সিজারিয়ানের পর নরমাল ডেলিভারি কি সম্ভব ?

Spread the love

যদি মায়ের একবার সিজারিয়ান হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা থাকে যদিও তা বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে।এধরনের ডেলিভারিকে বলা হয় Vaginal Birth after  cesarean (VBAC)।

প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন মায়েদের যারা VBAC করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে সফলভাবে সিজারিয়ানের পর নরমাল ডেলিভারি করা সম্ভব হয়েছে। যদিও আমাদের দেশে এমন উদাহরণ খুবই কম।

বিজ্ঞাপণ

সিজারিয়ানের পর নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা কতটুকু তা কিভাবে বোঝা যাবে?

সিজারিয়ানের পর নরমাল ডেলিভারি করা যাবে কিনা তা নির্দিষ্ট করে বলার কোন উপায় নেই। আগের গর্ভধারণে যে জটিলতার কারণে সিজারিয়ান করা হয়েছিল তা যদি এবারের গর্ভধারণে দেখা না যায় তাহলে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা যেতে পারে।

এমন যদি হয় মায়ের একবার নরমাল ডেলিভারি হয়েছিল কিন্ত পরের বার বাচ্চার অবস্থান ব্রীচ থাকার কারণে সিজারিয়ান করা হয়েছিল সেক্ষেত্রে এর পরের বার আপনার নরমাল ডেলিভারি সফল হওয়ার ভালো সম্ভাবনা থাকে।  কিন্তু সব কিছু ঠিক থাকার পরও সিজারিয়ান করা হলে এর পরেরবার নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

মা যদি সিজারিয়ানের পর নরমাল ডেলিভারির ইচ্ছা পোষণ করেন তবে তা অবশ্যই ডাক্তারকে জানাতে হবে। VBAC একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া এবং হাসপাতাল  কর্তৃপক্ষ  বা ডাক্তাররা অনেকক্ষেত্রেই এই ঝুঁকি নিতে চান না।

এছাড়া, VBAC এমন হসপিটালে করতে হবে যেখানে জরুরী পরিস্থতি মোকাবিলা করার সার্বক্ষণিক ব্যাবস্থা থাকবে। সব হসপিটালে এসব সুযোগ সুবিধা থাকেনা।

সিজারিয়ানের পর নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা কোন কোন ক্ষেত্রে বেশী থাকে

American College of Obstetricians and Gynecologists এর মতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ক্ষেত্রে VBAC সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে-

যদি আগের সিজারিয়ানে জরায়ুর নিচের দিকে আড়াআড়িভাবে (low-transverse uterine incision) কাটা হয় তবে VBAC তে ঝুঁকির সম্ভাবনা কম থাকে।

যদি জরায়ুর উপরের দিকে লম্বালম্বি কাটা হয় (classical incision) বা T shape কাটা থাকে তবে নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে জরায়ুর সেলাই খুলে যাওয়ার (Uterine rupture) সম্ভাবনা থাকে। 

পেটের কাটা এবং ভেতরে জরায়ুর কাটা একই ধরনের নাও হতে পারে

সিজারিয়ানে পেটের কাটার ধরণ

মায়ের পেলভিস বা শ্রোণীচক্র যদি বাচ্চা সহজে বের হয়ে আসার মতো যথেষ্ট বড় থাকে। যদিও পেলভিসের আকার নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়না তবু ডাক্তার হয়তো পেলভিস পরীক্ষা করে এ সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।  প্রসবের রাস্তা যথেষ্ট প্রশস্ত থাকাও নরমাল ডেলিভারির একটি পূর্বশর্ত।

যদি এমন কোন মেডিকেল কন্ডিশন না থাকে যেমন- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা জরায়ুর টিউমার, যার ফলে নরমাল ডেলিভারি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপণ

আগে যদি জরায়ুতে কোন বড়সড় ধরনের অস্ত্রোপচার করা না হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায় মায়ের এবং বাচ্চার স্বাস্থ্য যদি ভালো থাকে।

প্রসব যদি ঠিক সময়ে নিজে থেকেই শুরু হয়।

যদি পূর্ববর্তী সিজারিয়ান অপারেশনের কারণ হয়ে থাকে বাচ্চার উল্টা অবস্থান, জরায়ুর মুখে গর্ভফুলের অবস্থান (যাকে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলে) অথবা গর্ভস্থ বাচ্চার সমস্যা।

VBAC কখন ঝুঁকিপূর্ণ?

  • যে কারণে আগে সিজারিয়ান করা হয়েছিল তা যদি এবারের গর্ভধারণেও থাকে। যেমন- বাচ্চার কম হার্টবিট বা বাচ্চার অবস্থান ঠিক না থাকলে।
  • মায়ের অতিরিক্ত ওজন থাকলে।
  • পূর্বের এবং বর্তমান গর্ভধারণের মধ্যে যদি সময়ের ব্যাবধান কম হয়।( সাধারণত ১৯ মাস)
  • বয়স বেশী হলে (৩৫ বা তার বেশী)
  • গর্ভের শিশুর আকার বড় হলে (৪কেজি বা ৮.৮ পাউন্ড বা তার বেশী)

কখন সিজারিয়ানের পর নরমাল ডেলিভারির পরামর্শ দেয়া হয়না

  • পূর্বে একবার ক্ল্যাসিক্যাল সিজারিয়ান অপারেশন হয়ে থাকে (জরায়ুর উপরিভাগে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়)
  • পূর্বে জরায়ুর মাংসপেশী অস্ত্রোপচারের জন্য কাটা হয়
  • পূর্বে জরায়ু ফেটে গিয়ে থাকলে (পূর্ববর্তী সিজারিয়ান অপারেশনের দাগ বরাবর জরায়ু ছিঁড়ে যাওয়া )
  • পূর্বে তিন বা ততোধিকবার সিজারিয়ান অপারেশন হলে
  • দুই গর্ভধারণের মধ্যবর্তী অল্প সময় (১৮ মাসের কম)।

সিজারিয়ানের পর নরমাল ডেলিভারিতে কি কি ঝুঁকি থাকতে পারে?

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও VBAC তে ছোট্ট একটু আশঙ্কা থাকে আপনার সিজারিয়ানের সেলাই খুলে যাওয়ার (শতকরা ১ ভাগেরও কম) যার ফলে প্রচুর রক্তপাত হতে পারে এবং গর্ভের শিশুর অক্সিজেন সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এছারাও যদি কোন কারণে VBAC সফল না হয় সেক্ষেত্রে একটা দীর্ঘ সময় প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করার পার আপনার সিজারই করতে হবে। পরিকল্পিত সিজারিয়ানের চাইতে এ ধরনের অপরিকল্পিত সিজারিয়ানের ঝুঁকি বেশী থাকে।

দীর্ঘ সময় প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করার পর এ ধরনের অপরিকল্পিত সিজারিয়ানে কিছু কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, জরায়ুতে ইনফেকশন এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিস্টারেকটমি (জরায়ু কেটে ফেলা)  করারও প্রয়োজন পড়তে পারে।

কোন কারণে VBAC সফলভাবে শেষ না হলে তা শিশুর জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। এর ফলে বাচ্চার দীর্ঘস্থায়ী নিউরোলজিকাল সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি মৃত্যু ও হতে পারে। যদিও এর সম্ভাবনা খুবই কম।

সিজারিয়ানের পর নরমাল ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নিলে কোন বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখতে হবে

সবকিছু ঠিক থাকলে এই ডেলিভারির সুবিধা -অসুবিধা ডাক্তারের কাছ থেকে ভালো ভাবে জেনে নিতে হবে। ডেলিভারি এমন হাসপাতালে করার চেষ্টা করতে হবে, যেখানে ইমারজেন্সি সিজার করার দরকার হলে তা দ্রুত ব্যাবস্থা করা সম্ভব। বাচ্চা এবং মায়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ  এক্ষেত্রে খুবই জরুরি ।

উন্নত দেশে লেবারের সময় CTG (cardio-tocograph) মেশিনের মাধ্যমে বাচ্চাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়।  কিন্তু আমাদের দেশে এই ব্যাপারটা একটু কঠিন, কারণ দক্ষ লোকবলের অভাব  এবং মা ও বাচ্চার মনিটরিং এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা ।

সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment