শিশুকে কীভাবে প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে রক্ষা করবেন

Spread the love

আজকালকার শিশুরা একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল এবং তথ্য-প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতির যুগে বেড়ে উঠছে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ট্যাবলেট, টেলিভিশন – সবই তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির এই সহজলভ্যতা শিশুদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হলেও কিছু কিছু মা-বাবার ক্ষেত্রে তা রীতিমতো অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে অধিকাংশ শিশুই সবসময় প্রযুক্তির সংস্পর্শে থাকতে চায়, যা তাদের মা-বাবাদের জন্য একটি বিরাট সমস্যা। যেহেতু মা-বাবারা সবসময়ই সন্তানের সফলতা এবং মঙ্গল কামনা করেন, তাই তাঁরা যখন দেখেন যে তাদের সন্তান প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে, তখন তাঁরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এই আর্টিকেলে আমরা তাদের এই দুঃশ্চিন্তাগুলো কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা করবো।

বিজ্ঞাপণ

মা-বাবাদের দুঃশ্চিন্তার কারণসমূহ

বর্তমানে পুরো বিশ্বকেই মহামারী করোনা ভাইরাস গ্রাস করে রেখেছে। এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে শিশুদের সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তাদের পড়ালেখা সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক হয়ে গেছে। ক্লাস, পরীক্ষা সবকিছুই অনলাইনে হচ্ছে। যার কারণে শিশুদের এখন পূর্বের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি প্রযুক্তির সাহায্যের প্রয়োজন হচ্ছে।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে অনেক শিশুরাই এই সুযোগটির অপব্যবহার করছে। অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতি চালু করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার যে অবর্ণনীয় ক্ষতি হচ্ছে, তা যেন পুষিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু কিছু সংখ্যক শিশু অনলাইনে পড়াশোনার নাম করে গেইমিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় দেওয়া এবং অন্যান্য কাজে বেশি সময় ব্যয় করছে।

আবার অনেক শিশু ক্লাসে জয়েন করলেও দেখা যায় সেখানে মনোযোগ না দিয়ে অন্য কাজ করছে বা ডিভাইস ব্যবহার করছে। অনেক সময় তাদের শিক্ষক তাদেরকে কোনো প্রশ্ন করলেও তারা সাড়া দেয় না, বা নেটওয়ার্ক সমস্যা বলে এড়িয়ে যেতে চায়। এ নিয়ে তাদের মা-বাবা, শিক্ষকগণ সকলেই অনেক বেশি চিন্তিত থাকেন।মা-বাবারা কিছু কিছু আন্দাজ করলেও প্রমাণের অভাবে বলতে পারেন না। কারণ তারা হয়তো মা-বাবাকে দেখলে বা তাদের উপস্থিতি টের পেলেই সতর্ক হয়ে যায়।

এছাড়াও শিশু অনলাইনে কী করছে, কীভাবে করছে, কোনো ভুল কিছুর সাথে জড়িয়ে পড়ছে কিনা – এসব নিয়ে মা-বাবারা সবসময়ই অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন। শিশু হয়তো প্রযুক্তির ব্যবহার আপনার চেয়ে ভালো বোঝে, কিন্তু তার এখনো আপনার মতো তীক্ষ্ম বিচারক্ষমতা হয়নি৷ সে কখনোই পুরোপুরি ধরতে পারবেনা কোনটি ভালো আর কোনটি খারাপ। মনের অজান্তেই হয়তো সে ভুল পথে পা বাড়িয়ে ফেলবে, যা তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই সকল কিছুই মা-বাবাদের হাজারো দুঃশ্চিন্তার কারণ।

আপনার সন্তান প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে কিনা তা কীভাবে বুঝবেন?

আসলে আপনার সন্তান প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে কিনা তা আপনি একটু লক্ষ্য করলেই ধরতে পারবেন। শিশুরা যতই চেষ্টা করুক, মা-বাবার কাছে কিছুই গোপন করতে পারেনা। আপনার শিশুর মধ্যে নিম্নের লক্ষণগুলো খেয়াল করলেই বুঝবেন যে সে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করছেনা।

  • দীর্ঘক্ষণ ধরে অনলাইনে থাকছে, বিশেষ করে রাতে।
  • আপনি তার রুমে প্রবেশ করামাত্রই ডিভাইস বন্ধ করে দেওয়া বা কিছু লুকানোর চেষ্টা করা।
  • নিজ পরিবারকে সময় কম দেওয়া।
  • ঘরের বাইরে কম যেতে চাওয়া এবং খেলাধূলা করতে না চাওয়া।
  • অপরিচিত মানুষদের কাছ থেকে নিয়মিত বার্তা ও ফোন পাওয়া।

এরকম অনেক পরিবর্তন তাদের ভিতর লক্ষ্য করবেন। এর প্রতিকার কী হতে পারে তা নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

কীভাবে আপনার সন্তানকে প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে রক্ষা করবেন?

শিশুরা যাতে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা, গুরুজন – সকলের উপরই বর্তায়। তবে মা-বাবা হিসেবে শিশুকে প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফাঁদ থেকে রক্ষা করার মূল দায়িত্বটা আপনাদেরকেই নিতে হবে।

সন্তানের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করুন

শিশুরা শুধুমাত্র বর্তমান নিয়েই থাকতে চায়। বাস্তব জগৎ যে কতটা কঠিন সেটা তাদের বোধগম্য নয়। এজন্য তারা পড়াশোনার চেয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারেই বেশি সময় দিতে চায়। মা-বাবা হিসেবে আপনার উচিত তার সাথে এসব নিয়ে রাগারাগি না করে তাকে জীবনের বাস্তবিকতা এবং প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।

তাকে প্রযুক্তির অতিরিক্ত এবং অপব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে বুঝিয়ে বলুন। এতে যে শুধু তার পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছেনা বরং আরো বিভিন্নভাবে যে সে বিপদে পরতে পারে, এমনকি এটি যে তার শরীরের জন্যও ভালো নয় – এসব ব্যাপারে তাকে অবহিত করুন।

সবকিছুর রুটিন করে দিন

একটি নির্দিষ্ট নিয়মের আওতাভুক্ত থাকা শিশুর স্বাস্থ্যকরভাবে বেড়ে উঠার জন্য খুবই কার্যকরী। আপনার শিশুর খাওয়া, ঘুম, পড়াশোনা, খেলাধূলা, ডিভাইস বা মিডিয়া ব্যবহার এবং অন্যান্য সকল কিছুর রুটিন করে দিন। যেমন : সে এই সময় ব্যতীত ডিভাইস বা মিডিয়া ব্যবহার করতে পারবেনা বা এতোক্ষণ সময় তার খেলাধূলার জন্য নির্ধারিত। এরকম হলে দেখা যাবে আপনার শিশু সবকিছুই যথাসময়ে করছে এবং সঠিকভাবে করছে।

ঘরের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা মিডিয়াগুলো একটি কমনরুমে রাখুন

আপনার ঘরের ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং মিডিয়াগুলো এমন একটি জায়গায় রাখুন যেখান থেকে আপনি নিজেই পুরো ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি দেখতে পারবেন আপনার শিশু কী করছে, কীভাবে করছে। তারও মাথায় থাকবে যে আপনি আশেপাশেই আছেন, তাই সে এর ভুল ব্যবহার বা অতিরিক্ত ব্যবহার করার কথা চিন্তা করবেনা।

কোনো ভাবেই শিশুর রুমে কোনোরকম ইলেকট্রনিক ডিভাইস রাখতে যাবেন না৷ নাহলে ব্যাপারটা আর আপনার হাতে থাকবেনা। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে শিশু ইলেকট্রনিক ডিভাইস সাথে নিয়েছে কিনা সেটি লক্ষ্য রাখবেন।

জানা না থাকলে নিজেও প্রযুক্তির ব্যবহার শিখে নিন

অনেক মা-বাবারাই বিভিন্নরকম প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানেন না। যার কারণে তাদের শিশু কী করছে, কেন করছে, কীভাবে করছে সে ব্যাপারে অনেক কিছুই তারা জানতে পারেন না। তবে আপনার অন্তত ঐসব প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানা উচিত যেগুলো আপনার শিশু ব্যবহার করে। তাহলে আপনি জানতে পারবেন যে আপনার শিশু ঐ প্রযুক্তিগুলোর কীরকম ব্যবহার করছে।

আপনি আপনার শিশুকেই এই গুরুদায়িত্বটি দিতে পারেন। এতে করে সে আপনাকে তার আরো কাছের অনুভব করবে। এবং আপনি প্রযুক্তি ও আপনার শিশুর কার্যক্রম – দুটো সম্পর্কেই জানতে পারবেন। প্রয়োজন হলে, অন্য কারো সাহায্যও নিতে পারেন।

কোন অ্যাপ্স, ভিডিও বা গেমস তাকে ব্যবহার করতে দিলে সেসব সম্পর্কে আগে জেনে নিন

বিভিন্ন ধরণের অ্যাপস, ভিডিও বা গেমসে বাচ্চাদের ক্যাটাগরি উল্লেখ থাকলেও সেগুলো সবসময় বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাই নিজে সেসবের রিভিউ দেখে বা ব্যবহার করে আগে নিশ্চিত হয়ে নিন। অনেক রিভিউ ওয়েবসাইট আছে যেগুলোতে এসব সম্পর্কে বিভিন্ন অভিভাবকদের মতামত জানতে পারবেন যা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

শিশুর স্ক্রিন ব্যবহারের সময় তাকে সঙ্গ দিন

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, শিশুর স্ক্রিন ব্যবহারের সময়টা যেন সবসময় তার একার না হয়। আপনিও তাকে সঙ্গ দিন, তার পাশে বসুন, দেখুন সে কী করছে বা দেখছে। ধরুন সে কোনো সিনেমা বা অনুষ্ঠান দেখছে। আপনিও সময় বের করে তার সাথে বসে পড়ুন। সেটি শেষ হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞেস করুন তার কেমন লেগেছে, এতে শিক্ষণীয় কী কী আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সম্পর্কিত আপনার নিজের অভিজ্ঞতাও তার সাথে ভাগাভাগি করতে পারেন।

অথবা হয়তো সে ভিডিও গেম খেলছে। আপনিও তার সাথে খেলুন। এখানে হার-জিত মূখ্য বিষয় নয়, বরং আপনার শিশুকে সময় দেওয়া এবং সে কী করছে সে ব্যাপারে জানতে পারাটাই মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি তার সাথে তার প্রিয় কোনো ওয়েবসাইট থাকলে সেটাও ঘুরে দেখতে পারেন। সেই সাথে তাকে অনলাইন আচরণবিধি, সাইবার বুলিয়িং, নিজের প্রাইভেসি রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা দিন। এভাবে তাকে সঙ্গ দেওয়ার মাধ্যমে আপনাদের মধ্যকার সম্পর্ক, জানাশোনা সবকিছুই আরো দৃঢ় হবে।

বিজ্ঞাপণ

শিশু মোবাইল ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী করছে তা পর্যবেক্ষণ করুন

শিশুরা মোবাইলে গেম খেলছে নাকি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলছে বা কোনো খারাপ বন্ধুর সংস্পর্শে আসছে কিনা এই বিষয়গুলি লক্ষ্য রাখা খুবই জরুরি।

আজকাল শিশুরা অল্প বয়স থেকেই ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করা শুরু করে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন৷ আর নতুন কিছু পেলে সবারই ভিন্ন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে ইচ্ছা করে। তবে তা করতে গিয়ে তারা যাতে বিপদে পরে না যায় বা ভুল কিছু করে না বসে, সেজন্য আপনার উচিত তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যক্রমগুলো অনুসরণ করা৷

যেমন আপনি তার সাথে ফেসবুকে “ফ্রেন্ড” হয়ে নিন। বা ইন্সটাগ্রামে তাকে “ফলো” দিন। তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিন আপনি নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত এবং প্রয়োজন মনে করলে তার অনলাইন অ্যাক্টিভিটি অবশ্যই চেক করবেন। এটি তার নিরাপত্তার স্বার্থেই, এতে তার প্রাইভেসি ক্ষুণ্ণ হওয়ার কিছু নেই।

এভাবে পর্যবেক্ষণ করলে আপনি জানতে পারবেন যে আপনার শিশু এসব প্ল্যাটফর্মে আসলে কী করছে। আর যখনই আপনার মনে হবে যে সে ভুল কিছু করছে তখনই আপনি তাকে বাঁধা দিতে পারবেন।

আপনার সন্তানের আদর্শ “রোল মডেল” হন

আচ্ছা বলুন তো, যে জিনিসটা আপনি নিজেই শিখতে পারেননি, সেটা কি আপনি অন্য কাউকে শেখাতে পারবেন? এজন্য মা-বাবাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে তারা নিজেরাও যেন ঐসব মেনে চলেন, যা তারা তাদের শিশুদেরকে অনুসরণ করতে বলছেন। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের মনোরোগবিশেষজ্ঞ এবং টেকনোলজি ওয়েলনেস সেন্টারের সহপ্রতিষ্ঠাতা, ড. মেলিসা ওয়েস্টেনড্রফ, জেডি, পিএইচডি বলেন, “আপনি যদি বলেন একরকম আর করেন আরেকরকম, তাহলে আপনি কখনোই সফল হবেন না। কিন্তু যদি আপনিও তা ই অনুসরণ করেন যা আপনি আপনার শিশুকে করতে বলছেন, তাহলে তারাও এটি মেনে চলার সম্ভাবনা খুবই বেশি”।

মনে রাখবেন শিশুর সর্বপ্রথম শিক্ষক তার মা-বাবাই। বেশিরভাগ শিশুরাই তাদের মা-বাবার দেখানো পথেই চলে। আপনি যেমন করবেন তারাও সহজাতভাবেই সেটি আয়ত্ত্ব করবে। আপনি যদি দীর্ঘক্ষণ ধরে টেলিভিশন বা মোবাইল নিয়ে থাকেন, এর প্রভাব তাদের মধ্যেও পরবে। কিন্তু যদি আপনি নিজেও এসব প্রযুক্তির ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখেন, তাহলে তারাও সেটি অনুসরণ করবে। তাই আপনার সন্তানের একজন আদর্শ “রোল মডেল” হয়ে উঠুন, যাতে সে আপনার আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে পারে।

শিশুকে আউটডোর গেমস এবং নন-ডিজিটাল অ্যাক্টিভিটির সাথে যুক্তকরুন

আপনার শিশু যদি আউটডোর গেমসগুলো খেলে বা বাইরে খেলাধূলা করে, তাহলে এটি তাদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়াবে। পাশাপাশি এটি তাদেরকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। মাঝে মাঝে আপনি নিজেও তার সাথে যেতে পারেন, তাকে নিয়ে খেলাধূলা করতে পারেন। এতে করে আপনারা নিজেরাও নিজেদের আরো কাছাকাছি আসতে পারবেন।

আবার, ছুটির দিনে আপনার শিশুকে নিয়ে কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন বা ফ্যামিলি ট্রিপের আয়োজন করতে পারেন। এতে করে আপনাদের পারিবারিক বন্ধনটা আরো সুন্দর হবে। পাশাপাশি আপনার শিশুকে বিভিন্নরকম শিক্ষণীয় সংগঠন, ধর্মীয় কাজ এবং ভলান্টিয়ারি কাজের সাথে যুক্ত করতে পারেন। এতে করে তার চারপাশের জগৎ সম্পর্কে আরো ধারণা তৈরি হবে এবং সে ধীরে ধীরে ভালো ও মন্দের পার্থক্য করতে শিখবে।

শিশুর মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন

বই নিয়ে টুপারের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। সেটি হলো, “একটি ভালো বই হচ্ছে বর্তমান এবং চিরকালের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বন্ধু”। বই পড়া শিশুর জ্ঞান এবং বাস্তব জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একটি সমীক্ষা হতে দেখা গেছে যেসব শিশুরা প্রচুর বই পড়ে, তাদের জানার পরিধি ও চিন্তাশক্তি অন্য শিশুদের তুলনায় বেশি হয়। শিশুর মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে এটি তাদেরকে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্নরকম প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে দূরে রাখবে। সুতরাং, এই অভ্যাসটি গড়ে তোলা গেলে শিশুদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে।

শিশুকে বাস্তব জীবনের বন্ধুত্ব এবং সামনাসামনি কথা বলার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলুন

সত্যিকারের বন্ধুত্ব অনলাইন হোক বা অফলাইন, তা সবসময়ই অটুট থাকে। সুতরাং অনলাইনের বন্ধুত্ব যে খারাপ তা নয়। তবে আপনার শিশুর যখন অনলাইনে কারো সাথে বন্ধুত্ব হয়, তখন স্ক্রিনের ওপার থেকে সে তার অঙ্গভঙ্গি, বাচনভঙ্গি বা দৃষ্টিভঙ্গি কিছুই ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারেনা। কিন্তু সামনাসামনি কথা হলে সে সবকিছুই সরাসরি লক্ষ্য করতে পারে। এজন্য বাস্তব জীবনের বন্ধুত্বগুলো তুলনামূলকভাবে সহজে গড়ে উঠে এবং তা দীর্ঘস্থায়ীও হয়।

তাছাড়াও আপনার শিশু যদি কখনো কোনো বিপদে পড়ে বা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার বাস্তব জীবনের বন্ধুই আগে এগিয়ে আসবে। ভার্চুয়াল জগতের বন্ধু হয়তো এই সংবাদ পাবেও না যদি না সে নিজ থেকে না বলে। এজন্য অনলাইনের চাইতে অফলাইন সম্পর্কই যে বেশি গুরুত্বপর্ণ তা আপনার শিশুকে বোঝানো উচিত। তবে বাস্তব জীবনের বন্ধুত্বও যে সবসময় সত্য হবে তা নয়, বরং কিছু ক্ষেত্রে তা আরো বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আপনার শিশুকে বুঝিয়ে দিবেন উভয় ক্ষেত্রেই যেন সে সতর্কতা বজায় রাখে।

বিজ্ঞাপণ

WHO এর মতে ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোন ধরণের স্ক্রীন টাইম দেয়া উচিত নয়। এসময় সে বাবা মায়ের সাথে বা তার দেখভালকারীদের সাথে কথা বললে, খেলাধুলা করলে তার মানসিক বিকাশ ভালো হয়। এসময় স্ক্রীনের ব্যবহার ভালোর চাইতে খারাপই করে বেশি।

শিশুর রাগ ভাঙানোর বা তাকে শান্ত রাখার জন্য প্রযুক্তিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়

শিশুকে শান্ত রাখার জন্য হয়তো প্রযুক্তি কার্যকরী হতে পারে, তবে এটিই শিশুকে শান্ত করার একমাত্র পদ্ধতি হওয়া উচিত হয়। অনেক মা-বাবারাই শিশুকে খাওয়ানোর জন্য বা শিশুর জেদ নিয়ন্ত্রণ করতে তাকে স্ক্রিনের সামনে বসিয়ে দেন, যা পরবর্তীতে একটি বদভ্যাসে পরিণত হয়। তখন দেখা যায় কী শিশু কখনো স্ক্রিন ছাড়া খেতেই চাচ্ছেনা, বা অল্প কিছুতেই কান্নাকাটি করা শুরু করছে। তাই এসব ক্ষেত্রে স্ক্রিনকে একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা অনেক বড় ভুল।

মনে রাখতে হবে আপনার শিশু সবসময় ছোট থাকবেনা। তাকে জীবনে বড় হতে হবে এবং অনেক কঠিন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। সবসময় তো আপনিও তার পাশে থাকতে পারবেন না। এজন্য আপনার উচিত শিশু যতই জেদ করুক, কান্নাকাটি করুক, খেতে না চাক – সবসময়ই স্ক্রিনকে শেষ ভরসা ভাবতে যাবেন না। বরঞ্চ আপনার শিশুকে জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে বোঝান। তাকে বোঝান যে এরকম বা তার চেয়েও পরিস্থিতি জীবনে আসবে। তখন হতাশ না হয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।

আপনার শিশুর কোনো বিপদ ঘটলে বা বিপদের আশঙ্কা থাকলে কী করবেন?

অতি সত্তর নিকটস্থ পুলিশ বা অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করুন:

  • যদি আপনার শিশু অনলাইনে কোনোরকম বিপদে পড়ে বা বিপদের আশঙ্কা করে।
  • যদি আপনার শিশু অনলাইনে কোনো রকম পর্নোগ্রাফিক ছবি বা ভিডিও পেয়ে থাকে বা কারো দ্বারা হয়রানির স্বীকার হয়।
  • অনলাইনে সাধারণ মানুষই অনেক বেশি প্রতারণার স্বীকার হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকিটা আরো বেশি থাকে। এরকম কিছু হলে অবশ্যই এই বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের সাহায্য নিন।

তাছাড়া বর্তমানে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতেই আলাদা করে সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চ আছে। বিশেষ করে শিশুদের ব্যাপারগুলো বেশি গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। তাই এরকম কিছুর স্বীকার হলে অবশ্যই তাদেরকে জানাবেন।

এই ডিজিটালাইজেশনের যুগের সাথে তাল মিলাতে হলে শিশুদেরকেও প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে। প্রযুক্তি থেকে একেবারে দুরে সরিয়ে না রেখে বরং কিভাবে এর উপকারী দিকগুলোর সুফল নেয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শিশুরা কখনো কখনো ভুল করবে। তবে তার জন্য রাগারাগি না করে শান্তভাবে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে যাতে সে ভুল থেকে সে শিক্ষা নিতে পারে।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment