আপনার মনে এই প্রশ্নটি সব সময় আসতে পারে আপনার শিশুকে ফর্মুলা বেশী দিয়ে ফেলছেন নাকি কম! কতটুকু দেওয়াটা আসলে যথেষ্ট?এইসব প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনার সোনামনির ওজন আর তার ওজন কতটুকু বাড়ছে তার উপর। আজকের আর্টিকেলে এই বিষয়ে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।
আপনার শিশুকে কতটুকু ফর্মুলা দিবেন এবং কিভাবে শুরু করবেন
স্বাভাবিকে নিয়মে শিশুরা ক্ষুধা লাগলে খায় এবং পেট ভরে গেলে খাওয়া বন্ধ করে দেয়।কিন্তু যেসব শিশুদেরকে ফর্মুলা দেওয়া হয় তাদের ওজন সাধারনত বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুর চাইতে একটু বেশী হয়। শিশুদের খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন হতে পারে এবং শিশুদের চাহিদা প্রতিমাসে এমনকি প্রতিদিনে পাল্টাতে পারে।
শুনতে জটিল লাগলেও আপনি যদি কিছু সাধারণ গাইডলাইন মেনে চলেনএবং আপনার শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে তার দেওয়া সব নির্দেশনা মেনে চলেন তবে আপনার চিন্তার কোন কারন নেই।
এখানে আমরা কিছু নির্দেশনা দিলাম সে সব শিশুদের জন্য যাদেরকে জন্মের পর ৪-৬ মাস শুধুমাত্র ফর্মুলা দুধ এবং তারপর এক বছর বয়স পর্যন্ত ফর্মুলার সাথে সলিড খাবার খাওয়ানো হয়েছে ।
আপনার সোনামনিকে দিনে ৩২ আউন্সের বেশী ফর্মুলা দিবেন না আর যখন থেকে তাদেরকে শক্ত খাবার খাওয়ানো শুরু করবেন তখন ফর্মুলা আরো কমিয়ে দিতে হবে।আপনার শিশু বিশেষজ্ঞ ভালো করে বলতে পারবেন যে ফরমুলা খেয়ে আপনার শিশু গ্রোথ চার্ট অনুযায়ী ঠিকভাবে বেড়ে উঠছে কিনা এবং তার ফর্মুলা খাওয়ার পরিমাণ ঠিক আছে কিনা।
আর যদি আপনার শিশু বুকের দুধ এবং ফর্মুলা দুইটাই নেয় তবে ডক্টরের সাথে আরো বিস্তারিত কথা বলুন।
[ আরও পড়ুনঃ কিভাবে নিরাপদ উপায়ে ফরমুলা দুধ সংরক্ষণ করে ব্যাবহার করা যায় ]
ওজন অনুযায়ী আপনার সোনামনিকে কতটুকু ফর্মুলা দিবেন?
প্রথম ৪-৬ মাসে যখন আপনার শিশু শক্ত খাবার খাচ্ছে না, তখন এই নিয়মটি মেনে চলুন।শরীরের ওজন অনুযায়ী ২.৫ আউন্স ফরমুলা গুন করে হিসাব করে নিন।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার শিশুর ওজন ৬ পাউন্ড হয় তাহলে তাকে ২৪ ঘন্টায় ১৫ আউন্স ফর্মুলা দিবেন।আর ওজন যদি ১০ পাউন্ড হয় তবে তাকে দিনে ২৫ আউন্স ফর্মুলা দিবেন।
তবে এই নিয়মটাই যে পুরোপুরি সঠিক তা নয়।এটি হল কেবল একটি ধারনা যে আপনার শিশুকে কি পরিমান ফর্মুলা দেওয়া উচিত। কিন্তু আপনার শিশুর প্রয়োজনের ভিত্তিতে এই পরিমান কম বেশী হতে পারে। কখন ও তার বেশী পরিমান ফর্মুলা লাগতে পারেএবং কখনো কম।
[ আরও পড়ুনঃ কিভাবে নবজাতক শিশুর জন্য তৈরি ফর্মুলা দুধের নিরাপদ ব্যাবহার নিশ্চিত করবেন। ]
আপনার সোনামনি কতটুকু ক্ষুধার্থ সেটি আপনি কিভাবে বুঝবেন?
আপানার শিশু কতটুকু ক্ষুধার্থ সেটি বুঝতে পারেলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার শিশুকে আপনার কখন এবং কতটুকু ফর্মুলা দেওয়া উচিত।
সদ্যভুমিষ্ঠ শিশুঃ
আপনার সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর যদি ক্ষুধা লাগে তবে সে অবশ্যই কান্না করবে। কিন্তু কান্না করার আগে আপনার শিশু আরো অনেক কিছুই করতে পারে যেমন ঠোট চাটা, তার গালে হাত দিলে মাথা ঘুরিয়ে নিয়ে হাতের দিকে ফিরতে চেষ্টা করা এবং নিজের হাত মুখে দেয়ার চেষ্টা করা ইত্যাদি।
ক্ষুধার পরিবর্তনঃ
আপনার শিশুর যখন দ্রুত বৃদ্ধি (growth spurts) হতে থাকে তখন তার ক্ষুধার ও পরিবর্তন হয়।সাধারনত জন্মের ১০ থেকে ১৪ দিন পর, ৩সপ্তাহ, ৬সপ্তাহ এবং ৩মাস ও ৬ মাস বয়সে এমন বৃদ্ধি ঘটে। আর আপনার শিশু যদি অসুস্থ থাকে তবে তারক্ষুধা কমে যেতে পারে।
বেশী খেতে চাওয়াঃ
আপনি বুঝবেন যে আপনার শিশু আর ও বেশী খেতে চাচ্ছে, যখন সে তার খাওয়া তাড়াতাড়ি শেষ করে আরো দুধের জন্য আশেপাশে তাকাতে থাকে।প্রথম বোতলের পরও যদি সে ক্ষুধার্থ থাকে তবে কেবল মাত্র ১-২ আউন্স ফর্মুলা বানিয়ে নিবেন প্রতিবার। কেননা আপনি যদি এর চাইতে বেশী বানান তবে বাচ্চা পুরোটুকু শেষ নাও করতে পারে এবং আপনাকে সে দুধ ফেলে দিতে হবে।
বেশী খেয়ে ফেলাঃ
খাবার খাওয়ার পর আপনার শিশু যদি বমি করে তার মানে হল আপনার শিশু বেশী খেয়ে ফেলেছে। মনে রাখতে হবে দুধ খাওয়ার পর কিছুটা উগলে দেয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু বমি করা নয়। পেট ব্যথা ও অতিরিক্ত খাবার একটি লক্ষন। আপনার শিশু যদি পা উপরে তুলে রাখে অথবা তার পেট শক্ত লাগে তার মানে হল আপনার শিশুর পেট ব্যথা করছে।
বাচ্চার কান্না এবং খিটখিটে মেজাজ মানেই সবসময় ক্ষুধা নয়
আপনার শিশু কান্না করলেই যে আপনি তাকে খাওয়াতে থাকবেন তা নয়। বিশেষ করে খাওয়ানোর পরেও যদি আপনার শিশু কান্না করে এটার কারন হতে পারে যে তার ডায়াপার হয়ত ভেজা, অথবা তার ঠান্ডা লাগছে বা গরম, অথবা তার হয়ত ঢেকুর তুলতে হবে অথবা আপনার সোনামনি হয়ত আপনার কোলে থাকতে চায়।
বয়স অনুযায়ী আপনার সোনামনিকে আপনি কতটুকু ফর্মুলা দিবেন
জন্মের প্রথম সপ্তাহে আপনার শিশু যতটুকু চাইবে ঠিক ততটুকু ফর্মুলা দিন। কিন্তু এরপর খেয়াল রাখতে হবে যাতে শিশুকে অতিরিক্ত খাওয়ানো না হয়।এতে শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চাইতে বেড়ে যেতে পারে।
জন্মের পর প্রত্যেক শিশুই কয়েক ঘন্টা পর পর খেতে চায়।জন্মের প্রথম সপ্তাহে প্রতিবার খাওয়ানোর সময় ১.৫ থেকে ২ আউন্স করে এবং সেটা আস্তে আস্তে প্রতি ৩-৪ ঘণ্টায় ২-৩ আউন্সে বাড়াতে হবে।
আপনার শিশু বড় হওয়ার সাথে তার পেট ও বড় হতে থাকে আর তখন সে দিনে কম বার খাবে কিন্তু প্রতিবারে খাওয়ার পরিমাণ বাড়বে। যেমন প্রথম মাসে সে প্রতিদিন ৪ আউন্স করে ৫-৬ বোতল ফর্মুলা খেতে পারে। এবং ৬ মাস হতে হতে ৬-৮ আউন্স করে ৪-৫ বোতল ফর্মুলা খেতে পারে।
এভাবে সে এক বছর পর্যন্ত ৪-৫ বোতল ফর্মুলা খেতে থাকবে যতদিন পর্যন্ত না সে গরুর দুধ এবং শক্ত খাবার খাওয়া শুরু না করছে।
কিভাবে বুঝবেন যে আপনার শিশু সঠিক পরিমানে ফর্মুলা পাচ্ছে
সঠিক ওজন বৃদ্ধি
প্রথম দুই সপ্তাহ পর থেকে আপনার শিশুর ওজন বাড়তে থাকবে এবং একবছর বয়স পর্যন্ত একটি সঠিক নিয়মে বাড়তে থাকবে। কেননা বেশীরভাগ শিশুই জন্মের পর ওজন হারায় যা তারা তাদের ২ সপ্তাহ পর আবার ফিরে পায়। কিন্তু যদি ওজন হ্রাসের পরিমাণ ১০% অথবা তার বেশি হয়, তবে তা চিন্তার বিষয়।
হাসিখুসি শিশু
খাওয়ার পর আপনার শিশুকে হাসিখুসি দেখায়।
ভেজা ডায়াপার
একজন শিশু চব্বিশ ঘণ্টায় ছয়বার প্রস্রাব করে থাকে। যদি এর চেয়ে কম প্রস্রাব করে, তবে বুঝতে পারবেন শিশুটি দুধ পানে সন্তুষ্ট নয়।
আপনি কি চিন্তিত এটাভেবে যে আপনার শিশুর কি বেশী ফর্মুলা লাগছে নাকি কম
যদি আপনি এটা ভেবে চিন্তিত থাকেন যে আপনার শিশু বেশীফর্মুলা পাচ্ছে নাকি কম, আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।ডাক্তার আপনার শিশুর ওজন আর বেড়ে ওঠা দেখে বলতে পারবেন যে ফর্মুলার পরিমান ঠিক আছে নাকি পরিবর্তন দরকার।
সবার জন্য শুভকামনা।
আমার ছেলে বেবির বয়স 2 মাস। বেবির ওজন ৪ কেজি ৯০০ গ্রাম।জন্মের পর বুকের দুধ না পাওয়ায় তাকে ফরমুলা দুধ/ প্রাইমা খাওয়ায় ফিডারে করে। কিন্তু এখন বুকে দুধ তাকা সত্ত্বেও সে চুষে খেতে পারে না। বুকের দুধ খাওয়ানোর পরও সে কান্না করে। তাই তাকে পাম্প করে নিয়ে বুকের দুধ খাওয়ায়। এটা কি নিরাপদ? আর বুকের দুধ কতক্ষণ সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে? পাশাপাশি তাকে ফরমুলা দুধও খাওয়ায়।
বুকের দুধ সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন – https://myfairylandbd.com/%e0%a6%ac%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%a7-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%a3/