গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া বা কিক প্রথম যেদিন গর্ভবতী মা টের পান, সেদিনের অনুভূতির কোনো তুলনাই হয় না। এই আনন্দময় মুহূর্তের জন্য মা অপেক্ষা করে থাকেন সবসময়। আমাদের গ্রুপের মায়েদের অনুরোধ করেছিলাম তাদের সেসব অভিজ্ঞতার কথা জানানোর।
আমাদের এই লেখায় আমরা মায়েদের সেই বহু প্রতীক্ষিত অনুভূতির কথায় তুলে ধরবো।
Zarine Yeasmin Tonu
আমার ৭ বছর এর রিলেশন তারপর বিয়ে। বর্তমান বিয়ের বয়স বেশি না মাত্র ৮ মাস।
বিয়ের কিছু দিন পরেই ডাক্তার এর কাছে যাই কারণ আমার থায়রোয়েড আছে সাথে অনিয়মিত পিরিয়ড। তাই আমাকে ডাক্তার পিল খেতে নিষেধ করলেন। বললেন, আপনারা এখন থেকেই বেবি নেওয়ার জন্য ট্রাই করেন। দেরি করলে নাও হতে পারে আবার হলেও অনেক বছর লেগে যেতে পারে। বাচ্চা দেওয়ার মালিক আল্লাহ তাই এখন থেকেই ট্রাই করেন আল্লাহর ইচ্ছাতেই আল্লাহ দেবেন।
ভেবেছিলাম ১ বছর তো লাগবেই আমার সমস্যা তো কম না। খুব দোয়া করতাম দুইজনই যেনো কোনো সমস্যা না হয় আর আমি যেন প্রেগন্যান্ট হই।
আমি খেয়াল করলাম এক মাস পার হয়ে গেছে আমার পিরিয়ড হচ্ছে না আমার অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ায় আমি এবারো ভাবি পিরিয়ড হচ্ছে না, তাহলে মেডিসিন খেতে হবে যেনো পিরিয়ড হয়ে যায়।
হটাৎ আমার খুব ঠান্ডা লাগে আমি খুব অসুস্থ হয়ে যায়, তাই বাবার বাড়ি চলে আসি। সাথে মাথা ঘুরতো আর বমি হতো ভেবে ছিলাম ঠান্ডার জন্য হয়তো ।
হটাৎ মনে হলো আমার মাথা ঘোরে বমি হয়, আচ্ছা আমি প্রেগন্যান্ট না তো ?
হাসবেন্ড কে জানালাম ও কিট এনে দিলো। সেদিন সারা রাত একটুও ঘুম হয়নি।
কিট দিয়ে টেস্ট করলাম পজিটিভ আসলো কিন্তু বিশ্বাসই হচ্ছিলো না আমি প্রেগন্যান্ট। তাই হাসবেন্ড আর আমার আম্মু কাউকে কিছু না বলে কিট ফেলে দেই আর বলি আমি ডাক্তার এর কাছে যাবো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
ডাক্তারের টেস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী আমি দেড় মাসের প্রেগন্যান্ট। বিয়ের ৫ মাসে আমি জানতে পারলাম আমি প্রেগন্যান্ট। আমার কেমন জানি মনে হচ্ছিলো এসব সপ্ন আমি যেনো শূন্যে ভাসছি।আমার তো সমস্যা আছে ডাক্তার বলেছে দেরী হবে। আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না আমি প্রেগন্যান্ট।
সবাই খুব সাবধান আমিই শুধু একটুও সাবধান না। আড়াই মাসে ultrasonography করতে বললো ডাক্তার। তখন থেকে বিশ্বাস হচ্ছিলো যে, আমার মধ্যে একটা ছোট্ট প্রান যা আমার অংশ আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছে। তখন থেকে খুব সাবধানে চলাচল করতাম।
এই দেড় মাস থেকে ৪ মাস পর্যন্ত আমি খুব অসুস্থ ছিলাম। প্রেগ্ন্যাসির ৩ মাসে আমি বুঝতে পারি আমার তল পেটের ডান পাশে তুপতুপ করে কিছু একটা কাপছে । তখন বুঝতাম না এটা বাচ্চার মুভমেন্ট। আম্মুকে জিজ্ঞাসা করলাম আম্মু বললো এটাই বাচ্চার মুভমেন্ট।
৪ মাসের প্রথম দিকে একটা স্ট্রং মুভমেন্ট বুঝতে পারি। কিন্তু তারপর থেকে আর এমন হতো না তখন খুব টেনশন হতো। ভয় পেতাম আর ভাবতাম কেনো আর এমন ফিল হচ্ছে না!!! আম্মু কে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করতাম,
“আম্মু বাচ্চা নড়াচড়া করলে কেমন ফিল হয়?” “কিভাবে বুঝবো এটাই বাচ্চার মুভমেন্ট?”
আম্মু অনেক ভাবে বলতো, মনে হবে কিছু একটা ছুয়ে চলে গেলো, পেটের মধ্যে কিছু একটা ঘুরছে,ধাক্কা দিচ্ছে এমন ফিল হবে। অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই এমন ফিল করতে পারতাম না।
৪ মাসের শুরুতে বাচ্চার প্রথম নড়াচড়া যেদিন বুঝতে পারলাম, আমার মনে আছে সেদিন ছিলো ২৬ শে মার্চ আমার হাসবেন্ড এর জন্মদিন। সেদিন রাতে আমার পেটের মধ্যে একরকম ধক ধক ফিল হলো। আমি কেনো জানি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম সারা রাত আমার বাচ্চার ধক ধক নড়াচড়াটা ফিল করতে থাকলাম।
কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না এটাই আমার বাচ্চার মুভমেন্ট। ধীরে ধীরে নড়াচড়া বারতে থাকে তখন ফিল করি এটাই হতে পারে আমার বাচ্চার স্ট্রং মুভমেন্ট। তখন আনন্দে চোখের কোনে পানি জমে গেলো।
মনে মনে আমার বাচ্চা কে বললাম,” বাবা কে জন্মদিন এর শুভেচ্ছা দিচ্ছো তুমি? “
এরপর থেকে এমন নড়াচড়া আর ফিল করতাম না। তখন খুব ভয় হতো চিন্তা হতো বাচ্চা ঠিক আছে কিনা এসব নিয়ে।
তারপর ৫ মাসের শুরুতে একদিন রাতে হটাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম ভাঙ্গার কারণ পেটের মধ্যে বড় বল জাতীয় কিছু খুব জোরে ধাক্কা দিলো। ঘুম ভেঙ্গে বোঝার চেষ্টা করলাম কি হলো৷ তারপর ফিল করি কিছু একটা মোচড় দিচ্ছে পেটের মধ্যে। বুঝতে বাকি রইলো না এটা আমার বাচ্চার মুভমেন্ট। সে আমাকে মাথা দিয়ে ধাক্কা দিয়েছে এখন মোচড় দিচ্ছে।
এর পর থেকে প্রতিদিন ওর নড়াচড়া ফিল করি। একদিন মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমি বাম কাত হয়ে শুয়ে আছি হঠাৎ বাম পাশের পেটে চোখা কিচ্ছু ধাক্কা দিচ্ছে। কি হচ্ছে বুঝতে পেরে আনন্দে আমার হাসবেন্ড কে ঘুম থেকে ডেকে তুলি আর বলি বাবু পায়ের গোড়ালি দিয়ে লাথি দিচ্ছে৷ আমার হাসবেন্ড হাত দিয়ে ফিল করার চেষ্টা করলো কিন্তু দুষ্টুটা চুপ হয়ে গেছে।এর পর ওর নড়াচড়ার সময় আমি লিখে রাখতে শুরু করি।
আমার হাসবেন্ড বাসায় থাক আর অফিসে, শুরু থেকেই আমার খুব টেক কেয়ার করে। আমার খোঁজ নেয়। ফোন দিয়ে বলে বাবু কি নড়াচড়া করছে? তুমি কি ঠিক আছো? খেয়েছো? ওর এই ছোট ছোট টেক কেয়ার আমাকে খুব আনন্দ দেয়।
এখন আমার ৬ মাস রানিং এখন আমি নিজেও হাত দিয়ে ফিল করতে পারি বাবুর নড়াচড়া। আমি হাত দিয়ে অনুভব করি আর ভাবি যখন বাবু নড়াচড়া করে তখন আমি আমার পেটের দিকে তাকিয়ে থাকলে কি বুঝতে পারবো ওর ধাক্কায় আমার পেট কেপে উঠছে বা ফুলে উঠছে!
তারপর যখনি ওর নড়াচড়া বেশি বুঝতে পারতাম তখনই আমি আমার পেটের দিকে তাকিয়ে থাকতাম কিন্তু কিছু বুঝতে পারতাম না৷ এরপর এইতো সেদিন রাতে বাবু খুব নড়াচড়া করছে আমি ফ্লাস এর আলো জ্বালিয়ে আমার পেটের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছি হঠাৎ পেটের ডান দিকে আমার নাভির কাছে মাংস পেশি লাফিয়ে উঠলো। এর পর যত বার নড়াচড়া করছিলো তত বার লাফিয়ে উঠা দেখছিলাম। মাঝে মাঝে তল পেটের দুই সাইডে এক সাথে ধাক্কা অনুভব হয়। আমার মনে হয় ও দুই পা দিয়ে এক সাথে লাথি দিচ্ছে।
মজার বেপার হলো বাবু যখন নড়াচড়া করে আমার বোন হাত দিয়ে অনুভব করতে পারে। কিন্তু আমার হাসবেন্ড হাত দিলে দুষ্টুটা চুপ হয়ে যায়। হাত সরালেই আবার নড়াচড়া শুরু করে । আমার হাসবেন্ড একদিন বাবুকে খুব রিকুয়েষ্ট করে নড়াচড়া করতে, সেদিন ও নড়াচড়া করে ওর বাবা কে বলেছে এই তো আমি বাবা । আমার হাসবেন্ড খুব ইমোশনাল হয়ে গেছিলো এই প্রথম বাবুকে ফিল করেছে সে।
ও আমাদে কথা সব শোনে সব বোঝে এখনি খুব দুষ্টুমি করে। আমার বাবু ছেলে হলে নাকি ওর বাবা ওকে ক্রিকেটার বানাবে কিন্তু ও তো ফুটবল খেলছে !
দিল্নসীনা কিফায়াত ওহী
এটা আমার প্রথম প্রেগন্যান্সি। আমার ৭ মাস রানিং। ৫ সপ্তাহ থেকে ডাঃ দেখানোর পর বিভিন্ন কিছু জানার আগ্রহ জাগে তাই ওয়েবে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়তে থাকি।
ওয়েব সাইটে Fairyland Parents থেকে আর্টিকেল গুলো খুব বিশ্বাসযোগ্য এবং প্রয়োজনীয় মনে হল এবং আমি নিয়মিত সব খুটিনাটি জ্ঞান আহরণ করতে শুরু করলাম।
দেখতে দেখতে ১৮ সপ্তাহে বাচ্চার নড়াচড়া খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করি এবং আমি সেটি বুঝতে পারি। গ্যাস সমস্যা হলে বা অনেক খিদে লাগলে পেটে যেমন করত ঠিক তেমনি করত। পানির বুদ বুদ টাইপ আওয়াজ মনে হত।
বাচ্চার নড়াচড়া নিয়ে আমার তেমন কোন মাথাব্যথা না থাকলেও আমার হাসবেন্ড জিজ্ঞেস করত আমি বুজতে পারি কিনা। হ্যাঁ বলার সাথে সাথে সে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে।
এখন আমার ২৯ সপ্তাহ প্রায় শেষ। বাচ্চা প্রায় নড়ে,আমি ঘুম থাকলে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এতে আমি বিরক্ত হইনা। বরং সুস্থ আছে সেটায় নিশ্চিত হই।
Lucky Bristy
আমি বিয়ে করব এই একটা চিন্তাই আমার জিবনে বদলে দিয়েছে, একটা ধারা থেকে আমাকে সরিয়ে দিয়েছে, প্রচুর সিনেমা প্রেমী মন সিনেমাট্রিক হতে চেয়েছি। সিনেমার সব ভাল দিক গুলোই প্রত্যাশা করেছি। আসলে তা যে রুপকথা, কল্পনা তা বিয়ের দিনই বুঝেছি।
নিজের বলতে কিছু কখনো ছিল না। বাস্তবতা সামনে রেখে স্বামীকে অনেক বুঝিয়ে আমার মার ইচ্ছার বাচ্চা নিলাম বিয়ের মাত্র ৫ মাস পর।
সব নতুন একসাথে, নাম মাত্র লেখাপড়া করেছি। সবচেয়ে যন্ত্রণার ছিল ৫মাস পর্যন্ত সব টেস্ট নেগেটিভ ছিল। তবে আমার ভিতর আমি ওকে টের পেতাম, চারপাশের নানা রকম রোগের কথা শুনে ভেবেছিলাম আমারও হয়ত বড় অসুখ।
কিন্তু না সব স্বাভাবিক ছিল। জীবন একেবারে বদলে গেল।
আমার মনে হয় আমার বাচ্চা তিন মাস সময় থেকে নড়াচড়া করত। আনেকটা মারবেল গড়ানোর মত।
আমি আমার গর্ভাবস্থা খুব উপভোগ করার চেষ্টা করেছি। ও কখনো পেটে কিক করে না পুরটা সময় এদিক ওদিক অনেক ঢেউ এর মত নড়াচড়া করেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল ও ওর বাবার ছোয়া বুঝতে পারত ও বাবা পেটে হাত রাখলে কখনো নড়ত না
আমার গর্ভাবস্থায় তেমন কোন সমস্যা হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। আমার মেয়ে টা ২বছর ১০মাস বয়সি। দোয়া করবেন সবাই ওর জন্য
Mst Alpona
আমার মেয়ে ফাতিহা তাসনীম। ওর বয়স ২মাস ৪ দিন।
আর সব মায়েদের মতো আমার প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড ভালো মন্দ দুভাবেই গেছে। আমার কোলে,আমার পরিবারে ছোট্ট একটা সদস্য আসতেছে এটা ভেবে যেমন মনটা সব সময় খুশিতে ভরে থাকতো তেমনি শারীরিক অবস্থাটাও ভীষণ খারাপ ছিলো।
শেষের এক মাস এলার্জির কারণে খুব কষ্ট পেয়েছি।প্রতি রাত উদ্দিগ্ন হয়ে জেগে এবং কান্নাকাটি করে পার করতে হয়েছিলো আমাকে কিন্তু এর মাঝেও আমার মেয়ে নড়াচড়া করে যখন আমাকে জানান দিতো মাঝে মাঝেই মা আমি ঠিক আছি তখন কিছুটা হলেও স্বত্বি পেতাম।
আমার অবস্থা খারাপ দেখে ডাক্তার আমাকে বলেছিলো তুমি কষ্ট পেলেও তোমার বাবু কিন্তু ভালো আছে, তবে তুমি চাইলে আগেই সিজার করতে পারো।
সে সময়টা আমার অনেক কষ্টের গেলেও আমি তৈরি ছিলাম নরমাল ডেলিভারি করাতে এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক প্রতিকুলতার ভিতর দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবেই আমি সরকারি উপজেলা হেলথ্ কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে নরমাল ডেলিভারি করাতে সক্ষম হয়েছিলাম।
সরকারি হাসপাতাল হলেও ওর খুব যত্ন সহকারে এবং অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে আমার ডেলিভারি করিয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেনো তাদের ভালো রাখে।
আমার ডেলিভারি সময় লেগেছিল পৌনে তিন ঘন্টার মতো। ডেলিভারির পর আবারও কিছু চিন্তায় পড়েছিলাম বাবুকে নিয়ে কিভাবে কি করবো এই ভেবে। Fairyland Parents এর সব সাহা্য্যকারী আর্টিকেল পড়ে আলহামদুলিল্লাহ মা মেয়ে দুজনেই বেশ ভালো আছি।
প্রেগন্যান্সি জার্নিটা কষ্টের গেলেও নতুন মা হবার জার্নি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই যাচ্ছে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
Trila Deb
আমি কর্মজীবী মা। প্রথম সন্তান যখন তার আগমন জানান দেয় তখন থেকেই তার নড়াচড়ার আশায় বসে থাকতাম।
প্রথম বলে অনেক কিছুই বুঝি নাই।ডাক্তার বলেছিলেন ৬ মাস থেকে শুনবেন, আমার কাছে মনে হয়েছে আমি তার আগে থেকেই ফিল করেছি।আনুমানিক ২০ সপ্তাহের আগে থেকেই । হালকা হালকা, তলপেটে। ঠিক যেন বুকে হাত রাখলে নিজের ধকধক শুনা যায় ঠিক তেমন।রাতে ঘুমাতে গেলে বেশি অনুভব হত।
এরপর থেকেই ধীরে ধীরে তার নড়াচড়া স্পষ্ট হত,তার একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে যাওয়াটা প্রকট হত খুব,ম্যাক্সি র উপর থেকে বুঝা যেত এমন কিন্তু ২য় সন্তানের ক্ষেত্রে এমন হয়নি। মেয়েটা এত কম নড়েছে যে আদৌ পেটের ভিতর কিছু আছে কিনা ভয় পেয়ে যেতাম। সে আবার নড়েছেও ৬ মাসের মাঝামাঝি তে।এত কম!
তবে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত থাকার কারণে অফিস এবং মাঠ দুই জায়গাতে কাজ করার কারণে অনেকসময় বাচ্চার মুভমেন্ট বুঝতেও পারিনি। কারণ মন তখন অন্যদিকে থাকে। তবু হঠাৎ যেদিন পেটটা প্রথম লাফিয়ে উঠলো(২ বাচ্চার ক্ষেত্রেই) পেটে হাত দিয়ে বসেছিলাম আর বলছিলাম “আবার দে,আরেকটা দে”,” দিতেই থাক”। এই অনুভূতির তো তুলনা হয়না,ব্যাখ্যাও না।
যেদিন কম নড়ত বা বুঝতাম না পেটে হাত বুলিয়ে ডাক দিতাম ” কই”? বৈজ্ঞানিক বা অবৈজ্ঞানিক যাইহোক সাথে সাথেই সাড়া দিত। দোয়া রাখবেন আপুরা দুই ছেলেমেয়ের জন্য। শুভকামনা সকল মায়ের জন্য
Soma Sarker
পাক্কা ১০ বছর প্রেমের পর বিয়ে।তো বিয়ের পর প্রথম ৬ মাস খুব ঘুরাঘুরি করলাম। এরপরই আমার মাথায় আসলো বেবি নিতে হবে। কেন যেন মনে হতো ট্রাই করলেই মনে হয় বেবি হবে না। যদি সময় লাগে।তো এখন থেকেই ট্রাই করি। এদিকে বয়সও তো কম হয়নি।
হাসবেন্ড এর সাথে আলোচনা করলাম।দুজনে রাজি। তো ঈশ্বরের কৃপায় পরের মাসেই মেন্স বন্ধ। তোর যেন সইছিল না। হাসবেন্ড অফিস থেকে আসার সময় কিট নিয়ে আসে। তো ঐ রাতে ঘুম আসছিল না। কখন সকাল হবে,কখন টেস্ট করবো। খুব বড় মনে হচ্ছিল রাত টা। ভোর পাচঁটায় টেস্ট করে দেখলাম রেজাল্ট পজেটিভ।
ঠিক তখন থেকেই যেন মনে হচ্ছিল আমার ভিতর একটি প্রান,যাকে আমি অনুভব করতে পারছি।সেই প্রথম দিন থেকেই এটা মনে হতো। আমার ভিতর একটা ছোট্ট প্রান ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে এটা যখন ভাবতাম,সারা শরীরে একটা নাম না জানা অানন্দ শিহরণ অনুভূত হতো। সে এক অন্যরকম ফিলিংস, যেটা মা ছাড়া কেউ হয়তো অনুভব করতে পারবে না।
পাচঁ মাস পর আমার শুধু অপেক্ষা কখন আমার সোনাটা তার অস্তিত্বের জানান দিবে। একটু জোরে যদি আমার হার্টবিট হতো,ভাবতাম এই বুঝি আমার বাচ্চার হৃদস্পন্দন।।পরক্ষনেই নিজে নিজে হাসতাম।
এর কিছুদিনের মধ্যে মনে হলো কি যেন একটা পেটের ভিতর নড়ে উঠলো। তাহলে এটাই কি আমাদের অংশ,আমাদের ভালবাসা।মনে হলো নড়ে উঠে আমাকে বললো, চিন্তা করো না মা,এই তো আমি তোমার পেটের মাঝে সাঁতার কাটছি, এখনও তো অনেক ছোট আমি তাই টের পাচ্ছো না। যখন আমার পায়ের লাথি খাবা তখন বুঝবা আমার গায়ে কত্তো জোর।
আমার কর্তা তো অফিস থেকে জলদি এসে পরলেন। এসে পেটে হাত দিয়ে বসে আছে,নড়াচড়া অনুভব করবে। আমি হেসে বললাম,এখন শুধু আমি একটু আকটু বুঝবো তুমি কিছুদিন পরে বুঝবা। সে বললো সৃষ্টিকর্তা পার্সেয়াল্টি করছে। এই স্বর্গীয় অনুভুতি অনুভবের সুযোগটা শুধু মায়েদের ই দিয়েছেন। বাবা দের না।
আমি আর আমার হাসবেন্ড বাবু পেটে আসার পর থেকেই তার সাথে কথা বলি। মনে হতো সে শুনছে আমাদের কথা।
আসলেই সে শুনতো আর বুঝতো। তা না হলে কিছুদিন পর ওর বাবা যখন আমার পেটে হাত দিয়ে বললো আমার সোনা টা কইরে? এইতো বাবা অফিস থেকে চলে আসছে। এটা বলতেই ওর বাবার হাতের নিচটা উচু হয়ে উঠলো আর আমিও টের পেলাম সোনা বাচ্চা টা মাথা বা পা দিয়ে তার বাবা কে জানান দিল যে সে সব শুনছে।
সে এক অন্য রকম অনুভূতি। আমরা দুজন জনের দিক তাকিয়ে আনন্দে চোখ ছলছল করে উঠলো। এরপর থেকে প্রতি নিয়ত তার নড়াচড়া টের পেতাম। গুনে রাখতাম কত বার নড়াচড়া করছে।কিছুদিনের মধ্যে বুঝতাম কখন সে বেশি নড়াচরা করে আর কখন ঘুমায়।
যেদিন একটু কম নড়তো সে দিন চিন্তা লাগতো।তখন বেশী করে জল খেয়ে বাম কাত হয়ে শুয়ে থাকতাম আর নড়াচরাটা কাউন্ট করতাম।
সে সব চেয়ে বেশি নড়াচড়া করতো বাইরে বের হলে।ঘুরাঘুরি পছন্দ হবেই বা না কেন!! বাবা মা দুজনই যে ঘোরাঘুরির ওস্তাদ।
আমরা দুজনেই মনে প্রানে চাইতাম যেন আমাদের কন্যা সন্তান হয়। কিছু দিনের মধ্যে জানলাম আমার কন্যা সন্তানই হবে।
শেষ চেক আপের দিন আল্ট্রার রিপোর্ট দেখে উদ্বিগ্ন চোখে ডাক্তারের প্রথম কথাই ছিল, আপনারর বাচ্চা নড়াচড়া করছে তো??বুঝলাম রিপোর্ট এ খারাপ কিছু আছে।
আমি ভয়ে ভয়ে পেটে হাত বুলালাম। মেয়েটা আমার দুশ্চিন্তা বুঝতে পারলো হয়তো।তাই পরক্ষনেই একটু নড়ে জানান দিলো, মা আমি ভাল আছি। সাথে সাথে ডাক্তার কে বললাম, হে নড়ছে তো। ডাক্তার বললো তাহলে আর দেরী না করে এক্ষুনি ভর্তি হোন সিজার করতে হবে।
সিজার রুমে মেয়েটা পেটে নড়ছিল। হয়তো বলছিল, তাড়াতাড়ি আমাকে বের করো তো, আমার আর এখানে ভাল লাগছে না, তোমার আর বাবার কোলে উঠব,আদর নিবো।নড়াচড়া করে সংকেত দিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না মা,কোলে গিয়ে ওয়া… ওয়া… ওয়া…. করে কথা বলবো।
Jannatul Ferdush
আমি যেহেতু প্রথম বারের মত মা হতে চলেছি তাই সব কিছু নিয়ে আগ্রহ ছিল খুব বেশি।প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস খুবি খারাপ ছিল কিন্তু ৪মাসের সময় থেকে দিন রাত পেটে হাত দিয়ে অপেক্ষা করতাম যে কখন দেখবো বা বুঝবো।
৫ মাসের সময় একদিন হটাৎ করেই মনে হলো কিছু একটা অনুভব হলো ।অনুভূতিটা ছিল এমন যে গভীর পানিতে কোন একটা মাছ মাত্র ডুব দিলো।তারপর থেকে এখন অব্দি খুব সুন্দর করেই নড়াচড়া বুঝা যাচ্ছে।
ডাক্তার বলেছিল নড়াচড়া হিসাব করে রাখতে ২ঘন্টায় ১০ বার নড়ে কিনা দেখতে আমার এত কষ্ট করে ২ঘন্টা দেখতে হয়না।আল্লাহর রহমতে মাঝে মাঝে মিনিটে ৬বার ও সে নড়ে।
আর সবচেয়ে মজার বেপার হচ্ছে কেউ যদি হাত দিয়ে নড়াচড়া অনুভব করতে চায় সে একটুও নড়বেনা।যেই হাত সরিয়ে ফেলবে তার নড়া শুরু হয়ে যাবে।আর আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম বাবুর ঘুমের সময় মিলাতে হয়ত প্রথম বেবি তাই সেটা মিলাতে পারিনি।
(চলবে)