গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। মায়ের গর্ভে ভ্রূণ বেড়ে ওঠার সাথে সাথে তার নড়াচড়াও বাড়তে থাকে এবং অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। এসময়গুলোতে আপনি তার নড়াচড়া, লাথি ছোড়া এবং মোচড়ানো অনুভব করতে পারবেন।
গর্ভাবস্থার একেবারে শেষ মাসে গর্ভের বাচ্চা অনেক বড় হয়ে যায় এবং তার নড়াচড়া করার তেমন জায়গা মায়ের জরায়ুতে থাকেনা। এ সময় গর্ভে বাচ্চার অবস্থান কেমন আছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ স্বাভাবিক প্রসবের জন্য বাচ্চাকে এ সময় মায়ের জরায়ুতে যথাযথ পজিশনে থাকতে হবে।
আপনার ডাক্তার গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের অবস্থানের উপর নজর রাখবেন বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষ মাসে। গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান বোঝানোর জন্য আলট্রাসাউন্ড রিপোর্টে বা ডাক্তারি পরিভাষায় কিছু শব্দ ব্যাবহার করা হয়, যেমন- অ্যান্টেরিয়র, পোস্টেরিয়র, ট্রান্সভার্স ও ব্রীচ।
এ বিষয়গুলো নিয়েই আজকের বিস্তারিত আলোচনা।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান কেমন হতে পারে ?
অ্যান্টেরিয়র
অ্যান্টেরিয়র পজিশনের (Anterior position) ক্ষেত্রে বাচ্চার মাথা নিচের দিকে থাকে এবং এবং তার মুখ মায়ের পিঠের দিকে ঘোরানো থাকে অর্থাৎ বাচ্চার পিঠ থাকে মায়ের পেটের দিকে।
বাচ্চার থুতনি তার বুকের সাথে লেগে থাকে এবং বাচ্চার মাথা মায়ের পেলভিসে ঢোকার জন্য তৈরি থাকে। এই পজিশনকে সাধারনত occipito-anterior বা সেফালিক প্রেসেন্টেশান বলে।
বাচ্চা যখন গর্ভাবস্থার শেষের দিকে নীচের দিকে নামতে থাকে তখন মায়ের পেলভিসে অবস্থানের সবচাইতে ভালো পজিশন হোল বাচ্চার পিঠ মায়ের পেটের দিকে থাকা।
বাচ্চা যখন এ পজিশনে থাকে তখন প্রসবের সময় তার থুতনি নীচের দিকে নামান থাকে এবং তার মাথার সবচাইতে ছোট অংশ (মাথার উপরের ভাগ) আগে বেড়িয়ে আসে।
বেশীরভাগ বাচ্চার মাথাই ৩৩-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে মাথা নিচের দিকে হয়ে যায়। অ্যান্টেরিয়র পজিশনই হোল গর্ভে বাচ্চার সবচাইতে নিরাপদ এবং আদর্শ অবস্থান।
পোস্টেরিয়র
যখন গর্ভে শিশুর মাথা নীচের দিকে থাকে কিন্ত মুখ মায়ের পেটের দিকে ঘোরানো থাকে তখন বাচ্চার এই অবস্থানকে বলা হয় occipito posterior (OP) position বা সংক্ষেপে পোস্টেরিয়র পজিশন (Posterior position)।
এ ধরনের নামকরণের কারণ হোল এ পজিশনে বাচ্চার মাথার খুলির পেছনের অংশ (the occipital bone) পেলভিসের পেছনের দিকে থাকে। এ ধরনের পজিশনকে অনেক সময় “ফেস আপ” বা “সানি সাইড আপ’ বলা হয়।
পোস্টেরিয়র পজিশনের ক্ষেত্রে গর্ভে ভ্রূণের অবস্থান অ্যান্টেরিয়র পজিশনের ঠিক উল্টো হয়। এ পজিশনে থাকলে বাচ্চার মাথা সামান্য পেছনের দিকে ঝোঁকান থাকে। ফলে বাচ্চার কপালের অংশ সবার আগে বেড়িয়ে আসে।
অনেক বাচ্চায় প্রসবের শুরুতে পোস্টেরিয়র পজিশনে থাকে। কিন্তু ঠিক জন্মানোর আগ মুহূর্তে তার অবস্থান পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।
জন্মানোর কিছুক্ষন আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বাচ্চা একের অধিকবার অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে।সাধারণত ৫-১২ ভাগ শিশু জন্মের সময় পোস্টেরিয়র পজিশনে থাকে। প্রথম বার মা হতে যাওয়া মহিলাদের মধ্যে এর হার বেশী দেখা যায়।
যদি বাচ্চা শেষ পর্যন্ত পোস্টেরিয়র পজিশনে থাকে তবে কিছু কিছু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন কন্ট্রাকশন বাড়ানোর জন্য Pitocin দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে, প্রসবে অনেক বেশী সময় লাগতে পারে।
এছাড়াও এক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তে assisted vaginal delivery বা c-section করার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। এ সব মায়েদের প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে।
পোস্টেরিয়র পজিশন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
ব্রীচ পজিশন
ব্রীচ পজিশন (Breech position) এর ক্ষেত্রে শিশুর মাথা উপরের দিকে এবং তার নিম্নাঙ্গ বা পা নিচের দিকে থাকে।প্রসবের সময় (৩৭ সপ্তাহ বা তার পরে) শতকরা প্রায় ৯৭ ভাগ শিশুর ক্ষেত্রে মাথা আগে বেড়িয়ে আসে।
ব্রীচ বেবি হলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব হয়না। ব্রীচ পজিশন সাধারণত তিন ধরনের হয়-
ফ্র্যাঙ্ক ব্রীচ (Frank breech)- এক্ষেত্রে শিশুর নিতম্ব নীচের দিকে থাকে। পা উপড়ের দিকে মাথার কাছাকাছি বাঁকানো অবস্থায় থাকে। এটাই সবচাইতে কমন ব্রীচ পজিশন।
কমপ্লিট ব্রীচ (Complete breech)- এ ধরনের পজিশনে শিশুর নিতম্ব নীচের দিকে থাকে। সেই সাথে তার পা ও হাঁটু বাঁকানো অবস্থায় নিতম্বের কাছাকাছি থাকে।
ফুটলিং ব্রীচ (Footling breech)- এই পজিশন এ শিশুর এক পা বা উভয় পা নীচের দিকে থাকে জন্মনালীর দিকে ফেরানো থাকে।
গর্ভধারণের শেষের দিকে যদি বাচ্চা ব্রীচ পজিশনে থাকে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় আসার কোন লক্ষণ না থাকে তবে আপনার চিকিৎসক আপনার অবস্থার উপর নির্ভর করে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চাকে স্বাভাবিক অবস্থানে আনার চেষ্টা করার পরামর্শ দিতে পারে। এই উপায়টিকে বলা হয় এক্সটারনাল সেফালিক ভার্শন (ECV)।
এই উপায়ে আপনার পেটে চাপ প্রয়োগ করে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়। এটি একটি নিরাপদ প্রক্রিয়া (কিছু কিছু ক্ষেত্রে জটিলতার সম্ভাবনা থাকে) তবে অবশ্যয় তা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কারো মাদ্ধমে করাতে হবে।
ব্রীচ পজিশনের ক্ষেত্রে বেশীরভাগ বাচ্চার জন্ম হয় সি-সেকশনের মাদ্ধমে। এটাই সবচেয়ে নিরাপদ বলে প্রতিষ্ঠিত।
সি-সেকশনের ক্ষেত্রে তা সাধারণত ৩৯ সপ্তাহের আগে করা হয়না যাতে এ সময়ের মধ্যে শিশু অবস্থান পরিবর্তন করলে অন্য উপায় অবলম্বন করা যায়।
সি-সেকশনের ঠিক আগে গর্ভে বাচ্চার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার জন্য আলট্রাসাউন্ড করা হয়। সি-সেকশনের প্ল্যান থাকলে যদি নির্ধারিত সময়ের আগেই আপনার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় বা পানি ভেঙ্গে যায় তাহলে অতি সত্বর হাসপাতালে যেতে হবে।
ব্রীচ পজিশন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
ট্রান্সভার্স লাই
কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুর ঘাড়, পিঠ বা হাত জন্মনালীর দিকে ফিরানো থাকে। অর্থাৎ বাচ্চা মায়ের পেটে লম্বালম্বি ভাবে না থেকে পাশাপাশি অবস্থান করে। এ ধরনের পজিশনকে বলা হয় ট্রান্সভার্স লাই (Transverse lie)।
প্রতি ৪০০ টি গর্ভধারণের ১ টিতে বাচ্চা এই অবস্থানে থাকতে পারে। যখন এমন হয় বাচ্চার পিঠ বা ঘাড় জরায়ু মুখ ঢেকে রাখে। এ ক্ষেত্রে বাচ্চা ও মায়ের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থার শুরু দিকে বাচ্চার ট্রান্সভার্স লাই পজিশনে থাকা খুবই স্বাভাবিক। শেষ ট্রাইমেস্টারের শেষের দিকে বেশীরভাগ বাচ্চাই প্রসবের জন্য উপযোগী অবস্থানে চলে আসে।
তবে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে যদি বাচ্চা মায়ের পেটে এ পজিশনে থাকে তবে শেষ পর্যন্ত বাচ্চার এভাবে অবস্থান করার সম্ভবনা বেশী।
গর্ভে বাচ্চার অবস্থান যদি এমন থাকে তবে পানি ভেঙ্গে গেলে বাচ্চার আম্বিলিকার কর্ড জন্মনালীর দিকে চলে আসে। এটা খুবই মারাত্মক হতে পারে কারণ বাচ্চার শরীর আম্বিলিকার কর্ডে চাপ প্রয়োগ করে যার ফলে কর্ডের মাধ্যমে বাচ্চার শরীরে রক্ত এবং অক্সিজেন প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়। একে প্রোলাপ্স (Prolapse) বলে। যদি এমন হয় তবে যত দ্রুত সম্ভব ডেলিভারি করতে হবে।
কর্ড প্রোলাপ্স খুবই মারাত্মক হতে পারে। তাই ট্রান্সভার্স লাই এর ক্ষেত্রে ৩৭ সপ্তাহ থেকেই হাসপাতালে অ্যাডমিশন নেয়ার পরামর্শ দেয়া হতে পারে যাতে কোন জটিলতা দেখা দিলেই দ্রুত ব্যাবস্থা নেয়া যেতে পারে।
এ কারণে ট্রান্সভার্স লাই এর ক্ষেত্রে রুটিন সিজারিয়ান করার পরামর্শ দেয়া হয় যাতে এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আগে বাচ্চা প্রসব করানো যায়।
ট্রান্সভার্স লাই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
গর্ভে বাচ্চার অবস্থান কিভাবে বোঝা যাবে?
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান নিশ্চিতভাবে জানার একমাত্র উপায় হোল আল্ট্রাসাউন্ড। তবে কিছু কিছু উপায়ে আপনি নিজেই গর্ভে বাচ্চার অবস্থান সম্পর্কে ধারনা করতে পারেন।
গর্ভধারণের সময় যত বেশী হবে তত বেশী বাচ্চার অবস্থান ভালোভাবে বোঝা যাবে। তারপরও এর মাধ্যমে নির্ণয় করা অবস্থান নির্ভুল নাও হতে পারে।
বাচ্চার মাথা নিচের দিকে থাকলে
যদি মায়ের পেটের উপরিভাগে বাম বা ডান পাশে মাংস পিণ্ডের মত ফুলে থাকে তবে তাতে হালকাভাবে চাপ দিন। যদি মনে হয় বাচ্চার পুরো শরীর নড়ে উঠছে তবে তার মানে হতে পারে বাচ্চার মাথা নিচের দিকে নামানো আছে।
এর কারন, আপনি যে স্থানে চাপ দিয়েছেন সেটা বাচ্চার নিম্নাংশ যা মাথার মত স্বাধীনভাবে নড়াচড়া করতে পারেনা। তাই আপনি তাতে চাপ দিলে বাচ্চার পুরো শরীর নড়ে উঠবে।
বাচ্চার এরকম অবস্থানের ক্ষেত্রে আপনি আপনার নাভীর নিচের দিকে বাচ্চার হেঁচকি টের পাবেন।
এছারাও আরও কিছু নড়াচড়া খেয়াল করলে গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে আছে সে সম্পর্কে আপনি ধারনা করতে পারবেন।
বাচ্চা যদি অ্যান্টেরিয়র অবস্থানে থাকে তবে আপনি আপনার পাঁজরের নিচের দিকে তার নড়াচড়া বুঝতে পারবেন। আপনার নাভী বাইরের দিকে বের হয়ে থাকতে পারে।
বাচ্চা যদি পোস্টেরিয়র পজিশনে থাকে তবে আপনি পেটের সামনের দিকে মাঝ বরাবর তার লাথি টের পাবেন। এক্ষেত্রে মায়ের পেট গোলাকার না হয়ে অনেকটা সমান মনে হয়।
তবে মনে রাখতে হবে মায়ের প্লাসেন্টা যদি জরায়ুর সামনের দিকে থাকে অর্থাৎ অ্যান্টেরিয়র প্লাসেন্টা হয় তবে পেটের সামনের দিকে বাচ্চার নড়াচড়া তেমন একটা বোঝা যায়না।
বাচ্চার মাথা উপরের দিকে বা ব্রীচ পজিশনে থাকলে-
বাচ্চা যদি ব্রীচ পজিশনে থাকে তবে তার পায়ের অবস্থান এবং সে কোন দিকে ফিরে আছে তার উপর নির্ভর করে আপনার ভিন্ন ভিন্ন অনুভুতি হতে পারে।
যদি বাচ্চার পা উপরের দিকে তার কানের দিকে ওঠানো থাকে (ফ্র্যাঙ্ক ব্রীচ), তবে আপনি তার নড়াচড়া আপনার পাঁজরের দিকে অনুভব করবেন।
যদি তার পা ও হাঁটু বাঁকানো অবস্থায় নিতম্বের কাছাকাছি থাকে (কমপ্লিট ব্রীচ) তবে আপনি তার লাথি আপনার পেটের নিচের দিকে নাভীর নিচে টের পাবেন।
আপনি হয়ত আপনার পাঁজরের নিচে শক্ত, গোলাকার মাংসপিণ্ডের মত অনুভব করবেন যা খুব বেশী একটা নড়াচড়া করবেনা। এটা আপনার বাচ্চার মাথা। এক্ষেত্রে আপনার বেশ অস্বস্তি লাগতে পারে।
বাচ্চা যদি ব্রীচ পজিশনে থাকে এবং মায়ের পিঠের দিকে ফিরে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি হয়ত তেমন একটা নড়াচড়া বুঝতে পারবেন না।
এছারাও গর্ভাবস্থার শেষের দিকে স্টেথেস্কোপের সাহায্যে বাচ্চার হার্টবিট বোঝা যেতে পারে। যদি মায়ের পেটের নিচের দিকে বাচ্চার হার্টবিট ভালোভাবে বোঝা যায় তাহলে বাচ্চার মাথা নিচের দিকে আর যদি মায়ের নাভী বরাবর বা তার উপরে বাচ্চার হার্টবিট ভালো শোনা যায় তবে তার মাথা উপরের দিকে থাকার সম্ভাবনা বেশী।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান ঠিক রাখার জন্য কি করা যেতে পারে?
আমরা সবাই জানি সারাক্ষন শুয়ে বসে থাকা স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণের জন্য ক্ষতিকর। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে গর্ভকালীন সময়ে হালকা ব্যায়াম করুন বা গৃহস্থালির হাল্কা কাজকর্ম করুন। তাছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে-
- যখন বসবেন পেলভিস সামনের দিকে রাখার চেষ্টা করবেন। ঝুঁকে বসবেন না যাতে পেলভিস পেছনের দিকে থাকে। সব সময় মনে রাখবেন বসার সময় যাতে হিপ আপনার হাঁটুর উপরে থাকে।
- মাঝে মাঝে হাত এবং হাঁটুর উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে থাকুন( ঘর মোছার ভঙ্গিতে) । এর ফলে বাচ্চার মাথার পেছনের অংশ আপনার পেটের দিকে ঘুরে যেতে পারে।
- যদি আপনি কর্মজীবী মহিলা হন এবং অনেক বেশী সময় ধরে বসে থাকতে হয় তবে কিছুক্ষন পর পর হাঁটার অভ্যাস করুন।
- গাড়িতে বসার সময় সীটে একটি কুশন দিয়ে রাখতে পারেন যাতে আপনার হিপ উপরের দিকে থাকে।
আপনি যখন শুয়ে থাকবেন তখন গর্ভে বাচ্চার অবস্থান নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ এ সময় পেলভিসে বাচ্চার উপর কোন চাপ পড়েনা। তবে চিত হয়ে শোওয়ার চাইতে পাশ ফিরে শোওয়া গর্ভাবস্থার শেষের দিকে উপকারী।
পরিশিষ্ট
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান খুব ঘনঘন পরিবর্তিত হয়। আপনি হয়ত তার নড়াচড়া দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত টেরই পাবেন না। তবে সাধারনত ৩৬ সপ্তাহ নাগাদ বাচ্চা ডেলিভারির জন্য আদর্শ অবস্থানে চলে আসে।
এর আগে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান নিয়ে তেমন একটা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। পোস্টেরিয়র বাচ্চার ক্ষেত্রে প্রসবের আগ মুহূর্তে অ্যান্টেরিয়র পজিশনে চলে আসাও স্বাভাবিক। তাই এসময় শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
সবার জন্য শুভকামনা।
যে প্রশ্নগুলো নিয়মিত করা হয়ে থাকে
গর্ভে বাচ্চা কোন নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকেনা। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে ভ্রূণ যখন ছোট থাকে তখন সে নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। পরবর্তীতে যখন ভ্রূণের আকার বৃদ্ধি পায় তখন বাচ্চা উপরে উল্লেখিত যে কোন অবস্থানে থাকতে পারে।
বাচ্চার জেন্ডারের উপর মায়ের গর্ভে তার অবস্থানের কোন সম্পর্ক নেই।অনেক ক্ষেত্রেই শোনা যায় যেহেতু ছেলে শিশুর পেনিস থাকে এবং সে কারণে ছেলে শিশু মধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা বেশী আকৃষ্ট হয় এবং নীচের দিকে নেমে যায়। এটাও ভুল ব্যাখ্যা।
গবেষণায় দেখা গেছে বাচ্চার আকার যদি ছোট হয় তবে তার অবস্থান মায়ের পেলভিসের নীচের দিকে থাকে এবং বাচ্চার আকার যদি বড় হয় তবে তার অবস্থান উপরের দিকে থাকে। এর সাথের শিশুর যৌনাঙ্গের কোন সম্পর্ক নেই।
এছাড়াও প্রথম বার গর্ভধারণের সময় বেশীর ভাগ মায়েরই শারীরিক গঠন ভালো থাকে এসময় মায়ের পাকস্থলীর মাংশপেশী অনেকটা দৃঢ় থাকে। ফলে প্রথমবার গর্ভধারণে শিশু উপরের দিকে থাকতে পারে। প্রতিবার গর্ভধারণের সাথে সাথে পাকস্থলীর মাংশপেশী নমনীয় হতে থাকে যাতে পরের গর্ভধারণে বাচ্চার অবস্থান নীচের দিকে নেমে যেতে পারে।