প্রসব পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য হলে করণীয়

Spread the love

সন্তান জন্ম নেয়ার পরেও কেন আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যতে ভোগেন?

এমনটা হতে পারে যে গর্ভকালীন সময়ে আপনাকে এই ধরনের কোন সমস্যাতেই পড়তে হয়নি, কিন্তু এখন সন্তান জন্ম নেয়ার পরে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় আপনার শরীরের পরিপাকতন্ত্র আবার তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিন।

দীর্ঘ সময় খাওয়া দাওয়া ছাড়াই যদি আপনার প্রসবকালীন সময় পার হয় অথবা প্রসবকালীন সময়েই যদি আপনার মলত্যাগ হয় বা আপনি যদি রক্ত শুন্যতায় ভোগেন তাহলে আপনার পরিপাকতন্ত্র স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে দুই একদিন সময় লেগে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপণ

এর কারণ সম্পর্কে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলা যেতে পারে যে যেহেতু আপনার অন্ত্রে এখন তেমন কিছুই নেই তাই আপনি আপাতত এই সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া আপনার যদি সিজার অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম নেয় তাহলে পরিপাকতন্ত্র তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতায় ফিরে যেতে আরো তিন চারদিনের মত সময় লাগতে পারে।

তবে এই ধরনের সমস্যা যদি আরো দীর্ঘায়ত হয় তাহলে সেটা নিম্নোক্ত কারণে হতে পারেঃ

যদি প্রসবের সময় অথবা প্রসব পরবর্তী ব্যথা কমানোর জন্য প্রথাগত চেতনা নাশক ওষুধ গ্রহণ করা হয়ে থাকে যেমন মরফিন, ভিকোডিন অথবা Percocet তাহলেও এই ওষুধের কারণে আপনার পাকযন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়া কিছুদিনের জন্য ব্যহত হতে পারে।

এছাড়া অর্শরোগের কারণে যদি যৌনাঙ্গ এবং মলদ্বারের মাঝখানের অংশটুকুতে ক্ষত হয়ে থাকে অথবা প্রসবের সময় যদি প্রয়োজন অনুসারে এপিসিওটমি করতে হয় অথবা ছিঁড়ে যায় তাহলেও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগতে হতে পারে। এমতাবস্থায় আপনি যদি সেলাইয়ে টান লাগার অথবা ব্যথার ভয়ে মল আটকে রাখেন তাহলেও আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

মাতৃত্ব কালীন আয়রন সাপলিমেন্টের কারণেও এমন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

সাধারণত আপনি যদি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তাহলে সন্তান প্রসবের কিছুদিনের মধ্যেই এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আপনার মুক্তি মিলবে।

প্রসবের পর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে আপনার করনীয় কি?

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বেঁচে থাকা অথবা কিছুটা ভালো থাকার জন্য নিম্নে কিছু পরামর্শ প্রদান করা হলঃ

প্রথম দিকে কয়েকদিন যদিও কিছুটা অস্বস্তি হতে পারে তবুও বাথরুমের চাপ আসলে কখনো মল আটকে রাখবেন না। কেননা আপনি যদি অপেক্ষা করেন তাহলে আপনার মল শুকনো এবং শক্ত হয়ে যাবে, যার ফলে মলত্যাগে আপনার অসুবিধা হতে পারে।

প্রচুর পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে যেমন হোল গ্রেইন সিরিয়াল এবং পাউরুটি, বাদামী চাল এবং সিমের বিচি ও প্রচুর পরিমাণ ফলফলাদির সাথে শাক সবজীও আপনাকে খেতে হবে।

বিজ্ঞাপণ

সবসময় সাথে একটা পানির বোতল রাখুন এবং পরিমাণ মত পানি পান করুন। প্রতিদিন এক গ্লাস ফলের জুস, বিশেষ করে আলুবোখারার জুস এক্ষেত্রে আপনার জন্য বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া অনেকে ঘুম থেকে উঠে হালকা গরম তরল জাতীয় খাবার খেয়েও বেশ উপকার পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

নিয়মিত হাঁটুন। প্রথমদিকে হাঁটা আপনার জন্য একটু কষ্টসাধ্য হবে বটে বিশেষ করে আপনার যদি সিজার অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে অথবা এপিসিওটমি করে সন্তান প্রসব করানো হয়ে থাকে। তবে এরপরেও হালকা একটু হাঁটাচলা আপনার শরীরের পাকযন্ত্রের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

মল যাতে করে নরম হয় এজন্য আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে মল নরম করার অথবা laxative জাতীয় ওষুধের পরামর্শ নিয়ে নিতে পারেন, এই জাতীয় ওষুধ যে কোন ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। এই ধরনের মল নরম করার ওষুধ মলের মধ্যে তরল পানীয় ভালোভাবে মিশতে সাহায্য করে অপরদিকে laxative জাতীয় ওষুধ মলত্যাগ করাটা একটু সহজ করে দেয়।

যদি এপিসিওটমির কাটা বা স্বাভাবিকভাবে ছিঁড়ে যাওয়া খুব বেশি হয় তবে এসব ওষুধ গ্রহন করার প্রয়োজন পড়তে পারে। এছাড়া আপনি যদি অর্শ রোগে ভুগে থাকেন অথবা আপনাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ট্যাবলেট ও চেতনা-নাশক ওষুধ গ্রহণ করতে হয় তাহলে এই ধরনের মল নরম করার ওষুধ আপনার জন্য বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করবে।

যদি কিছুদিনের মধ্যেই আপনার অবস্থার কোন উন্নতি না হয়ে থাকে তাহলে অতি দ্রুত ডাক্তারের সাথে আলাপ করে নিন। আপনার ডাক্তার হয়ত আপনাকে অন্যান্য আরো অনেক পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন অথবা অন্য একটি পদ্ধতিতে (Manual disimpaction) আপনার মলত্যাগে সহযোগিতা করবেন।

এই ধরনের পদ্ধতিতে হাতে গ্লাভস পরে আঙুলে লুব্রিকেন্ট দিয়ে মলদ্বার দিয়ে আঙুল ভিতরে প্রবেশ করিয়ে শক্ত হয়ে থাকা মল ভেঙে নরম করে দেয়া হয়।

প্রসবের পর কোষ্ঠকাঠিন্য কি বড় ধরনের কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে?

কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণত কোন বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না তবে এটা অন্যান্য আরো কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবেও দেখা যেতে পারে। তাই মলত্যাগের সময় যদি শ্লেষ্মা বা রক্ত দেখে থাকেন অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে যদি আপনার তলপেটে প্রচুর পরিমাণ ব্যথা করে তাহলে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে সাথে কিছুদিন যদি ডায়রিয়াও হয় তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

এই ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে অর্শ রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন। এই ধরনের অর্শরোগ দ্রুত মিলিয়ে যেতে পারে অথবা প্রসব পরবর্তী দীর্ঘ সময় ধরেও থাকতে পারে। এই ধরনের অর্শ একবার কমে আসতে পারে আবার বেড়ে যেতে পারে এবং এভাবে প্রায় দীর্ঘ সময় অর্থাৎ প্রায় বছর খানেক ধরে আপনাকে ভোগাতে পারে। এই ধরনের অর্শরোগ যদিও আপনার জন্য বেশ অস্বস্তিকর তবে এর কারণে আরো বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা খুব বিরল।

তবে একটা ব্যাপার মনে রাখবেন, আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য খুব গুরুতর পর্যায়ের মনে না হলেও ডাক্তারের সাথে এই বিষয়ে পরামর্শ করে নিতে কখনো ভুলবেন না।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment