প্রসবের আগে ও পরে মায়ের শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে। যার প্রভাবে অনেক কিছু বদলে যেতে শুরু করে। তারই একটি হল পিরিয়ড সার্কেল। অনেকের যেমন দেরিতে পিরিয়ড শুরু হয়। আবার অনেকের অন্য ধরনের পরিবর্তন আসে। এমনটা অনেক কারণে হয়ে থাকে। তবে এ রকম হওয়ার পিছনে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। তাই অকারণ চিন্তা করবেন না।
এই সময় অনেক মায়ের লাল রঙের ভেজাইনাল ডিসচার্জ হয়, যাকে অনেকে পিরিয়ড ভেবে ভুল করেন। আসলে এটা রক্ত আর মিউকাস।
গর্ভাবস্থায় পুরো সময়টাই মহিলাদের পিরিয়ড বা মাসিক বন্ধ থাকে। প্রসবের পরও তা শুর হতে কিছুটা সময় লাগে। এ সময় লাগাটা যে সবার ক্ষেত্রে একই হবে তা নয়। কিছু কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে প্রসবের পর পিরিয়ড শুরু হওয়াটা একেক জনের একেক রকম হতে পারে। এসব বিসয় নিয়েই আজকের আলোচনা।
প্রসবের পর কখন পিরিয়ড শুরু হতে পারে?
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে কিনা বা কতটুকু খাওয়ানো হচ্ছে সেটা প্রসবের পর কত তাড়াতাড়ি মায়ের মাসিক শুরু হবে তাকে প্রভাবিত করে। তবে প্রত্যেক মা ই আলাদা তাই প্রসবের পর ঠিক কখন মাসিক হবে তা সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা যায়না।
নিচে দেয়া তথ্যগুলো আপনার কখন মাসিক শুর হতে পারে তার ধারনা দেয়ার জন্য দেয়া হয়েছে। যদি কোন কারণে আপনার মনে হয় সবকিছু স্বাভাবিক নেই তবে ডাক্তারকে তা জানানো উচিত।
বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের ক্ষেত্রে
বুকের দুধ খাওয়ানোর একটি উপকারিতা হলো, তা আপনার মাসিক শুরুকে বিলম্বিত করে, যাতে এর মধ্যেই আবার গর্ভধারণ না হয়। এর ফলে বাচ্চার যত্ন আত্তির জন্য বেশ কিছুটা সময় পাওয়া যায়।
যদি আপনি বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান তবে প্রসবের পর মাসিক শুরু হতে ছয় মাস বা তার বেশীও লাগতে পারে। বাচ্চাকে আপনি যত কম বুকের দুধ খাওয়াবেন তত দ্রুত আপনার মাসিক শুরু হতে পারে।
অর্থাৎ বাচ্চা যদি অল্প বয়স থেকেই পুরো রাত ঘুমিয়ে কাটায় বা যদি বুকের দুধের পাশাপাশি বাচ্চাকে ফর্মুলা খাওয়ানো হয় তবে প্রসবের পর ৬ মাসের আগেই মায়ের পিরিয়ড শুরু হয়ে যেতে পারে।
বুকের দুধ উৎপন্ন হওয়ার জন্য যে প্রোলাক্টিন হরমোন নিঃসরণ হয় তা মায়ের দেহে রি-প্রোডাক্টিভ হরমোনের নিঃসরণে বাঁধা দেয়। যার ফলে মায়ের ওভুলেশন বন্ধ থাকে বা মায়ের দেহে ডিম্বাণু নিঃসরণ হয়না। আর এ কারণেই বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের পিরিয়ড বা মাসিক দেরীতে শুরু হতে পারে।
অনেক মা ই বুকের দুধ খাওয়ানোকে প্রসব পরবর্তী জন্ম নিয়ন্ত্রনের মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করেন। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে শুধুমাত্র এবং নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের ক্ষেত্রে প্রসবের পর এক বছরের মধ্যে আবার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ১ ভাগেরও কম। তবে বুকের দুধ খাওয়ালেই যে ওভুলেশন বন্ধ থাকবে তা নয়। অনেকের ক্ষেত্রে এর প্রভাব ভিন্ন হতে পারে।
কিছু কিছু মায়েদের যারা নিয়মিত বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের মাসিক এক মাস পর থেকেই শুরু হতে পারে আবার যারা বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা খাওয়ান তাদের মাসিক কয়েক মাস বন্ধও থাকতে পারে।
বুকের দুধ না খাওয়ানো মায়েদের ক্ষেত্রে
বাচ্চা যদি বুকের দুধ না খেয়ে শুধু ফর্মুলা খায় সে ক্ষেত্রে মায়েদের মাসিক সাধারনত প্রসবের পর ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে শুরু হতে পারে। যদি তিন মাসের মধ্যে মাসিক শুর না হয় তবে ডাক্তারকে জানাতে হবে। তিনি চেক করে দেখবেন আপনি আবার গর্ভবতী হয়েছেন নাকি অন্য কোন সমস্যা আছে।
প্রসবের পর পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগেই কি গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে?
অনেক মা ই এধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ করেন। মনে রাখতে হবে মহিলাদের অভুলেশন বা ডিম্বোস্ফটন শুর হয় মাসিক শুরু হওয়ার দু সপ্তাহ আগে। অর্থাৎ প্রসবের পর আপনার মাসিক শুর হয়নি বলে এমন না যে আপনার শরীর গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত নয়। তাই এটা খুবই স্বাভাবিক যে প্রসবের পর মাসিক শুরু না হয়েও আপনি পুনরায় গর্ভবতী হতে পারেন।
পুনরায় গর্ভবতী না হতে চাইলে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদেরও প্রসবের পর শারিরক মিলন শুর করার সাথে সাথে জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করা উচিত।
কোন পদ্ধতিটি আপনার জন্য ভালো হবে তা ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নেয়া উচিত। কারণ কিছু কিছু জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন- যে সব জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়িতে এস্ট্রোজেন থাকে তা মায়েদের বুকের দুধ উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
কেউ কেউ বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোকে জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করতে চান। এক্ষেত্রে নিয়মিত বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এর মানে হলো-
- চার ঘণ্টা পর পর বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো।
- বাচ্চাকে সরাসরি স্তন থেকে দুধ খাওয়াতে হবে। পাম্প করে খাওয়ালে চলবেনা।
এভাবে নিয়মিত বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো হলে তা জন্ম নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করতে পারে। আর যদি বুকের দুধ খাওয়ানোর পরও মাসিক শুরু হয়ে যায় তাহলে আপনাকে অন্য পদ্ধতির সাহায্য নিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে এটি জন্ম নিয়ন্ত্রনে ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দেয়না।
প্রসবের পর প্রথম পিরিয়ড কেমন হতে পারে?
প্রসবের পর (নরমাল বা সিজারিয়ান যেটাই হোক), মায়ের যোনিপথে রক্ত ও ডিসচার্জ হতে পারে কারণ এ সময় মায়ের শরীর গর্ভাবস্থায় জরায়ুর গায়ে লেগে থাকা রক্ত এবং টিস্যু বের করে দেয়। প্রথম কয়েক সপ্তাহ রক্তপাতের পরিমান বেশী হতে পারে এবং ক্লট যেতে পারে। আস্তে আস্তে তা পরিষ্কার বা ক্রীম কালারের হয়ে যেতে পারে যাকে Lochia বলে।
এই ডিসচার্জ ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। যদি ব্রেস্টফীড না করান তাহলে এ সময়ের মধ্যে আপনার মাসিক শুরু হয়ে যেতে পারে। যদি ডিসচার্জ Lochia এর মত হওয়ার পর আবার রক্তক্ষরণ হয় তবে তা পিরিয়ডের কারণে হতে পারে। তবে নিচের লক্ষনগুলো থাকলে ডাক্তারকে জানাতে হবে-
- যদি অনেক বেশী মাসিক হয় অর্থাৎ যদি প্রতি ঘণ্টায় প্যাড পুরোপুরি ভিজে যায় এবং কয়েক বার এমন হয়।
- রক্তক্ষরণের সাথে সাথে হঠাৎ হঠাৎ অনেক ব্যাথা হলে।
- হঠাৎ জ্বর আসলে।
- সাত দিনের বেশী অনবরত রক্তক্ষরণ হলে।
প্রসবের পর পিরিয়ডে কি পরিবর্তন আসতে পারে?
বাচ্চা জন্মামোর পরে নতুন মায়েদের পিরিয়ড সার্কেলে অনেক পরিবর্তন আসে। অনেকের যেমন দেরিতে পিরিয়ড শুরু হয়। আবার অনেকের অন্য ধরনের পরিবর্তন আসে। এমনটা অনেক কারণে হয়ে থাকে। তবে এ রকম হওয়ার পিছনে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। তাই অকারণ চিন্তা করবেন না।
প্রসবের পর কোনও নিয়ম না মেনে যে কোনও সময় পিরিয়োড শুরু হয়ে যেতে পারে। এমনকি প্রথম পিরিয়ড, বাচ্চা জন্মানোর ৬-৭ সপ্তাহ পরেই হতে পারে। এমনটা হলে চিন্তা করবেন না।
যদি মান্থলি সার্কেল বা পিরিয়ডের সময়কাল ছোট হয়ে যায় অথবা লম্বা হয়ে যায়, তাহলেও চিন্তা করার কেনাও কারণ নেই। অনিয়মিত পিরিয়ডের পাশাপাশি আরেকটি ঘটনা ঘটতে পারে। তা হল পিরিয়ডের সময় অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ। এমনটা হলে ভয় পাবেন না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতেই পারেন। তবে এটা খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা।
কারও কারও পিরিয়ডের সময় খুব যন্ত্রণা হতে পারে। সেই সঙ্গে মাথা ঘোরা, অস্বাভাবিক ঘাম এবং খিটখিটে হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে অযথা ভয় পাবেন না। প্রসবের পরে এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
ব্রেস্ট ফিডিং-এর সময়ে মায়ের শরীরে প্রলেকটিন নামে এক ধরনের হরমোনের ক্ষরিত হয়, যে কারণও অনেক সময় পিরিয়ড সার্কেলে নানা পরিবর্তন আসে। তবে কিছু সময়ের পর থেকেই সব স্বাভাবিক হতে শুরু করে দেয়।
কখন ডাক্তারকে জানাতে হবে?
প্রসবের পর প্রথম দিকের পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও যন্ত্রণা হতে পারে। কিন্তু যদি এতটা বেশী হয় যে আপনার প্রতি ঘণ্টায় বা খুব ঘন ঘন প্যাড পাল্টাতে হচ্ছে তাহলে তা ডাক্তারকে জানাতে হবে। এটা ইনফেকশন, ফাইব্রয়েড বা পলিপ্স এর লক্ষন হতে পারে।
এছাড়াও যদি পিরিয়ড সাত দিনের বেশী থাকে, বড় ক্লট যায়, পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর পিরিয়ড মিস হয়, পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময়ে স্পটিং দেখা যায়, এবং প্রসবের ও শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার তিন মাস পরেও যদি পিরিয়ড শুরু না হয় তবে তা এনেমিয়া বা থাইরয়েডের সমস্যার লক্ষন হতে পারে। এসব ক্ষেত্রেও ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
সবার জন্য শুভকামনা।
আমার স্ত্রীর বাচ্চা হয়েছে আজকে প্রায় ২ মাস হচ্ছে।
সে নিয়মিত বুকের দুধ পান করাচ্ছে।
এখন সহবাস করলে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে কি??
জানাবেন প্লিজ।
এই বিষয়ে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন- https://myfairylandbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%b8%e0%a6%ac-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%80-%e0%a6%b8%e0%a6%b9%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b8/
আমার স্ত্রী প্রসব হয়ছে ৮ মাস হয়ছে কিন্তু এখনো মাসিক হয়নি। সে নিয়মিত বুকের দুধ খাওচ্চে। এখন কি ডাঃ দেখানো উচিত প্লিজ জানাবেন???
বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। বিস্তারিত আর্টিকেলেই লেখা আছে।