শিশুদের জন্য সেক্স এডুকেশন কেন জরুরি? কখন এবং কীভাবে তা শুরু করবেন?

Spread the love

বর্তমান সময়ের কিশোর-কিশোরীরা এমন একটা পৃথিবীতে বেড়ে উঠছে যেখানে বাস্তবিক জীবনের সুযোগ-সুবিধা এবং বিপজ্জনক দিকগুলি তাদের বাপ-দাদার সময় থেকে অনেকটাই ভিন্ন। তাদের জীবনে সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য যেমন সহায়তার দরকার হয় তেমনি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট বা যৌন হয়রানি বা যৌন নির্যাতনের মত ঘটনা প্রতিহতের জন্যও সহায়তার প্রয়োজন যা বর্তমানে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে।

সেক্স এডুকেশন তাদেরকে মানুষের জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কিত অনেকগুলো বিষয়ে ধারণা দেওয়ার একটি উপকারী মাধ্যম। পাশাপাশি এটি যৌন হয়রানি, লাঞ্ছনা এবং নির্যাতন প্রতিহত এবং হ্রাস করারও মূল চাবিকাঠি। শুধু প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে এবং বাস্তবতার নিরিখে বয়সের উপযোগী করে আকর্ষণীয় উপায়ে তাদেরকে এসব বিষয় বোঝাতে পারা।

বিজ্ঞাপণ

যৌন শিক্ষা বা সেক্স এডুকেশন আসলে কি?

যৌন শিক্ষা বা সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই ভুল ধারণা পোষণ করে। অনেকেই ভাবেন, ‘সেকচ্যুয়াল ইন্টারকোর্স’ সম্পর্কে ধারণা দেয়াই সেক্স এডুকেশনের মূল বিষয়।অনেকেই এর বিরোধিতা করেন এই ধারণা থেকে যে যৌনবিষয়ক এই শিক্ষা কিশোর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কৌতুহলী করে তুলবে এবং অবাধ মেলামেশায় তাদের মনে ইন্ধন যোগাবে৷ আর এতে করে আমাদের পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে৷ অনেকের মতে এগুলো আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বিরোধী৷

প্রকৃতপক্ষে, সেক্স এডুকেশনের পরিধি আরো অনেক বিস্তৃত এবং অনেকসময় আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি ঠিক কিভাবে বা কি বলে শুরু করবো। কোন বয়স থেকে সেক্স এডুক্যাশান দেয়া শুরু করতে হয় এবং তার বিষয় কি কি হবে আসুন জেনে নেই Fairyland Parents এর আর্টিকেল থেকে। লেখাটির ধারাবাহিকতা থাকবে যেহেতু এই টপিকের কন্টেন্ট শিশুর বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হয়।

উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞানুসারে, মানুষের যৌনতা (Sexuality), মানসিক সম্পর্ক ও দায়িত্ব, প্রজননতন্ত্র এবং প্রজনন, যৌন সম্মতির বয়স(Age of Consent), প্রজনন স্বাস্থ্য (Reproduction Health), প্রজননের অধিকার (Reproductive rights), নিরাপদ শারীরিক মিলন, জন্মনিয়ন্ত্রণ, গর্ভাবস্থা, গর্ভপাত, যৌন রোগ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়াই হোল সেক্স এডুকেশন বা যৌন শিক্ষা।

সেক্স এডুকেশনের উদ্দেশ্য হোল আমাদের সন্তানেরা যেন সংবেদনশীল, রেসপসনিভ এবং জেন্ডার ইকুয়ালিটি শেখে।

সেক্স এডুকেশনের মাধ্যমে নিজের শরীর সম্পর্কেও সচেতন করে দেয়া হয়৷ ফলে কোনটা ভালোবাসার স্পর্শ আর কোনটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে – সেটা তারা সহজেই বুঝতে পারে৷ যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের মতো কোন পরিস্থিতে করণীয় কী – সেটাও তাদের বোঝানো হয়৷ এছাড়াও তাদের বয়ঃসন্ধিকাল, ইভটিজিং না করা, পারস্পরিক সম্মানবোধ এগুলোও শেখানো হয়।

সেক্স এডুকেশনের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ, সম্পর্কের দায়িত্ব-কর্তব্য ও শৃঙ্খলাপাঠ, যৌন-নৈতিকতা, ধর্ম ও আইনের দৃষ্টিতে যৌন-আচরণের সীমা, অসংগত সম্পর্কের বিপদ ও বিপর্যয়, ফ্যান্টাসির বিপদ, অনুকরণের ও নির্বিচারে ভিন্ন সংস্কৃতি ও সংস্কারের প্রতি নির্ভরশীলতার বিপদ ইত্যাদি সম্পর্কেও ধারণা দেয়া হয়।

সেক্স এডুকেশন কেন জরুরি?

যদি শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের শরীর, সম্পর্ক, সেক্স এবং সেক্সুয়্যালিটি এসব বিষয়ে সঠিক ধারণা দেওয়া হয়, তাহলে তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে নিরাপদ বিকল্পটি বাছাই করতে শিখবে।

সেক্স সম্পর্কে কৌতুহল মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। সেক্স এডুকেশন শিশুদেরকে নিজেদের শরীর সম্পর্কে বুঝতে এবং স্পষ্ট ধারণা রাখতে সহায়তা করে যাতে তারা নিজেদের শরীর সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা রাখতে পারে।নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকার ফলে কোনটা ভালোবাসার স্পর্শ আর কোনটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে – সেটা তারা সহজেই বুঝতে পারে৷ এবং এসব মুহূর্তে কি করনীয় সে সম্পর্কে তাদের ধারনা থাকে।

ছোট বেলা থেকে বাড়ন্ত বয়স, এমনকি তারুণ্যেও আপনার সন্তান অজ্ঞতার কারণে ভুলে জড়াতে পারে। তাই সন্তানের নিরাপদ এবং সুস্থ জীবনের জন্য জীবনের প্রতিটি ধাপেই সেক্স এডুকেশনের ভূমিকা অপরিসীম। এতে না বুঝে কিংবা আবেগের বশবর্তী হয়ে বড় কোনো ভুলে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

যখন মা-বাবারা তাদের সন্তানের সাথে সেক্সের বিষয়ে আলোচনা করেন, তখন তাদের নিশ্চিত করা উচিত যে তাদের শিশু সঠিক তথ্যটাই জানছে। শিশুর সেক্স সম্পর্কে জানার প্রথম তথ্যসূত্র হওয়া উচিত তার মা-বাবা। শিশুর সঠিক তথ্য জানতে পারা তাকে বেড়ে উঠার পর বিপজ্জনক আচরণ করা থেকে প্রতিহত করে।

পারিবারিক মূল্যবোধ শেখানো যায়

সেক্স এডুকেশন আপনার শিশুর মধ্যে আপনাদের পারিবারিক মূল্যবোধগুলো প্রবেশ করানোরও সুযোগ করে দেয়। যেমন ধরুন, আপনি যদি এমন একটি পরিবার থেকে উঠে আসেন যারা বিশ্বাস করেন যে অবাধ মেলামেশা বিবাহের পরবর্তী সময়ের জন্য তুলে রাখা উচিত, তাহলে এটি আপনার শিশুর সাথে সেক্সুয়্যালিটি নিয়ে আলোচনায় তুলে ধরতে পারেন। যদি এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলা না হয়, তাহলে অনেক বেশি ঝুঁকি থেকে যায় যে, আপনার শিশু এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি ভালো মতো বুঝবেনা।

যদি মা-বাবা সন্তানদেরকে সেক্স সম্পর্কে শিক্ষা না দেয়, তাহলে তারা অন্য কোথাও থেকে এটা সম্পর্কে জানবে

আসলে মা-বাবারা যেমনটা ভাবেন তারও অনেক আগে থেকে শিশুরা সেক্স সম্পর্কিত তথ্য উদঘাটন করা শুরু করে। শিশুর সাথে সেক্স সম্পর্কে কথা না বলা মানে শিশু সেক্স সম্পর্কে ঠিক কী জানছে এবং কীভাবে জানছে, সে ব্যাপারে মা-বাবার নিয়ন্ত্রণ খুব কম থাকা।

শিশু স্কুল, বন্ধু-বান্ধব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে যা জানছে তা হয়তো অসম্পূর্ণ এবং অশুদ্ধ। পাশাপাশি, হতে পারে এটি হানিকারক এমনকি ক্ষতিকরও।

যদিও মিডিয়া সেক্স এবং সেক্সুয়্যালিটিতে পরিপূর্ণ, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি খুবই রগরগে এবং স্বল্প অনুভূতি দিয়ে ব্যক্ত করা হয়। সম্পর্ক এবং সেক্সুয়্যালিটির বাস্তবিক চিত্রাঙ্কন খুবই কম দেখা যায়। প্রায় সময়ই দেখা যায় সেক্স এবং সেক্সুয়্যালিটি সম্পর্কিত বিষয়গুলো এমনভাবে মিডিয়াতে তুলে ধরা হচ্ছে যা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাছাড়া, সেক্সুয়াল একটিভিটি বা যৌনতার ঝুঁকিপূর্ণ দিকগুলো প্রায় সময়ই মিডিয়াতে তুলে ধরা হয় না।

মনে রাখা দরকার আপনি এখন আপনার শিশুকে যা জানাতে সংকোচ বোধ করছেন একদিন তা সে অন্যের কাছ থেকে জানবে, তার মধ্যে থাকবে ভুল, ভ্রান্তি, অভিনয়, কুসংস্কার এবং মিথ্যাও, অনেক সময় জানতে জানতে অনেক বেশী দেরী হয়ে যাবে, তাই আপনার উচিত নিজ দায়িত্বে সঠিক কাজটি, সঠিক উপায়ে, সঠিক সময়ে নিঃসঙ্কোচে করা।

সেক্স এডুকেশন থাকা, না থাকার চেয়ে নিরাপদ

একটি সমীক্ষা হতে জানা যায়, শিশু যত বেশি মিডিয়ার দ্বারা কামুক বা যৌন-উত্তেজক ছবি এবং ঘটনা জানতে পারে, তত বেশি তার অল্প বয়সেই যৌন আচরণে লিপ্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্স এডুকেশনের সঠিক শিক্ষাটা পেলে শিশুর সেক্সুয়াল একটিভিটিতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়। বিশেষ করে যেসব শিশু নিজ ঘরেই সেক্স এডুকেশন পেয়ে থাকে, তাদের জন্য বিপজ্জনক সেক্সুয়াল একটিভিটি বা যৌন কার্যক্রমে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম থাকে।

শিশুর সঙ্গে সেক্স ও অন্যান্য বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারা তার অদূর ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। তার মানে আবার এই নয় যে শিশুর ভবিষ্যতের পথচলা খুব সহজ হবে বা কোনো গোলমেলে পরিস্থিতি ছাড়াই কেটে যাবে। কিশোর-কিশোরীরা একটু গোপনীয়তা রক্ষা করে চলতে চায়। তবে আগে থেকেই যদি তার সাথে সেক্স বিষয়ে আলোচনা করা হয় তাহলে শিশু কোনো কঠিন বা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পরলে তার মা-বাবাকে অবশ্যই অবহিত করবে।

সেক্স এডুকেশন না থাকার কুফলগুলো এখন আমরা আমাদের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে, বাড়ছে অবৈধ গর্ভপাত। সিফিলিস, গনোরিয়ার পাশাপাশি এইডসের মোট রোগের বিস্তার ঘটছে। চারপাশে যৌন অপরাধ বাড়ছে ক্রমাগত, লাফ দিয়ে দিয়ে বাড়ছে যৌন হয়রানি বা ‘সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট’-এর ঘটনা। এমন একটা বিপন্ন সময়ে ‘সেক্স এডুকেশন’-এর আসলেই কোনো বিকল্প নেই।

কত বছর বয়স থেকে শিশুর সেক্স এডুকেশন শুরু করা উচিত?

আপনি কি জানেন সেক্স এডুকেশন শিশুর দুই বছর বয়স থেকেই শুরু করা উচিত? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আপনি একা নন! যখন আমরা সেক্স এডুকেশন নিয়ে চিন্তা করি তখন আমরা আমাদেরকে বিদ্যালয়ে শেখানো বিষয়গুলি ভাবতে থাকি। কিন্তু সেটি হয়তো যথেষ্ট নয় (নির্ভর করে আপনি কোন বিদ্যালয়ে পড়েছেন তার উপর)।

এটা মনে রাখতে হবে যে সেক্স এডুকেশন কোনো এককালীন শিক্ষা কার্যক্রম নয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা আপনার শিশুর বেড়ে উঠার সাথে সাথে বাড়তে থাকবে।

শিশুরা খুব অল্প বয়স থেকেই তাদের আশপাশ থেকে সেক্স এবং অন্তরঙ্গতা বিষয়ে তথ্য পেয়ে যায়, যদিওবা কেউ তাদের সাথে এটি নিয়ে আলোচনা না করে। তাদের উদঘাটন করা বেশিরভাগ জিনিসই অশুদ্ধ এবং বিভ্রান্তিকর। তাই এটি জরুরি যে মা-বাবারা এবং শিশুর দেখাশোনাকারীরা যেন তাদের এ সম্পর্কিত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে তাদের এই সমস্ত ভুল বুঝাবুঝি দূর করে।

বড়রা প্রায়ই সেক্স এবং অন্তরঙ্গতা সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো জটিল এবং লজ্জাজনক মনে করেন – কিন্তু বড়রা যদি সৎ ভাবে এবং দ্বিধাহীনভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর দেন, তাহলে শিশুদের জন্য বিষয়টি পুরোপুরি বোধগম্য হবে – পাশাপাশি বেড়ে উঠার সাথে সাথে অনুরূপ বিষয়গুলি মা-বাবার কাছে তুলে ধরাও তাদের জন্য সহজ হয়ে আসবে৷

শিশুর অল্প বয়স থেকেই সেক্সুয়্যালিটি সম্পর্কিত কথোপকথন শুরু করা এবং এটি তারা বেড়ে উঠা পর্যন্ত চলমান রাখা, সর্বাপেক্ষা উত্তম সেক্স এডুকেশন স্ট্র্যাটেজি। এটি করতে পারলে মা-বাবাকে আর শিশু বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর পর বিশাল একটি লেকচার দিয়ে বিষয়গুলি বিস্তারিতভাবে বোঝাতে হবেনা। যখন শিশুর সাথে সেক্স নিয়ে আলোচনা করবেন, তখন বিষয়গুলো এমনভাবে বোঝানো প্রয়োজন যা তাদের বয়সের উপযোগী।

বিজ্ঞাপণ

মূলত মা-বাবারাই শিশু বড় হওয়ার ওঠার সময় তার সাথে থাকেন। এজন্য মা-বাবারাই শিশুকে সেক্স এডুকেশন দেওয়ার উপযুক্ত মানুষ। যত তাড়াতাড়ি নিজ ঘরেই সেক্স এডুকেশন দেওয়া হবে, তত দ্রুত শিশু সেক্সের ব্যাপারে সঠিক ধারণাটা পাবে। এবং মা-বাবাও সহজে পরিস্থিতিটা সামলে নিতে পারবেন।

শিশুর মাকেই সেক্স এডুকেশন দেওয়ার সবচেয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে এইক্ষেত্রে বাবার অংশগ্রহণটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। একজন ছেলেশিশু পরিবারের একজন আদর্শবান পুরুষকে দেখে সবকিছুই শিখতে পারে, যেখানে একজন মেয়েশিশুও জানতে পারে পরিবার ও সমাজের প্রতি একজন পুরুষের কী কী দায়িত্ব রয়েছে। সেই সাথে পরিবার ও সমাজ তাদের কাছে কি চায় সেটা সম্পর্কেও সে ধারণা পায়। শিশুরা এই শিক্ষা থেকে অনেক বেশি লাভবান হবে এবং বড় হওয়ার পর কীভাবে বাইরের মানুষের সাথে কথোপকথন করতে হবে তাও জানতে পারবে। তাই যদি সন্তানদের জন্য বয়সভিত্তিক যৌনতা শিক্ষা পরিবার থেকেই শুরু করা যায় তবে সেটা তাদের মঙ্গল বয়ে আনবে।

কীভাবে সেক্স, সেক্সুয়্যালিটি ও শরীর সম্পর্কে কথা বলবেন: সকল বয়সীদের জন্য দরকারী পরামর্শ

এই পরামর্শগুলো যেকোনো বয়সী শিশুদের সাথে সেক্স বিষয়ক কথাবার্তা বলা সহজ করে তুলতে সাহায্য করবে :

বিষয়গুলো আপনার শিশুর বয়সের উপযোগী এবং বোধগম্য করে ব্যাখ্যা করুন

বিষয়গুলো আপনার শিশুর কাছে এমনভাবে ব্যাখ্যা করুন যাতে তার বুঝতে সুবিধা হয়। যেমন ধরুন, তারা হয়তো অভ্যুলেশন বা ডিম্বস্ফোটনের বিস্তারিত শুনতে পছন্দ করবেনা, তবে তারা হয়তো জেনে আশ্চর্য হবে যে মহিলাদের ছোট ছোট ডিম্বাণু রয়েছে যা থেকে বাচ্চা জন্ম নেয়। যতটা সম্ভব বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে, বাস্তবিকতার আলোকে এবং স্পষ্ট ভাষায় ব্যাখা করা উত্তম৷ তাহলে আপনার শিশুর যদি আরো কিছু জানতে হয় তখন সে পুনরায় আপনার কাছে ফিরে আসতে পারবে।

শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের সঠিক নাম ব্যবহার করুন

এটি খুবই ভালো একটি উপায় যে যখন আপনারা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ নিয়ে কথা বলছেন তখন তাদের সঠিক নামটি ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ, শুক্রাশয়, যোনিদ্বার, যৌনাঙ্গ ইত্যাদি। অনেক অভিভাবকদের বাচ্চাদের প্রাইভেট পার্টস নানা রকম নামে শেখানোর প্রবণতা দেখা যায়।এটা ঠিক নয়। সঠিক নামটি ব্যবহার করা তাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছায় যে আমাদের শরীরের এই অংশগুলোও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং এগুলোতে কোনো সমস্যা নেয়। যদি আপনার শিশু শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের সঠিক নামটি জানে, তাহলে তারা তাদের শরীর নিয়ে আপনার সাথে এবং প্রয়োজনে অন্য কেউ যেমন ডাক্তারের সাথেও স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারবে।

প্রয়োজন হলে “আমি জানিনা” বলতে শিখুন

আপনার শিশুর কাছে আপনার কোনো বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনার শিশু কেবল এটুক বুঝতে পারলেই যথেষ্ট যে তারা তাদের প্রয়োজনীয় যেকোনো কিছুই আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারবে।

যদি আপনার তাদের প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকে, তাহলে সরাসরি বলুন যে আপনি খুশি হয়েছেন তারা প্রশ্ন করাতে, কিন্তু আপনার এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেয়। আরও বলুন যে আপনি চেষ্টা করবেন এটা জানার এবং তারপর তাদেরকে জানাবেন৷ এবং নিশ্চিত করবেন যে আপনি তাদেরকে তাদের প্রশ্নের উত্তর জানাতে পেরেছেন। অথবা তাদেরকেই এই ব্যাপারে আরো তথ্য সংগ্রহের পরামর্শ দিতে পারেন।

সকল অভিভাবকদের আলোচনাতে অন্তর্ভুক্ত করুন

যদি কোনো পরিবারে দুই বা ততোধিক অভিভাবক থাকেন তাহলে তাদের সবারই উচিত সেক্স সম্পর্কিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করা। যখন সব মা-বাবারাই এতে অন্তর্ভুক্ত হবেন, তখন শিশুরা বুঝবে যে সেক্স এবং সেক্সুয়্যালিটি নিয়ে কথা বলা স্বাভাবিক একটি ব্যাপার । এটি শিশুদেরকে তাদের শরীর সম্পর্কে কথা বলাতে আরো বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করায়৷ এছাড়াও তারা সেক্সুয়াল অনুভূতির দায়বদ্ধতা নিতে শিখে এবং বড় হওয়ার পর ঘনিষ্ঠ অন্তরঙ্গতার মতো বিষয়েও কথা বলতে পারে।

নিজে থেকে কথা বলুন

কিছু শিশু নিজ থেকে খুব বেশি প্রশ্ন করেনা, তাই এক্ষেত্রে আপনাকেই এই বিষয়ে  কথোপকথন শুরু করতে হতে পারে। কী বলবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে নিলে ভালো, তারপর দুজনেরই সুবিধা অনুযায়ী একটি ভালো সময় নির্ধারণ করুন বিষয়টি তোলার জন্য। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন পরিবারের সবাই মিলে টেলিভিশন দেখছেন। তখন টেলিভিশনে প্রেগন্যান্সি বিষয়ক কোনো আলোচনা হচ্ছে। তখন আপনি আপনার শিশুকে এভাবে বলতে পারেন,”তারা প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে কথা বলছে। তুমি কি এটা সম্পর্কে জানো?”

কিছু শিশু আবার চোখাচোখি ছাড়াই কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাই যখন আপনি ও আপনার শিশু গাড়িতে ভ্রমণ করছেন, তখন বিষয়টি তোলার একটি ভালো সময় হতে পারে।

নিজেকে প্রস্তুত করুন

আপনি হয়তো সেক্সুয়্যালিটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে লজ্জাজনক এবং অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে যেতে পারেন। বা শরীর নিয়ে বোঝাতে গিয়ে যখন পুরুষাঙ্গ বা যৌনাঙ্গ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করতে হয় তখনও৷ চিন্তার কিছু নেই, এমনটা হতেই পারে। সেক্ষেত্রে আপনার জন্য এটা ভালো হয় যে আপনি আগে থেকেই চিন্তা করে রাখুন কী ব্যাপারে কথা বলতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন আর সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করুন। যেমন, আপনি নিম্নাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন, কিন্তু স্তন নিয়ে না। সেক্ষেত্রে আপনাদের কথোপকথনটা “নিম্নাঙ্গ” শব্দটা দিয়েই শুরু করতে চেষ্টা করুন।

কীভাবে দুই বছর বয়সে শিশুর সাথে সেক্স বিষয়ক কথাবার্তা বলবেন?

বিজ্ঞাপণ

শিশুরা ভালো মতো কথা বলতে শেখার আগেই তাদের সাথে সেক্স বিষয়ক কথাবার্তা বলার প্রক্রিয়া চালু করে দেওয়া উচিত। মানে ধরুন গোসলের মতো প্রাত্যহিক কাজে, জননাঙ্গের সঠিক নাম ব্যবহার করা শুরু করতে পারেন। যদি শিশু জননাঙ্গ সম্পর্কে জানতে চায়, তাহলে মা-বাবাদের উচিত যা বলার সরাসরি বলা এবং ছোট নাম ব্যবহার না করা।

ক্লাপোও(Klapow) ওইসব অঙ্গের অ্যানাটমিক্যালি ব্যবহৃত নামটিই উচ্চারণের এবং এর কাজ কী তা সরাসরি জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন। শরীরের গোপন অঙ্গসমূহের জন্যও স্ট্যান্ডার্ড অ্যানাটমিক্যাল টারমিনোলজি ব্যবহার করা শিশুকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে, খোলামেলা আলোচনা করতে এবং নিজ শরীর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে সহায়তা করে। পাশাপাশি যৌন নির্যাতন বা শারীরিক কোনো সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হলে ভাষা ব্যবহারের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় না।

সন্তানকে তার জননাঙ্গের অ্যানাটমিক্যালি ব্যবহৃত নাম উচ্চারণ করতে শেখানো হয়তো কঠিন হবে, তবে মা-বাবাদের উচিত স্বাভাবিক আচরণ করা এবং এসব শব্দকেও “বাহু”, “গোড়ালি”, “কোমড়” ইত্যাদি শব্দের মতো করেই দেখা। এখন থেকেই স্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করে আপনি পরবর্তীতে লিঙ্গের পরিচয় ও কার্যক্রম বিষয়ক কথাবার্তা বলার একটা ভিত্তিও তৈরি করে ফেলতে পারবেন।

শিশু দুই বছরের কাছাকাছি হলে আপনি তাকে কখন এবং কোথায় নিজ শরীর নিয়ে অনুসন্ধান করা যায় সে ব্যাপারে শিক্ষা দেওয়া শুরু করতে পারেন। ছোট শিশুদের প্রায়ই জননাঙ্গ স্পর্শ করার প্রবণতা দেখা যায়, যা একেবারেই স্বাভাবিক। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তাদের বোঝাতে চেষ্টা করুন যে এই কাজটা আমাদের নিজ রুম বা বাথরুমে সবার আড়ালে করতে হয়।

আপনাকে পুরোপুরি অমায়িক হতে হবে। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না এমন কিছু করতে যাতে আপনার শিশু মনে করে যে সে লজ্জাজনক কিছু করছে। যদি তারা সবসময়ই নগ্ন থাকতে পছন্দ করে, তাহলে তাদেরকে নগ্নতার সীমানাটা চিনিয়ে দিন। তাদেরকে বুঝিয়ে দিন যে নগ্ন হওয়ারও একটা সময় এবং জায়গা আছে (এবং তা অবশ্যই খোলা পার্কে না!)।

বাস্তবিক অর্থে এসব আসলে সেক্স এডুকেশন নয়৷ এটি কেবলই আপনার শিশুকে তার শরীর সম্পর্কে এবং ছেলে ও মেয়ের সাধারণ পার্থক্যগুলো শিখিয়ে দেয়া। আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্য এটাই হওয়া উচিত যে আপনার শিশু যাতে তার নিজের পুরো শরীর নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যাতে সমান চোখে দেখে (কোনো লজ্জা না করে)।

সবার জন্য শুভকামনা।

[ আরও পড়ুনঃ ২ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর সেক্স এডুকেশন কেমন হওয়া উচিত ]


Spread the love

Related posts

Leave a Comment