গর্ভবতী নারীদের আচারসহ নানা জাতীয় খাদ্য খাওয়ার আকাঙ্খা জাগে। আবার কারো কারো শোনা যায় বরফ, মাটি, ছাই ইত্যাদি অখাদ্য খাওয়ারও তীব্র ইচ্ছা তৈরি হয়। এই প্রবণতাকে পাইকা (Pica) বলে। প্রবণতাটি গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। অজ্ঞতা এ ধরনের প্রবণতাকে আরো উস্কে দেয়।
পাইকা বলতে মূলত বোঝায় পুষ্টিগুণবিহীন কোনো বস্তু খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা এবং সেই বস্তু ক্রমাগত খেতে থাকা। তবে কারো এই ধরনের অভ্যাসকে পাইকা ডিজঅর্ডার বলে ঘোষণা করতে হলে এই অভ্যাসের স্থায়ীত্বকাল অবশ্যই এক মাসের বেশি হতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কিছু কিছু মায়েদের এ ধরনের ইচ্ছা জাগা স্বাভাবিক তবে বেশিরভাগ মায়েদেরই আচার বা আইসক্রিম জাতীয় খাবারের দিকেই ঝোঁক বেশী থাকে।
ম্যাগপাই পাখির ল্যাটিন নাম ‘পাইকা’, যে কিনা সাধারণত কোন বাছবিচার ছাড়াই যেকোনো কিছু খেতে অভ্যস্ত। এর নাম থেকেই ‘পাইকা‘ ব্যাধিটির নামকরণ করা হয়েছে।
গর্ভাবস্থায় পাইকা বা অখাদ্য খাওয়ার ইচ্ছা হওয়ার কারণ
পাইকার সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কিছু শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সঙ্গে এর যোগসূত্র পাওয়া যায়।
জার্নাল অফ অ্যামেরিকান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশন এর মতে গর্ভাবস্থায় আয়রনের অভাবের সাথে এর সম্পর্ক থাকতে পারে। কারো কারো মতে শরীরের ভিটামিন বা মিনারেলের ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার প্রাকৃতিক কারণ হলো “পাইকা”। যদিও এর ফলে যেসব খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগে তাতে ভিটামিন বা মিনারেলের তেমন কোন অস্তিত্বই থাকেনা।
অঞ্চলভেদে বিভিন্ন আধ্যাত্মিক বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় প্রথা হিসেবেও এমন সব বস্তু খাওয়ার রীতি প্রচলিত থাকতে পারে, যা সাধারণত ‘খাবার’ নয়। যেমন- যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকান-আমেরিকান নারীদের মধ্যে স্বাস্থ্য-সুরক্ষার জন্যে চিনামাটি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
পাইকা হলে কী কী ধরণের বস্তু খাওয়ার ইচ্ছা হতে পারে?
পাইকা ব্যাধিগ্রস্তরা যে কত বিচিত্র ধরনের জিনিস খেতে আগ্রহ বোধ করে, তার একটা তালিকা নিচে দেওয়া হলো-
- ধূলা
- কাদা মাটি
- ছাই
- চক
- দেয়ালের প্লাস্টার ও রঙের আস্তরণ
- পাথর
- সাবান ও ডিটারজেন্ট
- কাগজ
- বরফ
- আঠা
- বোতাম
- চুল
- গায়ে মাখার পাউডার
- বেকিং সোডা
- টুথপেস্ট
- সিগারেটের ছাই ও ফিল্টার
এসব অখাদ্য খেলে কী কী জটিলতা দেখা দিতে পারে?
অখাদ্য সব বস্তু খাওয়ার ফলে পাইকা ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কোনো উপকার তো হয়ই না, বরং দেখা দিতে পারে নানান শারীরিক জটিলতা।
যেসব বস্তু হজমযোগ্য নয়, সেগুলো খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারে।খেয়ে ফেলা বস্তু হজম না হওয়ার ফলে তা পেটের ভেতর দলা পাকিয়ে বেজোয়ার (Bezoar) তৈরি হতে পারে ও পরিপাকতন্ত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে।
দেয়াল থেকে রঙের আস্তরণ তুলে খাওয়ার অভ্যাস খুবই মারাত্মক। রঙের মধ্যে থাকা সীসা বা অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ থেকে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা পরবর্তীতে শিশুর মস্তিষ্কে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে। এছাড়া স্নায়ুতন্ত্র, রক্ত সংবহনতন্ত্র ও রেচনতন্ত্রের ওপরেও সীসা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গর্ভাবস্থায় সীসাযুক্ত কোনো কিছু খাওয়ার অভ্যাস গর্ভবতী মা ও তার গর্ভস্থ সন্তান উভয়ের জন্যেই ক্ষতিকারক।
কাদা, মাটি বা দূষিত কিছু খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তার সঙ্গে বিভিন্ন রোগজীবাণু শরীরে প্রবেশ করে মারাত্মক সংক্রমণ করতে পারে। ধারালো বা শক্ত ধরনের বস্তু চিবিয়ে খেতে গিয়ে দাঁত ও মুখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ধরনের খাবার যে কোনো সময় গলায় আটকে যেতে পারে।
এসব অখাদ্য খাওয়ায় ব্যস্ত থাকার কারণে স্বাভাবিক খাবারে অরুচি আসতে পারে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমূহের ঘাটতি হতে পারে।
প্রতিকার
প্রথমেই জেনে রাখুন এ ধরনের ইচ্ছা জাগা অস্বাভাবিক নয়। এমনটা হতেই পারে। তাই ঘাবড়ে যাবেন না।
যদি পাইকা চরম আকার ধারণ করে, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তিনি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকলে তা খুঁজে বের করবেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন। আপনার আয়রন বা অন্য কিছুর ঘাটতি আছে কিনা তা জেনে নিন। এসবের ঘাটতি পূরণ হলে অনেক সময় এসব ইচ্ছা ঠিক হয়ে যায়।
সকালের খাওয়া বাদ না দেওয়ার চেষ্টা করুন কারন এটি ছাড়া আপনার খাবারের প্রতি লোভ বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রতিদিন সকালের নাস্তা করুন । সকালের নাস্তা বাদ দেয়া মানেই এই তীব্র ক্ষুধা জোরালো হওয়া ।
সবার জন্য শুভকামনা