গর্ভাবস্থা একেবারেই স্বাভাবিক একটি বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই একটি মেয়ে গর্ভধারণ করে। তবে এর মধ্যে আমরা না চাইলেও কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা রয়ে যায়। কোনো জটিল অবস্থা যদি গর্ভাবস্থায় থাকে, সে অবস্থার জন্য যে শিশুটি আসবে তার ওপর যদি কোনো খারাপ প্রভাব পড়ে (যেমন—বাচ্চাটা মারা যেতে পারে অথবা মৃত বাচ্চা জন্ম দিতে পারে অথবা যে শিশুটি আসবে, তার যেকোনো ধরনের অসুবিধা হতে পারে) সেটিই হলো ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা।
আশার কথা, সাধারণভাবে শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ গর্ভাবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটে সুষ্ঠুভাবে। তবে বাকি ৫ থেকে ১০ ভাগ মায়ের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে অস্বাভাবিকতা বা জটিলতা।
গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর জটিলতার কারণে মা এবং গর্ভস্থ শিশুর অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ দেখা দিলে তখন তাকে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা বলে বিবেচনা করা হয়। নিয়মিত চেকআপের (গর্ভকালীন) মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা নির্ণয় করা সম্ভব। সে জন্য এ ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা বলতে এমন নয় যে আপনি সুস্থ শিশুর জন্মি দিতে পারবেন না। তাই আশা ছাড়বেন না।
ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা কেন হয়?
“আপনি মা হতে চান” পৃথিবীতে এটা আপনার জন্য মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সাথে সাথেই দারুণ আনন্দদায়ক একটি সিদ্ধান্ত। আপনি একটি নতুন প্রাণকে পৃথিবীতে আনতে যাচ্ছেন তাই মা হবেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে মা হওয়ার জন্য আপনি কতটুকু প্রস্তুত বা শারীরিকভাবে আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ কিনা।
আপনি নিশ্চয় চাইবেন না গর্ভধারণ অবস্থায় ঝুঁকির মধ্যে পড়তে বা নিজেকে একজন ঝুঁকিপূর্ণ হবু মা হিসেবে চিহ্নিত করতে। ঘাবড়াবেন না, আপনি শারীরিক ভাবে সুস্থ নন বলে মা হতে পারবেন ব্যাপারটা এমন নয়। সমস্যা থাকলে তার সমাধানও থাকে। তাই সবার আগে আপনাকে জানতে হবে কি কি কারনে আপনার গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে আর কারন চিহ্নিত করতে পারলে প্রতিকারও করতে পারবেন।
অনেক কারনেই গর্ভাবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আপনার যদি আগের গর্ভধারণে কোন জটিলতা থাকে তবে এবারের গর্ভধারণকেও ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হতে পারে, যেমন- যদি আগেরবার প্রি-টার্ম ডেলিভারি হয়। এর মানে অবশ্য এই না যে এবারের গর্ভধারণেও একই সমস্যা হবে তবে এবারে আপনার ডাক্তার হয়ত আপনাকে নিবিড় পরিচর্যায় রাখবেন।
মায়েদের কিছু কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে গর্ভাবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তাই যদি আপনার দীর্ঘস্থায়ী কোন শারীরিক সমস্যা থাকে তবে গর্ভধারণের আগেই আপনার ডাক্তারকে জানাতে হবে। যেসব শারীরিক সমস্যার কারণে আপনার গর্ভাবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে তা হোল-
রক্তসংক্রান্ত জটিলতা
আপনার যদি রক্তে কোন সমস্যা থাকে যেমন- সিকেল সেল ডিজিজ বা থ্যালাসেমিয়া, সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চাপ আপনার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরেও বাচ্চার জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে যদি সে মায়ের এসব রোগে আক্রান্ত হয়।
কিডনির সমস্যা
কিডনি রোগে আক্রান্ত নারীদের গর্ভধারণে প্রবল সমস্যা সৃষ্টি করে। আপনি যদি নিশ্চিত হয়ে থাকেন আপনার কিডনিতে সমস্যা রয়েছে তাহলে হুটহাট গর্ভধারণ না করাই ভালো।
আপনি সিদ্ধান্ত নেন যদি যে সন্তান নিতে চান তাহলে সবার আগে নিজের শরীরকে তার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তারের পরামর্শ নেন কি করবেন আর কিভাবে নিজের আর অনাগত সন্তানের জীবন ঝুঁকির মধ্যে না ফেলেই গর্ভধারণ করতে পারেন।
কিডনিতে সমস্যা থাকলে গর্ভকালীন সময়ে আপনি সবচেয়ে বেশী যেসব ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন তা হল গর্ভপাতের আশঙ্কা, উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-এক্লাম্পশিয়া এবং প্রি-টার্ম লেবার।
আরও একটা ব্যাপার ঘটে সেটা হল কিডনি জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে আপনার ঘন ঘন ঔষধ, খাদ্যাভ্যাস ও চিকিৎসার ধরণ পরিবর্তন হতে পারে তাই উচিৎ হবে যতটা সম্ভব আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা।
উচ্চ রক্তচাপ
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ থাকা সত্ত্বেও স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ সম্ভব। তবে এর যথাযথ প্রতিকার করা না হলে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর আশঙ্কা অনেকাংশে বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ এর জন্য বাচ্চার ওজন কম হতে পারে, বাচ্চা অপরিনত হতে পারে এমনকি মায়ের আগে থেকে রক্তপাত শুরু হয়ে(প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন) বাচ্চা মারা যেতে পারে। এর ফলে প্রি-এক্লাম্পশিয়ার ঝুঁকি ও বেড়ে যায়। শুধু তাই নয় উচ্চ রক্তচাপ মায়ের হার্ট, চোখ ও কিডনির জন্য ক্ষতিকারক হয়।
সন্তান নিতে ইচ্ছুক হলে আগে চিকিৎসকের কাছে যান, চেকআপ করিয়ে নিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে আনুন। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় বেশীরভাগ মায়েরাই উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন সেক্ষেত্রে নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা ও পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহন করা ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারেন।
HIV বা এইডস
যদি মা HIV বা এইডসে আক্রান্ত হন তবে জন্মের আগে, জন্মের সময় এমনকি বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমেও তা বাচ্চার মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।আপনি যদি এইচআইভি পজেটিভ হন তাহলে আরেকবার ভাবুন আপনি সত্যিই গর্ভধারণ করতে চান কিনা!
এইচআইভির জীবাণু যদি আপনার শরীরে থাকে তাহলে এটি আস্তে আস্তে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে থাকবে। যেখানে আপনি নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে সেখানে কি আপনি আরেকটি নতুন প্রাণের রক্ষা বা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন?
এরপরেও যদি চান আপনি গর্ভধারণ করবেন তাহলে বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কারন কিছুটা হলেও আশার কথা হল কিছু কিছু ক্ষেত্রে এইচআইভি পজেটিভ নারীর গর্ভের ভ্রূণের এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা সম্ভব যদিও সেটা খুব কম সংখ্যক।
লুপাস
লুপাস বা অন্যান্য অটোইমিউন ডিজিজের কারণে প্রি-টার্ম ডেলিভারি, প্রি-এক্লাম্পশিয়া এবং কম ওজনের বাচ্চা প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গর্ভধারণের কারণে এসব রোগের মাত্রা আরও খারাপ হয়ে উঠতে পারে।
মায়ের বয়স
মায়ের বয়সের উপরও গর্ভাবস্থা কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে তা নির্ভর করে। মায়ের বয়স যদি বেশী হয় (৩৫ বা তার বেশী বয়সে প্রথম গর্ভধারণ বা ৪০ এর পরে গর্ভধারণ)বা কম হয় (১৮ বছরের আগেই গর্ভধারণ) তবে গর্ভধারণে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
মায়ের ওজন
আপনি যদি অধিক ওজনের অধিকারিণী হয়ে থাকেন তাহলে সন্তান নেওয়ার আগে ওজন কমিয়ে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। গর্ভকালীন সময় ‘বিএমআই’ বা বডি ম্যাস ইনডেক্সের পরিমান ৩০ বা তার বেশি হলে গর্ভবতী মা এবং তার সন্তানের গর্ভাবস্থায় ও জন্মের ঠিক পরপরই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে, যেমন- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ। এছাড়াও প্রসবের সময় কৃত্রিমভাবে প্রসব বেদনা তোলার এবং সিজারিয়ানেরও প্রয়োজন পরতে পারে।
থাইরয়েডের সমস্যা
মায়ের থাইরয়েডের অতিক্রিয়া (হাইপারথাইরয়েডিজম) এবং লঘুক্রিয়া (হাইপোথাইরয়েডিজম) দুটোই গর্ভাবস্থায় মা এবং বাচ্চার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে যদি তা নিয়ন্ত্রন করা না হয়। এর ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য জটিলতাগুলো হলো- গর্ভপাত, প্রি-এক্লাম্পশিয়া, কম ওজনের বাচ্চা, প্রি-টার্ম বার্থ ইত্যাদি।
টাইপ-১ বা টাইপ-২ ডায়াবেটিস
গর্ভাবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে যেমন- জন্মগত ত্রুটি, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের সন্তান অস্বাভাবিক অবস্থায় জন্মগ্রহণ করতে পারে আবার দেখা যাই যে অনেক সময় সন্তান পেটে পানি নিয়ে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে।
এছাড়াও সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব বা উচ্চ রক্তচাপের মত জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে আগে আপনাকে সেটা নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে এবং গর্ভধারণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
আর যদি গর্ভধারণের পর ডায়াবেটিস ধরা পরে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে সাথে এটা নিশ্চিত করতে হবে আপনার সন্তান এমন কোন হসপিটাল বা ক্লিনিকে জন্মগ্রহণ করবে যেখানে ভালো অবসটেট্রিশিয়ান, অ্যানেশথেটিস, নিউনেটোলজিস্ট সহ সব ধরনের উন্নত সুযোগ সুবিধা থাকে।
শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যায় নয়। আপনার কিছু বদঅভ্যাস অথবা জীবন যাপনের ধরণ গর্ভাবস্থায় ঝুঁকির কারন হতে পারে। মদ্যপান, ধূমপান বা যে কোন ধরণের নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ আপনার গর্ভধারণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নেশা জাতীয় দ্রব্য আপনার গর্ভধারণের ক্ষমতা তো হ্রাস করেই সাথে আপনার সন্তান নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পারে।
এছাড়াও অনেক সুস্থ স্বাভাবিক মায়েদের ক্ষেত্রেও গর্ভাবস্থায় প্রথম বারের মত এমন কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে যার ফলে গর্ভাবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এগুলো হলো-
জন্মগত ত্রুটি
কিছু শিশুর জন্মগত ত্রুটি হয় মায়ের কাছ থেকে। কিছু ইনফেকশন আছে, যাতে গর্ভকালীন বা জন্মদানের সময় যদি মা আক্রান্ত হন, তাহলে শিশুটি জন্মগত ত্রুটির শিকার হতে পারে। তবে এ ধরনের ইনফেকশনে মা আক্রান্ত হলেই যে গর্ভের শিশুও হবে, শতভাগ ক্ষেত্রে তা হয় না। যেমন গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে যদি মা রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তবে গর্ভের শিশুর ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মানোর ঝুঁকি থাকে।
জেনেটিক বা জিনগত কারণে বহু শিশুর জন্মগত ত্রুটি হয়। কিন্তু মা-বাবার মধ্যে এ ধরনের ত্রুটি আছে, তা আগে থেকে জানা যায় না। ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুর মা-বাবা কোনো ধরনের শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত থাকেন না। তাই অনাগত শিশুটি জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে, তা অনুমান করা যায় না।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মানে হল গর্ভ পূর্ববর্তী সময়ে ডায়াবেটিস ছিল না এমন কারো যদি গর্ভকালীন সময়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, তবে তার ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়।ডায়াবেটিস হলে গর্ভধারণের প্রথমদিকে সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি, উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-এক্লাম্পশিয়া, সন্তান পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম, ওজন অত্যাধিক বৃদ্ধি, এমনকি মায়ের পেটেই শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
এসব কারণেই গর্ভকালে ডায়াবেটিস রোগ দেখা দিলে অথবা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন মা গর্ভবতী হলে চিকিৎসাশাস্ত্রে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা বলে ধরা হয় এবং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এসব রোগিনীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়।
বাচ্চার বেড়ে ওঠায় সমস্যা
কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার যেভাবে বেড়ে ওঠা উচিত সেভাবে বেড়ে ওঠেনা। প্রতিবার চেক আপের সময় ডাক্তার সাধারনত বাচ্চার গ্রোথ পরীক্ষা করেন। কোন অস্বাভাবিকতা পেলে এক্ষেত্রে মাকে পুরো গর্ভাবস্থা জুড়ে অনিরিক্ত মনিটরিং এর রাখা হয়।
গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন
এটি একটি অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। নির্দ্দিষ্ট অনুপাতে ওজন না বাড়া হচ্ছে সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া বা মায়ের সঠিক পুষ্টির অভাব। এর মানে মাকে প্রয়োজনীয় খাবারগুলো অর্থাৎ সুষম খাবার খাওয়া একান্ত আবশ্যক।
একজন নারীর স্বাভাবিক অবস্থায় যে পরিমাণ সুষম খাবার প্রয়োজন, সেই তিনিই যখন সন্তান ধারণ করন, তখন তার চাহিদা আরও বেড়ে যায়। প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রেই খাবারটা খুবই জরুরি।
গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা সমস্যা
সাধারণত এর কোন লক্ষণ দেখা যায় না। একমাত্র স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমেই এটা ডায়াগনসিস করা সম্ভব হয়। তবে যোনিপথে রক্তক্ষরণ হলে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। গর্ভফুল সাধারণত আংশিক বা পুরোপুরি ঢেকে ফেলে জরায়ুর মুখকে।
প্রসব ব্যথা শুরুর পর জরায়ুর মুখ যখন খুলে যায়, তখন গর্ভফুল ক্রমেই সরে আসতে থাকে গর্ভাশয়ের দেয়াল থেকে। প্লাসেন্টা জনিত সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম হোল- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, প্লাসেন্টা অ্যাকরিটা ও প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন।
গর্ভাবস্থায় প্রি-এক্লাম্পশিয়া
এটি একটি অন্যতম জটিলতা। এক্ষেত্রে মায়ের মৃত্যু পর্যণ্ত হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, প্রস্রাবে প্রোটিন, ওপরের পেটে ব্যথা, বমি হওয়া, মাথা ব্যথা এবং দৃশ্যত বেশকিছু জটিলতা এসময় তৈরি হয়। গর্ভফুল বা প্লাসেন্টার কিছু সমস্যা এবং রক্ত সরবরাহের ঘাটতির কারণেও দেখা দেয় এই এক্লাম্পশিয়া।
গর্ভকালীন বিপদের পূর্বাভাস বা লক্ষণ
- গর্ভকালে ওজন প্রতি মাসে না বাড়া। প্রসবের আগে ওজন কমপক্ষে সাত কেজি বাড়া উচিত।
- চোখের পাতার ভেতরের দিক জিহ্বা, মুখমণ্ডল, হাতের তালু ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, অর্থাৎ রক্তশূন্যতা হওয়া।
- গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া।
- জরায়ুতে শিশুর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- গর্ভাবস্থায় তিন মাসের পরও বমি।
নিচের যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় প্রসবপথে রক্তপাত হওয়া।
- তীব্র মাথাব্যথা (উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ)।
- খিঁচুনি।
- প্রচণ্ড জ্বর।
গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং পরবর্তী সময়ের বিপজ্জনক সমস্যাগুলো কখনো কখনো সতর্কসংকেত ছাড়াই হঠাৎ দেখা দিতে পারে। তবুও সব দম্পতির এবং আত্মীয়স্বজনের ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভের লক্ষণ, বিপদের পূর্বাভাস ও মারাত্মক লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যেকোনো খারাপ অবস্থার জন্য আগে থেকে মানসিক ও অন্যান্য প্রস্তুতি না থাকলে সমূহ বিপদের সম্মুখীন হতে হয়।
কোথায় নিকটবর্তী মাতৃসদন হাসপাতাল বা ক্লিনিক এবং সেখানে কীভাবে, কোন পথে যেতে হয় তা-ও জেনে রাখা ভালো। যানবাহন বা অ্যাম্বুলেন্স কোথায় কীভাবে পাওয়া যায়, তা-ও খোঁজখবর নিয়ে রাখা প্রয়োজন। সে জন্য কীভাবে কোথায় যোগাযোগ করতে হয়, তা জানতে হবে। প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর, বিশেষ করে মোবাইল ফোন যদি থাকে অবশ্যই তার নম্বর জেনে নিতে হবে।
গর্ভবতী ও তার কাছাকাছি অবস্থানকারী আত্মীয়স্বজনের সচেতনতা ও প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা থেকে মা ও গর্ভস্থ সন্তানকে রক্ষা করতে পারে। তাই প্রয়োজন সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্যশিক্ষার ব্যবস্থা করা।
ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভের জটিলতা সম্পর্কে ধারণা এবং এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ মায়েদের অকালমৃত্যু, অনাগত শিশুটির করুণ অবস্থা থেকে রক্ষা করতে পারে।
আরও পড়ুন- ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা প্রতিরোধে করনীয়।
সবার জন্য শুভকামনা
[…] শুরুর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার গর্ভাবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। গর্ভবতী মায়ের শারীরিক […]
[…] শুরুর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার গর্ভাবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। গর্ভবতী মায়ের শারীরিক […]