ইনফ্লূয়েঞ্জা নামটি আমরা সকলে কমবেশি জানি৷ সাধারণভাবে তা ফ্লু নামে পরিচিত৷ সাধারণত অর্থোমাইক্সোভিরিডাএ ভাইরাসগুলো থেকেই এই ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু হয়ে থাকে৷ শীতকালে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।
এটি ভাইরাসজনিত একটি রোগ; তবে সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে আলাদা।অনেকেই ফ্লুকে সাধারণ সর্দি কাশি ভেবে ভুল করেন। যদিও দুটোর লক্ষন দেখতে অনেকটা একই রকম কিন্তু ফ্লু অনেক বেশী ভয়ের কারণ হতে পারে বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়।
গর্ভাবস্থায় ফ্লু কেন বিপদজনক?
গর্ভাবস্থায় স্বভাবতই গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই এ সময় এমনিতেই রোগ বালাই হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। এ সময় মায়েরা সহজেই সর্দি কাশি, ফ্লু বা অন্নান্য ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। গর্ভাবস্থায় ফ্লু হলে অন্যদের তুলনায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি অনেক বেশী থাকে। গর্ভাবস্থায় ফ্লু খুব দ্রুত মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে, যেমন নিউমোনিয়া।
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় ফ্লু এর কারণে সময়ের আগে প্রসব যন্ত্রণা বা বাচ্চা প্রসবের কারণ হতে পারে। এমনকি এর কারণে বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি এবং আরও বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যদিও বেশীর ভাগ গর্ভবতী মহিলাদের ফ্লু এর কারণ তেমন কোন জটিলতা দেখা দেয়না তারপর যেহেতু এতে ঝুঁকি বেড়ে যায় তাই সাবধান থাকা প্রয়োজন।
ফ্লু এর লক্ষনগুলো কি কি?
ইনফ্লুয়েঞ্জার বা ফ্লুয়ের লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, খুসখুসে কাশি, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, বমি, দুর্বলতা ইত্যাদি। সাধারণ সর্দি-কাশির চেয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণগুলো গুরুতর। নিচের লক্ষনগুলো দেখে দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে-
- শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা বা দম বন্ধ অনুভুতি
- মিউকাসের সাথে রক্ত আসলে
- বুকে বা পেটে ব্যাথা বা চাপ অনুভব করলে
- মাথা ঘোরার অনুভুতি হলে
- অনবরত বমি হতে থাকলে
- বাচ্চার নড়াচড়া কমে গেলে বা টের না পেলে।
- শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশী থাকলে বা ওষুধে না কমলে।
ফ্লু কিভাবে ছড়ায়?
ফ্লু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি কথা বলার সময় বা হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় এই ফ্লু ভাইরাস বাতাসে ক্ষুদ্রাকারে ভেসে বাড়াতে থাকে। এই ভাইরাস সরাসরি অন্য কোনো ব্যাক্তির শরীরে প্রবেশ করতে পারে। অথবা এই ভাইরাস যদি কোনো বস্তুর উপর থাকে তবে ঐ বস্তু স্পর্শ করার মাধ্যমে তা নাকে, চোখে বা মুখে পৌঁছাতে পারে।
এটি খুবই ছোঁয়াচে এবং এর উপসর্গ দেখা দেওয়ার দিন থেকে শুরু করে পাঁচ থেকে দশ দিন পর্যন্ত এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের মধ্যে এই ভাইরাস আরও দ্রুত ছড়ায়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। যদি কারো আগে একবার এ রোগ হয়ে থাকে, তবে তা পরবর্তীতে এই রোগ প্রতিরোধের জন্য শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়ে যায়। যদি পূর্বের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এবং পরবর্তীতে আক্রান্ত হওয়া ভাইরাস এক হয় তবেই আগের তৈরি হওয়া এন্টিবডি এর বিরুদ্ধে কাজ করে। নতুন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই এন্টিবডি কাজ করে না।
গর্ভাবস্থায় ফ্লু এর চিকিৎসা
গর্ভাবস্থায় ফ্লু এর লক্ষন দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এ সময় জ্বর কমানোর জন্য সাধারণত Acetaminophen খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
মাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। পাশাপাশি বেশি বেশি পানি পান করতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। খুব কম ওষুধই গর্ভাবস্থায় নিরাপদ। তাই যেকোন ধরনের ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে।
আপনার চিকিৎসক আপনার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের পরামর্শ দিতে পারেন। এটি ট্যাবলেট, সিরাপ বা ইনহ্যালের হতে পারে যা আপনার শরীরে ভাইরাস কে বাড়তে বাধা দেয়। সাধারণত লক্ষন দেখা দেয়ার দু দিনের মধ্যে অ্যান্টিভাইরাল শুরু করলে তা বেশী কার্যকর। তবে গর্ভবতী মায়েদের এর পরেও অ্যান্টিভাইরাল শুরু করার পরামর্শ দেয়া হয়।
অ্যান্টিভাইরাল সাধারণত গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য নিরাপদ। এর তেমন কোন মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ফ্লু কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি সংক্রামক রোগ হওয়ায় এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রেখে ইনফ্লুয়েঞ্জা-ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা যায় ।
ফ্লু এর প্রতিষেধক নিন। এ প্রতিষেধক গর্ভাবস্থায় নিরাপদ। গর্ভধারণের যে কোন সময় এটি নেয়া যেতে পারে তবে ফ্লু সিজন এর শুরুতে নেয়া ভালো। ফ্লু এর ভাইরাস প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। তাই প্রতিবছরই এর প্রতিষেধক পরিবর্তিত হয়। তাছারা একবার প্রতিষেধক নিলে তা সাধারণত বছর খানেক কার্যকর থাকে। তাই প্রতিবছরই তা নেয়া উচিত।
এ প্রতিষেধক এর আরেকটি উপকারিতা হোল এটি নিলে আপনার গর্ভের শিশুরও ফ্লু প্রতিরোধ ব্যাবস্থা গড়ে ওঠে যা জন্মের ছয় মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
আক্রান্ত ব্যাক্তির কিছুক্ষন পর পর ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। সাবান না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা ওয়াইপস ব্যাবহার করা যেতে পারে।
হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় রুমাল ব্যাবহার করতে হবে। এছাড়াও যতদূর সম্ভব চোখ, নাক বা মুখে হাত কম দিতে হবে।
ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দুই থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তাই যে সব জিনিষ সব সময় হাত দিয়ে ধরা হয় তা কিছুক্ষন পর পর মোছার চেষ্টা করুন।
সবার জন্য শুভকামনা।