Early pregnancy failure কি?
ডাক্তারি ভাষায় একে ব্লাইটেড ওভাম (blighted ovum) অথবা anembryonic gestation বলা হয়ে থাকে এবং এটা গর্ভপাতের অন্যতম একটি কারণ। এমনটা হয়ে থাকে যখন একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুতে রোপিত হয় কিন্তু পরবর্তীতে স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়ে সেটা যখন ভ্রূণে রূপান্তরিত হয় না।
আর আপনার যদি এমন সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে আপনি প্রথম তিন মাস পার হওয়ার আগ পর্যন্ত জানতেও পারবেন না যে আপনার নিষিক্ত ডিম্বাণুটি ভ্রূণে রূপান্তরিত হয়নি।
আপনার যদি Early pregnancy failure বা ব্লাইটেড ওভাম হয়ে থাকে তাহলে এর পরবর্তী ধাপে কি হবে?
আপনার যদি এই ধরনের সমস্যা হয়েও থাকে তবু প্রেগনেন্সি টেস্ট করালে রিপোর্ট পজিটিভই আসবে। কেননা আপনার প্লাসেনটার বৃদ্ধি স্বাভাবিক ভাবে হতে থাকে এবং human chorionic gonadotropin (hCG) হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে আর আপনি গর্ভধারণ করেছেন কি না সেই পরীক্ষায় মূলত এই হরমোন আছে কি না সেটাই পরীক্ষা করে হয়ে থাকে।
এছাড়া প্রাথমিক ভাবে অবসাদ, বমি বমি ভাব এবং স্তনে কিঞ্চিৎ ব্যথা অনুভূত হওয়া সহ গর্ভধারণের সকল রকম লক্ষণ আপনার মধ্যে দেখা যাবে। পরবর্তীতে এই হরমোনের পরিমাণ যখন কমতে থাকবে তখন এই ধরনের লক্ষণগুলোও চলে যেতে থাকবে এবং আপনার স্পটিং বা রক্তপাত শুরু হতে পারে।
প্রথমত আপনি কাপড়ে হালকা লালচে-বাদামী দাগ দেখতে পারেন, পরবর্তীতে হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকলে আপনার হালকা ক্র্যাম্প অনুভূত হতে পারে ও রক্তপাত শুরু হতে পারে।
আপনার যদি এই ধরনের হালকা ক্র্যাম্প অথবা রক্তপাত শুরু হয়, আপনার জরায়ু যদি যতটা বড় হওয়ার কথা ততটা বড় না হয়, অথবা আপনার ডাক্তার ১২ সপ্তাহ পার হয়ে যাওয়ার পরেও গর্ভে শিশুর হৃৎস্পন্দন শুনতে না পারেন তাহলে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার গর্ভের শিশুর অবস্থা জানার জন্য পরীক্ষা করা হবে। আর আপনি যদি আদতেই Early pregnancy failure এ ভুগে থাকেন তাহলে আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে আপনার গর্ভ যে শূন্য অবস্থায় আছে সেটা বোঝা যাবে।
এরপর আপনার গর্ভের gestational sac এবং কোষগুলো বের হয়ে যাওয়ার জন্য তৃতীয় মাসের শেষের দিকে আপনার হয়ত গর্ভপাত হতে পারে। তবে এই গর্ভপাত তৃতীয় মাসের আগেও হয়ে যেতে পারে বলে ডাক্তাররা জানান।
জেনে রাখা ভালো যে এই গর্ভপাত প্রায় এক সপ্তাহ ধরেও হতে পারে। আর আপনি যখন জানবেন যে আপনার গর্ভে আদতে কোন শিশু নেই তখন এক সপ্তাহ দীর্ঘ গর্ভপাত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করাটা শারীরিক এবং এর সাথে সাথে মানসিক ভাবেও বেশ কষ্টকর হয়ে পড়বে।
এমতাবস্থায় নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এই গর্ভপাতের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা যায়। অথবা অপারেশনের মাধ্যমেও গর্ভের অপরিপক্ব কোষগুলো বের করে ফেলার ব্যাপারে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এছাড়া অতিরিক্ত রক্তপাত অথবা ইনফেকশনের কোন লক্ষণ দেখা যাওয়ার পর গর্ভপাত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করাটা যদি আপনার জন্য অনিরাপদ হয়ে দাঁড়ায় তাহলেও আপনাকে কৃত্রিম ভাবেই কোষগুলো বের করে ফেলার ব্যাপারে ভাবতে হবে।
ব্লাইটেড ওভাম হলে আপনি পুনরায় কখন গর্ভধারণের জন্য চেষ্টা করবেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে পুনরায় গর্ভধারণের জন্য একবার মাসিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা প্রয়োজন এবং এই মাসিক সাধারণত গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার পর অথবা অপারেশনের মাধ্যমে গর্ভের অপরিপক্ব কোষ সরিয়ে ফেলার পর ছয় সপ্তাহ এর মধ্যেই হয়ে থাকে। এই অপেক্ষমাণ সময়ের মধ্যে অবশ্যই আপনাকে জন্ম নিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রায় ৩০ হাজার নারীদের উপর করা একটা স্কটিশ গবেষণায় এটা উঠে এসেছে, যে সব নারীরা গর্ভপাত হওয়ার ছয় সপ্তাহ এর মধ্যে গর্ভধারণ করে তাদের স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি থাকে। সে সকল নারীদের, ছয় থেকে বারো মাস পড়ে গর্ভধারণ করা নারীদের তুলনায় গর্ভপাত কম হয়ে থাকে।
যাই হোক, আপনি যখন পুনরায় গর্ভ ধারণ করার জন্য শারীরিক ভাবে তৈরি হয়ে যাবেন তখনও আপনি মানসিক ভাবে হয়ত প্রস্তুত নাও থাকতে পারেন। ব্লাইটেড ওভামে ভোগা নারীদের হারানোর কষ্ট লাঘব হতে একেক জনের একেক রকম সময়ের প্রয়োজন হয়, এমনকি কিছু নারীরা পুনরায় গর্ভধারণ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠতে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে।
একবার Early pregnancy failure হলে পুনরায় এটা আবার হবার সম্ভাবনা কি বেশি থাকে?
এর উত্তর হল, না! যদিও এমতাবস্থায় পুনরায় গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে শুধুমাত্র একবার ব্লাইটেড ওভাম হলেই তার মানে এই নয় যে আপনার অথবা আপনার সঙ্গীর মধ্যে কোন সমস্যার কারণে এমন হয়েছে।
উল্লেখ্য যে একটানা দুই অথবা তিনবার Early pregnancy failure হলেই কেবল এই সমস্যার কারণ অনুসন্ধান করার জন্য ডাক্তাররা বিশেষ ধরনের রক্ত এবং জেনেটিক পরীক্ষা করে থাকেন।
সবার জন্য শুভকামনা।