গর্ভাবস্থার ৩৮ তম সপ্তাহে ভ্রূণের বিকাশের বিষয়গুলো খুব সূক্ষ হয়ে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য কোন বৃদ্ধি বোঝা না গেলেও প্রসবের আগের দুই তিন সপ্তাহে ভ্রূণের বিকাশ একটি মানবশিশুর সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই সময় তার শরীরে আরো ফ্যাট জমা হতে থাকে এবং মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র পরিপূর্ণতা পেতে থাকে। যাতে করে, জন্মের পর তার চারপাশের পরিবেশের সবকিছু সে অনুভব করতে পারে এবং তার শেখার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
৩৮ তম সপ্তাহকে গর্ভাবস্থার তৃতীয় ট্রাইমেস্টারের এগারো তম সপ্তাহ হিসেবে ধরা হয় এবং এর অবস্থান গর্ভাবস্থার নবম মাসে।
গর্ভধারণের ৩৮ তম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি
এতদিন আমরা ৩৭ সপ্তাহের পরে জন্ম নেয়া শিশুদের “ফুল টার্ম” হিসেবে জেনে আসলেও খুব সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা ৩৯ সপ্তাহের পর থেকে “ফুল টার্ম” বিবেচনা করছেন। প্রেগন্যান্সির ৩৭ সপ্তাহ থেকে শুরু করে ৩৮ সপ্তাহ ৬ দিন পর্যন্ত সময়কে “আর্লি টার্ম” ধরা হয়। যদিও ভ্রূণ এসময় জন্ম নেয়ার জন্য প্রায় প্রস্তুত বলা যায়, তারপরও তার শেষ মুহূর্তের কিছু বিকাশ এখনো চলমান।
যদি আগে থেকেই সিজারিয়ান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে তবে তা সাধারণত ৩৯ সপ্তাহের আগে করা হয়না যেন ভ্রূণের ফুসফুস সুগঠিত হয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট সময় পায়। তবে যদি কোন জটিলতা থাকে সে ক্ষেত্রে আগেই সিজারিয়ান করতে হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তার সাধারণত স্টেরয়েড দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন যাতে ডেলিভারির আগে তার ফুসফুস সুগঠিত হয়ে উঠতে পারে।
এই সময়ে ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশের সাথে সাথে এর আয়তনও বৃদ্ধি পায় বলে তার মাথার আকার তুলনামুলকভাবে বড় থাকে। শুধুমাত্র ৩৫ থেকে ৩৯ সপ্তাহের মধ্যে ভ্রূণের মস্তিষ্কের আকার প্রায় এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পায়। ৩৮ তম সপ্তাহে ভ্রূণের মাথা ও তার পেটের পরিধি প্রায় সমান থাকে।
ভ্রূণের ত্বকের উপর থাকা হালকা ধূসর লোম বা লানুগো এই সময় প্রায় বিলীন হয়ে যায় এবং ভারনিক্সের আবরণ ঝরতে শুরু করে। তবে কিছু শিশুর ক্ষেত্রে জন্মের পরও শরীরের বিভিন্ন অংশে এগুলো লেগে থাকতে পারে।
ভ্রূণের শরীরের সবগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এই সময় পুরোপুরি সুগঠিত থাকে। তবে ব্যাতিক্রম হলো তার মস্তিষ্ক এবং ফুসফুস। এই দুটো অঙ্গ এখন গর্ভের বাইরে কাজ করতে সক্ষম হলেও এদের বিকাশ শিশুর জন্মের পরও বেশ কিছুদিন চলমান থাকে।
ভ্রূণের নড়াচড়া এইসময় আগের চেয়ে কিছুটা মৃদু বা হালকা অনুভূত হতে পারে কারণ জরায়ুতে জায়গা এখন বেশ কমে আসার কথা। তাই তার নড়াচড়া বুঝতে আপনাকে হয়তো একটু বেশি মনোযোগ দিতে হবে। যদি মনে হয় তার নড়াচড়া স্বাভাবিক নেই বা কোন কারণে যদি নড়াচড়া নিয়ে আপনার সন্দেহ হয় তবে অবশ্যই স্ক্যান করিয়ে নিন।
এসময় ভ্রূণের উচ্চতা থাকে প্রায় ১৯.৬১ ইঞ্চি বা ৪৯.৮ সেমি এবং এর ওজন হয় আনুমানিক ৬.৮০ পাউন্ড বা ৩০৮৩ গ্রামের মত।
তবে মনে রাখতে হবে এই পরিমাপগুলো একটি গড় হিসেব। আপনার শিশুর ওজন ও উচ্চতা এর চাইতে কম বা বেশি হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে একটি সুস্থ নবজাতকের উচ্চতা ১৭.৬ ইঞ্চি (৪৫ সেমি) থেকে ২২ ইঞ্চি (৫৫ সেমি) পর্যন্ত হতে পারে। আবার জন্মের সময় ওজন হতে পারে ৫.৫ পাউন্ড (২৫০০ গ্রাম) থেকে ১০ পাউন্ড (৪৫০০ গ্রাম) পর্যন্ত।
৩৮ তম সপ্তাহের দিকে এসে ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। সেগুলো নিম্নরূপঃ
চোখ
ভ্রূণের চোখের রং জন্মের সময় গাঁঢ় নীল বা ধূসর বর্ণের থাকে। তবে এটি জন্মের পর পরিবর্তিত হয় যেতে পারে। শিশুর চোখের রং নির্ভর করে তার শরীর কি পরিমাণ মেলানিন উৎপন্ন করবে তার উপর। তার চোখ স্থায়ী বর্ণ ধারণ করতে জন্মের পর প্রায় ১ বছর সময় লাগে।
ফুসফুস
ভ্রূণের ফুসফুসের বিকাশ এখনো চলমান এবং তার শরীর আরো বেশি সারফ্যাক্ট্যান্ট নামক পদার্থ উৎপন্ন করতে থাকে। এটি ফুসফুসের বায়ুথলীগুলোকে পরস্পরের সাথে আটকে যাওয়া থেকে বাধা দেয় এবং জন্মের পর তার স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস চালু রাখতে সাহায্য করে।
ভোকাল কর্ড
ভ্রূণের ফুসফুস সুগঠিত হওয়ার সাথে সাথে এসময় তার ভোকাল কর্ডও বিকশিত হয়ে যায়। এর মানে হলো জন্মের পর সে কান্না এবং চিৎকারের মাধ্যমে আপনার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে প্রস্তুত।
৩৮ তম সপ্তাহে মায়ের শারীরিক পরিবর্তন
গর্ভাবস্থার শেষ সপ্তাহগুলোতে এসে আপনার এবং গর্ভস্থ শিশুর ওজন বাড়তে থাকে। এসময় সপ্তাহে আধা পাউন্ড করে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। যাদের গর্ভধারণের আগে বিএমআই স্বাভাবিক থাকে তাদের গর্ভাবস্থায় ওজন ২৫-৩৫ পাউন্ড পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে প্রত্যেক মা এবং তাদের শারীরিক গঠন ভিন্ন। তাই আপনার সঠিক ওজন বৃদ্ধির বিষয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেয়াটাই ভালো।
পা কিংবা পায়ের গোড়ালিতে কিছুটা পানি আসা এবং ফুলে যাওয়া গর্ভাবস্থার শেষ সময়গুলোতে স্বাভাবিক। কিন্তু যেসব বিষয় অনুভূত হলে দেরী না করে দ্রুত চিকিৎসককে জানাতে হবে সেগুলো হলোঃ শরীর অতিরিক্ত ফুলে গেলে অথবা হঠাৎ করে বেশি পানি চলে আসলে, হাতে অতিরিক্ত ফোলা অনুভূত হলে, মুখ এবং চোখের আশপাশ ফুলে গেছে বলে মনে হলে এবং হঠাৎ ওজন অনেক বেশি বেড়ে গেলে। এগুলো প্রি-এক্লাম্পশিয়ার লক্ষণ যা গর্ভাবস্থায় জটিলতা তৈরি করতে পারে।
এই সময় ডাক্তারের চেকআপে আপনার ফান্ডাল হাইটের পরিমাপ করা হতে পারে। এছাড়াও রক্তচাপ এবং ইউরিন টেস্টও করা হবে, প্রি-এক্লাম্পশিয়ার কোন লক্ষণ আছে কিনা তা দেখার জন্য। প্রি-এক্লামপশিয়া সাধারণত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ভাগে বা প্রসবের পর দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থার এই সময়গুলোতে এসে কখনো কখনো আগের চেয়ে কিছুটা সতেজ অনুভব করতে পারেন। প্রসবের আগেই ঘর গোছানো, রান্না করার এবং গৃহস্থালির কাজ শেষ করার ইচ্ছা হতে পারে। অনাগত সন্তানের জন্য আগেভাগেই সব প্রস্তুত করে রাখার প্রবল আকাঙ্ক্ষা আপনাকে ঘিরে ধরতে পারে। এগুলো খুবই স্বাভাবিক। একে “নেস্টিং ইন্সটিঙ্কট” বলে। যদিও এসময় এসব কাজ করতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু নিজের শরীরের কথা মাথায় রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
গর্ভাবস্থার এ সময় যেসব উপসর্গ বেশি দেখা দিতে পারে তা হলো-
নড়বড়ে অনুভব করা
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে ওজন বৃদ্ধি এবং পেটের আকার সামনের দিকে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মায়ের শরীরের ভরকেন্দ্র পরিবর্তিত হয়ে যায়। এছাড়াও প্রসবের প্রস্তুতি হিসেবে মায়ের শরীরের লিগামেন্ট এবং জয়েন্টগুলোও কিছুটা শিথিল হয়ে পড়ে। এসব পরিবর্তনের কারণে মায়ের শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা একটু কঠিন হয়ে উঠতে পারে, পা দুটো নড়বড়ে মনে হতে পারে।
তাই এই সময় শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করার দিকে একটু বেশি মনোযোগ দিতে হবে। আরামদায়ক এবং ফ্ল্যাট জুতো ব্যবহার করুন, সময় নিয়ে এবং ধীরে হাঁটাচলা করুন, হাত বাড়িয়ে কিছু নেয়ার সময় সাবধান থাকুন এবং সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করার সময় ধীরে ধীরে রেলিং ধরে ওঠানামা করুন। ঘরের বাইরে গেলে বা হাসপাতালের সিঁড়ির রেলিং ধরার পর এবং লিফট ব্যবহার করার পর সঙ্গে রাখা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত স্যানিটাইজ করে নিন।
পেলভিক প্রেশার বা তলপেটে চাপ
গর্ভাবস্থার এই সময় এসে জরায়ু এবং ভ্রূণের ওজন অনেকটুকু বেড়ে যাওয়ার কারণে মায়েরা তলপেটে এবং ভ্যাজাইনাল এরিয়ায় চাপ অনুভব করতে পারেন। সেই সাথে ভ্রূণ যদি নীচের দিকে নেমে আসে তবে পেলিভক এরিয়াতে চাপ আরো বেড়ে গিয়ে শরীরের নিম্নাংশ খুব ভারী অনুভূত হতে পারে। অনেক মায়েরা এই অনুভূতিকে তুলনা করেন এভাবে যে তিনি যেন দু পায়ের মাঝে ভারী বল নিয়ে হাঁটছেন।
তবে প্রেশার বা চাপ অনুভূত হওয়া আর ব্যথা এক জিনিস নয়। যখন এসব জায়গায় ব্যাথা অনুভূত হয় যাতে হাঁটতে, এমনকি কথা বলতে আপনার কষ্ট হয় তখন অবশ্যই ডাক্তারকে জানাতে হবে। সেই সাথে মাথা ব্যাথা, জ্বর, কাঁপুনি এবং রক্তক্ষরণের মত কোন লক্ষণ দেখলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৩৮ সপ্তাহে কি প্রসব হতে পারে?
ডিউ ডেইটের কয়েক সপ্তাহ আগে স্বাভাবিক প্রসব হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মায়ের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে ২৪ থেকে ২৯ ভাগ ক্ষেত্রে ৩৭ বা ৩৮ সপ্তাহেই সন্তান প্রসব হতে পারে।
কিন্তু মনে রাখতে হবে ৩৮ সপ্তাহে গর্ভের ভ্রূণকে “আর্লি টার্ম” বিবেচনা করা হয়, অর্থাৎ সে এখন পরিপূর্ণ নয়। তাই কৃত্রিম উপায়ে প্রসব ত্বরান্বিত করার বা ইন্ডাকশনের এখনো সময় আসেনি। তবে যদি কোন মেডিকেল কন্ডিশন যেমন প্রি-এক্লাম্পশিয়া, ডায়াবেটিস, কোন ধরণের ইনফেকশন বা প্লাসেন্টার কোন সমস্যা ইত্যাদি থাকে সেক্ষেত্রে হয়তো ইন্ডাকশনের প্রয়োজন পড়তে পারে। এই বিষয়ে আপনার ডাক্তারই সিদ্ধান্ত নেবেন।
৩৮ সপ্তাহে প্রসবের যেসব লক্ষণ অনুভব করতে পারেন
আসল প্রসব বেদনা এবং ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশনের মধ্যে পার্থক্য করা আসলেই একটু কষ্টের। তবে কিছু কিছু লক্ষণ দেখে হয়তো আপনি দুটোর মধ্যে পার্থক্যটা আন্দাজ করতে পারবেন। প্রসব শুরু হওয়ার আগে আপনি নীচের লক্ষণ গুলো দেখতে পারেন-
- কন্ট্রাকশন নিয়মিত ও তীব্র হবে এবং শুয়ে পড়লে বা অবস্থান পরিবর্তন করলেও এর তীব্রতা কমবে না।
- কন্ট্রাকশন তীব্রতর হতে থাকবে এবং এদের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান বা ইন্টারভ্যাল কমতে থাকবে। অর্থাৎ আরও ঘন ঘন অনুভূত হতে থাকবে।
- পানি ভেঙ্গে যাবে।
- মিউকাস প্লাগ নিঃসরণ হয়ে রক্ত মিশ্রিত ডিসচার্জ হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে প্রসবের কয়েক সপ্তাহ আগেও মিউকাস প্লাস নিঃসরণ হয়ে যেতে পারে।
- ডায়রিয়া হতে পারে।
- ভ্রূণ পেটের খুব নীচের দিকে পেলভিসে নেমে আসবে।
বিষয়গুলো নিয়ে আপনি খুব দ্বিধায় ভুগতে পারেন। তাই সবচাইতে ভালো উপায় হলো এসব লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা। এমনও হতে পারে প্রসবের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়ার পরও আপনাকে ফিরে আসতে হতে পারে। কিন্তু এটা খুবই স্বাভাবিক। এতে অস্বস্তির কোন কারণ নেই।
গর্ভধারণের এ সপ্তাহে করণীয়
হাঁটাহাঁটি করলে আমাদের হাঁটু এবং পায়ের গোড়ালিতে খুব বেশি একটা চাপ পড়ে না। এই কারণে হাঁটাকেই গর্ভাবস্থায় সবচাইতে ভালো ব্যায়াম বলা হয়। তাই এই সময়ে নিয়মিত হাঁটা চলা করার চেষ্টা করুন।
বিশেষ কোন জটিল প্রেগন্যান্সিতে ডাক্তারের নিষেধ না থাকলে, গর্ভাবস্থার শেষের দিকে হাঁটার আরেকটি বেশ উপকারী দিক আছে। এই সময় পেটের আকার বেড়ে যাওয়ার কারণে মায়েদের অনেকটা পেঙ্গুইনের মত হাঁটতে হয়। অর্থাৎ হাঁটার সময় পায়ের পাতা সোজা রাখার পরিবর্তে দুপাশে ফিরিয়ে রাখতে হয়। এভাবে হাঁটার কারণে মায়ের কোমর যে অবস্থানে থাকে তাতে ভ্রূণের মাথা মায়ের পেলভিসে ভালোভাবে সেট হওয়ার সুযোগ পায়।
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে যদি সবকিছু স্বাভাবিক থাকে তবে এই সপ্তাহের চেকআপটি হতে পারে আপনার গর্ভকালীন সময়ের শেষ চেকআপ। তাই প্রসব সম্পর্কে আপনার যাবতীয় প্রশ্ন তৈরি করে রাখুন যাতে ডাক্তারের কাছ থেকে সে সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন, যেমন প্রসবের লক্ষণগুলো কেমন হতে পারে, কখন ডাক্তারকে জানাতে হবে, প্রসবের সময় ব্যথা নিরাময়ের কি কি উপায় আছে ইত্যাদি।
গর্ভধারণ পরবর্তী সময়গুলো সম্পর্কে এখন থেকেই জানতে শুরু করুন। প্রসবের পর কি কি হতে পারে সে সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা আপনার জন্য সহজ হবে।
এই সময় একটু নিজের দিকে এবং আপনার সঙ্গীর দিকে মনোযোগ দিন। দুজনে মিলে কিছুটা সময় রিলাক্স করার চেষ্টা করুন এবং দুজনেই উপভোগ করেন এমন কিছু সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনাদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হবে এবং সন্তান লালন পালনের কঠিন সময়টা দুজনে মিলে সামলে নেয়ার মানসিকতা তৈরি হবে।
নিজের শরীরকে বোঝার চেষ্টা করুন এবং গর্ভাবস্থায় কিভাবে শরীরকে শিথিল বা রিলাক্স করা যায় তা শিখে নিন। এর ফলে যখন আপনার প্রসব-বেদনা উঠবে তখন আপনি এ পদ্ধতিগুলো ব্যাবহার করতে পারবেন। এগুলো আপনার দুশ্চিন্তা দূর করতে, জরায়ুকে আরো ভালোভাবে কাজ করতে এবং আপনাকে শক্তি সংরক্ষন করে রাখতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন কাজে প্রায়োরিটি ঠিক করতে শেখা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কাজ কিংবা কথা যেগুলো আপনার মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়, তা সাময়িক ভাবে এড়িয়ে চলুন।
এই সময় কোন কারণে ডাক্তার সিজারিয়ানের পরামর্শ দিলে অনেক মায়েরাই তা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। এটি রিস্ক নেয়ার সময় নয়। যদি ডাক্তারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন সন্দেহ থাকে তবে অন্য আরেকজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কিন্তু কোনভাবেই নিজে বা আশেপাশের অন্য কারো মন্তব্যে প্রভাবিত হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। এতে অনাগত সন্তানের পাশাপাশি নিজেরও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
কখন অবশ্যই ডাক্তারকে জানাতে হবে
গর্ভাবস্থার শেষ সময়গুলোতে এসে অনেকধরণের অস্বস্তিকর অনুভূতির মুখোমুখি হতে হয় যেগুলো খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এসময় একটু সাবধান থাকা জরুরী। কিছু উপসর্গ আছে যেগুলো দেখলে দ্রুত ডাক্তারকে জানাতে হবে।
- অ্যাম্নিটিক স্যাক ছিঁড়ে যাওয়া বা পানিভাঙা
- মাথা ঘোরা, তীব্র মাথা ব্যথা, ঝাপসা দেখা
- রক্তক্ষরণ
- জ্বর
- প্রস্রাব করতে সমস্যা হওয়া বা জ্বালা করা
- বমি অথবা পেটে তীব্র ব্যথা হওয়া
- পা এবং মুখ হঠাৎ করে ফুলে যাওয়া
- ভ্রূণের নড়াচড়া কমে যাওয়া বা নড়ছে না বলে মনে হলে
উপরের লক্ষণগুলোর মধ্যে পানিভাঙা ছাড়া আর কোনটিই প্রসব শুরুর লক্ষণ নয়। এগুলো এসময় বিভিন্ন জটিলতার নির্দেশ করে। তাই কোন ধরণের সময় নষ্ট না করেই ডাক্তারকে জানাতে হবে।
<<গর্ভাবস্থা সপ্তাহ ৩৭
গর্ভাবস্থা সপ্তাহ ৩৯ >>