গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ বা জার্নি কতটুকু নিরাপদ ?

Spread the love

গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ নিষিদ্ধ না হলেও ভ্রমণকালীন সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে মায়ের ও শিশুর শরীরের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস ভ্রমণ করা উচিত নয়, কারণ এ সময় গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থায় ডাক্তাররা ভ্রমণ না করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

গর্ভকালীন কোন জটিলতা না থাকলে গর্ভাবস্থায় ভ্রমনে তেমন কোন বিধিনিষেধ নেই। তবে গর্ভাবস্থায় দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আদর্শ সময় হোল দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার। কারণ এ সময় গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও এ সময় মর্নিং সিকনেসের উপসর্গও কমে আসে।

বিজ্ঞাপণ

প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস কোন বাস, বা দুরের জার্নি করা উচিৎ না। কারন আমাদের যেরকম রাস্তা সেটাতে অনেক ঝাকি খেতে হয়, সেটা মায়ের জন্য বিপদজনক হতে পারে। যদিও সবার ক্ষেত্রে হয় না, তাও একটা সুযোগ রয়ে যায়।

প্রথম ৩ মাস, শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বাচ্চা এই সময় ভ্রুন অবস্থায় থাকে, এবং এই সময়ের তার অন্ত্র তৈরি হতে থাকে, জরায়ুর গায়ে ফুল লাগতে থাকে, ফুলের বৃদ্ধি ঘটে থাকে। যেটা বাচ্চার জন্য খাদ্য প্রদান করে থাকে।তাই এই সময়টা বাচ্চার বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে ছোট্ট একটা ভুল বড় সমস্যার রুপ নিতে পারে।

আর শেষের তিন মাসে, অতিরিক্ত ঝাকুনির ফলে সময়ের আগেই প্রসব যন্ত্রণা, প্রি-ম্যাচিউর কন্ট্রাকশন, প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন ইত্যাদি হতে পারে। তাই এই সময়গুলোতে পারত পক্ষে দুরের যাত্রা না করাই ভালো। প্রেগন্যান্সির এই সময়ে কোথাও যাবার আগে খেয়াল রাখতে হবে যেন আপনি আরামদায়ক অবস্থায় জার্নি করতে পারেন।

যদি সম্ভব হয় সাথে ছোট বালিশ নিতে পারেন যাতে আরামদায়কভাবে বসতে পারেন. সাথে অবশ্যই পানি এবং হালকা খাবার নিবেন। যদি অনেক দূরের কোনো রাস্তায় যান তাহলে একবারে না গিয়ে মাঝখানে কিছুক্ষন থেমে নেয়া ভালো , তখন নেমে কিছুক্ষন হেটে নিতে পারেন।

গাড়িচালককে অবশ্যই আপনার ব্যাপারে অবহিত করবেন , যাতে সে সাবধানে গাড়ি চালাতে পারে। যে কোনো সুস্থ প্রেগন্যান্সিতে জার্নি করা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার , কিন্তু শারীরিক কোনো সমস্যা না থাকলে এতে কোনো অসুবিধা হবার কথা না।

যেসব ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের ভ্রমণ করা উচিত নয়

একজন গর্ভবতী নারীর তার এবং তার গর্ভস্থ সন্তানের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ যত্নবান হওয়া একান্ত কর্তব্য। ভ্রমণ অনেকের জন্য আনন্দদায়ক হলেও সকল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য তা সুখকর নাও হতে পারে।অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরই অভিমত, গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে নানা জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে-

গর্ভপাতের কোন পূর্ব ইতিহাস থাকলে

যেসব গর্ভবতী নারীর পূর্বে কোন গর্ভপাতের ইতিহাস আছে বা বার বার গর্ভের বাচ্চা মরে যাওয়া বা মৃত বাচ্চা প্রসব করার কোনো অতীত ইতিহাস আছে, চিকিৎসকগণ সেসব মহিলাদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেন। কারণ ভ্রমণের কারণে অনেক সময় গর্ভপাত হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

গর্ভে যদি একাধিক সন্তান থাকে

যমজ সন্তান হওয়া স্বাভাবিক একটি ঘটনা হলেও যমজ সন্তান ধারন করলে গর্ভবতী মাকে একটু বাড়তি সাবধানতা গ্রহন করতে হয়। এসকল মায়ের এনিমিয়া, প্রি-এক্লাম্পসিয়া, এন্টিপারটাম হেমোরেজ,  প্রিটার্ম লেবার সহ নানাবিধ সমস্যা হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে। তাই গর্ভে এক বা একাধিক সন্তান থাকলে কোন ধরনের জার্নি করা নিরাপদ নয়।

অপরিণত শিশু জন্মদানের ইতহাস থাকলে

যেসব গর্ভবতী নারীর প্রিম্যাচিউর বেবির জন্ম দেয়ার ইতিহাস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় জার্নি করা ঝুঁকিপূর্ণ। একটা অপরিণত শিশুর জন্মের পরবর্তী গর্ভধারণেও একই ধরনের শিশু জন্মের ঝুঁকি দেখা দেয়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মহিলারা পূর্বে অপরিণত শিশুর জন্ম দিয়েছেন, তাদের আবারো একই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসব নারীদের ক্ষেত্রে ভ্রমণ বিপদজনক।

যেসব গর্ভবতী মহিলার উচ্চ রক্তচাপ থাকে

গর্ভাবস্থায় কারো কারো উচ্চ রক্তচাপ হয়। সাধারণত গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের পরে এ সমস্যা দেখা দেয়। এ ধরনের উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় প্রেগনেন্সি ইনডিউজ হাইপারটেনশন।

উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা বেশী থাকলে গর্ভবতী নারীর দেহে নানা সমস্যা তৈরি হয়। এর ফলে গর্ভধারণে ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। এই অবস্থায় সেসব গর্ভবতী নারীদের ভ্রমণ করা উচিত নয়।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস

গর্ভাবস্থায় অনেকেরই ডায়াবেটিস হতে দেখা যায়। আবার অনেকে গর্ভধারণের পূর্বেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যেটাই হোক না কেন গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা মা ও শিশু উভয়ের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক ওজনের মায়ের শেষের দিকে ১০ থেকে ১১ কেজি ওজন বাড়ে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে ওজন আরো বেড়ে যাবে। বাচ্চাও বেশি বড় হয়ে যাবে। যেহেতু একটি ভারী শিশুকে মা বহন করছে তাই পানি ভেঙে যেতে পারে। যদি কোনো কারণে পানি ভেঙে যায় তবে শিশুর ক্ষতি হওয়ার একটি আশঙ্কা থাকে। একারণে এসময়টা জার্নি একদমই নিরাপদ নয়।

গর্ভাবস্থায় এক্লাম্পশিয়ার ইতিহাস

গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের-ই খিচুনি হতে দেখা যায়, বিশেষ করে প্রসবের আগে এমন খিচুনি উঠার কারণে অনেক মা এবং শিশুকেও অঘোরে প্রাণ হারাতে হয়। এক্লাম্পসিয়া গর্ভবতী মায়ের এমনই একটি খিচুনি জাতীয় রোগ। কোন গর্ভবতী নারীর গর্ভাবস্থায় এক্লাম্পশিয়ার পূর্ব ইতিহাস যদি থাকে সেসব ক্ষেত্রে ডাক্তাররা জার্নি করতে নিরুৎসাহিত করেন।

গর্ভাবস্থায় প্রি-এক্লাম্পশিয়ার ইতিহাস 

গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর প্রি-এক্লাম্পসিয়া রোগটি দেখা দেয়। প্রিএক্লাম্পসিয়া  হলে ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ তো বেড়ে যায়-ই সেই সাথে পায়ে পানি আসতে শুরু করে, অস্বাভাবিক হারে শরীরের ওজন বাড়তে থাকে।

সাথে মাথা ব্যথা করা, ঘুম না আসা, উপরের পেটে ব্যথা করা, বমি করা বা বমি বমি ভাব লাগা, প্রসাবের পরিমাণ কমে আসা, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি নানাবিধ উপসর্গ দেখা দেয়। এ অবস্থায় ভ্রমণ কোন অবস্থাতেই নিরাপদ নয়।

হাইপারেমেসিস গ্রাভিডেরাম 

অনেক গর্ভবতী মহিলাকে দেখা যায় গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত বমি করতে। এধরনের উপসর্গকে বলে হাইপারেমেসিস গ্রাভিডেরাম।হাইপারেমেসিস গ্রাভিডেরাম স্বল্পমাত্রার বা তীব্র মাত্রার হতে পারে। এক্ষেত্রে মায়ের স্বাস্থ্যের চরম অবনতি হতে দেখা যায় । এধরনের উপসর্গ থাকলে ভ্রমণ করা একদমই উপযুক্ত নয়।

প্ল্যাসেন্টাল অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে

গর্ভাবস্থায় কোন নারীর গর্ভের ফুল বা প্লাসেন্টা যদি জরায়ুর একদম নীচের দিকে বা জরায়ু মুখে লেগে থাকে তাহলে অনেক সময় প্রসবের রাস্তায় রক্ত যেতে পারে। এর নামই প্লাসেন্টা প্রিভিয়া। এমনটি হলে হঠাৎ করেই রক্তপাত শুরু হয়। এক্ষেত্রে রক্তপাতের সময় কোনো ব্যথা অনুভুত হয় না।

প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হলে বাচ্চার মাথা সাধারণত সঠিক অবস্থানে থাকেনা, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই মাথা উপরের দিকে বা আড়াআড়ি থাকতে দেখা যায়। রোগী অনেক সময়ই রক্তশূন্যতায় ভোগে এবং অনেক সময় শকেও চলে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা জার্নি করতে নিষেধ করেন।

এছারাও প্লাসেন্টা জনিত যে কোন সমস্যা, যেমন- প্লাসেন্টা অ্যাকরিটা বা প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশনের খেত্রেও ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়।

রক্তক্ষরণের ইতিহাস

নানা কারণে গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ হতে পারে। পুরো গর্ভাবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করলে প্রথম তিন মাস, মাঝের তিন মাস ও শেষের তিন মাসের যে কোনো সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে। যেসব গর্ভবতী মহিলার পূর্বে গর্ভধারণে এ সমস্যা ছিল তাদের জন্য ভ্রমণ করা একদমই উচিত নয়।

গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ নিরাপদ করবেন কিভাবে? 

ভ্রমণ যতই আনন্দদায়ক হোক না কেন একজন গর্ভবতী মহিলার পক্ষে তা শারীরিক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। ফলে এ সময়ে ভ্রমণের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। জেনে নিন এই সময় ভ্রমণের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখার মতো কিছু বিষয়।

চিকিৎসকের মতামত নেয়া

ভ্রমণে কোথাও যাবার সিদ্ধান্ত নিলেই চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া উচিত। তাঁর কথা ও পরামর্শ মতো চললে একজন গর্ভবতী নারী নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারবেন ও ডাক্তারের কথামতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সহজ হয়। ডাক্তার পরামর্শ না দিলে ঝুঁকি নিয়ে ভবিষ্যৎ সন্তানের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা একদমই উচিত হবে না।

বিজ্ঞাপণ

চেকআপ সেরে নেয়া

ভ্রমণে যাওয়ার আগেই একজন গর্ভবতী নারীকে তাঁর নিয়মিত চেকআপ,আল্ট্রাসনোগ্রাম, গ্লুকোজ স্ক্রিনিং টেস্ট সব কিছু সেরে ফেলা উচিত। চেকআপের রেজাল্ট দেখে চিকিৎসকেরা যে পরামর্শ দিবেন তার ব্যবস্থা নিয়ে তবেই ভ্রমনে যাওয়া উচিত।

সঙ্গে রাখুন হেলথ রিপোর্ট

একজন গর্ভবতী নারীকে নিজের সর্বশেষ স্বাস্থ্যের অবস্থা ও সব ধরণের চেকআপের রিপোর্ট, প্রেসক্রিপশন ভ্রমনকালীন সময়েও সাথে নিয়ে রাখা উচিত। প্রয়োজনের সময় এগুলো কাজে লাগতে পারে। তাছাড়া কোন কারনে ইমার্জেন্সিতে হাসপাতালে নিতে হলে মেডিকেল কাগজপত্র থাকলে চিকিৎসায় সুবিধা হবে। তাই সবসময় এসব প্রয়োজনীয় হেলথ রিপোর্ট হাতের কাছে রাখার ব্যাপারে ভুলে যাবেন না।

প্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত ঔষধ  সঙ্গে রাখা

ভ্রমনকালীন সময়ে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র লাগেজের সাথে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো হয় যতদিন বাইরে থাকবেন সে হিসাব করে তার অতিরিক্ত ঔষুধ সঙ্গে রাখা। তাছাড়া অনেকের ভ্রমণে বমি হয়।

গর্ভাবস্থায় বমি হওয়াটা স্বাভাবিক।আবার অনেকের মাইগ্রেন এবং রাস্তার ধূলাবালিতে সমস্যা থাকে।গর্ভাবস্থায় সব ধরনের ঔষধ সেবন করা যায় না।তাই ডাক্তারকে নিজের সমস্যার কথা বলে প্রয়োজন মত ঔষধ সাথে রাখাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ।

লাগেজের ব্যাপারে সতর্ক থাকা

গর্ভাবস্থায় ভারী লাগেজ বহন করা একদমই উচিত নয়।ভ্রমণের সময়  লাগেজ গোছানোর ব্যপারে সতর্ক থাকা উচিত। লাগজে যতটুকু সম্ভব হালকা রাখা উচিত। ভ্রমণের ব্যাপারে আপনার পার্টনার বা কোন সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তা নিন যাতে লাগেজ বহনের ক্ষেত্রে আপনার শরীরে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।

পোশাক পরিধানের ব্যপারে সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে। ফলে গর্ভবতী নারীর একটু বেশি গরম অনুভূত হতে পারে।তাই ভ্রমনের সময় আরামদায়ক কাপড় পরিধান করা এবং আরামদায়ক জুতা পরা উচিত। গর্ভাবস্থায় সবসময় একটু ঢিলাঢালা হালকা পোশাক শরীরের জন্য ভালো। ভ্রমনে তাই পছন্দ মত ঢিলাঢালা পোষাক বেছে নিন।

ভ্রমণে খাবারের ব্যাপারে  লক্ষ্য রাখা

গর্ভাবস্থায় বাইরের খাবার একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। বাইরের খাবার খেলে ফুড পয়জনিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা গর্ভাবস্থায় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভ্রমণের সময় বাসা থেকেই শুকনো খাবার বা স্ন্যাক্সজাতীয় খাবার নিয়ে আসা উচিত।তার সঙ্গে রাখা উচিত খাবার উপযোগী বিশুদ্ধ পানি।

ভ্রমণকালীন বিরতিতে হাঁটা চলার মাধ্যমে স্বাভাবিক থাকা

জার্নির সময় অনেকসময় ধরে ধরে বসে থাকার কারনে পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরে। ফলে অনেকসময় পায়ে অসাড়তা আসে।ফলে গর্ভাবস্থায় অনেকক্ষণ একস্থানে বসে থাকায় পায়ে পানি এসে পা ফুলে যেতে পারে। এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ একস্থানে বসে থাকলে রক্তচলাচল কমে যায়। তাই সম্ভব হলে যাত্রা বিরতিতে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করে নিন। এতে রক্তচলাচল স্বাভাবিক থাকবে।

গাড়িতে ভ্রমণের সময়

গর্ভবতী নারীর জন্য নিজস্ব ট্রান্সপোর্টে ভ্রমণ বেশ সুবিধাজনক। ড্রাইভার যাতে গাড়ি ধীরে চালায় সে ব্যাপারে আগে থেকে নির্দেশ দেয়া উচিত।  কারণ ভাঙা রাস্তায় জোড়ে গাড়ি চালালে গর্ভবতী নারীর সমস্যা হতে পারে।

অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে পেট এবং বাচ্চার উপর চাপ পরে ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থার সুবিধা হল যে কোন সময় রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। নিজস্ব ট্রান্সপোর্টে ভ্রমণের সময় যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে:

  • গাড়ির সিট বেল্ট বাঁধা। সিট বেল্ট বাঁধার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে তা যেন সবসময় পেটের নীচে থাকে। কোন ভাবেই যাতে সিট বেল্ট পেটের উপর চাপ প্রয়োগ না করে।
  • ব্যাক পেইন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সিটের মধ্যে ছোট বালিশ বা কুশন জাতীয় কিছু রাখুন।
  • কিছুক্ষণ পর পর পা উপর-নীচ করে পায়ের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে।
  • গরমের দিনে বমি ভাব এড়াতে বেশি করে পানি বা তরল জাতীয় খাবার খান।

বিমানে ভ্রমণ

গর্ভাবস্থায় বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। সাধারণত যাদের নির্দিষ্ট সময়ের আগে গর্ভপাত হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে কিংবা শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে বিমান ভ্রমণ নিরুত্সাহিত করেন চিকিৎসকরা।

গর্ভাবস্থায় বিমানযাত্রার সবচেয়ে নিরাপদ সময় ৩৭ সপ্তাহের আগে, আর যমজ বা একাধিক সন্তান ধারণ করলে ৩২ সপ্তাহের আগে। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব অবসেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস সম্প্রতি এই পরামর্শ দিয়েছে।

ব্রিটিশ চিকিৎসকেরা আরও বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ না হলে এই অবস্থায় বিমানযাত্রা ক্ষতিকর নয়, তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। বিমানযাত্রায় সব যাত্রীই সামান্য মাত্রায় তেজস্ক্রিয়তার শিকার হতে পারেন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় বিমানে চড়ার কারণে গর্ভপাত, সন্তানের আগাম জন্ম কিংবা গর্ভের পানি ভেঙে যাওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।

গর্ভাবস্থায় বিমানযাত্রার জন্য বিভিন্ন এয়ারলাইনসগুলোর নিজস্ব নীতিমালা আছে। গর্ভধারণের ২৮ সপ্তাহ পার হয়ে গেলে বিমানযাত্রার জন্য অনেক এয়ারলাইনসকেই চিকিৎসকের ছাড়পত্র সরবরাহ করতে হয়।

বিমানযাত্রায় গর্ভবতী নারীদের কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। প্রথমত ঢিলেঢালা পোশাক ও আরামদায়ক জুতা-মোজা পরে বিমানে চড়া। প্রতি ৩০ মিনিট পর পর একটু হাঁটাচলা করা, এ জন্য প্রয়োজনে বিমানবালাদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া নিজের আসনে বসেই হাত-পা নড়াচড়া করে হালকাভাবে ব্যায়াম করা।

এছাড়া, গর্ভাবস্থায় বিমানযাত্রা করতে হলে অবশ্যই প্রসবের সম্ভাব্য তারিখসহ চিকিৎসকের পরামর্শপত্র, গর্ভধারণের যাবতীয় তথ্যসংবলিত কাগজপত্র এবং সঙ্গে কী কী ওষুধ আছে, সেসবের আলাদা তালিকা কাগজে লিখে রেখে হাতব্যাগে রাখা উচিত।

গর্ভাবস্থার কিছু পরিস্থিতিতে বিমানযাত্রা না করার সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান প্রসবের ঝুঁকিতে থাকলে, বেশি মাত্রায় রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত থাকলে, সিকেল সেল রোগ (এসসিডি) থাকলে, কিছুদিনের মধ্যেই মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকলে কিংবা হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসের জটিলতায় ভুগতে থাকলে গর্ভাবস্থায় বিমানযাত্রা না করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ভ্রমণের সময়

পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ক্ষেত্রে বাসের একদম পেছনের দিকের সিট কিংবা ট্রেনের একেবারে পেছনের দিকের বগিতে অনেক বেশি ঝাঁকি অনুভূত হয়। তাই গর্ভবতী নারীদের উচিত টিকেট করার সময়ে এ বিষয়টি খেয়াল রাখা।

গর্ভাবস্থায় এসি বগি বা স্লিপারি কোচে ভ্রমণ করা ভালো। কারণ এসিযুক্ত বগিতে হাঁটাচলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে, ঝাঁকি কম হয় এবং গরমের দিনে শরীরও খারাপ হবে না। যাত্রাকালীন সময় বা গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পর যথাসম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলূন। আপনার লাগেজ বহনের জন্য আপনার সঙ্গী বা কোন কুলির সাহায্য নিন।

নৌ ভ্রমণের সময়

গর্ভাবস্থায় নৌ ভ্রমণের সময় আপনার সী সিকনেস হতে পারে যার কারনে বমি, মাথা-ব্যথা, মন খারাপ হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ সঙ্গে রাখুন।নৌযানে ভ্রমণের সময়ে আারামদায়ক কেবিন ভাড়া করুন।রাত্রিকালীন সময়টা ডেকে বা খোলা হাওয়ায় না থাকায় ভালো। ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশুদ্ধ খাবার পানি সঙ্গে রাখুন। সী-ফুড যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন্। পিচ্ছিল জায়গা এড়িয়ে চলুন।

যেসব যানবাহন এড়িয়ে চলা উচিত

গর্ভাবস্থায় মোটর সাইকেলে, রিক্সা কিংবা কোন ঝুঁকিপূর্ন যানবাহনে দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়া একেবারেই উচিত না। তাই গর্ভাবস্তায় টু-হুইলের যানবাহনে ভ্রমন করার ঝুঁকি নিবেন না একদমই।

পরিশিষ্ট

সতর্কতা মেনে চলার মাধ্যমেই আপনি গর্ভকালীন ভ্রমণকে করে তুলতে পারেন নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক। আপনার জার্নি নিরাপদ ও সুন্দর হোক।

সবার জন্য শুভকামনা।

তথ্যসূত্রঃ

Supermombd
Prothom-Alo
Babycenter


Spread the love

Related posts

2 Thoughts to “গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ বা জার্নি কতটুকু নিরাপদ ?”

  1. […] গর্ভাবস্থায় ভ্রমণের বিষয়ে বিস্তারতি …। […]

Leave a Comment