকম উদ্বেগ, উৎকন্ঠা কাজ করে। একজন সদ্য মা হওয়া মায়ের পক্ষে সন্তান রেখে দূরে যাওয়া কতটা কষ্টকর তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এ সময় অনেক মা’ই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তার বহুদিনের লালিত স্বপ্ন কিংবা তার ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে চাকরি ছেড়ে দিতে চান।

কিন্তু এটা কি কোনো কল্যানকর সিদ্ধান্ত হতে পারে? মোটেও না। কারন সন্তানের যথাযথ পালনের জন্য মায়ের সান্নিধ্য যেমন প্রয়োজন, সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য একজন মায়ের স্বাবলম্বী হওয়াটাও ঠিক ততটাই প্রয়োজন। এছাড়াও ব্যক্তিগত সুখ আর মানসিক প্রশান্তির জন্য এবং নিজের পায়ে দাড়াতে একজন নারীর কর্মজীবী হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই যেকোনো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পুনরায় ভেবে দেখা উচিত নিজের এবং সন্তানের জন্য কিসে বেশি উপকার হবে।

বিজ্ঞাপণ

[ আরও পড়ুনঃ কর্মজীবী মায়েরা প্যারেন্টিং এর ক্ষেত্রে যেসব ভুল করে থাকেন ]

প্রতিটি সমস্যার ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু করণীয় থাকে। এক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয়। চলুন দেখে নেয়া যাক সন্তান রেখে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে নতুন মায়েদের করণীয় কি হতে পারে:

নিজেকে মানসিক ভাবে তৈরি করুন

সর্বপ্রথম আপনাকে মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে আপনি কর্মক্ষেত্রে ফিরছেন। এসময় আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে অনেক বেশি।কর্মক্ষেত্রে ফেরার অন্তত প্রথম দুই-তিন সপ্তাহ এই মানসিক চাপ মোকাবেলা করতেই হবে।

আপনাকে মেনে নিতে হবে আপনার জীবনে একটা পরিবর্তন এসেছে এবং সেই পরিবর্তনকে সাথে নিয়েই আপনাকে বাকিটা পথ পাড়ি দিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মায়েরা মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে জয়েন করার কিছুদিনের মধ্যেই চাকরি ছেড়ে দেন।

কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে এটা সাময়িক। কিছুদিন আপনার কষ্ট হবে মানে এই নয় আপনার কষ্ট গুলো ভবিষ্যতেও থাকবে। শুধু চিন্তা করুন আপনি পারবেন। এমনকি বিশেষজ্ঞদের মতে এই সময় গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অন্তত তিন মাস অপেক্ষা করা উচিত।

চাকরিতে ফেরা নিয়ে আপনার মাঝে যদি অপরাধ বোধ কাজ করে, তাহলে আপনি কর্মক্ষেত্রে ভাল করতে পারবেন না। মনে রাখবেন অপরাধ বোধ হোল আমাদের বিবেকের তাড়না যেটা আমাদের অন্যায় কাজ করতে বাঁধা দেয়। কিন্তু নিজের জন্য, সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য এবং পরিবারকে সহযোগিতার জন্য চাকরি করা মোটেও খারাপ কিছু নয়।

আপনার ফ্যামিলির প্রায়োরিটি ঠিক করুন। তাতে দৃঢ় থাকুন। বাকি কারো কথায় কান দেবেন না। ব্যাপারটা হয়তো অনেক কঠিন। কিন্তু পরিবারের জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করা আপনি অবশ্যই পারবেন।

ঘরের কাজ ভাগ করে নিন

স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিন আপনাদের কর্ম পরিধি সম্পর্কে। সন্তান লালন পালনের দায়িত্ব কেবল একা মায়ের নয়। 

বাবা মা দু’জনে মিলে সময়ের অদলবদল করে সন্তানের যত্ন নিলে এবং ঘরের কাজে একে অপরকে সাহায্য করলে মায়ের কর্মক্ষেত্রে ফেরার প্রতিবন্ধকতা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

বাচ্চা লালন পালনের ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের ঝামেলা এড়াতে স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিন কে কোন সময় বাচ্চার যত্ন নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাচ্চার খাওয়ার রুটিন, ডায়াপার পরিবর্তন, গোসল করানো, ঘুম পাড়ানোর মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো বাবা মা দুজনে মিলে শিফট অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিন। তাছাড়া রান্না-বান্না এবং গৃহস্থালির অন্যান্য কাজ গুলোর সময় সূচি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিন। এতে দুজনের কাজই সহজ হবে।

বাচ্চা কার কাছে থাকবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করুন

মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিন অফিসে থাকা কালীন সময় বাচ্চাকে কোথায় রেখে যাবেন। এ সিদ্ধান্তটি দুই এক মাস আগে থেকেই নিন। এতে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে আপনার বাচ্চা সেখানে নিরাপদ কিনা। 

এটা হতে পারে কোনো আত্মীয়ের কাছে রেখে যাওয়ার ক্ষেত্রে অথবা গৃহ পরিচারিকার কাছে অথবা কোনো ডে কেয়ার সেন্টারে রেখে যাওয়ার ক্ষেত্রে। 

ডে কেয়ার সেন্টারে বাচ্চাকে দেয়ার আগে ভালভাবে যাচাই বাছাই করুন সেখানে আপনার পছন্দ অনুযায়ী সব ধরনের সুবিধা আছে কিনা।

শেষ সময়ে ডে কেয়ার সেন্টার নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনার উপর বাড়তি চাপ পরতে পারে। তাই সময় নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। 

সেপারেশন অ্যাংযায়েটি কমিয়ে আনার দিকে নজর দিন

বাচ্চাকে রেখে কাজে যাওয়ার সময় অনেক মায়েরই উদ্বেগ উৎকন্ঠা কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাচ্চা হঠাৎ করে নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারছেনা। বাচ্চার আচরণ গত কিছু পরিবর্তন আসে যাকে সেপারেশন অ্যাংযায়েটি বলে । এতে অনেক মা’ই বিচলিত হয়ে পড়েন।

এ সমস্যা থেকে নিস্তারের জন্য বাচ্চাকে আগে থেকেই কিছু সময়ের জন্য তার সম্ভাব্য নতুন আশ্রয়ে থাকতে দিন।এতে বাচ্চা নতুন পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। যারা দেখাশোনা করবে তাদের জন্যেও বাচ্চার আচরণ আয়ত্ত করা সহজ হয়ে উঠবে।

বাচ্চাকে প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী খাওয়ানো, গোসল করানো, ঘুম পাড়ানোর মত বিষয় গুলো নির্ধারণ করুন। এতে সে তার রুটিন সম্পর্কে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।

কাজে ফেরার কিছুদিন আগে থেকেই সপ্তাহে ২-৩ দিন তাকে ডে কেয়ার সেন্টার অথবা নানি-দাদি কিংবা যার কাছে রেখে যেতে চান, তার সাথে কিছুটা সময় থাকতে দিন। এতে দুজনের মাঝেই একটা বন্ধন তৈরি হবে যা তাদের সামনের দিন গুলোতে একসাথে থাকতে সাহায্য করবে।নতুন মায়ের জন্যেও ধীরে ধীরে ব্যাপারটা সহজ হয়ে উঠবে। এটা তার আবেগের জায়গাটা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য হবে।

কর্মক্ষেত্রে ফেরার আগেই কাজের খোঁজখবর নিতে শুরু করুন

যেহেতু অনেকদিন আপনি কাজে ছিলেন না তাই এই সময়ের মধ্যে অফিসে অনেক পরিবর্তনই আসতে পারে। তাই কর্মক্ষেত্রে ফেরার আগে নিজেকে কাজের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করে নিন। সহকর্মী এবং অফিসের বসকে ফোন বা ইমেইল করে বিস্তারিত জেনে নিন। এতে কাজের প্রতি একাগ্রতা, ভালবাসা এবং সম্মানের বিষয়টি তাদের সামনে তুলে ধরা হবে।

কিছু বিষয়ে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন, যেমন:

  • আপনার অনুপস্থিতিতে কাজের শিডিউল কিংবা অন্য কোনো ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা।
  • পুনরায় ফিরে আসার পর আপনার বস আপনার কাছে কি পরিমান কাজ প্রত্যাশা করছে, সে ব্যাপারেও জানার চেষ্টা করুন। এতে কাজে ফেরার পর আপনি জরুরী কাজগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন এবং অপ্রয়োজনীয় কাজে আপনার সময় নষ্ট হবেনা।
  • আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে কাজের পরিধি কিছুটা হালকা করতে ইচ্ছুক কিনা সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করুন বা আপনি অর্ধেক বেলা বা বাসা থেকে অফিস করতে পারবেন কিনা তাও জেনে নিন। যদিও উত্তর “না” হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু যদি জানতে না চান সেক্ষেত্রে উত্তর টা “হ্যাঁ” হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য।

শুরুটা হোক ধীরেসুস্থে এবং সহজ ভাবে

প্রথম দিন থেকেই পুরো দমে অফিস শুরু না করে বিষয়টাকে একটু সহজ করার চেষ্টা করুন। প্রথম কিছুদিন অফিসের সাথে কথা বলে আধ বেলা অফিস করা যায় কিনা দেখুন। এক্ষেত্রে প্রথম দু এক সপ্তাহ অন্য সহকর্মীদের সাহায্য নিয়ে কিছু সময় পূর্বে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করুন। শুরুর দিকে বাড়তি চাপ পরিহার করুন। 

বিজ্ঞাপণ

যদি সম্ভব না হয় হয় তবে সপ্তাহের মাঝখানে বা সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন অফিস জয়েন করুন। এতে হঠাৎ করে পুরো সপ্তাহ বাচ্চা থেকে দূরে থাকতে হবেনা।

নতুন রুটিনের ট্রায়াল রান করে নিন

কর্মক্ষেত্রে ফেরার কিছুদিন আগে থেকে আপনার নূতন রুটিন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করুন। ধরুন আপনার অফিস যদি সকাল দশ টায় হয় তাহলে ঠিক কত সময় আগে উঠলে আপনি অফিসের জন্য প্রস্তুত হতে পারবেন, সে অনুযায়ী সময় সেট করে নিন এবং ঠিক সেই সময় ঘুম থেকে উঠে পড়ুন।

অফিস যাওয়ার আগে যেসব কাজ সারতে হবে সেগুলো সারার চেষ্টা করুন। সাথে বাচ্চাকে খাওয়ানো কিংবা ডে কেয়ারে রেখে যাওয়ার সময় কতটুকু সময় প্রয়োজন হতে পারে সে বিষয় গুলো মাথায় রাখুন।

আগে থেকেই ট্রায়াল দিয়ে নিলে কাজে ফেরার প্রথম দিনটি আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। প্রথম দিনটি যদি সহজ হয় তবে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং কাজে ফেরা নিয়ে আপনার স্ট্রেস অনেক কম থাকবে।

নিজেদের জন্য খাবার তেরির সময় নির্ধারণ করুন

দিনের কোন সময়টাতে আপনি খাবার প্রস্তুত করে রাখতে চান তা নির্ধারণ করে নিন।কর্মজীবী অনেকে মা’ই রাতের বেলা খাবার প্রস্তুত করে রাখেন, যেনো দিনের বেলা অতিরিক্ত স্ট্রেস না নিতে হয়।

আবার অনেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পুরো সপ্তাহের বাজার করে রাখেন। এতে করে নিজের উপর বাড়তি চাপ কম অনুভব হয়।এক্ষেত্রে একটা প্ল্যান চার্ট অনুসরণ করে আপনি সহজেই প্রতি দিনের ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে পারেন।

রাতেই সব কাজ গুছিয়ে রাখার অভ্যাস করুন

প্রতিদিন কি কি কাজ করবেন তা আগের দিন রাতেই পরিকল্পনা করে রাখুন।এতে আপনার কাজ সহজ হবে। সকালে সব কিছুর জন্য হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে হবেনা। বরং পূর্ব পরিকল্পনা আপনার দিন প্রশান্তির সাথে শুরু করতে সাহায্য করবে।

যেমন:

  • বাচ্চাকে ডে কেয়ারে বা দাদি নানীর কাছে রেখে যাওয়ার সময় তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগের রাতেই গুছিয়ে রাখুন।
  • অফিসে যাবার পোশাক নির্বাচন করে রাখুন।
  • কোনো কিছু কেনা কাটার প্রয়োজন থাকলে সেগুলোর লিস্ট নিজের ব্যাগে রাখুন।
  • অফিসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে অফিস ব্যাগেই রাখুন।
  • নিজের জন্য লাঞ্চ নিয়ে যাবার পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন।

জীবন কে নিয়ে সহজ করে তুলুন

এখন থেকেই জীবনটাকে সহজ করে তুলতে চেষ্টা করুন। যে সব বিষয় সমূহ আপনার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সেগুলো এড়িয়ে চলুন। যেমন ধরুন, বাচ্চা যখন ঘুমাচ্ছে তখন ফেইসবুক স্ক্রল করাটা নিশ্চয় খুব বেশি একটা দরকারি নয়। তাই এই অভ্যাসে লাগাম টানার চেষ্টা করুন।

জীবনটাকে সহজ করতে প্রযুক্তির সহায়তা নিন। এখন ঘরের বাজার থেকে শুরু করে ইউটিলিটি বিল, সবকিছুই অনলাইনে করা যায়। এগুলো আপনার সময় বাঁচাবে এবং কষ্ট অনেক কমিয়ে দেবে। তাই এগুলোতে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করুন।

মনে রাখতে হবে এমন সময় বেশিদিন থাকবে না, জীবনের ছন্দময় মূহুর্ত গুলো কিছু সময় পর আবারও ফিরে আসবে। ধৈর্য ধরতে শিখুন এবং নিজের প্রতি ভরসা রাখুন।সময়ের সঠিক ব্যবহার আপনার কঠিন সময়কেও সহজ করে দিবে। 

ব্রেস্টফীডিং এর বিষয়ে পরিকল্পনা সেরে নিন

যদি বাচ্চাকে শুধুমাত্র বুকের দুধই দিতে চান তবে কাজে জয়েন করার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই বুকের দুধ সংরক্ষণ করতে শুরু করুন। এই কাজে ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করতে পারেন। সেই সাথে তাকে বোতলে খাওয়ানোর অভ্যাস করানো শুরু করুন। বাচ্চাকে সকাল এবং সন্ধ্যায় স্তন্যপান করানোর সাথে সাথে বোতলে বুকের দুধ সংরক্ষণ করে রাখলে বাচ্চার খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যাবে।

জরুরী পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকুন/বিকল্প পরিকল্পনা ঠিক করে রাখুন

এমন সময় আসতেই পারে যেদিন আপনার এসব নিয়ম কানুন কোন কাজেই আসবেনা। তার জন্য আগে থেকেই তৈরি থাকুন। বাচ্চা যেকোন দিন অসুস্থ থাকতে পারে যখন তার আপনাকে প্রয়োজন হবে। এসব পরিস্থিতিতে পরিবারের কার কি করণীয় সে বিষয়ে আগেই ঠিক করে রাখুন। বাচ্চার অসুস্থতার কারণে ছুটি পাবেন কিনা বা বাসা থেকে কাজ করতে পারবেন কিনা তা জিজ্ঞেস করে রাখুন।

কোন কারণ অফিসে আপনার ব্যস্ততার কারণে তাকে ডে কেয়ার থেকে কি আনবে বা প্রয়োজনে ডে-কেয়ার কার সাথে যোগাযোগ করবে এসব প্ল্যান কাজে ফেরার আগেই ঠিক করে রাখা উচিত।

মনে রাখবেন,সবারই সীমাবদ্ধতা থাকে

মনে রাখতে হবে সবারই সীমাবদ্ধতা থাকে। পৃথিবীতে পারফেক্ট মা বলে কিছু নেই। কেউ একই সাথে প্রত্যেক বিষয়ে সমান পারদর্শী হতে পারেনা। তাই এমন মানসিকতা থাকতে হবে যে আপনারও ভুল হতে পারে। এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।

একবার ভুল হলে পরবর্তীতে তা শুধরে নিন। কিন্তু তাই বলে একেবারে ভেঙে পড়া চলবেনা। আমাকে দিয়ে হবে না আমি পারবো না, নিজের প্রতি এ ধরনের মানসিকতা পোষণ করবেন না। 

সাহায্য চান

বিজ্ঞাপণ

যে কোনো কাজে সাহায্যের প্রয়োজন হলে আপনার আসে পাশে থাকা ব্যাক্তিদের নিকট সাহায্য চাইতে সংকোচ বোধ করবেন না। এতে আপনারই ক্ষতি। কারন অনেকেই হয়তো আপনাকে সাহায্য করতে চাইছেন কিন্তু কিভাবে সাহায্য করবেন তা বুঝে উঠতে পারেনা। এক্ষেত্রে আপনি তাদের থেকে চেয়ে নিন।

আপনার সহকর্মীদের নিকট সাহায্য চান কিংবা অফিসের বসের নিকট। তাদের সামর্থ্য থাকলে নিশ্চই তারা আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসবে।এতে আপনার কাজ অনেক সহজ হবে।

নিজের জন্য কোয়ালিটি টাইম বের করুন

একজন কর্মজীবী মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিনের কাজের ধকল, সদ্য মা হওয়ার চাপ সব কিছুর ভিড়ে নিজের যত্নের কথা ভুলে গেলে চলবেনা। এ জন্য কিছুটা কোয়ালিটি টাইম পার করতে পারলে স্ট্রেস লেভেল অনেক হালকা হয়ে যায়।

তাই মাঝে মাঝে সাজুন। আয়নায় নিজেকে দেখুন।ছুটির দিনে পরিবারের সাথে বেড়াতে যান।সেটি যদি কোনো প্রকৃতির সানিধ্যে হয় তাহলে তো বেশ ভাল।স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে খেতে যান। এ এসময় বাচ্চাকে কিছু সময়ের জন্য কারো অধীনে রেখে যেতে পারলে ভালো। 

অথবা যেসব কাজে শখ আছে সেগুলোর একটি বেছে নিন, যেমন: মুভি দেখুন,গান শুনুন,গার্ডেনিং এর সখ থাকলে কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরে রাখুন, বেকিং করতে পারেন, অথবা যা কিছু আপনার ভাল লাগে। 

পরিশেষে বলবো নিজে ভাল থাকলে এবং ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোনো কঠিন সময় জয় করা যায়। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ কাজে ফেরা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ এবং এর কোন সহজ উপায় নেই। তবে নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন, আপনি ভালোভাবেই সামলে নিতে পারবেন।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment