অল্প একটু অসুস্থ হলেই আপনার শিশুর টিকা গ্রহণের সময়সূচী পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। আপনার শিশু কোন কোন টিকা তখনও নিরাপদে নিতে পারবে সেটা জানতে ডাক্তারই আপনাকে সাহায্য করবেন।
শিশুরা অল্প অসুস্থ হলেও টিকা নিতে পারে – এমনকি যদি তাদের জ্বরও আসে
যখন আপনার শিশুর সর্দি, পেটে অসুখ, বা হালকা জ্বর থাকে তখন টিকা দেয়ার জন্য ডাক্তারের অ্যাপয়েনম্যান্ট বাদ বা সময় পরিবর্তন করা খুবই স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু উন্নত স্বাস্থ্য সংস্থা, যেমন সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশান (CDC), দ্য অ্যামেরিকান একাডেমী অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান্স, এবং দ্য অ্যামেরিকান একাডেমী অব পেডিয়াট্রিক্স – এর ডাক্তাররা বলেন হালকা অসুস্থতা সাধারণত টিকা নেয়া বন্ধ রাখার কারণ হওয়া উচিত নয়।
আপনার শিশু টিকা নিতে পারে যদিও তারঃ
- হালকা জ্বর থাকে (১০১ ডিগ্রির চেয়ে কম)
- ঠাণ্ডা, সর্দি বা কাশি থাকে
- কানে ইনফেকশন (অটিটিস মিডিয়া) থাকে
- মৃদু ডায়রিয়া থাকে
যদি আপনার শিশু অল্প অসুস্থ থাকে তাহলে টিকা প্রদানের জন্য অপেক্ষা করায় কোন স্বাস্থ্যগত উপকার নেই। শিশুরা যেন সঠিক সময়ে টিকা পায় সেটা জরুরী – এমনকি যদি তারা ভাল অনুভব নাও করে – কারণ তাদেরকে কঠিন অসুখ থেকে সুরক্ষিত রাখতে এটা করা প্রয়োজন। যদি আপনার শিশু অল্প অসুস্থ থাকে তাহলে আপনার শিশুর ডাক্তার শিশুকে টিকা দেয়া যাবে কি না তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করবেন।
টিকা ছোটখাটো অসুস্থতাকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যায় না
একটি শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতিদিন কোটি কোটি এন্টিজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এন্টিজেন হল ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস যেগুলোর সংস্পর্শে আসলে শিশুর শরীরে সেগুলোর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হয়।
টিকার মধ্যে রয়েছে এন্টিজেনের ক্ষুদ্র একটি অংশ যেগুলোর সংস্পর্শ শিশুরা প্রাকৃতিকভাবেই পেয়ে থাকে। সুতরাং এটা বলা যেতে পারে যে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একই সাথে টিকাতে থাকা এন্টিজেনের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি গড়ে তুলতে এবং ছোটখাটো অসুস্থতার মোকাবেলা করতে সক্ষম।
টিকা অসুখের লক্ষণগুলো খারাপের দিকে নিয়ে যায় না – যদিও মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন হালকা জ্বর বা যেখানে টিকা প্রদান করা হয়েছে সেখানে ফুলে যাওয়া বা হালকা ব্যথা এসব হতে পারে। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দূর করতে একটি ঠাণ্ডা, ভেজা কাপড় আক্রান্ত জায়গায় রাখুন অথবা আপনার শিশুর ডাক্তারকে ব্যথা বা জ্বর কমানোর ঔষধ খাওয়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করুন।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই বাচ্চাকে ওষুধ খাওয়াবেন না।
অল্প অসুস্থ থাকা অবস্থায় শিশুকে টিকা দেয়া নিরাপদ এবং কার্যকর
অল্প একটু অসুস্থতা শিশুর শরীরে টিকার কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলে না। যেসব শিশু মৃদু অসুস্থ থাকে তাদের ক্ষেত্রে টিকা একইভাবে কাজ করে যেমনটা সুস্থ শিশুদের ক্ষেত্রেও করে থাকে।
এন্টিবায়োটিক গ্রহণকারী শিশুরা টিকা নিতে পারে
এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। আপনার শিশুর হালকা অসুখ যেমন গলায় (strep throat) বা কানে ইনফেশনের ক্ষেত্রে এসবের দরকার হতে পারে। আপনার শিশুর শরীর টিকার প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া করবে এন্টিবায়োটিক সেটাতে প্রভাব ফেলে না। তাই এন্টিবায়োটিক গ্রহণকারী শিশুদের হালকা অসুস্থতার জন্য টিকা নেয়াতে দেরি করা উচিত নয়।
অ্যান্টিভাইরাল বা ভাইরাসরোধী ঔষধগুলো ফ্লুয়ের মত ভাইরাস দমন করে। এগুলো আপনার শিশুর শরীর টিকার প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া করবে সেটাতে প্রভাব ফেলতে পারে। যদি আপনার শিশু ভাইরাসরোধী ঔষধ, যেমন টামিফ্লু নিয়ে থাকে তাহলে আপনার ডাক্তার কিছু টিকার ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে বলবেন।
গুরুতর রোগসমূহ আপনার শিশুর গ্রহণকৃত টিকায় প্রভাব ফেলতে পারে
শিশুদের জ্বর থাকুক বা না থাকুক শুধু মাঝারী বা বেশি অসুস্থতার সময় কিছু টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে একটু অপেক্ষা করতে হবে। একবার সেরে উঠলে তারপর টিকা গ্রহণ করাই ভাল।
আপনার শিশু কিছু কিছু টিকা গ্রহণ করতে পারবেনা যদি তারঃ
- স্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা (যেমন ক্যান্সার) থাকে
- দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (যেমন ক্যামো থেরাপি চলছে বা শরীরের অঙ্গ পরিবর্তনের পর নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ নিচ্ছে)
- টিকার পূর্ববর্তী ডোজের জন্য তীব্র অ্যালার্জি জাতীয় প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকলে বা টিকায় থাকা কোন উপাদানের কারণে প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকলে।
টিকার প্রতিক্রিয়াসমুহ, যেমন জ্বর, গুরুতর অসুখগুলো চিহ্নিত ও চিকিৎসা করার ব্যপারটা কঠিন করে ফেলতে পারে আবার এও সম্ভব যে রোগের লক্ষণগুলো টিকার প্রতিক্রিয়া বলে ভুল করা হতে পারে।
এজন্য যদি আপনার শিশুর গুরুতর কোন অসুখ বা শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে প্রথমে আপনার শিশুর ডাক্তার বা নার্সের সাথে কথা বলুন। তারা প্রতিবার আপনার শিশু কোন টিকা নিতে পারবে আর কোনটি নিতে পারবে না এবং কিভাবে আপনার শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে পারবেন সেটা জানতে সহায়তা করবেন।
সবার জন্য শুভকামনা।